সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/১০

ওরে বাবা! সক্কাল-সক্কাল আপনার কালকের ‘শুভ রাত্রি’ পেয়ে আমার সকালটা অনেক শুভ হয়ে গেছে! রাতে খেয়াল করিনি। সরি। আপনার শেয়ারকরা গানটা শুনলাম। আমি যদিয়ো গানের গ’ও বুঝি না, তবু মনে হল, পিচ্চিটা অনেক দারুণ গাইতে পারে। দেখে মনে হচ্ছে খুব সাধারণভাবে মোবাইলে রেকর্ডকরা, তবুও অসাধারণ লাগল শুনতে। একদম মন ভরে যায় শুনলে। এই ছেলে বড় হয়ে কী যে হবে! আপনি এটা কোথা থেকে পেলেন? আমাদের দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আজকের সকালটা সুন্দর গান দিয়ে শুরু হল আপনার জন্য। কারণ, গানটা সে গাইছে যেমনি অনেক ভাল, তেমনি গানের কথাগুলোও অনেক ভাল আর দামি। ধন্যবাদ।

সকালে আপনার ‘শুভ রাত্রি’ মেসেজটা পাওয়ার পর একটা শুভ মেসেজ পেয়েছিলাম। কলেজের এক শিক্ষক মেসেজ দিয়েছেন আজকে কলেজ বন্ধ, ক্লাস হবে না। অনেক দিন পর সকালবেলায় একটু বেশি সময় শুয়ে থাকতে পারছি। তারপর অনেক সুন্দর একটা গান শুনলাম। বৈষ্ণব জানা তো। গুজরাটি ভাষায় লেখা ভজন। নরসিংহ মেহতার। মহাত্মা গান্ধী এই ভজনটি প্রতিদিন শুনতেন এবং প্রার্থনার সময় গাইতেন। শুনেছেন না? আপনার জন্যই তো এতো সুন্দর একটা সকাল পেলাম! সেজন্য আপনাকে আমার ব্যালকনির লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। তবে গোলাপ কিন্তু আমার না, পাশের বাড়ির, তবে আমার ব্যালকনির কাছেই। আমি ভাবি, আহা, যদি ফুলের মতই মানুষের মনটা সুন্দর হত, তাহলে পুরো পৃথিবীটাই কত সুন্দর হয়ে যেত! কালকের শেয়ারকরা গানটা সুন্দর। হামে ঔর জিনে কি চাহাত না হোতি। দেখলাম, আপনার এই প্রিয় গানটা তো অনেক মানুষেরই প্রিয়। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে চারজন নেপালি মেয়ে থাকে। সকালবেলা ওদের কেউও শুনছিল গানটা। আমিও শুনলাম। নেপালি ভাষাতেও অনেক সুন্দরসুন্দর গান আছে। নেপালি ভাষার গানও আমার খুব ভাল লাগে শুনতে। আপনি কোনও নেপালি গান শুনছেন? আপনার একটা স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে হিন্দিতে অনেক সুন্দরসুন্দর গান আছে, সবগুলোর অর্থ বুঝতে পারলে ভাল হতো, এরকম কিছু একটা। তাতে একজন কমেন্ট করেছিলেন যে বাংলাতেও সুন্দরসুন্দর গান আছে। আপনি তো আর বলেননি যে বাংলাতে সুন্দর গান নাই, তাই না? তো ঐ কমেন্টের উত্তর দিলেন না কেন? তার কথায় মনে হচ্ছে, হিন্দি গান সুন্দর বলে আপনি অন্যায় করেছেন। আমি মনে করি না বাঙালি বলে শুধু বাংলাকেই সুন্দর বলতে হবে, অন্য কোনও ভাষাকেই সুন্দর বলা যাবে না। আরে, বাংলা তো রক্তের সাথে মিশেই আছে। বাংলার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা চিরজীবনই থাকবে, তাই না? সব সুন্দরকেই তার সৌন্দর্যের জন্য মূল্য দেয়া উচিত। ওতে নিজের সৌন্দর্য কমে না, আমি মনে করি, বরং বাড়ে। আপনি যে কী পরিমাণ গান শুনেছেন আর শোনেন, এটা নিয়ে ওই বেচারার কোনও আইডিয়া নাই। থাকলে ওরকম একটা লেম কমেন্ট করতে পারতো না।

সেদিন প্রিন্সেস বললেন কাকে? যাকে বলতে চাইলেন, তাকে না বলে ভুলে আমাকে বলে ফেলেছেন? কী লজ্জা! প্রিন্সেস তো কখনও বুড়ি হয় না। যখন হয়, তখন সে কারো রাণী হয়ে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়ালে তো মনে হয়, আমাকে কেউ প্রিন্সেসের দাসী বললেও তো বেশি বলা হয় যায়! আপনার সাথে কালকে রাত্রে মনেমনে অনেকঅনেক কথা বলেছি, জানেন? সন্ধে থেকে একদম ঘুমানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কথা বলেছি। ‘Your brain surpasses your age. You’re a princess in my eye.’ এটা পড়ে মনে হল, যা সত্যি, তা-ই তো বলেছেন, মানে আপনার চোখে যা সত্যি! নিজেকে অনেক খুশি করতে ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে! আসলে আপনি সবাইকে ভাল কিছু বলতে শিখে নিয়েছেন। এটা ভাল। ধরুন, একটা লোক দেখতে কালো, আবার বেঁটেও। এখন সবাই যদি ওকে সারাক্ষণই কালো-কালো করে বা ওর উচ্চতা নিয়ে নানান নেতিবাচক কথাবার্তা ওর কানের কাছে ঘ্যানরঘ্যান করতেই থাকে, তাহলে একসময় সে বিশ্বাস করতে শুরু করবে, সে আসলেই তার শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে জীবনে কিছু করতে পারবে না।

আপনি সিলেটকে এতো ভালোবাসেন! শুনে পুলকিত হলাম। এই ভালোবাসার জন্য আপনাকেও অনেক ভালোবাসা জানাই। আচ্ছা, আপনি কি সিলেটি বোঝেন? আমার তো সিলেট বাদে অন্য কোথাও সিলেটি শুনলে নিজেরই খুব হাসি পায়। যেমন টেলিভিশনে বা এখন ফেসবুকেও অনেকে সিলেটি ভাষায় ছোটখাটো কনভারসেশন করে, আমার দেখে খুবই হাসি পায়। আমি নিজেই বলি তারপরও। একটা পার্সোনাল প্রশ্ন করি। আপনার সাথে ওই সিলেটি আপুটার কী হয়েছিল? এখন আর উনাকে পাবেন না? আমার খারাপ লেগেছে শুনে। আপনিও যে তাকে ভালোবাসেন, সে জানতে পারেনি? আচ্ছা, বাদ দিন। আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপনাকে একটা কথাও জিজ্ঞেস করব না ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু ওই কথা শুনে খারাপ লাগছে, তাই জিজ্ঞেস না করে থাকতে পারলাম না। ওকে, আপনার পছন্দ না হলে বাদ। এরকম বিষয়ে কেন যে, কেন যে কিচ্ছু করার থাকে না! ভাল্লাগে না! আপনি আমাকে যা মন চায়, বলে ফেলতে পারেন। আমি আবার কাকে বলবো! ঐ ভয়ে থাকতে হবে না। তবে আপনার জীবন যে কারণেই হোক, কক্ষনো কষ্টের হয়ে না থাকুক। আমি প্রার্থনা করি, ঐ কারণটা যেন নির্মূল হয়ে আপনার জীবন অনেক সুন্দর আর সুখী হয়ে ওঠে। মনে বল আর বিশ্বাস রাখেন। কিছুটা নিজে চেষ্টা করেন আর কিছুটা ভগবানকে বলেন। দেখবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আসলে সত্যিই আপনার ব্যক্তিগত জীবন এখানে টানতে চাইনি। তারপরও অনেক কথা বলে ফেলেছি। ঠিক হয়নি। সরি।

