৩৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থীদের জন্য (শেষ পর্ব, প্রথম আলো)

পরেরবার ফাটিয়ে পরীক্ষা দেওয়া বলে আসলে কিছু নেই। আপনি আগে কী করেছেন, কী করেননি, সেসবের হিসাব না করে এখনকার নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আমাদের শরীর চলে শরীরের ক্ষমতায় নয়, মনের জোরে। একজন সুস্থ মানুষের পরিশ্রম করতে না পারাটা মূলত একধরনের মানসিক অক্ষমতা। এই কয়টা দিনে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজে লাগান। দেখুনই না কী হয়!

১. ‘আনকমন প্রশ্ন’ বলে কিছু নেই। পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না এলে বানিয়ে লিখে দিয়ে আসতে হবে, বানাতে না পারলে কল্পনায় আনতে হবে, কল্পনায় না এলে জোর করে কল্পনা করতে হবে। আপনি উত্তর করছেন না, এটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হলো, কেউ না কেউ সেটা উত্তর করছে।

২. শূন্য দশমিক ৫ মার্কসও ছেড়ে আসা যাবে না। যে করেই হোক, ‘ফুল আনসার’ করে আসতে হবে।

৩. অন্তত তিনটি ডাইজেস্টের শুধু প্রয়োজনীয় অংশগুলো অতি দ্রুত পড়ে নিন। পাণ্ডিত্য নয়, চাকরি চাই।

৪. আপনার আগে কেউ ফাঁকিবাজি করে পার পেয়ে গেছে মানেই যে আপনিও ফাঁকিবাজি করে পার পেয়ে যাবেন, এটা কখনোই ভাববেন না।

৫. আপনার ব্যক্তিগত দুঃখ আর যন্ত্রণা আপনার পরীক্ষা খারাপ হওয়ার কোনো অজুহাত হতে পারে না, অন্তত চারপাশের পৃথিবীটা তা-ই মনে করে। আপনার কষ্টগুলো বড়জোর আপনার দুর্ভাগ্য; কিন্তু আপনার ব্যর্থতাগুলো আপনার ব্যর্থতাই, আর কিছু নয়।

৬. আমি বিশ্বাস করি, ভালো প্রস্তুতি থাকলেই যেমন ভালো পরীক্ষা দেওয়া যায় না, তেমনি খারাপ প্রস্তুতি থাকলেই খারাপ পরীক্ষা দেওয়া যায় না। ফলাফল সব সময়ই চূড়ান্ত ফলাফল বের হওয়ার পর, আগে নয়। এর আগ পর্যন্ত আপনি কিছুতেই কারও চেয়ে কোনো অংশেই কম নন।

৭. এ সময়ে কিছু অভিনব প্রশ্নসমৃদ্ধ ‘টাচ অ্যান্ড পাস’ টাইপের সাজেশন পাওয়া যায়। এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। নিজের সাজেশনসের ওপর নির্ভর করাই ভালো।

৮. একটা ‘নো এক্সকিউজ’ জীবন কাটান। আপনি সফল হলে আপনার এক্সকিউজ দেখাতে হবে না। আপনি ব্যর্থ হলে আপনার এক্সকিউজ কেউ শুনবেই না। নিজেকে ক্রমাগত আঘাত করুন, নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন প্রতিটি মুহূর্তেই।

৯. কার কতটুকু পড়া হলো, সে খবর কখনোই নেবেন না। নিজেরটা নিয়ে ভাবুন।

১০. কোন প্রশ্নের উত্তর কত পৃষ্ঠা লিখতে হবে, সেটা নির্ভর করে প্রশ্নটির নম্বর, গুরুত্ব, সময় আর আপনার লেখার দ্রুততার ওপর। সময় সবার জন্যই তো সমান, এটার সঠিক ব্যবস্থাপনাই আসল কথা।

১১. কোনো টপিক একেবারেই না পড়ে গেলে পরীক্ষায় বানিয়ে লেখাটাও সহজ হবে না। সবকিছু একবার হলেও ‘টাচ করে’ যান।

১২. পড়তে বসলে সামনের কয়েক ঘণ্টায় কী কী পড়বেন, সেটা কাগজে লিখে ফেলুন, এরপর পড়ুন। সামনের কয়েক দিনে কী কী পড়বেন, সেটা নিয়ে কখনোই ভাববেন না।

১৩. পরীক্ষার আগ পর্যন্ত গুনে গুনে ৪ ঘণ্টা ঘুম। কী? হবে না? হবে, হবে। অনেকেই এটা পেরেছে। আপনি পারবেন না কেন?

