যারা এসএসসি/এইচএসসি’তে পড়ছ, ওদের জন্য নতুন বোতলে পুরনো কিছু মদ ঢেলে দিচ্ছি, আমার পুরনো কিছু কথার জাবর কাটছি। কথাগুলি পড়ো, এরপর যতটুকু মনে রাখতে পারো, ততটুকুই কাজে লাগাও। যদি এমন হয়, কাজে লাগাতে খুব করে চেয়েও কিছুই কাজে লাগাতে পারোনি, মনখারাপ কোরো না। আমরা যা চাই, জীবন আমাদের কখনওই তা দেয় না; জীবন আমাদের তা-ই দেয়, যা আমাদের দরকার।
তোমাদের চাওয়া মূলত দুইটি। এক। যাতে সুস্থ শরীরে পড়াশোনা করতে পারো। দুই। যাতে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস না হয়।
এই দুই বিষয় ছাড়া বাকিগুলি মোটামুটি তোমাদের নিয়ন্ত্রণে। সেগুলির মধ্য থেকে কয়েকটি নিয়ে লিখছি………যতটা মাথায় আসে আরকি!
এক। প্রতিদিন ঘুমাও খুব বেশি হলে ৬ ঘণ্টা। এর চাইতে বেশিও ঘুমাতে পারো, তবে সেক্ষেত্রে তুমি তোমার কাজগুলি ঠিকভাবে করতে পারবে না। কেউ যদি বেশি ঘুমিয়েও তার কাজগুলি ঠিকঠাক করতে পারো, তাহলে অবশ্য বেশি ঘুমানোও খারাপ না। কাজ হওয়া নিয়ে কথা। একটা ঘটনা মাথায় এলো। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। আমাদের ক্লাস টিচার ছিলেন সুনীল স্যার, গণিতের শিক্ষক। একবার এক ছেলে ক্লাসে জনপ্রিয় কমিকস চরিত্র ফ্যান্টমের খুলি-ওয়ালা বাক্লেসের বেল্ট পড়ে আসে। তা দেখে ওকে স্যার খুব মারলেন। বললেন, “ভদ্র বাক্লেসের বেল্ট কিনে দিতে বলবি তোর বাবাকে!” ও কাঁদতে-কাঁদতে বলল, “স্যার, সুশান্তও সেদিন ড্রাগনের বেল্ট পরে এসেছে। আপনি তো ওকে মারেন নাই!” স্যারের উত্তর ছিল, “সুশান্ত তো ড্রাগনের বেল্ট পরেও ক্লাসের ফার্স্টবয়। আর তুই কী? ও ড্রাগন, জাগুয়ার, ড্রাকুলা, যা-ই পরে আসুক, কোনও সমস্যা নাই। ও সেকেন্ড টার্মে ম্যাথসে পেয়েছে ৯৯, আর তুই পেয়েছিস ২৬! তুই একটু চক্রবক্র মার্কা কিছু পরে আসলেই মার খাবি, আর ওর সাতখুন মাফ!” স্যারকে ধন্যবাদ। স্যার আমাকে সেই ছোটবেলাতেই নিজের সবচাইতে উদ্ভট স্টাইলকেও কীকরে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করে ফেলতে হয়, সেই বুদ্ধি শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিনের পর থেকে আমি আরও বেশি করে পড়াশোনায় মন দিই।
দুই। কষ্ট দিতে হলে নিজেকেই দাও। নিজেকে অসীম কষ্ট দিয়ে হলেও প্রয়োজনীয় কাজটা সম্পন্ন করার মধ্যেই ভবিষ্যতের মঙ্গল নিহিত। হাতের ছুরিটা নিজের হৃদয়ে চালাও, অন্য কারও হৃদয়ে নয়। এক নিজেকে ছাড়া পুরো পৃথিবীকেই ক্ষমা করে দাও। প্রতিশোধ নিতে হলে নিজের উপরই নাও। নিজেকে আরও বেশি করে খাটিয়ে নাও, নিজেকে কম ঘুমাতে দিয়ে বাড়তি কিছু কাজ করিয়ে নাও।
তিন। রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানায় শুয়ে আজ সারাদিনে কী কী করলে, তার একটা হিসেব মনেমনে নাও। তোমার সাথে আজ কী কী ঘটেছে, ভাবো। যা যা ঘটেছে, সেগুলির কোনওটি যদি তোমার জন্য ভাল হয়, তবে সেটি যাতে মাঝেমধ্যেই ঘটে, সে ব্যবস্থা নাও। আর যদি তা না হয়, তবে ভেবে দেখো, সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য তুমি কী করতে পারো। কিছু করার থাকলে, তা নিশ্চয়ই করো। আর যদি কিছুই করার না থাকে, তবে নিজেই নিজেকে সে ঘটনা ঘটার সকল কারণ থেকে দূরে সরিয়ে আনো।
চার। ভেবে দেখো তো, তোমার জন্য কারও কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না! যদি হয়, তবে যা করার কারণে ক্ষতিটা হচ্ছে, তা করা বন্ধ করে দাও! তখুনিই! মাথায় রেখো, তুমি জীবনে যদি কারও কোনও ক্ষতি কর, তবে তার শাস্তি তুমি ফেরত পাবেই পাবে! জীবনে কারও উপকার করতে পারো না পারো, প্রাণ থাকতে কখনওই কারও কোনও ক্ষতি কোরো না।
