সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/২

কী অদ্ভুত তোমার জীবনটা হয়ে গেছে! তুমি এখন কী চাও, তা তুমি নিজেই জানো না। একলা জগতে একলা পড়ে থাক। কাউকেই তোমার ভাল লাগে না। এও হয়? আমি তো শুধু তোমার ওই একলা ঘরটার কথা চিন্তা করি। অগোছালো কাপড়চোপড়, অগোছালো বইপত্র, অগোছালো রুমটা, কেউ ঝেড়ে দেয় না, কেউ মুছে দেয় না। বিছানাটা কি তোলো রোজ? নাকি একই বিছানায় ঘুমিয়ে পড় রোজরোজ? ঘুমাও তো আদৌ ঠিকমত? অতো রাতে কেন শোও? অফিসে যেতে সকালে উঠতে হয় তো! এত কম ঘুমালে হয়? ব্রেকফাস্টটা না করেই অফিস ছোটো, না? কত কাজ করতে হয় তোমাকে! মশারিটা কবে শেষবার টাঙিয়েছিলে, মনে করতে পার? যদি সেটা কাল হয়, তাহলে তো খুবই ভাল। কাপড়গুলি ধুতে খুবই কষ্ট হয়, না? বেশি কাপড় জমিয়ে রেখো না, কেমন? অতো কাপড় একসাথে ধুলে ব্যাকপেইন হয় যে তোমার! ভীষণ ইচ্ছে করে, তোমার জীবনটাকে গুছিয়ে দিই। প্রিয় মানুষের গোছানো জীবন দেখতে ভাল লাগে। আর পারছি না, জানো? তোমার এমন কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না। তোমার মা, বাবা, ভাই সবার জন্যই ভীষণ মায়া লাগছে। ইচ্ছে করছে, এখুনিই ছুটে যাই। গিয়ে রোজ সকালে সবার জন্য চা বানাই। বাবার জন্য রংচা, বাকি সবার জন্য দুধচা। বাবার এ বয়সে দুধচা খাওয়া একেবারেই নিষেধ। সবাই ঘুমভেঙে দেখবে, চা রেডি, ব্রেকফাস্ট রেডি। কেউ চিন্তায় থাকবে না, পরের বেলায় কী করতে হবে। কে কী খাবে, কী রান্না হবে, কে কী খেতে পছন্দ করে, সেটা আমার চাইতে ভাল কেউ জানবে না। সবাই খুব পছন্দ করবে আমার সবকিছু, আমি সেভাবেই সবকিছু করে দিতে পারব। জীবনটাকে যেরকম করে দেখতে চায় তোমাদের বাসার সবাই, আমি সেরকম করেই জীবনটাকে সাজিয়ে ফেলব। আমি কত কী ভাবি তোমায় নিয়ে! আর তুমি?

আচ্ছা, আমাকে নিয়ে না ভাবো, নিজেকে আর নিজের মানুষগুলি নিয়ে তো অন্তত ভাবতে পারো! কেমন দোটানা জীবন তোমার। কী এক চাকরি কর, বাসায় থাকতে পারো না। বাইরেবাইরে থাক সারা বছর। কাছের মানুষগুলির সাথে জীবন কাটাতে না পারলে সে জীবন কাটিয়ে কী লাভ, বলো? দুটো পরিবারে ভাগ হয়ে গেল একই ছাদের নিচে থাকতে অভ্যস্ত মানুষগুলি! স্রেফ জীবিকার জন্যই? কী হয় অন্য জীবিকায় জীবনটাকে চালিয়ে নিলে? তুমি বরং এক কাজ করো। দুটো বিয়ে করো। একটা বউ বাসায় দিয়ে দাও, আরেকটা বউ নিজের কাছে রেখে দাও। ইদানিং আমার কী যে হয়েছে, নিজের পরিবারের থেকেও বেশি তোমার পরিবারের জন্য টেনশন করি। মা কী করছেন, এ বয়সে একাএকা সবকিছু সামলে উঠতে পারছেন তো! বাবার ওষুধটা কে মনে করে খাইয়ে দেয় প্রতিদিন! তোমার ভাই ওর পছন্দের খাবারটা রেঁধে দিতে কার কাছে আবদার করে! আরও কত কী! তুমি এসব বুঝবে না। বিশ্বাস করো, ঈশ্বর আছেন। উনিই কোনও না কোনও গতি করে দেন, দেবেনও। ঠিক তোমাদের পরিবারের মতোই আমাদের পরিবারের অবস্থা। তবুও ঈশ্বরের কৃপায় কোনওকিছুই ভুল পথে চলছে না। নয়তো, আমার দাদারই বা কেন একটা গতি হবে না এতদিনেও, আর বড়দিই বা কেন বিয়ের পর আমাদের বাসায় পড়ে আছে দিনের পর দিন? মা-বাবা’কে দেখার কেউ নেই আমি আর এই দুটি প্রাণী ছাড়া। মেজদি মারা গেছে, সেজদি আমাদের সাথে কোনও যোগাযোগই করে না। আমিও একদিন থাকব না। সেদিন বাবা-মা’র কী হবে? আমি বিশ্বাস করি, ওরা সেদিনও ভালই থাকবে। ঈশ্বরের লীলা বোঝার সাধ্য আমাদের কোনওদিনই হয়নি, হবেও না।

এই শোনো না, তুমি বিয়ে কর না কেন? বিয়ে করে ঘরে একটা লক্ষ্মী বউ আন, দেখবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমার জন্য খুব চিন্তা করি। সারাদিনই চিন্তা করি। কী খাও সকালে, দুপুরে হয়তো অফিসে খাও, কিন্তু রাতে? ঘুমাতে দেরি হলে মাঝেমাঝে কি খিদে পায় না রাতে? চা, কফি কী করে খাও? আচ্ছা, ঘরে কি কিছু রাখ? এই টুকটাক খাবার? বিস্কিট, চানাচুর, এরকমকিছু? চকোলেট খেতে পছন্দ কর। ওটাও তো রাখতে পারো ঘরে। আদৌ রাখো কি কিছু, জল ছাড়া? মনে তো হয় না। আচ্ছা, তোমরা ছেলেরা না মশারি টাঙানোর ব্যাপারে ভীষণ উদাসীন! তুমি মশারি টাঙ্গাও তো? নাকি, একটা একটা ল্যাপটপ আর ফোন নিয়েই বিছানায় পড়ে থাক? সত্যিই বলো না, কীভাবে থাক? কেমন করে থাক? কী কী অসুবিধেয় পড় তুমি? বড্ডো জানতে ইচ্ছে হয় আমার।

ভাল লাগছে না কিছু। তোমার মা আর বাবার জন্য মনখারাপ হচ্ছে। জানো, তোমার মা আর আমার মায়ের মধ্যে কোনওই ফারাক নেই। দুজনকে পাশাপাশি দাঁড় করালে দুইবোন মনে হবে। দুজনই সমান সুন্দরী। কী যে ফর্সা দুজনই! আমি তো প্রায়ই ভাবি, তোমার মা আর আমার মা’কে কি কখনও একজায়গায় দেখতে পাবো? এটা দেখতে পারাটা একটা পরম সৌভাগ্য হবে। অসাধারণ দুই সুন্দরী পাশাপাশি আছে। তাকিয়ে থাকতেও ভাল লাগছে। এসব ভাবি। তুমি যে কী কষ্টে আছ এই মাকে ছেড়ে, এটা আমি অনুভব করতে পারি। তোমার জায়গায় আমি থাকলে এতদিনে মরেই যেতাম। এই শোনো না! তোমার কষ্টগুলি আমায় দেবে? এর বদলে আমি আমার সুখগুলি তোমায় দিয়ে দেবো। তুমি দিলে, আমি সত্যিই নিতাম। আমি তোমায় খুব আদর করে আগলে রাখতাম। তোমায় কোনও চিন্তাই করতে দিতাম না। তোমাকে সবসময়ই বুকের মাঝখানে রাখতাম। তুমি তোমার সব চিন্তাগুলি আমার উপর ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারতে। আমি কিন্তু অনেক সুন্দর করে ম্যাসাজ করে দিতে পারি। তোমাকে করে দিতাম। একেবারে তোমাকেই করতে হবে, এমন কাজ ছাড়া আর সবকিছুই আমি সামলে রাখতাম। তোমাকে আমার উপর পুরোপুরি অভ্যস্ত করে ফেলতাম।

