অ্যা ক্রুয়েল মাইন্ডগেম

আমি একটা নিষ্ঠুর মাইন্ডগেইম খেলব। যাদের মনটা দুর্বল, তারা এই পোস্টটি এড়িয়ে যাও।

প্রচণ্ড বিশ্বাস করে কল্পনা করো, তোমার বাবা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন; কিংবা অন্য বড়ো কোনও অসুখে। বাবা-ই ছিলেন তোমাদের পরিবারের সব, মানে সব খরচের যোগানদাতা। যাদের বাবা নেই, কিংবা থাকলেও পরিবারের খরচ চালায় বড়ো ভাই, বোন কিংবা অন্য কেউ, ধরেই নাও, সেই মানুষটি হঠাৎ করেই ‘নেই’ হয়ে গেছেন। এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক আর মেনে নিতে না-পারার মতো একটা ঘটনা। আমরা বেঁচে থাকার সময়টাতে ধরেই নিই, আমরা কখনওই মরে যাব না। কিন্তু এটা তো ভীষণ রকমের একটা মিথ্যে কথা। এটা আবার মনে মনে আমরা সবাই-ই জানি। ব্যাপারটা মজার, না?

তো, যা বলছিলাম! তুমি চলো তোমার বাবার টাকায়। তোমার সামাজিক আর পারিবারিক অবস্থান তোমার বাবার মর্যাদায়। উনি নেই মানে কিন্তু তোমাকে লোকে আস্তে আস্তে তোমার অবস্থান দেখে বিচার করতে শুরু করে দেবে। পৃথিবীতে সবচাইতে ক্ষণস্থায়ী পরিচয় হলো, ‘অমুকের ছেলে, তমুকের নাতি’। একটা খেলা হয়ে যাক, কেমন? একটা শান্ত শব্দহীন রুমের ভেতরে বসো। চোখ দুটো বন্ধ করো। মাথাটাকে কিছু সময়ের জন্য পুরোপুরি ফাঁকা করে দাও। তুমি কল্পনা করতে থাকো, তুমি তোমার পরিচয় নিয়ে মোটামুটি ‘জিরো টাকাপয়সা’ পকেটে রেখে পৃথিবীর পথে হাঁটতে শুরু করেছ। তখন কী হবে? তোমার মা’কে, তোমার ছোটো ভাইবোনকে তোমাকেই দেখতে হবে। ওরা তাকিয়ে আছে তোমার দিকে। আশেপাশের পৃথিবীটা বড়ো নিষ্ঠুর চোখে তোমাকে উপহাস করছে প্রতি মুহূর্তেই। বাবার কেনা সব কিছু সম্পদ নয়, দায় হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তোমার দিকে। মাথার উপরের বটগাছটা উপড়ে গেলে কে তোমাকে ছায়া দেবে? হোঁচট খেয়ে উলটে পড়ে গেলে কে তোমাকে ধরে টেনে তুলে বলবে, ব্যথা পাসনি তো, বাবা? সবাই জানবে, তুমি বড়ো অসহায়। মানুষ বড়ো বিচিত্র প্রাণী। শুধু খুঁজে বেড়ায়, কে কে অসহায় আর সুযোগ বুঝে আঘাত করে! সবাই বিশ্বাস করতে চাইবে, তোমাকে ভালোবাসা যায় না, বড়োজোর করুণাটরুণা করা যায়।

