যে ছায়া আলোর অধিক/ এক

 - দুঃখিত, দাদা! আমি পারব না।
- আমায় নাকি আপন ভাবেন! এ-ই তার নমুনা?
- সেটা প্রমাণের জন্য কি আর্থিক সহায়তা নিতে হবে? একজন মানুষ যখন অন্য একজনকে বলে, Don’t leave me, তখন সেটার মানে দাঁড়ায় মানসিকভাবে সহয়তা করা! আমার হাত আর ঠিক হবে না…ইন্ডিয়া-টিন্ডিয়া ওই সব জায়গায় না গেলে! কারণ টিউশনের সব টাকা আমি ডাক্তারের পিছনে শেষ করেও কোনও ফল পাইনি। এই সময়টাই অসময়ের। এখন তো সততার পুরস্কার এমনই হওয়া দরকার, হয়েছেও!
- আমি চাইতে পারি না আপনার পাশে একটু হলেও দাঁড়াতে? আপনাকে সহায়তা করতে? একজন মানুষ হিসেবে এটা তো আমার দায়িত্ব।
- সহায়তা? আমার মানসিক সহায়তা দরকার, আর কিছু নয়! আর একটা কথা বলে নিই। আমি আপনাকে টেক্সট পাঠানোর সময় ভয়ে থাকি, আপনার কাছে করা অ্যাক্সিডেন্টাল বানানভুলও অনেক পীড়া দেয় আমাকে! আপনি আমার সাথে ফোনে কথা বলেননি, মনে রাখবেন।
- আপনি আমাকে আপনার পাশে দাঁড়াতে দেননি, এটা বেশি মনে রাখবেন!
- দাঁড়াতে দিচ্ছি না ভাবছেন? যদি না দিই, তবে আমার প্রতি আপনার আগ্রহ শেষ হয়ে যাবে? যদি দিই, তবে যাবে? আগ্রহ এত তাড়াতাড়ি শেষ হলেও Don’t leave me…কথাটি কিন্তু শেষ হবার নয়! মাথায় রাখবেন!
- আমি জানি। কিন্তু আপনি আমাকে দূরে সরিয়েই রাখতে চান।
- যেমন আপনি আমায় ফোন না দিয়েই থাকতে চান!
শুনুন, কিছুক্ষণ আগে আমার স্টুডেন্টদের লাইট জ্বালিয়ে পড়ানোর জন্য বাজে কথা শুনেছি। জবাব দিলে আজকের খাবারটা শেষ!...কয়েকটা স্যাডটোন পাবার জন্য কথাগুলো বলিনি, বরং ফোনে আপনার সাথে একবার জোরে চিৎকার করে কাঁদার জন্য বলেছিলাম। আমার জীবনে এমন কোনও মানুষ নেই যার কাছে আমি কাঁদতে পারি। এ জগতে হাসির সঙ্গী তো অনেকেই হয়, কান্নার ভাগীদার হয় কে? মানুষ কার সামনে কাঁদে, জানেন? তার সামনেই যাকে সে আপন ভাবে। যা-ই হোক, আমি আপনার কেউ না, কোনও দিন কিছু হবও না। বাইরের মানুষ বাইরেই থাকে…আর ভাবুন তো, আপনি নিজে কি কোনও দিন এমন অনুরোধ রাখতেন? যে আপনাকে ঠিকমতো চিনেই উঠল না, শুধু মেসেঞ্জারেই কথা, এমন কারও কাছ থেকে আপনি সাহায্য নিতেন? তাও আর্থিক সাহায্য? আপনি এভাবে নিজের লজ্জার কথা, পরাজয়ের কথা কাউকে মেসেঞ্জারে লিখতেন আদৌ? পারতেন লিখতে? আমি কিন্তু লিখেছি। নিজেকে পরাজিত সৈনিকের জায়গায় দেখতেই তো কেউ চায় না, অন্যকে দেখানো তো অনেক পরের কথা! সে সাহস আমি দেখিয়েছি। অবশ্য আমি লিখতাম না কোনও দিনই। যে কষ্টের পুরস্কারই পেলাম না, তেমন তুচ্ছ গল্পের কথা এক মেসেঞ্জারেই বলা যায়, তাই বলেছি। আমি কারও কেউ না। আমার কিছু নেই পৃথিবীতে। কেউ নেই আমার।
- স্টুডেন্টদের লাইট অফ করে পড়ায় কী করে?
- জানি না। যেমন করে ২১ বছর চামড়ায় ও চোখে অন্ধকার মেখে বাঁচা যায়, তেমন করে।
- আমি সত্যিই জানতে চাইছি! লাইট অফ করে পড়ানো যায়?
- আমাকে প্রশ্ন না করে আপনার ভগবানকে প্রশ্ন করুন! লাইট জ্বালালে কারেন্ট বিল উঠবে, তাই! আমার মা আমাকে আমার টিউশনির জন্য বাসার কারেন্ট খরচ করতে দেবেন না। আমি টাকা কামাই করছি, তার জন্য বাসার সম্পদ কেন ব্যবহার করব? এইবার বুঝেছেন? যা-ই হোক, বিদায়!
- ভগবানের সাথে আমার তেমন সুসম্পর্ক নেই। আমরা কেউ কাউকে ঘাঁটাই না তেমন একটা। তাই ওঁকে জিজ্ঞেস করতে পারছি না আপাতত।
- আহা! আইরনি অব দ্য ইয়ার! সুসম্পর্কটা আছে তবে কার সাথে? যিনি সবাইকে জবাব দিতে পেরেছেন, তিনিই যদি বলেন সুসম্পর্ক নেই, তা হলে কিছু বলার নেই।
- জবাব দিতে আপনি পারবেন না, এটা মনে হচ্ছে কেন?
- আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার…গানটি আবারও শুনুন, উত্তর পেয়ে যাবেন! তার পর আমাকে ভুলে গিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হোন।
৯ ডিসেম্বর এই মহাভাগ্যবতীর জন্ম হয়েছে। ২৬ বছর হবে। এখনও সব আগের মতোই আছে! বাহ্! চলুক এমন! কোনও চাকরি-টাকরি না পেলে নিশ্চয়ই কোনও ছেলেও আসবে না। ছেলেরা মুখে বলে বউয়ের কামাই খেতে চায় না, অথচ কামাই করে না, এমন কাউকে বিয়ে করতেও চায় না!…আবার যেকোনও চাকরি না, তেমন একটা চাকরি করতে হবে, যেন অতীত মুছে যায়। তাই তো! সেটার জন্য যে আলাদা পরিশ্রম করতে হবে, আর তা যে আমি আর কোনও দিনই করতে পারব না, এটা আপনাদের ভগবানই আমায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। মেডিকেল রিপোর্ট বলে, আমি আর সুস্থ হব না, আমাকে এরকম থেকেই জীবনটা পার করে দিতে হবে। আমার সব বান্ধবীর বড়বড় চাকরিওয়ালাদের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। আর আমি? ফেসবুকে দুইটা ধাক্কা খেয়ে বসে আছি! পরিবার ছাড়া কি কারও বিয়ে হয় নাকি? হয়, সিনেমাতে হয়। এত সুন্দর-টুন্দর না হলেও পারতাম। আয়না দেখলে কষ্ট আরও বাড়ে। I am a bald girl who just won a comb! ন্যাড়ামাথায় একটি চিরুনি উপহার পেলাম! ভালো হলো না ব্যাপারটা? In spite of having all the required qualities, I will not be accepted by anyone! What a destiny! Just praiseworthy! There is nobody to feel my agony! People pretend as if they realized me…at the end of the day, I am left with only humiliation! আমার মত নরকযন্ত্রণা ভোগ করার জন্য পৃথিবীতে আর যেন কোনও নীরজার জন্ম না হয়। আমাকে দিয়েই এমন ইতিহাসের যেন সমাপ্তি ঘটে। আপনার ফোনের জন্য জীবনে আর কখনও এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করব না। বিদায়! In spite of having all the required qualities, I will not be accepted by anyone!
- শুভ সকাল! কেমন আছেন?
- The Outsider…Albert Camus…Existentialism নিয়ে লেখা। খুব পছন্দের বই!
- আমার খুব পছন্দের টপিক ওটা।
- আমারও!
- আপনার প্রেমের গল্পটা, মানে উনার সাথে সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ, এবং এখন অবধিটা বলবেন? আমি লিখতে চাই ওটা।
- সাথে অরুন্ধতী রায়ের The God of Small Things! সাংঘাতিক সুন্দর! এই দুইটা বই না পড়লে, আপনার মতো করে বলব--অনেক পাপ হবে!
- আমি এ দুটোর একটিও পড়িনি এখনও।
- আপনার ভালোবাসার সাথে The God of Small Things ব্যাপারটা connected…কিছুটা হলেও! ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে বলছি না! সময় পেলে পড়ে নেবেন। টেক্সট দুটো ছোট, কিন্তু অনুভবের জায়গাটা বিশাল! খুব অল্প জায়গায় অনেক বড় একটা পৃথিবীর ছবি দেখতে পাবেন।
- পড়ে দেখব তা হলে।
- সমাজে আমাদের কতগুলো rules আর regulations দিয়ে দেয়, যার বাইরে গিয়ে কাউকে ভালোবাসাটা অন্যায়ই না শুধু, রীতিমত ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের অন্নপাপের মতো! ওখানে একটা কথা ছিল--Only that once again they broke the Love Laws. That lay down who should be loved. And how. And how much. অতটা সত্যকথন বা শক্তকথন, যা-ই বলুন না কেন, অরুন্ধতী রায়ের মতো এত সহজে খুব বেশি লেখক লিখে ফেলতে পারেননি। সমাজ চায় না সমাজের মানুষ সমাজের নিয়মনীতির বাইরে হাঁটুক। আবার সেসব নিয়মনীতির মধ্যে হেঁটে যদি কেউ দুঃখে পড়ে, তার পাশে সমাজ আর দাঁড়ায় না। দুঃখ নেওয়ার কোনও মানুষ নেই, কোনও সমাজ নেই। নিজের দুঃখ নিজেকেই নিতে হয়। ভালো কথা, খেয়াল করেছেন, আমি কিন্তু আজ ভয়ে কথা বলেছি! তোতলাচ্ছিলাম!
…আমি এই কষ্টের ভেতরে থেকে গিয়েছি--আনরিপ্লাইড! অসংখ্য মেসেজ! শুধুই সিন! কেউ আমার মেসেজ দেখছে, মানে আমি যে মেসেজ দিয়েছি তা দেখছে, তবে আমাকে দুলাইন লেখার কোনও তাগিদ অনুভব করছে না। আমি তেমন কেউ নই যাকে রিপ্লাই দিতেই হবে! আমি একজন মানুষের কাছে দেখার যোগ্য, কিন্তু তার কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার যোগ্য নই। হ্যাঁ, আমি এমনই মানুষ।
- আপনি ভুল বিকাশ নম্বর বলেছেন।
- আমার ওই নম্বরটাতে বিকাশ চালু করা নেই। গ্রামীণে আছে।
- তবে সেটি দিন। জিপি নম্বর।
- এটা কি ঠিক হচ্ছে, স্যার?
- দেবেন না?
- স্যার, আমি পরের মাসে নিতে পারব থেরাপি। বেতন পাব, তখন নেব। আর কয়েকটা দিনই তো!
- বিকাশে রেখে দিন, খরচ তো করে ফেলছেন না এখুনিই, তাই না?
- শর্ত আছে! আপনি আমাকে আর ফেসবুক ভাবতে পারবেন না, আমার সাথে জীবনের ছোটখাট বিষয়গুলো শেয়ার করবেন। তা হলেই নিতে পারি।
- রাজি!