১৪. প্রশ্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে ১৫ মার্কসের একটি প্রশ্ন উত্তর করার চেয়ে ৪+৩+৩+৫=১৫ মার্কসের চারটি প্রশ্ন উত্তর করা ভালো।

১৫. ফেসবুকিং ছেড়ে দিন। একদমই! ফোন রিসিভ করুন হিসাব করে।

১৬. বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি পড়বেন কম। বাকি চারটা বেশি বেশি পড়ুন।

১৭. বাইরে কোথাও মডেল টেস্ট দেওয়ার দরকার নেই। বাসায় অনেক বেশি সময় দিন।

১৮. বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখেন, এ রকম ২৫-৩০ জনের নাম এবং তাঁদের ‘এরিয়া অব ইন্টারেস্ট’ ডায়েরিতে লিখে রাখুন। উদ্ধৃতি দেওয়ার সময় কাজে লাগবে।

১৯. বিভিন্ন কলামিস্টের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো ইস্যুকে ব্যাখ্যা করে উত্তরের শেষের দিকে আপনার নিজের মতো করে নিজের বিশ্লেষণ দিয়ে উপসংহার টানুন। কোনো মন্তব্য কিংবা নিজস্ব মতামত থাকলে (এবং না থাকলেও) লিখুন।

২০. বেশি বেশি পয়েন্ট দিয়ে প্যারা করে করে লিখবেন। প্রথম আর শেষ প্যারাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় হওয়া চাই।

২১. যা যা পড়ছেন, তার তেমন কিছুই মনে থাকবে না। শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে কারও পক্ষেই লিখিত পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ৬০ ভাগ ভুলে গিয়ে বাকি ৪০ ভাগকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট৷

২২. যাঁরা প্রথমবার বিসিএস দিচ্ছেন, তাঁদের বলছি। ব্যর্থতার কোনো ফার্স্ট টাইম সেকেন্ড টাইম বলে কিছু নেই। ব্যর্থতা ব্যর্থতাই! নিজেকে অত ক্ষমা করে দিলে জীবন চলে না।

২৩. রাষ্ট্রের কিংবা সরকারের নেতিবাচক কোনো কিছুই পরীক্ষার খাতায় লিখবেন না।

২৪. শর্টকাটে ম্যাথস করবেন না, প্রতিটি স্টেপ বিস্তারিতভাবে দেখাবেন।

২৫. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোট, সারাংশ, সারমর্ম, ভাবসম্প্রসারণ, অনুবাদ, ব্যাকরণ ইত্যাদি ভালোভাবে পড়ুন।

২৬. সংবিধানের সব অনুচ্ছেদ আমার মুখস্থ ছিল না, অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত অত ভালো জানতাম না, মুখস্থবিদ্যা ছিল না, তবু আমি চাকরি পেয়েছি। তবে আপনি পাবেন না কেন?

যা হওয়ার, তা-ই হবে। আপনার রিজিক অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত করা আছে। আপনি আপনার কাজের মাধ্যমে সেটা অর্জন করার রাস্তাটাকে অধিক সম্মানিত কিংবা কম সম্মানিত করতে পারেন, আর কিছুই না। নিজের ওপর বিশ্বাস হারাবেন না, কারণ পৃথিবীতে এই একটি মানুষই শেষ পর্যন্ত আপনার পাশে থেকে যাবে। গুড লাক!

লেখাটি গত ১০ জুন ২০১৬ তারিখ প্রথম আলো পত্রিকার ‘চাকরিবাকরি’ পাতায় এসেছিলো। লিংকটি:

http://www.prothom-alo.com/life-style/article/883297/%E2%80%98%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E2%80%99-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%B9%E0%A6%AC%E0%A7%87