যে ছায়া আলোর অধিক/ চার

 
- ‘তুমি কীভাবে কাঁদ, তিথি?’ ‘আমার বাথরুমে খুব নরম একটা নীল তোয়ালে আছে! সেটিতে মুখ ঢেকে কাঁদি!’...এটা হলো--তিথির নীল-তোয়ালে টেকনিক!
জানেন, টেলিফোনে কথা-বলার একটি সুবিধা হলো, কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেও অপর পক্ষের মানুষটা বুঝতে পারে না। সত্যি সত্যি আজ কেঁদেছি! আপনি বোঝেননি তো, না? আচ্ছা, একটা বয়সের পর মানুষ নাকি পরিত্যক্ত হয়, এমন সময় যদি কখনও আসে, সেই দিন আপনি সব ছেড়েছুড়ে আমার কাছে চলে আসবেন? যখন কেউ আপনাকে আর চায় না, আপনার উপস্থিতিই সবার চোখে একটা অসহ্য ব্যাপার, তখন আসবেন আমার কাছে বাকি জীবনের জন্য?
ভেবেছি, হুমায়ূন স্যারের মতো জীবনের শেষদিনগুলোতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে থাকব! সেই দিন যদি আপনাকে যেতে বলি আমার সাথে, যাবেন?...আমি উত্তরটা শুনতে চাই না! আমি কিছু উত্তর না শোনার আফসোস নিয়ে থাকতে চাই! আমি কল্পনায় একটি উত্তর ভেবে নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে গিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করব পরের জন্ম পর্যন্ত! পরের জন্মে আপনি ওই দ্বীপে বসে লিখবেন, আমার পাশে বসে! অন্য কারও সাথে সংসারী হলেও আমি কষ্ট পাব না, কিন্তু আপনি যেখানেই থাকুন, শুধু আমার পাশে বসে লিখবেন! মানুষের শরীরটা সংসার করে একজনের সাথে, আর মনটা সংসার করে অন্য একজনের সাথে। হয় না এমন? আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকব, আপনার যা লাগে এনে দেবো, একটুও বিরক্ত করব না, আপনি চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বললে একটু দূরে গিয়ে সেখান থেকে আপনাকে দেখব। আমার চোখের সামনে কিছু সৃষ্টি পৃথিবীর ডায়রিতে জমতে থাকবে। সেই অনুভূতি আমি প্রত্যক্ষ করব, অনুভব করব। এই একটা জীবনের এইটুকুই চাওয়া!
…মনে থাকবে? One day you will leave me setting my heart ablaze. সত্যি বলছি, আপনাকে ছাড়া থাকতে আমার খুব খুব কষ্ট হবে! তবু কিছু কষ্ট তো মেনে নিতেই হয়, কী আর করা যাবে!
- আমি ছাড়ব না তোমার হাত। বলেছি তো!
- আপনার জন্য পুজো দিয়ে এলাম। ভগবানকে বলেছি আমার কিছু আয়ু আপনাকে দিয়ে দিতে! কখনও কাউকে নিজের আয়ুটা দেবার মত দুঃসাহস হয়নি! আজ হয়েছিল! কেন হয়েছিল? নিজেকে বাঁচতে না দিয়ে আর একজনকে বাঁচতে দেওয়া! এটাকে কি ভালোবাসা বলে?
- আমার আয়ু তোমার হোক! তোমার বেঁচে-থাকাটা বেশি দরকার। এ পৃথিবী দুঃখী মানুষকে জিততে দেখতে পছন্দ করে। তুমি জিতবে, তুমি ভালো থাকবে। সেটা দেখার জন্য হলেও তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। আমার বেঁচে-থাকাটা খুব জরুরি কিছু নয়। পাওয়ার কথাই ছিল না, এমন অনেক কিছুই তো পেলাম!
- না! আমার আয়ুটা অপ্রয়োজনীয়! ওটা দিয়ে কারও উপকার হয় না! এই যে বেঁচে আছি, কার কী কাজে আসতে পারছি, বলুন? বরং আপনাকেই দরকার এই পৃথিবীতে!
আমি ফেসবুক না! আমার ভালোবাসাটা ফেসবুক না! শুধু সেটা বোঝানোর জন্য ছবিটা পাঠালাম। নৈবেদ্যর থালার দিকে তাকিয়ে দেখুন। ওখানে আমার মন, অনুভূতি, সত্তা, হৃদয়, বিশ্বাস…সব আছে। আপনি কি সত্যিই অনুভব করতে পারছেন না কোনও কিছুই?
আচ্ছা, একদিন আপনার কণ্ঠটা একটু শুনতে দেবেন? মানুষ তো কত কিছুই না চেয়েও পেয়ে যায়! আর আমি তো চেয়েও কিছুই পেলাম না! আপনার একটুও খারাপ লাগে না আমার জন্য? এ পৃথিবীতে এসে একটা মানুষ তেমন কিছুই পেল না। সে চলে যাবার সময় সাথে করে কী নিয়ে যাবে? ভালো কোনও অনুভূতি, সুখের কোনও স্মৃতি সঙ্গে না নিয়েই আমি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব! আমি বড় কিছু না হই, আমিও একটা মানুষ তো! একজন মানুষের জন্য আপনার মনে কোনও অনুভূতি নেই?
একদিন আপনার কণ্ঠটা শুনব ফোন দিয়ে? দেবেন শুনতে?