- নম্বর জানাচ্ছি। একটু সময় লাগবে।…মেইলে দেখুন, গ্রামীণ নম্বরটা!
- থ্যাংকস। বিশেষ কাউকে কিছু দিতে পারলে অনেক শান্তি লাগে। আবারও থ্যাংকস!
- আমি কি বিশেষ কেউ? সত্যিই? না কি টাকাটা দেওয়ার জন্যই বললেন কথাটা? আচ্ছা…আজকে যে অধিকার থেকে এই টাকাটা নিলাম, সে অধিকার যদি আপনার ওপর প্রয়োগ করতে না পারি, তবে সেদিন আমিও অভিমান করে আপনার ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে চলে যাব!
- রাজি।
- Please don’t leave me! আপনার জন্য অনেক দিন পর আজ আমি হেসেছি। অনেক মাস পর হেসেছি। আপনার একটি ফোনে বহু দিন পর আমি প্রাণ খুলে হেসেছি।
- হাসবেন। হাসলে আপনাকে ভালোলাগার কথা। খেয়েছেন? সত্যিটা বলবেন!
- হ্যাঁ। আপনি?
…একটা অনুরোধ রাখবেন? আপনার খুব পছন্দের নিজের একটি ছবি আমাকে পাঠাবেন?
- হ্যাঁ, দেবো।
- ছবিটা দিলেন না? ওটা আমি নিজেই নিতে পারতাম ফেসবুক থেকে। কিন্তু আমি আপনার নিজের পছন্দের কোনও ছবি চাইছি। একটু স্পষ্ট দেখা যায় মুখটা, তেমন কোনও প্রিয় ছবি আছে কি?
…এটা কী দিলেন! সবই কি অন্য দিকে মুখ-করা ছবি আপনার প্রিয়? নাক, চোখ সব বোঝা যায়, এমন কোনও প্রিয় ছবি কি নেই? কত ছবিই তো দেখলাম! বরং আমিই একটা খুঁজে দিই!
…সিংগেল ছবি লাগবে। দিন না! চাদর-গায়ে একটা ছবি ছিল না? শীতকালে তোলা, মিতুদিদিদের বাড়িতে, সিলেটে। যা দিলেন, তা তো তো ফেসবুকেও আছে। সবচেয়ে প্রিয় ছবিটা দেবেন, সবচেয়ে…! লাস্ট চান্স! ভেবে পাঠান! আমার ছবিটা একটু লাগবে…
…মানুষ যখন মেসেজ সিন করে না…কেমনটা যে লাগে! এটা সত্যিই একটা ক্রাইম!
- আমার সংগ্রহে নেই। খুঁজে দিতে হবে কারও কাছ থেকে।
- আপনার টাকাটা নিয়ে খুব খারাপ লাগছে। আপনার বিকাশ নম্বরটা জানাবেন, প্লিজ? আর ওই তিনটা ছবিই কি আপনার প্রিয় ছবি? আমার সত্যিই লাগত একটা ছবি! দেবেন না?
- আমি সত্যিই আমার ল্যাপটপে ওরকম গুছিয়ে ছবি রাখি না। আর বলতে কী, আমার কোনও প্রিয় ছবিই নেই। আমার আগের আইডির সাথে আমার কয়েক হাজার ছবি হারিয়ে গেছে। ভাবতে পারেন, এমন কিছু ব্যক্তিগত ছবি সেখানে ছিল যেগুলির কোনও ব্যাকআপ আমার কাছে নেই! কত সময়, শ্রম ও অর্থ ক্ষয় করে সেগুলির জন্ম হয়েছিল। কত আবেগ জড়িয়ে ছিল অনেক ছবির সাথেই। কিছু ছবিতে গল্প ছিল, হাসি ছিল, কান্নাও ছিল। আজ সেগুলির কিছুই আর নেই! কত সহজ…হারিয়ে যাওয়া! এর পর থেকে ছবি নিয়ে আমার তেমন কিছু উচ্ছ্বাস বা অনুভূতি নেই। আপনি বারবার বললে এটা আমার মধ্যে মানসিক চাপ তৈরি করবে। আপনি নিয়ে নিন না আপনার নিজের মতো করে! আমি যা দিই, তাও তো আপনার পছন্দ হচ্ছে না। ছবি নিয়ে আমার আর কোনও আবেগই কাজ করে না আগের মতো। প্রিয় ছবি না থাকলে আমি কী করতে পারি? আমি চাইলে তো বানিয়ে বানিয়ে বলতে পারতাম অমুক অমুক ছবি আমার প্রিয়। আপনার কাছে বানিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। থেকে দেখিই না অন্তত একজন মানুষের কাছে সৎ ও অকপট! আমাকে ক্ষমা করবেন।
- মানসিক চাপ! কী সুন্দর শব্দের পছন্দ! বাহ্‌!