পাঁচ। যা যা করেছ, সেসব আর কীভাবে করলে আরও বেশি সুন্দরভাবে করা যেত? সবাই তো কাজ করে, যারা একই কাজটি অন্যদের চাইতে সুন্দরভাবে করতে পারে, লোকে ওদেরকেই মনে রাখে, শ্রদ্ধা করে। একই কাজ নির্ভুলভাবে করে যাওয়া বড় কথা নয়, কাজটি পরেরবার করার সময় আগেরবারের চাইতে সুন্দর করে করাই বড় কথা।
ছয়। আজ যদি তোমার জীবনের শেষ দিন হত, তবে তুমি নিশ্চয়ই এমন কিছু করতে না যাতে মৃত্যুর পর তোমার কথা লোকে ঘৃণাভরে স্মরণ করে। ধরে নাও, আজকেই জীবনের শেষ দিনটা। এটা ধরে নিজের জীবনযাপন ও কাজের মানোন্নয়ন করো। মৃত্যুর পর তোমার যে কাজের জন্য লোকে তোমাকে মনে রাখতে পারে, সে কাজটি করা আজকেই শুরু করো।
সাত। যদি এমন কোনও জীবন চাও, যে জীবনে তুমি এখন নেই, তবে তোমাকে এখনকার জীবনে যে কাজগুলি করছ, সে কাজগুলিতে পরিবর্তন আনতেই হবে। তুমি যা কিছু করে যাচ্ছ, যদি তা কিছুই করে যাও, তবে এটা নিশ্চিত, তুমি যেমন আছ, তেমনই থেকে যাবে। পৃথিবী বদলাতে হলে সবার আগে নিজেকে বদলাতে হয়।
আট। একটা নোটবুক রাখো। প্রতিদিন সকালে উঠে নোটবুকের পৃষ্ঠায় লিখে নাও, সেদিন তুমি কী কী করবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মিলিয়ে নাও, কাজগুলি ঠিকঠাক করতে পেরেছ কি না। সবসময়ই নোটবুকে লিস্ট করবে তোমার সক্ষমতায় যতটুকু কুলায়, তার চাইতে বেশি সম্ভাব্য কাজের। এতে করে তুমি নিজেকে একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রাখতে পারবে। জীবনে বড় হতে হলে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে জানতে হয়।
নয়। যখনই পড়তে বস, তখনই সামনের কয়েক ঘণ্টা কী কী পড়বে, তার একটা তালিকা কাগজে লিখে চোখের সামনে রাখবে। (সত্যিই রাখবে!) সে তালিকার সব পড়া শেষ না করে কিছুতেই পড়া শেষ করবে না। এমন হতে পারে, সে তালিকার কোনও একটা পড়া পড়তে ক্লান্ত লাগছে, সেক্ষেত্রে তুমি তালিকার অন্য একটা পড়া ধরতে পারো। ক্লান্তি একটু দূর হলে আগের ফেলেরাখা পড়াটা আবারও শুরু করতে পারো। ভাবনা মনে রেখো না, কাগজে রাখো।
দশ। যা করবে বলে ঠিক করে রেখেছিলে, তা যদি করে ফেলতে পারো, তবে নিজেকে ছোটখাটো নানান উপহার দিতে পারো। নিজেকে পুরস্কার দিলে পরবর্তীতে কাজের উৎসাহ পাওয়া যায়। তোমার যা করতে ভাল লাগে, নিজেকে তা করতে দাও। যা খেতে ভাল লাগে, নিজেকে তা খেতে দাও। তবে এই পুরস্কার বিতরণী পর্ব যাতে দীর্ঘ না হয়।
এগারো। কখনওই অন্য কারও সাথে নিজেকে কম্পেয়ার কোরো না। নিজেকে তুলনা করতে হয় নিজের সাথে। প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো। যদি আজকের তুমি গতকালকের তুমি’র চাইতে ভাল হও, তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো, তুমি ঠিক রাস্তায় আছ। অন্য কারও সাথে নিজেকে তুলনা করলে দুই ধরনের বিপদ হতে পারে। এক। ও যদি তোমার চাইতে অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, তবে ওর অবস্থানের সাথে নিজের অবস্থানকে তুলনা করলে তোমার মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে। দুই। ও যদি তোমার তুলনায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন হয়, তবে তুমি হয়তো অবচেতন মনেই ওর অবস্থানে নিজেকে নিয়ে যেতে পারো, অর্থাৎ তোমার অবস্থানকে নিচে নামিয়ে ফেলতে পারো।
বারো। রাতে ঘুমাতে গেলে নিজের বর্তমান অবস্থার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যেস গড়ে তোলো। উনাকে বলো, “আমাকে যেমন রেখেছ, আমি ওতেই অনেক খুশি, তোমাকে ধন্যবাদ।” এতে করে তোমার মানসিক শক্তি ও বিনয় বৃদ্ধি পাবে। তুমি যে জীবনে বেঁচে আছ, তা হয়তো কারও স্বপ্নের জীবন। সে জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ হও, এবং সে জীবনটাকে ঠিকভাবে খরচ করো।
