৩৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থীদের জন্য (১ম পর্ব, প্রথম আলো)

যদি আপনার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলি, “পারলে ট্রিগার প্রেস করার আগেই দৌড়ে পালান!” তখন আপনি কী করবেন? নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে থাকবেন না, যদিও আপনি খুব ভাল করেই জানেন, ওই সময়টাতে দৌড় দিলেও গুলির হাত থেকে বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ১%! আপনি আপনার সবটুকু দিয়ে বাঁচার শেষ চেষ্টাটা করে দেখবেন এই আশায়, যদি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় আর আপনি কোনো এক মিরাকলে বেঁচে যান! মানুষ এভাবেই বাঁচে—মাত্র ১% বেঁচে থাকার চান্সে ১০০% এফর্ট দিয়ে! একেবারে ছেড়ে দেয়ার চাইতে মিরাকলে বিশ্বাস করে লেগে থাকা ভাল।

ধরেই নিলাম, ৩৬তম বিসিএস-এ আপনি চাকরিটা পাবেন, এর সম্ভাবনা মাত্র ১%। পরীক্ষা তো দেবেনই, নাকি? পরীক্ষা যদি দিতেই হয়, তবে পড়াশোনা না করে দিয়ে কী লাভ? দায়িত্ব নিয়ে বলছি, প্রতিটি বিসিএস-এ মাত্র ১% সম্ভাবনায় ৭০% লোক চাকরি পায়। ওরা যদি পায়, তবে আপনি কেন পাবেন না? ১০০% এফর্ট দিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিন—এই মুহূর্ত থেকেই!

আমার নিজের মতো করে কিছু বুদ্ধি দিচ্ছি। এগুলিকে আপনার মতো করে কাজে লাগাবেন।

1. নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিন।

2. প্রতিদিন পড়াশোনা করুন অন্তত ১৬ ঘণ্টা; চাকরিটা ছাড়া সম্ভব না হলে অন্তত ৭ ঘণ্টা। এ সময়টাতে ৫ ঘণ্টার চাইতে বেশি ঘুম একধরণের বিলাসিতা। বিশ্বাস করে নিন, আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর চাইতে যত মিনিট কম ঘুমাবেন, উনার তুলনায় আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা তত পার্সেন্ট বেশি।

3. একটা বিষয় পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে পড়লে আপনার পছন্দের সহজ বিষয়টি পড়া শুরু করুন।

4. ফোন রিসিভ করা, ফেসবুকিং, সামাজিকতা কমিয়ে দিন। পড়ার টেবিল থেকে মোবাইল ফোনটি দূরে রাখুন।

5. অনুবাদ, অংক, ব্যাকরণ, মানসিক দক্ষতা প্রতিদিনই চর্চা করুন।

6. অমুক তারিখের মধ্যে অমুক সাবজেক্ট/ টপিক, যত কষ্টই হোক, শেষ করে ফেলবো, এই টার্গেট নিয়ে পড়ুন।

7. পড়ার সময় লিখে পড়ার তেমন প্রয়োজন নেই, বরং বারবার পড়ুন। প্রশ্ন অতো কমন আসবে না, আপনাকে এমনিতেই বানিয়ে বানিয়ে লিখতে হবে।

8. মার্কস এবং প্রশ্নের গুরুত্ব অনুসারে কোন প্রশ্নে কত সময় দেবেন, এটা অবশ্যই ঠিক করে নেবেন।

9. সব সাজেশনস্ই দেখবেন, কিন্তু কোনটাই ফলো করবেন না। আগের বছরের প্রশ্ন আর কয়েকটা সাজেশনস্ ঘেঁটে নিজের সাজেশনস্ নিজেই বানান।

10. রেফারেন্স বই কম পড়ে গাইডবই বেশি পড়ুন। ৫টি রেফারেন্স বই পড়ার চাইতে ১টি নতুন গাইডবই উল্টেপাল্টে দেখা ভাল।

11. লিখিত পরীক্ষায় আপনাকে উদ্ধৃতি আর তথ্যউপাত্ত দিয়ে প্রাসঙ্গিকভাবে প্রচুর লিখতে হবে। বাংলায় গড়ে প্রতি ৩ মিনিটে এক পৃষ্ঠা, ইংরেজিতে গড়ে প্রতি ৫ মিনিটে এক পৃষ্ঠা—এই নীতি অনুসরণ করতে পারেন।

