সমুদ্রতীরে অপেক্ষমাণ নীলাঞ্জনছায়া

  
 একটা কথা বলো তো! যাকে ঘিরে তোমার এত এত নৈবেদ্য,
 কেন তাকেই ফেলে অমন করে চলে গেলে, অলক?
 গেলেই যদি, কেন আজও তাকেই পুষে রাখছ মনের মধ্যে?
  
 কষ্টের তীব্রতা কী, এতটা বোঝো,
 তবু অপেক্ষার কী তীব্র ব্যথা, তা আজও কেন বুঝতে শেখোনি?
  
 আমি জানি, তুমি আমার চেয়ে অনেক বেশি ভালো ওকেই বাসো।
 বাসবেই তো, অলক! ওকে ঘিরেই যে তোমার এমন বেঁচেথাকা!
  
 বাস্তবতায় ঘেরা যে তোমায় সবাই দেখে, তার চাইতে
 তোমার তুমির মূল্য, অলক, আমার কাছে অনেক বেশি!
  
 কাছে থাকার দাবিটা দিয়ে যদি না রাখো কাছেই,
 তবে সবাই বলবেই তো, এ নিছকই ছেলেখেলা গো!
  
 আমি নাহয় তুচ্ছ মানুষ, তবু অপেক্ষা যে করে ছিল,
 তার মনটাকে কী দিয়ে বোঝাই, বলো? জানি, হয়তো
 এ উপেক্ষা নয়, নয় অবহেলাও, তবু এ যে কষ্ট ঠিকই!
  
 এত কষ্ট পেলে রইতে কি তুমি এমন ঠায় দাঁড়িয়ে? রইতে না গো!
 তুমি চলেই যেতে উদ্‌ভ্রান্তের মতো, অভিমানের পতাকা উড়িয়ে
 বলেই দিতে, থাকো তুমি তোমার তুমিকে নিয়ে, এই…চললাম!
  
 তারপর তুমি গাল ফুলিয়ে, নিজেকে শাস্তি দিতে উদ্যত হয়ে
 চলেই যেতে দূরসীমানায়, কেউ যেন আর ছুঁতে না পারে!
 লজ্জাবতীর মতোই নিতে গুটিয়ে, গুটিয়েই নিতে তোমার হৃদয়ের বাগানটুকু।
  
 অলক, ভালো তো তুমি বেসেছ তাকেই, অথচ ভালোবেসে
 বুকে জড়িয়ে নেবার আগেই সে কেমন হারিয়ে গেল!
 অকৃত সেই অপরাধের শাস্তি দিচ্ছ গোটা পৃথিবীকে? এভাবে হয়, অলক?
  
 কেউ যখন ভরাদরদ দিয়ে দেয় কিছু, তা নিতে হয় গো দুহাত ভরে!
 উপেক্ষা নয়, অবহেলাও নয়, তুমি কেবল অপেক্ষা করোনি, অলক!
 বুঝতে পারোনি হৃদয়নিংড়ানো একজীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস।
  
 যে উচ্ছলতায় সমস্ত সুর ভেসে গিয়েছিল, তাতেই কিনা
 সূর্যআলো নিভে যাওয়ার মতো করে এ হৃদয়ে দাগ পড়ে গেল!
 কেন বুঝলে না, অলক? এমন হওয়ার তো কথা ছিল না…।
  
 আমি দেখেছি, একজন অলক রাস্তাঝাড়ু দিচ্ছে। যেখানে যতটা ময়লা, সব সরিয়ে নিচ্ছে।
 ওরাও ঘুমায়নি। আমি কেবল শব্দ শুনেছি। ওদের পায়ের শব্দের সাথে
 যদি তোমার পায়ের শব্দ মিলে যায়? যদি ফিরে এসে না পাও আমায়?
 তাই তো আমি তাকিয়ে রয়েছি, দুইপাতা যেন এক না হয়!
  
 তুমি ফিরে গেলে সমস্ত অপেক্ষা হারিয়ে যাবে।
 তুমি শুধুই হারিয়ে যেতে শিখেছ, লুকাতে শিখেছ।
 এমন করলে আর হবেই-বা কী, বলো?
  
 এমন অম্লানরাত্রি তুমি স্বপ্ন দেখেই কাটিয়ে দিলে, অলক! আর আমি
 নিরবচ্ছিন্ন প্রতীক্ষায় বিসর্জন দিলাম আমার সমস্ত স্বপন!
  
 অলক, আজ অভিযোগের পাহাড় এঁকে লাগিয়ে দিলাম তোমার বুকে।
 ইচ্ছে হলে হাত বুলিয়ো, একটা পাখি একাই কেঁদে চলে গেল দূরআকাশে।
  
 যাওয়ার আগে, সে পাখিটা রেখে গেছে জাদুর পালক,
 সেই পালক বুকে পুষে, মনে রেখো, সে আসবে ঘরে।
 যেদিন তুমি সব যাতনা ভুলে হাসবে আবার নতুন করে,
 ভুলবে তোমার দুঃখ যত, সেদিনই সে আসবে, দেখো!
  
 যাবার বেলায়, সমুদ্রকে বলে রাখলেও সে আমায় আড়াল করে রেখে যেত না।
 কাউকেই কিছু বলে না দিয়ে তুমি আমায় ফেলেই গেলে, অলক?
 তবে কি আমি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকার শক্তি নিয়ে এ পৃথিবীতে আসিনি এখনও?
  
 বাস্তবের আমার চেয়ে, কল্পনার ওই তোমার তুমিকে বড্ড বেশিই ভালোবেসেছ।
 তাই তো আমায় কথা দিয়েছ ঘরে ফিরবে বলে, অথচ দেখো,
 শেষপর্যন্ত নিয়েছ ছুঁয়ে তোমার তুমির অক্লান্ত-হাত। তবে, তোমার প্রিয় সত্যিই কে, অলক?