তেরো। বন্ধু নির্বাচনের সময় অতি সতর্ক থেকো। তোমার বন্ধু স্টুপিড হলে তুমিও স্টুপিড হবে। তোমার বন্ধু ভবঘুরে টাইপের হলে তুমিও ভবঘুরে টাইপের হবে। তোমার বন্ধু বেয়াদব হলে তুমিও বেয়াদব হবে। তোমার বন্ধু দুশ্চরিত্রের হলে তুমিও দুশ্চরিত্রের হবে। তোমার বন্ধু লেখাপড়ায় গর্দভ হলে তুমিও লেখাপড়ায় গর্দভ হবে। তোমার বন্ধু মূর্খ হলে তুমিও মূর্খ হবে। তোমার বন্ধু আত্মসম্মানবোধ-শূন্য হলে তুমিও অমন হবে। অতএব, খুব সাবধানে কাউকে বন্ধু কোরো। ভুল কারও সাথে বন্ধুত্ব করার চাইতে বরং একা থেকো, সেও অনেক ভাল। এর ব্যতিক্রম যে হয় না, তা নয়। অনেককেই দেখেছি, থ্রি ইডিয়টস্-এর রাঞ্চোর মত—বন্ধুরা দলবেঁধে ফেল মারে, আর ও ঠিকই ফার্স্ট হয়! তবে এটা খুব ক্বচিৎ ঘটে। রিস্ক না নেয়াই ভাল।
চৌদ্দ। ঘুম কমাও। ঘুমানোর সময় এইচএসসি পর্যন্ত নয়। এ সময়ে তুমি যা শিখবে, সেটাই তোমার সারাজীবনের বুনিয়াদ। স্টুডেন্টদের বেসিক গড়ে ওঠে এ সময়েই। এ সময়ে যারা ভাল করে বাংলা, ইংরেজি, অংক শিখবে, তারা সারাজীবনে কখনও কোথাও ঠেকবে না। আমার অভিজ্ঞতা বলে, যারা এসএসসি আর এইচএসসি’তে ভাল স্টুডেন্ট ছিল, মানে, কঠোর পরিশ্রম করে আন্তরিকতার সাথে ফাঁকি না দিয়ে পড়াশোনা করেছে, তারাই পরবর্তী জীবনে অন্যদের চাইতে এগিয়ে থাকে। তাই তুমি এ সময়ে ফাঁকি দেয়ার অর্থই হল, সারাজীবনের জন্য পিছিয়ে যাওয়া।
পনেরো। হাতের কাজ ফেলে রেখো না। যত কঠিন আর বিরক্তিকরই হোক না কেন, সময়ের কাজ সময়েই করো। করব, করব করেও অনেকদিন ধরেই করা হয়ে উঠছে না, এমন কিছু শুরু করে শেষ করে ফেলো! এখুনিই! কাজ আগে, ঘুম পরে।
ষোলো। কোনও কাজ শুরু করার সবচাইতে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে, কাজটি করতে সত্যিই শুরু করা। কাজটা যত কঠিনই হোক না কেন, যদি একজনও কাজটা করতে পারে, সে হচ্ছ তুমি—এ আত্মবিশ্বাস মাথায় রেখে কাজটি শুরু করো।
সতেরো। নিজের বিছানাটা নিজে গোছাও। নিজের কাপড়টা নিজে ধুয়ে ফেলো। যেখানে হেঁটে যেতে পারবে, হাতে সময় থাকলে সেখানে রিক্সায় বা গাড়িতে যেয়ো না। যতটুকু সম্ভব, অন্যকে সাহায্য করো। যারা তোমার চাইতে বয়সে বড় কিংবা জ্ঞানে আর গুণে বড়, তাদের সম্মান করো। নিজেকে পরিশ্রম করাও, প্রচণ্ড কষ্ট দাও। বিশ্বাস করে নাও, তুমি একজন হিরো—সিনেমার নয়, বাস্তবের! একজন হিরো যেভাবে কাজ করে, চিন্তা করে, সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করো। বিভিন্ন ক্ষেত্রে হিরোদের কঠোর পরিশ্রম আর সাধনা সম্পর্কে জানো, আর নিজের জীবনেও তা মানো!
আঠারো। প্রচুর, প্রচুর, এবং প্রচুর বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তোলো। জীবনে এ অভ্যেসের চাইতে বড় গুপ্তধন আর নেই। যার রিডিং হ্যাবিট ভাল, তার থিঙ্কিং ক্যাপাবিলিটি বেশি, রাইটিং স্টাইল ভাল। বইপড়ার অভ্যেস তোমাকে জীবনের পথে অনেক এগিয়ে দেবে। ল্যাংগুয়েজ আর গ্রামার সেন্স ডেভেলাপ করো। তুমি তোমার বন্ধুদের চাইতে এক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার অর্থই হল, সারাজীবনের জন্য তোমার বন্ধুরা তোমার চাইতে পিছিয়ে গেল। এ অনেক বড় সম্পদ!
উনিশ। যত কষ্টই হোক, যে দিনের পড়া সে দিনেই শেষ করে ফেলো। দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই পাঠ্যবইয়ের পড়া শেষ করে নাও। নাহলে পরবর্তীতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে, সকল আত্মবিশ্বাস একেবারেই ভেঙে যাবে, জীবনটাকে পুরোপুরি অর্থহীন মনে হবে। যারা এ কাজটি নিয়মিত করতে পারবে, তারা অন্যদের চাইতে বেশি মানসিক প্রশান্তিতে থাকবে।
বিশ। মন ও মানসিকতার যত্ন নাও। মনের উন্নয়ন ঘটায়, এমন বই পড়ো। টানা পনেরো দিন রবীন্দ্রসংগীত শুনে দেখতে পারো, মন শান্ত হয়ে যাবে। সফট্ মেলোডি মনের ক্ষত সারায়। মোটিভেশনাল বই পড়ো, মুভি দেখো। ইংরেজি আর বাংলা ফিকশন পড়ো। ইংরেজি গল্পের বই পড়তে কষ্ট হয়? হ্যারি পটার সিরিজ দিয়েই শুরু করো না!
