হলদে লিপির ঝরনা

প্রিয় অনিরুদ্ধ,…না না, অনি বলেই ডাকি?
আজ অনেকগুলি বছর হয় এ নামটিতে তোমায় ডাকি না।
অনিরুদ্ধ শব্দটির যে অনেক ভার গো...আমি আর বইতে পারি না!
খুব ইচ্ছে করে জানো, অনি, একবার তোমাকে আবার
আমার সেই পুরনো অনি হিসেবে দেখতে!
কী করবে বলো, আমি যে পুরনোতেই বেশি অভ্যস্ত!
আর তাই বুঝি তোমার অমন নতুনে অভ্যেস হলো?


জানো, অনি, তোমার সাথে প্রথম যে-বার আমার ফোনে কথা হয়েছিল,
সে-বার পুরোটা দিনই আমার ঘোরে কেটে গিয়েছিল।
কী মিষ্টি গো তোমার ওই কণ্ঠস্বর! আহা, এখনও যেন কানে বাজে!
হ্যাঁ, বাজেই তো, তবে এখন যতটা না মিষ্টতা তাতে,
তার চাইতে অনেক বেশি...আমায় তিলে তিলে শেষ করে দেবার বিশ্বস্ত নৈপুণ্য!
বদ্ধ দেয়ালের চারটি কোণাই যেন আমায় ছুড়ছে শুধুই রাশি রাশি উদ্ধত উপহাস!


এমন ভেঙেচুরে তো কখনও কাউকে ভালোবাসিনি, অনি,
যেভাবে তোমাকে বেসেছিলাম...তাহলে?
তাহলে কেন বুঝলে না আমায়, অনি?
আমার ভালোবাসায় তো কোনও ফাঁক ছিল না,
তাহলে আমায় কেন তুমি পুরোটাই ফাঁকিতে রেখে চলে গেলে, অনি? বলো না গো!
বলো না অনি, আর কী করলে তুমিও আমায় ওরকম ভেঙেচুরেই ভালোবাসতে?


অনি, তোমার মনে আছে ওই কালো শাড়িটার কথা?
যে শাড়িতে আমায় দেখবে বলে একসময়
হাজার মাইল পাড়ি দিতেও তোমার একটুও কষ্ট হয়নি!...মনে আছে, অনি?
আর ওই সাদা শার্টটা? ওটা…? ওটাও কি ভুলে গেছ, অনি?
আচ্ছা, এখন আর পরো না বুঝি ওটা? কেনই-বা পরবে!
ওই শার্টে তো তোমায় দেখতে আমি ভালোবাসতাম, তুমি তো নয়!


অনি, জানো, যে শিউলিতলায় আমরা বসতাম,
ওখানে এখন অন্য কোনও জুটিকে বসতে দেখা যায়!
তোমার মনে আছে? মুঠোয় ভরা ভাতফোটা শিউলিফুল,
আমার খোলাচুলের ঢেউয়ে বেলিফুল...মনে আছে?
আর আমার ওই কানের দুল? ওটার কথা মনে আছে?
ওটাও মনে রাখোনি তুমি? ওটা তো আমার ভালোবাসার নয়, তা-ও এমন করে ভুলে গেলে, অনি!


আচ্ছা অনি, সেই মোড়ের মাথায় আর কখনও গেছ কাউকে নিয়ে?
ল্যাম্পপোস্টকে সাক্ষী রেখে নিয়ন বাতিটিকে আশ্রয় করে হাতে হাত রেখে,
তোমার কাঁধে মাথা রেখে তোমায় অপলক দৃষ্টিতে দেখতে...আর কাউকে দিয়েছ?
দিয়েছ নিশ্চয়ই, আমি জানি!


তুমি এখন অনেক ব্যস্ত ভালোবাসা বেচতে!...ঠিক যেমনি আমায় বেচেছিলে!
তা কী পেলে, অনি, ভালোবাসা বেচে? অনেক অনেক কাচের পুতুল, না কি কাঠের ফুল?


অনি, যখন আমার মন খারাপ হতো, তোমার তখনকার অস্থিরতার কথা মনে পড়ে?
অবশ্য মনে কেনই-বা পড়বে, তুমি তো আমার মন খারাপের নয়,
মন খারাপের সুযোগের অস্থিরতাতেই বেশি সুখী ছিলে!


সবাই নাহয় পর, তুমি তো আপন হতে পারতে বলো, অনি?
তুমি তো আমায় আড়ালে না রেখে আপন শক্তিতে
দীপ্তিমতী হতে বলতেই পারতে! বলো না, পারতে না গো?
নাহ্‌! পারতে আর কী করে! পারলে তো আর তুমি আমার অনি থেকে...
আজকের অনিরুদ্ধ হয়ে যেতে পারতেই না!


আচ্ছা, এই যে আজ যারা তোমায় এতবার অনিরুদ্ধ অনিরুদ্ধ বলে
মুখে ফেনা তোলে, তারা কি জানে, তুমিও কখনও কারও অনি হয়েছিলে?...
না না, মানে…অনি হবার নাটক করেছিলে? জানে ওরা, অনি?
ওরা কি জানে অনির ভালোবাসতে কেমন আকুতি ছিল একসময়?
ওরা জেনেছে কখনও, অনি থেকে অনিরুদ্ধ হতে গিয়ে
তুমি কাউকে পথের ভিখিরিনী করে ছেড়ে দিয়ে তার বদলে
তোমার প্রেম বেচে এসেছ বেশ কড়া দামে, এসব জানে ওরা, অনি?
না না! ওরা কেন জানবে! এ তো জানবার নয়! এ যে শুধুই অবহেলার!


অনি, এখনও কি আমি তোমায় ফোন করলে ফোনটা তুমি তুলবেই না?
অসংখ্য ফোনের কিংবা অবসাদের অজুহাত দেখিয়ে
ওভাবেই আমায় আজও এড়িয়ে যাবে? বলো না, অনি?
অথচ তোমার ফোনের অসুখে অনায়াসেই আমার কত কত ফোন
আলস্যেই হারিয়ে গেছে, সে খবর তুমি জানো, অনি?
না না! জানবে কী করে!...তোমার তো এখন আমার মনের ভাষা
আর কলমের ভাষা আলাদা করার সময়টুকুই হয় না!


জানো, অনি, এখন আমি আর তোমাকে লিখি না,
বরং তোমার জন্যই লিখতে শিখে গেছি! পার্থক্যটা তুমি বোঝো, অনি?
না না! কী করে বুঝবে তুমি! তুমি তো স্রেফ কাব্য করেই আমায়
যত্নে তুলে রেখে দিয়েছ! কাব্য কি আর তোমায় ভোলাতে পারে!


তবুও, সবটা গুছিয়ে অবিকল কাব্যের শরীরে
তোমায় দেখানো আর হয়ে উঠল না!
তাই কাব্য না করেই আজ বলে গেলাম,
তুমি ভালো থেকো, অনি!