তখন তুমি বেঁচে থাকবে কী ধরে? কার ভালোবাসায় বিশ্বাস করে? করুণা নিয়ে মানুষ বেশি দিন বাঁচতে পারে না। আমাদের বানানোই হয়েছে ভালোবাসায় বাঁচার মতো করে। আর এই ভালোবাসা সবচাইতে ‘কম-পাওয়া-যায়’ এমন একটা জিনিস। ভালোবাসার রসায়ন বড়ো রহস্যময় রসায়ন। হঠাৎ হঠাৎ ভাবাই-যায়-না এমন মানুষের কাছেও মরুভূমিতে ক্লান্ততৃষ্ণার্ত পথিকের জীবন-বাঁচিয়ে-দেওয়া এক ফোঁটা জলের মতো ভালোবাসা মিলে যায়। (আমি জীবনে ‘সত্যিকারের স্বার্থহীন ভালোবাসা’ যতটুকু পেয়েছি, তার কণামাত্রও আমি ডিজার্ভ করি না। এমন এমন মানুষ আমাকে ভালোবেসেছে, যাদের কথা মাথায় এলেই আমি অপরাধবোধে ভুগতে ভুগতে মরে যাই যেন! ওরা প্রতিনিয়তই আমাকে বুঝতে বাধ্য করে, আমি ভালোবাসার জটিল সমীকরণ বুঝি না।) তোমার প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাও কি তোমাকে কখনও কখনও তোমার অবস্থানের জন্যই ভালোবাসে না? আচ্ছা, ধরেই নিলাম, ও তোমাকে একেবারে নিঃস্বার্থভাবেই ভালোবাসে, যেমন করে ভালোবাসে বাবা-মা। এতেও কিছু কাজ হবে না। সত্যি বলছি, পকেটে টাকাপয়সা কিংবা নিজের শক্ত ভিত না থাকলে ওই ভালোবাসাও একটা সময়ে ফিকে হয়ে যাবে। তুমি কত লড়াই করবে? বড়োজোর পারবে, ওকে নিয়ে পৃথিবীর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে একেবারে নির্বাসনে চলে যেতে। ওটা তো সবাই-ই পারে! ওটার জন্য মানুষ হতে হয় না, পশু হয়ে জন্মালেও চলে। যে পরিবার তোমার জন্মের পর থেকে তোমার পাশে না থাকলে হয়তোবা ওর সাথে দেখাই হতো না তোমার, সেই পরিবারকেই ছেড়ে যাবে? আমি ভাবছি কী, তুমি এই পৃথিবীতে না জন্মালেই বরং ভালো হত। একজন কাপুরুষ স্বার্থপর মেরুদণ্ডহীন মানুষ অন্তত কমত।

আমি খুব ভালো করে জানি, সময় কতটা অসময়ের পথ ধরে চলে! কখনও কখনও শুধু ভালোবাসা বেচে বেঁচে থাকা যায় না। তুমি ভালোবাসাটাসা নিয়ে বেশ আছ, তোমার মাথার উপর ছায়া আছে, তাই। আজকাল ভালোবাসা বড়ো সস্তা জিনিস হয়ে গেছে, এমনকি টাকার চাইতেও সস্তা! এরকম সস্তা জিনিস নিয়ে নিজের পায়ে, মানে, শুধুই নিজের পায়ের উপর ভর করে বেশিদিন চলতে পারবে না। তোমাকে চলতে সাহায্য করার জন্য কেউই নেই, তোমার বটবৃক্ষ মারা গেছে; শুধু আশেপাশে এমন সবাই আছে, যারা দুরকমের: এক। যারা তোমার মুখের দিকে অসহায়ভাবে চেয়ে আছে, যাদেরকে তুমি ফেরাতে পারবে না। দুই। যারা তোমার মুখের দিকে তাচ্ছিল্যভরা হাসিতে তাকিয়ে আছে, যাদেরকে তুমি উপেক্ষা করতে পারবে না। কোথাও আর কেউ নেই। তুমি আর তোমার সবচাইতে বিশ্বস্ত বন্ধু তোমার পরিবার, যেখানের মানুষগুলো মৃত্যুর আগমুহূর্তেও চাইবে, তুমি যেন ভালো থাক। জিজ্ঞেস করতে পার, তোমার প্রেমিক? কিংবা, তোমার প্রেমিকা? আরে বাবা, বি প্র্যাক্টিক্যাল! ও তো ততদিনে অন্য কারও হয়ে যাবে! এই পৃথিবীতে নোবডিদের ভালোবাসা পেছনের দরোজা দিয়ে পালিয়ে যায়।