- দেবো না কেন? এটা তো বেশি চাওয়া নয়! শুভ সকাল।
- আমার কাছে ওইটুকুই অনেক কিছু! আপনি বুঝবেন না। আপনার জীবনে কখনও এমন কেউ এসেছে যার কণ্ঠস্বরটা শোনার জন্য গোটা একটা জীবন প্রতীক্ষায় থাকা যায়? দিনের পর দিন পথ চেয়ে থাকা, ফোনটা হাতে নিয়ে বসে থাকা, ছটফট করতে থাকা…যদি সে ভুল করে হলেও একটিবার ফোন করে…হয়েছে এমন কখনও? যদি না হয়, তবে আপনি বড় দুর্ভাগা! প্রতীক্ষার সুখ প্রাপ্তির সুখের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সেই স্বর্গীয় অনুভূতি থেকে আপনি এখনও বঞ্চিতই থেকে গেলেন!
তুমি নাহয় বৃদ্ধবয়সে আমায় ভালোবেসো, আমার সাথে নাহয় তোমার শেষ হাসিটা হেসো! শুভ দুপুর!
- তোমাকেও!
- এখন তো বিকেল!
- আচ্ছা, শুভ বিকেল।
- দরকার নেই! দরকার নেই! আমি নক না করলে নিশ্চয়ই এটা শুনতাম না! আপনাকে আমার ভালোবাসা থেকে মুক্ত করার আগে আমার কতগুলো চাওয়া আছে:
১. আপনার নতুন অফিসের ঠিকানা
২. সময় ও দিন উল্লেখ করবেন, কখন আমি আপনাকে ফোন করে একবার আপনার কণ্ঠটা শুনতে পারব
৩. আর কখনও আমাকে ‘শুভ সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত্রি’ না বলা
…চলে যাবার আগে আমার এই সামান্য চাওয়াগুলো পূরণ করবেন কি?
- শুভ বিকেল!
- দরকার নেই…বললাম তো! আমার মেসেজের উত্তর দিন!
- শুভ বিকেল…
- বললাম না…বলবেন না!
- বলেছি তো…বলব!
- I will let you go. Your existence hurts me. You can’t feel it...because you do not have the same feeling which I bear inside myself for you.
- শুভ বিকেল!
- মানে কী? আপনার কি মনে হচ্ছে, আমি মজা করছি? ওহ্! আপনাকে তো সবাই আবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভালোবাসি বলে! তা-ই না? আমি সবাই না! একজন সম্পূর্ণ আলাদা জগতের আলাদা স্বভাবের মানুষ আমি! আমি দিনে রাতে ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে পারি না। আমি শুধুই ভালোবাসতে পারি। যে সত্যিই ভালোবাসে, সে এত সহজে বারবার ‘ভালোবাসি’ বলতে পারে না। অন্তত আমি পারি না, আমার জিভ আড়ষ্ট হয়ে আসে ‘ভালোবাসি’ বলতে গেলে। আমি আপনাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছিলাম! যতই কাব্য-উপন্যাস লিখেন, আমার মতো করে কেউ কখনও আপনাকে আগে ভালোবাসেনি! পরেও কখনও বাসবে না! আপনি হয়তো পারবেন ‘হ্যাঁ বেসেছে তো অনেকেই’ এমন কোনও আত্মতৃপ্তি নিয়ে থাকতে, কিন্তু আমি যা বলেছি, সত্যি ওটাই! আমি আপনার সোশাল মিডিয়া থেকে চলে যাব পুরোপুরিই! এবং, সেটা কালই! আমি আপনার সোশাল মিডিয়া থেকে দূরে চলে গেলে আমাকে তো আর খুঁজবেন না কখনওই, খুঁজবেন কি?
- Stop overreacting. And, please please stop expecting from me. To me, even death is preferable to expectation. I don’t expect anything from anyone on earth. I hate being an object of expectation.
- ঝগড়া করার সময় ঠিকই গুছিয়ে গুছিয়ে লম্বা লাইন লিখতে পারেন! Good! Keep it up! ঠিক! আমিই শুধু এই পৃথিবীতে আপনার কাছে সব কিছু চেয়ে এসেছি! এবার শুরু করুন! কী কী oxymoron, paradox, irony ব্যবহার করে আমাকে শক্ত শক্ত কথা বলা যায়, সেগুলো শুরু করেন! Start, please!
- I even don’t mind being hated! But don’t destroy my peace. I don’t care about love. I care about only peace.
- আমি আপনার শান্তি নষ্ট করছি? বাহ্!
- খুবই পেইন দিচ্ছ। বললাম তো প্রয়োজন হলে আমাকে ঘৃণা করো, তবু যন্ত্রণা দিয়ো না। কোনও প্রত্যাশা রেখো না আমার কাছ থেকে। নিশ্চিত থাকতে পার, আমার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলেও তোমার কাছে কখনও কোনও প্রত্যাশা রাখব না। কোনও ব্যাপারেই না! আমি মানসিক অত্যাচার ভয় পাই। আমি ভালোবাসা চাই না, আমি শান্তি চাই। দুইদিন পরপর এরকম দুর্ব্যবহার কেন কর? আমি তো ভাই তোমার কাছ থেকে কোনও প্রত্যাশা রাখি না, তুমি কেন রাখ? সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চেষ্টা করো। তোমার পায়ে ধরি! প্লিজ!
- কোনও ব্যাপারেই প্রত্যাশা রাখেন না? তা রাখবেন কেন? মানুষ তো তার কাছেই প্রত্যাশা রাখে, যাকে সে ভালোবাসে! আমি যখন আপনার শান্তি নষ্ট করছি, ঠিক আছে! আপনার প্রশান্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি! আমি তো আর আপনার উপন্যাসের দেবী না…যে কোনও কিছুই প্রত্যাশা রাখে না! ওসব আপনার বানানো পৃথিবীর মানুষগুলোকে দিয়ে করাবেন। আমি বাস্তব পৃথিবীর রক্ত-মাংসের মানুষ। আর আমি এমন কী প্রত্যাশা করেছি যে তাতে আপনার শান্তিই নষ্ট হয়ে গেল! খুব ভালো! আমি আপনার নম্বরে টাকাগুলো পাঠিয়ে দেবো! সব কিছুর জন্য...বাহ্ বাহ্ বাহ্!