জানেন, আমি না গান শুনতেই থাকি! আমি যখন শুনি, খুব শুনি, সারাদিনই শুনি। যেটা বেশি ভাল লাগে, সেটা অনেকবার করে শুনি। যখন শুনি না, তখন একদমই শুনি না। আপনি কতোটা শুনেন বা শুনতেই থাকেন কি না, তা না জানলেও গান যে মোটামুটি শুনেন, তা জানি। একটু আগে আপনার শেয়ারকরা লতা মুঙ্গেশকরের এই গানটা আমি অনেকবার শুনেছি। অবশ্য অনেক আগে। আবারও অনেক দিন পর আজকে শুনে অনেক ভাল লাগল। থ্যাংক ইউ।

আপনি এটা কী পোস্ট করলেন? এটা মোটেও ঠিক করেননি। মনটা খারাপ করে দিলেন। মনখারাপের দায় যদিয়ো আপনার, তবু আমি চাই না, কোনও দায় আপনি নেন। এ নিয়ে কোনও কিছু বলতেও হবে না। রিপ্লাই লাগবে না আর। মন বেশিই খারাপ হয়ে গেছে। আপনাকে এখন আমার যা মনে আসে, তা-ই বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বলতে পারছি না। বলে ফেলতে পারলে ভাল হত, মন হাল্কা হয়ে যেত। সত্যিই যেত। আপনার লেখা নিয়ে আপনাকে কিছু বলতে হয় তো এখন থেকে আপনার লেখাতেই বলব। আর আপনাকে আলাদা করে কিচ্ছু বলব না। তবে একটা বিষয়ের জন্য ধন্যবাদ, আমার ব্যক্তিগত অনেক বিষয়ই আপনি অ্যাভয়েড করেছেন, আর সেজন্য আমি আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। এর মানে কী হল? আদৌ কোনও মানে আছে কি না, তা-ই আমি জানি না। আপনার এই বিষয়টা ভাল লাগছে, তা মনে লুকিয়ে না রেখে বলে ফেললাম।

কালকে রাত থেকে মনের ভেতরে খুব বেশি ছটফট লাগছে আপনাকে কয়েকটা কথা বলব বলে। সকালবেলায় অশান্তি এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে না বললেই নয়। মাথার মধ্যে কথাগুলি অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু এখন বলবার সময় নেই, কলেজে লেট হয়ে যাবে। দুপুরের পর অফিসে গিয়ে যদি একটু ফ্রি টাইম পাই, তখন বলব।

যে কথা বলতে চাই, তা, আমি জানি, আপনার ভাল লাগবে না। শুনতে মেকি লাগবে, বিরক্তিকর লাগবে, আরও অনেক কিছু লাগবে। আপনাকে এরকম করে বলার কোনও অধিকারও আমার নেই, জানি। এভাবে বলাটা হয়ত ঠিকও না। কিন্তু আপনার সাথে কথা বলার সময় অতো হিসেবনিকেশ করে কথা বলাটাও কঠিন। তবে এ বিষয়ে বলার আগে যা বলতে চাই, তা হল, আরও অনেক ছেলের মতই আপনি অনেকটা স্বার্থপর। কেন বলেছি একথা, আশা করছি, আপনি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন। অনেকে ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলে, এমন করে বলে, তুমি মেয়ে নও, তাই কখনও মেয়েদের বুঝতে পারবে না বা অনুভব করতে পারবে না। মেয়েদের কষ্ট, মেয়েদের ইচ্ছে, দুঃখ আর স্বপ্ন ছুঁয়ে যায় যে সকল আবেগ, সেগুলি অনুভব করে মেয়েদের অনেক বৈশিষ্ট্য আপনি লিখে ফেলেন, যার সাথে বাস্তবের অনেক মিল আছে। তবে তার চাইতে বড় সত্য হল এই, আপনি যা লিখেন, তার বাইরেও মেয়েদের একটা ভাবনাজগত আছে, সে জগত অনেক বিশাল, যা, আমার কাছে মনে হয়, আপনি বোঝেনই না। কখনও এটাও মনে হয়, বুঝেও বোঝেন না। মেয়েদের নিয়ে আপনার লেখাগুলির বেশিরভাগই একঘেয়ে ধরনের। সেখানে মেয়েদের অনেক ডাইমেনশনই অনুপস্থিত। এই যে কিছু বিষয় আপনি বোঝেনই না বা বুঝেও বোঝেন না, সেটার একটা কারণ হতে পারে, আপনি যে মেয়েদের নিয়ে ভাবেন বা যাদের আপনি জানেন, তাদের প্রায় সবাইই মোটামুটি একই রকমের।

আপনি একবার বলেছিলেন না, একটা মেয়ের কথা আপনার এখনও মনে আসে, তার হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এসব ভাবেন এটা মাথায় রেখেই যে, সে মেয়ে আর কখনও আপনার জীবনে ফিরে আসবে না, তাকে আর ফেরানো যাবে না, তার ফিরে আসা বা তাকে ফিরিয়ে আনা, দুইই অসাধ্য! যে জিনিস বা যে মানুষ চলে গেছে, সে জিনিস বা সে মানুষ অন্য ঠিকানার—সারাজীবনের জন্যই। সে ফিরে আসার নয়, তা জানার পরও তাকে মনে করা, তাকে ফিরে পাবার ইচ্ছেটাকে মনের মধ্যে যত্ন করে পুষে রাখা, স্বেচ্ছায় কষ্টকে বরণ করে নেয়া প্রতি মুহূর্তেই, এ সবই পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এমন চিন্তা করা আপনার সাথে যায় না। এমন করে কষ্ট পাওয়া আপনাকে ঠিক মানায় না। আপনি সুখী নন, এটা ভেবে আমার খারাপ লাগে। একটা সত্যি কথা শুনুন। সে মেয়েকে বিয়ে করলে আপনার জীবনটা বরং আরও অসুখী হয়ে যেত। এখন যতটা কষ্ট পাচ্ছেন, তার চাইতে আরও অনেক বেশি কষ্ট পেতেন। আমি তো ওকে চিনি না, তবে আমার মনে হয়, ওই মেয়েটা অনেক ভাল ছিল, আর সেজন্যই আপনার ওকে অনেক ভাল লেগেছিল, কিংবা এমনও হতে পারে, ওকে আপনার ভাল লেগেছিল বলেই আমার মন চাইছে ওকে ভাল ভাবতে। কিন্তু যত ভালই হোক না কেন, সিলেটি মেয়েরা তার প্রিয় মানুষ বা তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে অন্য কোনও মেয়ের ছায়াও সহ্য করতে পারে না। কিন্তু আপনি তো রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেন, আপনার আশেপাশে কতশত মেয়ে তাদের অনুভূতির ডালা সাজিয়ে নিজেই তাদের অনুভূতির জ্যান্ত গাথা আপনাকে কেমন বিরামহীনভাবে জানিয়েই যাচ্ছে! এরকম কিছু যে সিলেটি মেয়েরা সহ্য করতে পারে না, তার উদাহরণ চাইলে অনেক দিতে পারব। আপনি যখন বিয়ে করবেন, তখন আপনার উনি কীভাবে সহ্য করবেন, বুঝি না। বিবাহিত জীবন অসুখী হওয়ার মানে, শুধু দুইজনের অসুখী হওয়া নয়, দুইটা মূল্যবান জীবনের অর্থহীনভাবে বেঁচেথাকা। এতে আশেপাশের আপন মানুষরাও খারাপ থাকে এবং ভবিষ্যতে যে নতুন মানুষ আসবে এই দুই অসুখী জীবনে, সেই মানুষটা ছোট্ট থেকে দুঃখের জীবন দেখতেদেখতে, সুখ যে কী, তা-ই কখনও চিনতে পারবে না। এরকম শিশুদের সামাজিকীকরণ ঠিকমত হয় না, ফলে মনস্তত্ত্বটাও সুস্থভাবে বিকশিত হয় না। আপনি সবাইকে সুখের বার্তা বিলিয়ে যান, তো আপনার নিজেরই জীবন, সে জীবনকে সাজাতে আপনি কেন পারবেন না? চাইলে আপনিই পারবেন আপনার এই জীবনটাই সুখী সুন্দর করতে! একটা কঠিন সত্য বলি, কেমন? যারা অন্যদের সুখী রাখে, সাধারণত তাদের নিজেদের জীবনে সুখ থাকে না। যারা অন্যদের হাসায়, তারা একসময় হাসতে ভুলে যায়। এটাই বাস্তবতা। নিজেকে নিজে সুখী করতে না পারলে অন্যকে সুখী হবার বার্তা দেয় কেন ওরা? এ পৃথিবীতে কেউই পুরোপুরি সুখী নয়, হয়ত আপনি ওদের মধ্যে সবচাইতে অসুখী মানুষ, মানছি। তবু আপনাকে দৃশ্যমানভাবেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করে যেতেই হবে! নিজে হাসুন অনেকবেশি—জোর করে হলেও, আর যে কারণগুলির জন্য নিজেকে অসুখী মনে হয়, সেগুলিকেও হাসতে শেখান। তবে আমার একটা অদ্ভুত ধারণা হল এই, আপনি যদি কখনও সত্যিসত্যিই সুখী হয়ে যান, তাহলে আপনি সেদিন থেকে আর লিখতে পারবেন না। সুখী মানুষরা কক্ষনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। পৃথিবীর সকল সৃষ্টিই আসে বেদনা থেকে। তাই সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রই দুঃখী। সুখী মানুষ সবসময়ই গড়পড়তা মানুষ।

