অন্যরকমের ভিক্ষাবৃত্তি

বয়েসে ছোট বন্ধুরা!

নিজের পায়ে দাঁড়াও! নিজের পায়ে দাঁড়ানো প্র্যাকটিস করো!

আমি যখন একেবারেই নোবডি ছিলাম, যখন তেমন কেউই আমাকে দুই পয়সারও পাত্তা দিত না, তখনও আমার নিজের কোনো সুযোগসুবিধার জন্য কাউকে অনুরোধ করব, এটা ভাবতেও পারতাম না। অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত কখনওই পৃথিবীর কারও কাছ থেকে একটা পয়সাও নিইনি, কোনো আনুকূল্যের জন্য কারও কাছেই মাথানত করিনি। নিজের জন্য কখনওই কাউকে বলিনি, “আপনি একটু ফোন করে দিন না, যাতে আমার কাজটা হয়ে যায়!” আমার পরম সৌভাগ্য, আজকের দিন পর্যন্ত কারও সামনেই বিন্দুমাত্রও অস্বস্তি নিয়ে কিংবা মাথানত করে যেতে হয়নি। কারও কাছে মাথানত করা মানেই তো উনার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া। অনেকেই কিন্তু সাহায্য করার ছলে মানুষ কিনতে পছন্দ করেন। ওরা চান-ই, কেউ এসে ওদের সামনে মাথাটা নুইয়ে আনুকূল্য চেয়ে বসুক! ওদের অন্যায় অহেতুক চাওয়াগুলি রাখতে কেউ-কেউ বাধ্য হয়। এও একধরনের দাসত্ব। এর চাইতে বড় লজ্জার আর কী হতে পারে? দেহে প্রাণ থাকতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও চেষ্টা করে যাব মাথাউঁচু করে চলার।

স্টুডেন্টলাইফে কোনও দিনও কারও কাছ থেকে একটা টিউশনিও চেয়েছি বলে মনে পড়ে না। জীবনের প্রথম টিউশনি থেকে একটা টাকাও নিইনি শুধু ওরা টাকা কম দিতে চেয়েছিল বলে। (সে গল্প আমার অন্য একটি লেখায় আছে।) অথচ দেখুন, আমার ব্যাচমেটদের মধ্যে টিউশনি করে আমার চাইতে বেশি পয়সা কেউ আয় করতে পারেনি। কেউ সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারবে না, সে আমার কাছ থেকে এক পয়সাও পাবে। অনেকেই আছে যারা ধারকরা পয়সা ফেরত দিতে পারেনি বলে লজ্জায় আমার ফোনটাও ধরতে পারে না, অথচ আমি হয়তো ফোন করেছি স্রেফ কুশল বিনিময় করার জন্য। কী লজ্জা! কী লজ্জা!! ছিল কিছু বন্ধুবান্ধব, যারা সময়ে-অসময়ে শুধু পয়সা চাইতো। পিকনিকে যাবে, সে পয়সাও আমার কাছ থেকে নিয়েছে। পরে বলেছে, “দোস্ত, দিবি যখন দুইজনের টাকা দিতে পারবি? আমার গার্লফ্রেন্ডও যেতে চাচ্ছে। আমি পরে ফেরত দিয়ে দেবো।” আমি এতটাই অবাক হয়ে গেছি যে, কিছুই বলতে পারিনি, পয়সা দিয়ে দিয়েছি। পিকনিকের দিন দেখি, ওর গার্লফ্রেন্ডের এক বান্ধবীও সাথে হাজির! পিকনিকে কতজনের জন্য রান্না হয়, একজন ফাও খেয়ে গেলে, কেউ কিচ্ছু মনে করবে না, এটা ভেবে সেই বান্ধবী এসেছিল। আমার খুব ইচ্ছে করছিল, ওর বয়ফ্রেন্ডটাকে একটু দেখি। ওরকম বেহায়া মেয়ে কোন বেচারার ঘাড়ে পড়ল, তা দেখার বড় শখ হল হঠাৎই! আমি সে দিন কিছুই বলতে পারিনি, শুধু বোকার মতন তাকিয়ে ছিলাম। আমি ভাবতাম, মেয়েমানুষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছেলেদের পছন্দ করে। সেদিন দেখলাম, নাহ্! ওরকম ভিক্ষুকদেরও গার্লফ্রেন্ড থাকে! শুধু তা-ই নয়, বেয়াক্কেল গার্লফ্রেন্ডও থাকে, যে কিনা কোনও জায়গাতেই ‘লজ্জায় খালিহাতে’ যায় না! সুন্দর-সুন্দর মেয়েগুলি বেয়াক্কেল হলে ওদেরকে দেখলে নিজেকেই কেমন জানি বেয়াক্কেল-বেয়াক্কেল লাগে! বন্ধুর দিকে দুপুরে তাকিয়ে ছিলাম। পরের পয়সায় ওরকম দাঁত বের করে পরম আয়েশে সস্ত্রীক মুর্গির হাড় চিবোতে বহুদিন কাউকে দেখিনি।