- ভুল বললে। আমি যাকে ভালোবাসি, তার কাছেও কোনও প্রত্যাশা রাখি না। কাউকে আমার প্রত্যাশার ভারে ন্যুব্জ করে দিলে সে তার নিজের মতো করে চলবে কী করে? মানুষকে বেঁধে ফেলা যায় না, সে চেষ্টা করাও এক ধরনের পাপ। ভালোবাসি যাকে, তাকে তার নিজের মতো বাড়তে দিতে হয়। আমি এই স্বাধীনতা দিই। অতীত সাক্ষ্য দেয়।
- আপনি থাকেন আপনার দেবীকে/ দেবীদের নিয়ে! বাই ফরএভার!
- বেয়াদব কোথাকার! আমি কাকে নিয়ে থাকি থাকি না, সেটা দিয়ে তোমার কী? কীভাবে না জেনে ফালতু কথা বল? তোমার সম্পর্কে এরকম অশ্রদ্ধা করে কথা বলেছি কখনও? ছিঃ!
- Sorry! আমি ওইভাবে বলিনি কথাটা!
কিছু বলেন!...কী! বলেন কিছু! বললাম তো দুঃখিত! আমি অত ভেবে কথা বলতে পারি না! আপনি কি আমার সাথে আর কথা বলবেন না? বলুন সেটা তা হলে!
- কেন বলব? বেয়াদবি করার জন্য দুইদিন পরপর?
- প্লিজ, ওভাবে বলবেন না! আমারও কষ্ট হয় কথা হজম করতে। আমিও মানুষ। আপনি শক্ত করে কিছু বললে আমি কেঁদে ফেলি, আর কাঁদতেই থাকি। আমি কি শুধু বেয়াদবিই করি?
- দুইদিন ভালো আচরণ কর, এর পর আবার আসল চেহারায় ফিরে যাও।
- আপনার কাছ থেকে আমি প্রত্যাশা কমাতে পারি না! সেটা কি আমার দোষ? জানেন, আপনি রাগ করলে ভালো লাগে আমার!
…বলেন কিছু! দরকার হলে গালি দেন, তবু চুপ করে থাকবেন না। Don’t get angry! I really feel you. প্লিজ, আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আপনি আমার পৃথিবী হয়ে গেছেন। আপনার আশেপাশে যারা আছে, ওদের তো সবই আছে! কিন্তু আমার পৃথিবীতে শুধু আপনিই আছেন! আমার আর কেউ নেই, কিচ্ছু নেই! সময় হয়তো কোনও দিন বদলে যেতেও পারে! সেই দিন হয়তো আমি এমনি করে টেক্সট পাঠিয়ে পাঠিয়ে আপনাকে আর বিরক্ত করব না! উল্টাপাল্টা কথা বলে মাথা গরম করে দিব না! নিজেও বকা শুনব না! সেই সময়টুক না আসা পর্যন্ত আপনি আমাকে সহ্য করেন, প্লিজ! আপনি আপনার ভগবানকে আমার জীবনে সেই সময়টা আনতে বলুন তাড়াতাড়ি! আমিও ঠিকই চলে যেতে চাই! এত প্রত্যাশা বাড়িয়ে শুধু শুধু কষ্ট পেতে আমারও ভালো লাগে না আর! ভেবে দেখুন তো কী পাচ্ছি আমি? আপনার পরিবার আছে, চাকরি আছে, ব্যস্ততা আছে কত রকমের…আমার কী আছে এক কষ্ট ছাড়া? তবুও তো নিজেকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে পারছি না! I want to get relieved from this pain.
আপনি কি আমার সাথে এখনও রেগে আছেন? আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই কয়েক দিন আমি আপনাকে আর কোনও মানসিক যন্ত্রণা দেবো না! চলে যাবার আগে আমাদের কিছু ভালো মুহূর্ত থাকা উচিত! আমি আপনার হারমোনিকা হতে চাই না, আমি আপনার দুই পয়সার বাঁশি হয়ে থাকতে চাই। হারমোনিকার একটা দাম আছে, চাইলেও ওটা দিয়ে যা ইচ্ছে তা করা যায় না। আর দুই পয়সার বাঁশিকে চাইলেই যেকোনও সময়ই হাতে তুলে নেওয়া যায়, ইচ্ছে হলেই ছুড়ে ফেলে দেওয়াও সহজ! আমি আপনার জীবনটা সুরে ভাসিয়ে দিয়ে তার পর নিক্ষিপ্ত হতে চাই ওই দূরে…
- শুভ সকাল!
- পাতার ঝরে পড়ার শব্দ আমরা ঠিকই শুনি, কিন্তু একজন আর একজনের হৃদয়ের স্পন্দন শুনি না!
- শুভ দুপুর…শুভ বিকেল…এরপর আবার…শুভ সন্ধ্যা! শেষে, শুভ রাত্রি।
- এই মেসেজটি আপনি সিন করার কয়েক ঘণ্টা পর আমি চলে যাব! ৭ নভেম্বর আপনার সাথে আমার প্রথম কথা হয়! একদিন ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি, কে যেন আমাকে ‘শুভ সকাল’ লিখল! আমি জানতামই না মানুষের সকাল কখনও শুভ হতে পারে…অন্তত একদিন হলেও! ওই প্রথম জানা!
আপনি বলেছেন সেই প্রথম দিন থেকেই…আমি মানবিক না, আমি ভদ্র আচরণ জানি না! আমি যদি বলি, আপনি কখনও আমার মেসেজগুলোকে ঠিকমতো অনুভবই করেননি! শুধু পড়ে গেছেন, স্রেফ পড়ার জন্যই পড়েছেন। আমার অক্ষরগুলো আপনার চোখে গেছে, মনে যায়নি। আচ্ছা, চোখেও কি গেছে আদৌ?
