যদি তখন দেখা হয়ে যায়

 
অনেক অনেক কাল পর,
যখন তুমি থুড়থুড়ে বুড়ো হয়ে যাবে, বার্ধক্যে ঢেকে যাবে তোমার সমস্ত শরীর, দুই-পা ছেড়ে তিন-পা নেবে বাধ্য হয়েই,
তখনও তোমার কুঁচকে-যাওয়া চামড়ায় হাত বোলাতে বোলাতে বলব,
‘আহা, এখনও থেকে গেছ কত চমৎকার তুমি!’


অনেক অনেক কাল পর,
যখন তুমি সোজা হয়ে হাঁটতেই পারবে না আর, পা দুটো আর চলবেই তো না, থরথর করে কাঁপবে দুহাত তুলতে গেলেই,
তখনও তোমার হাত দুটোকে মুঠোয় নিয়ে তালুতে শুধুই চুমু খেয়ে যাব আর বলব হেসে,
‘আহা, এখনও কত সুঠামদেহী, আমার লক্ষ্মী বাবুইপাখি!’


অনেক অনেক কাল পর,
যখন কথা বলতে গেলে তোমার কথাগুলি সব আটকে যাবে, চোখ দুটো পুরোপুরিই ঝাপসা হবে, মাথার যত চুল ছিল সব ঝরেই যাবে,
তখনও তোমার পিঠে ভালোবেসে হাত রাখব আর বলব হেসে বারেবারে,
‘আহা, এখনও কী জোয়ান আমার এই পুরনো পাগলটা, দেখো!’


অনেক অনেক কাল পর,
যখন তোমার দাঁতগুলি গুনেফেলা যাবে মাত্র দুই আঙুলের কড়ে, ফিক করে হেসে উঠবে তুমি ফোকলাদাঁতে, ঠোঁটের ফাঁকে শূন্যদাঁতের মাড়ি বেরোবে নড়লেই চোয়াল,
তখনও আমি তোমার দুগাল ধরে আলতো টেনে আদর করে বলব হেসে,
‘আহা, এখনও এমন তাজা মিষ্টি হাসি ঠিক আগের মতন!’


অনেক অনেক কাল পর,
যখন তোমার বুকের চামড়া ঝুলে পড়বে, ভুঁড়ির মেদে সারাশরীর নুয়ে পড়বে, সমস্ত শরীর হবে একাকার অস্থি-মাংস-চামড়াভাঁজে,
তখনও তোমার বুকে বুক ঠেকিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে ফেলব,
‘আহা, এখনও কত উষ্ণ আদর-মায়া-শান্তি ছড়ানো এই বুকজুড়ে!’


অনেক অনেক কাল পর,
যখন তুমি হবে হাজারো রোগে জর্জরিত, মেজাজটা হবে খিটখিটে খুব, ভাঙাগলায় সারাক্ষণই খ্যাকখ্যাক করে কাশবে ভীষণ,
তখনও তোমার ওই ঠোঁটটায় চুমু খাব মুগ্ধ হয়ে আর আমার মন বলবে,
‘আহা, এখনও তুমি কেমন ছড়াও জাদু সুরেলা-মধুর কণ্ঠে তোমার!’