হারাবার বেলায়

প্রতিটি বার কতভাবে, কত রকম করে আমাদের মান-অভিমানের
ছোট্ট ছোট্ট পাহাড়চূড়া ভেঙে আবার জোড়া লেগেছে ভেবে ভেবে আমরা যে ভুলটা করেছি,
তা, যত দিন যায়, তত‌ই সামনে আসে।
অভিমানের এ সমস্ত ছোট্ট চূড়া কবে ওই আকাশছোঁয়া পর্বতের দিকে ছুটে চলে গেছে,
তা, আমি বা তুমি কেউই কখনও বুঝে উঠতেই পারিনি!


অভিমান! সে কী না পারে!
মৃত্যুকেও, সে নির্বাক দৃষ্টিতে নিয়ে, পাথরসম শোক সামলে
অবলীলায় বিনা অশ্রুপাতে মেনে নিতে শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়!
আর এ তো সামান্যই অবহেলাভরে ফিরিয়ে দেওয়া!


সব ঝড়ই হয়তো একদিন থেমে যায় ঠিকই,
তবে ঝড়ের কবলে পড়ে, ক্ষতিটা কেবল ক্ষতিই থেকে যায়,
এবং ঝড়ের পুনরাবৃত্তিতে তা একসময় নিঃশেষ হয়ে কিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।


বার বার আঘাত পেতে পেতে একসময় আঘাতকেও
বড্ড পরিচিত বলে মনে হয়।
তাকে তখন আলাদা করে খাতিরযত্নটা আর করতে হয় না।


অভিযোগের লড়াইটা না দেখে আমার তোমাকে
আরও একটু আমার করে পাওয়ার লড়াইটা
দেখতে তুমি পারতেই কি না?


আমরা কি পারতাম না এইসব অভিযোগ অনুযোগ ভুলে গিয়ে
দুজন দুজনকে সবটা রকমে বুঝে নিয়ে
আরও একটুখানি ভালোবাসার কাহিনিটা লিখে ফেলতে?


না কি কোন‌ও দিনই, কোথাও, আমাদের কোনও কিছুই, পৃথক পৃথক আমি এবং তুমি থেকে...
আমাদের হবার কথাটা, কোথাও লেখা ছিল না!


কপালে সবার সব সুখ লেখা থাকে না।
কোন‌ও কোন‌ও সুখ অনাকাঙ্ক্ষিত ধরনে অতিথিপাখি হয়ে এসে
স্মৃতিপটে কিছু বানানো ছবি এঁকে আবার ঠিকই ফিরে যায় তার আসল ঠিকানায়!
চলো, কী আছে তাতে! ভাগ্য সবাইকে, সারাজীবন‌ই, ভালোবাসাকে আগলে রেখে,
ভালোবাসার মানুষটির সাথেই, থেকে যাবার সুযোগটা দেয় না!
আমি নিজেকে সেরকমই একজন বলে মেনে নিয়েছি।


যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকো,
তাহলে সারা দিনের সমস্ত ব্যস্ততার ভিড়েও, কিংবা
নিরালায় একা কোন‌ও সময়কে জড়িয়ে থাকতে গিয়েও,
আমাকে তোমার একবারও পড়েনি মনে বা পড়বার কথাও নয়,---
এই মিথ্যাচারটুকু তুৃমি না-ইবা করলে নিজের সাথে!
ভুলে যেয়ো না, আমিও তো ভালোবেসেছি, তুমি একা তো নও,...অবশ্য যদি বেসে থাকো আদৌ!


এই নিস্তব্ধতায় আমি পুরোপুরিই হারিয়ে গেলে
তোমার এক ফোঁটাও চোখের জল আমার জন্য বরাদ্দ থাকবে কি না,
সে ধন্দে আমি আর গেলাম না।
তবে আমি হারিয়ে যাবার মুহূর্ততে একবার তোমাকে দেখতে চাইব!
তুমি এবার এক একা বেঁচে থাকতে শিখে নিয়ো, প্রিয়!