মিথ্যে-ফিকে ভালোবাসা

 জানো, খুব জানতে ইচ্ছে করে
তুমি আমায় ঠিক কতটা অপছন্দ কর,
আর কেনই বা এতটা বিরক্ত হও!
আমার কল্পনার চেয়েও বেশি অসহ্য লাগে আমায়?
আচ্ছা, বাস্তবতা কি কল্পনাকেও হারিয়ে দেয় কখনও?
আমি এতটাই বালবাসায় আচ্ছন্ন থাকি--কতটা অবাঞ্ছিত হয়ে আছি তোমার চোখে--বুঝতেই পারি না!
এই বালবাসা--তুমি বোঝোই না, তোমার নিঃস্পৃহ মন আমায় অস্পৃশ্য করে রাখে...দিনের পর দিন।
কী চমৎকার বোঝাপড়া, তাই না, বলো!
 
যে ভালোবাসার দাম নেই একফোঁটাও--সে ভালোবাসা বালবাসা।
আমার ভালোবাসা প্রতিনিয়ত আমার সমস্ত কষ্ট আর
তোমার দেয়া রাগ অপমান অবজ্ঞা আর তাচ্ছিল্যকে উড়িয়ে হাওয়ায়...তবু বেঁচে রয়।
শত বাধাতেও যায় না ছেড়ে--কোন শপথে! কোন নিলাজে! কী সে মোহে!
তুমিও তো কম যাও না, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়--এ মরণে থাকো তো বেঁচে!
পুরান গেলে নতুন আসে--তোমার চোখে ওই তো জীবন!
যখন দেখ, এই আমি তো ঠিক টিকে যাই, উপেক্ষাটা একটু বাড়াও!
মাতাল তুমি মাতাল কর। এ দুইয়েতে ভর করে হায় জীবন ছোটে।
আজব জীবন--বেহায়া কেমন!
 
ফোনটা তোমার আর ওঠে না আমার খোঁজে,
কল দূরে থাক, মেসেজও নেই!
আর কারও নয়, তোমার জন্য ইগো সরাই, মনে করাই--বেঁচে আছি!
লজ্জা আমার পালিয়ে বেড়ায় কোথায় যেন!
কত কী যে বলবে বল, আর বল না।
কী প্রয়োজন! তাই থেমে যাও।
বুঝি সবই--মন মানে না,
আমার মনে যে মন থাকে সে মন আমায় দূরেই রাখে।
তোমার আছে এক ভুলোমন--ভোলে না কিছুই আমি বাদে।
 
কতবার বলি
কথা বলো কথা বলো,
কথা না হলে কষ্ট বাড়ে,
কষ্ট বাড়লে কান্না ঝরে,
আবোল বকি তাবোল বকি,
তখন তুমি আবার থামাও,
থামলে বরং কান্নানদী সাগর খোঁজে।
‘ভুলে গেছি’ আর ‘ব্যস্ততা খুব’ দুভাই মিলে
আমায় কাঁদায়।
রাগ না-রাগ, কষ্ট আর না-কষ্ট’টুক--সবই আমার!
ওরা দেখছি ভালোই আছে ওদের মত।
দুই অনুভব না ছোঁয় যদি, সবই ফাঁকি!
 
প্রায়ই পাঠাও
“কেমন আছ?”
সত্যি বল, জানতে কি চাও কেমন আছি,
নাকি, স্রেফ টাচে রাখ?
সবই বুঝি!
তবু অবুঝ হয়ে ওতেই খুশি--
“কেমন আছ?”
 
এবার নাহয় গল্প শোনো...ফালতু গপ্পো? সময় হবে?
না-রাগ আর না-কষ্ট হয়--
বলেছিলাম। মনে আছে?
রাগলে বরং রাগটা বাড়ে, কষ্ট পেলে কষ্ট,
না-রাগ হচ্ছে রাগের বড়, না-কষ্টে কষ্ট বেশিই!
যে রাগটার কারণ তুমি,
যে কষ্টের কারণ তুমি,
অথচ তোমার দোষটুকু নেই--
ওদের আমি অমন ডাকি!
কী যন্ত্রণা, বুঝতে যদি!
পেসিমিজম যাকে বল,
আমি তাকে কষ্ট বলি।
দগ্ধ শরীর--লুকোয় চাদরে,
সে শরীরই...মোমের আলোর হাল্কা আঁচে,
কী এক ব্যথায় কাতরে ওঠে!
লোকে বলে, ন্যাকা আরকি!
আমিই জানি, কেমন লাগে!
 
