শীতের নয়, হৃদয়ের তাড়নায়

কদিন আগেও বলেছি, সুযোগ পেলে চুরি করে নেব তোমার সবটা; আজ বলতে ইচ্ছে করছে, চুরি করব না, অর্জন করব তোমাকে। কীভাবে করব জানি না, কখনও করিনি, তবে হেরে যাব না, এইটুকু জানি। কোথায় যেন পড়েছিলাম, ভালোবাসা দিয়ে সব জয় করা যায়…এটা আমিও বিশ্বাস করি। সাথে এও বিশ্বাস করি, সব জয় করা গেলেও প্রতারকের মন জয় করা যায় না। যে ভেবেই নিয়েছে, ও যা-ই করুক না কেন, আমি মেনে নেব, কিন্তু কখনও নিজের মাঝে ধারণ করব না; ওর সাথে চলব, তবে মিশে যাব না…তার মন বলতে আসলে কিছু থাকে না, অথবা সে সম্পর্কের সততা বোঝেই না। আমি এমন মানুষকে ভালোবাসিনি। মানুষ পড়তে পড়তে অভ্যস্ত হয়ে গেছি হয়তো, নয়তো হেরে, হারিয়ে, ঠকে আর ঠেকে শিখেছি কিছুটা। সে শেখায় বাদ যায়নি কিছুই। আজ একটু পেছনের কথা বলব। মনে আছে, প্রথম যেদিন তোমার সাথে আমার কথা হয়েছিল ফোনে, সেই দিনটা? আমি ফোন করেছিলাম, তুমিই ফোনটা রিসিভ করেছিলে। আমি জানতাম না কিছুই তোমার সম্পর্কে, আর এও জানতাম না প্রথম কথাতেই ওভাবে দুষ্টুমিও করে বসবে আমার সাথে। আমি তোমার নাম ধরে ডেকে তোমাকে চেয়েছিলাম, আর জানতে চেয়েছিলাম তুমি কে, তুমি বলেছিলে আমি যাকে চাইছি, তুমি নাকি তার অ্যাসিস্ট্যান্ট! তার পর প্রথম যেদিন তোমার সামনে গেলাম, অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল তখন, রাত প্রায় আটটা, আজকের মতোই শীতের রাত ছিল সেদিনও। বাস থেকে নেমেই পরিচয়পর্ব কিছুটা শেষ করে সোজা নিয়ে গিয়েছিলে মিষ্টিমুখ করাতে, মিষ্টির দোকানে। তার পর অনেক সময়, প্রায় দেড় ঘণ্টা তোমার পাশেই ছিলাম আমি। মনে আছে, খুব ভালোলাগা কাজ করছিল তখন তোমার পাশে হাঁটতে। ভীষণ ভালো লেগেছিল সেদিন। তার পর কীভাবে যেন বাড়িফেরার সময়টা খুব জলদি চলে এল, ফলে বাধ্য হয়েই ফিরতে হলো তোমার কাছে থেকে। তোমাকে অনেক মিস করেছিলাম সেদিন রাতে। খুব মনে পড়ছিল তোমার কথা। প্রথম দেখা ছিল তো, তাই কিছু বলতেও পারিনি, মিস করছি বললে খুব বাজে শোনাতো যে!


তোমার মনে আছে তুমি যে পরদিন খুব ভোরে ফোন করেছিলে? তখন সকাল ৭টা হবে। তার পর তো আসতে বললে তোমার ওখানে। আমিও সকালসকাল হাজির। রুমে তখন অন্য একজন ছিল, তুমি তাকে একটা ছুতোয় বাইরে পাঠালে, আর আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার কেমন যেন বিরক্ত লাগছিল অন্য আর একজন অচেনা মানুষের সামনে তোমার সাথে সময় কাটাতে। যদিও সে-সময় খুব বেশি সময় নিয়ে তোমার সাথে কথা হয়নি, ৫ মিনিটের মতো কথা হলো বোধহয়। তার পর তো অন্যরাও আস্তে আস্তে চলে এল। আমার কী অদ্ভুত ভালো লেগেছিল সে-দিন সকালে তোমার ফোনটি পেয়ে…জানো, তার পর থেকে আমি প্রতিদিন ভাবতাম, এই বুঝি তুমি ফোন করবে…তোমার কাছ থেকে সেই প্রথম থেকেই আমি আমার চাহিদার চেয়েও, আমার আশার চেয়েও বেশি পেয়ে এসেছি। তোমার অলিখিত ভালোবাসার…সে তোমার ভালোবাসা অথবা শুধুই আকর্ষণ যা-ই হোক না কেন…তার টানে খুব জানতে ইচ্ছে হয়েছিল বারেবারে, তুমিও কি আমাকে আমার মতো মিস করতে তার পর থেকে? মনে আছে, তুমি যতক্ষণ আমার শহরে ছিলে, খুব ভালো লাগছিল, হাসতে ইচ্ছে করছিল। আমি যতক্ষণ তোমার পাশে ছিলাম, সেদিন আমার তাও মন ভরছিল না, ইচ্ছে হচ্ছিল, আরও কিছুক্ষণ তোমার সাথে থাকতে। পর দিন দুপুরে তুমি ওদের সাথে একা চলে গেলে, আমার খুব খারাপ লেগেছিল তোমার সাথে যেতে না পেরে। অন্যদের সাথে নিয়ে ঘুরেছিলে, আমকে হয়তো মিস করোনি, আর মিস করবেই-বা কেন…আমি তো তোমার খুব কাছের কেউ ছিলাম না তখন, আর এত জানাশোনাও তো আমাদের মধ্যে ছিল না। কিন্তু ওদের সাথে ঘুরে এসে তুমি আমাকে ‘মিসিং ইউ’ লিখে একটা টেক্সট করেছিলে, তখন সেই টেক্সট পেয়ে তোমার সাথে থাকতে না-পারার, তোমার সাথে যেতে না-পারার যা কষ্ট আর কিছুটা রাগ ছিল মনে, তা পুরোপুরি ধুয়ে গিয়েছিল।