আমি আপনার সব অভিযোগ মেনে নিয়েই বলছি, আপনি না লেখক? আপনি না মানুষের চোখ পড়তে পারেন? আপনি না মানুষের নিঃশব্দে হেঁটে যাওয়ার শব্দ শুনতে পারেন? তবে কেন আপনি আমাকে বুঝতে পারলেন না? কেন? একটা মানুষ যে কিনা ঠিকমতো কিছু বুঝে উঠার আগেই সব কষ্টের বোঝা কাঁধে নিয়েছে…তাকে নিতে হয়েছে…তাকে একটু অনুভব করা যেত না? অন্য কিছু না হোক, একজন মানুষ হিসেবে তাকে মূল্যায়ন করা যেত না? আমাকে বুঝতে না পারলে আপনার জীবনের অনেক দিক অপূর্ণ থেকে যাবে। আপনি বলেছেন, Your grief must not be an excuse for your sadistic behaviour!
যে মানুষটি ২১ বছরে কখনও সূর্যের আলো দেখেনি, যে মানুষটার পাশে পৃথিবীর কেউ কোনও দিন দাঁড়াল না, যে মানুষটিকে মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও রাতে অন্য লোকের বাসায় ও রাস্তায় থাকতে হয়েছে, যে মানুষটিকে বন্ধুবান্ধব সবাই ছোট করে গেছে সব সময়ই, যে মানুষটিকে তার নিজের গর্ভধারিণী ২১ বছরে একবারও বুকে ডেকে নেয়নি, একবারও মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেনি দয়ার্দ্র চোখে…আরে স্যার…তার কি দুঃখ শুধুই? না কি তার জীবনটাতেই প্রাপ্তি বলতেই কিছু নেই?…কোনটা? যাকে তার ভালোবাসার মানুষটাও ফেলে রেখে যায়, কেননা এই জীবনে…এমন এক বুনোফুলকে নিয়ে আর যা-ই হোক, সংসার করা যায় না! নীরজাদের সাথে প্রেম করা যায়, ওদের নিয়ে ঘর বাঁধা যায় না! এমন একটা মানুষের কোনও পরিচয়ই তো থাকতে নেই!
কখনও আপনার মা আপনাকে অন্য পু্রুষের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছে? কখনও নিজের বাবা ৬ বছর বয়সে মাথার উপর থেকে ছেড়ে চলে গেছে? কখনও আপনাকে সকালবেলা মৃত বাবার ঠান্ডা হাতটা ধরে দেখতে হয়েছে? বাবা বাবা বলে চিৎকার করে যাচ্ছেন, অথচ সাড়া দেওয়ার কেউ নেই, উল্টো মা এসে জোরে চড় বসিয়ে দিয়েছে দুইগালে…হয়েছে এমন?
যখন এগুলো কিছুই হয়নি, তখন নীরজাকে কিছু বলার ক্ষমতা আপনার নেই। শুধু আপনি নন, যাকে পৃথিবীর এই রূপটি সহ্য করতে হয়নি বছরের পর বছর, এমন কেউ সে ক্ষমতা রাখে না! এই নীরজা ২০ জন পুরুষকে প্রতিহত করে নিজেকে ফুলের চেয়েও শুদ্ধ রেখেছে! এই শুদ্ধতাকে নিয়ে কারও গল্প লেখার দরকার নেই! এই নিষ্পাপ মুখের পবিত্রতা যারা বুঝতে পারেনি, তেমন একটা মানুষকেও আমার জীবনে দরকার নেই!
এবার আসি আপনার ব্যাপারে! আপনি আমাকে ভালোবাসেননি, আমার দরকারও নেই আপনার ভালোবাসার! কিন্তু আমি শুদ্ধতার ও পবিত্রতার আঁচলে নিজেকে ঢেকে আপনাকে ভালোবেসেছি! আমি অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করেছি আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না! না কি এ কেবলই মোহ! আমি কেঁদেছি, ভেঙেছি, পরিশ্রান্ত হয়েছি, তার পরও আমি একটা উত্তরই পেয়েছি--আমি আপনাকে ভালোবোসেছি! যে মানুষটিকে কখনও দেখবই না, কোনও দিন যাকে স্পর্শ করে দেখতে পারব না, সে মানুষ না কি অন্য কিছু জানিই না, কখনও গোধূলিলগ্নে একসাথে হাঁটতে পারব না যার হাত ধরে…কেন আমি সেই মানুষটিকেই ভালোবাসলাম? এর উত্তর আমি অনেক খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি! তার কথা ভাবতে ভাবতে আমি রাস্তার মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছি, বমি করে দিয়েছি, তাও আমি তাকেই মনে করেছি! দৌড়ে গিয়েছি মন্দিরে তার মঙ্গলকামনা করে পুজো দিতে, যে মন্দিরের ঈশ্বরের মুখ আমি একবছর দেখিইনি!
এত কিছুর পরও আমাকে শুনতে হয়েছে, আমি বেয়াদব! আমি কখনও…দেবী বলতে…কে কাকে রেখেছে, অত কিছু চিন্তা করে বলিনি, অথচ আমাকে কত কথা হজম করতে হয়েছে! যার কাছে আমি ভুল করতে পারি না, কৃতভুলের জন্য ক্ষমা আশা করতে পারি না, সে আবার আমার মনের মানুষ হয় কী করে? যে আমার মন বোঝে না, কেবলই আমার ভুলটা বোঝে, সে আমার প্রাণের দেবতা হয় কীভাবে? এতটা নির্বোধ হয়ে গেছি আমি! আজ আমি আমাকেই চিনতে পারছি না।
যার নামে মাত্র একদিন আগে আমি মন্দিরে পুজো দিয়ে আসতে পারি, তাঁর সম্পর্কেও এতটা খারাপ মন্তব্য করতে পারি আমি, সেটা যে ভাবতে পারে, সে আমাকে কোনও দিন চিনতে পারেনি! এতটুকুই বলব!