আচ্ছা, “কেমন আছ” বাদ দিলে আর
কিছুই তোমার নেই জানবার, সত্যিটা এ-ই?
আসলে প্রয়োজন নেই জানতে চাওয়ার,
ঠিকই আছে!
সবাই কি আর পাগল বলো, আমার মতো?
যে হায় কিনা ‘প্রয়োজন নেই’ সে দুনিয়ায় দারুণ খুশি!
তোমার সাথে মিলে আমার অনেকবেশি--
আমরা দুজন মনের পথেই চলি।
পার্থক্যটা কোথায়, জানো?
তুমি কর ততটুকুই, ভালো লাগে যা, ‘যা প্রয়োজন’,
আমি করি ততটুকুই, ভালো লাগে যা, ‘নেই প্রয়োজন’,
তাইতো তুমি এই তেমনই এখন তুমি যেমন আছ,
আমি আছি ঠিক তেমনই এখন আমি যেমন বাঁচি!
ভালোলাগা সব অপ্রয়োজনের ওড়ায় ঘুড়ি,
অপ্রয়োজনের ঝড়ের তোড়ে প্রয়োজন সব হাওয়ায় ওড়ে!
কী আর করা!
শূন্য হাতে পূর্ণ মনে
কষ্ট গিলে একাই হাসি।
 
তুমি আমার নামটা জানো? পুরো নামটা?
কেউ যদি ‘ইতি’ ডাকে সামনে তোমার,
ধরে নেবে, ওটাই আমি। তাই না, বলো?
কখনও জানতে চেয়েছ, আমি কী করি, কীভাবে চলি, কেমনে বাঁচি?
চাইবে কেন? প্রয়োজন তো নেই!
নেই পরিচয়, প্রেম তো আছে! খোঁজ কর না, প্রেম ঢেলে দাও। হালের প্রেমের বেশ ব্যাকরণ!
তোমায় দেখেছি, এরপর আমায় আমি আর দেখি না,
সব দেখাতেই তোমায় দেখি, তোমায় খুঁজি!
বুঝবে নাতো! বুঝতে হৃদয় হৃদয় লাগে!
এক শর্তে আটকে রেখে, স্রেফ একটা ‘দেখা’র ফাঁকেই
রেস্তোরাঁর ওই মৃদু আলোয় বছর পেরোয়।
ভীষণ মজার, তাই না, বলো?
যা আমি খুব করে চাই
সেই শর্তেই আটকে কাঁদি।
আগে বুঝতাম ‘যেয়ে খাওয়া’,
এখন বুঝি, ‘খেতে যাওয়া’।
অর্থ একই--অনর্থতে।
 
স্বার্থপররা ভীষণ দুঃখী--শাস্তি পায় নিজের হাতেই,
ওরা ভাবে, সবাই বুঝি ওদের মতোই।
যে কাজগুলি স্বার্থ ছাড়াই,
সেসব দেখেও স্বার্থ খোঁজে।
না পেয়ে তাই অস্থিরতায় সময় কাটায়,
মেলে না হিসেব--নিজের উপর আস্থা হারায়।
স্বার্থহীনরা নীরবে দেখে, চোখের দয়ায় ওদের বাঁধে।
মনে পড়ে, বেশি কিছু নয়, গান চেয়েছি?
একটু টাচে রেকর্ড হবে, আরেক টাচে সেন্ড--কঠিন কি খুব?
দাওনি তবু।
কত গানই তো গেয়ে চল, আমার জন্য একটাও নেই।
একটা সমস্ত দিন পাশে থাকতে চেয়েছিলাম...
তোমার সময় নিয়ে নয়,
তুমি তোমার কাজ করবে--আমি শুধু পাশে থাকব; আর কিছু নয়।
তোমার নিপুণ হিসেবে তোমার ‘সময় নষ্ট’ করতে আমি কখনওই চাইনি।
আর কেউ না জানুক, আমি তো জানি, আমার সত্তার সবটুকু দিলেও
তোমার নিজস্ব হিসেবে, তা কেবলই ‘লস’ দেখাবে!
বিশাল লসের খুব আশংকায়,
ভেতরের ‘তুমি’টা গলা উঁচিয়ে চেঁচিয়ে নেবে,
“মানুষের কি মাথা খারাপ? পাগল? তোমার সাথে দেখা করতে কেন আসব?”
জানি না নিজের সংজ্ঞায় নিজেকে পাগল বানিয়ে কেন তবে সেদিন তুমি এসেছিলে...
এসব মাথায় আসে, খুব কষ্ট হয়।
 
