যে ছায়া আলোর অধিক/ পাঁচ

 
- আমার মতো ঊনমানুষের চলে-যাওয়া কাউকে কখনও ভাবায় না! সব কিছুই আগের মতোই চলছে! শুধু আপনার ক্ষণিকের আসাটা কিছু বাড়তি কষ্ট সৃষ্টি করেছে! ব্যাপার না! এগুলোতে অভ্যস্ত আমি! নিজের খেয়াল রাখবেন! লেখালেখির পাশাপাশি নিজের খেয়াল রাখবেন! আমি নাহয় আপনার বিরক্তিতেই বাঁচলাম। সবাইকেই পৃথিবীতে ভালোবাসায় বাঁচতে হবে, এমন কোনও কথা আছে নাকি? আমি আপনার সাথে কথা না বললেও আপনাকে কখনও ভুলব না! সময়ে-আসা ভালোবাসার দাবি মানুষ বুঝতেই পারে না, ওদিকে অসময়ে-আসা ভালোবাসা কখনও মরে যায় না…দিনে দিনে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে হৃদয়ের মধ্য থেকে!
সেদিন ভেবেছিলাম, আপনি আমার সাথে কত কথাই বলবেন! আমি জানতামই না আমি আপনার হৃদয়ে এতটা বিরক্তিতে বেঁচে থাকি! মানুষ মেকি ভালোবাসায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে আজকাল, তাই নিখাদ ভালোবাসাকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না। অনেক অনেক ভালো থাকুন! দূর থেকে এটাই চাইব! আমরা আর কথা না বাড়াই, কেমন?
- এ পৃথিবীতে কেউই অপরিহার্য নয়। আমি, তুমি বা অন্য কেউ চলে গেলে কার‌ও কিছু এসে যায় না। এটাই রীতি। পৃথিবী এভাবেই চলে। এমনকি কাউকে ভালোবাসতে গেলেও তাকে লাগে না। কারও প্রতি ভালোবাসা প্রতি মুহূর্তেও অনুভব করতে চাইলে তার থেকে-যাওয়াটা জরুরি নয়। যাকে কখনওই পাব না, যার সাথে আর কখনও দেখা পর্যন্ত হবে না, তাকে ভেবে, তাকে ভালোবেসে মানুষ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এটা এক ধরনের প্রার্থনা। প্রতিদিনের যাপনে কাউকে মনের মধ্যে, তাকে ভেবে বাঁচার অর্থ খোঁজা, এ অনেক বড় সৌভাগ্য! আমার কাছে কাউকে ভালোবাসার অর্থই হলো, সে মানুষটি যেভাবে শান্তিতে থাকে, তাকে ঠিক তেমন করে থাকতে দেওয়া। যন্ত্রণা ও মানসিক নির্যাতন ভালোবাসাকে বিরক্তি, এমনকি ঘৃণায় পরিণত করে।
যদি কাউকে ভালোবাস, তবে তাকে তার মতো করে বাঁচতে দাও, তোমার মতো করে বাঁচতে বাধ্য কোরো না। দিনের শেষে, তোমার জীবনটা তোমার, আমার জীবনটা আমার, তার জীবনটা তার। কাউকে জোর করে তোমার নিয়মে বাঁচতে বাধ্য করার অর্থই হলো, তুমি আসলে তাকে ভালোবাস না, তোমার নিজের ইগোটাকেই ভালোবাস। ইগোর খেলায় ভালোবাসা থাকে না, জেদই থাকে শুধু।
- কেউ চলে গেলে কিছুই এসে যায় না। জীবন জীবনের নিয়মেই চলে! কিন্তু কারও কারও জন্য অনেক কিছু থেমে থাকে! আপনার জন্য আমার অনেক কিছু থেমে গেছে। ভেতরের খোঁজ বাইরে থেকে কতটুকুই-বা বোঝা যায়! যা-ই হোক, আমি আপনার ফেসবুকে নাহয় বিরক্তিতে বা ঘৃণায়ই বাঁচলাম। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন…সেই কামনা থাকবে!
- আমি নিশ্চিত নই, তবু এই কয়দিনে মনে হয়েছে দুই একবার যে তোমার প্রাক্তন তোমার এমন অদ্ভুত possessiveness-এর কারণে পালিয়েছে। ছেলেরা এটা পছন্দ করে না, আর যারা সৃষ্টিশীল, তারা তো কখনওই এত পেইন নিতে চাইবে না। কাউকে ভালোবাস তাকে তার মতো করে থাকতে দিয়ে, বাড়তে দিয়ে, তার মন খারাপ করে দিয়ে নয়, তাকে তোমার মতো করে পেতে চেয়ে নয়। ওভাবে আসলে হয় না। হয়তো নিপুণ অভিনেতা কিংবা নেহায়েত অসহায় কেউ অতটা মেনে নিচ্ছে বলে তোমার কাছে মনে হবে, কিন্তু নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে দেখো, এসব কেবলই ফাঁকি। দায়ে না পড়লে কেউ অন্যের নিয়মে বাঁচে না। তাকে ভালোও বাসলে, আবার দায়েও ফেলে দিলে--এ কেমন ভালোবাসা?