অনেক হলো! অনেকঅনেক স্বপ্নের জাল বুনে ফেললাম। এতোএতো স্বপ্ন কি ঈশ্বরের সহ্য হবে? কী করবো বলো, আমার তো মনে হয়, তাঁর ইচ্ছে উপেক্ষা করে আমি তোমার জীবনে ঢুকে গেছি। এও কি সম্ভব নাকি? এতো বড় চিন্তা, স্পর্ধা হয় কী করে আমার? আমি যার যোগ্য নই, তাকে নিয়ে টেনশনের শেষ নেই আমার। টেনশন পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু অতো বেশি স্বপ্নবিলাসী তো হওয়া যাবে না। তোমাকে ভেদ করে তোমার মাঝে প্রবেশ করার ক্ষমতা ঈশ্বর আমাকে দেননি গো! তুমি যে বিশাল আস্তরণ দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছ, সেই পর্দা সরিয়ে চুপিচুপি শুধু তোমাকে দেখাই যাবে। কিন্তু, ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না। কারণ, তুমি তোমার কাছে কাউকেই আসতে দাও না। নিজেও কারও কাছে ধরা দাও না। তো তুমি একা থাকবে নাতো কে একা থাকবে? তোমাকে দেখে শিখেছি, বেশি সাফল্যও ভাল না। আমি ঠিক করেছি, আমি, খুব বেশি নয়, শুধু একটুখানি সফল হবো। একটুখানি সফল হয়ে অনেকখানি সার্থক হবো। জীবনে সাফল্যের চাইতে সার্থকতা অনেকবেশি জরুরি।

আমরা আসলে কী চাই জীবনে? আমরা সেটা নিজেরাই জানি না, তাই না? তুমি কী চাও, তা তুমি জানো না। তুমি কিছু একটা ধরে নিয়েছ যে তুমি ওরকম চাও। আসলে তুমি তা চাও না। মজার কথা কী, জানো? আমি কী চাই, তা আমি জানি। খুবই সরল আমার চাওয়াটি। আমি শুধু চাই, তুমি ভাল থাক। খুব খুব খুব ভাল থাক। তোমার পরিবার ভাল থাকুক। আমরা চাইলেই সবকিছু হয় না। আচ্ছা, ঠিক আছে, সব হওয়া লাগবেও না। শুধু তুমি একটু ভাল থাক না, প্লিজ! মা সুস্থ হয়ে যাক, বাবা ভাল হয়ে যাক। আচ্ছা, তুমি কোথায় সেটেল্ড হবে? কবে সবাইকে নিজের কাছে রাখবে? কবে সব আগের মতো হয়ে যাবে? রাজারাণী, তাদের দুই রাজপুত্র। ভাবতে দারুণ লাগে না, বলো? আরও একজন থাকবে, জানি। ওর কথা লিখতে ইচ্ছে করল না বলে লিখলাম না। আরও পরে আরও কী হবে, সেটাও জানি, তাও লিখলাম না। থাক, অতোসব লিখে কী হবে!

আহা, সপ্তাহে একটা দিন তোমার কাছে যেতে পারতাম! তোমার এ-টু-জেড সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আসতাম। আচ্ছা, বাসার যা অবস্থা, তোমার বইগুলির যত্ন নেয়ার সময়টুকুও কেউ পায় না, তাই না? বইগুলি ঠিক আছে তো? ঘুণপোকায় কাটছে নাতো একটাও? ………… মাথাটা ভনভন করছে খুব। বুকের ভেতরটা কুঁচকে আসছে। খুব অস্বস্তি লাগছে। আমার কেন এমন হচ্ছে, বলতে পারো? আমি কেন এতো ভাবছি? সবচেয়ে বড় কথা, আমি ভাবা বন্ধ করতে পারছি না। বিশ্বাস করো, কদিন ধরেই তোমার জন্য মায়াটা আরও বেড়ে গেছে। তোমার রিসেন্ট ছবিগুলিতে আগের সেই কোমলতা, শান্তি, আর চমৎকার ভাবটা আর নেই। তোমার ঠোঁট হাসে তো চোখ হাসে না, এতোটাই কৃত্রিম হয়ে গেছে তোমার হাসি। তুমি যে মেকি হাসি হাসতে-হাসতে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে উঠেছ, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে তোমার ছবিগুলিতে। আমি তোমার ছবি খুব ভালভাবে বুঝতে পারি, কারণ আমি তোমার ছবিগুলি নিয়ে কাজ করি। নিজের মনের মতো করে সাজাই তোমার ছবিগুলিকে। তোমায় তো আর পারব না, তাই তোমার ছবিকে সাজিয়েগুছিয়ে দিই, নিজের মনের আয়নায় নিজের মতো করে দেখে শান্তি পাই। মনের মতো করে সবার ভেতর থেকে তোমাকে আলাদা করে নিয়ে আসি। খুব ভাল লাগে আমার। কিন্তু এখন ইদানিং সেরকম কোনও ছবিই পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, তুমি ভাল নেই। এই ভাবনাটা বড় কষ্ট দেয়। ভালোবাসার অর্থ, বিনিময়ে ভালোবাসা পাওয়া নয়, ভালোবাসার অর্থ, যাকে ভালোবাসি, তার ভাল চাওয়া।

ইসস! একছুটে তোমার কাছে চলে যেতে পারতাম! তোমাকে ভীষণ শাসন করতে পারতাম! তোমাকে তিনবেলা ঠেসেঠেসে খাওয়াতে পারতাম! তোমার অগোছালো জীবনটাকে একটু, বেশি না, সামান্য হলেও গুছিয়ে দিতে পারতাম! ঈশ্বর যদি আমাকে সে সুযোগটা করে দিত! শোনো, এ পৃথিবীতে শুধু তুমি একাই যে ভাল নেই, তা নয়। তোমার জন্য কোনও একজন নোবডি আছে, সেও ভাল নেই। সে এমনই একজন, যার কথা তুমি ভুল করেও কোনওদিনই ভাবো না, তোমার ভাবনায় সে ভুলেও আসে না কখনওই, কিন্তু সে তোমার জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারে। এতোটা অবহেলায় অনাদরে বিস্মৃতিতে যে বাস করে, সেও কি কোনও অংশে কম কষ্টে আছে?