সবসময়ই, এমন অনেক কষ্টকান্নার পর, দিনশেষে বিধাতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিই। নিজে তো বুঝি, কোনও মানুষের জন্য এতটা কষ্ট পাওয়া, কান্না করা--কোনও না কোনওভাবে ভীষণ অন্যায়।
হায়! তারপর...আবার সেই একই কাজ!
আচ্ছা, ভালোবাসার আঘাতে আহতরা নির্লজ্জ? নাকি, ভালোবাসা নিজেই...?
 
এই যে এবার টানা দুমাস খুব কষ্ট দিলে--পেলাম,
পরশু যখন বললে, কথা বলার মতো মানসিক অবস্থায় তুমি নেই,
আমার ভেতরে জমা আগের সব কষ্ট কোথায় যেন চলে গেল;
নতুন কষ্ট জমা হল--তোমার আবার কী হল! কেন কষ্ট পাচ্ছ?
কষ্টরা আসলে ছেড়ে যায় না, সময়ে-সময়ে রং বদলায় কেবল।
তোমার তো খুব লং জার্নি হয়--
একদিন সে যাত্রার সঙ্গী হতে চেয়েছি,
বলেওছি।
বাসার বাইরে রাতে থাকা যায় না,
তাই বলেছি, তোমার সাথে ট্রেনে যাব কিংবা বাসে;
প্লেনে উড়ে ফিরব দ্রুত,
না না, পাশের সিটে বসে তোমার বিরক্তি বাড়িয়ে নয়,
এমন কোথাও বসব, যেখান থেকে তুমি আমায় দেখবে না, তবে আমি দেখব ঠিকই।
কখনও এসব হয়নি কিছুই।
হবেই বা কীকরে, বলো?
আমি যে তোমার ‘বিশেষ’ সে নই, যেমন ‘বিশেষ’ চাইলে দিনে দশটা বাড়ে।
জয়তু ‘বিশেষ’! পেন্নাম নিয়ো!
 
সেদিন আমার তোমাকে পেয়ে
আদরে ভীষণ জড়িয়ে ধরে
চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছিল;
স্রেফ শরীরী টানে নয়--ভালোবাসায়।
শরীরের টান যে কেউ চাইলেই—মিটিয়ে দেবে,
ভালোবাসার টান মেটাতে জেনো ভালোবাসাটা লাগেই লাগে।
শার্টের হাতাটা গুটিয়ে হাতটা একটু নিবিড়ভাবে স্পর্শ করতে চেয়েছিলাম। আর
কী বিশ্রীভাবে হাতটা তুমি সরিয়ে নিলে!
মাথায় একটু হাত রাখতে চেয়েছিলাম--দাওনি।
অমন একটুআধটু স্পর্শের ভালোলাগা--সেই কবে তুমি পেরিয়ে এসেছ! তাই না?
এসব এখন তোমার কাছে তুচ্ছ আবেগ, পাগলামি স্রেফ।
এমন একটা ভাব করছিলে, যেন এমন কাউকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছ, যার আচরণে তোমার জাত যাচ্ছে!
আচ্ছা, শরীরের গন্ধ পেয়েছিলে?
সুগন্ধ বা কুগন্ধ? কিংবা কোন সুগন্ধির?
আমি পাইনি। একটুও পাইনি।
অবশ্য, চৌদ্দহাত দূরে গিয়ে বসে থাকলে পাবার কথাও না!
জানো, কী ভীষন বিশ্রী সে অনুভূতি--
যখন একটা মানুষ তার প্রিয় অনুভূতিকে জড়িয়ে ধরে,
অথচ অন্য মানুষটি জড়িয়ে ধরা দূরস্থ, একটা আঙুলওআলতো ছোঁয়ায় পিঠে রাখে না!
তবুও ভালো, তুমি ভণিতা করোনি।
তাই, কষ্ট পাইনি--না-কষ্ট পেয়েছি।
 