আর একটা কথা। খুবই গোঁয়ার্তুমি করে বারবার ‘আমি আপনার ফেসবুক, আমি আপনার ফেসবুক আইডেনটিটি’ এমন আজেবাজে কথা বলে যাচ্ছ। একটু রেসপেক্ট করতে শেখো। নিজের ভাবনা পুরো পৃথিবীর উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমি যা ভেবে বসে আছি, কেবল তা-ই ঠিক, বাকি সব কিছুই ভুল--অজ্ঞতার শুরু এখান থেকেই! যার সাথে কথা বলছ, সে কী বলছে শুনতে শেখো, কী ভাবছে ভাবতে শেখো। কারও সাথে আলাপ করার অর্থই হলো, তুমি এই মুহূর্তে একটা টু-ওয়ে কমিউনিকেশনে আছ, ওটাকে ওয়ান-ওয়ে করে দিতে হলে যার সাথে কথা বলছ, তার সম্মতি দরকার। এটা তো বুঝতে হবে। তোমার কাছে এই ফেসবুক অনেক কিছু, আমার কাছে কিছুই না। আমি এটা জীবন থেকে শিখেছি। বারবার আমাকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বের করে দেওয়া, ব্লক করা তোমার কাছে অনেক কিছু মিন করতে পারে, কিন্তু আমার কাছে এসবের দুই পয়সার‌ও দাম নেই। ফেসবুকে কেউ থাকা না থাকায় কিছুই এসে যায় না, অন্তত আমার কাছে।
- আপনি আমার সম্পর্কে ঠিক ততটুকুই জানেন, যতটুক আমি আপনাকে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি! কেন না জেনেই জাজ করছেন আমাকে? কতটুকু সত্যিই জানেন আমার সম্পর্কে? আর পজেসিভনেসস? হা হা! আপনি কী জানেন আমার ওই রিলেশন নিয়ে? আদৌ জানেন কি কিছু? আপনার প্রতি আমার loyalty ঠিক কতটুকু ছিল, সেটা প্রুভ করার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তার চেয়ে বরং আপনি আমাকে আপনার মতো ব্যাখ্যা করে ভালো থাকুন! ইদানীং খুব টায়ার্ড লাগে…আমি নিজেকে ব্যাখ্যা করা ছেড়েই দিয়েছি প্রায়, আমাকে যার যেমনি খুশি তেমনি করেই ধরে নিক না! কী এসে যায়! আমি তো বলেইছি, আমি আপনার ঘৃণায় বাঁচব! আর ব্লক? ব্লক করেছিলাম, কারণ আপনার সমস্ত কিছুর কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়াটা আমার জন্য দরকারি ছিল! আপনাকে ব্লক করে আমি আসলে নিজেকেই ব্লক করে রেখেছি আপনার কাছ থেকে! আমি নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পাই না। আমার ভেতরে এক বেপরোয়া ‘আমি’ বাস করে। আমি তাকে ভয় পাই। আপনাকে ব্লক করে আমি তার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি মাত্র! আপনি কি জানেন, আপনার কথা ভেবে আমি রাস্তায় মাথাঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম? আপনি কি জানেন, এই দুইমাসে আমি প্রতি সেকেন্ডেই আপনাকে মনে করেছি?
আমি তো মেনে নিয়েইছি, আমি খারাপ! আমি আপনাকে মানসিক যন্ত্রণা দিই! আপনার মতো করে আমার ভালোবাসার ব্যাখ্যা আগে কেউ কখনও করেনি!
আর শুনুন, আপনি যার কথা বলেছেন, তার সাথে আমার দেখা হয়েছে তার বিয়ের একবছর আগে! সে এনগেইজড হয়েই ছিল পরিবারিকভাবে! তার অপরাধ ছিল, সে সেটা আমার কাছে গোপন রেখেছিল! দিনের পর দিন সে আমার সাথে অভিনয় করে গেছে! এটা অন্যায় নয়? আপনি বলেছেন আমার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। স্যার, জেনে বলেছেন তো কথাটা? একজন প্রতারক আমার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে চলে যাবে? প্রতারকদের অসীম ধৈর্য সম্পর্কে আপনার কোনও ধারণা আছে? ওরা কখনও কোনও কিছুতেই অতিষ্ঠ হয় না। কোনও বিরক্তি, কোনও গালাগালি, কোনও ক্রোধ কিছুই ওদের স্পর্শ করে না। ওরা সব সময়ই মিষ্টভাষী, ধৈর্যশীল, আন্তরিক। হাজারো কথার নিখুঁত বুনন কী করে করতে হয়, তা প্রতারকদের চেয়ে ভালো কেউই জানে না।
প্লিজ, আপনি চলে যান! আমি তো আপনাকে বেঁধে রাখিনি! নকও আর করি না! নাহয় হারিয়েই যান আমার জীবন থেকে, তবুও আমার ভালোবাসার ভুল ব্যাখ্যা করবেন না! আমার ভালোবাসা সত্য হলে আপনি আমাকে মনে করবেন একদিন হলেও! আসি!
- তোমাকে জানার পরিধি আরও বাড়াতে চাইনি, আমি কাউকে জাজ করি না বলে তার সম্পর্কে অতি কিছু জানার ব্যাপারে আমার আগ্রহ কম। সে এখন এই মুহূর্তে আমার সামনে যেমন আছে, আমার কাছে সেটাই জরুরি। তবে হ্যাঁ, তার সম্পর্কে বা তাকে নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে তখন ভিন্ন ব্যাপার! অন্যথায়, আমার কাছে বর্তমানটাই জ্যান্ত, সুন্দর। কে আগে কী করেছে, কী করেনি, সেটা নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। এ পৃথিবীতে সবাই যে যার মতো করে বেঁচে আছে। কেউ আমার খায়ও না, পরেও না। কী দরকার কাউকে জাজ করার? অত সময় কিংবা ইচ্ছে, কোনওটাই আমার নেই।