আচ্ছা, ভালোবাসাটাসা বাদ! ঘরের চাল ফুরোলে আগে চাল কিনতে হয়; ভালোবাসা তো মোটামুটি ফ্রিতেই পাওয়া যায়, ওই একটু ভালোবাসিটাসি বলতে হয় আরকি! কিন্তু চাল কেনার টাকা তো আর হাওয়া থেকে আসবে না! কে কিনে দেবে তেল-মরিচ-নুন? বাসাভাড়াটা দিতে বাবার কত কষ্ট হয় ভেবে দেখেছ কখনও? বাবার কাছে এটা কিনে দাও, সেটা কিনে দাও, বলতেই থাক ঘ্যানরঘ্যান, লজ্জাও করে না তোমার? বাবার দায়িত্ব তোমাকে পৃথিবীর পথে হাঁটার যোগ্যতাটুকু ধরিয়ে দেওয়া, তোমার আলতুফালতু আবদার রাখা তাঁর দায়িত্ব না। তোমার স্মার্টফোন লাগবে, এটা বাবাকে বলো কোন আক্কেলে? স্রেফ মনের প্রচণ্ড শক্তিতে সব কিছুকে সামলে-রাখা মাকে বলে বলে সন্তান জন্ম দেবার দায়টা মনে করিয়ে দাও কেন বার বার? বড়ো ভাইকেই বা কেন বলো? তাঁর জায়গায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেখো তো কেমন অনুভব করো! বড়ো বোনকে এটা-সেটা কিনে দিতে বলার আগে খেয়াল করে দেখেছ ও কতদিন ধরে সেই পুরনো ৩-৪টা শাড়ি পরেই অফিস করছে? এসব আবদার করার আগে মরতে পারো না? আমি বলি কী, বাথরুমে ঢুকে দরোজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গালে ঠাসঠাস করে কয়েকটা চড় মারো! আবারও মনে করিয়ে দিই, তোমার মাথার উপরের ছায়াটা ছাড়া তুমি কেউই না! বাবার যে জুতোজোড়া পুরনো হতে হতে আর পুরনো হতে পারছে না, সেটা নিয়ে নিজের দুইগালে কষে চড় লাগাও। এর বেশি কিছুর যোগ্যতা তোমার এখনও হয়নি। প্রতিদিন ঘুমোতে যাবার আগে একবার করে জুতোজোড়া মাথায় ছোঁয়াও; নিভৃতে। এতে যদি কিছু বোধোদয় হয়!

মাথা গরম করো কোন সাহসে? কী আছে তোমার নিজের? বড়ো বড়ো কথা তো রাস্তার ওই বখাটে ছেলেরাও বলতে পারে। ওদের সাথে তোমার পার্থক্য কিন্তু সামান্যই---ওদের অভিমান ভাঙানোর কেউই নেই, আর তোমার আছে। একদিন তোমারও কেউ থাকবে না। তখন তোমার দায়িত্ব হবে, যাতে তোমার আশেপাশে কেউই অভিমান করে না থাকে। সেদিন তুমি কী করবে? পালিয়ে যাবে জীবন থেকে? তোমার বাবা তোমার জন্য কোনও টাকাপয়সা রেখে যাবেন না। আমি মনে করি, ছেলেমেয়ের জন্য টাকাপয়সা রেখে যাওয়াটা পিতার দায়িত্ব নয়। স্ত্রীর জন্য কিছু রেখে যেতে পারেন। আজকাল জানোয়ার কুলাঙ্গার পুত্রকন্যার যুগ। তাই ওটা দরকার। তুমি শুধু নিজেকে ছাড়া আর কিছুই সামনে পাবে না। কী করবে তখন? পালিয়ে যাবে? সেটা কোথায়? পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে, মাথায় পুরো আকাশ ভেঙে পড়বে, তোমাকে পাত্তা দেবার কেউই থাকবে না, তোমার সামাজিক অবস্থান মানে তুমি একা যা, তা-ই, ব্যাংকে সামান্য ক’টা টাকা আছে, ক্ষুধা আছে, মায়ের কষ্ট নিজের ঘাড়ে নেবার দায় আছে, নির্দয় মানুষের ঠাট্টাতামাশা নীরবে সহ্য করার যথেষ্ট যুক্তিও আছে। ও আচ্ছা, ভালো কথা, প্রেমিকার বিয়ের নিমন্ত্রণটাও খুব শিগগিরিই পেয়ে যাবে, এমন একটা বলতে-না-পারা চাপা কষ্টও আছে। কী করবে সেদিন? আজকের এই হাসিমাখা নির্ভাবনা পরের ধনে পোদ্দারি করার দিন থাকবে না। ভুল বুঝো না। পর মানে, পর নয়, নিজের কাছের মানুষই। কিন্তু বস্তুত, পৃথিবীতে একমাত্র নিজে ছাড়া সবাই-ই পর।

