সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/১২

দূর থেকে ভালোবাসার সবচাইতে বড় সুবিধে, এ ভালোবাসা কোনোদিনই কমবে না। তোমাকে দূর থেকে ভালোবাসতে মজা, তুমি দূর থেকেই বেশি কিউট, কাছে গেলেই কেমন জানি কর। আমার এই জীবনটা কেমন করে যে কেটে যাচ্ছে—সবকিছুই আমার, আবার কিছুই আমার না—এমন একটা জীবন আমার।

এক সন্ধে। টুপটাপ বৃষ্টি। মেয়েটা বসে আছে……কারো প্রতীক্ষায়।

এমন একটা মুহূর্তের কথা এমনিতেই বললাম। মুহূর্তটা মাথায় টুকটুক করছে। নড়ছে, নাড়াচ্ছে। বিরক্ত করে ফেললাম? কী আর করবো! বিরক্ত করতে ভাল লাগে যে! তুমি কিছু মনে কোরো না, প্লিজ! তোমায় নিয়ে আজ দুপুরে ভাতঘুমে একটা স্বপ্ন দেখলাম। কী দেখলাম, জানো?

দেখলাম, তোমার নতুন বিয়ে হয়েছে। বউটা একটা বাড়িতে আছে। তুমি এলে। বললে, রেডি হয়ে নাও, আমার মাসিমা আসবে। বৃষ্টি শেষ হয়েছে। গাছপালা ভেজাভেজা। রাস্তা ভেজা। বউ হাঁটছে। হালকা আকাশি রঙয়ের শাড়িপরা বউ। তোমার পাশে হাঁটতে-হাঁটতে হঠাৎ দেখে, তুমি মিসিং। ও আর তোমাকে খুঁজে পাচ্ছে না। তারপর সে ভয় পেয়ে গেল। আর হাঁটছে না। দাঁড়িয়ে আছে। বেচারির কাছে মোবাইল নেই। ভুলে বাসায় ফেলে এসেছে। ও ভাবছে, ওর স্বামী তো নামকরা মানুষ, কোনো মেয়ের কাছে নাম্বার থাকতে পারে। তিন-চারজন মেয়েকে জিজ্ঞেস করেছে। তারপর একজনের কাছে পেল। ফোন দিল। স্বামীটি এসে তো সেই বকা! অনেক কিছুটিছু বলল আরকি! জানো, বউটার জায়গায় নিজেকে দেখে আঁতকে উঠেছি!

এই স্বপ্নের জন্য কেহ দায়ী নয়।

তোমার কপাল। এতোটা ভালোবাসতে পারে, এমন কেউ জীবনে থাকা বড়ো ভাগ্যের ব্যাপার! অবশ্য, তোমাকে ভালোবাসতে পারাটাও ভাগ্যের ব্যাপার!

আমার বিয়ে নিয়ে সবার কত চিন্তা! আমার কোনো মাথাব্যথাই নেই যেখানে, সেখানে অন্যদের চিন্তা দেখলে অবাক হই। আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পাড়াপ্রতিবেশী সবার। বিশেষ করে কিছু অতি উৎসাহী মানুষের। এদের মনে হয় করার মত কোনো কাজ নেই, তাই অন্যের পার্সোনাল ব্যাপার নিয়ে এত উৎসাহী। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে, আমাকে তারা ব্যাপারটা সরাসরি বলতে পারে না। বিয়ের ব্যাপার! সরাসরি বলা! ছিঃ ছিঃ! কী লজ্জা! কী লজ্জা! বলতে পারে আমার মা’কে, যার ব্রেইন খুব সহজেই সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুয়ে দেয়া যায়।

“কী বলেন! মেয়ের এখনো বিয়ে দেন নাই!” (গালে হাত)

“মেয়েকে বুঝান!” (আমি তো বুঝি না, এটার জন্য একটা প্রাইভেট টিউটরের ব্যবস্থা করেন।)

“বিয়ে করে না ক্যান? নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে!” (আহারে চিন্তা!)

“মেয়েমানুষ, বিয়ে না করে করবে কী?” (নিজেদের মত সবাইকে কেন ভাবেন? আজব!)

“পরকালের চিন্তা নাই!” (শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাও শুনতে হয়। সবচে’ হাস্যকর কথা। মনে হয়, ওনারা বিয়ে করে পরকালে স্বর্গ নিশ্চিত করে ফেলেছেন!)

“অমুকের মেয়ে এসএসসি দিয়ে বিয়ে হয়ে গেল! তমুকের মেয়ে নাইনে পড়ে বিয়ে হল।” (লজ্জাও করে না এসব বলতে!)

আর সবচে’ কমন ডায়লগ, “এহ্, বিয়ে না করে জজব্যারিস্টার হবে!” (আরে বাবা আমি জজব্যারিস্টার হই, না কাজের বুয়ার কাজ করি, আপনাদের এত গায়ে লাগে কেন? আমি কি আপনাদের খাই না পরি?)

এতদিন তাদের কথা শুনলে খুব মেজাজ খারাপ হত। এখন খুব মজা লাগে! আহা, আমাকে নিয়ে কত চিন্তা সবার! এমন কপাল ক’জনার হয়! আর এই মানুষগুলোকে দেখতে লাগে সবচে’ হাস্যকর। তারা তৃতীয় মাত্রার ভাব নিয়ে বলে, আমি ষষ্ঠ মাত্রার ভাব নিয়ে শুনি! দেশে আজাইরা লোকের অভাব নাই। সোনার বাংলাদেশ। অফুরন্ত সময় হাতে নিয়ে আমরা সবাই হাঁ করে বসে আছি।

আচ্ছা, তুমি বলোতো, ভালোবাসা কি খুব দামি কিছু? কত দামি? নাকি এর কোনো মূল্যই নেই? ভালোবাসা কিনতে তো কোনো টাকা লাগে না, আবার অন্য দিকে, কোনো মূল্যেই সেটা কেনা যায় না। এই যেমন তোমার কথাই ধরো না কেন, তুমি জীবনে এতএত ভালোবাসা পেয়েছো যে ভালোবাসাটা তোমার কাছে খুব নগণ্য আর তুচ্ছ মনে হয়। ভুল বললাম? আমি যখন তোমাকে কিছু লিখি, সুন্দর করে লেখার প্র্যাকটিসের জন্য লিখি না কিন্তু, লিখি নিজের মনের কথাগুলো তোমাকে বোঝাতে। আর তুমি কি তা আদৌ দেখ? মনের কথাগুলো বোঝ আমার? নাকি শুধু দেখে যাও কয়টা বানান ভুল হয়েছে আর আমার ব্যাকরণের বারোটা বাজতে আর কত সেকেন্ড বাকি!

তোমার কাছে আমার কোনো চাওয়া নেই। আমি যে তোমাকে কেন ভালোবাসি, তার কোনো কারণ খুঁজে পাই না। আসলে কি ভালোবাসতে কোন কারণ লাগেই? কারণ যদি লাগেই, তবে আমি তা খুঁজে পাই না কেন? তুমি কি জানতে না তোমার কাছে গেলে আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলব? তাহলে কেন যেতে দিলে তোমার এত কাছে? ইচ্ছে করে? খুব কি ইচ্ছে করছিল আমার কষ্টগুলো দেখতে? কীভাবে তোমার জন্য যন্ত্রণায় ছটফট করি, তা দেখতে? তুমি খুব অদ্ভুত প্রকৃতির নিষ্ঠুর ভাল মানুষ। হয়ত এই জন্যই তোমাকে এত ভাল লাগে, এত মায়া তোমার প্রতি। ইদানিং অনেক কথাই তোমাকে বলতে পারি না। লিখেলিখে ব্যাকস্পেস দিয়ে মুছে ফেলি। লিখার পর বোকাবোকা লাগে, মনে হয়, এসব কী লিখছি আমি! ভাগ্যিস ডিলিট করে ফেলি! নয়ত বানান, ব্যাকরণের পাশাপাশি অর্থগত ভুলও ধরতে। যদিয়ো আমি যে খুব অর্থপূর্ণ কথাবার্তাই বলি, তা কিন্তু না। মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। কী কারণে, বুঝতে পারছি না। তাই হাতে যা আসে, তা-ই লিখছি। কোনো মাথামুণ্ডু নেই। এই যে এতএত কথা বলি, তার সবগুলোর একটাই সারমর্ম, সেটা হল, ‘ভালোবাসি’!

“ভালোবাসা খুব দামি। এর দাম আমার মতন সস্তা লোক দিতে পারে না।”

“তোমার কাছে ভালোবাসার দাম কখনো চাইনি, চাইবও না। আর……….তুমি মোটেই সস্তা না।………আচ্ছা, তুমি নিজেকে সস্তা বল কেন? তুমি নিজেকে ভালোবাসো না?”

“সততা থেকে বলি।”

“তুমি কি ভেবেছ, এইসব বললে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কমে যাবে? কক্ষনো না!”