আমার প্রতি তোমার লয়ালটি বা ডিসলয়ালটি, এসবের তোয়াক্কা আমি করি না। দুটোই তোমার ব্যাপার। যেটা করতে তোমার মনে শান্তি এসেছে, তুমি সেটাই করেছ। ওতে আমার কিছুই এসে যায় না। সত্যিই যায় না। তোমার যে লয়ালটি আমাকে অশান্তিতে রেখেছে, তা দিয়ে আমি কী করব? আমি বরং একটা ডিজলয়াল মেয়ের সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে রাজি, যে মেয়েটি আমাকে স্বস্তিতে থাকতে দেবে। আমার অভিজ্ঞতা বলে, ডিজলয়াল মেয়েগুলোই বরং বন্ধু হিসেবে ভালো হয়। লয়াল মেয়েগুলোর অহংকার বেশি থাকে, কর্তৃত্ব খাটানোর প্রবণতা বেশি থাকে, ওরা প্রায়ই সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়। ওদের সাথে থাকা আর কারাগারে থাকা একই কথা।
আমি যা ভাবি, ভেবেছি, তা-ই বলেছি অকপটভাবে। আমার চরম ক্ষতি করেছে যারা, ওদেরও আমি কখনও ঘৃণায় রাখি না। অত সময়ই আমার নেই। সময় দেবার মতো অনেক কিছু আছে, কাউকে ঘৃণা করার ব্যাপারে কোনও উৎসাহ বা ইচ্ছে আমার সত্যিই নেই। কাউকে ঘৃণা করার অর্থই হলো, নিজের মধ্যে কিছু বাড়তি ও আরোপিত অনুভূতি উৎপন্ন করে সেটা বাজে কাজে খরচ করা।
তোমার যা দরকার ছিল, তা করেছ। ব্লক!! হাহাহা...কী একটা ফেসবুক, তার একটা সামান্য ফিচার ইউজ করে এত লাফালাফি! হ্যাঁ, আমিও একসময় করতাম এমন। এখন সেসব মনে এলেও হাসি পায়! যাকে ফেসবুকে ব্লক করে দাও ইচ্ছে হলেই খুব সহজে, তাকে কি সত্যিই মনের ঘর থেকে ব্লক করে দিতে পার? কিংবা যাদের ব্লক করে দাওনি এখনও, তাদের সবারই কি তোমার মনের মধ্যে অবাধ যাতায়াত? যে কাজ সহজেই করে ফেলা যায়, সাধারণত সে কাজের প্রভাব তেমন একটা বেশি হয় না।
আমার কথা আমি তোমাকে ভাবতে বলিনি। বলেছি কি? যদি ভেবে থাক, তবে তোমার মন ওরকম করে ভাবতে আনন্দ পেয়েছে বলেই ভেবেছ। ব্যস! এখানে আমার কী এসে যায়? কারও জন্য আমরা প্রার্থনা করি কেন? কারও কথা ভাবি কেন? কাউকে শুভকামনায় রাখি কেন? ওরকম করে আমরা শান্তি পাই বলে, ওরকম করতে আমাদের ভালো লাগে বলে, ওরকম করলে আমরা স্বস্তিতে বাঁচি বলে। এই তো! এর জন্য সে-মানুষটাকে দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলে দেওয়ার কী মানে? তুমি আমাকে মনে করেছ, ওটার উপর আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি তোমাকে বাধ্য করিনি ওরকম করতে। মনে করে আনন্দ পেয়েছ বলেই তো মনে করেছ। এমনও হতে পারে, আনন্দ পাওনি, কিন্তু মনে না করে আর কোনও উপায়ই ছিল না তোমার সামনে। ঠিক আছে, ভালো কথা। কিন্তু ওতে আমার কি হাত আছে, বলো? আমাকে কেন এত কথা শোনাচ্ছ? একটা কথা বলি। মা যখন রাতে টেবিলে ভাত বেড়ে আমাকে চেঁচিয়ে ডাকে, এদিকে আমি প্রায়-সমাপ্ত কোনও লেখা শেষ করার পর্যায়ে থাকি, ওদিকে মা বিরক্ত হয়ে ওঠে আমি দেরিতে এলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাই, তখন একেক সময় আমি মাকে বলি, এতটা বকাঝকা ও ভালোবাসা সহ্য করার চেয়ে আমি বরং না-খেয়ে মরে যাই, সেও ভালো। সবাই ভালোবাসায় বাঁচতে চায় না, কেউ কেউ শান্তি আর স্বস্তিতেও বাঁচতে চায়। দুর্ব্যবহার সহ্য করে ভালোবাসা পাওয়ার চাইতে অনেক অনেক অনেক ভালো পুরো পৃথিবীর উদাসীনতায় বাঁচা।
তোমাকে, ভালো কি খারাপ, ওরকম কিছু বলিনি। আমি কাউকে জাজ করিও না। যে যার মতন। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি আমার জীবনযাপনের সাথে নিজেকে যুক্ত করে ফেলে বা তার কোনও কাজ, কথা, আচরণে আমি ধাক্কা খাই কোনও না কোনওভাবে, তবে আমি কী অনুভব করছি, সে যা করছে তা আমার কাছে কীরকম, সেটা বলার চেষ্টা করি। আমি আমার মতো বাঁচি, তুমি তোমার মতো বাঁচো। যদি এটা ঠিক থাকে, তবে সত্যিই এই পৃথিবীর কোনও কিছু নিয়েই আমার কোনও মাথাব্যথা নেই…কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তো নেই-ই! আমার জায়গা থেকে আমি আন্তরিক, অকপট, পরিষ্কার।
গোপন করে, মিথ্যে কথা বলে, প্রতারণা করে স্বার্থ হাসিল করে শুয়োরের বাচ্চারা। এরকম কারও হাত থেকে রেহাই পাওয়াই ঈশ্বরের আশীর্বাদ, দান। তবে হ্যাঁ, তুমি যদি আমার প্রেমিকা হতে আর আমাকে এত টর্চার করতে, এতটা এক্সপেক্ট করতে, এতটা জাজ করতে, তবে আমি বহু বহু বহু আগেই তোমার হাত ছেড়ে দিতাম। এতটা পেইন নিয়ে বাঁচার কোনও মানে নেই। যে মানুষটা আমাকে এতটা যন্ত্রণায় রেখেছে, তাকেই ধরে রাখতে হবে বা তার কাছেই আটকে থাকতে হবে কোন যুক্তিতে? মানুষ বাঁচেই-বা কয় দিন? সামনে কী হবে, কী হবে না, কে বলতে পারে! বর্তমানটাতে যন্ত্রণায় বেঁচে থাকার কী মানে? তবে হ্যাঁ, বিয়ে করে ফেললে তখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। আর একটা সন্তান হয়ে গেলে তো রীতিমতো অসহায় হয়ে যেতে হয়! সন্তানের মুখে দিকে তাকিয়ে অনেক কিছুই চাইলেও আর করা যায় না। তখন ডিভোর্সের চেয়ে মৃত্যুও সহজ। কত যে কঠিন একটা জীবন বিবাহিত মানুষের! মুখ বুজে সব মেনে নিয়ে কপট-হাসি মুখে ছড়িয়ে দিনযাপনের নামই বিবাহ!
