ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে

 
ভালোবাসা দিবস নিয়ে বিভিন্ন ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন ছোট লেখা পোস্ট করেছিলাম। সেগুলিকে একসাথে নিলে আর সাথে আরও কিছু জুড়ে দিলে একটা ভালোবাসার সাতকাহন না হোক, পৌনে দুই কাহন হয়ে যায়। সেটা করতে গিয়ে দেখলাম, যা হচ্ছে, তা পড়তে অতো ভাল লাগে না, তাল হারায়, খাপছাড়া মনে হয়। তাই এই লেখাটি মূলত ভাবনাদেয়ালের তাড়নায় পুনর্লিখন। বলে রাখা ভাল, লেখাটি যখন লিখছিলাম, সেইসময়, আমার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল। তাই লেখাটিতে যাদের প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা নেই, তাদের কথা বেশি পাবেন। যুগলবদ্ধ বন্ধুরা বিরক্ত না হতে দয়া করে লেখাটি এড়িয়ে যেতে পারেন।
ভাল কথা, আমি ফেসবুকের নাম দিয়েছি ভাবনাদেয়াল।
ভালোবাসা সবারই একটুআধটু থাকে, এমনকি প্রেমও! তবে, ভালোবাসার মানুষটি অনেকেরই থাকে না, কিংবা হারিয়ে যায়। ভালোবাসা দিবসের স্বগতোক্তিটা কীরকম হতে পারে? আচ্ছা, এমন হলে কেমন হয়---
ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে . . . . . . হুরররে!!
বেল পাকলে কাকের কী? . . . . . . স্টুপিড কোথাকার!!
পছন্দ হলো না? ঠিক আছে, এই নিন আরেকটা:
তোমার জন্য, হাই ভ্যালেন্টাইন!
আমার জন্য, হায় ভ্যালেন্টাইন!
এটাই বুঝি আইন!
জীবনের কত-কত লাইন!
খারাপ কী? ফাইন, অতি ফাইন!!
কী? এটাও ভাল লাগেনি? কী আর করা! ভালোবাসা নেই, ভালোবাসা নিয়ে দুটো হৃদয়মথিত লাইনে খুঁজে নেবো একটু হলেও স্বস্তি, সেও আর হলো কোথায়? অতএব, আসেন ভাই, মুড়ি খাই, ভাতের উপর চাপ কমাই! এক মুঠো ভালোবাসার চাইতে এক মুঠো মুড়ি উত্তম। সবাইকে মুড়ি দিবসের সর্ষের তেলমাখা শুভেচ্ছা। ‘মুড়ি দিবস’ নামটার জন্য আমি দুঃখিত নই। যার গরু হারায় তার নাকি মাথা ঠিক থাকে না। যার প্রেম হারায় তার কলম ঠিক থাকে না। আচ্ছা, আমি তো লিখছি কিবোর্ডে। কলম এল কোত্থেকে? বললামই তো, ঠিক থাকে না! কলম, কিবোর্ড, মাথা! কিছুই না!!
শুনেছি, প্রেম নাকি একবারই আসে নীরবে। আমার জীবনে প্রেম বারবারই এসেছে সরবে, রীতিমতো হৈচৈ বাধিয়ে। অমন সরব প্রেমের গগনবিদারী আগমনী সংগীতযন্ত্রণায় কানে তালা ধরে গেছে। এখন আমি মূলত প্রেমবধির। নীরব প্রেমের নিঃশব্দ পদধ্বনি শুনে নেয়ার আর্টটা মাথায় এখন আর ভুলেও আসে না। ইএনটি সার্জনের কাছে গিয়ে কেডসের ফিতা নিয়ে আসতে হবে। শুনেছি, কেডসের ফিতা এক কানে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে নিয়ে মাথাটাকে এপাশ থেকে ওপাশ ‘ঝুম বালিকা, ঝুম বালিকা, ঝুমা ঝুমা ঝুম’ গানটার সাথে তাল মিলিয়ে নাড়ালে নাকি কানের তালা খুলে যায়? এইরে সেরেছে! আবার কোন উদ্ভট চাবির আজগুবি গল্প ফেঁদে বসলাম! প্রেম হারালে যে আঙুল ঠিক থাকে না। আঙুল, হাত নাকি অন্যকিছু ছাই? নাহ্! ব্রেক ফেইল করে ফেলব! শিওর! এইবেলা থামি!
যদি বলো হবে ভ্যালেন্টাইন, ভাঙতে পারি তোমার জন্য রাজ্যের সবকটা আইন! রাজি? বলো, রাজি?