মানুষ যখন সুখে থাকে, তখন সে বিশ্বাস করতে ভালোবাসে, সে কখনওই কষ্টে থাকবে না। মানুষ যখন কষ্টে থাকে, তখন সে অবিশ্বাস করতে ভালোবাসে, এই কষ্ট কোনও দিনই যাবে না। এটাই নিয়ম। আমি জানি, শুধু চোখের জল নিয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকা যায় না। কষ্টে দিন কাটানোর কষ্ট কী যে ভীষণ, সেকথা তুমি কষ্টে না পড়লে কল্পনাতেও আনতে পারবে না। এটা মেনে নাও, তুমি নিজে সুখে না থাকলে পৃথিবীটা আসলে সুখের নয়। তুমি ভান করবে, তুমি ভালো আছ; তোমার আশেপাশের সবাই ভান করবে, ওরা তোমার ভানটা ধরতে পারছে না। এ সুখে থাকার অভিনয় কী যে যন্ত্রণার, সেটা তুমি এখন বুঝবে কীকরে? বন্ধুদের কথা বলছ? ভেবে দেখো তো একবার, ওরা কি তোমার পাশে আছে? না কি তোমার অবস্থানের পাশে আছে? যদি তোমার পাশে থাকেও, তবুও যেদিন তুমি দেখবে, তোমার চাইতে সবাই এগিয়ে, সেদিন নিজের প্রতি তোমার প্রচণ্ড অভিমানে মনে হতে থাকবে, ওরা সবাই তোমার শত্রু। তুমি নিজেই ওদের কাছ থেকে বাঙালি মধ্যবিত্তের ঠুনকো আভিজাত্যের ধাক্কায় দূরে সরে আসবে। এটাই কি সব? কিছুতেই না! যারা এগিয়ে, তারা কিন্তু এগিয়েই! এটা মেনে নাও। তোমাকে আসলেই কেউ কেয়ার করে না। কী আছে তোমার যে কেয়ার করতে হবে? ওরা কি তোমার কাছের মানুষ নাকি?
 সেদিন বুঝবে, তোমার বাবার জুতোর তলা কীভাবে করে আড়ালেই ক্ষয়ে যেত, পরনের শার্টটা সেলাই করতে করতে সুঁই ঢুকানোর আগেই আরও এক বার ছিঁড়ত, বাসার বাইরে স্রেফ পাউরুটি-কলা খেয়ে থাকতেন তোমার মতো পিৎজা খাবার মতো স্মার্ট হননি বলে নয় কিংবা পাউরুটি-কলা প্রিয় খাবার বলে নয়, বরং তোমার জন্য দুটো টাকা জমাতে পারবেন বলে। যে সময়ে তুমি ওঁর টাকায় ডেটিংয়ে যাও, সেসময়ে উনি অসুস্থ শরীরে অফিসে ওভারটাইমের সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন, বুকের বাঁদিকটায় পুরনো ব্যথাটা উঠলে তোমার মায়ের ঘ্যানঘ্যানিতেও ‘ও হয়-ই একটু! ঠিক হয়ে যাবে।’ বলে ডাক্তারের কাছে না গেলেও তোমার সামান্য সর্দিকাশি হলেও যে তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে দৌড়ে যেতেন, সেটার কারণ নিশ্চয়ই উদ্বৃত্ত অর্থের যোগান…ছিল না।