লোকে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে বিয়ে-করা স্ত্রীকে বা স্বামীকে দিনের পর দিন সহ্য করে যায়। দুইটা মানুষ নিজেদের সহ্য করতে পারছে না; হয়তো দুজনই দুজনের জায়গায় ঠিক, তবে একজনের জায়গাটা আর একজন মেনে নিতে পারছে না; কোনওমতে মানিয়ে নিয়েটিয়ে খুব যন্ত্রণা নিয়ে অভিনয় করে যাচ্ছে দিনের পর দিন…তাও ওরা আলাদা হতে পারবে না, শান্তিতে বাঁচতে পারবে না। এ কেমন নিয়ম সমাজের? ফালতু একটা সমাজে বাস করি আমরা! কিন্তু বিয়ে না-করলে ওরকম কোনও দায় নেই বলেই আমি মনে করি। ওরকম বিরক্তিকর কোনও প্রেমিকা, যার কথা শুনলে, যার সাথে থাকলে নিজেকে লো ফিল হয়, তার সাথে থেকে যাওয়ার কী মানে? সরি, অত প্রেম বা সময় আমার মনে নেই! যে প্রেমিক বা প্রেমিকা পেইন দেয় সব সময়, দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে তাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ভালোবাসার চাইতে স্বস্তি বড়। প্রেম মানে সারাজীবনের জন্য বন্ধন নয়, যতক্ষণ প্রেম ততক্ষণই বন্ধন। এত পেইন খাওয়ার কোনও মানে নাই। প্রেম অমর কিছু নয়, প্রেম মরণশীল জিনিস--এমনকি মানুষের চেয়েও মরণশীল…কে না জানে মানুষের আগেই মানুষের প্রেম মরে যায়! কারও সাথে ভালোবাসার যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচার চাইতে একা একা একাকিত্বের স্বস্তি নিয়ে বাঁচা অনেক অনেক অনেক ভালো। আর আমি বেকার বা অ্যাভারেজ রাম সাম যদু মধু টাইপের কেউ হলে হয়তো অত সময়, ধৈর্য ও শ্রম দিতাম। আমি আসলে ওই মানসিক ও বুদ্ধিমত্তাগত অবস্থানে নেই।
আমি চলে যাইনি, থেকেও যাইনি। অন্য কোথাও চলে যাওয়া বা থেকে যাওয়া যায় না আসলে। যে যেখানে থাকে, সেখানেই থেকে যায় শেষ পর্যন্ত। আমি তোমার ভালোবাসাকে ব্যাখ্যা করিনি, ওটার ব্যাখ্যা করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়, কেননা সবাই নিজ নিজ নিয়মেই ভালোবাসে, ঘৃণা করে, সেগুলির কোনওটিই ভুল নয়। তুমি আমার প্রতি যেমন আচরণ দেখিয়েছ, অন্তত আমার কাছে যেমন দেখিয়েছ বলে মনে হয়েছে, তা সোজাসাপটা ভাষায় বলে দিয়েছি। আমি যা ভাবি, যা বিশ্বাস করি, যা আচরণ করি, যা মেনে নিতে পারি, যা চাই...তা-কিছু জেনে ও বুঝে, এর পর মেনে নিয়ে কেউ আমার সাথে থাকলে থাকবে, না থাকলে নেই। কেউ আমায় না বুঝুক, ক্ষতি নেই, তবু ভুল না বুঝুক। তোমার ভালোবাসা সত্যি কি মিথ্যে, সে বিচারে আমি যাচ্ছি না, ইচ্ছেও নেই যাওয়ার। তবে তোমার ওরকম আগ্রাসী ও ভয়ংকর প্রত্যাশা ও আক্রমণ আমাকে বাঁচতে দিচ্ছিল না। আমি শান্তি নিয়ে বাঁচতে চাই, তাই আমি সেটুকু আর্জি তোমার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তোমাকে মনে করব, তুমি মনে এসে যাবে। এত কিছুর পর মনে না আসার কোনও কারণ দেখি না। মনে অনেকেই এসে যায়। কেউ কেউ মনে আসার সময় সাথে নিয়ে আসে এই ভাবনাটা--মনে আছে, একসময় কতটা আঘাত দিয়ে কথা বলতাম তোমাকে? কত খারাপ আচরণ করেছি দিনের পর দিন? অকারণেই...
...তুমি ওদের মধ্যে নিজেকে রাখছ কেন? পৃথিবীতে কে কার জীবনে চিরকাল থেকে যায়, বলো? সম্পর্ক তৈরিই হয় ভেঙে যাওয়ার জন্য। জীবন দিয়ে হলেও সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হবে, আমি এমন কোনও থিওরিতে বিশ্বাসী নই। প্রকৃতি বৈচিত্র্য পছন্দ করে। ঈশ্বর যা তৈরি করে দেন, তা ধ্বংসও করে দেন। যা দেন, তা কেড়েও নেন।
গেলাম...এটা বলার কোনও মানে নেই। থাকবে কি চলে যাবে, এটা তো তোমারই হাতে। যা করলে নিজেকে ভালো রাখতে পারবে, তা-ই করবে। এসব নিয়ে কোনও মাথাব্যথা আমার কোনও কালেই ছিল না, এখনও নেই। কাউকে কষ্ট দিয়ে বাঁচা পাপ। এ পাপে পাপী যারা, তাদের মনে শুভবুদ্ধির উদয় হোক!
- বাহ্‌! আমি বিশ্বাস করি, সব কিছুর জবাব দিতে নেই! দিলাম না!
তবে, আজ বলি, আমি কখনও এমন কিছু প্রত্যাশা করিনি আপনার কাছ থেকে, যার জন্য আমার ছোট প্রত্যাশাগুলো আগ্রাসী ও ভয়ংকর হয়ে উঠে তা আপনাকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে! আপনি ভালোবাসার যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেই সংজ্ঞা অনুযায়ী ভাবলে পৃথিবীতে আর কেউ ভালোবাসত না! কে নিজের প্রশান্তির জন্য ভালোবাসে না? কে নিজের মনের দাবি পূরণের জন্য ভালোবাসে না? সবাই কি মনের মধ্যে বিন্দুমাত্রও প্রত্যাশা না রেখেই ভালোবেসে যায় দিনের পর দিন? শুধুই ভালোবাসতে ভালো লাগে বলেই ভালোবাসে? আর দেখুন, আপনাকে ভালো-টালো বেসে আমি খুব একটা প্রশান্তি পাইনি! পেলে আর রাস্তার মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতাম না!
ঠিকই তো, এত সময় কোথায় আপনার? আর কী বললেন, আমার হাত আপনি আগেই ছেড়ে দিতেন? এই কথার জবাবটা দিলাম না। সব কথার জবাব থাকলেও দিতে হয় না, কিছু কথা জবাব না দিয়ে মাথায় রেখে দিতে হয়।
এই পৃথিবীতে আমাকে ঈশ্বর যতদিন বাঁচিয়ে রাখবেন, আমি আর কখনওই আপনার হাত ছুঁয়ে দেখার ‘আগ্রাসী ও ভয়ংকর’ প্রত্যাশা করব না! কখনওই না! আর বর্তমান সব সময় জ্যান্ত, সুন্দর যাঁদের কাছে, তাঁদের ফ্রয়েডের সাইকোঅ্যানালাইনিস হৃদয় দিয়ে অনুভব করার দরকার আছে! বর্তমানটা তো দাঁড়িয়েই আছে অতীতের বুকে আর ভবিষ্যতের দিকে ঝুঁকে। আপনি কেবলই বর্তমানকে নিয়ে বাঁচতে চাইলেও পারবেন নাকি আদৌ? মুখে এরকম অনেক কিছুই বলে ফেলা সোজা! আপনি কারও সাথে বন্ধনে জড়িয়ে পড়তে চান না কেন, জানেন? আপনি আসলে দায়িত্ব নিতে ভয় পান, তাই!
হ্যাঁ ঠিক ঠিক! অ্যাত্ত সময় কোথায় আপনার? এই যে মেসেঞ্জারে আবার লিখবেন, তাতে কিন্তু সময় যাবে! তার চেয়ে বরং দেবেন না আর আমার একটাও টেক্সটের রিপ্লাই!
