এক। আমরা কখনও কখনও কাঁদি, এর অর্থ এই নয় যে আমরা দুর্বল। আমরা সবসময়ই হাসি না, এর অর্থ এই নয় যে আমরা খুশি নই। আমরা প্রায়শই স্বপ্ন দেখি, এর অর্থ এই নয় যে আমরা বাস্তবটা দেখছি না। আমরা খুব বেশি ভালোবাসি, এর অর্থ এই নয় যে আমরা আহত হতে চাই। আমরা মাঝে মাঝে চুপ করে থাকি, এর অর্থ এই নয় যে কী বলতে হবে, তা আমরা জানি না। আমরা কখনওবা মরে যেতে চাই, এর অর্থ এই নয় যে আমরা বাঁচতে ভুলে গেছি। দুই। যখন বসন্তটি কেটে যাবে, ফুলটিও শুকিয়ে যাবে, তখনও স্কুলের বছরগুলির সেই বন্ধুটির কথা মনে রাখুন, যে একদিন তার টিফিনের ভাগ আপনাকে দিয়েছিল, যেদিন আপনি টিফিন নিতে ভুলে গিয়েছিলেন। তিন। আমি যখন দুঃখে ভাসি, আমার যখন খারাপ লাগে, তখন আমি সেই দেশে যাই একছুটে, যেখানে আমি নিজেকে প্রতীক্ষায় রেখেছি। সেখানে, এক গ্লাস হুইস্কি হাতে আগুনের কুণ্ডের সামনে বসে থাকি। দেখি, আগুন খুব ধীরে কাঁপছে। সাথে কাঁপছে উষ্ণ হাওয়া। কখনও, জেগে উঠি, আর অপেক্ষার ক্লান্তি এসে গায়ে লাগে। চার। ভালোবাসা আমাদের সেই দেশে নিয়ে যাবে, যেখানে কেবল আমরা থাকব, নিজেদের নিয়মে, যেখানে কী ঘটে, বুঝতে হয় না...… সেখানে চলে যাওয়ার ইচ্ছে একজীবনে পূর্ণ হয় না। আমরা কতটা করতে পারি, তা দেখতে হলে জীবনের আরও ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। আমরা আর কত কষ্ট সহ্য করব? আমি এভাবে আর বাঁচতে পারছি না! আমি অন্তত একটা স্বপ্নের কথা শুনতে চাই, যা সত্য হয়েছে! কাঁদতে গেলে চোখে আঘাত লাগে, আবার চোখের জল মুছতে গিয়ে গাল আহত হয়। আমার হৃদয় পুড়তে থাকে। যখন বুঝি, আমি আজ অন্য কেউ, প্রাণে ব্যথা পাই, আমার চাইতে খারাপ আর কেউ নেই জেনেও বেঁচে থাকতে হয়। এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে? পাঁচ। যখন সময়ের সমাপ্তি ঘনিয়ে আসে, চোখের সামনে আটকে থাকে ঘন আঁধার, জীবন আমাদের ছেড়ে চলে যায়, কেবল শরীর থাকে সমাহিত হওয়ার অপেক্ষায়, তখন আমি একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির সাথে দেখা করেছিলাম, যিনি আমাকে ডেকেছিলেন, তাঁর কাছে আসতে দিয়েছিলেন। তিনি একাকী ছিলেন, কেননা তার পাশে এমন কেউ থাকতে চেয়েছিল, যাকে তিনি চিনতেন না। আমি জীবনকে অস্বীকার করতে গিয়ে হেসে হঠাৎ পড়ে গেলাম...আমি পড়ে গেলাম, উঠে দাঁড়ালাম না এবং তাই আবারও বেঁচে উঠলাম। ছয়। জানালার বাইরে ধবধবে সাদা বৃষ্টি দেখে মনে হয়, আবারও ফিরে যাই। পরক্ষণেই ভাবি, এখান থেকে চলে যাওয়ার কথা না বলে বরং অন্ধকার জঙ্গলে লুকিয়ে থাকব, সে-ও ভালো। আমি লুকোচুরি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই না, সেখানেই আমার মুক্তি---জীবন থেকে। আর কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না! আপাতত...