যখন ছাদে মেঘের ঘ্রাণ

 
চাঁদ নেই, এমন আকাশ রাত সাড়ে এগারোটায় আগেও দেখেছি।
তবে এমন আবছা আবছা মেঘেঢাকা ছাদ আগে কখনও দেখিনি।
চারিদিকে মেঘের ঘ্রাণ, না চাইতেও অনেক কিছু মনে এসে যায়।
এমন নিস্তব্ধ ভূতুড়ে শহর শেষ কবে দেখেছি, মনে নেই।
আমি এই নগরীকে সব সময়ই হাসতে দেখেছি, কিংবা কাঁদতে।
শব্দ এখানে থাকেই। সভ্যতা শব্দহীন হয়ে বাঁচতে পারে না।


থেমে থেমে আজান হচ্ছে।
কাছের কিংবা দূরের মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
রাত সাড়ে এগারোটায় কখনও কি আজান শুনেছি আগে? মনে পড়ে না।
আমি এর কারণ খুঁজছি না। আমার আজান শুনতে ভালো লাগছে।


রাস্তায় কিছু কুকুর হাঁটছে। ওদের আজকে উৎসব।
ওরা চেঁচাচ্ছে। ওদের বাধা দেবার কেউ নেই।
আজ প্রকৃতির উল্লাসে মেতে উঠবার দিন।
মানুষের দাপট আপাতত স্থগিত।
পরবর্তী অধিবেশন কবে শুরু হবে কেউ জানে না।


ছাদবাগানে অনেক ফুল ফুটে আছে।
অন্ধকারেরও একধরনের আলো হয়।
সে আলোয় গাছ দেখতে হয়, ফুল দেখতে হয়,
পাতার কাঁপুনির শব্দ শুনতে হয়।
ঝিঁঝিঁর ডাক শুনতে পাচ্ছি, সাথে আরও কিছু পোকার ডাক।


আমার বাসাটা পাহাড়ের পাশেই, আর
সেই আমিই কিনা এর আগে কখনও পাহাড় দেখিনি!
দিনের আলোয় পাহাড়ের গায়ে বারো রকমের সবুজরং
না দেখার খেসারত আজ রাতের চাবুক খেয়ে দিতে হচ্ছে।


আমার সামনেই দুটো ক্রিস্টমাস-ট্রি। ওদের পাতায় পাতায়
অনেক রাত্রির গ্লানি লেপটে আছে। আমার কখনও জানা হয়নি।
ওখানে দাঁড়িয়ে দেখি, পাহাড়ের পাশ দিয়ে যে পিচের রাস্তাটি চলে গেছে,
রাতের আলোয় সেটি ধবধবে হয়ে আছে, ঠিক সফেদ নয়,
তবে ধবধবে। উত্তর-পশ্চিম বরাবর হলদেরঙের বিল্ডিংটার তিনতলার বারান্দায়
রেলিং ধরে এক কিশোরী বাঁশি বাজাচ্ছে…
আমি বুঝতে পারছি, আজও বাঁশি বাজে।


দুটো পুলিশের গাড়ি। স্পিড স্লো। একটা পুরনো রাস্তা। পাশেই এক বৃদ্ধা। হাঁটছেন।
বৃদ্ধদের পুলিশ কিছু বলে না। বৃদ্ধরা চোখে কম দেখে, কানে কম শোনে।
অতএব, ওরা পুলিশ কম বোঝে। ওদের ঘাঁটিয়ে কোনও লাভ নেই।


আমি আরও লিখতে চেয়েছিলাম। এ সময়ে অনেক লিখতে হয়, কেননা
ছাদের গায়ে গায়ে মেঘের ঘ্রাণ…এ তো সহজলভ্য কিছু নয়!
মশা কামড়াচ্ছে। ওরা আজ মসকুইটো ভ্যাপোরাইজারকেও পাত্তা দিচ্ছে না।
ওরা আমায় এখানে থাকতে দেবে না। আমায় নামতে হবে।
আমি ছাদের ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছি।
পেছন থেকে ওদের বলতে শুনছি…
স্যার, আজকের এই ফাজলামোটা আরও আগে করলে হতো না?
আমি জানি না এর উত্তরে কী বলতে হয়। আমি শুধুই নেমে যাচ্ছি…