রাগ বলছি এই কারণে যে তুমি তো ওদের তখন বলতে পারতে আমাকে তোমার সাথে নেবার কথা…তবু বলোনি। তার পর সন্ধ্যায় যখন তোমার কাজ শেষ হলো, তার পরও তুমি আমাকে একটুও সময় দিলে না। আমার মনে আছে, ওরা তোমাকে জোর করে চা খেতে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমার কাছে থেকে। তার পর একটু রাগ করেই বাসায় চলে গিয়েছিলাম। মনেমনে কষ্ট হচ্ছিল এই ভেবে যে আর হয়তো তোমাকে ওভাবে অত সময় নিয়ে পাব না কখনও। তার পর আবার তুমি যখন রাতে হাঁটতে যাবার ছুতোয় আমাকে আসতে বললে, তখনও সেই রাগ দিব্যি হাপিস! তোমার পাশে যতক্ষণ সেই রাতে পাশেপাশে হেঁটেছি, সে আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া ছিল। মনে হচ্ছিল, ইস্‌, সময়টাকে যদি একটু বাড়ানো যেত! অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় বাসা থেকে বারেবারে ফোন আসছিল আমার, কিন্তু আমারও তো যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল না…কী যে করি! তোমাকেও তো বলতে পারছিলাম না, আবার নিজেও যেতে চাইছিলাম না। পর দিন তুমি চলে গেলে, আমাদের আর দেখা হলো না। আমি ভেবেছিলাম, আর হয়তো কখনও দেখা হবে না আমাদের। আর হয়তো তোমাকে অতটা কাছ থেকে পাব না। অথচ দেখো, না-চাইতেই অথবা খুব বেশি আশা না-করেও তোমাকে আমি পেয়ে গিয়েছিলাম। অনেক রাতে তুমি বাসে উঠেছিলে, রাত প্রায় ১টা বাজবে তখন। আমার সাহস হয়নি তোমাকে ফোন করে তোমার খোঁজ নিতে। আজও তো এমনই আছি, শুধু সম্পর্কের ধরনটা হয়তো বদলেছে।


আচ্ছা, তুমি কি জানো তোমার কাছে কেন প্রথম থেকেই আমার এত জায়গা ছিল? অবশ্য, আমি বাকিদের কথা কিছু জানি না। তুমি তো আমাকে তোমার কোনও অনুভূতির কথাই জানাওনি কখনও। আমার জীবনের আনন্দের মুহূর্তগুলো আসলে খুব কম ছিল, আর যা-ও ছিল, তার প্রায় সবটাই বাইরে বাইরেই ছিল। স্কুলে থাকতে, কলেজের সময় সারাদিন বাইরেই বেশি থাকতাম। যতটা পারা যেত, বাইরে থাকার চেষ্টা করতাম। যতক্ষণ বাইরে থাকতাম, ততক্ষণই আসলে ভালো থাকতাম। বাসায় যেতে ইচ্ছে হতো না। যেতে হবে…যাবার আর কোনও যাবার জায়গা নেই বলেই বাসায় যেতাম। আমি ছোট থেকেই ঝামেলা এড়িয়ে-চলা মেয়ে, ঝামেলা তৈরি হতে পারে, এমন কিছু দেখলেই খুব সহজেই অনেক ছাড় দিয়ে ভালোথাকা শিখে নিয়েছিলাম। আমার নীতি খুব সহজ…আমি ভালোথাকার জন্য, শান্তিতে থাকার জন্য ছাড় দিতে রাজি আছি, কিন্তু কোনওভাবেই অশান্তি চাই না। এজন্য হয়তো কী করে নিজেরটা আদায় করে নিতে হয়, সেটা শিখিনি। কিন্তু তাই বলে কি পাইনি কিছুই? এই যে তোমাকে পাবার যুদ্ধ না-করেই তোমাকে যতটা পেয়েছি, তোমাকে পেয়েছে আমার মতো করে অন্য কেউ? পেয়েছি তো আমি, আমি আগেও পেয়েছিলাম। নিজেকে তুমি দিয়েছিলে আগেও, কিন্তু বোঝোনি। তার পর অন্য আর একদিনের কথা মনে আছে তোমার? তুমি আসবে বলে পরে না করে দিলে। তুমি জানো, ওদিন আমি তোমার আসার জন্য কী যে অপেক্ষা করে ছিলাম, তুমি দেখা করতে আসবে শুনেই সারারাত আনন্দে কেঁদেই কাটিয়েছিলাম। তার পর তুমি যে পর দিন কী জন্য না করে দিলে বুঝতে পারিনি, কিন্তু কষ্ট হয়েছিল ভীষণ, আশা করে বসেছিলাম যে তুমি আসবে। তুমি কেন সেদিন পরে নিষেধ করে দিয়েছিলে? মনে আছে তোমার?