কথোপকথনটা এমনই হওয়ার কথা। কেউ তো আর আমার সাথে কিছু বলে না, তাই আমিই বুনি কথার ঝুড়ি।

আমার এক বান্ধবী ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পায়নি বলে পরিবারের লোকের কাছে কতো কথা যে শুনেছে, সে খবর তার ঈশ্বরই জানেন। চলার পথে কতোটা যে বেশি কথা শুনেছে! বর্তমানে বাংলা সাহিত্য নিয়ে একটা কলেজে পড়ছে। সবাই ওকে বলে, শেষমেশ লিপস্টিক মার্কা সাবজেক্টে আছো! এখনো সবাই ওকে গরু বলে। ও নাকি লেখাপড়ায় একটা গরুর সমান! কোনো মানে হয়, বলেন! সবার এই বিষমাখা কথা সে আর নিতে পারছে না। ও প্রায়ই ভাবে, ঘুরে দাঁড়াবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ করবে। এভাবে সবাইকে বুঝিয়ে দেবে, যে মেয়েটাকে ওরা গরু ভাবে, সে মেয়েটা আসলে গরু না। তখন ওরা নিজেরাই এসব বলবে। ওর ভাবনাটা অদ্ভুত না? আমার তো মনে হয়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারা না পারা কারো যোগ্যতা কিংবা অযোগ্যতা ঠিক করে দেয় না। ধরে নিলাম, ও আইবিএ’তে ভর্তি হতে পারল। তখন কী হবে? সে খুব যোগ্য টাইপের কিছু হয়ে যাবে? আসলে আমার বান্ধবীটা পাগল হয়ে গেছে।

তোমার জন্য একটা চিঠি লিখেছি। দেখাই, কেমন?

চোখ আর কপাল। খুব কাছাকাছি তাদের অবস্থান। তবুও অনেক সময় চোখে যাকে ভাল লাগে, সে কপালে থাকে না। কপালের লিখন বলে কথা! একটা সময় মেনে নিতে হয়, কিন্তু মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া, এই দুইয়ের মাঝে আকাশপাতাল দূরত্ব।

যাকে চিনি না জানিও না, তার সাথে কাটিয়ে দিতে হবে সারাটি জীবন। আমাকে বুঝবার বা আমার মন বুঝার আগেই সে আমার শরীর বুঝার চেষ্টা করবে। এইরকমই হয় বেশিরভাগ মেয়ের সাথে। কারণ ওই যে বিয়ে নামের চুক্তিপত্র সাইন করেছে যে ওই দুইজন! ধর্মীয়ভাবেও তারই অধিকার!

আর যাকে পাগলের মতো ভালোবাসি, বেসেই যাবো, সে মনের ভিতরেই রয়ে যাবে। সমাজের এ কেমন রায়?

তোমার যোগ্য আমি নই। কখনোই হতেও পারবো না। আমি ভাল না, তুমি অনেক অনেক অনেক ভাল। আমার মতো মেয়েকে ভালোবাসার কিচ্ছু নেই। কখনো ভালোবাসবে, সেটা আশাও করিনি। ভুলেও না!

কেন যেন আজ এতগুলো কথা বলে ফেললাম। কিছু মনে নিয়ো না। মাফ করে দিয়ো আমায়।

আরেকটা কথা…….

ভালোবাসি!

‘ভালোবাসি’ কথাটা কত ছোট্ট। কিন্তু অর্থ কত বড়। শুধু এই একটা শব্দ দিয়ে মহাসমুদ্র রচনা করা যায়। কতকত সাহিত্যিক এই একটিমাত্র শব্দ দিয়ে অগুনতি সাহিত্য রচনা করে গেছেন। আমি কোনো কালেই রোম্যান্টিক গল্পউপন্যাস পছন্দ করতাম না। তেমন পড়াও হয়নি। তাই কোনো আইডিয়া নেই কীভাবে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে সেটা প্রকাশ করতে হয়। তোমাকে আমি যা বলি, সবকিছুই আমার এই উর্বর মস্তিষ্ক থেকে বের হয়। জানি না কতটা ভালোবাসতে পারি তোমাকে, কতটা পারি বোঝাতে। কিন্তু মন যতটুকু বলে, ঠিক ততটুকুই বলতে চেষ্টা করি। কিন্তু পুরোটা বলতে আর পারি কই! সবকিছু যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিছুকিছু অনুভূতি আছে, শুধু অনুভব করা যায়, বলা যায় না। কীভাবে আরো বেশিবেশি ভালোবাসতে হয়, শিখিয়ে দিয়ো তো আমাকে! আমি তোমায় আরো বেশি ভালোবাসতে চাই। তোমায় ছুঁয়ে থাকতে চাই। তোমার ওই ঠোঁটের স্পর্শ কতটা অনুরাগের সৃষ্টি করে, তা যদি জানতে! কী জানি, তুমি হয়ত আমায় ভালোবাসোই না, কিন্তু তোমার আলিঙ্গনে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত নিরাপত্তাবোধ জাগে। মনে হয়, কোনো প্রলয়, কোনো ঝড় আর ছুঁতে পারবে না আমায়। কিন্তু এই বোধটা তখনই জাগে, যখন দুজন দুজনের জন্যই হয়, দুজন দুজনকে ভালোবাসে। তাই এমন লাগা উচিত ছিল না। কেন লাগে, জানি না। মনেপ্রাণে সেটাই চাই বলেই হয়ত! তুমি কি বলতে পারবে, কেন হয়?

তুমি ‘চোখের বালি’ পড়েছ? আচ্ছা, তোমার আশালতাকে ভাল লাগে, না বিনোদিনীকে ভাল লাগে? সত্যি করে বলবে কিন্তু। এটা একটা ছোট্ট পরীক্ষা তোমার জন্য। দেখলে কত বড় দুঃসাহস আমার, তোমারও পরীক্ষা নিতে চাই। হিহিহি…….উত্তরটা দেবে কিন্তু, তুমি তো কোনো উত্তরই দাও না।

আমি তোমাকে ভালোবেসে ভিতরেভিতরে মরে যাচ্ছি। এই জিনিসটা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। তবুও নিজেকে ফেরাতে পারছি না। আচ্ছা, কোনোমতে একবার ভালোবেসে ফেললে আর ফেরা যায় না, তাই না?

একটা উপায় বলে দাও না! আছে কোন সল্যুশন? বলো না!

সিরিয়াসলি বলছি কিন্তু……..

তুমি তো অনেক মেয়েকেই এমনি এমনিই ভালোবাসি, ভালোবাসি বল। সত্যিসত্যি কাউকে ভালোবাসো না? স্পেশাল কেউ একজন? তোমার ভালোবাসা আর ভালোবাসার মানুষটাকে একটু দেখতে চাই। দেখাবে?

ভাল আছো তো তুমি? অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম। হাসছিলে তুমি, সেই বিশেষ হাসিটা, খুব চেনা সেই হাসিটা। অনেক ভাল লাগছে। হোক না ফোনের ওপারে, তবুও তো একটু দর্শন পেলাম। মাঝেমাঝে এমনি করে একটু কর্ণদর্শন দিয়ে আমায় ধন্য করবেন জনাব! তোমার কথা যখন ভাবি, মুচকিমুচকি হাসতে থাকি। কেন জানি হাসিটা এমনিই চলে আসে। আনন্দের হাসি, সুখের হাসি। তোমার ছবি যখন দেখি, মনে হয়, জাপটে ধরে গালে একটা পাপ্পি দিয়ে দেই। দাও তো গালটা একটু বাড়িয়ে। আহা, দাও না! বলোতো দিনে কতবার তোমাকে, মানে তোমার ছবি দেখি আমি? কত বললে? উঁহু, হল না। সারাদিনই দেখি। আমার ফোনের ওয়ালপেপারে তো তোমার ছবিই দেয়া, তাই সারাদিনই দেখতে হয়। আর তুমি তো জানো, সারাদিন ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকি আমি। আমি আসলেই কি ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকি, না তোমায় নিয়ে ব্যস্ত থাকি, বলোতো? আজ সকালে মনটা খুব খারাপ ছিল। বাজেবাজে স্বপ্ন দেখলে মন খারাপই হওয়ার কথা, তাই না? দেখলাম, তুমি আমাকে খুব অপমান করছ, অপমান করে একেবারে রিজেক্ট করে দিয়েছ। বলে দিয়েছ, কোনো অবস্থাতেই, এমনকি মরে গেলেও তোমাকে যেন আর কখনোই বিরক্ত না করি। তারপর স্বপ্নেই এত কেঁদেছি যে আমি লিখে বুঝাতে পারব না। চিৎকার করেকরে কেঁদেছি। তবুও তোমার মন একটুও গলেনি। তুমি আমাকে ফেলে চলে গেলে। তারপর আমি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে গেলাম সুইসাইড করতে। তবুও তুমি ফিরলে না। কী গুছানো স্বপ্ন! স্বপ্ন কি কখনো এত গুছানো হয়? এমন কেন দেখলাম? তুমি কি সত্যিই এতই নিষ্ঠুর? আজ অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছি। এই আশায়, যেন স্বপ্নের বাকি অংশটা দেখতে পারি যে তুমি ফিরে এসেছ। কিন্তু নাহ্, আর কিছু দেখলাম না। অযথাই এতক্ষণ শুয়ে ছিলাম। আমি খুব বোকা মেয়ে, তাই না? এই বোকা মেয়েটা কিন্তু তার বোকামি দিয়েও তোমাকে অনেকটা ভালোবেসে ফেলেছে, জানো? তুমি তার না, তবু স্বপ্নেও তোমাকে হারাতে সে ভয় পায়! ইসস্, এমন দিন যদি কোনোদিন আসত যে, তোমার হাতে হাত রেখে তোমায় জড়িয়ে ধরে বলতে পারতাম, “খুব ভালোবাসি তোমায়। তুমি কি আমার হবে? শুধু আমার? কক্ষনো ছেড়ে যাবে না!” আর তুমি আমার কপালে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলতে, “আমি তো শুধু তোমারই। কখনো ছেড়ে যাব না।” চোখ বন্ধ করে একবার ভাবলেই মনে হয়, আমার তো এই ভাবনাটুকু আছে, আর কী চাই! বাস্তবে তো কখনো আমার হবে না, জানিই তা, স্বপ্নেও কি চলে যেতে হবে আমাকে ছেড়ে? ওই স্বপ্নের জগতে একটু আমার হয়ে থাকো না, বাবু!