তাও আমার খুব ইচ্ছে হয়, মানুষটার শাসন পেয়ে আমিও একটু মানুষ হই! আমায় কেউ তো কখনও শাসন করেনি, আর কেউ ভালোও বাসেনি! মানুষটা শাসন করে না, তা নয়, করে, তবে তা করে আমায় ভুল বুঝে, ভালোবেসে নয়। ইচ্ছে হয়, মানুষটার একটু রাগ ভাঙাই! একটুও ভুল না করেও তার কাছে ক্ষমা চাই…! আহা! কত ভালো লাগে কখনও কখনও স্বেচ্ছায় হেরে যেতে! যে স্বেচ্ছায় হারতে শেখেনি, সে কখনও ভালোবাসতেই শেখেনি। ভালোবাসার অর্থই ভালোবাসার মানুষটাকে সব কিছুর পরও জিতিয়ে দেওয়া। আমি হেরেছি, আমি কেঁদেছি, আমি ভালোবেসেছি! কিন্তু আমি দেখলাম, আমি সত্যিই আর পারছি না! একতরফা অনুভূতির বোঝা বহন করে সামনের দিকে হেঁটে যাওয়া এতটা কঠিন, আগে বুঝিনি। আমি এমন একজনের জন্য কষ্ট সহ্য করে বেঁচে আছি, যে আমাকেই বোঝে না, আমার কষ্ট বোঝা তো অনেক পরের কথা!
না, এবার ছুটি নিতে হবে! চোখের সামনে যতই দেখব তাকে, কষ্ট ততই বাড়বে। আমি পারব না মানুষটার কল্পনার দেবী হতে! আমি যে মানুষ, দেবী নই। আমার দুঃখ আছে, অনুভূতি আছে। কাউকে ভালোবেসে ফেললে আমার মধ্যে প্রত্যাশার জন্ম হয়। কারও ব্যাপারে আমি নিঃস্পৃহ হয়ে থাকতে পারি ততক্ষণই, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে ভালোবেসে না ফেলছি। আমি সত্যিই জানি না, কণামাত্রও প্রত্যাশা বা দাবি না রেখে কাউকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা যায় কি না! চেষ্টা তো করে দেখলাম, পারি না তো!
আজ আমি কয়েকবার আপনার আইডিতে গিয়েছি আমার বুকের ভেতর কেমন করে বোঝার জন্য! দেখেছি, খুব কষ্ট হচ্ছে! বুকের ভেতর থেকে কান্না পাচ্ছে। এক ধরনের ব্যথা অনুভব করছি। ভেতরটা শুকিয়ে যাচ্ছে আর বারবারই মনে হচ্ছে, কী যেন নেই কী যেন নেই! কী যেন আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে, আমি কিছুতেই আটকাতে পারছি না। নিজেকে শূন্য লাগছে, শুধুই বুকফেটে কান্না পাচ্ছে। আগে তো কখনও হয়নি এমন! এখন কেন এমন করে বুকের ভেতর! এই এত দিনে আমাদের ঝগড়া ছাড়া শুধু একটি দিন ছিল--২৪ ডিসেম্বর! ওই দিন মোহাচ্ছন্ন হয়ে দুজনই অনেক কথা বলেছি! আরও কয়েকটা দিন হয়নি কেন অমন? ওই দিনটি জীবনের ডায়রিতে লেখা থাকবে…আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো, আমায় পড়বে মনে কাছে দূরে যেখানেই থাকো!
আজ থেকে প্রতিদিন এই কয় দিনে জমানো টুকরো টুকরো ভালোবাসা, যা আপনি দিয়েছেন, সেগুলোকে নিয়ে হাঁটব। যখন অনেক খারাপ লাগবে, ইউটিউবে আপনাকে খুঁজে বের করে আপনার কণ্ঠ শুনব! আজও শুনছিলাম। আমি এবার সত্যিই চলে যাব! না হলে আমি বাঁচব না! সমস্ত দিক থেকে, আমার ভেতর ও বাইরের পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্ত থেকে, আমার বোধ ও অবচেতনের সীমানা থেকে আজ কেবলই ‘তুমি তুমি তুমি’ আওয়াজ আসছে, সে প্রচণ্ড শব্দ কানের ভেতরে ঢুকে আমাকে একেবারে বধির করে দিচ্ছে! ‘রাত বাড়ছে! হাজার বছরের পুরনো সে রাত!’ সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রত্যাশা! কিছু বোকাবোকা অনর্থক প্রত্যাশা। তোমাকে জোরে শক্ত করে হাত দুটো দিয়ে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে--পায়ে ধরি, ছেড়ে যেয়ো না! সত্যি কথা বলছি, তোমার দুপায়ে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে! যাকে ছেড়ে থাকাটাই মৃত্যুর সমান, অনুভবে ও বিশ্বাসে যে মানুষটি সমস্ত অস্তিত্বে মিশে আছে, যাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবা সত্যিই সম্ভব নয়, আমার হাসি ও কান্না যে মানুষটির জন্য, তাকে জীবনে রেখে দেওয়ার জন্য যতক্ষণ এ দেহে প্রাণ আছে, ততক্ষণ সব কিছুই করা যায়। আজ আমার কোনও ইগো নেই। সে আমার পাশে থাকবে সারাজীবন…সে শর্তে পৃথিবীতে এমন কোনও কাজ নেই যা আমি করতে পারি না। ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।’ আমি আপনাকে ভুলতে পারব না। আমৃত্যু মনে রাখব। আমি হঠাৎ করেই বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। কিছু মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম যে এই পৃথিবীতে সবারই স্বপ্ন দেখতে নেই!
