স্বেচ্ছাবারিত ব্যথা-নির্বাণ

 
বিবেকের শেকলটা পরে হাঁটতে কেমন লাগে, জানো?
সেদিন যখন অমন প্রশ্নসমুদ্রের ঠিক মাঝখানটায়
আমায় দুই নৌকোয় দাঁড় করিয়ে দিলে,
তখন আমার সমস্ত চাপাকান্না, অব্যক্ত অনুভব
কী এক দোটানায়…
আমার যত উত্তর, সবকটা এক এক করে এসে
তোমার প্রশ্নগুলির তীরে আছড়ে পড়ছিল!


তুমি এমন কেন গো?
ডাকলেই যদি, কেন প্রস্থানের দরোজা রেখে দিয়েছিলে
অবারিত? বাঁধলে না একটুখানিও অধিকারের কিংবা
বাধ্যতার সুতোয়? তবে তোমার প্রেমের ঐশ্বর্য আর
রইলই-বা কী, বলো?


প্রিয়, ওই দুচোখের গভীরে গেলে কেবলই কি
কুয়াশা মেলে? আমায় জড়িয়ে নেবে না ভেবেই
তোমার বাহু দুটি এতটা নিঃস্পৃহ হয়ে আছে বুঝি?
ওরা আজকে রাতে চাঁদের মধ্য থেকে
বড্ড আদরে টেনে আনবে না ভোর?


মানুষের নীলজীবনটা দেখেও কুৎসিত মুখশ্রী দেখিয়ে
পা মাড়িয়ে যায় যে সমাজ, তোমার জীবনের
গাঢ় আর্তনাদের খোঁজ কখনওই নেয়নি যে সমাজ,
যে সমাজে মানুষের চেয়ে ধর্মাচরণ দামি,
শিশুর চেয়ে শিশুর জন্ম বেশি আদর পায়
যে সমাজে, সে সমাজকে আমি ঘেন্না করতে শিখেছিলাম
তোমার কাছ থেকেই। ভুলে গেছ?


তুমি কবে থেকে সে সমাজেরও
তোয়াক্কা করতে শিখে গেছ, যে সমাজ
তোমার আমার পরিচয়টুকুই কেবল জানে,
মনের গহিনতলের খোঁজ জানে না এতটুকুও!


আমি তোমায় ভালোবাসি!
আমার ভালোবাসার অবাধ্য রূপটি
তোমার অচেনা তো নয়…
তোমার জাত, তোমার সমাজ, তোমার জন্ম…
এসবের বাহ্যিকতার কাছে হেরে যাবার ভয়
চোখে লেপটে আমি আসিনি, প্রিয়!


সত্যিই কি নিয়মের পাল্লায় প্রেম ওঠে আদৌ?
সেখানে তো জানি, কেবলই ওঠে সমাজ,
তার সাথে ওঠে কিছু খুচরোপয়সা,
যাদের ছুড়ে ফেলে দিলেও তেমন কিছু এসে যায় না।
হঠাৎ, কোন মায়াজালে তুমি সে পাল্লার দিকেই তাকিয়ে আছ?


সবকিছুর পরেও, নিজের বলতে কিছু থেকে যায়।
সব সংস্কারের ঊর্ধ্বে, সব রীতি মেনে নেবার পরও
নিপাতনে সিদ্ধ কিছু সব সময়ই তো থাকে!
জীবন তো কিছু না কিছু রেখেই দেয় নিজের জন্যে।
তবে কি ধরে নেব, তুমি আমায় রাখোনি আজ সেখানেও?


তুমি কেন বিসর্জন চাইছ?
তোমায় অর্জনই-বা করতে পেরেছি কতটা, বলো?
এতগুলি জন্ম ঠাকুরঘরে কাটিয়ে দিয়েও
নৈবেদ্য আর প্রসাদের মাঝের দূরত্বটা চিনলে না?
আমি যে মুহূর্তে শেষপথের শুরুর মোড়টায় দাঁড়িয়ে আছি,
তখন আমায় সবকিছুই মেনে নিতে বোলো না…
আমার যে বড় কষ্ট হয়!


আমি আজন্মই নিজের ঘরের জানালাগুলি নিজের হাতে খুলেছি।
ওরা সবাই আমায় চেনেই কেবল, জানে না ভুলেও…
ওরকম কিছু মানুষই যদি তোমায় কেড়ে নিয়ে যায়,
আমার মৃত্যুর আর কী-ইবা বাকি থাকে, বলো?
তারচে বরং, আমায় গ্রহণ করার ছলে নাহয় পুড়িয়েই মেরো!