আঠারো পাকে বাঁধা

১। আমরা যদি বধির হতাম, তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কমপক্ষে দশ গুণ বেশি সফলতা লাভ করতে পারতাম, কেননা আমরা সারাক্ষণই আমাদের আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে যা-কিছু শুনি, তার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় হলেও সেগুলি আমাদের ভাবায় ও ব্যস্ত করে রাখে।


২। আমরা দুনিয়াতে এসেছি শুধুই নীরবে অনুধাবন করতে, সব জায়গায় মন্তব্য করতে নয়! আমরা যেখানে সেখানে নিজের মতামত দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের নির্বুদ্ধিতাকে সবার চোখের সামনে নিয়ে আসি। আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সম্মানের সাথে বেঁচে থাকার অনেক ভালো একটা উপায় হলো, সবকিছু জানার ভান না করা।


৩। যেদিন থেকেই কেউ তার রূপকে গুণ ভাবতে শুরু করবে, সেদিন থেকে তার সব গুণই ওদের নিজস্ব রূপ পালটে ফেলতে বাধ্য! মানুষ আসলে অন্ধ হয় চোখ হারালে নয়, বোধ হারালে।


৪। আজকাল ভালোবাসার এতই অভাব যে মানুষ সন্দেহ করাটাকেও ভালোবাসা বলে চালিয়ে নিচ্ছে! কাউকে আমরা যত বেশি সন্দেহ করি, সে তত বেশি ভয়ে থাকে, ভালোবাসায় নয়! সে চুপ করে থাকে ভয় কিংবা বিতৃষ্ণা থেকে, ভালোবাসা থেকে নয়। একসময়, তার মধ্যে প্রবল ঘৃণার জন্ম নেয়। সে হয়তো মুখে কিছু বলতে পারে না, তবে তার আন্তরিক অনুভূতিতে কেবলই তীব্র ঘৃণা বাদে আর কিছুই থাকে না।


৫। দুঃখ পাওয়াটা একবার নেশা হয়ে গেলে, সুখ পাওয়াটাই অসহ্য হয়ে ওঠে। যে দুঃখ পেতে পেতে অভ্যস্ত, সে সাধারণত সুখের আঘাত সহ্যই করতে পারে না। যখনই সে সুখী হতে শুরু করে, তখনই সে একটা-না-একটা অঘটন ঘটিয়ে বসে!


৬। আপনি শুধু গীবত করা ছেড়ে দিলেই দেখতে পাবেন যে, আপনি মানুষের কাছে আর ইন্টারেস্টিং কেউ নন, কোনও অনুষ্ঠানে বা আয়োজনে আপনার জন্য আলাদা করে চেয়ারটা আর রাখা হচ্ছে না। প্রায় মানুষই গীবত গ্রহণ করতে ভালোবাসে, কেননা সে নিজেও এটা করতেই পছন্দ করে। এই পৃথিবীতে অল্প মেধাসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বেশি বলেই গীবত জিনিসটা বরাবরই জনপ্রিয়।


৭। নেশাখোর বন্ধুর সাথে নেশায় যোগদানের আগে ভালো করে ভেবে নেওয়াই উত্তম, কারণ একবার নেশার জগতে কারও বন্ধু হয়ে গেলে আপনি সেই মানুষের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে অনেকটাই বাধ্য হয়ে যাবেন।


৮। কেউ আমাকে ভালোবাসে না---এটা ভাবাটা যেমনি একধরনের মেনটাল ডিজঅর্ডার, তেমনি সবাই শুধু আমাকেই ভালোবাসে---এটা ভাবাটা তার চেয়েও বড়ো মেনটাল ডিজঅর্ডার।


৯। খেয়াল করে দেখলাম, আপনি আপনার প্রেম জীবন বা বিবাহিত জীবন নিয়ে কম কথা বললে, আপনাদের দুজনের আর সন্তানের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার না করলে অনেকেই প্রায় শিওর হয়ে যাবে যে, এই বছরের মধ্যে আপনাদের সেপারেশনটা তাহলে হয়েই যাচ্ছে! কিছু মানুষ ফেইসবুকে আসেই কেবল ব্যক্তিগত জীবনটাকে দেখাতে ও দেখতে।


১০। ওয়েডিং ফটোগ্রাফির ব্যাপারটা না থাকলে এখনকার অনেক মেয়ে বিয়েই করত না। ফেইসবুকে ঘুরলে সত্যিই এটা খুব মনে হয়। এ জগতে সবচাইতে বেশি দাম পাওয়া কম দামি জিনিসগুলির একটি হচ্ছে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি।


১১। আমার বিধবা মা টকটকে লাল শাড়ি পরলে আমার কোনও সমস্যা হয় না, অথচ মায়ের ডিভোর্সি বান্ধবী কেন গাঢ় রংয়ের লিপস্টিক মাখে ঠোঁটে, সেটা আমাকে বড্ড ভাবায়।


১২। যে মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে যত বেশি চকচকা, তার বাস্তব জীবন তত বেশি ফকফকা। যার যা নাই, সে তা দেখাতে চাইলে তার জন্য ফেইসবুকের চাইতে সহজ জায়গা আর হয় না। ফেইসবুকে ফুটানি, বাস্তবে ফইন্নি---এরকম লোকের সংখ্যাই বেশি।


১৩। প্রায় ব্যক্তিই---হয় মানুষ, নয় বেইমান!


১৪। যে সত্যিই ভালোবাসতে জানে, সে প্রয়োজনে হয় চলে যায়, নয় সরে দাঁড়ায়, পালিয়ে সে কখনওই যায় না। পালিয়ে যাওয়াটা একমাত্র চোরেরই কাজ।


১৫। ভালোবাসার মতন বিশাল একটা ব্যাপারও মায়া নামক অনুভূতির কাছে মাথা নত করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। এ জগতে মায়া যতটা রাজত্ব করে, ভালোবাসা ততটা করে না। দিনের শেষে, ভালোবাসা মানুষকে যতটা কষ্ট দেয়, তার চাইতে হাজার গুণ বেশি কষ্ট দেয় মায়া।


১৬। আমি যে বিষয়টা বুঝি না, কিংবা যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারি না, সেটাকে আস্তে করে, ‘আমি এটা বিশ্বাস করি’ বলে দিয়ে সেখান থেকেই মানে মানে কেটে পড়ি। মানুষের বেশিরভাগ বিশ্বাসের সূতিকাগৃহটির নাম ‘অসহায়ত্ব’।


১৭। বয়স দুই বছর কমিয়ে দিয়ে, স্কুলে ভর্তির প্রথম দিনটিই যখন আমার বাবা কিংবা মা মিথ্যে দিয়ে শুরু করেন, সেই বাবা-মায়ের সন্তান আমি বড়ো হবার পর আর কতখানিই-বা সত্যবাদী হব?


১৮। মানুষ কারও ভালোবাসা না পেয়ে একা হয় না, মানুষ একা হয়ে যায় কাউকে ভালোবাসতে না পেরে। যে ভালোবাসা পায়, কিন্তু ভালোবাসা দিতে পারে না, তার চাইতে বেশি একাকিত্বে এই পৃথিবীতে আর কেউ ভোগে না। কাউকে ভালোবাসতে না পারার মতো বড়ো দুর্ভাগ্য আর হয় না।