একুশ। আড্ডা, ঘোরাঘুরি, প্রেম—এ তিন নিয়ে থাকা মানেই হল নিজের পায়ে নিজে খুব যত্ন করে হাসিমুখে কুড়াল মারা। সত্যি বলছি, এসব ক্ষণিকের মোহ আর সুখের কোনও দাম নেই। তোমাদের বয়সে প্রেম-ভালোবাসা মানেই জীবনকে নষ্ট করা। এসএসসি আর এইচএসসি লেভেলে জীবনকে যত বেশি উপভোগ করবে, সামনের জীবনটা তত বেশি কষ্টের হবে। অ্যান্ড দিস ইজ গ্যারান্টেড!
বাইশ। কখনওই অতি প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত কিংবা অতি নিন্দায় হতাশ হয়ে পড়ো না। যারা তোমার প্রশংসা কিংবা নিন্দা করে, তাদের শতকরা ৯৮ ভাগ লোকেরই বিচারবিবেচনা বোধ খুবই নিম্ন পর্যায়ের কিংবা পক্ষপাতদুষ্ট। সবার কথাই পাত্তা দিয়ো না। তোমাকে বোঝার ক্ষমতা হাতেগোনা দুএকজন মানুষের আছে হয়তো, বাকিদের কথায় নিজেকে প্রভাবিত করে কী লাভ? আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াও, নিজেকে বেঁধে ফেলতে শেখো, তবে পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারবে। মনের শাসনে নয়, বিবেকের শাসনে চলো।
তেইশ। যা করা দরকার, তা করো। সে কাজটি তোমার মনের মত নাও হতে পারে, কিন্তু জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচার প্রয়োজনে তা করতেই হবে। যে কাজ করতে আরাম লাগে না, কিন্তু করা দরকার, সে কাজটি ফেলে রাখলে, নিশ্চিত থাকতে পারো, কাজটি সামনে আরও বিরক্তিকর আর কঠিন হয়ে যাবে, তখন কাজটি করতে তোমার আরও কষ্ট হবে। প্রয়োজনীয় কাজ মানে তোমার ভাললাগার কাজ নয়, প্রয়োজনীয় কাজ মানে সে কাজটি, যে কাজটি তোমাকে ভাললাগাতেই হবে। তোমার ভাল লাগে কি লাগে না, সেটার উপর কোনও কাজের গুরুত্ব নির্ভর করে না।
চব্বিশ। লোকের সাথে কথা বলার সময় সম্মান দিয়ে কথা বলবে। লোকে ভুল কথা বলার জন্য যতটা অপমানিত হয়, তার চাইতে বেশি অপমানিত হয় খারাপ ব্যবহার করার জন্য। কারও কাছ থেকে তুমি যে ব্যবহার প্রত্যাশা কর, তার সাথে তেমন ব্যবহার কর। তোমার আচরণে কখনও বিরক্তিকর হয়ে ওঠো না। কাউকে বিরক্ত করা এক ধরনের বদভ্যাসের মত। যারা অন্যকে বিরক্ত করে, তারা অন্যকে বিরক্ত করেই স্বস্তি পায়। ওদের সবাই ফালতু বলে। তুমি নিশ্চয়ই একজন ফালতু লোক হয়ে বাঁচতে চাও না, তাই না?
পঁচিশ। তর্কে জড়িয়ো না, পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নাও, এবং নীরবে নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে আনো। বুদ্ধিমানরা তর্ক করে, প্রতিভাবানরা এগিয়ে যায়। জীবনটা ডিবেটিং কম্পিটিশন নয়। তর্কে জেতার পুরস্কারের চেয়ে তিরস্কারই বেশি।
ছাব্বিশ। প্রতিদিন কারও না কারও মন ভাল করে দেয়ার চেষ্টা করো। লোকে তোমাকে তোমার ন্যায্য আচরণের জন্য যতটা ভালোবাসবে, তার চাইতে বেশি ভালোবাসবে তোমার সুন্দর আচরণের জন্য। তোমাদের জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের অনেককেই দেখেছি, ওরা চলাফেরায়, কথাবার্তায়, আচারআচরণে খুব উদ্ধত, বেপরোয়া, অহংকারী। দেখলেই হাসি পায়। কারণ, ইন্টার পাস করার পর ওদেরকে অসহায় হয়ে যেতে দেখেছি। আর অনার্স পাস করার পর ওই একই তথাকথিত স্মার্ট, ড্যাশিং, কুউল গর্দভকুলকে হারিয়ে যেতে দেখেছি। সময় থাকতে সাবধান হও, সংযত হও। ভদ্র হওয়া আর বেয়াদব হওয়া—দুইই অভ্যস্ততার ব্যাপার। যে অভ্যাসের ছাঁচে নিজেকে এ সময়ে ফেলবে, মোটামুটি সারাজীবনই ওই ছাঁচেই বাঁচবে।
সাতাশ। তোমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক, কিংবা অন্য যে কেউই, তোমার জীবনে যার ইতিবাচক প্রভাব আছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ থেকো। যার মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, সে মানুষের পর্যায়েই পড়ে না। কৃতজ্ঞতাবোধ তোমাকে ধীরস্থির, বিনীত ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলবে।
আটাশ। কাউকে আঘাত করার ইচ্ছে থাকলে পেশি দিয়ে নয়, মস্তিষ্ক দিয়ে আঘাত করো। সে-ই শক্তিশালী, যার পেশিশক্তির চাইতে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বেশি। কেউ যদি তোমায় মুখে কিংবা হাতে আঘাত করে, সে আঘাতের জবাব মাথা দিয়ে দাও, দেখবে, ও সারাজীবনের জন্য চুপ হয়ে যাবে। মূর্খের শক্তি মুখে আর পেশিতে, জ্ঞানীর শক্তি মনে আর মস্তিস্কে।