প্রিয় লেখক, আমার কথা মনে থাকবে তো? একটা মানুষ আপনার জীবনে এসেছিল যে সারাদিন আপনাকে মানসিক পেইন দিতো, উল্টাপাল্টা কথা বলত! সাথে আর একটা জিনিস--কেউ একজন আপনার পা ধরে থাকতে চেয়েছিল…আপনার পায়ের কাছে মুখ থুবড়ে বাঁচতে চেয়েছিল! আচ্ছা, আমি কি আদৌ এসেছি আপনার জীবনে? না কি কেবল আপনিই এসেছেন আমার জীবনে? কেন এই আসার ব্যাপারটা দুইদিক থেকেই হয় না? কেন একজন কেবল কষ্টই পেয়ে যায়?
আমার জীবনে যত সকাল আসবে, আপনি ছাড়া তার একটাও কখনও শুভ হবে না! স্যার, আমাকে কেউ কখনও ‘শুভ সকাল’ বলেনি। আমি জানতামই না কেউ ‘শুভ সকাল’ বললে এতটা আনন্দ হয়! আবারও বললাম কথাটা।
পরের জন্মে সব ঝগড়াঝাঁটি চুকিয়ে দিয়ে কোনও এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধেতে একসাথে ফুচকা খাব! মনে থাকবে?
শুভ সকাল, শুভ দুপুর, শুভ বিকেল, শুভ সন্ধ্যা, শুভ রাত্রি! মন ভালো করে দেওয়ার জন্য কী আশ্চর্য শক্তিধর কিছু কথামালা!
আমি কখনও বুঝিনি আমি আপনাকে এত্ত ভালোবেসে ফেলব! সত্যি কখনও বুঝিনি! এবার আমাকে যেতেই হবে! এই ভুল করে, ইচ্ছে করে পাওয়া কষ্টকে নিয়ে এক্ষুনি পালাতে হবে! দেরি হলে ফেরার সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে! নিজের দিকে খেয়াল রাখবেন! আর হ্যাঁ, আমার কিন্তু কোনও অভিযোগ নেই আপনার প্রতি! আপনি অনেক সরলমনের মাটির একটা মানুষ, যার পা ধরে হলেও থেকে যেতে ইচ্ছে হয়, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে! আমাকে কখনও ভেবেছেন এমনি করে? দেখেছেন এমন চোখে? আমি কি শুধুই খারাপ? আমার কিছুই কি ভালো নয়? আচ্ছা, আমি পরের জন্মে যদি আর না জন্মাই, তখন? আপনাকে কি পাওয়া হবেই না আমার? এমন কি হবে না কখনও…ঝগড়া হবে, যুদ্ধ হবে, তবু আমরা পরস্পরের হাত ছাড়তে পারব না? দুটো মানুষ, যারা একে অপরকে ছেড়ে একা বাঁচতে পারে না…আমরা হয়ে যেতে পারি না ওরকম দুটো মানুষ?
আর হ্যাঁ, আপনার পুরনো ঠিকানায় আমার উপহারটা পাঠিয়ে দেবো একদিন! ঠিকানা ছাড়াও তো কত জিনিস হৃদয়ের কাছে গিয়ে ঠিকই পৌঁছায়! তাই না? আমার নিয়ত ঠিক থাকলে উপহারটা একদিন আপনি পাবেনই!
পরের জন্মে আপনি আসবেন তো আমার কাছে?...এ কোন ব্যথায় এই বুক ভেঙে যায়…গানটা শুনুন। একটু অনুভব করুন! আপনার জন্য পাঠানো এটাই আমার শেষ গান! সময় পেলে একবার শুনবেন! আমাদের আর কখনও কথা হবে না, আপনার টেক্সট আর কখনও আসবে না, আপনার কণ্ঠটা আর কখনও শুনতে পাব না, আমাকে কেউ আর কখনও শুভসকাল পাঠাবে না, আপনার খোঁজখবর আর জানতে পারব না…এইসব আপনাকে না পোড়ালেও আমাকে পোড়াবে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্ত! এ পৃথিবী মৃতদের খোঁজ রাখে, জীবন্মৃতদের খোঁজ কেউ রাখে না!
- শুভ সকাল!
- আপনার উচিত ছিল, আমার পাঠানো প্রতিটি লাইন একবার হলেও পড়ে যাওয়া! পারলে আমাকে ফেস করুন, আমার কথাগুলোকে ফেস করুন, যুক্তিতে আসুন! আসবেন না তো? ব্যাপার না! আমি আর কোনও পেইন দেবো না আপনাকে! আপনি মুক্ত, আপনি স্বাধীন। শুভকামনা রইল!