কী করছ? ঘুমাচ্ছ? নাকি, এখনও জেগে আছ? ভাল আছ তো? খেয়েছ রাতে? কাল পুজো দিতে যাবে তো? কোথায় আছ? বাসায়, নাকি পোস্টিং প্লেসেই? কার সাথে অঞ্জলি দেবে? অঞ্জলি দাও তো? জানো, এটা তোমার আমার পরিচয়ের প্রথম সরস্বতী পুজো। দুর্গা পুজোর সময় তোমার মঙ্গলের জন্য মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি। কালও করবো। তুমি আরও অনেক বড় হবে। আচ্ছা, তুমিইইই………শোনো না, তুমি কাল কী করবে? আমাকে বলতে হবে। এখন থেকে আমাকে না বলে কিছু করতে পারবে না। তুমি কী করছ, কী করছ না, সবকিছু আমাকে বলতে হবে। এটা আমি নিয়ম করে দিলাম। অ্যাই অ্যাই অ্যাই ছেলে! তোমাকে এতো মনে পড়ছে কেন? অবশ্য, তুমি তো আমার জীবনে এই একটা জায়গাতেই থাক, মানে, মনে। আচ্ছা, মন কোথায় থাকে? মাথায়, নাকি বুকে? ভাল লাগছে না কিছু। মনটা অসম্ভব রকমের উদাস হয়ে আছে। শুধুই তোমার জন্য। কেমন তুমি? এমন না হলে কী হতো? একটু যোগাযোগও কর না। একবারের জন্যও না। জানি, যোগাযোগ করবে, এর কোনও কারণই নেই। তবুও! কাল রাতের এসএমএস’এর কোনও রিপ্লাই দিলে না। অবশ্য, রিপ্লাইয়ের আশাও করি না। আমি ধরে নিই, যেগুলির রিপ্লাই পাই, শুধু সেগুলিই তোমার মোবাইলে গেছে, বাকিগুলি নেটওয়ার্কের প্রবলেমের কারণে তোমার মোবাইল অবধি পৌঁছয়ইনি! এটা ভাবলে এক ধরনের শান্তি লাগে। তোমার রিপ্লাইগুলি কয়েকবার করে পড়েছি, আবারও পড়ি। সেগুলিই তো আসার কথা ছিল না, কিন্তু এসেছে। সেগুলি আমার জন্য বোনাস গিফট। আমি অনেক যত্ন করে ছুঁয়েছুঁয়ে দেখি তোমার রিপ্লাই। তুমি বকা দিলেও ভাল লাগে, ভাল কিছু বললেও ভাল লাগে। ওগুলি আমার ছোটছোট সুখ, আমার খুশি, আমার সারাদিনের হাসি। তোমাকে নিয়ে আমি ঘুম থেকে উঠি, তোমাকে নিয়ে আমি ঘুমাতে যাই। আর সারাদিন তো আছেই! তুমি এখন আমার একলা ক্ষণের একমাত্র সঙ্গী। গত চার-পাঁচ মাস ধরে এটাই হচ্ছে। কোনও পরিবর্তন নেই। কেন যে এসব লিখছি………নিজেও জানি না। আচ্ছা, তোমার সাথে কি আর দেখা হবে না? তোমাকে কি আর ছুঁয়ে দেখতে পারব না? তোমার কণ্ঠস্বর কি আর শুনতে পাব না? তুমি কি আর আমার সাথে যোগাযোগ করবে না? তুমি কি কখনও কিছুই ভাবোনি আমাকে নিয়ে? আমার খুউব জানতে ইচ্ছে করে আমার সম্পর্কে তোমার ধারণা কী। নাকি, আমি একেবারেই তোমার ধারণার বাইরে? বলো না! আমার কোনও প্রশ্নের উত্তরই আমি কখনওই পাব না, জানি। শুধু তুমি ভাল থেকো, প্লিজ!

আচ্ছা, তুমি এমন কেন? সারাক্ষণই সুন্দরীসুন্দরী কর। কেন বোঝো না যে যেসব অসুন্দরী মেয়ে তোমায় ফলো করে, তোমার ভাল চায়, তাদের ভীষণ রাগ হয় তুমি অমন করে লিখলে? অবশ্য, রাগ করলেই বা তোমার কী? জানি, কিছুই না। তবুও সারাদিন শুধু সুন্দরীসুন্দরী করলে কেমন লাগে না? দেখব তো কী রাজকন্যা বিয়ে কর! আমি শুধু সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি। যেদিন পুরো পৃথিবী তোমার নতুন জীবনের জয়গান গাইবে। সেই দিনটির, যেদিন তুমি সাতজন্ম কিংবা জন্মজন্মান্তরের জন্য সাতপাকে বাঁধা পড়বে আরেকজনের সাথে। যেই দিনটির রাত হবে তোমার জন্য শুভলগ্ন। সেই দিনটিতে পুরো স্বর্গরাজ্যের দেবতারা উপস্থিত হবে যজ্ঞের আহ্বানে। যেদিন স্বয়ং ঈশ্বর তোমার বন্ধনচিহ্নের সাক্ষী হবেন। সেই দিন, যেই দিন অগ্নিদেবকে মাঝে রেখে দাউদাউ করে জ্বলবে তোমার মঙ্গলশিখা। সানাই আর ঢাকের শব্দে, উলুধ্বনিতে তোমার মঙ্গলবাণী ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। সাতপাক ঘুরে তুমি তোমার সবচাইতে সুন্দর ঈশ্বরপ্রদত্ত চোখজোড়া দিয়ে শুভদৃষ্টি করবে তোমার সেই স্বপ্নচারিণীর সাথে। দেবতারা তোমাদের আশীর্বাদ করতে আসবেন। দেবতাকূল নিশ্চয়ই আসবেন ঈশ্বরের মঙ্গলবার্তা বয়ে নিয়ে, কারণ, আমি তো জানি, তুমি ঈশ্বরের ভীষণ প্রিয়। আমার তা কী বুঝতে বাকি, বলো? ভগবান তোমায় নিজ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করেছেন। সম্পূর্ণই তাঁর ইচ্ছে দিয়েই তৈরি তুমি। আর সেই তোমার শুভক্ষণে ঈশ্বর তাঁর প্রিয় দূতদের পাঠাবেন না? নিশ্চয়ই পাঠাবেন। আমি ওই দিনটির অপেক্ষায় আছি গো! লগ্ন শুরু হওয়ার পর একেকটা মুহূর্ত আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। মন্ত্রোচ্চারণ, যজ্ঞ, সাতপাক, সাগরপাড়ি এবং সবশেষে সিঁদুরদান।…………তোমার নতুন জীবন! শুধুমাত্র তিনটি আঙুল, আর কিছু সিঁদুরের খেলায় পুরো সমাজের সামনে অগ্নিদেবকে সাক্ষী রেখে তুমি তার জীবনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলে! কী ক্ষমতা এসব আচারের, তাই না? ভাবা যায়, বলো? সে সুন্দরী প্রেয়সী যে কত ভাগ্য সাথে নিয়ে এ জীবন পেয়েছে, তা কি সে জানে? তোমার তিন আঙুলের ছটাক সিঁদুর তার নাকের উপর পড়তেপড়তে সিঁথিতে উঠল। ব্যস! হয়ে গেল! ছটাক সিঁদুর আর ওই কিছুটা সময়ের জন্য কত প্রতীক্ষা, না? শুধু তুমিই নও গো, আমিও যে আছি সেই দিনটি, সেই ক্ষণটি, সেই লগ্নটি, আর সেই শ্বাসরুদ্ধকর, রোমাঞ্চকর মুহূর্তটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে।