তোমাকে একদিন ফুচকা খাওয়াতে চেয়েছিলাম। পারলাম না। এখন আমি খাই, তুমি দেখ।

এই, তুমি বুড়ো হবে কবে, বলোতো? আমার মাঝেমাঝে অদ্ভুত ধরনের কিছু ইচ্ছে হয়। এই যেমন, এখন ইচ্ছে করছে তোমার বুড়ো হওয়া দেখতে। দেখতে ইচ্ছে করছে, বুড়ো হলে তুমি কি ওই মোটা ফ্রেমের চশমা পরবে? পাকা চুলে কেমন লাগবে তোমায়! হাতে কি লাঠি নিয়ে হাঁটবে? পানের বাটা নিয়ে পড়ে থাকবে আর সারাদিন ঠোঁট লাল করে পান খাবে? নাতিনাতনিদের নিয়ে জমিয়ে আড্ডা বসাবে? পান খেয়ে পানের পিক ফেলবে আর ওদের গল্প শোনাবে। ইসস্! কী মজার দৃশ্য! আমার এখুনিই তো তোমার নাতনি হতে ইচ্ছে করছে! মন দিয়ে তোমার গল্প শুনব আর বলব, এরপর কী হলো, দাদু? হি হি হি। আচ্ছা তোমার কি কোনো ফটো অ্যালবাম আছে? ফেসবুকে না, এমনি। ফটো অ্যালবাম যদি নাই থাকে তো এতএত ছবি তুলে কী লাভ? বিশাল বড় একটা অ্যালবাম কিনবে, বুঝেছ? তারপর বিভিন্ন ছবি দিয়ে সেটা পূর্ন করবে। প্রতিটা ছবির নিচে দুইএক লাইনে ছবিটার ব্যাপারে লিখে রাখবে। যখন বুড়ো হবে, নাতিনাতনি নিয়ে গল্পের আসর জমাবে, মাঝেমাঝে এই অ্যালবামটা নিয়ে বসবে। ওদেরকে প্রতিটা ছবি দেখাবে, আর তার পেছনের গল্পটা বলবে। আইডিয়াটা কেমন? ভাল না? অবশ্য তোমার ভাল না লাগারই কথা। তবে এই কথাটা আমি তোমাকে আজই প্রথম বলছি না। আরো একবার বলেছিলাম, আড়াই কি তিন বছর আগে। মনে আছে তোমার? জানি, নেই! তখন তুমি বলেছিলে, “আপনার আইডিয়াটা ভালই। ভেবে দেখব।” তুমি আমাকে আপনি করেই বলতে। হি হি হি। ভাবতে মজা লাগছে। আমি তোমার আপনি! হি হি হি।

সেদিন তোমার ‘দোভানা’ নিয়ে ওই লেখাটা পড়লাম, যেটা তুমি একটা কমেন্টে শেয়ার করেছ। শুধুমাত্র অতটুকু লেখা পড়েই ওই দোকানটার জন্য এত মায়া আর কষ্ট লেগেছে, তোমার যে কী পরিমাণ কষ্ট হয়েছে ওটা ছাড়তে, ভাবতেও পারছি না। কখনো যদি টাইম মেশিনের সন্ধান পাই, ওই সময়ে গিয়ে তোমার ওই স্বপ্নরাজ্যটা দেখে আসব। এক অদ্ভুত মায়া জন্মে গেছে ওটার জন্য।

আর শোনো, কাল যে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষের ছবি দিলে, ওকে আমার একদমই পছন্দ হয়নি। তোমার পছন্দ এত বাজে কেন? ওই মেয়ে বাদ, ঠিক আছে? তোমার ভালোবাসা তো শুধু শরীরকে কেন্দ্র করে। মনটাকে কেন্দ্র করে একটু ভালোবেসে দেখোই না, মনে হয় না ঠকে যাবে!

যাক্, শেষ পর্যন্ত ফিরলে। ভাল লাগছে। এই যে এখন তোমাকে কত কাছে লাগছে। আচ্ছা, এই আমি যে সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবি আর ‘তুমি তুমি’ করি, যদি কোনোদিন হারিয়ে যাই? মনে থাকবে আমায়, আমার স্পর্শ? নাকি তোমার অসংখ্য বান্ধবীদের ভিড়ে ভুলেই যাবে একেবারে? কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম, মানুষ এক জীবনে মোট দেড়শো জনকে মনে রাখতে পারে। এর বেশি পারে না। নতুন-নতুন মানুষ আর বান্ধবীদের মাঝে আমি হয়ত হারিয়ে যাব। তারপর অনেকঅনেক দিন পর যদি কখনো দেখা হয়ে যায়, চিনতে পারবে আমায়? মনে হবে কি, তোমাকে নিয়ে কত পাগলামি করতাম? মনে থাকবে, কতটা পাগলের মত ভালোবাসতাম? যদিও তোমার স্মৃতিশক্তি অনেক ভাল, তবুও আমার মত নগণ্য একজনকে কেনই-বা মনে থাকবে!

কয়েকটা দিন তোমার কাছ থেকে যখন দূরে ছিলাম, তখন খুব বেশি কষ্ট হত। সারাটাক্ষণ তোমার কথা ভেবেভেবে কষ্ট পেতাম। এখন কষ্ট পাই এটা ভেবে, যখন আবার দূরে চলে যাবে, তখন কীকরে থাকব! যতই ভালোবাসি না কেন, তোমাকে তো আর আমি বেঁধে রাখতে পারব না। সেই অধিকার বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই আমার। একদিন না একদিন তো চলে যাবেই তুমি। সেদিন কষ্ট পাব খুব। হয়ত তোমায় কিছু বলব না, কিন্তু আমি ভেতরেভেতরে মরেই যাব! তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা দিনেদিনে শুধু বাড়ছেই। তুমি যদি কখনো নাও থাকো, এই ভালোবাসা একবিন্দুও কমবে না, বরং আরো বাড়বে। তবে একটা কথা ঠিক, কাছে থাকলে ভালোবাসার তীব্রতাটা ঠিক বোঝা যায় না। তুমি যখন দূরে চলে গিয়েছিলে, তখনই উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা, বুঝতে পারছিলাম, নিজের অজান্তেই কী পরিমাণ ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়, তুমি আমার জীবনে কতটা জায়গা দখল করে নিয়েছ। ভেবেছিলাম, কখনো কোনো কিছুই বলা হবে না। কিন্তু কীভাবে যেন সবকিছু বলে দিলাম। ঠিক হয়নি, না? নিজের অনুভূতিটাকে নিজের মধ্যেই রাখা উচিত ছিল। তাহলে আর এভাবে দিনেদিনে বাড়ত না, একদিন ঠিকই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিতে পারতাম। আজ আর সেটা সম্ভব না। তোমাকে আমি ভালোবাসতাম, ভালোবাসি, আর আগামী সবকয়টা জন্মেই ভালোবাসব।

হয়ত একদিন সবই থাকবে কেবল স্মৃতি হয়ে। সেই নৌকায় ঘুরে বেড়ানো, চরে খালি পায়ে হাঁটা, চড়ুইভাতি। আমার ছোট্ট দ্বীপটায় আর পড়বে না কারো পদচিহ্ন, খাঁখাঁ নীরবতায় হয়ত কিছু দীর্ঘশ্বাস খরচ হবে, কৃষ্ণচূড়ার ডালগুলো আর রাঙা হবে না কখনো। পূরণ হবে না গ্রামের মেলায় যাওয়ার স্বপ্ন, রেশমি চুড়ির রিনিরিনি আওয়াজ আর পান খেয়ে ঠোঁট লাল করার মত স্বপ্নগুলো। ডায়রির পাতাগুলোও হয়ত হলদেটে হয়ে আর পড়ার যোগ্যই থাকবে না। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হয়ত ভাবব, আজ আর স্বপ্নগুলো নেই, কিন্তু ভালোবাসাটাও কি নেই? সেটা তো জন্মজন্মান্তরের, ফুরিয়ে যাওয়ার নয়। কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে। কেন পাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। তুমি কি বলতে পারবে কেন আমার এত কান্না পাচ্ছে?

নির্মলেন্দু গুণের ওই কবিতাটা পড়েছ? ‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই। দুইকে আমি এক করি না, এককে করি দুই।’ তুমি তো অনেক পড়। আমি অত পড়ি না। শুধু যে পড়ি না, তা না। কোনো কাজের কাজই করি না। যা করি, সবই অকাজের। অনেকটা শুধু রূপকথার গল্পপড়া আর টিভিতে শুধু কার্টুন দেখার মত ব্যাপার। যা-ই হোক, যা বলছিলাম। লেখাটা শুরু করেছিলাম আরো তিনচার দিন আগে। কোনো কারণে মনমেজাজ খারাপ ছিল, তাই আর লিখিনি। আজ ফোনের নোটস্ ওপেন করতে গিয়ে এটা চোখে পড়ে। ভাবলাম, বলেই যাই কিছু অকাজের কথা! আমি তো সবসময়ই তোমাকে এতএত অকাজের কথা বলে যাই, আর তুমি অসীম ধৈর্যের সাথে পড়ে যাও। তোমার জায়গায় আমি হলে কখনোই পড়তাম না এসব। আমার মাঝে আসলেই কোনো সিরিয়াসনেস কাজ করে না। হয়ত করে, আমি সেটা বুঝি না।

যেতে পারি

যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি

কিন্তু, কেন যাবো?

—শক্তি চট্টোপাধ্যায়

দিতে পারি

যে-কোন মানুষকেই আমি সময় দিতে পারি

কিন্তু, কেন দেবো?