উনত্রিশ। কারও উপর রেগে থাকলে ওর যতটা ক্ষতি হয়, তার চাইতে বেশি ক্ষতি হয় নিজের। কারও উপর প্রতিশোধ নিয়ো না, বরং নিজেকে আরও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলো। যে আঘাতের জবাবে আঘাত করে, সে আঘাত না করার শক্তিটা কখনও অনুভব করতে পারে না। যে তোমায় আঘাত করে, তার চাইতে নিজেকে এগিয়ে রাখো, এতে জীবনের কাছ থেকে সমুচিত জবাবটা ও এমনিতেই পেয়ে যাবে! যদি আঘাত করতে ইচ্ছে করে, সে আঘাতটা নিজেকেই করো, নিজেকে অমানুষিক পরিশ্রম করাও, যাতে নিজের জ্ঞান ও যোগ্যতা বাড়ে।
ত্রিশ। কারও প্রশংসা করতে পারো না পারো, কখনও অহেতুক কারও নিন্দা কোরো না। কাউকে ছোট করে কোনও কথা বললে নিজেরই ক্ষতি হয় বেশি, কেননা তখন নিজেকে বড় মনে থাকে। নিজেকে অন্যদের চাইতে বাহ্যিকভাবে ছোট করে রাখো আর অভ্যন্তরীণ দিক থেকে অন্যদের তুলনায় বড় হয়ে ওঠো। এমনভাবে বাঁচো যাতে মাথা নত থাকে, আর মগজ উঁচুতে থাকে। ঘিলুহীন উদ্ধত শির জীবনের কাছ থেকে ধিক্কার আর করুণা ছাড়া আর কিছুই পায় না।
একত্রিশ। কাউকে কখনও জাজ কোরো না, ভাল না লাগলে এড়িয়ে যাও। জাজমেন্টাল মেন্টালিটির লোকজন সাধারণত পিছিয়েই থাকে। অমুক এমন, তমুক তেমন, ও খারাপ, সে বাজে…………কথা হল, এসব বিচার করার তুমি কে? তুমি নিজে কেমন? কোনও দোষ নেই তোমার? আগে নিজেকে সংশোধন করো, শুদ্ধ মানুষ হও, এরপর অন্য কারও সম্পর্কে বলতে এসো। যাকে নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছ, তোমার অস্তিত্বটুকু নিয়ে ভাববার সময়টুকুও হয়তো ওর নেই! লজ্জা করে না?
বত্রিশ। প্রতিদিন পনেরো মিনিট কোনও কথা না বলে, কোনও কাজ না করে পুরোপুরি মৌন হয়ে থাকো। মৌনতা মানসিক শক্তি বাড়ায়। কটু কথা বলার চাইতে একেবারেই চুপ করে থাকা মঙ্গলজনক।
তেত্রিশ। ভালকে অনুকরণ ও অনুসরণ করো। কোনও ব্যক্তির যে দিকটা তোমার পছন্দ, সে দিকটা অনুকরণ করার চেষ্টা করো। গ্রেটম্যানদের জীবনী পড়ে শেখো। উনারা যেমন করে বাঁচতেন, তেমন করে বাঁচার চেষ্টা করো। তবে, উনাদের জীবনের অন্ধকার দিকগুলিকে এড়িয়ে যেতে শেখো। পাবলো পিকাসো হাজার প্রেম করেও পাবলো পিকাসো হয়েছেন, তুমি একটা প্রেম করেই রাস্তার ধুলোর সাথে মিশে গেলে, তাহলে তো বিপদ! জিনিয়াসদের কোনও গ্রামারে ফেলা যায় না, তাই জিনিয়াসদের সবকিছু ফলো করলেই মরবে! ওদের আত্মনিবেদনটা দেখো, সাধনাটা বোঝার চেষ্টা করো, সেখান থেকে শেখো।
চৌত্রিশ। ফেসবুক, হোয়াটস্অ্যাপ, ভাইবার, ইমো তোমাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। দায়িত্ব নিয়ে বলছি, নিজেকে এসব থেকে যত দূরে রাখতে পারবে, ততই সামনের দিনগুলি সুন্দর হবে। প্রযুক্তির দুনিয়ায় বিল গেটস্ আর স্টিভ জবসের চাইতে বড় মানুষ তো আর কেউ নেই, তাই না? বিল গেটস্ উনার সন্তানদের বয়স ১৪ হওয়ার আগে ওদের হাতে কখনও মোবাইল দেননি। তোমাদের বয়সে স্টিভ জবসের সন্তানরা তো আইপ্যাড ব্যবহার করার অনুমতিই পায়নি! আইপ্যাড ব্যবহার করে শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়, এমন কোনও স্কুলে স্টিভ জবস তাঁর সন্তানদের ইচ্ছে করেই ভর্তি করাননি। আর তোমরা কত সময় অবলীলায় নষ্ট করছ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিক হতে! জীবন এর উত্তর তোমাদের কড়ায়গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবে………অপেক্ষা করো! নিতান্ত প্রয়োজন না হলে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ো না। বিশ্বাস করো, এ কাজটা করতে পারলে তুমি তোমার বন্ধুদের চাইতে অনেক অনেক অনেক এগিয়ে যাবে! মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার টিভি না দেখার পরামর্শ দিয়েছেন উনার বিভিন্ন লেখায়। অনেক বছর হয়ে গেল, আমি টিভি দেখি না। এতে আমার স্মার্টনেস কিংবা জ্ঞান খুব কমেছে বলে তো মনে হয় না! বিদেশে স্মার্টনেস মাপে মাথার ক্ষমতা দিয়ে, আর তোমরা কিনা স্মার্টনেস মাপো অ্যাপিয়ারেন্স দিয়ে! গড ব্লেস ইউ!
