সুধাংশুকে

সুধাংশু, আমি চলে যাচ্ছি। তুমি খুব সুন্দর একটা জীবন কাটিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে, আমার শুভকামনা রইল।
কেন চলে যাচ্ছি, তা আমি নিজেও জানি না। কোনও রাগ কিংবা অভিমান থেকে চলে আমি যাচ্ছি না।
মনের ভেতর থেকে কে যেন কথা বলে যাচ্ছে অনবরত, সে বার বারই বলছে, ‘অনেক হয়েছে, সময় শেষ!’


অথচ দেখো, কত কথা বলাই হলো না!
তোমার সাথে একসাথে হেসে খেলে বুড়ি হবার কথা ছিল, নদীর ধারে পা ডুবিয়ে একসাথে বসে হাজারটা সূর্যস্নান দেখার ছিল, রাতের পর রাত আমাদের এলোমেলো গল্পের ছকসাজানো, সেও বাকিই রয়ে গেল, সুধাংশু!
সবই বুঝি এরকম বাকি থেকে যায়!


শুধুই মোমবাতির আলোয় তুমি আমায় দেখতে চেয়েছিলে, গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে তুমি আমায় সাথে নিয়ে জোছনা দেখাতে চেয়েছিলে।
এ জীবনে কিছুই হলো না আর। তোমার আমার সময়তেই মিলল না গো!


সুধাংশু, আমি নাহয় আজ চলে যাচ্ছি, কিন্তু তুমি যে ‘এই তো আসছি!’ বলে আমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে সেই কবেই চলে গিয়েছিলে, আমি তখন বুঝতেই পারিনি যে তুমি একেবারের জন্য চলে যাচ্ছ।


আমি এতদিনেও বিশ্বাস করিনি যে তুমি চলে গিয়েছ, কিন্তু এখন বুঝি, এগারোটা মাস ধরে যখন তুমি আমায় না দেখেই দিব্যি দিন কাটাচ্ছ, আমার সাথে কথা না বলেও যখন তোমার দিন চলেই যাচ্ছে, তার মানে, তুমি আমাকে ছাড়াই বেশ অনায়াসেই থাকতে পারবে।


কিন্তু আমি কী করব, তা-ই ভাবছি। আমি কোথায় যাব গো? তোমার পাগলিটাকে তোমারই মতন করে ভালো আর বাসবে না যে কেউ, কেউ মেনে নেবে না আমার যত অন্যায়-আবদার, কথায় কথায় অভিমানে গাল-ফোলানো।


আর লিখতে পারছি না, কান্নায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। চিঠির সাথে আমার চোখের কিছু নোনাজলও পাঠালাম।
তুমি চিঠিটা পড়ে দেখো। পড়তে পড়তে, কেঁদে ফেলো না যেন আবার! কাঁদলে তোমাকে ভীষণ বাজে দেখায়! আমি এবার সত্যি করেই চলে যাচ্ছি। আমার সুধাংশু, তুমি ভালো থেকো। তুমি ভালো থাকলে তোমার চারুও ভালো থাকবে।