—তুমি

এই ‘কেন’টা বোঝার নামই ম্যাচ্যুরিটি। ওই যে তুমি বললে না……ম্যাচুরিটি? ওইটা আমার মাঝে কাজ করে না। তাইতো তুমি আমার সাথে কথা বলতে না চাইলেও জোর করে কথা বলি, তুমি সময় দিতে না চাইলেও জোর করে সময় নিই। তোমার ওই ‘কেন’টার মানে আমি বুঝি না। হয়ত বুঝতে চাইও না। আমি যেদিকে ইচ্ছে সেদিকেই চলে যেতে চাই। তবে একা না, তোমাকে নিয়ে। তুমি সাথে থাকলে তো দুনিয়ার শেষ প্রান্তেও চলে যাওয়া যায়। ছোটবেলায় তুমি রূপকথার গল্প পড়েছ না? কখনো মনে হয়নি, পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় চেপে যদি হারিয়ে যাওয়া যেত! অথবা সুখনদীতে যদি সাঁতরে বেড়ানো যেত? মনে হয়নি কখনো প্রজাপতির সাথে যদি নাচতে পারতে অথবা পাখির সুরে গান গাইতে পারতে! এমনভাবে হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না, বলো! মিথ্যে বলবে না কিন্তু! আমি জানি তোমার ভেতরে একটা বাচ্চা লুকিয়ে আছে। অবশ্য তোমার এই বাচ্চামিটাই আমার বেশি ভাল লাগে। আচ্ছা বলোতো, এই রূপকথার গল্পের কারো প্রেমে কি কখনো পড়নি তুমি? সিনড্রেলা, স্নো হোয়াইট, রুপানজেল অথবা অ্যানাসতাসিয়া? এদের কারো জন্য রাজপুত্র হতে ইচ্ছে করেনি কখনো? অবশ্য তুমি তো সত্যিসত্যিই একটা রাজপুত্র! তোমার রাজপুত্র হতে রূপকথার রাজ্যে যেতে হয় না। তুমি আমার রাজপুত্র। হয়ত রূপকথার রাজকন্যাদের মত সুন্দরী আমি নই, অত বুদ্ধিমতীও নই। তবুও, তুমি না চাইলেও তুমিই আমার রাজপুত্র। আমার কল্পনার রাজপুত্র। তোমায় নিয়ে কল্পনায় আমি কখনো পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় উড়ে বেড়াই, কখনোবা পরীর রাজ্যে ঘুরে বেড়াই। আমি জানি, আমি অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ। সারাক্ষণ কল্পনার রাজ্যেই ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসি। আগে ঘুরতাম একাএকাই। কিন্তু এখন সেই কল্পনার রাজ্যটাকে তুমি জয় করে নিয়েছো। এখন আমি ঘুমিয়েও স্বপ্ন দেখি তোমায় নিয়ে, জেগে থেকেও স্বপ্ন দেখি তোমায় নিয়ে। আমার মাথায় সারাক্ষণ তুমিই ঘুরতে থাক। অন্য সব চিন্তা আসে কেবলই অপশনাল হয়ে। অবশ্য এই কল্পনায় ভাসা আর স্বপ্নদেখা ছাড়া করবোটাই-বা কী? তোমায় তো শুধু চোখ বন্ধ করে অনুভব করা যায়, হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যায় না। মনে হয়, তুমি থাক ওই ওপাশের পল্লীতে, ওখানে আমার যাওয়া বারণ। আচ্ছা, আমার ভালোবাসা কি তোমাকে ছুঁতে পারে এতটুকুও? বুঝতে পার কি কখনো এই ভালোবাসাটা? নাকি আর দশটা মানুষের মতই ন্যাকামি মনে হয়? যা-ই মনে হোক না কেন, আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবাসবোই!

বাবুসোনা, তুমি কি জানো, তোমাকে খুব মিস করছি আমি? শুধু এখন না, সারাক্ষণই মিস করতে থাকি তোমাকে। ইচ্ছে হয়, তোমার সামনে বসে থেকে অপলক দৃষ্টিতে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি, নয়ত তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকি, অথবা তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাই। এই তুমি আমাকে একটুও মিস কর না? বলো না! ধুউর, তুমি কেন মিস করবে! যাও, মিস করতে হবে না! আচ্ছা, তুমি আমি যদি একসাথে থাকতাম, আমাদের কেমিস্ট্রিটা কেমন হত, বলোতো! তুমি কি তখন আমাকে ভালোবাসতে? আমি জীবনের অত জটিল নিয়মকানুন বুঝি না। তবে মনে হয়, অমন কিছু হলে ভাল হত না! তুমি আর আমি সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের দুজন মানুষ। হত না একসাথে থাকা। তারচে’ এই-ই তো ভাল। ভাল আছো তুমি, ভাল আছি আমিও। মাঝের দূরত্বটা কি সত্যিই আরো দূরত্ব বাড়াচ্ছে? না ভালোবাসা বাড়াচ্ছে?

বড়ো সুন্দর করে বল তুমি!

এত সুন্দর করে বলেও কি বোঝাতে পারি তোমাকে?

আমি বুঝি।

বুঝ না। যতটা বোঝাতে চাই, তার কিছুই বোঝ না।

বকা দিচ্ছ?

আমি তোমাকে কখনো বকা দিতে পারি?

আচ্ছা যাও, তুমি সব বুঝ।

হি হি হি এইবার ঠিক আছে। তুমি লুডু খেলতে পার? তোমার সাথে লুডু খেলতে ইচ্ছে করছে।

পারি।

খেলবে আমার সাথে?

হুঁউউউউউউ……

চলো খেলি। কবে খেলবে?

যেকোনো সময়।

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহস্পতি কবে ফ্রি আছো? মানে, অফিসে কাজ কম?

প্রতিদিনই। আবার একদিনও না।

মানে কী?

মানে মিয়াঁওওওওওও……

আচ্ছা যাও, খেলব না। তুমি ব্যস্ত মানুষ।

বকা দিলে কান্না করে দিব।

কান্না করোতো একটু, দেখি। তোমার কান্না কখনো দেখিনি। তোমার হাসিটা যত কিউট! কান্নাটাও অবশ্যই সুন্দর হবে। কাঁদো!

ম্যাওঁওওওওওওও!

আমার কিউট মিষ্টি বিল্লি বাচ্চাটা! ওলে বাবা! নাআআআ……কাঁদে না সোনা!

আবোলতাবোল বকছি। আসলে কী জানো, মিস করছি খুব! তোমায় মিস করতে আমার খুব ভাল লাগে। ভাবতেই পারো, এ আবার কেমন ভাললাগা! এটা হলো কষ্টের ভাললাগা। তোমাকে মিস করে করে কষ্ট পাই। আর তোমার জন্য কষ্ট পেতে ভাল লাগে। বুঝেছো কিছু? না বুঝলে থাক। বুঝতে হবে না। ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, তাই তোমার কাছে ছুটে আসি!’ অপূর্ব একটা গান! গানটার গীতিকার কে, জানো তো? লতিফুল ইসলাম শিবলী। নাটোরের ছেলে। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা। হাসতে দেখো গাইতে দেখো। বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি। তুমি আমার প্রথম সকাল। এমন আরো অনেক ভাল গান উনি আমাদের দিয়েছেন। উনার গার্লফ্রেন্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে থাকতেন। একবার দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে। তো উনি রাগ ভাঙাতে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেলেন। হলের সামনে দুজন দাঁড়িয়ে। উনি খুব চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাগ ভাঙাতে আর ওদিকে মেয়ে তো ঠিকমত কথাই বলছে না! একসময় মেয়ে রেগেমেগে বলল, “যাও এখান থেকে! কেন এসেছ আমার কাছে? কষ্ট পেতে? আমি তো তোমাকে শুধু কষ্টই দিই! চলে যাও!” “হ্যাঁ, কষ্ট পেতেই তো এসেছি………” এইটুকু বলেই শিবলী উল্টোদিকে দৌড়! কোনো মেয়ে যখন তার প্রেমিককে বলে, চলে যাও! তার মানে কিন্তু থেকে যাও! যেকোনো অভিমানি মেয়ের মুখে এক, অন্তরে আরেক। প্রেমিকের এমন আকস্মিক বাধ্যতায় বেচারি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চিৎকার করতে লাগল, এই! কই যাচ্ছ! যেয়ো না! শোনো! কে শোনে কার কথা! শিবলী থামলেন না। উনাকে তখুনিই কাগজকলম নিয়ে বসতে হবে। গীতিকবির মাথায় গান এসেছে। সে গান মনে নয়, কাগজে রাখতে হবে। দ্রুত! দেরি করলে কথাগুলি চলে যাবে, আর ফিরে আসবে না। শব্দরা বড্ড অভিমানি হয়। আদর করে কাছে না টানলে অন্য কারো কাছে চলে যায়, হারিয়ে যায়। যারা লিখে, তারা শব্দের এ প্রতিশোধের খোঁজ জানে। প্রেমিকার মন তো ভাল করে দেয়াই যাবে, ব্যাপারটা পরে বুঝিয়েও বলা যাবে। কিন্তু গানের কথাগুলি পালিয়ে গেলে তো ওদের আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। কখনোই না! ওই মুহূর্তে উনার অমন অদ্ভুত আচরণ যে কারো কাছেই পাগলামি মনে হবে। সৃষ্টিশীল মানুষদের পাগল হয়ে বাঁচতে দেয়াই ভাল। কেউ যদি আমাদের মত স্বাভাবিক হয়, মানে কারো সব আচরণই যদি আমরা আমাদের চোখে বুঝে ফেলতে পারি, তবে এটা নিশ্চিত, সে মানুষটি ভিন্ন কিছু নয়, আমাদেরই মত একজন। আর কেউ অন্য সবার মত, ব্যাপারটার মানেই হল, ওর কাছ থেকে কারো আলাদা কিছু পাওয়ার নেই। সৃষ্টিশীল মানুষরা অমন না হোক। তার চাইতে ওরা অমন পাগল হয়েই থাক। পাগলামি থেকে যদি সুন্দর আর মহৎ কিছু হয়, তাহলে তো পাগলামিই ভাল! আমরা সুস্থ হয়ে কী এমন করতে পারছি মনে রাখার মত, মানুষকে মুগ্ধ করে দেয়ার মত? দরকার হলে তুমি পাগল হয়েই থেকো, তবু লেখাটা বন্ধ কোরো না, প্লিজ! আমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারি, সাধারণদের চোখে আর বোধে সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রই ব্যাখ্যাতীত, অতএব উদ্ভট, আজব, ছন্নছাড়া। জিনিয়াস কাউকে বুঝতে হলে জিনিয়াস হতে হয়। সাধারণ কারো অভিজ্ঞতায় বা বিচারে জিনিয়াস কাউকে বোঝা অসম্ভব! জিনিয়াসদের ওদের মতই থাকতে দেয়া উচিত। ওদের কাজে মাতব্বরি প্রায়ই অক্ষমের ঈর্ষা বা ক্রোধ ছাড়া আর কিছু নয়।