এমন ছেলেও দেখেছি, মাসের মাসের পর মাস বন্ধুর কাছ থেকে হাতখরচ নিয়ে চলে। কোনও মাসে বন্ধু টাকা একটু কম দিলে ওটা নিয়ে মনখারাপও করে! ভাবখানা এমন, যেন ভিক্ষা পাওয়াটা ওর অধিকার! অদ্ভুত না? টিউশনি করতে পারে না, ফুটানির শেষ নাই। ওরকম ছেলের চাইতে পঙ্গু ভিক্ষুকরাও বেশি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। মজার ব্যাপার হলো, ওদেরকেও কিছু বোকা রূপসী ভালোবেসে ফেলে! অবশ্য, বোকা না হলে একটা মেয়ে রূপসী হবেই বা কোন দুঃখে? প্রেমের ক্ষেত্রে সুন্দরী মেয়েদের পছন্দ সাধারণত এলোমেলো টাইপের হয়। ওরকম কোনও-কোনও ছেলে পালিয়েটালিয়ে বিয়েও করে বসে কখনও-কখনও। মেয়ের বাবা-মা’য়ের সামনে এসে দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই, লুকিয়ে বিয়ে করার পৌরুষ অফুরন্ত! বাব্বাহ! তালিয়া বাজাও, তালিয়া তালিয়া!! তখন সে আবারও হাত পেতে দেয় কোনো এক ‘পয়সাওয়ালা’ বন্ধুর কাছে। কিংবা, বলে “একটা চাকরি যোগাড় করে দে না দোস্ত, বড্ডো বিপদে পড়ে গেছি!” বিয়ে করেছে ও, ভালোবাসা পাবে ও, আর সে ভালোবাসার রসদ যোগাবে আরেকজন! ছিঃ! বিয়ের আগে খেয়াল ছিল না বউকে কী খাওয়াবে? মেয়েটার দোষ দেবো না আমি। মেয়েরা এসব ব্যাপারে জন্মগতভাবেই বোকা আর আবেগি হয়। মেয়ের হাতে হাত রেখে মাথাউঁচু করে চলা যাবে না জেনেও সে মেয়ের হাতধরা কেন? এর চাইতে বড় দায়িত্বহীনতা আর কী-ই বা হতে পারে? খাওয়ানো-পরানোর মুরোদ নেই, ভালোবাসা! দেখেছি এরকম অনেককেই। সাহায্যও করেছি। সাহায্য করেছি বলেই বড়-বড় কথা বলছি। নাহলে কিছুই বলতাম না। আমার একটা নিজস্ব নীতি হলো: “আমি যার খাইও না পরিও না, তাকে আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটাও বাজে কথা বলতে দেবো না, সে যে-ই হোক না কেন!”

সত্যি বলছি, ওরা এখনও ওরকমই আছে। ওদের কাজই ছিল সবার কাছ থেকে ধারকর্জ করে চলা। আমার কাছ থেকে ধার নিয়েছে অনেকেই। আমি ‘না’ বলতে পারতাম কম, তাই ফেরত পাবো না জেনেও পয়সা দিয়ে দিতাম। এই সমস্যা আমার বাবারও আছে, বাবাও ‘না’ বলতে পারে না। ফেরত পাওয়ার শর্তে পয়সা ধার দেয়া কর্ম কারক নয়, সম্প্রদান কারক। ওরকম ফাউল টাইপের ছেলেরা পরে এমন আচরণ করে যেন আমিই বরং পয়সা ফেরত চেয়ে ওকে বিরক্ত করছি। ফোন ধরে না পর্যন্ত! ধরলেও বিরক্তির সুরে কথা বলে। অনেকেই এমন একটা ভাব নেয় যে পয়সার কথা বেমালুম ভুলেটুলে বসে আছে! এ জগতে সে-ই প্রকৃত ভুলোমনা যে পাওনা পয়সার কথা ভুলে যায়। যে একবার পরের পয়সায় চলার কুবিদ্যা শিখে যায়, তার মনে নিজে পয়সা কামানোর ভাবনাটা সহজে আসে না। আমি এরকম লোককে জীবনে বেশিদূর যেতে দেখিনি।