ইয়ে মানে, রাজ্যে কী কী আইন আছে, সেটা আমি ঠিক জানি না। তবে কাচের চুড়ির মতো করে টুংটাং দুএকটি আইন ঠিক ভেঙে ফেলতে পারবো। একদম পাক্কা! শুধু বলো, ভালোবাসি!
আচ্ছা, যাদের জীবনে প্রেম নেই, ভালোবাসা নেই, যাদের ‘ভালোবাসি’ বলার কেউ নেই, তাদের জন্য একটা ভাতার প্রবর্তন করা যায় না? টিউশনির ক্ষেত্রে ‘প্রকৃত সিঙ্গেল’ টিউটরদের বেতন ৫৭৪ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হোক। যারা সিঙ্গেল নয়, কিন্তু নিজেদেরকে মিথ্যে-মিথ্যে সিঙ্গেল বলে বেড়ায়, তাদের প্রিয় মানুষটি আমার হয়ে যাক। আহা, কী আনন্দ আকাশেবাতাসে! এত প্রেমিকা কই রাখি? আহা, আহা! এমন কাউকে আমার ভালোবাসতে ইচ্ছে করুক, যে আমাকে ভালোবাসবে, আর সারাজীবন একসাথে থাকতে কোনও পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় বাধা থাকবে না। আরও কী কী যেন বলতে ইচ্ছে করছে। দুম করে বলে ফেলি, হুঁ? থাক, আর না বলি।
কেউ তোমায় ফুল দিক না দিক,
আজ ভ্যালেন্টাইনস্ ডে।
১৪ বছর আগে এক বন্ধু লিখে পাঠিয়েছিল,
বসন্ত বাতাসে ........ ভালোবাসি! বলো আবেগে৷
সবই তো আছে, তবু ......... কেনো একাএকা লাগে!
বন্ধু এখন আর একা নেই৷ সাথে পরীর মতো ফুটফুটে তার কন্যাও আছে৷ প্রার্থনা করি, ও বড়ো হয়ে হুমায়ূন আহমেদের নায়িকাদের চাইতেও বেশি মায়াবী হোক৷
বন্ধু, সত্যি বলছি, ফাগুন এলে তোকে মনে পড়ে৷
আরও একজনকেও মনে পড়ে। এখনও, কখনও-কখনও, অন্য আইডি থেকে ওর প্রোফাইলে ঢুকলে বুকের ভেতরে কেমন জানি মোচড় দিয়ে ওঠে, হাহাকার করে, মনে হতে থাকে, কী যেন নেই কী যেন নেই! (আমি ওকে, কিংবা ও আমাকে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছি/দিয়েছে।)
ধ্যত্! হুদাই!
ও কি কখনও ছিল আদৌ? যে কখনও ছিলই না, সে আবার চলে যায় কীকরে?
তবুও, মন থেকে চাইছি, ও খুব ভাল থাকুক।
আরও একজনকে মনে পড়তে পারত। ও-ই আর দিল না মনে করতে। কেন? সেকথা থাক! ‘কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!’ সেই ভাল, সেই ভাল, খুঁড় মাটি, আলু আনো। রবীন্দ্রনাথের আদেশ! অমান্য করি কোন বুদ্ধিতে?
ও দামি বলে ওকে ভালোবাসতাম, তা নয়। বরং, ওকে ভালোবাসতাম বলেই ওকে দামি ভাবতাম। হায়! অবুঝ সে কিছুতেই বুঝল না।
মাঝে-মাঝে মনে হয়, ভালোবাসা অ্যাত্তোগুলা খারাপ! থাকলে জ্বালায়, হারিয়ে গেলে পোড়ায়, আর না থাকলে জ্বালায় পোড়ায়!
জুকারবার্গকে বসন্তের শুভেচ্ছা জানাই৷ ফেসবুকে, ইট্‌স ফ্রি, লেখাটা কখনওই যেন বদলে না যায়৷ ফেসবুককে ঘিরেই দিন-কাটানো যাদের শেষ হয়ে যায়নি এখনও, তারা বিনে পয়সায় ভাল থাক৷
আচ্ছা জুকারবার্গ, তুমি কি জানো, ফাগুনে রূপসীরা হলুদ কিংবা বাসন্তী শাড়ি পরে কাছে এলে বুকের ভেতরে কীভাবে যেন দপ করে আগুন ধরে যায়? জানো না, এইতো? দুঃখ পেয়ো না। কিছু-কিছু বোকা রূপসীও জানে না ওটা! তাই ওরা শাড়ি পরে না। হায়! ওদের কে বোঝাবে, পৃথিবীতে সবচাইতে আবেদনময় পোশাক হচ্ছে শাড়ি! উফফ্!! শাড়িপরা কাউকে দেখলেই.......... আর অমন সুন্দরীরা কী সব পোশাক পরে টোটো করে। তাদের দেখলেই মনে হয়, চিড়িয়াখানার বান্দরও তো কম সুন্দর নয়, বুঝি কম সুন্দর নয়! অবশ্য, রূপসীরা বোকা হলেই মানায় বেশি। যে মেয়ে দেখতে ভাল, সে মেয়ের মাথায় বুদ্ধি কম থাকবে না কোন দুঃখে?