পঁয়ত্রিশ। নিঃসঙ্গ হয়ে বাঁচতে শেখো। যদি সবাইকেই সময় দাও, তবে কিছুতেই তোমার কাজগুলি ঠিকমতো করতে পারবে না। নিজেকে জানার সাধনা কখনও জনারণ্যে হয় না। হৃদয় কী চায়, বুঝতে হয়। এটা বোঝা অনেক সাধনার ব্যাপার। নিজের হৃদয়ের ভাষা কখনও কোলাহলে শুনতে পাবে না। কষ্ট থেকে হতাশা নয়, শক্তি খুঁজে নাও। নিয়তি যখন আঘাত করে, তখন সে আঘাতের জবাব দাও নিজের কাজ দিয়ে, অর্জন দিয়ে; হতাশা দিয়ে নয়।
ছত্রিশ। অন্যের টাকায় চলার সময় ভিখিরির মত চলো, তাহলে নিজের টাকায় চলার সময় রাজার মত চলতে পারবে। তোমার হাতখরচটা তো আসে তোমার অভিভাবকের কাছ থেকে, ওই টাকা নিয়ে বাহাদুরি করার তো কিছু নেই! ওই টাকাটা সবচাইতে কম খরচ করে কীভাবে চলা যায়, সে চেষ্টা করো। একটা সহজ সূত্র শিখিয়ে দিই। যখন তুমি বাবার টাকায় চলছ, তখন বাবা যে টাকাটা তোমাকে দেন, সেটির অর্ধেক খরচ করে চলতে শেখো। তাহলে তোমার জীবনে এমন একদিন আসবে যেদিন তুমি চাহিদার তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ খরচ করে চলতে পারার সামর্থ্য অর্জন করতে পারবে।
সাইত্রিশ। ভার্চুয়াল জনপ্রিয়তা তোমাকে খুব দ্রুত অধঃপতনের দিকে নিয়ে যাবে। কারণ, তোমাদের বয়সে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক নয়, এই বোধ তেমন একটা তৈরি হয় না। জনপ্রিয় হওয়ার মোহে তুমি যে চিন্তা আর সময়টা ফেসবুকে দাও, তা তোমাকে একসময় শেষ করে দেবে। বাজে সঙ্গ থেকে নিজেকে যত দ্রুত সম্ভব, বের করে নিয়ে আসো। বাজে জিনিসের অভিজ্ঞতা নেয়া মানে নিজেকে বাজে জিনিসটার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা, কারণ বাজে কিছু আমাদের ব্রেইন খুব সানন্দে গ্রহণ করে।
আটত্রিশ। বন্ধুরা আসবে আর যাবে। যে একজন মানুষ তোমার সাথে শেষ পর্যন্ত থেকে যাবে, সে হচ্ছ তুমি নিজে। তাই বন্ধুদের সময় দেয়ার চাইতে নিজেকে নিজের জন্য প্রস্তুত করার পেছনে বেশি সময় দাও। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যাদেরকে তুমি বন্ধু ভাবছ, একদিন বুঝতে পারবে, ওদের সবাই তোমার বন্ধু ছিল না, প্রায় সবাইই ছিল স্রেফ তোমার ক্লাসমেট। বন্ধু হতে পারা অনেক বড় কিছু! একটা কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না। এ পৃথিবীর সবচাইতে হাস্যকর মূল্যহীন বন্ধু হল ভার্চুয়াল বন্ধু, মানে ফেসবুক ‘বন্ধু’! অথচ, তুমি এই ফেসবুক বন্ধুত্বের উপনিবেশ স্থাপনের জন্য কত ‘আত্মত্যাগ’ করেই যাচ্ছ! বিশ্বাস করো, ফেসবুক ফ্রেন্ড আর শোপিসের মধ্যে ভাবগত কোনও পার্থক্য নেই। এমন ফ্রেন্ডশিপের দুই পয়সারও দাম নেই! ভাল থাকতে ‘না’ বলতে শেখো। সবাইকেই আর সবকিছুকেই ‘হ্যাঁ’ বলা মানেই কিছু সর্বনাশকে নিজের জীবনে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা। জীবনে শান্তি পেতে নিজের ফ্রেন্ডসার্কেলকে ছোট রাখো।
উনচল্লিশ। তুমি পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি নও, যে তার জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন। তোমাদের বয়সে জীবন নিয়ে বেশি আশাবাদী হওয়া এবং হতাশ হওয়া—দুইই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কোনোকিছু নিয়ে বেশি লাফালাফি করার কিছু নেই। সবসময়ই মনে রাখবে, তুমি যা ভাবছ, বেশিরভাগ সময়ই জীবন তা নয়। ধাক্কা খেতে প্রস্তুত থাকো। ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি রাখো।
