মিনতিবদল

 ও মেঘ, শোনো! স্বচ্ছ তোমার শরীর নিয়ে
এই আলোতে একটু দাঁড়াও,
তোমার নরম শুভ্র ভাঁজে একটুখানি আমায় রাখো,
ওই দূরেতে ভাসার আগে একটিবার আমায় ভাসাও,
ওগো মেঘ, আরও সরার আগে এই আমাতে একটু হারাও।
ফেলেআসা ভুল, ভুলের কাঁটা,
না-পাওয়া আর বঞ্চনাকে
বাঁচিয়ে রাখি চোখের জলে।
চৌকোণো এই ছোট্ট ঘরও কোণঠাসা হয়,
তবু বাঁচার নেশায়
জীবন-বাজির সংকটে, নিরবধি সংগ্রামে
সকল শপথ পেছন ফেলে,
প্রাচুর্যে আর উল্লাসে, আকাশছোঁয়ার উচ্ছ্বাসে,
বাঁচব এবার নির্ভয়ে--তোমার আমার স্বপ্নতে।
 
এ পৃথিবীর মিথ্যেতে, দ্বন্দ্বমুখর সংঘাতে
ঘুমিয়ে থাকুক পুরনো সে ভুল।
ছুটি দিয়ে আজ দায় যত,
তোমার সাথে আমায় বেঁধো।
দোহাই তোমার, ঝরছে সোনা এই আলোয়,
দাও ছড়িয়ে শুভ্রতাটুক--যত আছে আর যেটুক!
আসছি আমি, একটু দাঁড়াও...
ওগো প্রিয়, বৃষ্টি হয়ে ঝরো
কান্না আমার আড়াল হবে ওই শরীরে
সঙ্গী হয়ে ঝরব দুজন--মিলিয়ে দেখো।
 
মিষ্টি ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় আমায় খুঁজি
শুভ্র শিশির
চুপিচুপি আর ভুলিয়ে
আসে কাছে, পাশে বসে আপন ভেবে।
ঘুমে আমি বিভোর থাকি,
বিন্দুবিন্দু শিশির জমে স্বপনচোখে,
ওরা আমায় খুব ডেকে যায়...
ঘুম তবু যে আর ভাঙে না।
আমি ঘুমে, ওরা প্রতীক্ষায়,
ঘুম ঘুমম ঘুমমম...প্রতীক্ষা প্রতীক্ষাআ প্রতীক্ষাআআ...
একটা সময় সূর্য ওঠে।
সে উঁকিতে শিশির সবাই লড়াই করে বাঁচবে বলে।
অবশেষে রৌদ্র জেতে, পালায় শিশির।
শিশিরদলের নীরব বিদেয়...
তখন আমার ঘুমটা ভাঙে,
ঘুম চোখেতেই শিশির খুঁজি
হন্যে হয়ে।
খুঁজতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে
দিনের আলো নিভিয়ে ফেলি।
রাত জেগে রয় আমার সাথে...
অসহায় আর ক্লান্ত আমি--
তন্দ্রা চোখে,
কষ্ট মনে,
ক্লান্তি দেহে।
একটু স্বরে
শিশির ডাকি...
শিশির শিশিরর শিশিররর...
অভিমানটা ভেঙে এবার এসো কাছে,
কেউ আসে না, কোথাও কোনও সাড়া মিলে না...
আমি ডেকে যাই...শিশির শিশিরর শিশিররর...
চমকে হঠাৎ চারপাশেতে তাকিয়ে দেখি,
বদলে গেছে পুরনো হাওয়া, সে হাওয়াতে জমে না শিশির আগের মত।
কষ্ট আমায় ক্লান্ত করে, মাতাল করে...জাগতে যখন আর পারি না,
ঘুমিয়ে পড়ি নিজকে ভুলে।
 
আকাশে তাকে
রেখেছি এঁটে
ইচ্ছে হলেই দেখি,
খুনসুটি তার
চাঁদের সাথে, তারার আলোয়
আপন মনেই হাসি।
ভোর আসে না এখন তো আর,
কখনও তবু শিশির আসে,
ওদের আমি আর ডাকি না আগের মত।
বলছি শোনো,
এই ভেতরে বৃষ্টি ঝরে দৃষ্টি সরে ভ্রান্ত ঘোরে--কী এসে যায়?
যতই আমায় সরাও দূরে,
ঘাপটি মেরে থাকব ঠিকই তোমার ঘরে।