আবারও বলে গেলাম, আপনার উচিত ছিল, আর একটু ভিন্নভাবে আমাকে নিয়ে ভাবা! আপনি অ্যাভারেজ নন বলেই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি: আপনার অভিজ্ঞতা ও বোধ কী বলে? নীরজা কি তবে অ্যাভারেজ? রাস্তাঘাটে বেরোলেই কয়েক পিস নীরজা দেখেন নাকি?
- শুনে রাখো, এ পৃথিবীতে উচিত ছিল বলে কিছু নেই, অনুচিত ছিল বলেও কিছু নেই। যা আছে, তা হলো...কী ঘটে, কী ঘটে না; কী ঘটল, কী ঘটল না। ব্যস! এর বাইরে আর কিছুই নেই। জীবন তো তোমাকে অনেক কিছুই দেখিয়েছে, তুমিও উচিত-অনুচিতে বিশ্বাস রাখছ এখনও পর্যন্ত? উচিত অনুচিত বলে সত্যিই কি কিছু আছে? এক সময়ে যা উচিত, অন্য সময়ে সেটিই আবার অনুচিত। এক অঞ্চলে যা উচিত, অন্য অঞ্চলে সেটিই আবার অনুচিত। একজনের চোখে যা উচিত, আর একজনের চোখে তা-ই অনুচিত। সম্প্রদায়, দায়, দাবি, শিক্ষাদীক্ষাসহ আরও অনেক কিছুই আছে, যেগুলি উচিত ও অনুচিতের নিয়ামক। বিশ্বজনীন কোনও আদর্শ স্ট্যান্ডার্ড নেই ঔচিত্য বা অনৌচিত্যের।
আর কী জানো তো...বেঁচে থাকার কোনও গ্রামার নেই, ভাবনারও কোনও গ্রামার নেই। যে যেরকম করে বেঁচে আছে, কোনও ঝামেলা ছাড়াই ভাবতে পারছে, সেটাই তার যাপন, তার ব্যক্তিগত গ্রামার। পৃথিবীর কারও কোনও ক্ষতি না করে একটা মানুষ যেভাবেই বাঁচুক না কেন, সেটাই তার বেঁচে-থাকার দর্শন। সে দর্শনে যত তাড়াতাড়ি অন্যদের মান্যতা আসবে, পৃথিবীর জন্য ততই মঙ্গল। আর আমাকে ভালো-টালো বেসে তুমি প্রশান্তি পেয়েছ কি পাওনি, সেটার দায় তোমার ঘাড়েই। আমাকে ভালোবাসতে বা ঘৃণা করতে তোমাকে আমি বলিনি। যদি কোনও ভার নিয়ে থাকো আমাকে ভালোবাসার, তার দায় পুরোপুরিই তোমার একার। আমাকে ভালোবেসে তোমার মন শান্ত হয়েছে, তুমি স্বস্তি পেয়েছ…সেজন্যই তুমি আমায় ভালোবেসেছ। যদি এখন ভালোবাসতে আর ভালো না লাগে, তবে বেসো না। তোমার ভালোবাসা পেতে কে তোমার পায়ে ধরে বসে আছে? নিজ দায়িত্বে যা করেছ, তার কৈফিয়ত আমাকে দিচ্ছ কেন? কীসের অহংকারে বা তৃপ্তিতে?
প্রত্যাশার কথা বলছ? তোমার সবচাইতে প্রিয় কোনও মানুষের নামে শপথ করে নিজের মনকে প্রশ্ন করে দেখো তো আমি কখনও কণামাত্রও প্রত্যাশা তোমার কাছে রেখেছি কি না? যদি না রাখি তবে তুমি কেন রাখবে? কীসের অধিকারে? আগেই তো বলেছি, যে মায়ের অধিকার আমার উপর সবচাইতে বেশি, তাঁর প্রত্যাশাই আমাকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেয় না অনেক সময়। হয়তো তা প্রত্যাশা নয়, ভালোবাসাই…তবু আমি চাই না এমন ভালোবাসা, যা আমাকে স্বস্তি দেয় না। আমাকে স্বার্থপর ভাবছ? তোমাকে একটা ছোট্ট তথ্য দিই। আমাকে যারা চরমভাবে অপছন্দ করে, তারাও একথা অকপটে স্বীকার করে যে আমার চাইতে বেশি পরার্থপর মানুষ ওরা এ জীবনে তেমন দেখেনি। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব, নিজের সব কিছুই অন্যকে দিয়ে দিতেও প্রস্তুত আমি, তবে তার জন্য কাউকেই একটুও যন্ত্রণা দেবো না, অস্বস্তি দেবো না। আমি যা-কিছুই করি, নিজের ভালোলাগার জন্যই করি, তার দায় অন্য কাউকে নিতে হবে কেন? নিজের জীবনে নিজেকেই বাঁচতে হয়। মরে গেলে তো সব শেষ, একটু স্বস্তিতে বাঁচবার আর কোনও সুযোগই আর থাকল না। ‘আমি আর বাঁচবই-বা কয় দিন!’ এসব বলে বলে মায়েরা কেন যে ওরকম ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করেন, কে জানে! এ জীবনে মায়ের আগেই মরে যেতে অনেক সন্তানকেই দেখেছি।
আর…কথার জবাব দিলে না..দিলেও যে ওটা আঁকড়ে ধরে কাঁদতাম, তা নয় কিন্তু! মাথায় রেখো এটা। তুমি যা বল, তা আঁকড়ে ধরে বাঁচবে…যে তোমাকে হৃদয়ে রাখে সে। নিশ্চিতভাবেই বলছি, আমি কোনওভাবেই সে ব্যক্তিটি নই! সবাই তার নিজের মতো করে ভালো থাকুক, যদি সময় ও সুযোগ হয়, অন্তত তার পাশের মানুষটিকে ভালো রাখুক--মানবিকতায়, জোর করে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে।
- যার আমাকে নিয়ে ভাবার সময় নেই, আমি জবাব দিলে সেটা আঁকড়ে ধরে সে কাঁদত, তেমন ভাবার মত আত্মতৃপ্ত বোকা আমি নই! আপনিও আপনার প্রিয় মানুষের নামে শপথ নিয়ে আমার একটা এসএমএস দেখাবেন--মুখে নয়, তাজা প্রমাণ চাই--যেখানে আমি আগ্রাসী ও ভয়ংকর প্রত্যাশা করেছি? আসলে কী, আমার কোনও কিছুই আপনার ভালো লাগে না, তাই সব কিছুর মধ্যে ভুল খুঁজছেন! যে ব্যথা আমি আমার কাঁধে নিয়েছি, সেখানে কি আমি আপনাকে দোষারোপ করেছি? আমি তো জানতামই, এই ভালোবাসার প্রতিদানটা এভাবেই হবে! তবে এতটা ভয়ংকরভাবে হবে, সেটা বুঝিনি! জীবনে যাদেরকে ভালোবেসেছি সরলমনে, তাঁদের কেউ রয়েছে, কেউ চলে গিয়েছে, কিন্তু কেউ এভাবে এতটা বাজেভাবে বলে যায়নি!