শোনো, তুমি আমার কাছ থেকে দূরেদূরে থাকবে। আমি তোমাকে মিস করেকরে কষ্ট পাবো। ঠিক আছে? ভাবছো, চেয়েচেয়ে কষ্টই নিচ্ছি কেন? এত ভাবতে হবে না। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসাই কেন নিতে হবে? ভালোবাসাগুলো নাহয় তুমি অন্যদের জন্যই বরাদ্দ রেখো, আমার জন্য কষ্টটা থাকুক। কষ্ট পেতেপেতে ভালোবাসব তোমাকে। কষ্টে পুড়ে ভালোবাসা খাঁটি হয়, জানো? সত্যি কিন্তু! আরেকটা ব্যাপার আছে। মানুষের মন খুব স্বার্থপর ধরনের হয়। আমি যদি তোমার কাছে একবিন্দু ভালোবাসাও পাই, মন আরো বাকিগুলোও পেতে চাইবে, হোক তা একাএকাই। তারপর না পেয়ে কষ্ট পাবে। ঘুরেফিরে সে-ই কষ্টই। তো ভাল না একেবারেই সেটা পাওয়া! অভ্যেস তো হয়ে যাচ্ছেই!

আমি দিনে কয়েকশবার তোমার মেসেজ পড়ি। তুমি যতক্ষণ রিপ্লাই কর না, ততক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়েই থাকি। এটা একটা বদঅভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। কীকরে এই অভ্যাসটা কাটানো যায়, একটু বলবে, প্লিজ?

একটাসময় যখন তুমি কষ্ট দিতে, খুব কান্না করতাম। কিন্তু এখন তোমার দেয়া কষ্টটাকেও ভাল লাগে, যদিও আর আগের মত কষ্ট দাও না। একটা লেখায়, সম্ভবত জুন-জুলাই ২০১৫’র দিকে লেখা, ‘লাইফ, নট গ্রেডস’ (ভুল হলে মাফ চাই।)-এ তুমি একবার বলেছিলে, এ পৃথিবীতে কেবল কান্নাই ব্যক্তিগত। কান্না সবার সাথে ভাগাভাগি করতে হয় না, ব্যক্তিগতই রাখতে হয়। অথচ দেখো, আমি বোকার মত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো তোমাকে বলে দিচ্ছি। তুমি যে আমাকে বোকা বল, তা কি আর এমনিএমনি! কিন্তু জানো, তোমাকে নিয়ে আমার আরো অনেক অনেক অনেক বোকামি করতে ইচ্ছে করে, তুমি আমাকে আরো বেশি বোকা মেয়ে, বোকা মেয়ে বলবে, ওটা শুনতে আমার ভাল লাগে। হি হি হি। আমি তোমার সবকটা ভিডিও দেখেছি ইউটিউবে। কিন্তু কোনো কাজে দেয়নি। কেন, জানো? তখন তুমি কী বল, তার দিকে আমার কোনো মনোযোগই থাকে না, একদৃষ্টে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। হঠাৎ মনে হয়, ভিডিও শেষ! আবার শুরু করতে গেলে একই প্রবলেম। তোমাকে দেখতে এত ভাল লাগে কেন আমার? যতই দেখি, আরো দেখতে ইচ্ছে হয়। এটা কী ধরনের পাগলামো, বলোতো! আমি সারাদিন তোমার কথা ভাবি বলে হয়ত তোমায় একটু বেশিই বিরক্ত করে ফেলি। সেরকম কিছু যদি মনে হয় এখন অথবা ভবিষ্যতেও, দয়া করে আমায় জানিয়ে দিয়ো। আমি তোমার বিরক্তির কারণ হতে চাই না কোনোদিন।

তোমার বাসা কেন এত দূরে? আমার বাড়ির পাশে যদি থাকত, কত ভাল হতো! আমার আর তোমার রুমের জানালা পাশাপাশি থাকত। আমি তোমায় একনজর দেখার আশায় সারাদিন জানালার পাশে বসে থাকতাম। হাতে একটা বই থাকত, তুমি দেখে ফেললে চোখ নামিয়ে বই পড়ার ভান করতাম আর আড়চোখে দেখতাম তুমি কী কর। তুমি হয়ত রেগে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করে দিতে। হতে পারত, তোমাদের আর আমাদের ছাদ পাশাপাশি। গাছ লাগানোর বাহানায় সারাক্ষণ অপেক্ষা করতাম কখন তুমি আসবে, তোমায় একনজর দেখতাম। হয়ত তোমার কাছে প্রাইভেট পড়তে যেতাম। তুমি যখন পড়াতে, কানে ঢুকতো না কিছুই। সারাক্ষণই ড্যাবড্যাব করে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তারপর পড়া ধরলে পারতাম না কিছুই। তুমি ঠাস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিতে আমার গালে। চড় খেয়ে গালে হাত বুলাতে-বুলাতে আর চোখের পানি ফেলতে-ফেলতেও তাকিয়ে থাকতাম তোমার দিকে মুগ্ধ নয়নে, মনে আসত, তোমার চড়ও কত্ত কিউট! কোনো কারণে তুমি যদি শহর ছেড়ে চলে যেতে, পেছনে দাঁড়িয়ে নির্বাক চোখের জল ফেলে যেতাম। আর কখনো-বা জানালাটা খোলা থাকত না। ছাদের গাছগুলো পানির অভাবে হয়ত নির্জীব হয়ে পড়ত, তবুও ছাদে কখনো আমার পা পড়ত না। কী ভাবছো? কল্পনা করছি, তাও কষ্টের কেন? কারণ, তোমাকে ভালোবেসে কষ্ট পাওয়ার মাঝেও এক ধরনের আনন্দ আছে। ওই চোখের পানির মাঝেও এক ধরনের সুখ আছে। সেটা তোমায় ভালোবাসার সুখ।

আমি আগে সবসময় ভালোবাসা আর ইমোশনের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার ব্যাপারটা গুলিয়ে ফেলতাম। আমি খুবই ছেলেমানুষ আর বোকা ধরনের তো, তাই। তুমি কি জানো আমার সবচেয়ে খারাপ গুণ কী? আমার সবচেয়ে খারাপ গুণ হলো, আমি মানুষকে খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলি। এমনকি বিবেক বাধা দিলেও মন দিয়ে বিশ্বাস করে ফেলি। কেউ একজন তো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যাওয়ার সময় ফ্রি অ্যাডভাইস দিয়ে গেছে, “এত বোকামি ভাল না, একটু চালাক হও, নয়ত জীবনে পদেপদে ঠকতে হবে।” এখন তুমিই বলো, এখন আমি বোকামি বাদ দিয়ে চালাক হওয়ার ট্রেনিং নেবো? আমার আরেকটা খারাপ গুণ, কারো উপর রাগ করে থাকতে পারি না। আচ্ছা, তোমার কী মনে হয়, তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস, তা ভালোবাসা? না ইমোশন? অতিঅবশ্যই ভালোবাসা! তোমায় আমি ভীষণ ভালোবাসি, ভীষণ। তবে তার সাথে ইমোশনটাও মিলেমিশে আছে। এই ইমোশনটাই আমার ভালোবাসাটাকে পূর্ণতা দিয়েছে। এখন আমি ভালোবাসা আর ইমোশনটাকে আলাদাভাবে বুঝতে পারি। আর বুঝি বলেই জানি, তোমায় কতটা ভালোবাসি, আর তোমার প্রতি কতটা ইমোশন কাজ করে!

আমি তোমায় ভালোবেসে যাই—প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি প্রশ্বাসে। ভালোবেসে যাবো আগামি বছর, আগামি যুগ, আগামি শতাব্দী, আগামি জন্ম জুড়েও। আমার কাছে তুমি ‘মিস্টার পারফেক্ট’। আগে অনেক শুনেছিলাম, কোনো মানুষই পারফেক্ট হয় না। কিন্তু আমার কাছে তোমায় পারফেক্টই লাগে। তোমার সবকিছুই ভাল লাগে, সঅঅব! যা কর, যেভাবে কর, যা কিছু বল, তোমার পার্সোনালিটি, সব কিছুই পারফেক্ট। বুঝতে পেরেছ, মিস্টার পারফেক্ট?

আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সম্পর্ক হলো এই ভালোবাসার সম্পর্ক। আচ্ছা, তোমার কী মনে হয়, ভালোবাসার সাথে শারীরিক চাহিদার সম্পর্ক কতটুকু? কোনোই সম্পর্ক নেই? নাকি ভালোবাসা কিছুকিছু শারীরিক সম্পর্ককে বৈধতা দানের একটা উছিলা মাত্র। মুখেমুখে শুধু ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয়ে যায়? ভালোবাসার পরিণতি দুজনের মিলন হতে পারে, কিন্তু শুধু মিলনের বৈধতাদানের জন্য ভালোবাসা হতে পারে না। মিলনের বৈধতাদানের নাম ভাললাগা হলে ঠিক আছে, কিন্তু নামটা ভালোবাসা হলেই শুরু হয়ে যায় যত বিপত্তি! অতোটা কপট না হলেই কী নয়?

ইসস্! কী নির্লজ্জ আমি! কী বলে যাচ্ছি এসব! আচ্ছা, সরি। বলব না আর এসব।

শোনো, আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু কখনো কোনো বাঁধনে বাঁধতে চাই না। তোমাকে আমার মুক্ত পাখির মত আকাশে উড়তে দেখতেই ভাল লাগে। তুমি খাঁচায় বন্দি হওয়ার জন্য নও। আকাশের দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে তোমার ওড়ার আনন্দ দেখব আর ভালোবাসব। না-ইবা ছুঁতে পারি! খাঁচায় রেখে সারাক্ষণই ছুঁয়ে থাকাটা কি জরুরি? প্লিজ, কখনো কোনো খাঁচায় নিজেকে বন্দি করে তোমার আপন সত্তাটা নষ্ট করে ফেলো না।

তুমি কি জানো, ভালোবাসা পাওয়ার চেয়ে ভালোবেসে যাওয়াতে সুখ বেশি? আমিও জানতাম না। কিন্তু ইদানিং আমার তা-ই মনে হয়। তোমাকে আমি এত বেশি ভালোবাসি, কত যে সুখ পাই এই ভালোবাসার অনুভূতি থেকে, তুমি আমায় কখনো ভালো না বাসলেও আফসোস থাকবে না। তোমার জন্য আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাও বাজি রাখতে পারি, এমনকি আমার জীবনও। জানো না তুমি সেটা? জানোই তো! তাহলে তো তুমি বুঝ তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি! ভালো তো অনেকেই বাসে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে কয়জন, বলো? জানি না কতটা ভালোবাসতে পারি, তবে নিজের সর্বস্ব দিয়েই ভালোবাসি তোমায়।

আচ্ছা, আমি দেখতে কি খুবই কুৎসিত? দেখতে একদম কুৎসিত হাঁসের ছানার মতন? সত্যি করে বলবে, মিথ্যা বলবে না কিন্তু। মন রাখার জন্য না।

গতকাল সন্ধে সাতটা থেকেই বৃষ্টি ঝরছে, ঝরেই যাচ্ছে। এখনো এই ভেজাভেজা আবহাওয়াতে ভেজামন নিয়েই বিছানা ছাড়লাম। বেলকুনিতে উঁকি দিতেই ভেজাবাতাসের ঝাপটা, ভেজারাস্তা আর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি মনটাকে আরো কেমন করে দেয়! দেয় না, বলো? মেঘ ডাকছে দীর্ঘ আর ধীর লয়ে। আজকের সমস্তটা দিন যে এমনই যাবে, তা বোঝাতে।

আজ ঘুম ভাঙল যখন, তখন ঘুমের ওপারে বৃষ্টির জলে ভেসে যাচ্ছে একটা চিঠি, সেটা তোমার হাতের লেখা। না আর কাউকে নয়, চিঠির সম্বোধনে যে নামটা সবচেয়ে মানানসই, তা-ই আছে। স্বপ্নে চিঠিটা যখন আমি পড়ছি, তোমার আর তোমার প্রেয়সীর মুখটা নেপথ্যে ভাসছিল, সিনেমায় দেখায় যেমনটা—ফ্লাশব্যাকে। কাউকে এমন চমৎকার চিঠি তোমার পক্ষে লেখাই মানায়। একটা উপহারের উল্লেখ ছিল চিঠিতে, একটা সোনার চেইনে ঝোলানো হার…….ভালোবাসার সুনিশ্চিত নিদর্শন। লিখেছ, যদি ওটা (ওই হার) পরো, তবে বুঝব, তুমি রাজি! চিঠিটা পড়া শেষ হওয়ার আগেই হাত থেকে গড়িয়ে পড়ে গেলো আর কতকিছু ভাবতে-ভাবতে ভেসেও গেলো কোথায় জানি!

এসবের কোনো মানে হয়! কোন মানে নাই। এখন বৃষ্টির গতি বেড়েছে, বেশ ঝিরিঝিরি টুপটাপ শব্দও হচ্ছে।

ইদানিং তোমাকে আমার খুব আপনআপন লাগে। মনে হয় খুব কাছের একজন মানুষ। আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। এমন কেন মনে হয়, বলোতো? তুমি তো আমার কাছের কেউ নও! ইন ফ্যাক্ট অনেক অনেক অনেক দূরের মানুষ, যাকে নিয়ে শুধু স্বপ্নই দেখা যায়, যাকে শুধু স্বপ্নেই ধরা যায়। তবুও মনে হয় এমন। তোমার ওই চোখের দিকে তাকালে মনে হয় কত আপন, কত চেনা, কত কাছের! হতে পারে সারাদিন তোমায় নিয়ে ভাবি বলেই আমার সাবকন্সাস মাইন্ড তোমাকেই তার সবচেয়ে আপন মানুষ বলে ধরে নিয়েছে। জেগে থাকতে তো তুমি সারাক্ষণই আমার মনমস্তিস্ক দখল করে রেখেছ। কিন্তু তুমি কি জানো, ঘুমানোর সময়ও তুমি এতটুকু ছাড় দাও না? যতক্ষণ ঘুমাই, তোমাকেই দেখতে থাকি। আজও দেখেছি। দেখেছি যে…….থাক, বলব না। সমস্যা হচ্ছে যে, তোমাকে নিয়ে জেগে থেকে যে স্বপ্নগুলো দেখি, সেগুলো খুব সুন্দর হয়, কিন্তু ঘুমিয়ে যেগুলো দেখি, সেগুলো খুব বাজে হয়। তুমি বললে, আমি নাকি কয়েক কোটি বছর তোমাকে লিখি না! কয়েক কোটি না, জনাব, মাত্র তিন দিন! তিন দিন লিখিনি। কেন, জানো? তোমার সেই স্বপ্নের কারণে। বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি। আর সেটা দেখে তোমার উপর খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই চুপ ছিলাম। কী ভাবছো? স্বপ্ন দেখেও কি মানুষের মন খারাপ হয় নাকি? আমার হয়। আমি স্বপ্নটাকে বাস্তবের সাথে মিলাতে চেষ্টা করি, সেজন্যই হয়ত। আচ্ছা, আমাকে কেমন মেয়ে মনে হয় তোমার? ভাল? নাকি খারাপ? শোনো, আমি কিন্তু মোটেই ভাল মেয়ে নই। ভীষণ হিংসুটে ধরনের একটা বাজে মেয়ে। তোমার সবগুলো বান্ধবীর প্রতি হিংসে হয় আমার। এত্তএত্ত বান্ধবী! তবুও চোখ বন্ধ করে এতটুকু জেলাসি গিলে নেই। কিন্তু ঘুমালে যখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও সব ভিজ্যুয়ালি দেখি, কেমনটা লাগে, বলোতো! (রাগ কোরো না, প্লিজ, এই জেলাসিটুকু আমি বাদ দিতে পারছি না। কী করব! আমার ওই সাবকন্সাস মাইন্ডটা ধরে নিয়েছে, তুমি শুধুই আমার। ও তো কিছু বোঝে না, ও একটা বোকা, তাই ও কেবলই তোমাকে নিজের করে পেতে চায়। কিন্তু কন্সাস মাইন্ড জানে, এটা কত বড় একটা মিথ্যা! কিন্তু আমি যে প্রতিনিয়ত এই মিথ্যার সাথেই থাকতে চাই, এই মিথ্যাটাকে ঘিরেই বাঁচতে চাই, এই মিথ্যাটা দিয়েই সুখ কুড়াতে চাই। বাধা দেবে কি আমায়?) তুমি কি জানো, তোমার এক চিলতে হাসির জন্যও সবকিছু হাসিমুখে ছেড়ে দেয়া যায়? তোমার সেদিনের কেক কাটার ভিডিওটা সেভ করে রেখেছিলাম। কেন? কোনো কারণ নেই। শুধু তোমার ওই হাসিটা দেখতে। যতবার দেখি, ততবারই হার্টবিট মিস হয়ে যায়, তবু আবারও দেখি। তোমার এক মুহূর্তের হাসিটুকুই তোমার প্রেমে পড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। শুধু অতটুকু দেখেও একজীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। তোমার পেজের নতুন কভার ফটোটা দেখলাম। একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছিল। এই ছবিটা দেখে আরেকবার যদি তোমার প্রেমে পড়তে চাই, অনুমতি পাওয়া যাবে তো?

