৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: বাংলা (কালের কণ্ঠ)

বিসিএস পরীক্ষার ডিফিকাল্টি লেভেল আমার কাছে কিছুটা ওভাররেটেড বলেই মনে হয়েছে৷ এটা কম্পিটিটিভ এক্জাম, এটা যতটা সত্য, রিয়েল কম্পিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট খুব বেশি সাধারণত থাকেনা, এটা আরও বেশি সত্য৷ বেশিরভাগ মানুষই এই ২টা এক্সাম নিয়ে ভয় দেখাতেই বেশি পছন্দ করেন। যা জানেন, তা বলেন; যা জানেন না, তাও বলেন। ২টা ফ্যাক্ট শেয়ার করি।

• এই এক্সামে ৫০% ক্যান্ডিডেট যায় জাস্ট ঘুরতে, কোনও কারণ ছাড়াই, অনেকটা গেট-টুগেদার করতে। (মজার ব্যাপার হল , এদের কেউকেউ সফলও হয়ে যায়! ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ টাইপের আরকি! ওদের সাফল্যে কষ্ট পেয়ে লাভ নাই।)

• রিয়েল কম্পিটিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট থাকে মাত্র ৭% এর মতো।

এর মানে, আপনার কম্পিটিটর আপনি যতটা ভাবছেন, তত বেশি না। বিসিএস পরীক্ষার কোনও সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই, তাই এই পরীক্ষায় ১০০% প্রস্তুতি নেয়া কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। মাথায় রাখুন, শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ষাটভাগ ভুলে গিয়ে বাকী চল্লিশভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷ এই পরীক্ষায় ভাল করার জন্যে কী কী পড়বেন, সেটা জানার চাইতে অনেকবেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করা।

বাংলার জন্য আগের বিসিএস’য়ের আর জব সল্যুশনের ভাষা ও সাহিত্যের প্রশ্নগুলি সব জোর দিয়ে পড়ে ফেলুন। ওখান থেকে অত কমন হয়তো পাবেন না, কিন্তু একটা ধারণা পাবেন, কোন ধরনের প্রশ্ন আপনি বাদ দিয়ে পড়বেন। যেকোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের প্যাটার্ন ম্যাপিং বোঝাটা খুব খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষা।

কোথা থেকে পড়বেন?: আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ ৯ম-১০ম শ্রেণীর ব্যাকরণ বই+ হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা+ গাইড বই

কীভাবে পড়বেন?: সিলেবাসটা ভাল করে দেখে নিন। কোন-কোন টপিক আছে, একটা কাগজে লিখে ফেলুন। এরপর টপিক ধরে ধরে ব্যাকরণ বই আর গাইড বইয়ের সেই অধ্যায়গুলি ভালভাবে দাগিয়ে দাগিয়ে বারবার পড়ুন। যে প্রশ্নগুলি বারবার পড়লেও মনে থাকে না, সেগুলি মনে রাখার চিন্তা বাদ দিন। একটা কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, একটা সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর। ৫ নম্বরের কঠিন প্রশ্নের পেছনে সময় দেয়ার চাইতে বরং ২০ নম্বরের সহজ প্রশ্নের পেছনে সে একই সময়টা দেয়া ভাল। আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে বুঝেশুনে পড়ুন।

সাহিত্য।

কোথা থেকে পড়বেন?: আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সল্যুশন+ সৌমিত্র শেখরের জিজ্ঞাসা+ হুমায়ূন আজাদের লাল নীল দীপাবলি+ মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস+ গাইড বই