দুম করে বন্ধুর কাছে পয়সা চেয়ে ফেল কেন বলো তো? রাস্তার ফকিরটকিরদের ‘না’ বলে দেয়া যায়, বন্ধুদের কি ওরকম করে বলা যায়? রিফিউজ করতে হলেও খুব বিনীতভাবে করতে হয়। বন্ধু পয়সা চাইলে নিজের কাছে না থাকলে নিজেকেই অপরাধী-অপরাধী লাগে। তুমি বোঝো না এ সব? শার্টটা খুলে পেছনে হাত দিয়ে দেখো তো মেরুদণ্ডটা এখনও ঠিক জায়গায় আছে কিনা! রাস্তায় বের হলে কিছু রিকশাওয়ালা দেখো না, একটা হাত নেই, আরেক হাতে রিকশা চালায়? কিছু শ্রমিক দেখতে পাও না যাদের একটা পা নেই, ইট ভাঙে, ক্রাচে ভর দিয়ে মাথায় ইট বহন করে নিয়ে যায়? এর পরের বার ওরকম কাউকে দেখলে ওর একমাত্র পা’টা ধরে বোলো তো, “এই গালে একটা লাথি মারেন ভাই, তাতেও যদি কিছু আত্মসম্মানবোধ জাগে!”

কোনও দিনও কি এই খবর রেখেছ, তোমাকে বড় করতে গিয়ে তোমার বাবা কতদিন লুকিয়ে-লুকিয়ে দুপুরে লাঞ্চের পয়সা বাঁচিয়ে তোমার প্রাইভেটের বেতন দিয়েছেন যাতে তোমাকে প্রাইভেটে বন্ধুদের সামনে লজ্জায় পড়তে না হয়? কত লম্বা ছুটির দিন চলে গেছে, অথচ তোমার মা স্বামীর কাছে বায়না ধরেননি কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য, শুধু এইজন্যই যাতে সে বেঁচেযাওয়া পয়সাটা তোমার পড়াশোনার কাজে লাগে? তুমি না সেই বাবা-মা’য়ের সন্তান? তোমার এই ভিক্ষাবৃত্তির খোঁজ উনারা জানতে পারলে কতটা কষ্ট পাবেন, ভেবে দেখেছ? যে নিজে ভিক্ষায় চলে, সে বাবা-মা’কে খাওয়াবে কী করে? নিজের ভেতরের আগুনটাকে জ্বালাতে ইচ্ছে করে না? তোমার পিতার মহত্ত্ব কি তোমাকে একটুও স্পর্শ করে না? তোমার মায়ের আত্মত্যাগ কি তোমাকে একটুও অপরাধবোধে কাঁদায় না?

ছোটবেলায় আমাদের দুইভাইকে পূজাপার্বণে বাবা ছাড়া আর তেমন কেউ পোশাকটোশাক কিনে দিত না। এতে আমাদের যে বিশাল সুবিধে হয়েছে, তা হলো এই, সেই ছোটবেলাতেই যখন আমরা ভালমন্দও বুঝতে শিখিনি, তখন থেকেই এইটুকু অন্তত বুঝতে শিখে গিয়েছিলাম, কারও কাছ থেকেই কিছু এক্সপেক্ট করা যাবে না। ভাল কিছু উপভোগ করতে ইচ্ছে করলে সেটা নিজেকেই কিনে উপভোগ করতে হবে। এক্সপেক্টেশন ছাড়া বাঁচার সুখই আলাদা! আমার সেই সুখে বড় হয়েছি। আমার কাছে সুন্দর পোশাক না থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে অন্য কারও কাছ থেকে সুন্দর পোশাক চেয়ে আমি আমার বাবাকে অপমান করতে পারি না। আমার যা আছে, সেটিকেই সবচাইতে সুন্দরভাবে ব্যবহার করবো। আমার কাছে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্য ছিল আমার বাবার দারিদ্র্য। আমি যা-ই নিয়ে থাকি না কেন, সেটির সম্পূর্ণটাই আমার অর্জন—এটা ভাবতে পারার মতন আনন্দ আর কিছুতেই নেই! হয়তো আমার কাছে একটাই শার্ট আছে, যেটা পরে সারাদিন ক্লাস করে সন্ধ্যায় ধুয়ে পরেরদিন সকালের মধ্যেই শুকিয়ে ইস্ত্রি করে আবার সেটিই ক্লাসে পরে যেতে হয়। আমার এই জীর্ণ পোশাকই আমার বহুমূল্য অলংকার, বিলাসিতার অক্ষমতাই আমার শক্তি। এটা নিয়ে কেউ একটাও বাজে কথা বললে আমি তার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারি, তা সে যে-ই হোক না কেন! তাই একটাসময়ে আমি কারও কাছ থেকেই গিফট নিতাম না, কেউ কিছু দিতে চাইলে বিরক্ত হতাম। ইদানিং অবশ্য নিই। আগের সেই গোঁয়ার্তুমি অনেক কমে গেছে। ভালোবাসার দান উপেক্ষা করার মতন শক্তি আমার নেই। আমার ছোটমামার কথা বলি। এইচএসসি পাস করার পর মামা যখন রাশিয়াতে পড়াশোনা করতে যান, তখন তাঁর বাইরে পরে যাওয়ার মত শার্ট ছিল মাত্র ২টা। সে ২টা শার্ট দিয়েই মামা হাসিমুখে পড়াশোনা করেছেন। এখন মামা সুপ্রতিষ্ঠিত। একটা শার্ট কোম্পানির সব শার্ট কিনে নেয়ার মত ক্ষমতা তাঁর হয়ে গেছে। যে দারিদ্র্যকে হাসিমুখে বরণ করে নিতে পারে, ঐশ্বর্য তাকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়। হ্যাঁ, তার জন্য দরকার পরিশ্রম ও ভাগ্য।