বলতেই পারো, তুমি টিউশনি করো, তুমি তোমার টাকায় চলো। ওরে বীর বাহাদুর! বাসার খরচের ভাগটা একটু ভাগ করে নাও না দেখি! মাঝেমধ্যে বাজারটা নিজের টাকায় করে দেখাও তো দেখি! তোমারই বাসা! তুমিও তো ওতে ঘুমাচ্ছ, ওসব খাচ্ছ! ছোটোভাইকে দুম করে বলে ফেলে দেখাও তো দেখি, “এই শোন! এখন থেকে তোর টিউশন ফি’টা আমিই দেবো।” প্রেমিকাকে দামি ওয়াইন কালারের লিপস্টিক কিনে দিতে পারো, বাবাকে একটা সস্তা চাদরও কিনে দিতে পারো না? কিংবা মাকে একটা সুতি শাড়ি? হোক সস্তা! তবুও তো নিজের টাকায় কেনা, মমতা আর ভালোবাসায় মোড়া! হ্যাঁ, ভালোবাসাও টাকায় বিকোয় কখনও কখনও। হায়! কিছু কিছু গাধার বাচ্চা প্রেমিকার জন্যই বাঁচে! কী লজ্জা কী লজ্জা!!

তুমি তোমাকে কল্পনা করতে শেখো এভাবে---তোমার ঘর নেই, ক্ষুধা মেটানোর নিশ্চয়তা নেই, ঈশ্বরপ্রদত্ত ব্যাংকার: ‘তোমার বাবা’ নেই, ইচ্ছে হলেই অন করতে পারার মতো টিভি নেই, সমাজে পরিচিত হবার মতো একমাত্র পুঁজি তুমি নিজেই, ঘুমাতে যাবার আগে কাল সকালে কী হবে জানা নেই, দয়ালু মানুষেরা কেউ কোত্থাও নেই, বন্ধুর চোখে-মুখে তাচ্ছিল্যমাখা করুণা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই, আত্মীয়স্বজনেরা আছে না-থাকলেই-বরং-ভালো-ছিল এরকম করে, মধ্যবিত্তের পরম বন্ধু চাকরিটাও নেই, কিংবা থাকলেও বলার মতো তেমন কিছু না, তাই কাউকে বলতেও চাও না, কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত-দিতে-হবে এমন তালিকায় তুমি নেই, একটা টিশার্ট কিনতেও চাইলেই টাকা পাওয়া যায় না এমন অবস্থায়, তোমার চোখের জলের দাম দেবার মতো কেউই পাশে নেই, এমন প্রচণ্ডভাবেই নেই, যে কান্নাটাকেও মনে হতে থাকে অহেতুক বিলাসিতা, যা মন চায় তা কিনতে হয় নিজের টাকায়, বড়ো কোনও অসুখে পড়লে তোমার হাতে রাস্তা দুটো : হয় নিজের টাকায় চিকিৎসা করানো কিংবা অন্যের দয়াভিক্ষার জন্য হাত পেতে দেওয়া, ‘অ্যা পেনি সেইভড ইজ অ্যা পেনি আর্নড’ এটার অর্থ খোঁজার জন্য গুগলকে আর বিরক্ত করতে হয় না, আয় বুঝে ব্যয় নয়, বরং ব্যয় বুঝে আয় করার সময়টা এসে সামনে দাঁড়ায় হঠাৎ করেই --- এরকম আরও অনেক অনেক কিছুর মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভ্যস্ততায় বাঁচতে শেখো! যদি এর কিছুই না করতে পার, তবে নিজের শার্টের বোতামগুলো খুলে জ্বলন্ত গনগনে সিগারেটটা নিজের বুকে চেপে ধরে একটু করে হলেও বোঝার চেষ্টা করো, কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে তোমার বাবা কিংবা মা কিংবা বড়ো ভাই কিংবা বড়ো বোন তোমাকে মানুষ করার অসীম স্বপ্ন নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে আছেন!

আমাকে ভুল বুঝো না। আমার কোনও কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। ভালো থেকো। তোমাদের জন্য শুভকামনা রইল।