- হ্যাঁ, বলেইছি তো, ছবি নিয়ে আমার উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেছে। ছিল একসময়, ভীষণ রকমেরই ছিল, অনেক ছবি তুলতাম…এখন আর নেই। আমাকে ফেসবুকে তেমন ছবি শেয়ার করতে দেখেন কখনও? আমার ওয়ালে কেবলই লেখা পাবেন, ছবি পাবেন না। কোথাও গেলেও সবাই কী আনন্দ নিয়ে ছবি তুলতে থাকে, আমি তুলি না, তবে তুলে দিই। একটা সময় ছিল যখন আমি প্রতিটি ফ্রেমেই নিজেকে বন্দি করতে চাইতাম! এখন আমি বরং আশেপাশের প্রকৃতি দেখতে থাকি, মানুষের আচরণ বোঝার চেষ্টা করি। এতে একটা লাভ অবশ্য হয়েছে। আগে ক্যামেরার লেন্সে পৃথিবী দেখতাম, এখন চোখের লেন্সে দেখি। যা-ই বলুন কেন, চোখের লেন্সে যে পৃথিবী দেখে, আর মনের মধ্যে রেখে দেয়, সে বড় আনন্দ নিয়ে পৃথিবীটাকে দেখতে পারে। এ আনন্দ ঠিক কেমন, যে ক্যামেরার লেন্সে পৃথিবী দেখে ফেসবুকে আর ইন্সটাগ্রামে রেখে দেয়, সে বুঝতে পারবে না।
- আচ্ছা, দরকার নেই অত কথার ফুলঝুরির। ছবি লাগবে না।
- এমনিতে আপনাকে ছবি দিতে পারি, কিন্তু প্রিয় কি অপ্রিয়, তা নিয়ে সত্যিই ভাবি না। কোনও একটা ছবিকে প্রিয় বানানোর ভাবনা মনে আসে না, আমি কী করতে পারি? এই নিন কিছু, সেদিন তোলা।
- বললাম তো দরকার নেই। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন। লাগবে না কিছু।
- রেগে যাচ্ছেন। আমি এমন একটা মানুষ, যাকে এ সংসারে কেউ কখনও বুঝল‌ই না। সবাই আমাকে ব্যবহার করে, কেউ কাছে নিতে চায় না। সবাই চায় আমি ওদের সহ্য করি, কিন্তু আমার কোনও কিছু কেউ সহ্য করে না। যে যার পথে চলে আমারই প্রত্যক্ষ সাহায্যে, অথচ আমাকে কেউ কখনও আমাকেই আমার পথে চলতে দিল না। আমি নিজের অর্থে পরের শর্তে জীবন-কাটানো মানুষ। আমাকে মুখের উপর যেকোনও কথাই বলে ফেলা যায়। আমি তো এই সংসারের ডাস্টবিন, যার যত কথা-দূষণ, সবই নীরবে গ্রহণ করে নিই। নিজেকে পচিয়ে সবাইকে সতেজ রাখি। সবাই-ই এরকম করে আমার সাথে, আর আপনি তো মাত্র সম্প্রতি আমাকে চিনছেন। বুঝবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তবে ভুল বুঝছেন, কষ্ট শুধু এটাই! দেখুন কেমন একটা জীবন আমার…যে আমায় চিনে, সেও আমায় ভুল বোঝে; যে আমায় চিনে না এখনও, সেও আমায় ভুল বোঝে! পাবেন আমার মতন এমন কাউকে যাকে নির্ভার মনে হাসিমুখে ভুল বোঝা যায়?
- I will never leave you until you leave me. আমি কিন্তু এতগুলো ছবি চাইনি। একটিই চেয়েছিলাম, আপনার পছন্দের কোনও ছবি! আর আপনি আপনার মোবাইলের সব ছবি পাঠিয়ে দিয়েছেন! সহজ কাজ তো…সিলেক্ট করো আর সেন্ড করে দাও! তা-ই তো করেছেন, না?
…আচ্ছা, দেখুন তো এটা কেমন?
…পৃথিবীতে যে সামান্য কয়েক জন মানুষ খবর নিতে চায়, পাশে থাকতে চায়, তাদের বার্তাগুলো চেক করা দরকার। আপনার খোঁজখবর নেবে কোনও স্বার্থ ছাড়াই, আপনার কাজ নয় কেবলই আপনাকে ভালোবেসে আপনার কাছে থাকতে চাইবে, এমন মানুষ পাবেন কয়টা, বলুন? এমনকি কখনও একদিন ‘প্রতিদিন’ আসা মেসেজটা হঠাৎ না এলে দিনে একবার হলেও অন্তত দেখা দরকার, ভাবা দরকার--আজ এল না কেন?
এভাবেই আত্মার বন্ধনগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আত্মার বন্ধনগুলো রাগ করতে জানে না, শুধু একবুক অভিমান নিয়ে নীরবে চলে যেতে জানে…যাদের চলে-যাওয়া একদিন কোনও এক লোনা-রাতের নৈঃশব্দ্য জানিয়ে দেয়, আগেও দিয়েছে এবং সামনেও দেবে…দেবেই! জগতে কিছু রীতি নীরবে নিভৃতে পালিত হয়ে চলে--শতাব্দীর পর শতাব্দী! কেউ সেগুলি চোখে দেখতে পায় না, কেবল অনুভব করতে পারে।
- ভুল বুঝো না, অনুরোধ করছি। আজ সারাদিনই বাইরে ছিলাম। রাতে ফিরে কবিতা লিখেছি, ক্লান্ত শরীরে এখনও পড়াশোনা করে যাচ্ছি। আমি সত্যিই ব্যস্ত, আমাকে সত্যিই ব্যস্ত থাকতে হয়। কেবলই চাকরি, সামাজিকতা ও সংসার নিয়েই আমি বেঁচে থাকি না। আমাকে মনের চর্চা করতে হয়, ‘লেখালেখি’ নামের এক অভিমানী প্রেমিকাকে সময় দিতে হয়। ওইটুকু করতে না হলে বেঁচে যেতাম। অনেক অবসর থাকত, আরও একটু আরাম নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম অন্য দশটা মানুষের মতো। যাকে সৃষ্টি করতে হয়, তার জীবনের সমস্ত উপভোগ আসে বেদনার মধ্য দিয়েই। পার্থিব অনেক সুখ থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখে নিজেকে পুড়িয়েই সে আলোর দেখা পায়। কিছুই করার নেই। কেউ বুঝতে পারবে না এ যে কী এক কষ্টের জীবন! সৃষ্টির আনন্দ তো অসীম…রাগমোচনে যে আনন্দ হয়, তার চাইতে সৃষ্টির আনন্দ কিছুমাত্র কম তো নয়, বরং বেশিই! এ বড় শক্ত প্রেম, এখান থেকে পালানোর কোনও পথ নেই। এই প্রেমে কে কখন পড়ে যায়, সে নিজেও বুঝতে পারে না। এর পর? সে প্রেমকে কী করে বয়ে বেড়াতে হয়, প্রেমিকা কী পেলে খুশি হয়ে ওঠে, প্রেমিক হিসেবে নিজেকে ক্রমেই উপরের স্তরে নিয়ে যাওয়ার এক ধরনের অদ্ভুত তাগিদ…এইসবের কোনও ম্যানুয়েল নেই, কোনও ম্যাপ নেই সেই পথের। অন্ধের মতো কেবলই সামনের দিকে হাতড়ে চলা! বাই দ্য ওয়ে, আপনি কি জানেন, কাউকে অবিরাম ভুলবোঝা একটা ভয়ংকর রোগ? এখন ঘুমাব। ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি!