আমি যদি শুধু সামান্যতমও আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিতাম, তবে এতদিনে আমার কয়েকটা ফ্ল্যাট, গাড়ি আর আমেরিকার ব্যাংকে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা থাকত! সেকথা অন্য একটি লেখায় বলেছি, তাই এ লেখায় আর বিস্তারিত বলছি না। আজকের এই অবস্থানে আমি এসেছি একেবারে শূন্য থেকে। একটা সময়ে হাতে টাকা ছিল না বলে না খেয়ে থেকেছি, কিন্তু বাবার কাছে হাত পাতিনি। আমার অবস্থান তৈরির জন্য কখনও কাউকে কারও কাছে একটা ফোন দিতে অনুরোধ করেছি, এই কথা কেউই বলতে পারবে না। আমার নিজের যোগ্যতায় কিছু করতে পারছি না বলে অন্য কেউ উনার ফেসভ্যালু দিয়ে আমার জন্য কিছু করে দেবে, এরকমটা ভাবলেও লজ্জায় আমার মাথা ধুলোয় মিশে যেত! ছিঃ! কী ভাববেন উনি আমাকে? উনার সামনে পরবর্তীতে দাঁড়িয়ে কথা বলব কীভাবে? কেন উনাকে আমার নিজের জন্য বিরক্ত করব? এটাই কি আমার সাথে পরিচয়ের শাস্তি? যার জুতোর তলার যোগ্যতাও আমার নেই, তার সাথে বন্ধুত্ব করতে গিয়েছিলাম এই স্বার্থে? আমার দুর্ভাগ্যের জন্য উনার তো কোনো দায় নেই, তবে কেন উনাকে ভদ্রলোক পেয়ে এমনভাবে বিব্রত করব? প্রয়োজনে না খেয়ে মরে যাবো, তবুও কাউকে আমার সামর্থ্য নিয়ে অসম্মানজনক কিছু ভাবতে দেবো না। এই তীব্র অহংকারেই বেঁচেছি সবসময়ই! আমি ভর্তি পরীক্ষায় ০.৫ মার্কস কম পাওয়াতে চট্টগ্রামের সবচাইতে নামকরা স্কুল কলেজিয়েটে ক্লাস সিক্সে চান্স পাইনি। বাবার যে সামাজিক অবস্থান ছিল, সে অবস্থান থেকে শুধু কাউকে বলে দিলেই হত। বাবা সেটা করেননি। সবাই বলেছিল, সঞ্জীব বাবু, একটু রিকোয়েস্ট করলেই তো আপনার ছেলে কলেজিয়েটে পড়তে পারবে। বাবা উত্তর দিয়েছিলেন, “ওর যোগ্যতায় ও যেখানে চান্স পাবে, ও সেখানেই পড়বে।” আমি নিজে কলেজিয়েট স্কুলে পড়তে পারিনি, সেই না পাওয়ার জেদ থেকে আমার ছোটভাইকে কলেজিয়েট স্কুলের জন্য তৈরি করেছি; ও ভর্তি পরীক্ষায় থার্ড হয়েছিল। বাবাকে ধন্যবাদ, উনি আমাকে ছোটবেলাতেই পঙ্গু না হয়ে কীভাবে চলতে হয়, সে দীক্ষা দিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এটা আমার খুব কাজে লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি, যে পরীক্ষা ১ জন ক্যান্ডিডেটও স্বচ্ছভাবে দিয়ে পাস করতে পারে, আমি যদি সে পরীক্ষায় পাস করতে না পারি, তবে সে ব্যর্থতা সম্পূর্ণই আমার। যদি কোনও একটা চাকরি ১ জন মানুষও নিজের যোগ্যতায় পায়, আর আমাকে সে চাকরির পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়, তবে সে চাকরিটা আমি পাবই পাব! যদি নিজের যোগ্যতায় না পাই, তবে ধরে নেবো, সে চাকরি আমার রিজিকে নেই। আমার রিজিক নিশ্চয়ই অন্য কোথাও। নিজেকে সেভাবেই গড়ে নেবো। যা আমার আয়ত্তের বাইরে, আমি সে মোহে থাকব না। সবাই তো আর সব কিছু পারে না। যদি আমাকে এর জন্য ছোট চাকরিও করতে হয়, আমি তাতেও রাজি। আমি আমার লাইফ স্টাইলটাকে সেভাবে করেই মানিয়ে নেবো, কারণ, আমি ছোট চাকরিরই যোগ্য। পরের মুখাপেক্ষী হয়ে নিজের ভাগ্য গড়ে নেয়ার মধ্যে কোনো আত্মতৃপ্তি নেই, গৌরব নেই, সম্মান নেই। এর চাইতে ক্রীতদাসত্বও উত্তম। যে ভাগ্য রক্তে গড়া নয়, সেটি ভাগ্য নয়, করুণা। করুণায় বাঁচার চাইতে মৃত্যুও শ্রেয়।