আচ্ছা, আমি কেন আছি অপেক্ষায়? না না, কিছুতেই ভেবো না, আমি নিজেকে ওইস্থানে বসিয়ে কল্পনা করছি। তা মোটেও না। আমি এখন ঠিক যেখানটায়, তখনও ঠিক সেখানটাতেই থাকব। আর আমি সেখানেই বসে কল্পনার চোখ দিয়ে তোমার শুভলগ্নের শুভকাজটি দেখব। ওই রাত হবে আমার জীবনের সেরা কষ্টের রাত। ওই রাত মৃত্যুর চাইতেও প্রবল ও ভয়ংকর হবে। ঈশ্বর যদি আমাকে এই পৃথিবী থেকে তুলে নিত সেই রাতটি আসার আগেই! জানি, সেদিন সারা ফেসবুক তোলপাড় শুরু করে দেবে। শুভেচ্ছা, ভালোবাসা, আশীর্বাদ, লুকানো কষ্টের হাসিতে ময়ময় করবে সেই রাতটি। সেই পরিচিত সবার প্রিয় মুখটি বাঁধা পড়বে সংসার জীবনে তার পরদিন সকাল থেকে। আমার জীবনের তুমুল, স্পষ্ট, ভয়ংকর কষ্টের রাত হবে সেই রাতটা যে রাতে তুমি আর এই তুমি থাকবে না। তুমি হয়ে যাবে অন্যের। জানি, তুমি এখনও আমার নও। তবুও তুমি এখনও অন্যের হয়ে যাওনি, এটা ভাবেই জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। আমাকে আমার প্রাক্তন প্রেমিক একটা ছোট্টো চিঠি লিখে পাঠিয়েছিল। ব্রেকআপের অনেকদিন হয়ে গেল, কিন্তু সে চিঠিটা এখনও আছে আমার কাছে। তোমাকে পড়ে শোনাই, কেমন?

“কী করছ?

খেয়েছ দুপুরে?

চুলগুলি কি এখনও খোলাই রাখ, হুঁ?

কথা বলতে, বলতে, এখনও কি, চোখদুটো হুট করে নামিয়ে ফেল, পিটপিট করে?

হাসতে গেলে, এখনও কি টোল পড়ে, ওর সামনেও?

পড়লে পড়ুক!

আর যা-ই কর, আমার দেয়া নাম ধরে আর কাউকে ডাকতে দিয়ো না, কেমন? ওটা শুধুই আমার।

জানি, উত্তর দেবে না, সিন করে ফেলে রাখবে। রাখলে রাখো! আমার কী?

আচ্ছা, আমাকে ব্লক করে দাও না কেন? ভালোওবাসো না, অথচ, সেটা আমাকে বিশ্বাস করতেও দিচ্ছ না। এসবের মানে কী??

ইলিশ মাছ ভাজা হচ্ছে, ঘ্রাণ পাচ্ছি। অসম্ভব সুন্দর ইয়ামি গন্ধ! ভাবছি, রান্না করার আগেই গোটাকয়েক খেয়ে ফেলবো। আচ্ছা, ঠিক কয়টা ইলিশ মাছভাজি পরপর খেয়ে ফেললে মন হয়ে যাবে? সাড়ে সাতটা খেলে হবে না? ওই বাকি অর্ধেকটা বেড়ালটাকে দিয়ে দেবো। ও তোমার চেয়ে অনেক ভাল।”

ওর এই চিঠিটাই আমার জীবনে এতোটা সত্য হয়ে ফিরে আসবে, সেটা কে জানত? সেই রাতটির কথা কল্পনাতে আনতে চাইছি না, কিন্তু চলে আসছে বারবার। সেই রাতে তোমার হৃদয় তার হবে, আর তার হৃদয় তোমার হয়ে যাবে আজীবনের জন্য। এ জন্মে, পরের জন্মে তোমরা একে অপরের হয়ে থাকবে। চাইলেও আর কখনওই তোমায় আমার মতো করে পাবো না, ছুঁয়ে দেখতে পারব না, খুব কাছ থেকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারব না। অবশ্য, এসব এখনও তো করতে পারি না। তবুও, পারতেও পারি—এই ভাবনাটা বড় বোকাবোকা সুখ দেয়, জানো? তোমায় ভালো তো বাসি। তখন অন্যের ভালোবাসার মানুষটিকে এমন করে ভালোবাসতে পারব তো? আমি নিজেকে বারবার প্রশ্ন করে যাই, পারব তো ওই কষ্ট সহ্য করতে? হ্যাঁ, আমিই তোমাকে একটা সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। তুমি বলেছিলে, তোমার জন্য একটা পাত্রী দেখে দিতে। যদি জানতে, কাকে বলছ এ কথা, কখনও কি বলতে পারতে? আমি অবশ্য, তোমাকে কনেখোঁজার একটা রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলাম। আর সেই আমিই এখন কী করছি? আর কী লিখছি এসব? সত্যিই জীবনটা বড় অদ্ভুত। এতো বদলে যায় সবকিছু! বিশ্বাস করো, তোমাকে ভালোবাসার একদমই কোনও ইচ্ছে ছিল না আমার। কিন্তু সারাদিনই তোমার কথা মাথায় বাজতে শুরু করল সেদিন থেকে যেদিন তুমি তোমার লাইব্রেরির ১৬৭টা ছবি আপলোড করলে। তখন থেকে এখনও পর্যন্ত তুমিই মাথায় আছো। সেই কবে কীভাবে যেন ‘তুমি’ নামক একটা পোকা আমার মাথায় ঢুকেছে, আর দিনের পর দিন বংশবিস্তার করে চলেছে। ভালোবাসা মানেই ‘তুমিপোকা’ মাথায় ঢুকে যাওয়া। যা ছিল না, নেই, থাকবেও না, তাকে ঘিরে বোনা স্বপ্নের ঘায়ে মরার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসা মানেই, যে পোকাটি নেইই, সে পোকাটিকেই সমস্ত চেতনা দিয়ে অনুভব করা। এই পোকার চাইতে ভয়ংকর পোকা পৃথিবীতে আর নেই। এই পোকা তার প্রবল অস্তিত্ব আর শক্তি দিয়ে সকল যুক্তি আর অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। কষ্ট আর না-পাওয়ার বেদনা এই পোকার দেখানো পথ ধরে চলে। আর্তনাদ কিংবা নীরব অশ্রুপাতের আন্তরিক নিভৃত পরিচর্যা করে যায় এ পোকা। এই পোকাই আমায় প্রতীক্ষা করিয়ে রাখছে প্রতিটি মুহূর্তেই, মৃত্যুর নয়, তোমার বিয়ের দিনটির জন্য। আমি পারব তো সামলাতে নিজেকে সেইদিন? ঈশ্বরকে প্রায়ই বলি, যাতে তিনি আমাকে এই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা দেন। আচ্ছা, সেই দিন ঈশ্বরও আমাকে ভুলে যাবেন নাতো? তোমায় আশীর্বাদ করতে গিয়ে যদি আমায় ভুল মেরে বসে থাকেন, তবে আমি কী করবো? যাকে ঈশ্বরও ভুলে যান, সে কোথায় গিয়ে ঠাঁই পায় এ নির্দয় পৃথিবীতে?