…শুভ দুপুর। রাগযাপন চলছে এখনও? না কি ব্যস্ত?
…শুভ রাত্রি।
…শুভ সকাল! এত অহংকার আপনার! যা-ই হোক, ভালো আছেন তো?
- স্যার, নমস্কার! আপনি তো মাত্র এই কয়েক দিনেই আমাকে অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করলেন। ব্যাপার না! আপনি তো মাত্র কয়েক দিনের জন্যই, তাই এটাই স্বাভাবিক। যে জায়গায় মানুষ কয়েক দিনের অতিথি, সে জায়গা নিয়ে অনেক কিছু বলে ফেলাই যায়। আর যে জায়গার সে অতিথি নয়, বরং বসিন্দা, সে জায়গা নিয়ে কিছু বলার সময় জিভ ভারী হয়ে আসে, বুকে এসে কী যেন বাধে, নিজের গায়ে এসে পড়ে! আপনার জন্য আফসোস আর সমাবেদনা রইল, কারণ আপনি এখনও অভিমান আর রাগের পার্থক্যই বোঝেন না। যা-ই হোক, আমার বিপদের সময় আমার মত অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকব আজীবন। আপনি ঠিকই বলেছেন, কাউকে ভুলবোঝা সত্যিই একটা রোগ। আমি আপনাকে ভুলই বুঝেছিলাম। এই কয়েক দিনে আপনার কাছ থেকে ছোট্ট একটা টেক্সট এলেও আমার চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়েছে। আপনি রিপ্লাই না করলে বুকের ভেতরে এক ধরনের ব্যথা অনুভব করেছি। ‘মায়া’ বড্ড খারাপ জিনিস, জানেন তো? কারও প্রতি যখন একটু করে মায়া জন্মে, তখন তাকে প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছে করে…একসময় সে মায়া আশ্রয় বানিয়ে ফেলে এই মনে, কখন যে দুম করে তা বেড়ে যায় এবং বেড়েই চলে বেপরোয়া গতিতে মনের সেই নিরাপদ ঘরে, কেউ বুঝতেই পারে না! ওটা পরিমাণে বেশি হবার আগেই তাই মুছে ফেলতে হয়!
আপনাকে আমি আর কখনওই মানসিক চাপে রখব না কিংবা মেসেজ সিন করেননি বলে ভুল বুঝব না। You are left forever. খুশি? সমবেদনা রইল আপনার জন্য।
- আমার এ জীবনে আমার কাছে সবচাইতে দামি (এবং অপরিহার্য) যে কয়েক জন মানুষ আছেন, তাঁদেরই আমি কখনও টেক্সট পাঠাই না, ফোন করি না--এমনকি মাসের পর মাস! ফোন করা, মেসেজ দেওয়া আমার ধাতেই নেই। কী আর করা যাবে! নেই, এটাই সত্য। তবে এ কাজের জন্য তাঁরা আমাকে কখনও ভুল বোঝেন না, যদিও আক্ষরিক অর্থেই তাঁরা এই মানুষটির জন্য জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত! আমিও তাঁদের ততটাই ভালোবাসি। এমন কোনও কাজ নেই, যা আমি তাঁদের জন্য করতে পারব না। তাঁদের কেউ যদি আমায় বলেন, তুমি ওই এগারো তলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ো, তবে আমি নির্দ্বিধায় তা-ই করে ফেলব, কেননা আমার মধ্যে বিশ্বাস আছে, নিশ্চয়ই এমন কোনও ব্যবস্থা করা আছে যাতে আমি লাফিয়ে পড়লেও মরে না যাই। এর নাম নির্বুদ্ধিতা নয়, এর নাম বিশ্বাস। বাবা-মা তাঁদের শিশুটিকে শূন্যে ছুড়ে দিলেও শিশু হাসিমুখেই থাকে, এর নাম দুঃসাহস নয়, এর নাম নির্ভরতা, এর নাম আস্থা। এ পৃথিবীতে যার বিশ্বাস করতে পারার কেউ নেই, তার চাইতে দুর্ভাগা আর কেউ নেই। সে কাউকে কিছু বলতে পারে না, সমস্ত না-বলা বেদনা বুকে জমিয়ে জমিয়ে তার দম বন্ধ হয়ে আসে! মুখে-বলা, টেক্সট-দেওয়া এসব ভালো হয়তো, কিন্তু আমার মধ্যে ঠিক আসে না। যোগাযোগ-ম্যানিয়া, নিদেনপক্ষে যোগাযোগ-অভ্যস্ততা থাকলে হয়তো আমি এ দেশের সবচাইতে ক্ষমতাধর মানুষগুলির মধ্যে একজন হতে পারতাম। অনেক বড় বড় মানুষের সাথে মেশার সুযোগ এ জীবনে হয়েছে…আমি তাঁদের সাথে নিয়মিত দূরে থাক, কালেভদ্রেও যোগাযোগ রাখিনি। আমার জীবনে যাঁরা আমার সাথে আছেন, তাঁরা তাঁদের গুণেই আছেন, আমার গুণে নয়। তাঁরা কিছুই প্রত্যাশা করেন না আমার কাছ থেকে। এটা আমার পরম সৌভাগ্য! প্রত্যাশাহীন বন্ধু পাওয়া জীবনের এক পরম ঐশ্বর্যলাভ!