আমার উপর কখনো রাগ কোরো না, বাবু। আমি বুঝেশুনে কখনো তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। যা দিই, নিজের বোকামির জন্য দেই। তুমি কষ্ট পেলে মন খারাপ করলে তোমার চেয়ে বেশি কষ্ট আমার লাগে।

আমি কেন তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম, বলোতো? কী জাদু করেছ তুমি আমাকে? আমি মানুষটা কেমন যেন অনুভূতিশূন্য হয়ে গিয়েছিলাম। কাউকেই ভাল লাগতো না। সবাইকেই বিরক্ত লাগত। কেউ একটু আগ্রহ নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইলে দ্বিতীয়বার আর ভাবতাম না, সাথেসাথেই ব্লক করে দিতাম। মনে হত, সামনে পেলে সাথেসাথে দুইগালে ঠাসঠাস দুইটা চড় বসিয়ে দিতাম। কী বিরক্তিকর! অথচ সেই আমি আজ কী করছি! নিজের কাছেই নিজেকে অচেনা লাগছে। সারাদিন তোমাকে নিয়ে পড়ে থাকি। তোমার কথা ভাবতেভাবতে দিন যায়, রাত ফুরায়। প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমাকে অনুভব করি। যেদিকে তাকাই, তোমাকেই দেখি। চোখ বন্ধ করে ফেললে মনে হয়, তুমি আছো আরো কাছে। সারাদিনই তোমায় মিস করতে থাকি। যখন বেশি খারাপ লাগে, চোখ বন্ধ করে অনুভব করি তোমায়। মনে হয়, এইতো তুমি, কতো কাছে, আমার পুরোটা সত্তা জুড়ে। সত্যি বলছি, তখন আমি তোমার নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পাই, তোমাকে এত কাছে লাগে। কেন এমন হয়, বলোতো? কেন এতটা ভালোবাসলাম তোমাকে? নিজেকে কিছুতেই বোঝাতে পারি না, কিছুতেই ফেরাতে পারি না। অধিকার নেই যেখানে, সেখানে অধিকার চাওয়াটা সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার। তবুও তোমার কাছে এতটুকু অধিকার চাই। তোমাকে ভালোবাসার অধিকার। এর বাইরে বিন্দুমাত্রও কিছু না। দেবে না, বলো? তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবে না, আমিই শুধু তোমাকে ভালোবাসবো। তুমি যদি চাও, কখনো তোমার আশেপাশেও যাব না। শুধু দূর থেকেই ভালোবাসবো। জানি, অনুমতি নিয়ে তো আর ভালোবাসা যায় না। তবুও, চাই তোমার অনুমতি। তোমার অনুমতি না নিয়েই তোমাকে আমি আমার কল্পনার রাজ্যের রাজা করে রেখেছি, তোমায় আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে ফেলেছি। যদি এতে তোমার অনুমতি না থাকে, তবে তোমায় ভালোবেসে আমি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছি। সেই শাস্তিটাই দাও আমায়।

তুমি যে আমাকে বোকা মেয়ে বল, জানি না, সেটা সত্যিসত্যি বল, নাকি মজা করে বল। কিন্তু আমি সত্যিই অনেক বোকা একটা মেয়ে। সত্যিসত্যি কিন্তু! একটার পর একটা বোকামো করে যাই। যখন বোকামি করি, তখন বুঝি না। বুঝি অনেক পরে, যখন আর তা শোধরানোর কোনো উপায় থাকে না। এর অনেক অনেক অনেক উদাহরণ আছে। কয়টা শুনবে? এই যেমন, এখন সবচেয়ে বড় বোকামিটা করছি তোমাকে নিয়ে। অন্য বোকামির সাথে এই বোকামিটার একটা পার্থক্য আছে। তা হলো, অন্য বোকামিগুলো করার সময় বুঝি না। আর এই বোকামিটা বুঝতে পারছি, তবুও ছাড়তে পারছি না, করে যাচ্ছি আর করেই যাচ্ছি। আচ্ছা, তুমিও তো বুঝতে পারছ আমি কত বড় একটা বোকামো করছি, তবুও তুমি আমাকে আটকাও না কেন? আমি জানি, এর জন্য একদিন অনেক বড় মূল্য দিতে হবে আমাকে। কিন্তু তবুও সেটা কেয়ারই করছি না। তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, মনে আছে সেদিনটার কথা? আমার মনে আছে। প্রতিটা ক্ষণ, প্রতিটা মুহূর্ত। তোমায় সেই প্রথম সামনে থেকে দেখেছিলাম। প্রথম দেখাতেই আমার মধ্যে কী হয়ে গেল, বুঝতে পারিনি। যেন তুমি আমাকে সম্মোহিত করে ফেলেছিলে। চুম্বকের মত টানছিলে আমায়! মনে হচ্ছিল, আমি আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। এত ভীতু একটা মেয়ে সেদিন কীকরে এত সাহসী হয়ে উঠেছিল, এখনো ভাবতে অবাক লাগে। সেদিনের তোমার প্রতিটা স্পর্শ, প্রতি মুহূর্তের আদর, তোমার শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দ এখনও অনুভব করতে পারি। চোখ বন্ধ করলেই তোমার গায়ের ঘ্রাণ পাই। যতদিন বেঁচে থাকব, এগুলো কখনো ভোলার নয়। জীবনে প্রথমবারের মত পেয়েছিলাম সেই অনুভূতি, ভুলি কীকরে, বলো! সেদিনই আমি আমার আমি’কে সম্পূর্ণই তোমার কাছে সমর্পণ করে দিয়েছিলাম। মনকে যতই বাধা দিয়েছি, মন কোনো কথাই শোনেনি। ভাবতেই পারিনি, ভালোবাসার স্পর্শ এতটা গভীর সুখের হতে পারে। প্রচণ্ডভাবে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায়। এমনভাবেই, যেন দুনিয়ার আর কোনো কিছুই চোখে পড়ে না শুধু তুমি ছাড়া। জানি, তোমার কাছে এই অনুভূতিগুলো খুব তুচ্ছ। কিন্তু আমার কাছে অনেক বড় কিছু। সেদিন কামনাবাসনা সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল আমার ভালোবাসার অনুভূতি। তুমি সেটা বুঝবে না। তারপর থেকে প্রতিদিন প্রতিটা মুহূর্ত আগের চেয়ে বেশি ভালোবেসে চলেছি তোমায়। তোমাকে ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় নিজেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছি।

তোমায় আমি প্রতিনিয়তই বলি তোমায় কতটা ভালোবাসি। কিন্তু আসলে ঠিকঠাক বলতে পারি না। কারণ তোমায় এতটা ভালোবাসি যে সেটা বলে কীভাবে তোমাকে বোঝাবো, সে ভাষা আমার জানা নেই। যতটুকু লিখি, তাতে তার এতটুকু অংশও প্রকাশ পায় না। তাই বোঝাতে পারি না। প্রতিটা মুহূর্তে কীভাবে আগের চাইতে বেশি ভালোবাসা যায়, তুমি না থাকলে বুঝতাম না। একটা মানুষের কথা ভাবতে-ভাবতে কীভাবে দিনের পর দিন কাটানো যায়, সেটাও তুমি না থাকলে বুঝতাম না। তুমি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছো। কষ্ট দিয়েছো, বকা দিয়েছো আবার কত সুন্দরসুন্দর কথা বলে আমার মন ভাল করেও দিয়েছো। কিন্তু কী লাভ, বলো! এই মুহূর্তগুলো তো আর চিরস্থায়ী না। সারাজীবন সবসময় তোমাকে আমার পাশে পাব না। কোনো একদিন চাইলেই তোমার হাতটা ধরতে পারবো না। তুমি যে আমার নও। তোমাকে একদিন না একদিন দূরে সরে যেতেই হবে। এটাই নিয়তি। তাই আমি আর এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না, ভাবি বর্তমান নিয়ে। যতটা সময় তোমাকে কাছে পাওয়া যায়, ততটুকু সময়ই তুমি আমার। ভবিষ্যতের দিনগুলোতে নাহয় এই স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকব। আচ্ছা, শুধু স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা কি এতটাই সহজ? তুমি না থাকলে সেদিন তোমায় ছাড়া থাকব কীভাবে! তোমাকে যতই দেখি, তৃষ্ণা তবু মেটে না। মনে হয়, আরো দেখি……আরো। আকাশের বুকে ওই চাঁদটা দেখেছো? কত কাছে, কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো আর হাত বাড়িয়ে ধরতে পারি না। তুমি আমার কাছে অমনই একটা চাঁদ, যাকে ছোঁয়ার জন্য অত বড় হাত যে নেই আমার। তুমি ওই গানটা শুনেছো না, “চক্ষে আমার তৃষ্ণা, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে। আমি বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন। সন্তাপে যায় প্রাণ যে পুড়ে।” আমার খুব ভাল লাগে গানটা। তোমার লাগে না? দুনিয়াটা খুব নিষ্ঠুর, বুঝেছো? (জাফর ইকবাল স্যারের একটা সাক্ষাৎকার দেখলাম। উনার একটা মুদ্রাদোষ দেখে খুব মজা পেয়েছি। উনি প্রতিটা কথার লেজে একটা করে ‘বুঝেছো’ জুড়ে দেন!) একটা অসমাপ্ত গল্পের খনি। তাইতো এমন একজনকে ভালোবাসলাম, যার সাথে আমার ভালোবাসাটা একটা অসমাপ্ত গল্প। গল্পটা শুরু করতে পেরেছি, কিন্তু শেষের পাতাগুলো আর জুড়তে পারছি না। তুমি কি জুড়ে দেবে এই শেষের পাতাগুলো?

বিরক্ত করছি? আচ্ছা, বাদ দাও। আমি আসলেই একটা বিরক্তিকর মানুষ। কী থেকে কী বলি, কোন মাথামুণ্ডু নেই। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। কতদিন দেখি না! চলো না একদিন অনেক দূরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি! একেবারে সীমানা পেরিয়ে কোথাও। যতদূর যাওয়া যায়। যাবে? আজ কী যেন হয়েছে আমার! কেবলই হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। চিরতরে!

তোমাকে ভালোবেসে কী পাবো, বলো? তোমাকে ভালোবেসে কী-ইবা হবে? কিছুই না! কিচ্ছু না। তুমি বলবে, ভালোবাসা কি কিছু পাওয়ার জন্য? আমি বলব, একটুকুন পানি ছাড়া কি গাছ বাঁচে, বলো? আমার যে অনেক পানি চাই!