সেই কখন থেকেই রবি বাবু মাথায় বাজছেনই তো বাজছেন ....... সুখে আছে যারা সুখে থাক তারা . . . . . . .
আমি সুখে আছি, সে সুখে আছে। কে সুখে আছে? যে সুখে আছে, সে সুখে আছে। সুখ সুখে আছে, দুঃখ সুখে আছে। সবাই খুব সুখে আছে। এইসব সুখের অভিনয় দেখতে-দেখতে প্রতি মুহূর্তে বুড়িয়ে-ওঠা পৃথিবীটাও বেশ সুখে আছে। এই সুখে থাকাতেই সমস্ত সুখ!
ভালোবাসা দিবসে আমার ৭ দফা; সাথে ১টা ফাও:
এক। ‘ভালোবাসি’ ঠোঁট থেকে নয়, হৃদয় থেকে আসুক। গনগনে সিগ্রেটের ধোঁয়ার সাথে টাটকা ভালোবাসা বেরিয়ে আসলেও নো প্রবলেম।
দুই। জগতের কোনও যুগলই না ভাঙুক৷ প্রয়োজনে যুগলের উভয়ের কিংবা কোনও একজনের ভারে রিকশা ভাঙুক, তবু সে যুগল টিকে থাক।
তিন। কোনও কারণ ছাড়াই কেউ সম্পর্ক ভেঙে দিলে ওকে প্রকাশ্যে কমপক্ষে একশো একবার কান ধরে উঠবস করানো হোক।
চার। ফুলের ব্যবসা বাড়ুক, ফেসিয়াল টিস্যুর ব্যবসা কমুক৷
পাঁচ। বিয়ের আগের প্রেমের শেষটা বিছানায় নয়, বাসরে হোক।
ছয়। যাদের ভালোবাসার মানুষ আছে, তারা টিউশনির বেতনটা পরের মাসের ৫ তারিখের মধ্যেই পেয়ে যাক। বাবার টাকায় কাউকেই প্রেম করতে না হোক। সুখ আর দুঃখের ভোগ হোক নিজের টাকায়।
সাত। ভালোবাসার সুন্দর শব্দমিছিল ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে জীবনে আসুক৷ নিজের বউদির কাছ থেকে রবীন্দ্রনাথের যে শ্লেষ হজম করতে হয়েছিল, তা কাউকে কখনও বিদ্ধ না করুক---নিজের বিয়ের খোঁজ নেই, পরের বিয়ের পদ্য লেখে!
ফাও। যাদের ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, তাদের কেউ আমকে ‘ভাইয়া/ দাদা/ দাদাভাই’ না ডাকুক। বাকিরা আমাকে আপন ভাইয়ের চাইতেও বেশি আপন ভাবুক।
ইদানিং আর ফাগুনে কোনও ক্যাম্পাসেই যেতে ইচ্ছে করে না। গেলেই মন খারাপ হয়ে যায়। মন খারাপ করে থাকতে-থাকতে এখন আমি ক্লান্ত। একটাই তো মন---বেচারাকে আর কত খারাপ রাখা যায়! আমাকে আর কত ভালভাবে শিখতে হবে, মন খারাপ করে থাকলে নিজেকে চেনা যায় সবচাইতে বেশি। আমি অনেক চিনে গেছি এই পুরনো আমি’কে। এখন আর ভাল লাগে না। আমাকে দিয়ে হিপোক্রিসি হয় না। মন খারাপ করে রেখে দাঁত বের করে হাসতে পারি না। ঈশ্বর যাকে দাঁত দিলেন, অথচ প্রেমিকা দিলেন না, কেন এক চড়ে তার দাঁত সব ফেলে দেন না? কেন কেন কেন??? এই সকল ঝকঝকে দাঁত লইয়া আমি কী চাবাইবো?