চল্লিশ। অন্যরা যা ভাবে, তা সহজভাবে নিতে শেখো। তুমিই পৃথিবীর একমাত্র শুদ্ধ ব্যক্তি নও। তুমি আজ যা ভাবছ, কাল তা নাও ভাবতে পারো। আজ যা ক্ষণিকের উত্তেজনায় ঠিক মনে হচ্ছে, কাল তা নাও মনে হতে পারে। আবেগতাড়িত হয়ো না, বিবেকতাড়িত হও। সবাই যা করছে, যদি তুমিও তা-ই করো—কারণ অন্যরাও তা করছে, তবে তুমি কখনওই আলাদা কিছু হতে পারবে না। অসামান্য মানুষ যারা, তাদের চিন্তাভাবনা ও কাজের ধরন হুজুগে প্রকৃতির নয়, বরং স্বতন্ত্র। প্রকৃত ঘটনা জানার ও বোঝার চেষ্টা করো, না বুঝেই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত লাফিয়ো না।
একচল্লিশ। এ জগতে দুই ধরনের মানুষ আছে। প্রথম ধরনের মানুষ অবাক করে দেয়, দ্বিতীয় ধরনের মানুষ অবাক হয়। অবাক হওয়া সহজ, অবাক করে দেয়া কঠিন। যারা সবাইকে অবাক করে দেয় তাদের কাজের মাধ্যমে, তারা নিশ্চয়ই অসাধারণ কিছু করে, বাড়তি সময় ও শ্রম দেয়, অবাক করে দেয়ার মত কিছু গুণ অর্জন করে। অন্যরা যখন সময় কাটায় আলস্যে কিংবা গতানুগতিকভাবে, ওরা তখন নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ও অন্যদের চাইতে আলাদা কিছু হওয়ার জন্য নিষ্ঠা আর ধৈর্য দিয়ে কাজ করে। তুমি কিছু আরাম, সুখ, আনন্দকে গুডবাই বলতে না পারলে এমন কিছু হতে পারবে না, যেটা আলাদা করে চোখে পড়ে। বাড়তি সম্মান পেতে চাইলে বাড়তি যোগ্যতা থাকতেই হবে।
বিয়াল্লিশ। শোনো, শোনার প্র্যাকটিস করো। যখন তোমার মতামত নেয়ার সময়, তখন মতামত দিয়ো না। শেখো। শিখতে না চাওয়ার কারণে এবং শেখার পেছনে সময় না দেয়ার কারণে আমি অনেককেই সাধারণ আর নগণ্যদের দলে মিশে যেতে দেখেছি। যা তোমার জানতেই হবে, তা জেনে নেয়ার পর আরও অনেক কিছু জানতে থাকো। রেজাল্ট গড়ার পড়াশোনা দ্রুত শেষ করে জীবন গড়ার পড়াশোনার পেছনে সময় দাও। মাথায় রেখো, তোমার চারপাশে যাদের দেখছ, তাদের প্রায়ই সকলেই সাধারণ মানুষ হয়েই জীবন কাটিয়ে দেবে। তুমি যদি অসাধারণ কেউ হয়ে উঠতে চাও, তবে তোমার প্রথম কাজই হবে ওদেরকে অন্ধভাবে অনুকরণ না করা।
তেতাল্লিশ। যদি তুমি এমন কোনও বিদ্যা জানো, যা অন্য অনেকেই জানে না, তবে কোনোভাবেই তা ছেড়ে দিয়ো না। তোমাকে লোকে বেশি মূল্যায়ন করবে তোমার যা জানার কথা নয়, কিন্তু জানো, তা দিয়ে। ছবি আঁকতে পারো? আরও আঁকো! বাঁশি বাজাতে পারো? আরও বাজাও! কবিতা লিখতে পারো? আরও লিখো! গাইতে পারো? আরও গাও! ভাল ছবি তুলতে পারো? আরও তোলো! আইনস্টাইন ভাল বেহালা আর পিয়ানো বাজাতে পারতেন, যখন এটা জানতে পারি, তখন অন্য বিজ্ঞানীদের তুলনায় আইনস্টাইনের প্রতি এক ধরনের বাড়তি শ্রদ্ধা জাগে।
চুয়াল্লিশ। কে কী ভাবছে, এটা নিয়ে কম ভাবো। তুমি যতক্ষণ জানো, তুমি ঠিক পথে আছ, ততক্ষণ কারও কোনও কথা তোয়াক্কা করার দরকার নেই। যদি বুঝতে না পারো, তুমি ঠিক পথে আছ কি না, তবে তোমার বাবা-মা কিংবা এমন কারও সাথে আলাপ করে নাও, যে তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। যে যা-ই বলুক, বলতে দাও। এমন কিছু করে দেখাও যা সবার মুখ বন্ধ করে দিতে পারে। তোমার যা বলার, মুখে নয়, কাজে বলো।
পঁয়তাল্লিশ। ক্ষণিকের আনন্দ পেতে এমন কিছুই কোরো না যা ভবিষ্যতে দুঃখ ডেকে আনবে। ভুল করার সুখ থেকে নিজেকে যত দূরে রাখতে পারবে, জীবনটা তত সুন্দর হবে। ব্যস্ত হতে শেখো। নিজেকে সবসময়ই ভীষণ রকমের ব্যস্ত করে রাখো। কাজের কাজে ব্যস্ত হও, অকাজের কাজে নয়। নিজেকে নানান ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট দিতে থাকো। এমন অ্যাসাইনমেন্ট, যেগুলি তোমার জীবনটাকে সাজাতে সহায়ক হবে। নিজেকে এক মন্ত্রে গড়ে তোলো: Never behind!