আজও আমি যখনই তোমাকে একটু সময়ের জন্য কাছে পাই, আমার সে কী যে অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে, আমি বলে বোঝাতে পারব না। কিছু জিনিস আসলেই বলতে গেলে কম পড়ে যায়, জানো? এখন তুমি যখনই আমাকে ভালোবাসি বল, আমার মন বিশ্বাসই করতে চায় না…ভাবি, আমি ঠিক শুনলাম কি না! তোমার সাথে থাকার সময়গুলো আমার জীবনে এত ছোট কেন হয়? আমি কেন তোমাকে আরও একটু বেশি ভাগে পাই না? তোমাকে যারা কষ্ট দেয়, তোমাকে যারা ভালোবাসে না, অথবা যারা তোমার থাকাকে অতটা গুরুত্ব দেয় না, তারাও তোমাকে ঠিক পেয়ে যায়, অথচ দেখো, আমি কেঁদেকেটে হাঁপিয়ে গেলেও তোমাকে একটুও পাই না। আমি কবে পাব তোমাকে? যারা তোমাকে অবলীলায় কাছে পেয়ে যায়, তারা হয়তো তোমাকে না-পাওয়ার কষ্ট কখনও ছুঁয়ে দেখেনি। দেখলে ওরাও ঠিক বুঝত, না-পেলে কেমন যে লাগে! তা হলে আর ওরা তোমার সাথে যা-তা ব্যবহার করতই না কখনও। তোমার কাছ থেকে পাওয়া আমার সবচেয়ে বড় গিফট তোমার উপস্থিতি, তোমাকে পাওয়া। যদি কখনও তুমি আমাকে কিছু দিতে চাও, আমাকে খুশি দেখতে চাও, তখন শুধু নিজেকে এনে দিয়ো, আর নিশ্চিত থেকো এর চেয়ে বড় কোনও কিছু নেই আমার খুশি হবার জন্য। তুমি ভাবতেই পার, আমি তোমার মন ভোলাবার জন্য এমন বলছি, কিন্তু আসলেই আমি আর কিছুই চাই না, এমনকি আশাও রাখি না তোমার কাছে। ভালো থেকো, কলিজাপাখি!


আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি সারাদিন, পাখি। তুমি ভালো না। মোটেও ভালো না তুমি। আমি তোমাকে সারাদিন বিরক্ত করিনি, কিন্তু তুমিও আমাকে একটাও টেক্সট করোনি। অনেক খারাপ মানুষ তুমি! সোনাপাখি, তুমি সত্যিই কিচ্ছু বোঝ না। আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই, তুমি তাও বোঝ না। তোমার জন্য এখানে আসি, তাও বোঝ না। তোমাকে বুঝিয়ে না-বললে, ভেঙে না-বললে তুমি কিছুই বোঝ না। কেন? তুমি একটু বুঝে নিলে কী হয়? সব কিছু কি বলা যায় না কি উচিত? তুমি জানো না আমি কখনও…আমি কই যাব? কার কাছে যাব? তুমি এত অল্প কথা বল কেন? তুমি আমাকে অ্যাত্তো অ্যাত্তো কথা বলতে পার না? অ্যাত্তোগুলা টেক্সট করতে পার না? সারাদিন কথা বলে বলে আমাকে পাগল বানিয়ে ফেলতে পার না? যখন মনটা ভীষণ খারাপ থাকে, কিছুই ভালো লাগে না যখন, তখন আমি তোমার দিকে তাকাই, তোমার ছবি দেখি, তোমার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত, সেইসব মুহূর্তের অনুভূতিগুলো মনে পড়ে। তার পর কখন যে নিজে নিজেই হাসতে থাকি, নিজেও বুঝতে পারি না। তখন ওসব কষ্টগুলোকে খুব ছোট একটা ঘটনা মনে হয়। গতকাল যখন দেখলাম, তুমি আমার পছন্দের ছবিটাই দিয়েছ তোমার প্রোফাইলে, তখন কী যে ভালো লাগছিল নিজের কাছে! এজন্য ভালো লাগছিল যে তুমি আমাকে গুরুত্ব দিয়েছ, হয়তো তুমিও জানো, ওটা দেখলে আমি ভীষণ খুশি হব। হবই তো খুশি, আমার খুশি হবার একশোটা কারণ আছে, যেগুলো তুমি নিজেও জানো না। তুমি নিজেই জানো না তোমার ছোট ছোট কিছু কথা আমাকে কতটা খুশি করে, এই তো সে-দিন বলেছিলে, “তোমাকে ভালোবাসি, তাই তোমার কোনও কথাতেই কিছু মনে করি না।” কথাগুলো পড়ে আমার মধ্যে অদ্ভুত এক আবেগ কাজ করেছিল সে-দিন, মনে হয়েছিল, এতটা কেন পেলাম! এতটা চাই-ই তো নি! মাঝেমাঝে তোমার কিছু কথা, ওগুলো এমনভাবে বল যে চোখে জল এসে যায়, কেন বল ওভাবে? আমি এখনও এতটা সহ্য করার শক্তি করতে পারিনি তো!


ইদানীং মনে হয়, অনেক অনেক খারাপ প্রেমিক তুমি! মানুষ হিসেবে তুমি কেমন, সে আমি এখন জানতে চাই না। তুমি শুনলে, আমার মনটা ভালো নেই, কারণটাও শুনলে আধেক, তখন তোমার কি উচিত ছিল না আমাকে আদর করে সান্ত্বনা দেওয়ার অন্তত একটা কিছু বলা? কিছু তো উচিত ছিলই বলা! একটা ফোনও করলে না, একটা ফোন তুমি কখনও নিজ থেকে করই না, একশো দিন পরপর একটা মাত্র ফোন কর তুমি, তখন কথাও বল গুনে গুনে, মেপে মেপে। আমার মন খারাপ জানার পরও তুমি একদমই চুপ করে থাকলে! তুমি আগেও এসব শুনলেও চুপ করে থেকেছ। তখন মনে হয়, ওরাও না, তারাও না, আমার জীবনে তুমিই সবচেয়ে দূরের মানুষ! কাছের মানুষকে কখন আরও প্রয়োজন হয়? কষ্টের সময়ই তো, নাকি? নাকি যে-সময় কোনও কষ্ট থাকে না, সব কিছু স্বাভাবিকভাবে চলে, তখন? তুমিই ভালো বিবেচনা রাখ, তাই তুমিই বলো, আমি শুনি। আর যে-দিন আমি ভাবি, ‘ধ্যত্‌, আর বলবই না কিছু!’ যে-দিন আমি তোমাকে বিদায় মেসেজ না দিই, সেদিন তুমি পার না দিতে? আর সে-দিন যদি না-ই পার, তা হলে আমার কোনও বিদায় মেসেজেরই রিপ্লাই কোরো না, তা হলেই তো মিটে গেল!


