সুখ। স্বার্থ। ভালোবাসা, ভালোথাকা।

ভালোবাসার মানুষটিকে কখনও যদিওবা পরিস্থিতির চাপে পড়ে উপেক্ষা করার চিন্তা মনে আসেও, তবু ভালোবাসার মানুষটির নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে কখনও উপেক্ষা করা যায় না। তাই এককথায়, শেষমেশ ভালোবাসার মানুষটিকে বাদ রেখে জীবনটাকে আর ঠিকঠাক চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না কোনওমতেই।


এই পৃথিবীতে সেই মানুষগুলিই সব থেকে সুখী, যারা তাদের ভালোবাসার মানুষটির সাথে পরমযত্নে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। তাই সেইসব মানুষকে অভিনন্দন জানাই আর বলি,---তোমরা আরও ভালো থেকো গো! তোমাদের অভিনন্দন! আগামীর বুকে তোমরা তোমাদের পরমযত্নে লালিত ভালোবাসায় বেঁচে থাকবার গল্পটাকে এমন নিগূঢ় সুখের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে উপস্থাপন করে রেখে যেয়ো, যাতে নতুন পৃথিবী তোমাদের বিস্ময়ে দেখে, আর আরও একবার নতুন করে ভালোবাসতেই শেখে!


এ তো গেল মুদ্রার একটি পিঠের দৃষ্টিভঙ্গি! মুদ্রার ওপিঠের দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও আপনাদের একটুখানি পরিচয় করিয়ে দিই, কী বলেন? মন্দ হয় না কিন্তু!


মুদ্রার ওপিঠের দৃষ্টিভঙ্গিটি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অবশ্য অনেকগুলি ব্যাপার নিয়েই কিছু কথা বলতেই হবে। না, মানে দেখুন, এ-ই তো পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম!


সুখী মানুষকে নিয়ে পৃথিবীতে যত-না কাব্য লেখা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি লেখা হয়েছে দুঃখী মানুষকে নিয়ে। তাই, বরাবরই, সুখী মানুষের সুখটাকে একটু পাশ কাটিয়ে, দুঃখী মানুষের দুঃখকে নিয়েই বাড়াবাড়িটা…একটু বেশিই হয়েছে। এ মানতেই হবে!


তবে, যা-ই বলুন, মুদ্রার এপিঠ হোক কিংবা ওপিঠ, ওরা একে অপরের সম্পূরকই; কখনওবা, পরিপূরকও বটে! একটিকে বাদ রেখে আর-একটি চলেনি কখনও, চলে না আজও।


দুঃখী মানুষের দুঃখ অনেক বিচিত্র রকমের হয়, বুঝলেন তো! যেহেতু আমরা ভালোবেসে দুঃখ-পাওয়া মানুষগুলিকে নিয়ে কথা বলছিলাম, তাই প্রসঙ্গটি আজ নাহয় এই অঙ্গন অবধিই সীমাবদ্ধ থাকুক।


মরিয়া হয়ে ভালোবেসে যখন সেই ভালোবাসার মানুষটির সাথে শেষপর্যন্ত আর একসাথে পথচলা হয় না, সেক্ষেত্রে কষ্টটা ঠিক কেমন হয়, সেটা যে না পেয়েছে, তাকে ঠিক বোঝানো সম্ভব নয়। খুবই স্বাভাবিক!


যে মানুষটি কখনও জমিদারবাড়ির রাজত্ব ছাড়া একটি দিনও কাটায়নি, তাকে যদি আপনি ভিখিরির কুটিরের গল্প শোনান, তবে তার কাছে হয় ওটা নিছক গল্প বলেই মনে হবে, নতুবা বাস্তবতায় থেকে কল্পনায় অতদূর আনাটা সত্যিই অসম্ভব হয়ে পড়বে।


এ তো গেল ভালোবেসে সুখী মানুষের কাছে দুঃখ-পাওয়া মানুষটির ভালোবাসার প্রতি ঘৃণা জন্মানোর কারণ বোঝাবার ক্ষেত্রে অক্ষম হওয়ার তাৎপর্য।