অনেক কথা হল। আমার কথায় কিছু মনে কোরো না তোমরা। আমি যা কিছু বিশ্বাস করি, সেগুলির মধ্যে যতটুকু এই লেখাটি লেখার সময় মাথায় এসেছে, লিখে ফেললাম। কোনও কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে সে কথাটি ভুলে যেয়ো আর আমার প্রতি কোনও রাগ রেখো না। অর্থনীতিবিদ র্যাগ্নার নার্কসের একটা সুন্দর তত্ত্ব আছে—দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র, যেটাকে এককথায় লিখলে এমন হয়: একটি দেশ দরিদ্র, কারণ দেশটি দরিদ্র। আমি যদি এই তত্ত্বের মত করে তারুণ্যের দুষ্টচক্রকে এককথায় বলি, তাহলে বলব: কিছু তরুণ স্টুপিড, কারণ ওরা স্টুপিড। একটু ভেঙে বলি, কেমন? কেউই স্টুপিড হয়ে জন্মায় না, তবে কেউকেউ স্টুপিড হয়ে বাঁচতে ভালোবাসে, কারণ স্টুপিড হয়ে বাঁচাটা সহজ ও আনন্দের। এর ফলে ওরা ওদের মতই আরও কিছু স্টুপিডের সাথে মেশে, স্টুপিডদের মত চিন্তা ও আচরণ করে, এবং যারা স্টুপিড নয়, ওদের এড়িয়ে চলে। এর থেকে মুক্তির উপায়? একটু অন্যভাবে উত্তরটা দিই। খুবই এবড়োথেবড়ো এক রাস্তায় গাড়ি চলছে। গাড়ির যাত্রী ওই এলাকায় নতুন। গাড়িটি এতো বেশি লাফিয়ে চলছিল যে গাড়ির ভেতরে বসে থাকাটা রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যাত্রী ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলেন, “এই রাস্তা শেষ কবে মেরামত করা হয়েছে?” উত্তর এলো, “যতদূর মনে পড়ে, ১৪ বছর আগে।” শুনে যাত্রী চেঁচিয়ে উঠলেন: “কীইইই? এই এলাকার লোকজন এ রাস্তা দিয়ে কীকরে চলাচল করে? ওরা এটা নিয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ করে না?” ড্রাইভার খুব অবাক হয়ে বললেন, “এটা যে একটা অভিযোগ করার মত ব্যাপার, এটাই তো কখনও আমাদের মাথায় আসেনি! আমরা তো ধরে নিয়েছিলাম, রাস্তা এমনই হয়!” তোমাদের বলছি………যারা ধরে নিয়েছ, জীবন এমনই হয়, সময় থাকতে পথ বদলাও, নতুবা জীবন ধাক্কা খেয়েই কাটবে।
9 comments
ফেসবুক, লিংডিন,টুইটার এর আইকনগুলোর জন্য আপনার ওয়েবসাইট থেকে মোবাইল দিয়ে পড়তে অসুবিধা হয়। দয়াকরে সমস্যাটা সমাধান করলে আমাদের জন্য ভাল হবে দাদা।
সবগুলোই দরকারি, অল্প কয়েকটা ছাড়া বাকিগুলো মানা হয় না, তবে চেষ্টা করি।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাম, কথাগুলো অনেক ভালো লেগেছে, মেনে চলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ…
45!!! What the Fuck!
ভাইয়া আপনার লেখাগুলো বরাবরই বিবেক,হৃদয় ও লোকায়িত সত্তাকে জাগ্রত করে।অসম্ভব রকমের কিছু দিক নির্দেশনা পেলাম।যা জীবন চলার পথে ক্রমশই আমাদের প্রয়োজন।সৃষ্টিকর্তা আপনার মঙ্গল করুক,সাথে আমাদের ও।ভালোবাসা আপনার জন্য হৃদয় থেকে আসে।এ রকম inspire উপদেশ আরো দিবেন।কেউ না পড়ুক আমি মৃত্যু অব্দি আপনার লেখার পাঠক হয়ে থাকব ইনশাআল্লাহ।
Wow….vaiya osadharon legeche apnar kotha gulo. Ami atotai montro mugdher moto apnar kotha gulo porchilam akhon kotha sesh hoye jaway mone hocce post ta aro boro hole arektu besi kichu sikhte partam…tnx….ato sundor r sabolil vasay kothagulo upocthapon korar jonno….onek onek dowa roilo apnar jonno…asa kori samner dingulotew amader vlo thakar jonno onek kichu sikhaben & apniyo onek vlo thakben…❤❤❤
♥
so inspiring speech my dear brother
thanks a lot
so inspiring speech my dear brother
thanks a lot