দেখেছ, আমি না তোমার সাথে প্রেম করতে গিয়ে পুরো একটা ঝগড়ুটে হয়ে যাচ্ছি! আমাকে ঝগড়ায় মানায় না, একদমই না, একদমই না। কিন্তু শোনো, আমি না এসব কথা গিলতে পারব না, আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে যাবেই! আমি যেমন তোমার এসব কাজ সহ্য করি, তোমাকেও আমার এসব কথা সহ্য করতে হবে। ঠিক আছে? আর তুমি জানো না তুমি থাকলে আমার আর কাউকে লাগে না? তা হলে তুমি কেন দাও না সময়? আর ওদের সাথে কথা বলব না, ওদের সাথে বন্ধুত্ব তো দূরের কথা, আমি কথাও বলব না ওদের সাথে। কিছু দিন কথা, মানে হাই, হ্যালো বলার পর ওরা আমাকে প্রপোজ করে বসে, তখন আবার আমার ওদের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াতে হয়, না হলে ওরা সারাক্ষণই ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকে। এজন্য তুমি আমাকে অন্য কারও সাথে কথা বলে সময় পার করতে বলবে না। আমি মানব না তোমার এই কথা। তুমি চাইলে কথা না-বলতে পার, যা ইচ্ছা করতে পার, তবু আমাকে বলবে না ওরকম কিছু। তুমি শরীরের প্রয়োজনে অন্য কারও কাছে যেতেই পার, শরীর আর মন দুটো আলাদা জিনিস। কিন্তু আমার প্রতি ভালোবাসা আর বিশ্বাসটা যেন কখনও ভাগ হয়ে না যায়। আমি আরও একটা কথা বলি। কখনও যদি তোমার জীবনে…ভালোবাস, এরকম কেউ এসে যায়, তবে আমাকে বলতে দ্বিধা কোরো না, সময়ের সাথে সাথে মনেরও চাহিদা বদলায়, আমি জানি। আমি তোমাকে খারাপ ভাবব না, এটা চরিত্রের পর্যায়ে পড়ে না, এটা পড়ে ব্যক্তিগত পছন্দের পর্যায়ে। Everyone has the right to choose and to be changed. It’s quite normal. আমার প্রতি বিতৃষ্ণা রেখে, আমি কষ্ট পাব ভেবে আমার সাথে থেকে যেয়ো না কখনও, আমি বোরিং হয়ে গেলে জানিয়ো, আমি কোনও অভিযোগ কিংবা অনুযোগ ছাড়াই তোমাকে নতুন জীবনে স্বাগত জানাব। ভালোবাসা অনেক বড় ব্যাপার, আমার মনে হয়। ওটা আসে না সহজে। কারও সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া আর কাউকে ভালোবাসা ভিন্ন ব্যাপার। কাউকে চুমু খেতে ভালোবাসা লাগে না। ভালোবাসা ঠোঁটে থাকে না, চোখে থাকে। যে ভালোবাসাটা পায়, সে-ই সবচেয়ে ভাগ্যবান।


তবে আমার কাছে মনে হয়, যে ভালোবাসতে পারে, সে আরও ভাগ্যবান। যাকে-তাকে যখন-তখন ভালোবাসা যায় না, কেবল প্রয়োজনে ব্যবহারই করা যায়, শরীরের তৃপ্তি মেটানো যায়--ওটা ভালোবাসা নয়। ভালোবাসতে পারার অনুভূতিটা স্বর্গীয়, গভীরভাবে ভালোবেসেছ, এরকম কাউকে মনে করেই দেখো না কেমন স্বর্গীয় লাগে! আবার তোমাকে ভালোবাসে, এরকম কাউকেও মনে করে দেখো, দেখবে, তেমন আহামরি কোনও অনুভূতি হচ্ছে না। বিশ্বাস না হলে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে কাজটা করে দেখো, বুঝতে পারবে। সত্যি এ এক আশ্চর্য ভালোলাগা! ভালোবাসে, এরকম অহরহ মানুষ আশেপাশেই থাকে, কিন্তু ভালোবাস, এরকম কয়জন আছে, গুনে দেখো তো! চাইলেই যে কাউকে ভালোবেসে ফেলা যায়, বলো? খুব চেষ্টা করেও যার-তার প্রতি মনে কোনও প্রেম বা অনুভূতি জাগানো যায় না। তা হলে বলো, কে ভাগ্যবান বেশি--ভালোবাসা যে পায় সে, না কি যে ভালোবাসতে পারে সে? ভালোবাসি যাকে, তার কথা মনে এলেও তো মন হাসতে থাকে, এক ধরনের অপূর্ব অনুভূতি হয়। তার কথা মনে এলে সুখ অনুভূত হয়, শান্তি লাগে। কোত্থেকে অসীম শক্তি এসে ভর করে মনে, দেহে। মনে হতে থাকে…তাকে ভেবেই, তার জন্যই পৃথিবীটা জয় করে ফেলতে পারব। আমাকে যে বাঁচতেই হবে, আমি তাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাঁচতে পারব, একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। সে ভালো থাকুক, এমন চাওয়া মন থেকে আপনাআপনিই চলে আসে। দূর থেকেও তাকে হাসতে দেখলে, তাকে ভালো থাকতে দেখলে অনেক শান্তি পাওয়া যায়। তাকে কখনও পাব না জেনেও তার জন্যই বাঁচতে ইচ্ছে করে।