তোমার নিজস্ব পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব নেই কোথাও, এটা আমি খুব ভাল করেই জানি। তবুও তোমার বিয়ের যজ্ঞটা আমার হৃদয়টাকে কাঠ বানিয়ে কোরো না, প্লিজ! আমি তো জ্বলছি সেই কবে থেকেই; অনর্গল। সেদিন থেকে জ্বলছি, যেদিন থেকে উপলব্ধি করলাম, তুমি আমার অনুভূতির অনেকটা অংশ নিয়ে বাস করছ আমার ভেতরে। এখনও জ্বলছি। প্রতিনিয়ত পোড়াক্ষতের আঘাত পাচ্ছি, তবুও তার কিছুই তোমায় জানতে দেবো না। মৃত্যুও যদি আসে, তবুও না। তাই অনুরোধ করছি তোমায়, আমায় নিমন্ত্রণ কোরো না সেই মাহেন্দ্রক্ষণে হাজির হতে। আমার নামে একটি কাঠি ধরে সাতপাকের আগুন জ্বালিয়ো, প্লিজ! আমি দূর থেকেই জ্বলব, পুড়ব একাকি, আর অগ্নিদেবকে প্রণাম করব। তুমি সেই জ্বলন্ত শিখায় প্রজ্বলিত হবে। আমার পবিত্র হৃদয়ের দহনে, জ্বলনে তুমি আরও আভাময় মুকুটধারী রাম হয়ে উঠবে। আর তোমার সীতা সেই জ্বলন্ত আগুনের শিখায় শুধুই রূপের বৃষ্টি ঝরাবে সারাটি মণ্ডপময়। সবাইকেই আলোকিত করে তুলবে সে, সাথে তোমার জীবনটাকেও। কী ভাবছ? যেনতেন কাঠ দিয়ে তোমার বিয়ের হোমানল জ্বলবে? নাগো, না, যেনতেন কাঠ নয়, আমার হৃদয়গড়া কাঠ পুড়িয়ে তোমার জীবনের আলোটুকু নিয়ে নিয়ো। আমি পুড়েপুড়ে ছাই না হওয়া পর্যন্ত তুমি আর তোমার অর্ধাঙ্গী হাত ধরাধরি করে হাসতেহাসতে জীবনের রঙটাকে জীবনে জড়িয়ে নিয়ো। আমি তো জ্বলছিই তোমার জন্য। মৃত্যুতেও তোমার জন্যই জ্বলব। তুমি যতক্ষণ চাইবে, ঠিক ততক্ষণই জ্বলব। আমি জ্বললে যদি তোমার জীবনে সুখ আসে, তবে আমি তা-ই করব। এখন খুব ভাল করে বুঝি, শুধু আগুনে নিজেকে বিসর্জন দিলেই অগ্নিপরীক্ষা হয় না। ওরকম বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তো আমি প্রতিনিয়তই যাচ্ছি। সকলের সামনে পোড়ার চাইতে একাকি পোড়া, জ্বলতে থাকা যে কী ভীষণ কষ্ট, সেটা যে না পোড়ে সে কখনওই বুঝতে পারবে না। আমি জ্বলছি গো! তাই, আমি জানি। আমি বোধহয় জ্বলতেই জন্মেছি। তাইতো আমি জ্বলেপুড়েও দিব্যি বেঁচেবর্তে আছি। আমি একলা আঁধারে মিশে আছি, কাউকেই সাথে রাখিনি। এমন করে পথচলাতে আমি আনন্দ খুঁজে বেড়াই। আমার বেঁচেথাকার ধরনের সাথে আমার হৃদয়ের যে সংযোগ, সেটাতে তোমাকে মিশিয়ে খুব যে ভাল আছি, তা নয়, তবে ওভাবেই তো আছি। কী করবো আমি মেনে না নিয়ে? বলতে পারো, আর কত একলা আঁধারে মিশে কাঁদতেকাঁদতে নিজেকে হারাতে থাকব আমি তোমার জন্য? আর কতটা পুড়লে পরে শুদ্ধ হবো আমি? আমি পারব তো সহ্য করতে শেষ পর্যন্ত? চুপ করে আছ কেন? বলো না!

কী করছে আমার রামটা, হুঁ? তার সীতার কথা ভাবছে? নাকি, রাধিকাদের কথা? কৃষ্ণের তো তাও অষ্টসখী ছিল, আমার রামের আছে কয়টা? রামই হোক, আর রাবণই হোক, সখী রাখার ব্যাপারে সবাইই শ্রীকৃষ্ণ! নাহহ! তুমি স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচরণে রাম হতে পারো, কিন্তু সীতা কি পাবে তুমি? তাহলে তো স্বয়ংবর সভা চাই। তা তো হবে না, বাছা! তুমি তো আর রাজকুমারীদের মালার অপেক্ষায় নেই, বরং রাজকুমারীরাই তোমায় মালা দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে। তোমার জন্য স্বয়ংবর সভা নয়, স্বয়ংবউ সভার আয়োজন করা লাগবে। পৃথিবীর সব সুন্দরীরা দাঁড়িয়ে থাকবে আর তুমি মালা হাতে নিয়ে নিয়ে ঘুরতে থাকবে, কার গলায় দেয়া যায়! এহহহ্‌ সুন্দরীই লাগবে উনার! স্টুপিড একটা!

আমাকে একটু বিষ এনে দেবে? তোমাকে ভালোবাসব বলেই কি বেঁচে আছি? নাকি, আমার মৃত্যুর কারণ হওয়ার জন্যই তুমি আমার পৃথিবীতে এসেছ? দিন যতই যাচ্ছে, ততই ভালোবাসাটা আরও গাঢ় হচ্ছে। এটাকেই স্লো-পয়জনিং বলে? আমি তো সামনের দিকে এগোতেই পারব না যদি এভাবেই চলতে থাকে। এখন শুধু বসেবসে কাঁদতেই ইচ্ছে করে। একটুও হাসতে মন চায় না। তোমাকে এই চোখদুটোর সামনে রেখে লিখছি, জানো? তুমি তাকিয়ে আছ আমার দিকে আর আমি মাথা নিচু করে লিখেই যাচ্ছি। মনে হচ্ছে, তুমি আমার গভীরটা মনোযোগ দিয়ে দেখছ। এটাও একটা ভাল অনুভূতি। অ্যাট লিস্ট পরীক্ষার হল থেকে তো ভাল! জানো, স্যাররা মাঝেমাঝে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। দেখতে খুব বিশ্রী লাগে আমার। এমনভাবে গভীর দৃষ্টিতে তাকায়, মনে হয় যেন আমার মাথার ব্রেইন ফুঁড়ে আমার শেখা পড়াগুলি সব টেনে বের করে নেয়। ভুলতে থাকি যা লিখব তার সবকিছুই। লিখতে পারি না তখন। স্যাররা নাহয় ওরকম, ছাত্রী দেখলেই ওরকম করে, কিন্তু এখন তুমি যে তাকিয়ে আছ হাঁ করে? তুমি কি স্যার নাকি? হিহিহি…….শোনো, মজার কথা বলি। এই যে তুমি তাকিয়ে আছ, এতে কিন্তু আমার ভীষণ ভাল লাগছে। দেখ, তোমাকে নিয়ে কী দিব্যি লিখে যাচ্ছি, একটুও সমস্যা হচ্ছে না আমার। আচ্ছা, তুমিও কি স্যারদের মতো মেয়েদের দিকে ওরকম করে তাকিয়ে থাক হাঁ করে? আপাদমস্তক দেখ, মানে, ছেলেরা মেয়েদের যেখানেযেখানে তাকায় আরকি! নাকি, এখনও ব্রহ্মচারী ভাবটা যায়নি পুরোপুরি? এহহ্‌! আমার মনে তো হয় না। কী? যা-ই বলি, সবকিছুতেই হুম? কিছু বলবে না? লজ্জা করছে এখন বলতে? নাকি, কোনওদিনই কিছু বলবে না? (আমার রুমে ৩টা বড়বড় লাভ সাইনের স্টিকার লাগিয়ে রেখেছি একটু আগে। একটা তোমার জন্য, আরেকটা আমার নিজের জন্য, অন্যটা…….ইসস্‌! বলা যাবে না! সিক্রেট!)