এতো ভাববেন নাতো! যে পারে, সে যেকোনো ভাবেই সুখী হতে পারে। আপনি যদি দুঃখী হয়ে থাকতে পারেন, তবে কেন সুখী হয়ে থাকতে পারবেন না? আপনি পারেন না সুখী হয়ে থাকতে, এটা বললে আমি মানব না। পারি না, পারব না, এই সব কথা না বলে বলেন, থাকতে চান না। আপনি জ্ঞানী মানুষ, অনেক জানেন, বোঝেনও। আপনাকে একটা গল্প বলি। এক বেহালাবাদকের মন খুব বিষণ্ণ হয়ে ছিল। কিছুতেই মনটা ভাল হচ্ছে না। তো উনি করলেন কী, উনার বেহালা সাথে নিয়ে হেঁটে চললেন গ্রামের পথে। গরীবঘরের কিছু শিশু রাস্তায় খেলছিল। উনি ওদের সামনে গেলেন, ওরা উনাকে ঘিরে ধরল, উনি বেহালা বাজাতে শুরু করলেন। মানুষ বেহালায় দুঃখ ঢেলে দিতে পারে। উনার মনে জমেথাকা সকল বিষণ্ণতা খেলতে লাগল বেহালার ছড়িতে। বেহালার সুর ওই শিশুদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল কোনও অচিনপুরের রাস্তায়। ওরা সবাই উনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে খুশিতে নাচতে লাগল। এই নিরানন্দ শিশুদের আনন্দ দেখে নিমিষেই সেই বেহালাবাদকের সকল দুঃখ কোথায় যেন পালিয়ে গেল! উনিও ওদের সাথে নাচে যোগ দিলেন। মশাই, হয়ে যান না এমন এক বেহালাবাদক! ছড়িয়ে দিন না সকল মানুষের মাঝে আনন্দের ঝর্ণাধারা! আপনার চারপাশের মানুষের আনন্দ আপনাকেও স্পর্শ করুক! বেশি সাহস দেখিয়ে আপনাকে অনেক অযাচিত কথা বললাম। জেনেবুঝেই অনধিকার চর্চা করলাম। অনেকগুলো পাকামোমার্কা কথা শোনালাম। বিরক্ত হননি তো আমার উপর? ভাল থাকবেন সবসময়। স্বপ্নের মতো সুন্দর রূপে জীবনে আসুক সুখ আর সুখ; হাসিখুশি একটা পরিবার হোক।

জানেন, আমার মা বলেন, আমাকে বিয়ে দেবেন কোনও শিক্ষিত উচ্চবংশীয় ছেলে দেখে। আচ্ছা, বলেনতো, আমি কোনও শিক্ষিত ছেলেকে বিয়ে করলেই কি অনেক সুখে থাকব? বংশ ভাল, শিক্ষাদীক্ষায়ও ভাল, এর মানে কি এটা যে বিয়ের পর ও আমাকে বুঝবে, ভাল রাখবে? ভাল কথা, আপনার পাঞ্জাবিটা সুন্দর হয়েছে। তবে একটা ব্যাপার কী, জানেন, এটা দিয়ে লেডিস ফতুয়া বানিয়ে পরলে আমাকে ভাল মানাবে। আমাকে ওইটা দিয়ে দিন না! আমি ওটা কেটে ফতুয়া বানিয়ে ফেলব। আর ভাল কথা। আপনার হেয়ার স্টাইলটা এখন ক্যাঙ্গারুটাইপ হয়ে গেছে, তবে ক্যাঙ্গারুর মাথায় চুল আছে কি না, আমি শিওর না। চুলগুলি এমন ফুলল কীকরে? আপনি মেহদী হাসানের গান শোনেন? ঢাকো যত না নয়ন দু’হাতে। হারানো দিনের কথা। তেরে মিলনা। ম্যায় হোস ম্যায় থা তো ফির। জিন্দেগি ম্যায় তো সাভি। আহা, কত জ্যান্ত সব গান! বাপ্পি লাহিড়ীর কণ্ঠে ‘আমার এ জীবন-মরণ শুধুই তোমার, আর কারও নয়’ গানটার সুর কিন্তু শেষ গানটা থেকে নেয়া। শুনে মিলিয়ে নিন।

কীসের জন্য তোমার প্রতি এত ভালোবাসা, জানি না। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দুটো দিন কাটালাম। তোমার সাথে থেকে যত ভাললাগা আর শান্তিসুখ, তা আর কোথাও নেই। একটু কষ্টের মাঝে সব ভাল কিছু এভাবে লুকিয়ে থাকে, তা কখনও জানতাম না! তুমি যা বলতে, সবই সত্য। তোমার কাছে না গেলে বুঝতাম না তুমি খুব যত্ন করে ভালোবাসতে পারো, আদর করতে পারো। আমি ভাবতে পারিনি তুমি আমায় নিজহাতে চা-কফি বানিয়ে খাওয়াবে, আর বুদ্ধি করে বেশিবেশি খাবার খাইয়ে দেবে। জানোতো, আমার সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছিল। এই স্বপ্ন দেখছিলাম যে সারাজীবন যদি তোমার আদর পেতাম, তবে জীবনে আর কিছু লাগতো না! বুঝলে, তুমি খুব ভাল! আমি জানি, তোমাকে সারাক্ষণ পাবো না, কিন্তু তুমি মনের মাঝে সারাক্ষণই থাকবে। কাল সারারাত ঘুমিয়েছিলে, তাই তোমার দিকে অনেকক্ষণ ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলাম। চোখের পলক এক মুহূর্তের জন্যও ফেরাতে পারিনি। খুব লোভ হচ্ছিল আর মনে হচ্ছিল, তুমি যদি শুধু আমার হতে আমার আর কিছু চাওয়ার থাকত না! ঘুম আসছে না, বিছানায় বসে আছি, তাই কিছু লিখতে মন চাইলো। অনেকদিন পর লিখছি। বাংলা লিখছি, বানান ভুল হতে পারে, কিন্তু তোমার প্রতি ভালোবাসায় কোনো ভুল নেই! বিশ্বাস করো, খুব ভালোবাসি বলে এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব মনে পড়ছে বাবুটাকে। খুব ভালোবাসি তোমায়, সোনামণি। ভাল থেকো।

স্বপ্নটা সুন্দর না?