বিশ্বাসীরা প্রার্থনায় যে সুখ ও স্বস্তি পায়, যে ভালোবাসে, সেও একই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়। সে আমায় ভালোবাসে কি বাসে না, ওটা ভেবে নিজেকে বিরক্ত করার কী মানে? আমি কাউকে বিশ্বাস করে বেঁচে আছি, এমন অনুভূতি সত্যিই অমূল্য! জানো, আমি সহজে ভালোবাসতে পারি না, মোটেও না! আমি সবসময়ই চেয়েছি, জীবনে যেন এমন কেউ থাকে, জীবনজুড়েই থাকে, যাকে জড়িয়ে অনায়াসে জিন্দেগি বরবাদ করে দেওয়া যায়। জীবনকে গুছিয়ে নেওয়া যায় তো অনেক মানুষের জন্যই, কিন্তু জীবনকে শেষ করে দেওয়াও যায় যার জন্য, এমন মানুষ কয়জন পায়? তুমি আমার কাছে ওরকমই একজন। এক্ষেত্রে আমিই ভাগ্যবান! You do not need to love me back, just give me the golden chance to love you! তোমার নিজেকে, তোমার পরিবার, তোমার চাকরি, তোমার লেখালেখি এইসবে দেওয়ার পর যে সময়টা বেঁচে যাবে, ওখান থেকে অদরকারি বাড়তি সময়টুকুই আমাকে দিয়ো। আমাকে ব্যস্ততায় রেখো না, এমনকি অবসরেও রেখো না, আমাকে কেবল ফেলে-দেওয়ার সময়টায় রেখো…আমি ওতেই অনেক খুশি! আমার প্রতি এত দায়িত্বশীলতা, কর্তব্যবোধ এসবেরও দরকার নেই, কখনও অভিযোগ করিনি, করবও না। তবে একটাই অনুরোধ, চেষ্টা কোরো আমি যাতে ডিপ্রেশনে না পড়ি, ডাউন ফিল না করি। আমি যথেষ্ট মেধাবী, কোনও রাখঢাক না-রেখে নিজের মুখেই বললাম…একমাত্র ডিপ্রেশনের কারণে আমি পিছিয়ে পড়ি। একদম খুব ছোটবেলা থেকে আমি চরম পরিমাণের ডিপ্রেশন নিয়ে বড় হয়েছি। পৃথিবীর সব যুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করা গেলেও নিজের ডিপ্রেশনের বিরুদ্ধে লড়া সহজ কিছু নয়। আমি গত সাত-আট বছর ধরে অ্যাকিউট ডিপ্রেশনে আক্রান্ত। তুমি থাকলে আমি অনেকটা ডিপ্রেশন-ফ্রি থাকি। আমার জন্য এটা অনেক বড় উপকার। আমি ডিপ্রেশন থেকে বের হতে চাই, আমি উপভোগ করতে চাই জীবনটা…যেকোনও মূল্যে!


আর শোনো, তোমার সাথে আমি ঝগড়া করি, একশোবার করব, করলে কী হবে? আর একটা কথা, আমি ঝগড়া করি, তাই না? করলে করি, তো? আচ্ছা, তুমি একটু ভেবে দেখো তো যদি তুমি এই মুহূর্তে ঝগড়ার সময় আমার সামনে থাকতে, তা হলে আমি করতাম এমন করে ঝামেলা? আমি কি ঝগড়াঝাঁটি করতাম তখন? অবশ্যই করতাম…কিন্তু যত দিন তুমি আমার কাছে ভাত-মাছ হয়ে না যেতে, তত দিন করতামই না, তার পর যখন আমার কাছে ভাত-মাছ হয়ে যেতে, তখন যদি আমার কথা না শুনতে, আমার কথা অনুযায়ী না চলতে, তখন শুধু ঝগড়া না, পারলে তখন রাগের মাথায় তোমাকে সুদ্ধ তুলে একটা আছাড় মারতাম! এজন্যই আমার রাগের সময় খাটো মানুষদের আমার আশেপাশে থাকাটা আমি নিরাপদ মনে করি না, তা ছাড়া পছন্দও করি না কেউ থাকুক ওই সময়ে, কারণ কখন-না-কখন একটা দিই বসিয়ে! আবার খাটো মানুষদের মাথায় যত সব কুটিল বুদ্ধিটুদ্ধি থাকে, ওরা সোজা কাজ ঘুরিয়েপেঁচিয়ে প্যাঁচে ফেলে করতে পছন্দ করে (সবাই অবশ্য ওরকম না)। আর এদিকে আমি অত প্যাঁচ বুঝি না, আমার সোজাপথই পছন্দ, যা আমার দরকার, তা আমি সোজা গিয়ে নিয়ে আসি…কিন্তু তুমি তো আর খাটো না, সুতরাং তোমার কোনও চিন্তা নেই, তা ছাড়া তোমাকে তোলার শক্তি আমার কখনও হবে না! তার চেয়ে বরং আমার রাগের সময় আমি যখন তোমার উপর ভীষণ রেগে যাব, তোমাকে আছাড় মারতে ইচ্ছে হবে, তখন তুমিই বরং আমাকে তুলে একটা দিয়ো তো আছাড় মেরে! তার পর আমি মরে গেলে নিজেই আবার কান্না কোরো।