আমাকে সরস্বতী পুজোয় একটা রেসপন্সও করলে না। আমি অবশ্য আশাও করিনি। কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারি ওটা কী করলে? কেন করলে? এমনি এমনিই? কোনও কারণ ছাড়াই? নাকি, ওরকম করে অনেককেই পাঠিয়েছ? ভেবেছ, একটা মেসেজ ওকেও পাঠিয়ে দিই না, কয়েক পয়সারই তো ব্যাপার! নাকি, শুধুই শো করলে, ফর্মালিটি মেইনটেইন করলে? বলো না! আমি ওই মেসেজটা অন্তত কয়েকশোবার পড়ে ফেলেছি। আমি ভেবেটেবে কোনও কূলকিনারা পাইনি। তুমি এতো অদ্ভুত হলে কেন? তোমাদের বংশ কি অদ্ভুত-বংশ? ওখানে কি সবাইই অদ্ভুত হয়? জানো, ৮:৫৫-তে যখন মেসেজটা দেখি, তখন আমি পুরোই জমে বরফ হয়ে গিয়েছিলাম। রুমের দরোজাজানালা বন্ধ করে হাউমাউ করে কেঁদেছিলাম। সুখের তীব্রতায়! সারপ্রাইজ কী জিনিস, বুঝ? তুমি তো বুঝবেই! সবাই তো তোমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। তুমি আমাকে ওই দিনটিতে মাত্র তিনটি শব্দ আর তিনটি সাইন দিয়ে এলোমেলো করে দিয়েছিলে! নাড়িয়ে দিয়েছিলে আমার পুরো পৃথিবীটাকে। শব্দের যাদু শব্দে নয়গো, শব্দটি যেখান থেকে আসছে, সেখানে। আমাকে সেদিন তুমি যতটা কাঁদিয়েছিলে, ঠিক ততটা খুশিও করেছিলে। এবং, আমি এখনও খুশি। মোবাইলের স্ক্রিনের একটুখানি জায়গা কীভাবে করে আমার পুরো পৃথিবীটাতে জায়গা করে নিয়েছিল, সেকথা আমি লিখে বোঝাতে পারব না। আমি তোমাকে নিয়ে অনেক খুশি। তুমি আমাকে ভ্যালেন্টাইন উইশ করবে, এটা তো পুরোই অষ্টম আশ্চর্য! আমি সেদিন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম, জানো? এতো কেঁদেছি সেদিন রাতে, তা বলার মতো না। অনেক কষ্ট হয়েছিলো নিজেকে সামলাতে। তোমার সামান্য রেসপন্স পেলেই যে মেয়েটি মরিয়া হয়ে ওঠে, সে মেয়েটি এমন একটা টেক্সট পেলে যে কতটা উন্মত্ত হয়ে ওঠে, বুঝতে পারো? সেদিন আমি টেক্সট পেয়েই সাথেসাথে তোমাকে ফোন করেছিলাম। তুমি অসুস্থ ছিলে, ধরনি। সেটা মেসেজ পাঠিয়ে জানিয়েও দিলে। আমার মনে হচ্ছিল, পুরো পৃথিবীটাই আমার হয়ে গেছে। তোমার একটু সদয় সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার পেলে আমি সবকিছু ভুলে তোমার কাছে থেকে যেতে পারি চিরকালের জন্য। এসব খুশি আর সুখ পৃথিবীতে কোনওকিছুর বিনিময়েই পাওয়া সম্ভব নয়। ঈশ্বরকে অনেক ধন্যবাদ তোমার ভেতরে মাঝেমধ্যে আমার জন্য একটুখানি অনুভূতি জাগিয়ে তোলার জন্য। আমি জানি, এই সদগতিগুলি কেবলই ঈশ্বরের ইচ্ছে, এছাড়া আর কিছুই নয়। নইলে তুমি হিরো কোন দুঃখে আমাকে টেক্সট দেবে, আমার টেক্সটের রিপ্লাই দেবে? কী-ই বা দরকার তোমার?

তোমার ভ্যালেন্টাইন মেসেজ………আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। কী ছিল ওটা? তিনটা শব্দ। আর??? তিনটা লাভ সাইন! এও সম্ভব? আমি ভাবতেই পারছি না! আচ্ছা, তিনটা লাভ সাইন কেন দিয়েছ? একটা কেন দাওনি? কিংবা দুইটা, বা চারটা কেন নয়? তিনটাই কেন? আমি এটা নিয়ে ছোটোখাটো একটা গবেষণা করে ফেলেছি। কিন্তু কোনও উত্তর পাইনি। আমি একজন ব্যর্থ গবেষক। ভ্যালেন্টাইন ডে বলে তিনটা দিয়েছ? তিন সংখ্যাটি কি ভালোবাসার ক্ষেত্রে স্পেশাল কিছু? কিন্তু আমি যে আমি আর তুমি’র পাশে তোমার বিশেষজনকে কল্পনায় আনলেও কষ্টে মরে যাই! তিন তো ভালকিছু হতেই পারে না ভালোবাসায়। নাকি, জাস্ট দেয়া উচিত, কিংবা তোমার আঙুলটা টাইপ করে ফেলেছে বলে দিয়ে দিয়েছ? তাহলে তো শুধু মেসেজ দিলেই হতো, সাইন তিনটা কেন দিয়েছ? তিনটা সাইন মানে কী? I love you? তিনটা লাভ সাইন, মাথায় আটকে আছে তো! বের হচ্ছেই না। বলো না বলো না, কেন দিয়েছ! কী বোঝাতে চেয়েছ? কী বুঝে নেবো আমি? আমি কী বুঝে নিলাম, ওতে কি কিছু এসে যায় তোমার? জানি, আমার এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই। আমি এও জানি, তোমার মেসেজটা ছিল জাস্ট তোমার ভক্তের প্রতি তোমার একটা কৃতজ্ঞতা। হয়তো, তুমি তোমার ডাইহার্ড ফ্যানদেরকে ওরকম লাভ সাইন পাঠিয়েই থাক। এটা বড় কোনও ব্যাপারই না। তবুও কিছুকিছু বিষয় আপেক্ষিক। সবার জন্য যেমন সবকিছু না, তেমনি সবার জন্য সবকিছু মেনে নেয়াটা সহজও না। তোমার ওই একটা মেসেজ আমার সারারাত, পরদিন, পরেররাত, এর পরেরদিনরাত, এমনকি আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে, যার ছিটেফোঁটাও তোমার গায়ে লাগবে না কোনদিনও, কখনও।