বিদায়। সাত। যদিও জীবন-বইয়ের পৃষ্ঠাগুলিতে এখনও কাঁচা ঘ্রাণটা লেগে আছে, তাদের উপর যত কালো শব্দ, সেগুলিকে আমি আমার পাঠ্য ভাবতে শুরু করেছি। অনেক চেষ্টায় ফিরে এসেছে সেই রেখাগুলি, যেগুলি আঙুলের মাঝে রক্তের সব দাগকে ঘুরিয়ে দেয় অন্যদিকে, পাঠ্য যা আছে, তা নষ্ট করে দেয়। দুর্ঘটনাক্রমে আমি--- স্বপ্নেও বিশ্বাস করতে শুরু করে দিই, উদ্বেগকে ক্ষুদ্র ভাবতে শিখে যাই, বন্ধুত্বকে চিরস্থায়ী ধরে নিই, ভালোবাসা কিংবা অন্যকিছু থাকে না যখন, তখনও নিজেকেই নিজের সঙ্গী করে তুলি। আট। কখনও স্মৃতি মানুষের খুব কাজে লাগে। প্রিয়তম হৃদয়...গোপন রহস্য...অতি মূল্যবান শব্দ...অঙ্গভঙ্গি...দুর্দান্ত চুম্বন...কারও চোখ...কারও অশ্রু... ওরা চুপচাপ দরজা খুলে দেয়। আমরা ওসব দেখি, কান্না বাঁচিয়ে হাঁটি, জমে-থাকা ঐশ্বর্য আলতো করে স্পর্শ করি। নয়। জীবনটা বাঁকানো রাস্তার মতো---দীর্ঘ এবং অচেনা। এখানে আমাদের কখনও নিষ্ঠুর, কখনও দয়ালু সময়ে বাঁচতে হয়। জীবন কখনও প্রেমের মতো---মিষ্টি, টক বা তেতো। কখনওবা, আনন্দ আর বেদনার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রিয়দের সাথে থাকা, কিংবা না-থাকাও, কিছু কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া, কয়েকটিতে পাশও করে ফেলা, অপ্রত্যাশিতভাবে হলেও! দশ। সেই কবে থেকে একাকী বোধ করেই চলেছি। কেন কেউ হারিয়ে গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যায়? কেন তখন ভেতরটাকে ফাঁকা মনে হয়? কেন, মানুষ ভালোবাসে যাকে, তাকেই হারায়? কেন হয় না এমন, ভালোবাসি যাকে, তার সাথেই থেকে যাওয়া যায় বাকিটা জীবন? এগারো। কখনও কখনও হাওয়া এসে বয়ে-যাওয়া কোনও দুঃখকে দূরে সরিয়ে দেয়, একটি উষ্ণ শ্বাসের সাথে শরীর আবারও উষ্ণ হয়ে ওঠে, এবং সমস্ত ঝামেলা দূরে সরে যায়। হাওয়াকে ধন্যবাদ যে আজও বেঁচে আছি। কখনও কাচের উপরে বৃষ্টি বাজে। ভেজাঘাস জলের ফোঁটা নিয়ে জ্বলজ্বল করে, অশ্রু ঢেকে ফেলার কাজটা সহজ হয়ে যায়, কান্না লুকানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য বৃষ্টিকে ধন্যবাদ। কখনওবা গ্রীষ্মের সন্ধানে সূর্য, আবারও কী যেন রঙে, হাওয়াকে আলোর পথে নেয়, ফুলে ফুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফুলের এমন রঙের জন্য সূর্যকে ধন্যবাদ। বারো। শামুক পার্কের পথ ধরে চলে গিয়েছিল। তারা বেঞ্চিতে বসে তাদের চোখ প্রসারিত করে রেখেছিল এবং ভিড়ের মধ্যে নিজেদেরই হারিয়ে ফেলেছিল। তাদের জন্য নিজেদের খুঁজে পাওয়াটা দরকার ছিল। এরপর, যা হওয়ার, হলো না। আমি জানি, কেন তারা চিৎকারের মাঝেও ছুটে গেল--- কেননা, শামুকটি ফিরে এসেছিল। এক দৈত্য গলির মধ্য দিয়ে যায়, সে গলিতে মোরগ ডাকে, কাক পালায়। সে ডাকটা গান হতে পারে, পালানোটা হতেই পারে ফেরা। দুটোই তার অপছন্দের ছিল, কারণ সে ছিল অন্যগলির কেউ। মোরগ যখন ভয়ে লাফ দিলো, সবাই তখন বলল, মুরগিটা দেখতে দারুণ! পাহাড়ের পেছনে, মেঘের ছায়ায়, পেঁয়াজের বদলে রসুন গজায়। ছেলেটি ওকে চুম্বন করার পর সেখানে পেঁয়াজ অঙ্কুরিত হবে।
Post Views: 8