রূপান্তর

 এ বুকেতে আগুনটা যে কেমন জ্বলে!
সিন্ধুনদের তীরটা বিশাল--তবু বালুর মত কেন পোড়ে?
হারিয়ে গেছে আকাশখানি কবেই যেন...
মনে ছেয়েছে গন্ধবর্ণ বিবর্জিত বিষণ্ণ সব অসুখ যত!
 
আমি তোমারেই যাচি, তোমারেই পুজি জন্মজন্মান্তরে,
লুব্ধ কাঁদন প্লাবন চালায় বুকের মাঝে,
মরম-বেদনায় এসে জড়ো হয় আরও ক্লেশ, আরও ব্যথা,
বর্ষিলে তবু আঁধার আজি এ মনমর্মরে কোন সে সুখে!
দেবতা আমার, সে তো জানে--
রিক্ত বাসনা কখন যেন প্রভাতী ফুলের মতন
বোশেখ-উঠোনে উড়ে গেছে কবে ঝড়ে।
সেই পুরনো আঁখি, আর সোনামুখ দেবতাকেও দ্বন্দ্ব জানায়--কীসের ক্রোধে?
 
সেই হাসি হায় মনে পড়ে যায়!
আনমনে কই কথা, কিংবা প্রলাপ--কী এসে যায়?
গোপন প্রেমের তীব্র দহন গোপনে পোড়ায় কীসের নেশায়,
যায় না তারে কখনও ছোঁয়া,
যায় না বাঁধা কোনও ডোরেতেই!
 
তাইতো যখন ভালোবেসে যাই--আড়ালে লুকাই,
দেবতা আমার ভালোবাসা পায়--সে খোঁজ কেবল আমিই জানি!
তোমার পুজোয় শূন্য হাতে,
ভাসাই আসন চোখের জলে।
আমার ঘুড়ি, তোমার সুতো,
উড়াই, উড়ি তোমারই মত,
পাই যে তোমায় নিত্য তবু--সান্ত্বনা এ-ই!
সে খেলাতে--
রক্ত আমার, শরীর আমার, মনও আমার--
তোমার কেবল চিত্ত!
 
বারুদ জমে হৃদয়ে আমার--টাটকা বলেই ভীষণ তেজি!
দেশলাইয়ের কাঠি হবো--পুড়ব কেমন, দেখো!
রুধিরে বইবে ক্ষোভের আগুন,
শিরায় নাচবে লাশপোড়া ঘ্রাণ!
একদিন--এই শহরের সব অলিতে আর গলিতে,
সেইদিন--ভোরের প্রতি নিঃশ্বাসে আর শুভ্র আলোয়,
হাজারটা পথ পেরুবো হেলায়,
এ বুকেরই শাণিত লাঙল কাঁপাবে ভূমি!
দেখবে সেদিন--করলে শোষণ নির্বিচারে,
রক্তে আগুন ওড়েই ওড়ে কেমন করে!
 
ফুঁসবে তৃণ, জাগবে দেয়ালে, ইটের প্রতিটি পাঁজরে-পাঁজরে,
ছড়িয়ে শিখা ধূসর পৃথিবী গিলবে ছাই--আমারই তেজে, তোমার ভুলে!
লাঞ্ছনা আর বঞ্চনাতে--রক্তপ্লাবন ভাসিয়ে নেবে--নতুন-নতুন সীমানাতে,
দেবতা যখন ক্রূর হাসেন ডুব-ইশারায়,
শোণিতধারায় বীজ দহনের কে বুনে যায়?