- ওটা লেখা ছাড়া আর কী কী করা উচিত ছিল? আমাকে একটু পরামর্শ দাও। তর্কে কেবল তর্কই বাড়ে। আমরা তো কেউ জিততে আসিনি এখানে। দুজন মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক…এ যুদ্ধ তো নয়, অনুভবের জায়গা--এখানে জিতেই যেতে হবে, এমন কোনও দায় নেই। জীবনটা তো আর বিতর্ক প্রতিযোগিতা নয়। কারও সাথে কথায় জেতা, এই ব্যাপারটাই এক ধরনের ছেলেমানুষি! আমার ভালো লাগে না। অত শক্তিও নেই, ধৈর্যও নেই। আমারও বয়স হয়ে গেছে বোধহয়…জেতাজেতির খেলা আর ভালো লাগে না। কেবলই নীরবে অনুভব করতে ইচ্ছে করে। এতে যদি কেউ জিতে যায় তো যাক না! সত্যিই কি কাউকে হারানো যায় কথার খেলায়? যার ইচ্ছে, সে জিতে যাক। জিতে গিয়ে ভালো থাকুক। আমি তো সে লড়াইয়েই নামব না! আমার কাছে যে লড়াইয়ের দামই নেই, সে লড়াইয়ে জেতা কি হারা, সেটা নিয়ে কীসের ভাবনা আমার? আমি জীবনকে ফেস করতে চাই, জীবনের তর্ককে নয়। জীবনটা যুক্তিতে চলে না, জীবন চলে কিছু অনুভবে, কিছু অভিজ্ঞতায়। কথার লড়াইয়ে কেউ জেতে না, কেবলই বন্ধু হারায় কিংবা শত্রু বানায়। কী দরকার? তুমি জিততে চাইলে তো? যাও, তুমিই জয়ী! যে লড়াই আমার নয়, সে লড়াইয়ে আমাকে হারাবে কী করে? আর হারছিই-বা কোথায়? আমি তো তোমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি না, তোমার সাথে তাই আমার হারও নেই, জিতও নেই। আমি জিততে চাই না, আমি কেবলই শান্তি চাই।
- আজকে অন্তত একটু ভালোভাবে কথা বলতেই পারতাম আমরা! নীরজাকে দেখলে মাথায় কেবলই রক্ত চড়ে! ব্যাপার না! আমি আর কখনও আপনার পেইনের কারণ হব না। বলেছি তো!
- খেয়েছ সকালে?
- আপনার উচিত ছিল, আমার লেখাগুলো একবার হলেও পড়া! পড়লেন না! আর আমি কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যাচ্ছি! আমার একটু সময়ের দরকার! আমি আর কখনওই আপনার পেইনের কারণ হব না।
- পড়েছি। তুমি কেন একতরফা বলেই যাও যে তুমি যা লিখ, তার কিছুই আমি পড়ি না? না জেনে নির্দ্বিধায় এমনি করে বলে ফেলা কি ঠিক?
- ৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি যত খারাপ আচরণ করেছি, যত পেইন দিয়েছি সব কিছুর জন্য ক্ষমা চাইছি! আপনার বিকাশ নম্বর তো ওই গ্রামীণ নম্বরটাই, তাই না? আর নতুন অফিসের ঠিকানাটা বললে ভালো হতো!
- কেন?
- দরকার আছে! আর না বললে দরকার নেই! গ্রামীণ নম্বরটা আছে আমার কাছে! আর অফিসের ঠিকানা বলতে না চাইলে জোর করব না! আমি কোনও মানসিক পেইন দিয়ে চলে যেতে চাইছি! আমাদের কিছু ভালো মুহূর্ত থাকা দরকার! কেমন? খেয়েছেন? আমরা এই কয়েক দিন কোনও ঝগড়া করব না! সত্যিই আমাদের কিছু ভালো মুহূর্ত থাকা দরকার! আমি কেবলই আপনার ক্রোধ হয়ে থাকতে চাই না, আমি আপনার মৃদুহাসিটাও হতে চাই।
- খাব। লিখছিলাম। তুমি খেয়েছ?
- হুঁ! আপনার চোখ দুটো ভয়াবহ রকমের সুন্দর! কোনও দিন বলা হয়নি! আজ বললাম। আমরা ভাবি, যাকে ভালোবাসি, যে আমার কাছের মানুষ, তাকে তার ভালো দিকগুলি বলতে হয় না। সে সুন্দর হলে তাকে এটা বলার কিছু নেই যে সে সুন্দর। তার রান্না ভালো হলে খেতে বসে বলতে হয় না রান্নাটা ভালো হয়েছে। কোনও একদিন তাকে দেখতে সুন্দর দেখালে সেটা তাকে না বললেও চলে। আমরা সত্যিই কাছের মানুষদের মূল্যায়নই করি না। তাদের নিয়ে ফেলি ‘ফর গ্রান্টেড’ হিসেবে। ভাবি, সে তো আছেই পাশে, তাকে তোয়াজ করার কী আছে এত? যে কাজটা অন্য কেউ করলে তাকে মাথায় তুলে নাচতে থাকি, সে একই কাজটি কাছের মানুষ করলে আমাদের চোখেই তা পড়ে না। আচ্ছা, যে প্রিয় মানুষটিকে সে বেঁচে থাকার সময় কখনও একটাও ভালো কথা বললাম না, তার মৃত্যুর পর সমাধিতে ফুল দিয়ে কী হয়? মৃতমানুষ কি ফুলের ঘ্রাণ পায়? যে চোখ দুটো চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে, সে চোখ দুটোর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে কী হয়? কাউকে যদি সত্যিই কিছু দিতে হয়, তবে সে বেঁচে থাকতেই তাকে ঠোঁটের কোণের হাসিটুকু দিন, তার মৃত্যুর পর তাকে চোখের জলে ভাসিয়ে দিয়েও কী লাভ?
জানেন, সেদিন একজনের সাথে তো আপনার এই চোখ নিয়ে ঝগড়াই হয়ে গেল! এই কয়েক দিন আমরা কোনও ঝগড়া করব না। মনে থাকবে?
- খেয়েছ কি না জিজ্ঞেস করেছি।
- না! কাল সারারাত ঘুমাইনি! ঘুম আসছে। আপনার অফিসের ঠিকানাটা বলবেন একটু? বলবেন না? আচ্ছা, আমাকে আপনার সহ্যই হয় না, তাই না? এক কাজ করুন বরং। ভুল করে হলেও একবার আমাকে ভালোবেসে ফেলুন, তখন দেখবেন, আমাকে দেখতে ভালো লাগছে, আমাকে ভাবতে ভালো লাগছে, আমার কথা শুনতে ভালো লাগছে, আমার লেখাকে গোছানো মনে হচ্ছে, আমার তীক্ষ্ণ ও কর্কশ আচরণও মধুর লাগছে। আমায় ভালোবেসে ফেললে আমার উঁচু দাঁতটা দেখলেও মনে হতো, ওরকমই সুন্দর দেখায়…যদি আমার রান্না খেতেন, তবে দেখতেন, তখন আমার লবণ-ছাড়া রান্না খেয়েও মুগ্ধ হয়ে গেছেন!
