মুহূর্তসুখের কবর

স্তব্ধ যে সময়টা, তুমি আমায় দিয়েছ উপহার না চাইতেই,
ওতে যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছি, সে খবরটা তুমি অবধি পৌঁছাবারই নয়।


আমার সমস্ত সুখ দুঃখ মিলেমিশে হলো একাকার বহু বহু আগেই,
অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এই তিনের মাঝেই কী এক দোলাচলে
আমি দুলতে থাকি।


লেখনীর আড়ষ্টতা আজ আমায় বেঁধে রেখেছে শত শেকলের ভারে,
নিজেকে বয়ে চলবার ক্ষমতাই যেন শূন্য হলো,
তোমায় লেখার খাতার পাতায় পাতায় আজ শুধুই
তোমায় ভুল চিনবার বিস্ময়ছাপ!
কান পেতে শুনে দেখো গো শুধু একবার,
ওতে পাবে কেবলই রাশি রাশি খেদ হাহাকার!


কেন এমন হলো, বলতে পারো? সময়ের ব্যবধানে? না কি পরিবর্তনে?
পরিবর্তনেই যদি হয়, তবে শুধু সময়েরই কি তা?
না কি তুমি নিজেই হয়েছ সময়ের দাস আর বদলে গেছো?
তোমার সময় আর সময়ের তুমি---এই দুইয়ের সাথেই
আজ আমি বেমানান বড়ো! তোমরা দুজন মিলে
স্মৃতির পটে পরালে শেকল আর এগোলে অনেকটা পথ!


না না না, আমি তো চাইনি ফেরত তোমার ওই ভয়ানক ছোঁয়াচে আবেগ,
ফিরতে চাইনি দূরত্ব ভুলে, সাজতে চাইনি তোমার একটিও লেখায়,
কত মান-অনুযোগ হারাল প্রমাণ, অশ্রুঝরার বৃষ্টিতে অনুভূতিরা বৃদ্ধ এখন।
আজ শুধু রইল বাকি আমার এই দুরারোগ্য ব্যাধি---তোমায় ছুঁয়ে দেখার অসুখ!


এখন কালো ধোঁয়ার রাজ্যে পুড়ছে হাজার আবেগ, দগ্ধপ্রায় ভালোবাসা তার হারিয়েছে পথ,
প্রতারিত হৃদয়ে হচ্ছে কেমন আগুনপ্রপাত, কবিত্ব আজ ফলায় কেবলই চাপাকষ্ট!
দিনের শেষে আমি অর্ধমৃত, এক ভিন্ন মানুষ, যে হাজার লোকের ব্যস্ত ভিড়ে
নিস্তব্ধ কিংবা নির্বাসিত---নিজ নিয়মে, নিজ বলয়ে, নিজ ইচ্ছায়।


হয়েছে যতবারই মনোমালিন্য,
আমি হিসেব রেখেছি তত ততবারই অস্থিরতার।
তোমায় ভালোবেসেছি যত, ততই আমার ঠাঁই হয়েছে,
কেবলই রবীন্দ্রনাথের পায়ের কাছে।


আমায় অবহেলা তুমি করতেই পারো,
ভালোবাসি, তাই প্রতিবাদটা আসে না তো ঠিক!
আমার একপাশে জ্বলে বুনো আগুন,
আর-এক পাশে দহন শূন্য মরুর।


এখন তুমি ব্যস্ত ভীষণ নতুনত্বের ঘ্রাণটা নিতে,
আর এখানে আমি শুধুই তোমায় খুঁজি হাজারো নতুন পেছনে ফেলে।
আমি ভালোই আছি, তোমাকে ছেড়ে ভালো থাকা যায় ঠিক যতটা!
জানত কে-ইবা আগে…কত কতটা মহাকাল মিলে মুহূর্তসুখের কবর খোঁড়ে!