শোনো না, তুমি কখনো স্কুল পালিয়েছ? আচ্ছা, স্কুল কামাই করা যায়, অফিস কামাই করা যায় না? চলো, একদিন চুপচুপ করে ঘুরতে যাই। তুমি অফিস কামাই দিয়ে, আর আমি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। অবশ্য, তোমার অফিসে তো তোমার সিনিয়র কেউ নেই, তোমাকে কেউ কিচ্ছুটি বলবে না। অত মজা পাওয়া যাবে নাহ্! বৈধ সুখের মজা কম। একটু লুকোচুরি না থাকলে ওসব জমে নাকি? আবার, তোমার তো কত প্রবলেম, এ দেখে ফেলবে, সে দেখে ফেলবে, কত্ত চিন্তা! পরিচিত মুখদের এই একটা সমস্যা। আচ্ছা শোনো, তোমাকে আমি ছদ্মবেশে সাজিয়ে দেবো, কেমন? যাতে কেউ চিনতে না পারে। দাড়িগোঁফ চলবে তো? আর একটু ভ্রূ? তুমি তো এইদিকের সব জায়গাই ঘুরে ফেলেছ, আমিও যাইনি এত জায়গায়। তবে এসব কোথাও যাব না। যাব একটা চর এলাকায়। বৃষ্টির দিনে চর এলাকাগুলো খুব সুন্দর লাগে। চারিদিকে ঝমঝম বৃষ্টি, আমি আর তুমি নৌকায় বসে আছি মাঝ নদীতে। জানো, আমি না খুব গলা ফাটিয়ে গাইতে পারি! ঝুউম বৃষ্টি, ধুউম গান! খুব মজার না? সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি। বৃষ্টির সুরের তালে নদীর পানি যেন নাচতে থাকে। আমার একবার এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, মেঘনা নদীতে। তোমার যদি এই অভিজ্ঞতা না থেকে থাকে, তাহলে বলব, অনেক বড় কিছু একটা মিস করেছো তুমি। সেবার আমার পাশে তুমি ছিলে না, এবার থাকবে। ভাল কথা, আমি কিন্তু সাঁতার জানি না। তুমি জানো তো? মনে হয় জানো না। জ্ঞানীগুণী মানুষেরা সাঁতার জানে না। যদিয়ো আমি জ্ঞানী নই, তবুও জানি না। হি হি হি। চরে খালিপায়ে হাঁটতেও খুব ভাল লাগে। তুমি পারবে কি ওরকম করে হাঁটতে আমার হাত ধরে! তুমি তো বেডরুমেও সবসময় স্যান্ডেল পড়ে থাক। তবে একদিন না হয় হাঁটলেই আমার জন্য। খুব কষ্ট হবে কি? জানি, তোমার ভাবতেই কষ্ট লাগছে। আচ্ছা থাক, অত কষ্ট করতে হবে না। তোমার কষ্ট দেখলে আমারও কষ্ট লাগবে। দরকার নেই, তুলতুলি পুতুল একটা! তুমি জুতো পড়েই হেঁটো, আমি খালিপায়ে হাঁটবো। আমার আলতা পরতে খুব ভাল লাগে, বাসায় দেয় না পড়তে। সেদিন পড়ব, ঠিকাছে? আর কচুপাতা রঙের শাড়ি। হঠাৎ কেন এই রঙের কথা মাথায় এল, জানি না। ওইখানে কোনও এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে তুমি আমাকে চুড়ি কিনে দেবে? কাঁচের রেশমি চুড়ি? আমি হাতভর্তি করে চুড়ি পরে তোমার সাথে ঘুরবো।

আচ্ছা শোনো, চরে নাকি অনেক ফড়িং থাকে, আমাকে একটা ধরে দিবা? কথা দিচ্ছি, ওটাকে কষ্ট দিব না বা রেখে দিব না। একটা চুমু দিয়ে সাথেসাথে উড়িয়ে দিব, হুঁ? আচ্ছা, তুমি তখন তোমার হাতটা ধরতে দিবে? তোমার হাত ধরে নদীর পাড়ে হাঁটতে-হাঁটতে বৃষ্টিতে ভিজব, আর তোমার গান শুনব। বৃষ্টি থামলে আমরা ওখানে চড়ুইভাতি করব, হ্যাঁ? তুমি চুলো বানিয়ে দেবে, আমি মাটির হাঁড়িতে রান্না করব। তারপর কলাপাতায় করে তোমাকে খেতে দেব। তুমি মজা করে খাবে আর আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো। আমাকে একটু খাইয়ে দিয়ো, কেমন? ইস্, এমন একটা দিন পেলে জীবনে আর চাওয়ার মত কিছুই থাকবে না। ভাবতেই কত ভাল লাগছে! জানি, এসব পড়ে তোমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে কিংবা কষ্ট লাগছে। হি হি হি।

ধুউর, ভাল্লাগে না। কী একটা বদঅভ্যেস ধরে যাচ্ছে! যখনতখন তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে। এটা কি কোনও রোগ? মানসিক রোগ? জানি না। হতে পারে। প্রতিদিনই ইচ্ছে করেকরে রোগী হচ্ছি! এ জীবন কেমন জীবন! কী মানুষ আমি! তোমাকে না আরো বেশিবেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। আর প্রতিটা মুহূর্তে আগের চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে যাচ্ছি, প্রতি মুহূর্তেই টানটা বাড়ছে। কেন এমন হচ্ছে? সব দোষ তোমার, তুমি ইচ্ছে করে আমাকে প্রশ্রয় দিচ্ছ। তোমাকে যখন বলেছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি, একটা ধমক দিতে পারলে না? রেগে গিয়ে বলতে পারলে না, “এই মেয়ে, আমাকে ভালোবাসাটাসা চলবে না। কক্ষনো ভালোবাসবে না আমাকে! খবর্দার!” অথবা বলতে পারতে, “আর কখনো বিরক্ত করবে নাতো আমাকে! তোমার এসব কথা শোনার সময় নেই আমার।” তা না, তুমি উল্টো বলেছো, “লাভ ইউ টু।” এটা কিছু হলো! ছেলেগুলা এমন কেন? মেয়েদের মতো করে ‘লাভ ইউ’র রিপ্লাইয়ে ‘হেট ইউ’ বলে দিতে পারে না? তা করবে না, ফস্‌ করে বলে বসবে ‘লাভ ইউ টু’!

এই পচা ছেলে, তোমাকে না বলেছি সত্যিসত্যি ভালো না বাসলে ভালোবাসি বলে ফেলবে না? তবুও বল কেন? একটুএকটু বেশি ভালোবাসো, না? হি হি হি। আজ কী স্বপ্ন দেখলাম, জানো? দেখলাম, আজ একটা স্বপ্ন দেখলাম। তোমাকে ৭১ জন মেয়ে প্রপোজ করেছে, আর তুমি ৫২ জনের প্রপোজই অ্যাক্সেপ্ট করেছ! তার মাঝে আবার একজনের সাথে আমি তুমুল ঝগড়াও করছি। তখন তো ইচ্ছে মত ঝগড়া করেছি, এখন হাসি পাচ্ছে। কী মনে হচ্ছে? আমি ঝগড়ুটে? হি হি হি। কথা হল যে, এই তোমার প্রেমিকার সংখ্যাটা এত ভালভাবে মনে আছে কেন? স্বপ্নের জিনিস তো ভুলে যাওয়াই উচিত ছিল! এত মজার একটা স্বপ্ন, আর তুমি কিনা বললে ‘শয়তানের মত স্বপ্ন!’ কী? বলনি মনেমনে? ভালই তো হয়েছে, এক শয়তান স্বপ্নে আরেক শয়তানের দর্শন পেয়েছে। হি হি হি।

আমি কি আবারও বকবক শুরু করেছি? তুমি তো কিছুই জানো না, আমি যে কী পরিমাণ কথা বলতে পারি! পারি, মানে, পারতাম। ননস্টপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারতাম, একটুও টায়ার্ড লাগতো না। সেই আমি আর এই আমি’র মাঝে কত পার্থক্য! এখন আমি কথাই বলতে চাই না। অবশ্য লিখতে গেলে তো কত কথাই বলি, সেসব আবার তোমাকে মুখে বলতে পারি না। পারি না কেন বলোতো? পারা উচিত ছিল। আসলে যে কোনও কিছুই লিখে ফেলা যায়, কিন্তু মুখে বলা যায় না। কিবোর্ডে কিছুই আটকে থাকে না, কিন্তু মুখে সব কিছুই কেমন জানি আটকে যায়। যে লোকটাকে তুমি অনেক বকতে পারবে অনলাইনে, কখনো সেই লোকটাকে সামনে পেলে হয়তো কিছুই বলতে পারবে না, এমনকি সামনে যেতেই পারবে না। এ-ই হয়!