- মোবাইলে মেসেজ গেছে, চেক করো। ওটাই ঠিকানা।
- কিছু ভালোবাসা শেয়ার করি, কেমন?
1. It was a time when the unthinkable became the thinkable and the impossible really happened.
2. That it really began in the days when the Love Laws were made. The laws that lay down who should be loved, and how. And how much
3. If he touched her he couldn't talk to her, if he loved her he couldn't leave, if he spoke he couldn't listen, if he fought he couldn't win.
4. …instinctively they stuck to the Small Things. The Big Things ever lurked inside. They knew that there was nowhere for them to go. They had nothing. No future. So they stuck to the small things.
5. And the air was full of Thoughts and Things to Say. But at times like these, only the Small Things are ever said. Big Things lurk unsaid inside.
6. She hadn't learned to control her Hopes yet.
7. Being with him made her feel as though her soul had escaped from the narrow confines of her island country into the vast, extravagant spaces of his.
‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ পড়েননি, না? পড়বেন, প্লিজ? আমার জন্য হলেও?
- শুভ সন্ধ্যা!
- পড়েছেন, আমার চিঠিটা? আমার কোনও কিছুই একটুও গুরুত্ব বহন করে না, তাই না? পড়ুন না, প্লিজ!
- পড়েছি।
- ধন্যবাদ! আপনি হলেন The God of small things…to me.
- আমি একখান ঘোড়ার ডিম! খেয়েছ কিছু? কোথায় এখন?
- God of small things! Love laws কারা তৈরি করে? সমাজ তো? But the lovers have broken those conventional rules and regulations imposed on them by society. আমিও তেমনিই আপনাকে ভালোবেসেছি! তাই আপনি হলেন আমার God of small things. এ এমন এক ভালোবাসা, যেখানে আমার চাওয়াগুলো খুব ছোট! একটি ছোট রিপ্লাই, কিংবা কণ্ঠটা একটু শুনতে চাওয়া! কিংবা খামে-মোড়ানো কিছু-না-লেখা ধবধবে সাদা একটি পৃষ্ঠা, যেখানে অনেক কথা বলার ছিল বলেই কিছুই বলা হয়নি! “And the air was full of Thoughts and Things to Say. But at times like these, only the Small Things are ever said. Big Things lurk unsaid inside.” ভালোবাসা তো এমনই হয়, তাই না?
আচ্ছা, একটা প্রশ্ন করি, আমি যদি কখনও চলে যাই ফেসবুক থেকে--যদিও এটা মামুলি একটা ব্যাপার--তখন কি আপনার মনে হবে না, কেউ একজন লম্বা লম্বা মেসেজ পাঠিয়ে আমাকে বিরক্ত করত? মিস করবেন না পুরনো সকল বিরক্তি? মনে আসবে না কিছুই? সত্যি করে বলুন না!
- ফোন করলাম, ধরলে না।
- আমার এমবি নেই! প্লিজ, বলুন না আমার কথা মনে পড়বে কি না!
আমি তো ছিলাম দুইমাস! যেভাবেই থাকি, হোক অবজ্ঞায়, অবহেলায় কিংবা ঘৃণায়! মনে কি পড়বে না একবারও, আপনি কাকে যেন আর ‘শুভ সকাল’ বলেন না? কে যেন আপনাকে মনের সব কথা অকপটে আর বলে ফেলে না? কার যেন কথা শুনে আপনি আর ক্রোধে ফেটে পড়েন না?
তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম! I might not make you understand what I feel inside myself for you. Be happy wherever you are! Day after day, I was getting mentally attached with you...Believe me, it made me die inside. I need to be detached from you, otherwise it will make me suffer in the long run. I will be waiting for hearing your voice after death. Death will help us meet together. Your absence will hurt me until l leave the earth. You did not read my unsaid feelings. Your existence will never die until my breath lasts. Don’t leave me in the afterlife. Take care of yourself. ঠিকমতো খাবেন, ঘুমাবেন!
আমি কেবলই ফেসবুক ছিলাম না! আমার মধ্যে না বুঝে অসময়ে আসা প্রস্তুতিহীন ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিল না। I have left you for making you feel happy. No one will ever disturb you. কেউ আর syntactical structure ভেঙে শুদ্ধ, পবিত্র কথাগুলোকে এলোমেলোভাবে লিখে পাঠাবে না! তুমি রবে নীরবে, হৃদয়ে মম! ভালোবাসার সমস্ত শাস্তি একাই কাঁধে নিয়ে গেলাম। মনে পড়লে মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠব, কিংবা পড়ার টেবিলে বইয়ের পাতায় মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদব! সেইদিনের পর থেকে আমি আর সকাল দেখি না! সকাল-দেখার অপার্থিব সুখ থেকে নিজেকে সরিয়েই নিলাম! এটাই আমার মাথাপেতে নেওয়া শাস্তি! একটা মানুষ জীবনে প্রথমবার তার রুমের জানালা খুলে দিয়েছিল যাতে রুমের ভেতরে সকাল ঢোকে। আমি আপনার জন্যই সকালকে ভালোবাসতে শিখেছি। জীবনে প্রথমবারের মতো বুঝতে শিখেছি, সকালটা এত সুন্দর! সেই আমি আর কখনও সকাল দেখব না। বাকি জীবনটা বদ্ধঘরেই কাটিয়ে দেবো!
- শুভ সকাল! কেমন আছ? এই কয় দিনে তোমার কথা অনেকবারই মনে পড়েছে। ভালো আছ তো? সব কিছু কেমন চলছে?