আশা করছি, আপনি আমার কথাগুলি পড়েছেন। এখন আপনি চলে যেতে চাইলে যেতে পারেন, কাউকে আটকে-রাখা সম্ভব নয়, আমি তা করিও না। আমি চাই, সবাই তার নিজের জীবনটা নিজের শর্তেই কাটাক। কাউকে তার নিয়মে চলতে না দিয়ে নিজের নিয়মে চলতে বাধ্য করা অনেক বড় একটা পাপ।
- শুনুন স্যার, আমি আপনার কাছে দামিও না, গুণীও না। আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ ও নগণ্য এক ফলোয়ার মাত্র। আমি খুব অদ্ভুত এক কপাল নিয়ে জন্মেছি। যেখানে আমি যদি কাউকে বা কোথাও হান্ড্রেড-পার্সেন্ট দিই, সেখান থেকে আমি শূন্য হাতে নিয়ে ঘরে ফিরি। যখন ক্যাম্পাসে আমি সম্পূর্ণ সততা নিয়ে ভাত-জলও না খেয়ে সারাদিন এককাঁধে ব্যাগ নিয়ে পড়াশোনার জন্য ছোটাছুটি করতাম, রাত ৮টায় বাসা এসেও খাবার পেতাম না, পরীক্ষার খাতায় শতভাগ সততা নিয়ে লিখতাম, তখন আমি আমার যোগ্যতার তুলনায় তাদের থেকে অনেক কম সিজিপিএ পেয়েছি, যারা সারাদিন নাচত, গাইত, নকলে সেরা ছিল। দামি পোশাক, দামি খাবার, দামি বন্ধু, দামি মার্কস ও দামি সুখ, আর দামি যা-কিছু আছে, তার সবই তাদের একচেটিয়া অধিকারে ছিল। জীবন তাদেরই সব কিছু দেয়, যারা জীবনকে তেমন একটা তোয়াক্কা না করেই কাটিয়ে দেয়।
আমি কাউকে অমূল্য আবেগ দিয়েও কখনও সেখান থেকে অপমান ছাড়া আর কিছুই পাইনি। এ জীবন আমাকে এইটুকুই শিক্ষা দিয়েছে--আমি কারও কাছ থেকে আমার শতভাগ আবেগের আর সততার একভাগ মূল্যও কখনও পাব না।…আগে ব্যাপারগুলো মানতে আমার কষ্ট হত। এখন আর সেটি হয় না। আমি কখনও কারও ‘আফসোস’ হতে পারিনি, হয়েছি মানসিক চাপ…সেটা যে কারও বেলায়ই হোক! আমার কথা ভেবে কেউ কখনও একটাও দীর্ঘশ্বাস ফেলেনি।…আপনি কবিতায় লিখলেন, কেউ একজন বলেছিল, তার আয়ু আপনার হোক।
আমি শুধু মুখে বলিনি, কাজে তা করেছি। আমি ২ বছর ধরে আমার ভালোবাসার মানুষের জন্য মন্দিরে পূজা দিতাম, অথচ ভার্সিটি যাবার জন্য আমার কাছে পঞ্চাশ টাকাও থাকত না কখনও কখনও! অনেক দিন গেছে যেদিন আমি খাবার না খেয়ে সে টাকা দিয়ে পুজোর নৈবেদ্য কিনে অভুক্ত শরীরে মানুষটার নামে পুজো দিয়েছি। ঠাকুরকে বলেছি, তুমি ওকে ভালো রেখো, ওর যেন কোনও কষ্ট না থাকে, ওর শরীর যেন সুস্থ থাকে। আর সেই মানুষটিই আজ তার স্ত্রীর সাথে হানিমুনে।…হায়, আমি কারও আফসোস হতে পারিনি কখনও!
আপনার প্রিয় একটি ছবি চেয়েছিলাম, যেকোনও একটি কারণে। আর আপনি? একসাথে সব ছবি দিয়ে দিলেন! ভাবুন তো আপনি কারও সাথে একটু কথা বলতে চাইলেন, আর সে সব স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণ মুখস্থ বলতে শুরু করে দিল! আপনার কেমন লাগবে তখন? আপনি জানেন না, আপনি আমার হৃদয়ের ঠিক কোথায় কষ্ট দিয়েছেন। একটি ছবির সাথে আমার এমন এক দুঃস্বপ্ন জড়ানো যে…
জানেন, এই ২০ দিনে আপনি আমার জন্য একটি ‘মায়া’ হয়ে গিয়েছিলেন। আপনি সেই মানুষটি হয়ে উঠেছিলেন, যিনি অ্যাকটিভ আছেন কি না, মেসেজ করলেন কি না, আর আমাকে ফোন দেবেন কি না…এই ব্যাপারগুলো নিয়ে আমি খুব সেনসিটিভ ছিলাম। আমি রাগযাপন করছিলাম না, আমি তখন কাঁদছিলাম, যা আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। মানুষ রাগে কাঁদে না, অভিমানে কাঁদে, কষ্টে কাঁদে। আপনি তা বুঝলেন না। স্বাভাবিকই তো! আমি যে মাত্র বিশদিনের অতিথি!
আমি অনেক খোঁজার পর একটা ছবি বের করে বলেছিলাম, এটা কেমন? হয়তো আপনি দেখেছেন, নতুবা দেখেননি। জানব কী করে? কোনও রিপ্লাই-ই যে পাইনি!...যে কারণে আমি ছবি চেয়েছিলাম, সেটার আর দরকার নেই। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকুন। দূর থেকে এটাই চাইব।
- আপনি খুব দ্রুত জাজ করে ফেলেন। খুবই বাজে অভ্যেস এটা। আপনার জীবনের অভিজ্ঞতা বেদনার, এর জন্য পৃথিবীর সবাইকে দায়ী বানিয়ে ফেলবেন না। কেউ আপনাকে খুন করল, আর অমনিই তার প্রতিশোধ নিতে আপনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন! তা হলে সে খুনির সাথে আপনার তফাতটা আর কোথায় থাকল? আমি অন্তত এমন করতাম না আপনার জায়গায় থাকলে। মানুষকে মানবিক মন নিয়ে নিতে শিখুন, শুধু আঘাত করেই কথা বলতে এত কষ্ট করে মানুষ হতে হয় না। কথায় বা আচরণে কারও বুক থেকে রক্ত ঝরানো এক ধরনের পাপ।…দিনের শেষে আমরা মানুষ‌ই তো, তাই না?