আচ্ছা…………তুমি আর আমি একসাথে থাকলে খুব ভাল হতো, না? তোমার দুষ্টুমিগুলো না আমার খুব ভাল লাগে! তোমাকে খুব রাগি আর সিরিয়াস টাইপ ভাবতাম। সেই তুমি যে এতটা দুষ্টুমি করতে পারো, ভাবতেই পারিনি! বাচ্চা একটা! তুমি যখন বাচ্চাদের মত দুষ্টুমি করতে থাক, তখন তোমার গালটিপে দিতে ইচ্ছে করে। ওলে আমার ছোট্ট বাবুটা, লক্ষ্মী সোনাটা!……..ইহ্, কী খুশিইইইই…….

তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কেন ভয় পাই? তুমি কি বাঘ ভাল্লুক? আমি ভয় পাই, আমার কোনও কথাতে রেগে গিয়ে অথবা কোনও একটা কাজে বিরক্ত হয়ে যদি আমাকে ব্লক করে দাও! তাহলে তো কষ্টে মরেই যাব আমি! আমি তো একটা পিচ্চি বাচ্চা। কত উল্টাপাল্টা কথা বলি, বিরক্ত করি! তুমি রেগে গেলে আমাকে বকা দিয়ো, ব্লক করে দিয়ো না প্লিজ! ঠিক আছে? লক্ষ্মী বাবুটা, খুব ভালোবাসি।

এই খরগোশ, আমাকে কি তোমার বেড়াল-বেড়াল লাগে? ওই মিয়াঁওগুলো কী, হ্যাঁ? আমি বেড়াল হলে, তুমি বেড়ালের তুলতুল বাচ্চাটা। তুমি বেড়ালের বাচ্চা দেখেছ না? এত্ত মায়াবী আর কোনও কিছু হতে পারে না। তুমি ওই মায়াবী তুলতুল বাচ্চাটা। তুমি রাতে খেয়েছ? তোমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে। সেই প্রথম দিনের মত, যেদিন তুমি আমাকে খাইয়ে দিয়েছিলে। মনে আছে? সেদিন তোমার কিচেনে আমি ডিম ভাজতে গিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলেছিলাম। তোমাকে দেখাইনি। হাসাহাসি করবে আর বলতে, এতটটুকু কাজ করতে গিয়ে মানুষ নাকি হাত পোড়ায়! কী করব বল, অভ্যেস নেই যে। আমিও তোমার মত রান্না পারি না। তবে চিন্তা নেই, শিখে নিব। তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে হবে না! হি হি হি।

এই শোনো না, তোমার সবগুলো বই একবার আমাকে দেখাবে? চিন্তা নেই, নেব না, শুধু দেখব। দেখেই প্রাণ জুড়াবো। বই আমার খুব প্রিয় একটা জিনিস। আমার কী মনে হয়, জানো, যার যত বেশি বই আছে, সে তত বেশি ভাল মানুষ। বই কিনতে হলে একটা ভাল মনের দরকার। তাহলে তোমার মত ভাল মানুষ আর কয়টা আছে, বলো! কিন্তু দেখবোটা কীভাবে? তুমি তো সব বই তোমার বাসায় রেখে দিয়েছ। আর তোমার বাসায় গেলে তোমার বউ ঠিক আমাকে জুতাপিটা, ঝাড়ুপিটা, আর যত রকমের পিটা আছে, সবই করবে………মানে, তোমার বিয়ের পর আরকি! এক কাজ করতে পার, সবগুলো বইয়ের ছবি তুলে এনো, সেটাই দেখব, কেমন?

এই তুলতুল বেড়ালটা, কী কর? তোমার আমার কথা একবারও মনে পড়ে না, না? অবশ্য মনে না পড়ারই কথা। আমি তো অতটা ইম্পরট্যান্ট কেউ নই। তুমি জানো, তোমাকে আমার সারাদিন মনে পড়ে? ঘুমভেঙে আগে ফোনটা হাতে নিয়ে, তোমার পেজটাতে ঢুঁ মেরে আসি, ইনবক্সে তোমার নতুন মেসেজে না পেলেও আগেরগুলোই পড়ি, তারপর উঠি। মাঝেমাঝে যখন ঘুমভেঙেই তোমার ‘শুভ সকাল’ পাই, সারাটা দিন যে কী ভাল যায়, কী বলব! আর সাথে একটা লাভ ইমো থাকলে তো কথাই নেই। তুমি একটা কথা আমাকে একবার পাঠাও, আমি সেটা একশবার পড়ি। না না, আরো বেশি! পড়তেই থাকি, পড়তেই থাকি। আমার সারাদিন কাটে তোমার কথা ভেবেভেবে। যা-ই করি, মাথার মধ্যে তুমিই ঘুরতে থাক। কেন এমন হয় বলোতো? আমি জানি, এতে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাব না, তবুও সরে আসতে পারি না। কেন পারি না? আমার তো পারা উচিত ছিল, তাই না? বড় হয়ে গেছি তো! ওসব বাচ্চামি করলে এখন চলে! অথচ দেখো, দিনদিন আরো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছি। বিবেক একবার বলে সরে আসো, মন দশবার দশটা অজুহাত দেয় আর বলে, পারব না! পচা ছেলে একটা! তুমি একটা পোকা। তেলাপোকা! মাথার মধ্যে সারাদিন বসে কিলবিল-কিলবিল করতে থাক, আস্তেআস্তে মাথার ঘিলুর জায়গাটা এই পোকাটা দখল করে নিচ্ছে। এমনিই আমার মাথায় ঘিলু কম, সোজাসরল মানুষ, আরো যদি না থাকে, কী হবে তখন! দিস ইজ নট ফেয়ার, হ্যাঁ? সব ঘিলু কি শুধু তোমার মাথাতেই থাকতে হবে?

এই যে তেলাপোকা শোনো, তেলাপোকা আমি একদমই পছন্দ করি না, ভয় পাই, দেখলেই গা ঘিনঘিন করে। স্কুল-কলেজে যে কীভাবে ওই বস্তু কাটতে হয়েছে, ভাবলেই এখনো গা শিরশির করে! কিন্তু তোমার নাম তেলাপোকা দেয়াতে ওটাকেও কত্ত কিউট লাগছে! ইস্ কত্ত কিউট পোকাটা! আমার বাবুসোনা তেলাপোকাটা! হি হি হি! এই, তুমি কি তেলাপোকা ভয় পাও? না পেলে কেন পাও না?

তোমার জন্য বেড়াল নামটা একেবারে পারফেক্ট। তুমি বেড়ালের বাচ্চা! একটা লম্বু ম্যাঁওবাচ্চা! হি হি! তোমার পাশে দাঁড়ালে নিজেকে ভেড়াভেড়া লাগে। পা উঁচু করেও নাগাল পাওয়া যায় না। ইস্! আমিও কি খুব ছোট নাকি? পাঁচ ফুট চার, হুঁ। তবুও পাই না। এরপর থেকে তোমার পাশে দাঁড়াতে হলে চেয়ারের উপর দাঁড়াব। তবে এক হিসেবে ভালই, তুমি আমার সাথে কথা বলতে হলে ঝুঁকে কথা বল। এইটা একটা বেনিফিট, তাই না? এই লম্বুটা, তোমার গলা জড়িয়ে ধরতে আমার খুব ভাল লাগে। খুব খুব খুব ভাল লাগে। মনে আছে সেদিন…….? মনে না থাকলে থাক, বলব না। তোমার মনে না থাকলেও চলবে। আমার মনে থাক! তোমার কোন জিনিসটা আমার সবচেয়ে ভাল লাগে, জানো? তুমি সিগারেট খাও না। এই বস্তুটাকে আমার কাছে যে কী পরিমাণ বিরক্ত লাগে, বলে বুঝাতে পারব না। তুমি তো লক্ষ্মী ম্যাঁওবাচ্চা। আমার কুটুকুটু গুলুমুলু তেলাপোকা বাবুটা! হি হি হি। তোমার এতএত বিশেষণ শুনে আবার বিষম খেয়ো না যেন! আরো অনেক আছে। এখন বলব না, আস্তেআস্তে বলব।