আমি তো একটা ছাগল তাই তো? পড়াশোনা জানি না, কোনও রকমে একটা যাচ্ছেতাই সাবজেক্ট নিয়ে অনার্স-মাস্টার্সটা পাস করেছি, তাই তো? দাঁড়াও, পড়াশোনা কই না করি আমি দেখব। ওই বইগুলোও আমার দিকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, আমি নাকি ওদের শেষ করতে পারি না! ওয়েট, আমি ওই বইগুলো…ওই বইগুলোর প্রতিটি পাতা যদি একটা-একটা করে মুখস্থ না করি, তা হলে আমি নিজের নামই ভুলে যাব, ইচ্ছে করে ভুলে যাব! আমার নিজের কেনা হাজার-হাজার টাকার বই, সেগুলোই আমার দিকে আজকাল করুণার দৃষ্টিতে তাকায়, আমি নাকি পড়তে জানি না, পড়িনি কোনওদিন। আমি পড়িনি কোনওদিন? তা হলে এসএসসি, এইচএসসি পাসটা করল কে? ওসময় কি অন্য কেউ দেখিয়ে, লিখে দিয়ে পাস করিয়েছে আমাকে? আমার পাশে একটা চেনামুখ পর্যন্ত ছিল না, বন্ধু তো দূরের কথা! আর আমি ওদের খাতা থেকে একটা ভয়েস-চেঞ্জ পর্যন্ত দেখিনি। স্যারেরা এসে, এখনও মনে আছে তো…পাশের এক মেয়েকে একটা স্যার পুরো রিঅ্যারেঞ্জিংটা একটুকরো কাগজে নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থেকে লিখিয়ে দিয়ে গেলেন, তার কিছুক্ষণ পর অন্য আর একজন ডিউটি-স্যার এসে ওই মেয়েকে পুরো গ্রামার অংশই দেখিয়ে, দাঁড়িয়ে থেকে লিখিয়ে দিয়ে গেলেন! তার পর স্যার চলে যাবার পর পাশের অন্য মেয়েগুলো ওই মেয়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সবটা দেখে লিখে নিল, আমি কি ভুলেও তাকিয়েছি ওদিকে? তো কী হয়েছে? পাস কি করিনি আমি? আর এখন কিনা ওই বইগুলো আমাকে ভয় দেখায়, তাচ্ছিল্য করে! ওদের আমি দেখে নেব! হুহ্‌!


আগলে রাখো, যতনে মাখো…কেন তুমি আদরে দেখ?
তবে কেন তুমি যাও ফুরিয়ে সকালবেলার ঘুম সরিয়ে?


হও না কেন ফুলবাগানের শক্তপোক্ত গাছের জড়,
কেন তোমার সুখ ফুরনোর ফন্দি আঁটে মেঘের চর?


কেন অযথা এমনি করে লিখতে বসে ভাঙছ স্বর,
আমার মতো চাও কি হতে একটা আদিম রুগ্ন জ্বর?


কেন আমার দুঃখের ভাগটা অন্য কোথাও আর সরে না,
কেন আমার স্বপ্নগুলো দিনের আলোয় আর মরে না?


কেন হলাম হওয়ার মাঝেই হাওয়ায় ভাসা রত্নাকর,
হলাম কেন নিজেই নিজের স্বপ্ন নামের দুঃখ-ঘর?


স্বপ্নটা যেহেতু আমার, সেহেতু আমাকে একাই এর ভার বইতে হবে, কেননা পুরস্কারের আনন্দটাও যে আমার চেয়ে বেশি অন্য কারও হবে না, সে যে-ই হোক না কেন…বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-আত্মীয় কেউই আমার সাফল্যে আমার চেয়ে বেশি খুশি হবে না। সুতরাং এর জন্য যা-যা করার, আমাকেই করতে হবে। অন্য কারও উপর কোনও রাগ, ঘৃণা, অভিমান, অভিযোগ কিছুই আমার নেই, কেননা তারা কেউ আমাকে এ পথে আসতে বাধ্য করেনি। আমি নিজে নিজের জন্য স্বেচ্ছায় এ পথ বেছে নিয়েছি। আমি অন্য কারও কাছে কিছু আশাও করতে পারি না। আমার মনখারাপের জন্য অন্য কেউ দায়ী নয়। আমি যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে না শিখি, সেটা আমার একার অপারগতা। আমি তখনও একটা জীবন পাব, কিন্তু হয়তো সেই জীবনটা, আমি যেটা চেয়েছিলাম, তেমনটা হবে না। তাই আমি যে জীবন চাই, সে জীবনে কেবল আমাকেই একা বাঁচতে হবে, সে জীবনের জন্য নিজেকেই একাএকাই কাজ করে যেতে হবে। আমি অন্য কারও প্রতি রাগ রাখব না, কষ্ট পাব না, নিজের সুযোগ নিজে তৈরি করে নেব। কষ্ট পেলে, কষ্ট লাগলে একাই কাঁদব, আবার ঠিক হয়ে যাবে সব।…তুমি অনেক ভালো, সোনাপাখি। তুমি মোটেও খারাপ না। আমাকে অনেক সময় দাও তুমি। আমাকে তুমি অনেক অনেক ভালোবাস। অনেক ভালো তুমি, সোনা। আমার কথায় কষ্ট পেয়ো না, রাগ কোরো না। একটা মুহূর্তও আমার একলা কাটে না। তবে তুমিই তো পাশে থাক! তুমি না-থাকলে কে থাকে তখন? ভূত? আমি এমনিতেই অনেক কথা বলে ফেলি, ওসবের কোনও অর্থ নেই, পাখি।