কত দিন হয়ে গেল, শুভ সকাল বল না……মনে আছে?

কত দিন হয়ে গেল, নিজ থেকে নক কর না……মনে আছে?

এইটুকু ছাড়া বাঁচা যায়, বলো?

কবিতা তো লিখি না আমি! তবু কেন কিছু লিখতে গেলে তা কবিতা হয়ে বের হয়? এর কী ব্যাখ্যা দেবে?

শোনো, এটা কিন্তু সাহিত্য নয়! এটা কষ্ট।

জানো, সারাক্ষণই অ্যাক্টিভ থাকি কেন? কারণ তুমি। কারণ শুধুই তুমি। যদি আমাকে অ্যাক্টিভ দেখেদেখে ক্লান্ত হয়ে………কখনো-বা নক দিয়ে দাও! এটাই কারণ, জানো? ডাটা অফ করে ঘুমাতে ইচ্ছা করে না। যদি ঘুম থেকে উঠে দেখি গুড নাইট লিখেছ, তবে তো তোমাকে নক করার একটা ছুতো পাওয়া যাবে। কেন আমার ঘুম আসে না? ছটফট করি এপাশওপাশ? কারণ তুমি! কারণ তুমি, তুমি আর তুমি। কী ভয়ানক সত্য এ কথাগুলি! আর কিছু না-ইবা বললাম। তোমাকে আমি আসলে কেমন করে চাই? আমার এই কষ্টের কারণ কী? কেন ইচ্ছে করেই কষ্টগুলি ঘাড়ে নেবো? আমার এত দায় কীসের? কেন তোমার জন্যই এ জীবনে প্রথম লিখতে বসলাম? তাও আবার এমন কিছু যার কোনো মানে নেই? তোমাকে ভালোবেসে আমি কী করব? এর তো কোনো কারণই নেই! শুধুশুধু কষ্ট পাওয়া। নিজ দোষে! তোমার কোনোই দায় নেই, বাবুটা! আমি কেন এমন হলাম, এটাই আমায় অবাক করে। কই, আমি তো এমন ছিলাম না। মোটেও না! এটা তোমার গুণ বটে! ভাল থেকো।

এই যে বিজি মানুষ! কোনো বিজিটিজি না। এইগুলা সব ঢং। আমি জানি! বিজি মানুষ এত বিজি কেন? জানো, আমার কলিগরা আমাকে একটা উপাধি দিয়েছে। দ্য সেলফি কুইন। সেদিন সবাই মিলে একটা বড় আয়না দিয়েছে। সারপ্রাইজ গিফট! কেন, জানো? যাতে আমি আরো বেশি করে সাজুগুজু করে সেলফি তুলতে পারি! মানুষের কত্ত কাজ! খালি আমারই কোনো কাজ নাই। সারাদিন ইউটিউবে তোমার স্পিচ শুনি, তোমাকে দেখি। এমন হল কেন? আমি কিন্তু এসব মিথ্যেমিথ্যে বলি না। তোমাকে দেখি আর তোমাকে দেখতেই ইচ্ছে করে। তোমার কথা শুনি আর তোমার কথা শুনতেই ইচ্ছে করে। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এতটা ভালোবেসে ফেলেছি কীভাবে, জানি না। আমার সারাদিনই খুব কষ্ট হয়। তোমাকে নক করি, তুমি অ্যাভয়েড কর। তোমার এই অবহেলা আমার সহ্য হয় না। আমায় এত অবহেলা কেউ কখনো করেনি। নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। বুকের ভেতরে পাথর চেপে রাখি। অনেক কষ্ট ওখানে। বুঝবে না তুমি! আমাকে কক্ষনো ছেড়ে যেয়ো না। ভালো না বাস, তবু হাতটা ছেড়ো না। কিছুক্ষণ আগে একটা ন্যাপ নিলাম। স্বপ্নে তোমাকে দেখলাম। দেখলাম, কোনো এক বাগানে তোমার সাথে বসেবসে গল্প করছি। কিছুক্ষণ পর দুইটা মেয়ে আসল। আমাকে ছেড়ে তুমি ওদের সাথে চলে গেলে। আমি পেছন থেকে বোকার মত তাকিয়ে আছি আর ঠোঁটে কামড় দিয়ে কান্না গিলছি। আমি তোমার চলে যাওয়া সহ্য করতে পারি না। তুমি কি সত্যিসত্যি এমন করবে আমার সাথে? এই স্বপ্নটা সত্যি হয়ে যাবে? তোমার গলাটা শুনতে ইচ্ছে করছে। কল করলে তো ধরবে না! আমি জানি, একদিন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। সেদিন আমি অনেক কাঁদবো, কিন্তু কিছুই করতে পারব না। তোমাকে আটকাতে পারব না। আমি তো কোনো কিছুই হই না তোমার। আমি চলে গেলেই কী? আর থেকে গেলেই বা কী! একটা গেলে তিনটা পাবে। তোমরা পুরুষমানুষগুলি এমনই। এসব মাথায় আসছে কেন? ভাল লাগছে না কিছু। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

আসো না, আজ একটু মিথ্যেমিথ্যে প্রেম করি! বিয়ে করতে হবে না, কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে হবে না, কোথাও জায়গা দিতে হবে না, কোথাও রাখতেও হবে না, শুধু একটু কথা বলো, প্লিজ! কিচ্ছু না, কিছুই না, একটু কথা বলবো শুধু। আচ্ছা শোনো, কথাও বলতে হবে না, শুধু যখন তুমি কোথাও কথা বল, সে কথাগুলো শুনতে দাও! সে যে কথাই হোক না কেন, আমি শুধু শুনবো। আমার কোনো কথা তোমাকে শুনতে হবে না, আমি কেবল তোমার কথা শুনবো। তোমাকে একটা কল পর্যন্ত করতে ভয় পাই আমি! এই অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে কতদিন বাঁচব? মেরে ফেলো না আমাকে…………

আমার সারাটা দিন তোমায় নিয়ে কাটে। আমায় এক মিনিটও স্বস্তি দাও না তুমি। খাওয়ার সময়, ঘুমানোর সময়, বের হওয়ার সময়, ঘরে আসার সময়, এমনকি ব্রাশ করার সময়ও মনে হতে থাকে, ওর দাঁতগুলি খুব সুন্দর। ওই দাঁতগুলি দিয়ে অনেকক্ষণ আমাকে কামড়ে ধরে ছিল। শুধু তা-ই নয়, আমি অনেকক্ষণ ওর দাঁত আর জিহ্বার মধ্যে ছিলাম।…….আর কি পাবো না তোমাকে? ওভাবে করে? কেন বললে তবে, যেদিন আমাকে যখনি ডাকবে তখনি যেন পাও? বিফোর ম্যারেজ অর আফটার ম্যারেজ? এই অপেক্ষার কি শেষ নেই? এমন অসহ্য অপেক্ষা? মিথ্যুক! আর কতগুলো দিন গেলে তোমার দেখা পাবো? খুব তো বেশিদিন হয়নি, কিন্তু মনে হচ্ছে, সহস্রকোটি বছর হয়ে গেছে! আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি! কতটা যে মনেপ্রাণে চাইছি তোমাকে!………তুমি কি আর আসবে না? আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম আর বোধহয় দেখা হবে না। তাহলে কেন সেদিন এতগুলো কথা শোনালে? সেদিন থেকে এখনো অবধি আমি শুধু অপেক্ষার আলো নেভাচ্ছি। সাতটা দিন হয়ে গেল, একটা উইকএন্ডও চলে এলো, অথচ মানুষটি কোথাও নেই! দূর থেকে শুধু বোনাসসহ আঘাত দিয়েই যাচ্ছে। তুমি খুব ব্যস্ত, জানি। তবুও শেষ করবো না আলো নেভানো। নিজেই নিজের জীবনের সবক’টি আলো একএক করে নিভিয়ে দিচ্ছি। আর তুমি তো পাশা ছাড়াই সর্বদা প্রজ্বলিত! আলো ছড়িয়ে শুধু হৃদয়টাকেই উত্তপ্ত করছ বারবার! গলে যাচ্ছি তোমার আলোর গরমে! আমাকে ছাইয়ের গাদায় না ফেলা পর্যন্ত তুমি তাপ দিতেই থাকবে। আমি জ্বলতে-জ্বলতে পুড়তে-পুড়তে নষ্ট হয়ে যাবো, তবুও তোমার আসার সময় হবে না! কেন আসবে তুমি? বললেই আসতে হয় নাকি? এটা কোথায় লেখা আছে? তাইতো তুমি আসি-আসি করেও আসো না। কী অদ্ভুত, না? কথাগুলোর মাঝে কিছুই নাই, তবুও কেমন মায়ামাখা! আমি এক অলীক সে’র জন্য প্রতীক্ষা করছি, যেমনি করে গডোর প্রতীক্ষায় ছিল এস্ট্রাগন ও ভ্লাডিমির। সে আসবে উপভোগ করতে, আমি যাবো অনুভব করতে। তার উপভোগ করাটাকেও যে আমি খুব ভালোবাসি! তাইতো অপেক্ষা করছি! হুমায়ূন স্যার, আপনি কই? আপনি আমাকে যেকোনো একটা ধিক্কার প্রাইজ দেন, কারণ আপনার অপেক্ষার চেয়ে আমার অপেক্ষার পালা বেশি ভারি!

অনেকদিন হয়ে গেল তারিখ দিই না। আজ দিতে ইচ্ছে করছে। ৭ এপ্রিল ২০১৬। রাত সাড়ে এগারোটা বাজতে দেড় মিনিট।