এবার আর-একটি দিক হলো, যে ভালোবাসতে জানেইনি বা শেখেইনি, তাকে যদি আপনি এই ভালোবাসার যে দুঃখ, ওতে অবগাহনের গল্প শোনাতে যান, তবে তা হবে অহেতুকই সময়ের ক্ষয়। যে ভালোবাসাই বোঝে না, তার কাছে আবার ভালোবাসায় পাওয়া সুখটাই-বা কী, আর দুঃখটাই-বা কী! সবটাই তার কাছে অতিপ্রাকৃত বাদে আর কিছুই নয়।


তো যা বলছিলাম! ভালোবেসে দুঃখ পাওয়াটা---হয় একপাক্ষিক, নয় উভয়পাক্ষিক।
একপাক্ষিক দুঃখটা হয় ভীষণ করুণ!
উভয়পাক্ষিক দুঃখটা হয় নিদারুণ মর্মান্তিক!


কাউকে ভালোবেসে একাই কষ্ট পাওয়া, আর দুজনই দুজনকে ভালোবেসে দুজনই কষ্ট পাওয়া---আলাদা ব্যাপার গো, মশাই!


হ্যাঁ, যদি এমন হয়, আপনি কাউকে ভালোবাসেন, তবে সে তা বোঝেই না, তখন সেটা খুব কষ্ট দেয়। তবে, দুজনই দুজনকে ভীষণ ভালোবাসবার পরেও কষ্ট পেলে সেটা রীতিমতো মর্মান্তিক!


নিজে কষ্ট পেলে কারও কাছ থেকে, ভীষণ খারাপ তো লাগেই! কিন্তু কখনও যদি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকেও আপনাকে ভালোবেসে আপনার সাথে সাথেই কষ্ট পেতে দেখতে হয়, তবে সেটা সত্যিই রীতিমতো একধরনের নির্যাতন! যদি সত্যিই ভালোবাসেন কাউকে তো বুঝবেন।


ওহ্‌, আর যদি নিজের ইচ্ছের বিপরীতে গিয়ে, পরিস্থিতি আর বাস্তবতা সামাল দিতে, আপনাকেই তাকে কষ্ট দিতে হয়, তবে তার চাইতে কষ্টের যে আর কী হয়, তা আমি এই মুহূর্তে ভাবতেও পারছি না! তাকে বলা যায়, অমানবিকভাবে নিজেকে, নিজের ভালোবাাসার মানুষকে এবং নিজের ভালোবাসাকে খুন হতে দেওয়া…নিরুপায় হয়ে!


তাই বলি কী, যে কটা দিন বেঁচে আছেন, এত জটিলতা, সংশয়, হিংসা, হানাহানি না করে প্রাণ খুলে ভালোবাসুন না! দেখবেন, ভালো লাগবে আর ভালো থাকবেন।


আরে না না, উদার হতে বলিনি আমি! আমাকে দিয়ে ওসব হয়ই না। আমি নিজেই তো ভীষণ স্বার্থপর।


ভালোভাবে ভেবে দেখুন তো, আমি কি আপনাদের ভালোবেসে উদার হতে বলেছি? আহা বোকা মানুষের দল, আমি আপনাদের উদার হতে নয়, বরং প্রাণ খুলে সব ভুলে ভালোবাসতে বলে…আরও একটু বেশিই স্বার্থপর হতে বলেছি!


বুঝলেন না এখনও? ঠিক আছে, বুঝিয়ে বলছি।


আমি আপনাদের ঠিক কী বলেছি? ভালোবেসে ভালো থাকতে, ভালোলাগা নিয়ে বাঁচতে।---তা-ই তো? তো মহাশয়, ভালোথাকা এবং ভালোলাগা, এই দুইয়ের চাইতে বড়ো স্বার্থ বেঁচে থাকবার সময়ে আর কী আছে, বলুন দেখি?


এমনকি মৃত্যুর পরেও তো সেই…এই ভালোথাকা আর ভালোলাগাই! একটু ভালো থাকবেন, একটু ভালো লাগবে বলেই না এত পাপ-পুণ্যের হিসেব রে মশাই!