আর এই ছবিটা ভালো। আমি চেক করতে ভুলে গিয়েছিলাম, কিংবা খেয়াল করিনি। তার জন্য নিজের পায়ের জুতো খুলে এভাবে মারছেন কেন? ক্ষমা করে দিতে শিখুন, মানুষকে সহজ মনে গ্রহণ করতে শিখুন, অনেক শান্তি পাবেন! আপনি নির্দয়তা সহ্য করে বড় হয়েছেন, তাই বলে নির্দয় হতেই হবে?…আসলে কী জানেন, আপনি যেমন মানুষ, তেমন কেউ সততা নিতে পারেন না, বরং কপটতা নিতে পারেন হাসিমুখে। তাই ওরকম একজন মানুষই আপনার কপালে জুটেছিল। মুখে যা আসে, তা-ই বলে গেছেন আমাকে। এর মানে কী? কতটুকু চেনেন আমাকে? আদৌ কি চেনেন? আবারও বলছি, মানবিক হতে শিখুন, একজন মানুষের এর চেয়ে বড় গুণ আর নেই। খুবই কষ্ট দিয়ে ও জাজ করে বাজে কথা বলে যাচ্ছেন আমার সাথে। কেন? ডু আই ডিজার্ভ ইট?
…আমি মরে গেলেও আপনার কিছু এসে যায় না। আর সুস্থ থাকতে বলছেন? বাহ্! একটা সহজ বুদ্ধি দিই, কার‌ও প্রতিই প্রত্যাশার জায়গা তৈরি করবেন না। আমিও এখন আর করি না। আমার পরিবারের কাছেও আমার কণামাত্র‌ও প্রত্যাশা নেই। এমনকি, আমার মৃত্যুর সময়ও যদি কেউই আমার মুখে একফোঁটা জল ঢেলে না দেয়, কোনও দুঃখ নিয়ে মরব না। মন থেকেই বললাম কথাটা! আর প্রত্যাশা যদি করেন‌ও, সেটা পূরণ না হলে ওঁকে ওরকম করে পায়ের স্যান্ডেল খুলে পেটাবেন না। সে বেচারা আসলেই অতটা ডিজার্ভ করে না।
- Ah! Best reward ever!
- Stop judging! Stop judging! Stop judging! It hurts! No one on earth deserves your judgement. Be a human being first, then be a judge…even better, if you don’t become the second one at all and remain just a human being!
…শুভ সকাল!
- এই পৃথিবীতে কিছু বোকা আছে, যাদের জন্ম হয়েছে এমন কাউকে বিরক্ত করার জন্য, যার কাছে ওই বোকাটি একেবারেই মূল্যহীন। বোকারা টেক্সট করে যায় বারবার, লম্বায় অনেক বড় হয় টেক্সটগুলো, দেখতে লাগে অনেকটা গরু-রচনার মত। টেক্সটগুলো পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর সিনও হয়, কিন্তু আনরিপ্লাইড থাকে! বোকাগুলো ভাবে, হয়তো বাজেভাবে লিখলেও অন্তত কিছু লাইন সে লিখে পাঠাবে। কিন্তু না, কোনও রিপ্লাই আসে না। যদিও-বা কোনও উত্তর আসে, তবে সেটা দেখে মনে হয়, এমন উত্তর আসার চেয়ে হয়তো কোটি বছর আনসিন মেসেজের দিকে তাকিয়ে থাকা ঢের ভালো ছিল। তার পর একদিন দেওয়ালে যখন পিঠ একেবারেই ঠেকে যায়, তখন বোকাদের মেসেজ ছোট হতে থাকে। তবুও সেই মানুষটি অ্যাকটিভ কি না, তাকে ব্লক করল কি না, সব খুঁটেখুঁটে দেখে! একদিন সে দেখে, সে ব্লকড…যোগাযোগের সব মাধ্যম থেকেই! তবুও বোকারা বোকাই থাকে। ক্যালেন্ডারে তাকিয়ে দেখে, তার জন্মদিনটা আসতে আর কত দিন বাকি যেন…এখনও ঠিক আগের মতোই ওরা রাত জাগে, প্রহর গোনে! বোকাটাকে কি সে ভুলে গেছে একেবারেই? হয়তো গেছে। কিছু মানুষের জন্য যে বিস্মৃতির ডায়রিটাই বেঁচে-থাকার একমাত্র জায়গা! এভাবেই বোকাদের জীবন কেটে যায় অন্যের জীবনে বাঁচার মিথ্যে স্বপ্ন বুনে, যখন অন্য মানুষটি বাঁচে তার নিজের জীবনের স্বপ্নপূরণের নানান ব্যস্ততা নিয়ে। বোকারা কেবলই কাঁদতে জানে আর ভালোবাসতে জানে।
…আচ্ছা, আমি যদি আপনাকে কিছু গিফট করি, আপনি কি নেবেন? আপনি ‘হ্যাঁ’ বললে আমার ভালো লাগবে।…A request from an inhuman, angry, stubborn human being!
…Then nobody stays! Don’t leave me in spite of getting hurt…You, like a talisman, are believed to have magical power upon me. You can make me laugh, even you can make me cry…I know, you got hurt at my unexpected behaviour. But I am not what I am. See me through my eyes, you will feel my inner soul…Let not your mind make a conclusion about my outward appearance. I can’t make anyone realize what I feel inside. Everyone judges me outwardly…then leaves me. Never be like others. If you leave me, I will be collapsed!