12. যে ভাষায় আপনি অতি দ্রুত লিখতে পারেন, সে ভাষায়ই উত্তর করবেন। আমি উত্তর করেছিলাম বাংলায়।

13. প্রতিদিনই প্রার্থনা করুন, সবার সাথে বিনীত আচরণ করুন। এটা আপনাকে ভাল প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।

14. যে জিনিসগুলি কিছুতেই মনে থাকে না, সে জিনিসগুলি মনে রাখার অতিচেষ্টা বাদ দিন। অন্যকেউ ওটা পারে মানেই আপনাকেও ওটা পারতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। পরীক্ষায় বিকল্প প্রশ্ন থাকে। আপনি যা পারেন, তা যেন ভালোভাবে পারেন, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

15. সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। বেশি পড়া নয়, প্রয়োজনীয় টপিক বেশি পড়াই বড় কথা।

16. কারোর পড়ার স্টাইলকেই অন্ধভাবে ফলো করবেন না। রেজাল্টই বলে দেবে, কে ঠিক ছিল, কে ভুল ছিল। রেজাল্ট বের হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি কারোর চাইতেই কোনো অংশে কম নন। ‘বেস্ট অ্যাচিভার’ হয়, কিন্তু ‘বেস্ট ক্যান্ডিডেট’ বলে কিছু হয় না।

17. অন্তত ৩-৪টি গাইডবই থেকে উত্তর পড়ুন। পড়ার সময় গোলমেলে আর দরকারি অংশগুলি দাগিয়ে রাখুন যাতে রিভিশন দেয়ার সময় শুধু দাগানো অংশগুলি পড়লেই চলে।

18. দিনের বিভিন্ন সময়ে ব্রেক নিয়ে ১০-১৫ মিনিট করে অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নিলে দুটো লাভ হয়। এক। রাতে কম ঘুমালে চলে। দুই। যতক্ষণ জেগে আছেন, সে সময়টার সর্বোত্তম ব্যবহারটুকু করতে পারবেন। ওরকম অল্প সময়ের কার্যকরী ঘুমকে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ বলে।

19. অনলাইনে ৪-৫টি পেপার পড়ার সময় শুধু ওইটুকুই পড়ুন, যতটুকু বিসিএস পরীক্ষার জন্য কাজে লাগে। এই কয়দিন বিনোদন পাতাটি না পড়লে আপনার জীবনযৌবন ঊষর মরুভূমি হয়ে যাবে না।

20. বিসিএস পরীক্ষা হল লিখিত পরীক্ষার খেলা। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, মানসিক দক্ষতা আর বিজ্ঞানে বেশি মার্কস তোলা মানেই অন্যদের চাইতে অনেকটুকুই এগিয়ে যাওয়া। এই সময়টাতে বিসিএস পরীক্ষায় দুর্নীতি, ভাইভাতে স্বজনপ্রিয়তা, সিভিল সার্ভিসের নানান নেতিবাচক দিকসহ দুনিয়ার যাবতীয় ফালতু বিষয় নিয়ে শোনা, ভাবা, গবেষণা করা থাকে নিজেকে বিরত রাখুন।

এই কয়দিনে আপনার প্রচণ্ড মানসিক ও শারীরিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যাওয়ার কথা। ওরকমই হলে, আমি বলবো, আপনি ঠিক পথে আছেন। আমার অভিজ্ঞতা বলে, পরীক্ষার আগের সময়টাতে যে যত বেশি আরামে থাকে, পরীক্ষার রেজাল্ট বের হওয়ার পরের সময়টাতে সে ততোধিক কষ্টে থাকে। বেশি পরিশ্রমে কেউ মরে না। যদি তা-ই হতো, তবে আমরা দেখতে পেতাম, পৃথিবীর সকল সফল মানুষই মৃত।

লেখাটি গত ২৭ মে ২০১৬ তারিখ প্রথম আলো পত্রিকার ‘চাকরিবাকরি’ পাতায় এসেছিলো। লিংকটি:

http://www.prothom-alo.com/life-style/article/869377/%E0%A6%86%E0%A6%AA%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%9B%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%9C-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%9F%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%B6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A8