এই যে শুনছ, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা হল, আমি বিয়ে করব না। মজা করে বলছি না, সত্যিসত্যিই বলছি। কেন, জানো? আমি মনেমনে না তোমাকে আমার বর ভাবতে শুরু করেছি। ইচ্ছে করে ভাবছি না, ভাবনাটা আপনাআপনিই চলে আসছে। তো আমি কী করব, বলো! এখন ঘরে তোমার সতীন কেমন করে আনি, বলো! হি হি হি! ব্যাপার হচ্ছে, অন্য একটা মানুষকে নিয়ে কীকরে থাকব আমি, তুমিই বলে দাও! সারাজীবনই অভিনয় করে যেতে হবে, নিজের সাথেও, ওই লোকের সাথেও। কী দরকার! একাই তো থাকা যায়। তুমি তো একাই থাকো। কোনও সমস্যা হয় কী? হয় নাতো! কী সুন্দর একা নিজের মত ভাল আছো, না? আমাকে শিখিয়ে দিবে কীভাবে ভাল থাকতে হয় একাএকা? তুমি মাঝেমাঝে আমার বাসায় বেড়াতে এসো, তোমাকে রান্না করে খাওয়াব, হুঁ? আসবে তো? নাকি এতএত ব্যস্ত থাকবে যে ভুলেই যাবে আমাকে? ভুলে গেলে চলবে না, মশাই! আমি সারাদিন তার কথা ভেবে মরি, আর সে কিনা আমাকে ভুলে যাবে! ভুলে গেলে যাও, আমি ঠিক আবার মনে করিয়ে দেবো। তারপরও যদি মনে না পড়ে, তাহলে রেগে যাব, রেগে গিয়ে কামড়ে দেবো। তারপর কাঁদতে-কাঁদতে বাসায় চলে আসব। আর কোনদিনও যাব না তোমার কাছে। এই, বলো না, তুমি কি সত্যিসত্যি আমাকে ভুলে যাবে? ওই যে তখন বললাম আর কোনওদিনও যাব না তোমার কাছে, আসলে রাগ করে বলেছি। আমি আসলে একটা বেহায়া। ভালোবাসলে মানুষ বেহায়া নিলর্জ্জ বেশরম হয়ে যায়। যতই রাগ কর, বিরক্ত হও, তবুও ঘুরেফিরে তোমাকে বিরক্ত করতে ঠিকই চলে যাব। এটাই সত্যি। ধুউর, তুমি তো দেখছি আমার লজ্জাশরমও কমিয়ে দিচ্ছ। এটা কী হল ব্যাপারটা? তুমি একটা ইয়ে!

ভ্রমর……….তুমি কার? এমন কেন হয়, বলোতো? ভুল মানুষকেই কেন মানুষ ভালোবাসে? আমিই বা কেন ভুল মানুষকে ভালোবাসলাম? আচ্ছা বলোতো, ভালোবাসার কি ঠিক ভুল আছে? কেন থাকবে? ভালোবাসা কেন একটা নির্দিষ্ট মানুষের জন্যই বরাদ্দ থাকবে? তাকে মন থেকে ভালো না বাসলেও জোর করে কেন ভালোবাসতে হবে? যাকে মন ভালোবাসে, তাকে জোর করে কেন মন থেকে বের করে দিতে হবে? সেটা কি আদৌ সম্ভব? নাকি স্রেফ সামাজিক একটা রীতি? সমাজ ধর্ম পরিবার কেন এসব নিয়ম দিয়ে মানুষের মনকে বেঁধে রাখতে চায়, বলোতো! তোমাকে কেন আমি ভালোবাসতে পারব না? কেন তুমি আমার জন্য ভুল মানুষ? শুধু এই কয়টা রীতির জন্য? আচ্ছা, এসব রীতি কে তৈরি করেছে? ঈশ্বর? তিনি তো সবাইকে এক করেই পাঠিয়েছেন, তাহলে নতুন নিয়ম করে আলাদা কেন করবেন? বলতে পার? আমার মনে হয়, তিনি এসব করেন নি, মানুষই নিজেদের স্বার্থে এসব তৈরি করেছে। নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে আবার সে রীতি পাল্টে দিবে, ব্যস্‌! ঈশ্বরের রীতি তো পাল্টানোর নয়, তাই না? সমাজ চরম স্বার্থপর একটা সংগঠন।

কত কিছু ভাবছি, না? আবার পরক্ষণেই ভাবছি, আমি এতো কিছু ভাবছি কেন? ধুউর, এসব কী বলছি আমি! নিজেরই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসলে মানুষ যে পাগল হয়ে যায়, এটা তার লক্ষণ। কী সব যে বলছি! শোনো, আমি কিন্তু তোমার প্রেমে অনেক আগেই পড়েছি, ভালোবেসেছি নতুন করে। বুঝেছ কিছু?

আমি তোমার ওই পোস্টটা, যেটা তুমি আমার উপর রেগে গিয়ে দিয়েছিলে, সেটা সেভ করে রেখেছি। প্রথমপ্রথম কয়েকদিন তো সারাদিনই ওটা পড়তাম আর কষ্ট পেতাম। এখনো প্রায়ই পড়ি। কেন পড়ি, জানো? নিজেকে মনে করিয়ে দিতে। আমি বারবার নিজেকে মনে করিয়ে দেই, আমি তোমার কেউ না, আমার কোন ইম্পরট্যান্স নেই, আর দশটা সাধারণ মানুষের চেয়েও বেশি অপছন্দ কর তুমি আমাকে। কিন্তু তবুও কেন জানি মনে হয়, তুমিই আমার সব কিছু, তোমার ইম্পরট্যান্স আমার কাছে সবচেয়ে বেশি, পৃথিবীর যে কারুর থেকে তোমাকে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। কেন করি? মনে হয়, এর কারণ, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের সহজাত আকর্ষণ, তাই না, বলো? তুমি আমাকে কাছেও টানছো না, আবার দূরেও ঠেলে দিচ্ছ না। কেন এমন করছো? একদিকে বলছ, আমি তোমার কেউ নই, অন্যদিকে প্রশ্রয়ও দিয়ে যাচ্ছ। কিন্তু কেন? আমার কষ্ট দেখতে খুব ভাল লাগে তোমার, না? তোমার কাছে তো ভালোবাসাটা ডালভাত! কত্ত মানুষ তোমাকে ভালোবাসে, তোমার বান্ধবীরও অভাব নেই, তাইতো তোমার কাছে তেমন কিছু মনে হয় না। কিন্তু আমার কাছে ভালোবাসাটা ডালভাত না, অনেক কিছু। সত্যি করে বলোতো, তুমি কি সত্যিসত্যি কখনো কাউকে ভালোবেসেছ? সত্যি করে বলবে কিন্তু! তুমি খুব মিথ্যে বলতে পার, জানো? আমি কিন্তু ধরতে পারি কোনটা মিথ্যে। তবে বুঝেও বুঝি না। তোমার মিথ্যেগুলোও সত্যি ভাবি। নিজেকে সত্যি ভাবাই। তোমার এই সত্যি টাইপের মিথ্যেগুলি আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। শোনো, মিথ্যা এমনভাবে বলতে হয়, যেন কেউ বুঝতে না পারে, শুনতে সত্যি শোনায়। তুমি পারো না সেটা। এটা একটা ভাল দিক। খারাপ কাজগুলো তুমি ভালভাবে করতে পার না। তুমি ভাল মানুষ তো, তাই ভাল কাজগুলোই তোমার জন্য, খারাপ কাজগুলো না। বুঝেছ, মশাই। তুমি কি রেগে গেলে? আমার উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছে? আচ্ছা বাবা, সরি। কানে ধরেছি, হবে? নাকও মুলতে হবে কি? হলে তুমিই মুলে দাও তো। হি হি হি।

