অসুখ যেমনি স্তব্ধতা আনে

 
প্রিয় সায়ন,
তোমাকে দেখব, এই তীব্র ইচ্ছেটা মনের মধ্যে পুষে রেখেছি।
পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে তুমি এসো, মনে করে এসো।


জানোই তো, এখন সান্নিধ্যে যাওয়া বারণ,
মানুষ আজ বড় অসহায় হয়ে আছে এই অসুখের কাছে।
আমাদের প্রাণ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে,
আমাদের সমস্ত উচ্ছলতা ম্লান হয়ে আছে।
আমাদের স্বপ্নগুলি পলক ফেলবার আগেই ভারী পাথরের মতো ডুবে যাচ্ছে।


নগরীর অলিতে গলিতে আজ কারও কোনও প্রিয়জন নেই,
ভালোবাসার প্রতিটি মুখ আজ মলিন হয়ে এক বিষাদেঘেরা চাদরে ঢেকে আছে।


আমি জানি, সায়ন,
আজ যদি আমার অসুখ হয়, কেউ আমায় দেখতে আসবে না।
তুমিও আসবে না। আমি জানি। তোমাকে শেষবারের মতো দেখতে পাব না ভেবে
আজ আমার মরে যেতেও ভয় হচ্ছে!


হয়তো এমন হবে, তোমায় হাত বাড়িয়ে একটিবার ছুঁতে চাইব,
তুমি অমনিই আমায় ফিরিয়ে দেবে! বলো, তখনও কি আর বেঁচে থাকব?


সায়ন, আমায় সবাই চেনে একজন আত্মসংবৃত মানুষ হিসেবে।
আমার কারও সাথে কোনও যোগাযোগ নেই।
কাছের মানুষ বলতে, তা-ও হাতেগোনা দুইএকজন।
এর বাইরে আরও একটা পৃথিবী, যেখানে আমি প্রায়ই থেকে যাই,
আমার থেকে যেতে ভালো লাগে। ভালোবাসা নিয়ে, অভিমানযাপনের ক্ষণগুলি নিয়ে,
সেখানে কেবলই দুইটি মানুষ---তুমি আর আমি!


আজ কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে,
আমি আক্রান্ত হব, আমার কোনও চিকিৎসা হবে না এই সমাজে।
তাই ধরে নিচ্ছি, আমি বেঁচে থাকব, এমন সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।
বুঝতেই তো পারছ, মরে গেলে কেউ ঠিকভাবে দাফনটাও করবে না।


এ পৃথিবীতে আমার পিঁপড়াসমান অস্তিত্বের খোঁজ রাখার দায় তো কারও নেই,
মরে গেলেও কী-ইবা হবে? ওরা কেউই আমায় মনে রাখবে না,
দুঃখ নেই। তুমিও ভুলে যাবে, কষ্ট শুধু এটুকই!


আমার পৃথিবীটা সত্যিই ভীষণ ছোট।
খুব অল্প মানুষকেই আমি আমার সম্পর্কে জানতে দিই।
সেখানে তুমি বরাবরই থেকে যাও একেবারেই অন্যরকম একটা জায়গায়!
তোমায় খুব যত্ন করে রাখি, সায়ন! বুঝতে পারো?


তোমাকে আজ ভীষণ মনে পড়ছে! জানতে ইচ্ছে করছে,
তুমি কোথায় আছ…কেমন আছ…আমায় আদৌ ভেবেছ কি না…


আজ তোমার গলা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে খুব ইচ্ছে করছে।
ভুলে যেতে ইচ্ছে করছে মান-অভিমান, রাগ-ঝগড়া, অভিযোগ-অনুযোগ…সবকিছু।
চলে গেলে এসবের কী থাকবে, বলো?


আমার শুধুই বুক উজাড় করে তোমায় ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
ভালোবাসা বলো কিংবা বলো মন্দবাসাই, যা-ই কিছু তোমার প্রতি,
সেসবকে জাপটে ধরে বেঁচে থাকতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।


আমি তোমার সাথে সুশৃঙ্খল নই,
তোমার সাথে সাজিয়ে আর গুছিয়ে কিছুই আমার হয় না।
জানি, তুমি হয়তো অন্য কারও কিংবা নিজের।
আমরা পরস্পরের নই, মানুষ কখনও পরস্পরের হয় না,
শুধু হয়ে ওঠার চেষ্টা করে মাত্র!


আমি জীবিকার খোঁজে ছুটেচলা এক পথিক,
এই দুচোখে কোনও ক্লান্তি নেই, কেবলই ক্ষুধা আছে।
আমার কখনও কাউকে ভালোবাসার সুযোগ হয়নি,
দায়িত্ব আর সময় সে সুযোগ আমাকে কখনওই দেয়নি।


সে-ই আমিই আজ কেমন করে জানি তোমার দরজায় এসে দাঁড়িয়ে পড়েছি!
আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন, কারণ তোমার জীবনে আমার অবস্থান অস্পষ্ট।
আমি কখনও ভালোবাসা চাইনি, তোমাকে পেয়ে বুঝেছি,
এক ভালোবাসা ছাড়া আর অন্য কিছুই সত্যি আমি চাইনি।


পৃথিবীর সমস্ত স্বস্তি আমার চোখে লেপটে থাকে,
যখনই তোমাকে একপলক দেখি।
তোমায় দেখলে আমি নির্বিকার হয়ে হেঁটে যাই, ভুলে যাই বাকি পৃথিবী!
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, সায়ন।


ইদানীং খুব মনে হচ্ছে, এই যে তুমি দূরে থাকছ, ভালোই করছ!
হয়তো আমি ভুল করে তোমায় ছুঁয়ে দিলে তুমি ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে!
তাই তো তোমাকে বাঁচিয়ে রাখার আশায় একটু একটু করে
তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি!
আমি চলে গেলে তো কিছুই হবে না! হবে, সায়ন?


তোমাকে ভালোবাসা যায়,
তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মরে যাওয়া যায়।
তুমি আমার পুরো একটা সরলজীবন, একটা সরলমানুষ!
তুমি বেঁচে থেকো হাজারবছর!


যদি এই পৃথিবী সুস্থ হয়,
সেইদিনও যদি বেঁচে থাকি, তবে কথা দিচ্ছি,
এই পৃথিবীর অলিতে গলিতে যত ভালোবাসা বেঁচে আছে,
তার সমস্তটাই কুড়িয়ে এনে রেখে দেবো তোমার চোখের কাছে।


আমি খুব করে চাইছি, এই পৃথিবীটা বেঁচে থাকুক, তুমি বেঁচে থাকো…
সায়ন, যদি আমি মরে যাই, আমায় মনে করে একটু কাঁদবে সেদিন?
তোমার বুকের মধ্যে মায়ায় রেখে একটুখানি ভালোবাসবে?