আত্মবিস্মৃতির চকিতে

আমি নিজেই সেই মহালগ্নকে বেছে নিয়ে
কোনও এক গোধূলিবেলায় ব্যস্ত হয়ে ছিলেম যখন
তোমায় নিয়ে আপন লাবণ্যের আবেগে দূরে ভেসে যেতে,
তখন তুমি মত্ত ছিলে আমায় অচেনা এক নক্ষত্র ভেবে
আরোপিত ক্ষণিকের আবিষ্কার-পরবর্তী অবহেলার এক রঙ্গখেলায়!


ভীষণ রকম হন্যে হয়ে যখন তুমি আমার থেকে
শত আলোকবর্ষ দূরের দিগন্তখানি ছুঁতে ব্যস্ত,
হায়, তখন আমি ছিলেম উন্মত্ত
ভালোবেসে তোমায় ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসায় যত্ন করে বেঁধে রাখতে!


কিছু ব্যক্তিগত কান্না যখন শব্দসীমার ঊর্ধ্বে উঠে
তোমায় ভালোবাসি বাসি বলে করছে হাহাকার,
ততক্ষণে এই ইট-বালি-পাথরের স্তব্ধ পিপাসায়
আত্মবিস্মৃতিতেই ঠায় হারিয়ে গিয়েছি আমি!


আজ যেন শ্রান্ত হয়ে হার মেনেছে
নিকষ আঁধারকে দাবিয়ে-রাখা চাঁদের জয়রথ!


দখিন হাওয়ার মৃদুবেগে পুলকব্যাকুল হৃদয়খানি
আজ যেন বারে বারেই ফিরে পেতে চায় সেই ছবিটা,
যাতে হয়েছিল আঁকা তোমার আমার একক অনুভূতি!


মনের গভীর ছুঁয়ে আজও তুমি যেন অন্তহীন কলঙ্কের অহংকারে
করছ আমায় পূর্ণচাঁদের আলোকোজ্জ্বল নবযৌবনে প্রেম-মূর্ছাতুর!


সূর্যহীন এক ঘন তমসায় জানালার ধার ধরে চোখের জলে
কেবল যেন তোমাকেই পাই শ্রাবণের অবিশ্রান্ত ঘোর বরষায়।


মুখ থুবড়ে পড়া চলতি সময় আজ থমকে গিয়ে
যেন তোমাকেই খোঁজে এই ঘননিগূঢ় বর্ষাযাপনে!


অবুঝ মন বহু বহু বার চিৎকার করে
যেন তোমাকেই কিছু বলতে চায়,
সে যেন চায় তোমায় যেতে না দিতে...
শত বৎসরের নরম শেকলের জাল বুনে বুনে!


জানি, এ সবই নিরর্থক কেবলই!
তবুও যা পেয়েছি এক জীবনে, তার বদলে কিছু চাইলেই-বা তুমি!
অমূল্যের পুরো মূল্যই চুকাই, এমন সম্পদ তো নেই আমার কাছে,
তবে যা দিয়েছি না চাইতেই, তার দাম না নেবার
যথেষ্ট ঔদ্ধত্যটুকু সময় এলে আমিও দেখাই বইকি!


সমস্ত পাগলামিকে ছুটি ছাঁটা দিয়ে, কাছে না যাবার অবসানকে প্রাধান্যে রেখে…
বিদায় নিচ্ছি!---বলবই না আর এবার অমন!
শুধু বলব, বহু বহুবারই এই মনটাকে আমার সামলালামই তো,
এইবার যাতে দূরে চলে গিয়ে, দিগন্তখানি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে,
শত জনমের ব্যবধানটুকু পাথেয় করে, অনন্ত নির্ভার এক আশ্রয় পাই!