: দোস্তো, তুই আমার কথাটা শোন, আমি কলেজছুটির পর তোকে লিফট দেবো, তোর বাসায় আমার গাড়িতে করে নামিয়ে দিয়ে আসব।

: ধুরর্ ব্যাটা! রাখ তোর লিফট! তোর বাপের গাড়িতে তো আমি উঠবই না, নামাবি কীভাবে?

আমার ছোট্ট ফ্রেন্ড / ফ্যান / ফলোয়াররা, This is the attitude! তোমার বন্ধুর বাবার টাকায় শুধু ওকে চলতে দাও, তুমি চলো না। জীবনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে অল্প বয়সেই মাথা নিচু না করে চলাটা শিখতে হয়। প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবে, তবুও কারও বাবার পয়সায় কখনওই একটা বার্গারও খাবে না যদি ওকেও আরেকদিন একটা বার্গার খাওয়ানোর ক্ষমতা কিংবা সুযোগ তোমার না থাকে। দাদার নামে গাধা, বাপের নামে আধা, নিজের নামে শাহজাদা। আর পরের বাপের নামে তো মহাগাধা! জীবনে যা-ই কর না কেন, পেছনে হাত দিয়ে দেখে নাও মেরুদণ্ডটা ঠিক জায়গাতে আছে তো? রেস্টুরেন্টে বসার আগেই দেখে নাও পকেটে বিল দেয়ার পয়সা আছে কি না। যে তোমার বিল দেয়, চকোলেট কিনে দেয়, গাড়িতে লিফট দেয়, শপিং করে দেয়, মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করতে দেয়, সে কিন্তু তোমাকে আস্তেআস্তে কিনে নেয়। একবার আত্মসম্মানবোধ বিকিয়ে দেয়ার বদ অভ্যাস করে ফেললে জীবনেও আর কোনও দিন বড় হতে পারবে না। বাজি ধরে বলতে পারি, ইচ্ছেটাও নষ্ট হয়ে যাবে। জীবনে শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যেও না। শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও হলেও চেষ্টা করে যাবে। মাথা নত করে বাঁচার চাইতে মৃত্যুবরণও শ্রেয়। প্রাণ থাকতে কখনওই কারও কাছে মাথা নত করবে না, কারও পা চেটে চলবে না, সে ব্যক্তি যে মহারাজাই হোন না কেন! এ অভ্যাসটা করতে হবে অল্পবয়সে। নিজের বাবাকে আরেকজনের বাবার কাছে প্রাণ গেলেও ছোট হতে দিয়ো না। একদিন তোমার বাবা আর তোমাকে চালাতে পারবেন না। সেদিন তোমাকে পৃথিবীর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। পেছনের মেরুদণ্ডটা না থাকলে দাঁড়াবে কীভাবে?

বন্ধুরা, আমার কথাগুলি পড়ে খারাপ লাগলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাদের আর তোমাদের পরিবারের জন্য শুভকামনা রইল।

ইতি—

এমন কেউ, যে একসময় তোমার মতন ছিল।