ভালোবাসার আদর আর শরীরী আদরের দেয়ালটুকু বুঝতে হাজার শরীর স্পর্শের প্রয়োজন হয় না।
খোঁজ নিয়ে দেখো, রূপোপজীবিনীদের বড় কষ্ট!
সমস্ত শরীর ভালোবাসাহীন শরীরী টানের ধারালো স্পর্শে রক্তাক্ত হয়ে যায় ঠিকই,
কিন্তু কেউ একটু ভালোবেসে কপালে ছোট্ট একটা চুমু খায় না ওদের।
অমন চুমুর মাতাল করার ক্ষমতা বোঝো? নাকি শুধুই শরীর চেনো?
ইচ্ছে করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছুঁয়ে দেখি...
বলেছিলাম বহু আগে কখনও।
কানের কাছে ঠোঁটযুগল এনে বারবার তপ্ত শ্বাস ফেলে যে ইচ্ছেপূরণের খেলায় মাততে চেয়েছ,
সে নিঃশ্বাস তো আমি চাইনি--তোমার নিঃশ্বাস হাওয়া দিচ্ছিল, ভালোবাসা নয়।
বড় মায়া হচ্ছিল তোমার জন্য। শরীরের টানে কত ভিখারি সাজছ!
তবুও ভালো। অন্তত এতদিন পরও আমার চাওয়াটা তো তোমার মনে আছে! এও বা কম কীসে?
প্রবল জ্বরে বিছানায় পড়ে ছিলাম চারদিন। কিছুই খেতে পারছিলাম না, হাঁটতে পারছিলাম না।
তবু গেছি। কীভাবে যে গেছি তা কেবল আমিই জানি।
অথচ কত বাজেভাবে কথা বলেছ আমার সাথে! কেন করলে অমন?
আর কারও সাথে অমন কোরো না প্লিজ! সবাই তো আর তোমায় ভালোবাসে না!
 
বিশেষ জায়গায় বিশেষ পদমর্যাদার মানুষের সাথে আমরা কেমন আচরণ করি তার চেয়ে ঢের জরুরি--
রাস্তার গরীব মুচির সাথে আমরা কীভাবে কথা বলছি।
জানি, বোঝো সবই।
আমাকে তোমার কেন এত বিরক্ত লাগে, জানো?
তুমি সবসময়ই আমাকে শুধু তোমার সাথের সম্পর্কটাতেই দেখ,
আর কিছুই দেখা হয় না তোমার; সুযোগও নেই...হাজার মাইলের জীবনটাকে বেঁধে ফেলেছ কিনা এক ইঞ্চির আয়নায়!
খেপছ কেন? আরে আস্তে...আস্তে। কুউল ডাউন! বলতে দাও, কথা এখনও শেষ হয়নি তো!--তোমার অতো ইচ্ছেও নেই’। হয়েছে এবার?
ভালোবাসতে পারে না শুধু খেপতে পারে--কী মহারাজ!
আমি বন্ধুদের সাথে কেমন, পরিবারের সাথে কেমন, আমি কী করছি, আমার কী পছন্দ--এসবের কিছুই কখনও তোমার দেখা হয় না।
তোমার কাছে--আমি কেবল এক জায়গাতেই স্থির।
এজন্য আমাকে তোমার বড় একঘেয়ে আর বিরক্ত লাগে।
বুঝতে পেরেছ কী বলতে চাচ্ছি?
বিরক্তির নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ আছে...
থাকলে থাকুক। ভালোবেসেই যাব, পরোয়া কীসের? হুহহহ্...!!