আচ্ছা, তোমার এত ধৈর্য কেন? অনেক! তুমি মানুষটা অন্যরকম। অনেকটাই অন্যরকম। তোমার সাথে না মিশলে বাইরে থেকে দেখে কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না। যারা তোমার নামে অনেক উল্টোপাল্টা কথা বলে, তারা একটা দিনও যদি তোমার সাথে কাটায়, আমি হলফ করে বলতে পারি, তাহলে তাদের চিন্তাধারা পাল্টে যাবে। আমি তোমাকে আরো চিনতে চাই। তোমার মনের গভীরতাটা জানতে চাই, তোমার হৃদয়ের প্রতিটা অব্যক্ত কথা বুঝতে চাই। সেই সুযোগটা কি দিবে আমাকে? জানি, এই সুযোগ চাওয়াটা অন্যায়। আমিও না একটা অদ্ভুত মানুষ! কী বলছি এসব আমি? কোন অধিকারে বলছি! অধিকারের খাতা যেখানে শূন্য, সেখানে আমার চাওয়া তো দেখছি আকাশছোঁয়া! তা হয় কখনো? কেন যে ভুল স্বপ্ন দেখে বেড়াই, জেনেশুনে মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি! এমন করছি কেন আমি? তুমি বলতে পার? আমি তো কোনও চাওয়াপাওয়া ছাড়াই তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছি। তাহলে এসব ভাবছি কেন? তুমি আমাকে যতই অপছন্দ কর না কেন, আমি কিন্তু তবুও তোমাকে ভালোবাসব। যত দূরে ঠেলে দাও না কেন, তবুও ভালোবাসব। যতই অপমান কর না কেন, তবুও ভালোবাসব। তুমি আমার সাথে যা-ই কর না কেন, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসব, ভালোবাসব আর ভালোবাসব। ভালোবাসি খুব, আমার পিচ্চি গুল্লু বিল্লি বাচ্চাটা!

আজ মনটা খারাপ। ভীষণ খারাপ। কেন খারাপ, বলব না। তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। তোমার কাছে যেতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। তোমাকে জড়িয়ে ধরলে আমার কষ্ট, মনখারাপ, সবই দূর হয়ে যায়। তুমি মনে হয় জাদু জানো, নয়ত এমন হয় কেন? আজ তোমাকে খুব মিস করছি। তুমি পাশে থাকলে কতই না ভাল হত। তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতেও যে কত শান্তি, তা যদি বুঝতে! আচ্ছা, আমি এমন কেন? মনখারাপের সময়ে এমন একজনের কথা মনে পড়ছে, যার কাছে যাওয়া সম্ভব না, যার সঙ্গ আশা করাটাও বোকামি। এটাও জানি, এতে মনখারাপ আরো বাড়বে, রীতিমতো আগুনে ঘি ঢালার মত অবস্থা! তবুও মনে পড়ছে, তবুও মিস করছি। তুমি আমাকে বলে দাও না, কীভাবে তোমার ভূত মাথা থেকে তাড়াবো? সারাক্ষণই মাথায় শুধু তুমিই কিলবিল করতে থাক। কেন এমন কর, বলোতো! আমাকে কষ্ট দিতে ভাল লাগে খুউব, না? একটু কম করে কষ্ট দিলে কী হয়! এত প্রশ্রয় দিয়ো নাতো আমাকে তুমি! প্রশ্রয় দিয়েদিয়ে মাথায় তুলছো। মাথায় তো তুলবে তুমি, নামতে তো হবে আমাকেই, তখন কীভাবে নামব একাএকা? অত উপরে উঠে পড়ে গিয়ে আছাড় খাওয়ার চেয়ে না উঠাই তো ভাল, না? বাট আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ। আমাকে একটা উপায় বলে দিবে, কীভাবে তোমাকে ভুলে থাকব। বলে দাও না গো! যতোই তোমাকে ভুলে যেতে চাই, চেষ্টা করি সচেতনভাবেই, আরও বেশি করে মনে পড়ে যায়!

“এই গানটা বারবার শুনতে থাকি, আর নিজেকে বারবার বলতে থাকি……….না, ও আমায় ভালোবাসতো না, আমিও ওকে ভালোবাসতাম না, ভালোবাসি না, ভালোবাসবোও না।

এসবের কোনও মানে হয়?

গানটা কি ও এখনো মনখারাপ হলে আগের মতো শোনে? শুনতেই থাকে? …………আর বরকে পাঠিয়ে বলে, এই রাগি হনুমান, নাও, শোনো!

ও যা ইচ্ছে করুক গিয়ে! আমার কী! আমিই বা কেন এতকিছু ভাবছি? আশ্চর্য! এতো বেহায়া কেন আমি?”

এসব কাকে লিখলে? ভাল কথা, যাব কোয়ি বাত বিগার যায়ে, যাব কোয়ি মুশকিল পার যায়ে। অর্থটা বোঝো তো এ গানের? তোমার সেই উনিই তো লিখে দেয়ার কথা অনেক দিন আগেই! দেননি?

পৃথিবীটা কেমন যেন, তাই না? যেন সবাই আপন, আবার সবাই খুব পর! কেন মানুষ জন্ম নেয়? কেন? যুদ্ধ করার জন্য? মেয়েবিজ্ঞানী এতো কম কেন? আমি তো কারো নামই শুনিনি! ইমোশনের চেয়ে ভয়ংকর কোনও জিনিস নেই কেন! আসলে কী, জানো, কেউ কাউকে ভালোবাসে না, মানুষ কেবল নিজের মতো করে কোনও কিছু বা কাউকে পেতে চায়! মানে কী দাঁড়ালো? ওসব হৃদয়ফিদয় বলে আসলে কিচ্ছু নেই, সবই হল স্বার্থপরতা! তাহলে তুমি আমাকে বলো, প্রেমের ব্যথাটা বুকে কেন অনুভূত হয় এমন তীব্রভাবে?

লেখাটা ছয়বার পড়ে ফেললাম! দূরত্বের আগে ও পরে। আজ মনে হচ্ছে, সবাই হেরে গেছে তোমার কাছে। সবাইকে এক তুড়িতে হারিয়ে দিয়েছ তুমি! সুনীল-সমরেশ-শীর্ষেন্দু সবাই যেন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ফেইল! এ আমার অবমাননা আস্পর্ধা অসম্মান-প্রদর্শন ঠিকই, কিন্তু আমি যে মনভুলানো কথা বলছি না, তোমার আজকের লেখা আমাকে যেন নিস্তেজ করে দিয়েছে, আমার বারবারই মনে হচ্ছে, উনারাও নিস্তেজ হয়ে গেছেন। ঠাকুরমশাই, আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন, আপনার বৎস কী করে রেখেছে! মন, প্রেম, সমাজ, আবেগ, কুসংস্কার নিয়ে আরও কত কী লিখে গেছেন আপনি, অথচ এমন দেড়শটি কথা এক নাগাড়ে বলার সাহস কে কবে কোথায় দেখাতে পেরেছেন? আপনিই বলুন না, আপনি সেসময় এত সৃষ্টি করে গেছেন, এত সৃষ্টি রেখে গেছেন, যা দেখে ভয়ে শরীরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়! মনটাও তখন চলে কি চলে না, তা বোঝাই মুশকিল! কিন্তু এই অধুনা রবীন্দ্রনাথের কী অবস্থা, সে যে কী করতে পারে, কীকরে পারে, তা আমি ভাবতেও পারছি না! আমি ক্ষমাপ্রার্থী! জানি, আমি আপনার শাস্তিরও অযোগ্য, আপনার সাথে কারও তুলনা চলে না, কিন্তু আমি পারলাম না! সাদৃশ্য মাথায় আনার দুঃসাহস দেখানোর জন্য আমি দুঃখিত! আপনি বড়ই কঠিন সৃষ্টির অধিকারী, আপনাকে বুঝতে হলে কঠোর সাধনায় নামতে হবে, কিন্তু আজ যা হলো, তা নিয়ে ওই পরপারে বসেও আপনিও কি হতভম্ব নন? বুকে হাত দিয়ে বলুনতো! নিশ্চয়ই এবং নিঃসন্দেহে তা-ই তো হয়েছেন!