তুমি কী লিখ ফেসবুকে? কেন লিখ? কী প্রমাণ করতে চাও? তোমার হাহাকার, বেদনা, তাড়না? মিথ্যেবাদী তুমি! তোমার জন্য সারারাজ্যের মেয়েরা পাগল, অথচ তাদের কাউকেই পাত্তা দাওনি তুমি। কী চাও তুমি? স্বর্গের অপ্সরা? নাকি, অর্ডার দিয়ে বানাতে হবে কাউকে? তোমার এসব দেখলে আমার গা জ্বলে, বিরক্ত হই মাঝেমাঝে। ভালোবাসতে দাও না কাউকেই, অথচ ভালোবাসা দেখিয়ে লোভ দেখাও? ওসব ভালোবাসার কথা আসে কেন? কোত্থেকে আসে? তুমি নিজেকে একজন সফল প্রেমিক হিসেবে দাঁড় করাতে পারবে, এটা বোঝাতে চাও সবাইকে? ভুল মিস্টার! খুব ভুল তুমি! যতই সাহিত্যিক ভাষায় প্রেম প্রকাশ কর না কেন, আমি তোমাকে পুরো পৃথিবী এক করে চ্যালেঞ্জ করতে পারি যে, আমার মতো করে ভালোবাসার ক্ষমতা, কিংবা আমার চেয়ে বেশি ভালোবাসতে তুমি কখনওই পারবে না, শিখতেও পারবে না। তুমি অতোটা বড় প্রেমিক কোনওদিনই হতে পারবে না, হবেও না। তুমি অনেক অর্জন করেছ, করছ, করবেও; কিন্তু তুমি আমার কাছ থেকে সহস্র যোজন পিছিয়ে থাকবে অন্তত এই দিক দিয়ে। তবে হ্যাঁ, তোমায় অনেক ধন্যবাদ যে তুমি সবই বোঝো এবং একেবারে অকপটে বল। আমার কথাগুলি আমার থেকে কেড়ে নিয়ে সেদিনের লেখাটা শেষ করলে? আমি খুশি হয়েছি। কোনও না কোনওভাবে তো তোমার মাথায় যেতে পেরেছি। কোনওদিনই তো তোমায় বলতে পারব না, ভালোবাসি। বলেটলে তোমার কাছে নিজেকে ছোট করে ফেলার চেয়ে আমার কাছে মৃত্যুও শ্রেয়। যে অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হবে আগে থেকে জানা যায়, সে অনুরোধ করে নিজের সম্মান নষ্ট করে কী লাভ? তার চেয়ে বরং থাক না তোমার কাছে এক ভক্ত অস্তিত্বহীন! বলে দিলে কী হবে? কিছুই না। আমিও তোমার কছে একদিন আরও পাঁচজন মেয়ের মতোই হয়ে যাবো। নাকি, এখনই হয়ে আছি? আমি জানি, আমি তাদের চেয়ে আলাদা কিছুই নই। তবুও, একটা বাড়তি যোগ্যতা তো আছে। কী সেটা? ওই যে, ভালোবাসি! সত্যি বলছি, এতোটা ভালো তোমাকে কেউই বাসেনি কখনওই, বাসে না এখনও, বাসবে না কোনওদিনই। জানি না, এ জীবনে আর দেখা হবে কি না। তবে তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে শেষবারের মতো একবার দেখা কোরো প্লিজ! কিছু না দিতে পারি, তোমাকে একটা প্রণাম করবো শুধু। আর তোমার একটা চুল নেবো। আর তো কিছু নিতে পারব না…………না? দেবে তো এ দুটো জিনিস? জানি, তাও দিতে কার্পণ্য করবে। তবুও তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবাসাটা উচিত না। ইচ্ছে করছে মনটাকে ধরে একটা চড় মারি। সত্যিসত্যি মারতে পারলে সত্যিই ভাল হতো। বেয়াড়া এ মনটাকে পিটিয়ে তক্তা বানাতে পারতাম!

পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ আছে—এক ধরনের মানুষ প্রেমে পড়ে অমর হয়। আরেক ধরনের মানুষ প্রেমে পড়ে মরে যায়। আমি দ্বিতীয় ধরনের মানুষ। আমি প্রেমে পড়েছি ব্যথা নিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দেয়ার জন্য। বুকের ভেতরে যখন চিনচিনে ব্যথাটা শুরু হয়, তখন আর কিছুই করতে পারি না। ইদানিং রোজ রাতে এমন হচ্ছে। তোমার কথা মনে পড়ে, তুমি মনে চলে আস, এরপর আর কোনও কাজই করতে পারি না। খুবই অবাধ্য রকমভাবে তোমার চেহারাটা বারবার চোখের সামনে এসে যায়। এই দেখো না, কাল পরীক্ষা, আর আজ লিখতে বসে গেছি কী সব হাবিজাবি! আমি যে আর পারছি না। তুমি আমার জীবনটাকে উথালপাথাল করে দিয়েছ। এও কি প্রেম? এ কেমন প্রেম? কী প্রেম? আশ্চর্য! এটা যায় না কেন মাথা থেকে? ভেতরটা, মনে হচ্ছে, ভেঙেচুরে চুরমারচুর হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। একটু আগেই ভাবলাম, অন্য কোনও নাম্বার থেকে তোমাকে ফোন করবো, তোমার ভয়েসটা শুনব একটু, আমার নাম্বার তো ধরই না। পরে ভাবলাম, না, ঠিক হবে না। আমি নিজেকে ধরেও রাখতে পারছি না। এভাবে খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলে জীবনটাকে আর কতদূর এগিয়ে নেবো? কী আজব! আমি পড়াশোনা করবো কীভাবে? পড়তে পারছি না একদমই। মাঝেমাঝে মনস্থির করি, তুমি যা যা পছন্দ কর, যেমন পছন্দ কর, যেরকম করে পছন্দ কর, ঠিকঠিক সেগুলিই করবো সারাদিন। আমি আসলে নিজেই জানি না, আমি বিরক্তিকর কি না। আপাতত, নিজের কাছে নিজেকে অতোটা বিরক্তিকর মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে, যা করছি, ভালোবেসে করছি। আমি তোমার কাছে বিরক্তিকর হবো না। তোমার মনের মতো হয়ে থাকলে তো আর আমাকে বিরক্ত লাগবে না তোমার। আমি বই, মুভি আর মিউজিক নিয়েই তোমার সাথে জীবন কাটাব। কিন্তু, তোমাকে বাদ দিয়ে তো সম্ভব না সেটা। আমি দিনশেষে শুধুই তোমাকে নিয়েই পড়ে থাকি। আমার একটুও ক্লান্তি আসে না, আফসোসবোধ কাজ করে না, বিরক্তি আসে না। তবে কষ্ট হয়। তোমাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না আমার এ কষ্টের কথা। তোমার কল্পনারও বাইরে এ অনুভূতিটা।