আমি ভেবেছিলাম, ও তো প্রতি বছর জন্মদিনে আমাকে শুভকামনা জানাত, এখন বিয়ে হয়েছে, হয়তো এই বছর আর জানাবে না! কিন্তু দেখলাম, ঠিকই ফোনে একটি মেসেজ এসেছে! সবাই খারাপ হয় না। অনেকেই পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে কত কিছু করে, ওদের করতে হয়।
কত কষ্ট করেছি আপনার উপহারটির জন্য…আমি জানি! এই কষ্টের আবার কৈফিয়ত কীসের? আর অহংকার? আপনাকে আমি বহুরূপে, বহুভাবে ভালোবেসেছি! আপনি এই ভালোবাসা কখনও বোঝেননি। সেই নিষ্কলুষ ভালোবাসার অহংকার আমার সারাজীবন থাকবে! থাকবেই! আপনার এই কথাটা আমার খুব খুব কাজে লাগবে জীবনে...এত সময় কোথায়? সিরিয়াসলি, সামনে আমার চাকরির পরীক্ষা, জীবনটা এখনও এলোমেলো ও বিধ্বস্ত! তাও আমি আপনাকে নিয়ে আছি এখনও! ছিঃ! নিজের প্রতি আজকে সত্যিই খুব ঘৃণা জাগছে! আমি এমন কেন! আমার কি জন্মই হয়েছে ভালোবেসে দুঃখ পাবার জন্য?
- বাহ্! ওই প্রতারকের একটা টেক্সট তোমাকে স্পর্শ করল! তোমার মতো এতটা ভণ্ডামি-সমর্থক মানুষকে আর কী বলব! মেয়েদের কী হয় জানো তো…কেউ ওদের সাথে প্রতারণা করুক, ওদের ভেঙ্গেচুরে একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়ে যাক, ওদের অপমান করুক আর যা-ই করুক না, সে যদি ওদের সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বলে, মুখের উপর সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে মিথ্যেকথাও বলে, দিনের পর দিন ভণ্ডামি করে যায়, খুবই ভালো ব্যবহার করে করে মেশে, ওদের পটানোর যত অব্যর্থ রাস্তা আছে সবগুলিতেই হাঁটে, তবে মেয়েরা শত লাথি খেয়েও তাকেই ভালো মনে করবে! ওরা কঠিন সত্য নিতে পারে না, কিন্তু নরম মিথ্যা বুকের ভেতরে রেখে পুজো করতে পারে। নির্বোধ মেয়েরা সৎ কাউকে ভালোবাসে না, ভণ্ড প্রতারককে ঠিকই ভালোবাসে। তুমিও তো একই জিনিস দেখছি! তোমাকে সত্যিই বলার কিছু নেই!
- আর যাকে এই দুইমাসে আমার নিঃস্বার্থ, শুদ্ধ ভালোবাসা একটুও ছুঁতে পারেনি, সেই মানুষকে আর কী বলব!
- তবে কী জানো, তোমার মতো বেকুবদের জন্য প্রতারকই ভালো। অকপট সত্যকথন নেওয়ার ক্ষমতা তোমার নাই। তোমার চোখে মিষ্টভাষী প্রতারক কটুভাষী ভালোমানুষের চাইতে বেশি গ্রহণযোগ্য।
- নিঃস্বার্থ, শুদ্ধ ভালোবাসা নেবার মতো ক্ষমতাও আপনার নেই! আপনার জন্য মুখোশি ভালোবাসাই দরকার! এলোমেলোভাবে, অকপটে নিজের মনের কথা বলার মতো মানুষ কখনও আপনার প্রিয় হতে পারবে না! আমি বেকুব বলেই যেখানে আমার কোনও প্রাপ্তি নেই, সেখানে আমি আমার এতটা মূল্যবান আবেগ নষ্ট করেছি!
- এখনও না-বুঝে কথা বলে যাচ্ছ! আমি যেমন, আমাকে তেমন করে ভাবো। আমার কাছে ভালোবাসার চাইতে শান্তি বড়, প্রেমের চাইতে স্বস্তি বড়। আমি বিশ্বাস করি, যার সাথে থাকলে আমার নিজেকে ছোট মনে হয়, মনে কষ্ট আসে, একধরনের লো ফিল হয়, তার ভালোবাসার আমার দরকার নাই--সে ভালোবাসা যত নিঃস্বার্থই হোক না! আমি এ জীবনে যাদের ভালোবেসেছি, তাদের বেশিরভাগই জানে না আমার ভালোবাসার কথা। যে দুইএকজন জানে, তাদের একজনও বলতে পারবে না, আমি ওদের ওদের মতো করে বাঁচতে দিইনি, আমার আরোপিত কোনও কিছু মেনে নিতে ওদের বাধ্য করেছি, কণামাত্রও প্রত্যাশায় বেঁধেছি, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রও বিনিময়ের আশা রেখেছি। কাউকে যদি ভালো অনুভূতি দিতে না-ই পারলাম, তবে তাকে ভালোবাসি, এমন বলবার কোনও মানে হয় না।
- এজন্যই তো বললাম, আপনার কাছে ভালো অনুভূতি মানেই মুখোশি ভালোবাসা! যেখানে শুধু নিপুণ অভিনয়ের মাধ্যমে অন্যের মন জয় করার সূক্ষ্ম নাটক চলে! আর আমার কাছে ভালোবাসা মানে, মানুষটার হাতটা ধরতে না পারলেও একবার হাত ছোঁয়ার পর যে প্রশান্তি, সেটা নিয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেওয়া, মাঝে-মধ্যে সেই হাতটির দিতে তাকিয়ে তার ছোঁয়া খোঁজা!