এইমাত্র পরপর সতেরোবার শুনে ফেললাম ‘হ্যায় আপনা দিল তো আওয়ারা’। হেমন্ত কুমারের কণ্ঠে। হেমন্ত কুমারকে চেনেন তো? হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ই কলকাতার বাইরে হেমন্ত কুমার নামে পরিচিত। গানটা হারমোনিকাতে তুললাম। এতো অসাধারণ সুরটা! আপনাকে বোধহয় কখনও বলা হয়নি, আমি হারমোনিকা বাজাতে জানি। এই গানটা ছোটবেলায় কোথায় যেন শুনেছিলাম। পরে আর শোনা হয়নি কখনো। কিন্তু মাথার মধ্যে সুরটা রয়ে গিয়েছিল। আজকে গানটা পাওয়ার পর আমি অবাক হয়ে গেলাম! এ যে আমার চেনা, আত্মার আত্মীয়! বহুকাল আগে শোনা কোনও সুর আবারো কোনও ভাবে ফিরে এলে মনের ভেতরে কী যে ইয়ুফোরিয়ার স্রোত বইতে থাকে! লাইফের ছোটছোট উইশগুলো পূরণ হতে…….কতো অপেক্ষা করতে হয়! ভাবলেই অবাক লাগে! আমাদের খুশি হয়ে উঠতে আসলেই বেশি কিছু লাগে না! ওয়ার্ডসওয়ার্থকে মনে পড়ছে………The music in my heart I bore, / Long after it was heard no more. সুর, ঘ্রাণ আর স্পর্শ কখনও হারায় না। অবচেতন মনের কোনও এক কোণে যেন থেকেই যায়! এখন শুনছি, কিসি কি মুস্কুরা হাটো পে নিসার। মুকেশের কণ্ঠে। এর আগে, চলো ইকবার ফিরসে আজনাবি ব্যানগ্যয়ে হাম দোনো। মাহেন্দ্র কাপুরের। আজকে আমি থামব না। নিজেকে ইচ্ছেমত কাঁদাবো—আনন্দে! ইসসস্‌!

আচ্ছা কুহক, তুমি যে ঐদিন এক লেখায় বলেছিলে………ওভাবে করে একটা হালকা আদর……..ওরকম করে আদর করলে খুব পাপ হবে, না? ভীষণ কান্না পাচ্ছে……..

তোমাকে ছুঁয়ে প্রণাম করতে মন চাইছে। একটি কথা না বললেই নয়, অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট ক্ষমা চেয়েছিলেন বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য। অর্জুনের ব্যবহার, বাক্য-আলাপ, যা ছিল, তা ছিল তার সখার জন্য, এবং শ্রীকৃষ্ণকে পরবর্তীতে চিনতে ও বুঝতে পেরে তিনি ক্ষমা চাইলেন ভগবানের কাছে, সে কথা তোমার অজানা নয়। আমিও ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আমার নির্বুদ্ধিতার জন্য, আমার বন্ধুসুলভ আচরণের জন্য, আমার রাগের জন্য, আমার অধিকার ফলানোর জন্য, আমার কাণ্ডজ্ঞানহীনতার জন্য, আবার প্রকাশ করার অক্ষমতার জন্য, যে কোনও কিছুরই জন্য, আর তোমাকে বিরক্ত করার জন্য। এবং, আমি যে বুঝেও বুঝিনি কিংবা না বুঝার ভান করেছি অথবা বুঝতে না চাওয়ার জন্যও আমি ক্ষমাপ্রার্থী। হয়তো দেখা হলে আমিও কুন্তীপুত্রের মতো হাঁটুগেড়ে বসে ক্ষমা চাইতে পারবো না অথবা ওটা তুমিই হতে দেবে না। তোমার সান্নিধ্যের ওই সময়টুকু সদ্ব্যবহার করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি। তোমাকে সামনাসামনি আপনি করে বলি, কিন্তু অন্তরালে, নিভৃত কোণে কতটা ক্ষোভ-অভিমান প্রকাশ করে কত যে অন্যায় করেছি এতদিন! এখনো তুমি করেই বলছি! এই আস্পর্ধাটুকুর জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী, আমাকে মাফ করে দিয়ো। আমি তো অধম মূর্খ কাণ্ডজ্ঞানহীন! এই অক্ষমতা মনে রেখে আমায় করুণা করে হলেও ক্ষমা করে দিয়ো।

আজ এই মুহূর্তে ঈশ্বরকে সাথে নিয়ে বলছি, পৃথিবীতে ধন্যবাদ এবং ক্ষমা চাওয়া, এই দুইটি বিষয় ঈশ্বর ছাড়া আর কারও কাছে তেমন গাঢ়ভাবে কখনো প্রকাশ করিনি। অতোটা প্রকাশ করাই তো অনেক বড় ব্যাপার! আমি খুব কম সময়ই ক্ষমা চাই, সরি বলাটাও আমার মুখে ঠিক আসে না। মুখে আমি ক্ষমা চাই না, তবে বেশিরভাগ সময়ই ধন্যবাদ দিই। ভগবান ছাড়া আর কারও কাছেই তেমন কখনো ক্ষমা চাইনি, কিংবা দুঃখপ্রকাশ করিনি বা বলিনি, এমনকি বাসায় বাবা-মা’কে কখনো সরি বলা হয়নি। শুধু তোমাকেই মন থেকে অনেক-অনেক ধন্যবাদ দিয়েছি, তাও মুখে। আমি অক্ষম তোমাকে চিনেছি এবং সে সুযোগ যে পেয়েছি, তার জন্য ঈশ্বরকে বারবার ধন্যবাদ দিয়েছি। আমার চোখে ঈশ্বর ছাড়া যদি এই পৃথিবীতে কেউ শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকেন, সে হচ্ছ তুমি। তাই তোমার কাছে ক্ষমা চাই এত বারবার আমার অজান্তে তোমার প্রতি অসম্মানজনক আচরণ প্রদর্শনের জন্য। যদি এটা অন্যায় হয়ে থাকে, তবে তার দায় নিতে আমি রাজি আছি। আমি তোমাকে রবীন্দ্রনাথতুল্য মনে করি, আমার চোখে সে পর্যায়ে তুমি নিজেকে নিয়ে গেছো। তুমি এতদিন যেমন হয়ে আছ, আমি সেই তোমাকে ঈশ্বরের পরে স্থান দিয়ে এসেছি, কিন্তু কোনওভাবে যদি আমার লেখায় প্রকাশ পায়, আমি তোমাকে ঈশ্বরের সমতুল্যও করে ফেলেছি, আর সেজন্য আমাকে কোনও শাস্তি পেতে হয়, তবে তা-ই হোক। আমি শাস্তি নিতে রাজি আছি, কিন্তু তোমায় যে জ্ঞানে অর্চনা করেছি, সেই তুচ্ছ জ্ঞানের বিস্তারের জন্য আমায় ক্ষমা করে দাও। ঈশ্বর আমায় ক্ষমা করবেন কি না তা আমার জানা নেই, তবে প্রত্যেকটা জীবের মধ্যেই তো পরমাত্মা বিদ্যমান, জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর, এই সৎজ্ঞান থেকে পূর্ণ সততা নিয়েই বলছি, তোমাকে ঈশ্বরের পাশে কিংবা যেখানেই রাখি না কেন, আমি বোধহয় সত্যিসত্যি পরমাত্মার সন্ধান পেয়েছি, সেই পরম আত্মা, যার সামনে মাথা নোয়ানো যায়, যার কাছে ক্ষমা চাওয়া যায়, যাকে বুকে রেখে দেওয়া যায়; তাই সবচেয়ে বড় কথা এবং সব কথার প্রথম কথা, আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে চাইনি ঠিকই কিন্তু মন থেকে পাওয়ার যে তৃষ্ণা আর অসীম আকুলতা, সেটাও তো কম অপরাধ নয়! তোমাকে অমন করে না চেয়েও চেয়ে ফেলার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। জানি, আবারো তোমাকে চাইবো এবং যে ভুল বারবার করা হয় এবং ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়, সে ভুলের কোনও ক্ষমা নেই। আমি নিজেও ওসব ভুলের জন্য কখনো কাউকে ক্ষমা করি না কিন্তু তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। ওই যে বললাম, করুণা করে হলেও আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো!

(আজকের আর আগের কয়েক দিন পৃথিবীর সকল ক্যালেন্ডারের বাইরে ছিল। এসব দিন আমার দিন। আমার এ সম্পদের কোনও সংখ্যাগত নাম নেই।)