খুবই স্পষ্টভাবে আমি তোমাকে দেখতে পাই, যখন তুমি চোখের সামনে থাক না। তুমি চোখের সামনে এলে তুমি হারিয়ে যাও। আমি চোখ খুললে অন্যকিছু চোখে পড়ে না, শুধু তুমিই এসে যাও কোত্থেকে যেন! উফ!! একটার পর একটা তুমি এসে যাও চোখের সামনে, বিভিন্ন স্টাইলে, বিভিন্ন কারণে। আমি চোখ বন্ধ করলেও তোমাকে দেখি! এ কী ফালতু একটা অসুখ হলো আমার! এমন একজনকে মনের মধ্যে পুষে রাখি দিনের পর দিন যে কিনা জানেই না আমার মনের কথা। জানা তো দূরের কথা, আমি যে তার চিন্তাভাবনার জগত থেকেও একেবারে দূরে বাস করি। তার জগতে আমি একজন অনাহূত এলিয়েন। তার জীবনগ্রহে আমি কেবলই এক অর্বাচীন উপগ্রহ। যার নামটা সে কেবল জানে, যাকে সে স্রেফ চেনে। এইটুকুই ব্যস! অথচ, তাকে নিয়ে আমার জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। যাকে আমি রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই গত চার মাস ধরে ভাবছি, আমার কথা তার ঘুণাক্ষরেও মনে আসে না। কেনই বা আসবে? কে আমি? কী করেছি আমি? কেন সে চিন্তা করবে আমার কথা? কী আশ্চর্য! কী আস্পর্ধা আমার! শুধুশুধু সে কেন আমার মতো একটা অপদার্থের কথা ভাববে? আমি তো যাকেতাকে নিয়ে ভাবি না। আমি তো ঘুরেফিরে তাকে নিয়েই সারাদিন ভাবি। কারণ, সে আমার কাছে ভাববারই পাত্র এবং বিষয়। অতএব, তাকে নিয়ে ভাবাই যায়, তাকে ভাললাগাই যায়, কিন্তু তাকে ভালোবাসাটা কি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না? আচ্ছা, ঠিক আছে বাবা, ভালো যখন বেসেই ফেলেছ, তখন বাস না! কারও কোনও ক্ষতি তো আর করছ না। কিন্তু তাকে চাও কোন সুখে? কই, চাইনি তো! তাহলে কেনই বা এক্সপেক্ট কর যে সে তোমার খোঁজ নেবে? কেন নেবে? কী দায় তার? কে তুমি? Who the Hell are you? কী যোগ্যতা তোমার? তুমি তো ওর নখেরও যোগ্য নও। নখ তো বড় কথা, ওর উচ্ছিষ্টেরও যোগ্যতা নেই তোমার। তাহলে কী করে ভাবো যে ও তোমাকে নিয়ে চিন্তা করবে? কখনওই না! অসম্ভব! তাই শুধু নীরবে ভালোবেসেই যাও, ওকে বিরক্ত কোরো না, বোকা মেয়ে! একাএকা লিখে যাও, ওকে কক্ষনো জানতে দিয়ো না। লিখ না! লিখতে থাক! ও তো বলেইছে; মনে নেই তোমার সে কথা? Don’t think on your mind. Do think on paper. আর তাছাড়া এ পৃথিবীতে তোমার কষ্টগুলিকে বুকে ধারণ করার ক্ষমতা তো শুধু এই কাগজেরই আছে, তাই না? এই শাদা শুভ্র কাগজ তার বিশাল, বিস্তৃত বুকটা পেতে দিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে। তাইতো একটুখানি হলেও জায়গা পেয়েছ বিলাপ করার। নইলে তো সারাদিন ঈশ্বরকেই তোমার ঘ্যানরঘ্যান শুনতে হতো।

“তবুও, লড়ে যাও, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এমনকি, শেষ নিঃশ্বাসটুকুও পরম বিশ্বস্ত। একবার বিশ্বাস রেখে লড়ো! প্রতিটি নিঃশ্বাসের দাবিতে বেঁচে দেখোই না কী আশ্চর্য যাদুটা অপেক্ষা করে আছে তোমার জন্য!!

আমি জানি, তুমি খুব ভাল করেই জানো, হেরে যাবে। এও জানি, যা জানো না, তা হল, মৃত্যুর আগেই মরেযাওয়া মানুষ মৃত্যুর পর কারও স্যালুট পায় না। পথের কুকুরটাও সে মৃতদেহ ছিঁড়েখুবলে খাওয়ার আগে শুঁকে দেখে নেয়, ও মাংসে ওর রুচি হয় কি না!

প্রকৃত অর্থে সাহসী মানুষ জন্মায় বারবার, কিন্তু মরে মাত্র একবার। প্রথম জন্মে কারওই কোনও হাত থাক না, পরের প্রত্যেকটা জন্মই ব্যক্তিগত অর্জন। যে মৃত্যুতে মুকুট শোভা পায় না, সে মৃত্যুর জন্য সারাজীবনের প্রতীক্ষা বৃথা।

বলি কী, মরবেই যখন, একবারই মরো, মৃত্যুর পর, এর আগে কিছুতেই নয়। এর আগ পর্যন্ত বেঁচে থাকো, যুদ্ধ করো, নিজের সাথেই, হারবার কিংবা হারাবার ভয়কে প্রশ্রয় দিয়ো না বিন্দুমাত্রও, এগিয়ে যাও শরীরের শেষ রক্তবিন্দুটির শপথ নিয়ে, সংশপ্তকের মতো করে। জানোই যদি মরবে, তবে যুদ্ধে কীসের ভয়? আর যদি এমনই হয়, মরেই আছো, তবে তোমার হারানোর কী আছে? হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও মরবে, লড়লেও মরবে। আজ তবে, লড়াইই হোক—যেটির কথা মাথায় এলেও শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে, এমনই প্রবল লড়াই!

শুধু বীরের মৃত্যুই পৃথিবী মনে রাখে, কাপুরুষের নয়। এক বীরের রক্তে লক্ষ বীরের জন্ম হয়, লক্ষ কাপুরুষের রক্তে পৃথিবীর ইতিহাস অনর্থকই কলঙ্কিত হয়। জীবনটাকে নিয়ে শেষবারের মতো একবার জুয়াখেলে দেখোই না কী হয়! বসে থেকো না, খেলো! জন্মেছ তো খেলতেই! মরতে যদি হয়ই, নাহয় খেলতে খেলতেই মরো!!”

তোমারই কথা। তবুও হয় না, হয় না, হয় না। কোনওভাবেই অশান্ত মনটা শান্ত হয় না। তুমি না হেরে নিজের সাথে লড়ে যেতে বলেছ। আমি হেরেহেরে বেঁচে থাকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিজের কাছে হেরে, তোমার জন্য আমার যে ভালোবাসা, তার কাছে হেরে। শেষ রক্তবিন্দুটি দিয়েও তোমায় ভুলে থাকার নয়, তোমায় আরও বেশি করে ভালোবাসার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেঁচে আছি। এও বেঁচে থাকা! তোমার দেয়া হাজারটা টেকনিক ফলো করলেও মন অশান্তই থেকে যায়। আমিই বোধহয় প্রথম বাঙালি মেয়ে যে কিনা রবীন্দ্রসংগীত শুনে সহ্যই করতে পারে না। শুনি, টপটপ করে চোখ দিয়ে জল পড়ে, পড়তেই থাকে। বুকের ভেতর যত শ্বাস থাকে, সব টেনে বের করে নিয়ে আসে। সফট মেলোডির সং আমার জন্য না, প্রেমের কবিতা আমার জন্য না, প্রেমের গান আমার জন্য না, প্রেমের গল্প-উপন্যাস আমার জন্য না, কারণটা কী, জানো? এসব পড়ে, শুনে, বুঝে আমাকে অঝোরে কাঁদতে হয়। চিকেনহার্টও মনে হয় আমারটার চেয়ে শক্ত। আমি এতো ইমোশনাল কেন, বুঝি না। তুমি বল, আবেগকে ভালোবাসতে, জীবনে কিছু না পাওয়ার চাইতে কষ্ট পাওয়া ভাল। হ্যাঁ, আমি তাইই পাচ্ছি। আজ আমি খুশি—শুধুই তোমার জন্য। তাইতো তোমাকে ধন্যবাদ দিলাম ছোট্টো করে। বড় করে দিলেই কি তুমি নেবে নাকি? যারতার যন্ত্রণা কেনই বা বহন করতে যাবে? কী দরকার বিরক্ত করার তোমাকে? এমনিতেই অনেক করে ফেলেছি। তাই ছোট করেই দিলাম। তুমি তো কিছুই জানতে চাও না। অবশ্য, আমাকে নিয়ে জানারই বা কী দরকার তোমায়? দায়ই বা কীসের অতো? লাগবে না গো! আমি আমার পৃষ্ঠাবন্ধুর বুকেই চিরকাল যন্ত্রণাচারণ করে যাবো নীরবে।