আমরা যখন সাহিত্য পড়তাম, তখন আমরা উপন্যাস নিয়ে ভাবতাম না, আমরা ভাবতাম লেখককে নিয়ে! তিনি কোন কনটেক্সটে কথাটা বলেছেন? এমন লেখার কারণ কী? তিনি কি এই ভালো কথাটির আড়ালে কিছু অজানাকে ইঙ্গিত করছেন? আমরা যা পড়ছি, মোটাদাগে যা ভেবে নিতে ইচ্ছে করছে, চোখের সামনে যতটুকু লেখা আছে দেখছি…তার বাইরে অন্য কোনও জগত কি আছে, যেখানে লেখক আমাদের নিয়ে যেতে চাইছেন? যা দেখা যায় না, যা বোঝা যায় না, যা শোনা যায় না…তার মধ্যে ডুব দিতে না পারলে জীবনের সত্যিকারের রস আস্বাদন করা সম্ভব নয়। লিটারেচার তথা লাইফকে বুঝতে হলে আনসেইড ফিলিংসকে বুঝতে হয়! আমি এখনও বলব, যতটুক আমি আমাকে বুঝেছি, আপনি আমাকে তার এককণা পরিমাণও বুঝতে পারেননি বা চেষ্টাই করেননি আমাকে বুঝতে! আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এত দিনে আপনার সাথে কথাবলা বাদ দিয়ে কোথায় চলে যেত! আমি যেতে পারিনি। কী এক অদৃশ্য বাঁধনে আটকে গেছি। এই তিনমাস আমি মোবাইলে টেক্সট করে হোক, মেসেঞ্জারে কথা বলে হোক, আপনাকে জ্বালিয়ে হোক…আপনার সাথে সম্পর্কটা রাখার চেষ্টা করেছি! আমি চাইনি, আমার ভালোবাসাটা পুরোপুরি হারিয়ে যাক! শত অপমান সহ্য করে, নিজের সমস্ত ইগোকে বিসর্জন দিয়ে আপনার পাশে নিজেকে রাখতে চেয়েছি। আর এজন্যই আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আমি যদি একটি পশুকেও এই তিনমাস ভালোবাসতাম, তাকে বকা দিয়ে হলেও সামনে বসিয়ে ভাত খেতে দিতাম, আমাকে সে খুঁজত, ছেড়ে যেত না, প্রতিদানে একটু হলেও ভালোবাসা দিত! হ্যাঁ, আমি আপনার বকা শুনতে চেয়েছি। এ জীবনে বকা শোনার ও শোনানোর জন্য একজন মানুষ লাগে। আপনাকে আমি সেই মানুষটার জায়গায় দেখতে চেয়েছি। আপনি তা বোঝেননি, আপনি আমাকে বোঝেননি।
জানেন, আমাকে কাল একজন ‘শুভ সকাল’ বলায় আমার বুকটা কেঁপে উঠেছে! আমি তাকে রিপ্লাই দিইনি! অনেক দিন ধরেই আমি অনেক অন্ধকারে বই পড়লেও কখনও জানালা খুলি না! আকাশ-দেখা আমি বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম। আমার মতন একটা মানুষের আকাশ দেখে কী হবে? সেই আমি আপনার জন্য জানালা খুলেছি, আকাশ দেখেছি। আমি নিজের ঘরে আলো আসতে দিয়েছি। যে মানুষটা এতগুলো বছর আলোকে আটকে রেখেছে, ভেতরে আসতে দেয়নি, সে মানুষটা আলোর কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছে কেবলই আপনার জন্য। এই মেনে-নেওয়ার কি কোনও দাম নেই আপনার কাছে?
রাস্তার মাঝে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবার পর সমস্ত মানুষ আমার দিকে কী যে অসহায়ের মত তাকিয়ে ছিল! আর আমি? ওদের কাউকেই দেখিনি, কেবল আপনার মুখটা বারবার মনের মধ্যে ভেসে এসেছে। সেই আপনি আমাকে এভাবে মূল্যায়ন করলেন! তবে কী জানেন, আপনি আমাকে যেভাবে ভেবেই আত্মতৃপ্তি পান না কেন, আমি আপনাকে এভাবে দেখতে কোনও দিনই চাইনি! আপনাকে এভাবে দেখতে পেয়ে আমার কষ্ট হচ্ছে, সত্যি! আর ঘৃণা হচ্ছে নিজের প্রতি! আপনি অনেকবার বলেছেন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আপনার দরকার নেই! আপনার কেবলই স্বস্তি দরকার! আসলে যারা জীবনে কখনও ভালোবাসা পায়নি, তারাই কেবল জানে, ভালোবাসাহীনতায় বাঁচতে কেমন লাগে! আর আপনাদের মতন মানুষ, যাদের জীবন ভালোবাসায় ভেসে গেছে সব সময়ই, তাদের কাছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কোনও দাম নেই, শুধু স্বস্তিটাই খোঁজে তারা!
আপনি একটা কথা বলেন না…আপনাকে ছাড়াই যে শান্তিতে নিঃশ্বাস নেয়, তাকে ছেড়ে থাকতে আপনার দম আটকে যাবে কেন! ঠিক! খুবই ঠিক কথা! অনেক দিন আমার দম বন্ধ হয়ে ছিল! এখন নিঃশ্বাস নেওয়া দরকার! আমিও বাঁচি, আপনিও বাঁচেন! যান, স্বস্তি দিলাম আপনাকে!
- তুমি আমাকে বোঝোনি। তবে ভুল বুঝেছ। দ্বিতীয়টা সোজা। তুমি সহজ কাজটাই বেছে নিয়েছ--ভুলবোঝা! কাউকে কষ্টও দিচ্ছি, আবার ভালোও বাসছি…এটা কেমন কথা? ধুউর, কাউকে কষ্ট দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক রাখা যায় নাকি? যায়ও যদি, যাদের সাথে যায়, আমি ওই দলে পড়ি না। সরি! মানুষকে অনুভব করতে শেখো। মানুষের দুঃখকে হৃদয় দিয়ে দেখতে শেখো! বিনয়ী হও, মানবিক হও, মানুষ হও।
- আপনাকে সত্যিই এরকমভাবে দেখতে চাইনি! সরি! আর আমি মানবিক কি না সেটা…আপনার তো অনেক জ্ঞানী মানুষের সাথে জানাশোনা আছে, তাই নিজে সময় না পেলে তেমন একজনকে এই তিনমাসের সমস্ত মেসেজ ফরওয়ার্ড করে জিজ্ঞেস করবেন, এই মেসেজের কোথাও অমানবিকতা আছে কি না, নিষ্ঠুরতা আছে কি না! আর যে মানবিক ও বিনয়ী মানুষ, তার তো উচিত ছিল এই অমানবিকের জ্বালানোটা একটু হলেও ফিল করা! কোনও একদিন না জ্বালালে আজকে জ্বালালো না কেন, সেটা ভাবা! ধুউর! যার সময়ই নেই ভাবার, তার কাছে কী বলি এগুলো!
- স্থির হও, স্থির হও! ধীর হও, ধীর হও!
- অন্তর্দৃষ্টি সজাগ হোক সবার।
- প্রথমেই হোক তোমার!
- যারা সমাজের চোখে জ্ঞানী, তাঁদের আগে হওয়া দরকার!
- আবার জাজ করছ! এখান থেকে বেরিয়ে আসো! আমি তোমার খাইও না, পরিও না, আমাকে জাজ কর কোন অধিকারে?