- শুভ সকাল! আমি তো গিফট নেব‌ই, তবে সেটা আপনি চাকরি পাবার পর, তার আগে নয়।
- মশাই, আমার চাকরি পেতে তো বহু বহু বহু দেরি!
…সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির মত--বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮টা নীলপদ্ম!...আমি তেমনই অনেক ভেবে, অনেক খুঁজে আপনাকে একটি জিনিস উপহার দিতে চাই! আমি চাই, আমি না থাকলেও আমার দেওয়া জিনিসটি আজীবন আপনার কাছে থাকবে! অনুরোধ, না বলবেন না। আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না। আমি অনেক কষ্ট পাব তা হলে! একশো আটটি…
…খেয়েছেন? শরীর ভালো আছে?
- এভাবে বলবেন না। আমি তো বলেইছি, নেব। কেমন আছেন?
- আমি ভালো আছি। খেয়েছেন রাতে? এর মধ্যে আর কোনও বিপদ হয়নি তো? সব ঠিক আছে?
- সব ঠিকই আছে, আমিও আছি…এখনও পর্যন্ত! শুভ সকাল!
- কালকে একটা গানের লিংক দিয়েছিলাম। গানটা শুনুন। কথাগুলো সত্য, শুনে মিলিয়ে নেবেন। দুপুরে খেয়েছেন কিছু? বাসায় গেছেন?
- খেয়েছি। অফিসে খাই, বাসায় যাই না। আপনি খেয়েছেন?
- না! এখন আমার অত ক্ষুধা আর লাগে না। অবশ্য দুই-একবেলা না খেলেও কিছু হয় না। আমি এখন অভ্যস্ত এগুলোর সাথে। কেউ আমাকে ছেড়ে গেলে এখন আর আমার কষ্ট হয় না, বরং কেউ আমার কাছে থেকে যেতে চাইলে আমার অবাক লাগে এখন! মনে হয়, কোথাও কিছু একটা ভুল হচ্ছে…ভীষণ ভুল! আপনি খেয়েছেন তো? না খেলে আগে খেয়ে নিন।
- হুঁ। আপনি খেয়েছিলেন পরে?
- হ্যাঁ! কেমন আছেন? আপনাকে খুব মনে পড়ছে আজকে! আপনি খুব সরল মনের একটা মানুষ। বাইরে থেকে শক্ত মনে হলেও ভেতরটা নরম একেবারে! সিরিয়াসলি! মনে যা আসে বলে ফেলেন, অন্য কিছু ভাবেন না একটুও! কে কী ভাবে, সেটা না ভেবেই নিজের মনের কথাগুলো খুব সাবলীলভাবে প্রকাশ করেন। আমার সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য লাগে, আপনি আমাকে ভালোমত না চিনেই আমার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন মুহূর্তেই! কারও পাশে সত্যি সত্যি থেকে-যাওয়া…সহজ নয় মোটেও!
…আজকে আপনার কথা খুব খুব মনে পড়ছে। যদি কোনও দিন খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে, আমি কি আপনাকে ফোন করে একটু আপনার কথা শুনতে পারব? সেই পারমিশন দেবেন আমাকে? কিছু বলব না, শুধুই শুনে যাব আপনার কণ্ঠটা! অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছেন আপনি!
- আপনার চাইতে আমার ক্ষমতা অনেক অনেক কম।
- আমি যে উপহারটা দিব, আপনাকে কিন্তু সেটা নিতে হবেই হবে! অধিকার নিয়েই বললাম।
…খেয়েছেন? আজকে আর আমার লম্বা মেসেজ পড়তে হবে না। না খেলে খেয়ে নিন। নিজেকে ভালোবাসাটা খুব জরুরি। বেশি বকবক করলাম না। আমার মনটা আজ সত্যিই ভালো নেই। একটুও নেই।
- আপনার স্ট্যাটাসটির ভাবার্থ কী? লিখলেন কেন Death is preferable to dishonor?
- না। আগের।
- আগের মানে? বুঝলাম না।
- আপনার আগের কিছু ছবি।
- কোথায় পেলেন? আমি কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করেছিলাম! উত্তরটা…
- বলা যাবে না। আরও আছে…আপনার পুরনো অনেক ছবি আছে আমার কাছে। আমি আপনার ছবি হারানোর কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করব। আর উত্তরটা আমি দেবো না। এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে গেলে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় না বলেই আমরা বেঁচে থাকতে পারি।
- কষ্টলাঘব? পারবেন না। এটা অসম্ভব।
- আপনাকে কোনও কিছু পাঠাতে হলে কোন ঠিকানায় পাঠাব? বলবেন, প্লিজ? আমি তন্ন তন্ন করে অনেক খুঁজে আপনাকে কিছু দিতে চাই। এমন কিছু দেবো, যা কেউ কখনও আপনাকে দেয়নি। প্লিজ, আপনি না বলবেন না।
- কখনও দেখা হলে দিয়েন।
- প্লিজ! আমার অনুরোধটা রাখেন! আমি কিন্তু আপনার কথা রেখেছিলাম।
- বললাম তো, আরও পরে।
- এই গিফটটি আমি আর একজনকে দিয়েছিলাম। সে আমাকে অনেক অনেক আঘাত করেছিল। তার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এমন কিছু আমি আর কাউকেই দিব না কোনও দিনই! আবার অনেক দিন পর এই উপহারটা দেবার জন্য আমি আপনাকে বেছে নিয়েছি। আমি একই পথে হাঁটছি…সেই পুরনো পথেই। আমার মতো বোকামানুষরা কখনও শোধরায় না। হয়তোবা আমাকে আবারও আগের সেই নিয়তিকেই মেনে নিতে হবে, তবু আমি উপহারটা দেবোই দেবো! প্লিজ, আপনি ‘না’ বলবেন না।
- গিফট আমি পরে নেব, এখন না।
- এটা গিফট না!
- এটা কী তবে? কোনও ডায়রি--শূন্য বা পূর্ণ?