একসময় খুব হিংসে হতো। একেবারেই সহ্য করতে পারতাম না। ভীষণ ছিচকাঁদুনে ছিলাম। যখনই দেখতাম, তোমার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ছবি তুলেছে, হেসে কথা বলছে, ঠিক অমন সময় চোখদুটো ছলছল করত। কিছুতেই মানতে পারতাম না, আবার ওই দৃশ্য না-দেখেও তো থাকা যেত না। বারেবারে নতুন নতুন ছবি চোখের সামনে এসে হাজির হতো, একদম সহ্য হতো না ওগুলো। মনে হতো, কেন দাঁড়িয়েছে ওরা তোমার পাশে, কেনই-বা তোমার সাথে ওভাবে হেসে কথা বলছে, ওরা তোমার পাশে অত ঘেঁষে দাঁড়ায় কেন, ফাজিল মেয়ে যত্তসব! প্রথমপ্রথম এমনই হতো। তখন ওসব ভালোবাসা, না কি অন্য কিছু, অত কিছু বুঝতাম না, জানার জন্য ঘাঁটতেও যেতাম না, শুধু তোমার পাশে অন্য যে কাউকে দেখলেই আর সহ্য হতো না, ভীষণ কান্না পেত…একেবারে কেঁদেই ফেলতাম, আর মনে হতো, এই বুঝি ওরা তোমাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে যাবে! আমার তোমাকে বোধহয় নিয়েই যাবে ওরা। এমন কেন হতো তখন? কেন ভেতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যেত? তুমি তো কখনও বোঝোইনি, বোঝার কথাও নয়। তার পর আবার যখন আমাকে তোমার লিস্টে অ্যাড করলে, সে-দিন মনে হয়েছিল, আবার ওগুলো দেখতে হবে, আবার সহ্য করতে হবে ওগুলো! যা সহ্য করতে পারছি না, তা-ই আবার না দেখেও থাকতে পারছি না। কোনও মানে হয়, বলো? কী দরকার ছিল ওসবের? ভালোই তো ছিলাম দূরে দূরে! ওসব দেখে সহ্য করতে পারব না, আবার সেই কষ্টটাই হতে থাকবে। মনে আছে, প্রথম দিন আমিই গাড়িতে তোমার পাশে বসেছিলাম, তুমি ‘না’ করলে অন্য কেউ বসে পড়ত, তখন তোমার কাছেকাছে থাকাটা আর হতো না। সেদিনও রাগ হয়েছিল ভীষণ, অন্যরা তোমার পাশে দাঁড়িয়ে কেমন ছবি তুলছিল! অত ছবি তোলার কী আছে? অবশ্য, বেশিরভাগ ছবিতেই আমি তোমার পাশেই ছিলাম। আজও কষ্ট হয়, যখন দেখি তোমার পাশে অন্য কেউ…তখন ভীষণ কষ্ট হয় মেনে নিতে। ওই জায়গাটা যে আমার! আমি তো আর ফেরেশতা নই। তার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করি…আমি এতটা হিংসুটে হলাম কবে! আগে কখনও এমন হয়নি তো! অন্য কারও আসা-যাওয়ায় আমার কিছু এসে যায় না, আজও না।


আমি আসলে কাউকেই তেমন একটা কেয়ার করি না, মনেও থাকে না কে আসছে আর কে-ইবা চলে গেল! কখনও কারও চলে-যাওয়া ভেতরটা তেমন নাড়া দেয়নি। আমার মনে আছে, যেদিন ডিভোর্স-পেপারে সিগনেচার করছিলাম, মনে হয়েছিল, এ একটা ঘটনামাত্র, আর কষ্ট হয়নি এজন্যই যে আটকে থাকার বা আটকে রাখার কিছুই ছিল না সেই সম্পর্কে। কেন কষ্ট পাব? আমি তো এটাই চেয়েছি--নিজেকে ভালো রাখতে চেয়েছি, বাঁচতে চেয়েছি। কী দরকার দিনের পর দিন স্রেফ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার দায়ে নিজেকে কাঁদতে দেখার? মনে হয়েছিল, মুক্ত হলাম, ঝামেলা থেকে বাঁচা গেল! তার পর আর কাউকে একান্ত কাছের কেউ হিসেবে রাখার প্রয়োজন অনুভব করিনি। কাউকে দেখে মনে হয়নি, এই মানুষটার সাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিই! আজও মনে হয় না, বরং আজ তো হিসেবটা বেড়েছে, হুটহাট কারও সাথে জড়াতে ভীষণ ভয় আর জড়তা কাজ করে। আমি হয়তো কোনও সম্পর্ককেই আজকাল সিরিয়াসলি নিই না। আমার নিজের বলতে এক আমি ছাড়া আর কেউ নেই। নিজস্ব কোনও অশান্তিও নেই। শুধু আমার চারপাশের কিছু মানুষ আমাকে জ্বালিয়ে মারে, তাদের সমস্যাই আমার সমস্যা হয়ে ওঠে। তোমার পাশে যখন বিশেষ কাউকে দেখি, তখন সত্যিই ভেতরটা কেমন যেন করতে থাকে…কিছু বলতে পারি না, বলা যায় না, বলার অধিকার নেই। যা-কিছু বলা যায় না, তা-কিছুই পোড়ায় বেশি! বলে ফেলার জন্য মন ছটফট করছে, তবু মুখটা বন্ধ রেখে দিতে হচ্ছে জোর করেই…এটা সহ্য করা যে কী কষ্টের! তখন ভাবি, আমি যদি তোমাকে ভালোই বাসি, তা হলে তো তোমার খুশি দেখে, তোমাকে আনন্দে থাকতে দেখে আমার ভালোলাগার কথা, তো এমন লাগে কেন? আমি কি সব কিছু এভাবে নিজের কাছে রেখে দিতে চাই নাকি? আমি কি স্বার্থপর খুব?