If you really love someone, the only thing you can do for them is to let them live in peace. Even hatred is much better than that love that creates pain. Loving someone never means making them a slave to your choices. It’s not love, it’s selfishness. You love someone and you expect many things from them. It means, you’re just creating unhappiness for yourself and for them. And, you’re solely responsible for all the pains you get. It’s their life, not yours. Either accept them as they are or simply let them go away. Love is never ever a one-to-one journey. You expect your loved one will do this and that for you, be loyal to you, bring flowers for you, be with you for the whole life, kiss you on your forehead even when they don’t feel like kissing, take you everywhere with them, never talk to a person of the opposite sex, share their personal everything with you…Is it called love?
ভালোবাসলে শুধু ভালোই বাস, আর কিছু নয়। যদি ভালোবাসার ক্ষণটিতে সারাজীবনের স্বপ্ন দেখে বসে থাক, তবে তো কেবল কষ্টই পাবে। তাকে ভালোবেসে ভালো আছ, ভালো থাক না! অত প্রত্যাশার ভারে বা ভবিষ্যৎ স্বপ্নের বুননে বর্তমানটাকে নষ্ট করে ফেলে কী লাভ হচ্ছে, বলো তো? তুমি কি সত্যিই জানো, তুমি বা সে কতদিন বাঁচবে? তোমাদের আয়ু আর কতটুকু বাকি আছে, জানো? এই মুহূর্তটিতে বিষিয়ে দিচ্ছ কেন এত কিছু ভেবে? যাকে ভালোবাস, কেন তাকে তার মতো করে থাকতে দিচ্ছ না? একটা মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকবে, তাও কি তুমি ঠিক করে দেবে তাকে ভালোবাসার অজুহাতে? কেন তোমার মনে হচ্ছে যেহেতু তাকে বিয়ে করে তার সাথে ঘর বেঁধে কোনও এক বিকেলে দুজন মিলে মোড়ায় বসে বসে কফির ধোঁয়ায় হারিয়ে যেতে পারবে না, তাই আজকের ভালোবাসা শিকেয় তোলা থাক! তুমি কি সত্যিই জানো তোমার কপালে আদৌ বিয়ে আছে কি না? অন্য কিছু না হোক, অত দিন বাঁচবে কি না, তা-ই তুমি জানো না এখনও! জীবনের অতটা নির্ভুল দ্রষ্টা ঈশ্বরও তো নন! তুমি আমি তো সামান্য মানুষ!
- অনেক অনেক ভালো! নিজের কথা নিজের সাথে বলে যাচ্ছেন! বলে যান, শান্তি পান! যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, তাকে যখন থেকে একটু একটু করে দূরে সরিয়ে দিতে শিখে গেছি, তখন থেকে আমি ঘরের দরজা আর খুলিনি দুইএকবার খুব দরকারে ছাড়া। নিজেকে বন্দি করে রেখেছি। অনেক চাকরির পরীক্ষা চলে গেছে, একটিতেও বসিনি। অন্ধকার ঘরেই সারাদিন থাকতাম! ডাক্তার আমাকে ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে দিত! আমি আগের দিন রাতে ঘুমাতাম, পরের দিন দুপুর তিনটায় ঘুম থেকে উঠতাম।
ছয়মাস পর কাকতালীয়ভাবে আপনার সাথে পরিচয়! ওই প্রথম আমি জানালা খুলে সকাল দেখেছিলাম ছয়মাস পর। ডাক্তারের ওষুধ না, বরং কারও উষ্ণ মমতা আমাকে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসছিল ক্রমেই! তিথির নীল তোয়ালের মতো মনে হচ্ছিল, একজন পাশে দরকার।...এমন একজন, যে কথা বলতে বলতে চোখ ফিরিয়ে নিলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, তুমি চোখ ফিরিয়ে নিলে কেন?
স্যার, এটাকে আগ্রাসী ও ভয়ংকর প্রত্যাশা বলে না, এটাকে বলে পৃথিবীর একমাত্র স্বস্তির, ভরসার জায়গা! সবাইকে ওই জায়গাটা মনে হয় না। সবার ভাগ্যে ওই জায়গাটা জোটে না। সবাই ওই জায়গাটা হয়ও না। খুব কম সময়ে আপনি আমার সেই জায়গাটা হয়ে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল, আপনার কথা না শুনলে আমার সকাল হবে না! আপনি হয়ে উঠছিলেন এমনই এক সত্তা…পুরো পৃথিবী যাকে বলে! আপনি বলেন না, কাউকে পৃথিবী বানানোর আগে ভেবে নিতে! ঠিকই বলেছেন। আপনার শৈল্পিক মনকে সম্মান জানানোর জন্য তেমন কিছুই আমি আপনাকে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেইদিনের পর বুঝলাম, আসলে আমার সব কিছুই আপনাকে বিরক্ত করে! আর তাই আমার যত কষ্টই হোক, কষ্টটা খুব বেশি বেড়ে যাবার আগেই আমি চলে গেছি! আশা করি, আমাকে আর ছোট করে হলেও কোনও টেক্সট কখনওই দিয়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। শুভকামনা রইল!
আর হ্যাঁ, ‘শব্দ’ মুভিটা দেখেছেন না? মুভির লাস্ট পার্টটা, যেখানে ডাক্তার বলছিলেন, আমরা সবাই কথা বলি, কিন্তু কারও কথা কেউ শুনি না! যে ন্যাচারাল সাউন্ড শুনতে পারে তাকে আমরা অ্যাবনরমাল বলি!...এই তিনমাসে আমরা শুধু কথা ছোড়াছুড়ি করে যুদ্ধ করেছি। কারও কথা কেউ শুনিনি! যদি শুনতাম, তবে দুজনেই দুজনকে বাহ্যিক গণ্ডিটা পেরিয়ে বোঝার চেষ্টা করতাম হয়তো! ‘প্রাক্তন’-এ রবীন্দ্রনাথের ‘হঠাৎ দেখা’ থেকে শুনেছিলাম…আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই; দূরে যাবে তুমি, দেখা হবে না আর কোনও দিনই।
আর কখনও হয়তো আমাদের দেখা হবে না! সোশাল মিডিয়ার বদৌলতে যতটুক হয়েছে, ততটুকই মনে থাকবে! আপনার মতো করে আমি কখনও বলতে পারব না, মনে পড়বে না কেন, মনে তো অনেকেই আসে!...আমার জিভে আসবে না এমন কঠিন কথা! বরং আমি আপনার বেলায় বলব: রাতের সব তারাই আছে, দিনের আলোর গভীরে!
- আচ্ছা। তোমার জীবন, তোমার যেমন পছন্দ।