কীভাবে পড়বেন?: আগের বিসিএস’য়ের প্রিলি আর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন স্টাডি করে কোন ধরনের প্রশ্ন আসে, কোন ধরনের প্রশ্ন আসে না, সে সম্পর্কে ভাল ধারণা নিন। এরপর রেফারেন্স বই দাগিয়ে-দাগিয়ে বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে পড়বেন। রেফারেন্স বইয়ের সবটুকু কাজে লাগে না, তাই সবটুকু পড়ার লোভ সামলানো শিখুন। খুবই ভাল হয় যদি সাহিত্য অংশটি পড়ার সময় লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ নিয়ে ফেলা যায়, কারণ এর জন্য বাড়তি কোনও কষ্ট করতে হবে না আপনাকে। মুখস্থ করার চেষ্টা করার চাইতে বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করা ভাল। পরীক্ষার হলে কিছু প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই পারবেন না, এটা মাথায় রেখে সাহিত্য অংশের প্রস্তুতি নিলে মনমেজাজ খারাপ হবে কম।

বিসিএস প্রিলি নিয়ে কিছু টিপস:

• ১০ম থেকে ৩৫তম বিসিএস, ২-৩টা জব সল্যুশন কিনে পিএসসি’র নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলো (সম্ভব হলে, অন্ততঃ ২৫০-৩০০ সেট) বুঝে-বুঝে solve করে ফেলুন। দাগিয়ে-দাগিয়ে রিভিশন দেবেন অন্তত ২-৩ বার। Read the mind of the question setter, not the mind of the guidebook writer. পেপার, ইন্টারনেট আর রেফারেন্স বই ভালভাবে দেখতে হবে।

• দুই সেট রিটেনের গাইড বই কিনে আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর সাজেশন পড়ে ফেলুন। যে টপিকগুলো প্রিলির সাথে মিলে, সেগুলো সিলেবাস ধরে পড়ে শেষ করে ফেলুন। এতে করে আপনার রিটেনের অর্ধেক পড়া হয়ে যাবে। রেফারেন্স পড়ার সময় আদৌ বইটি পড়ার দরকার আছে কিনা, সেটা বুঝে পড়ুন। রিটেনের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি পড়া প্রিলির সাথে মিলে যায়।

• বেশিরভাগ স্টুডেন্টই প্রথমে রেফারেন্স বই পড়ে, পরে প্রশ্ন সলভ করা শুরু করে। এখানে ২টা সমস্যা আছে। এক। বেশি-বেশি প্রশ্ন সলভ করার সময় পাওয়া যায় না। যত বেশি প্রশ্ন সলভ করবেন, ততই লাভ। দুই। রেফারেন্স বইগুলোর বেশিরভাগ অংশই বিসিএস পরীক্ষার জন্যে কাজে লাগে না, অথচ পুরো বই পড়তে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং বিসিএস নিয়ে অহেতুক ভীতি তৈরি হয়। তাছাড়া অতকিছু মনে রাখার দরকারও নেই। …….. তাই, উল্টো পথে হাঁটুন। আমিও তা-ই করেছিলাম। একটা প্রশ্নকে আরও ৩টি প্রশ্নের সূতিকাগার বানান। রেফারেন্স বই উল্টাতে কষ্ট হয়, এটা ঠিক। কিন্তু কষ্ট করে এই কষ্টটা করতে পারলে আপনার প্রিলি আর রিটেন দুটোতেই লাভ হবে, এটা আরও বেশি ঠিক।

• প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন৷ একেবারেই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসে বড়জোর ৫-৬টা, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়৷ এরমধ্যে অন্তত ২টা পেপারটেপার পড়ে আনসার করা যায়৷ বাকি ৪টাকে মাফ করে দিলে কী হয়?! এই ৪ মার্কসের এ্যাতো পেইন কোন দুঃখে পাব্লিক নেয়, আমার মাথায় আসে না৷ আসলে, ওই যন্ত্রণাদায়ক বইগুলো পড়লে নিজের কাছে কেমন জানি পড়ছি-পড়ছি মনে হয়৷ এটা অতি উচ্চমার্গীয় ফাঁকিবাজির পর্যায়ে পড়ে৷

এ লেখাটি ২ সেপ্টেম্বর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতার প্রধান ফিচার হিসেবে ছাপা হয়েছিল। লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:

http://www.kalerkantho.com/print-edition/chakriache/2015/09/02/263619