আসলে আমার নিজের বলতে তো কিছুই নেই…কারও আদৌ কি আছে নিজের বলে কিছু? যা-কিছু লোকে নিজের ভাবে, তা-কিছুই কি তাকে কষ্ট দেয় না পরবর্তীতে? তা হলে কি আগলে রাখতে চাই আমি? চাইলে, কেন চাই? আমি কি নিজের সুখটুকু ভাগ করতে জানি না? কিংবা নিজের সুখটুকু শুধু নিজেই ভোগ করতে চাই? অথচ আমি তো ছিলাম না এমন। আমি তো সবাইকে দিতে ভালোবাসতাম, এমনকি নিজের জন্য কিছু বাকি রইল কি না, তাও কেয়ার করতাম না। আমি হঠাৎ এমন হলাম কী করে? আর তোমাকে কোনওভাবেই আটকে রাখার বা বেঁধে রাখার কোনও অধিকারই তো আমার নেই। আমি বরং অন্যের অধিকারে ভাগ বসিয়ে বসে আছি। আমি নিজেই তো বাইরের কেউ। যে যেখানে থাকার কথা, সে তো সেখানেই আছে, তা হলে আমার কেন কষ্ট হয়, হচ্ছে? না কি আমি আমার প্রাপ্যটুকুরও বেশি চাইছি? না কি তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে এতটা ক্ষুদ্র মানসিকতার করে ফেলেছে? পাইই তো নি তোমাকে, হারিয়ে ফেলার ভয়টা কীসের তবে? এতটা নিচু মনের তো আমি ছিলাম না কখনওই! আমি তো সব সময় আমার জায়গাটা বুঝে চলেছি। তা হলে আসলে আমি কী চাই? আমি কি চাই না তুমি ভালো থাক, তুমি সব সময় খুশি থাক? না কি আমি নিজেই তোমার বড় শত্রু হয়ে বসে আছি? আবার মনে হয়, আমার ভেতরটা এমন হাজারো প্রশ্নে চুপ করে থাকে কেন? আমি কি নিজেকে জানি না তা হলে? আমার মানসিকতা এতটা নিচু হলো কী করে! ভালোবাসা কি পারে এত ক্ষুদ্র হতে? এ কি তা হলে ভালোবাসা, না কি অন্য কিছু?


মনে আছে, আমি সব সময় তোমাকে বলে এসেছি, আমি কিচ্ছু চাই না তোমার কাছে, কিচ্ছু আশা রাখি না…অথচ সেই আমিই তো আবার তোমাকে না পেলে বিদ্রোহী হয়ে উঠি! ভীষণ ঝামেলা করতে থাকি, অভিযোগ তুলি। আমার তো অভিযোগ তোলার কোনও জায়গাই নেই। তোমার কাছ থেকে পাওয়া সবটাই যে আমার জন্য বোনাস। অতটা যে পাচ্ছি, এ-ই তো বেশি! ওই যে কথায় বলে তো, মানুষকে বসতে দিলে শুতে চায়…আমারও তো সেই দশা! কে বলেছে আমাকে তোমার খোঁজ রাখতে? প্রতি বেলায় এমনি করে জ্বালিয়ে মারতে কে বলেছে? তুমি তো বলোনি কখনও। আমিই স্বেচ্ছায় এই পথ বেছে নিয়েছি। একটা ফিরতি মেসেজ না এলেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকি, যেন আমার হক কেড়ে নেওয়া হচ্ছে! কেন করছি আমি এরকম? নিজের স্পর্ধা দেখে নিজেই মাঝেমাঝে অবাক হয়ে যাই। জানো, আমার মোবাইলের স্ক্রিনে রাখা তোমার ছবিটা যখনই চোখে পড়ে, তখনই মনে হয়, ইস্‌, কেমন বাচ্চাদের মত চেয়ে আছ তুমি! আমার দিকে তাকিয়ে আছ আর প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছ: কী হয়েছে তোমার? তখন কী যে হাসি পেয়ে যায়…আমিও বলি, কিচ্ছু হয়নি আমার, বাবুসোনা পাখিটা! আর ইচ্ছে হয় তখনই গিয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে! এভাবে কেউ থাকে তাকিয়ে? আমি কী করে ভুলে থাকব তা হলে? আমার যে ভুলে থাকার সব দরজাই বন্ধ। তুমি এমন করলে ভুলে থাকা, ভুলে যাওয়া ওসব তো দূরের কথা, এক মুহূর্তও তো মন থেকে তোমায় সরিয়ে রাখতে পারব না।


আর কেনই-বা সরিয়ে রাখব তোমাকে? থাকুক না! একটা মাত্র ভালোবাসার মানুষ আমার, তাকে কেন অমন দূরে ঠেলে রাখব! সে থাকুক, সে থেকে যাক। তার যা ইচ্ছে করুক, যত খুশি জ্বালিয়ে মারুক! সে ছাড়া আর কে করবে এমন? বরং সে আরও বেশি করুক! আমার তো ভালোবাসার দাবি, এই দাবি থেকে তো আমার চাওয়া উচিত কেবলই তোমার ভালো থাকা, সুখে থাকা…তা সে তুমি যেভাবেই থাক না কেন! তুমি যদি সুখে থাক, সেই সুখের অংশ আমাকেই হতে হবে, তা তো নয়। যার সাথে থাকলে তুমি সুখে থাক, যেমন করে থাকলে তুমি ভালো থাক, তুমি তেমন করেই থাকো। তোমার ভালোথাকাই যদি আমার কাছে মুখ্য হয়, তা হলে কেন আমি এমন কষ্ট পাই? আমি কেন বোঝাতে পারি না নিজেকে? আমি কবে পারব তা হলে? যথেষ্টই তো বড় হলাম, বুদ্ধিটা আর তা হলে কবে হবে? আচ্ছা বল তো, তুমি আমায় এত পড়াশোনা করতে বল কেন? আমি তো জানি, না হলে তো জ্বালাব তোমাকে, এজন্যই ওটা বল…ও কিছু নয়, আমাকে ব্যস্ত রাখার ফন্দি শুধু। আমি পড়লে তুমি নাকি সুখে থাক…ওসব সুখ না ছাই। ভালো কথা, যদি ভেবে বস, শীতের তাড়নায় তোমার অভাব বোধ করছি, তবে যাও…পুরো শীতই তোমাকে ছেড়ে কাটিয়ে দেবো!