আত্মহত্যা-ভাবনা

সুইসাইড করে ফেলতে পারার মতো দুঃসাহস আমার নেই, হয়তোবা কোনও দিনই তা পারবও না করতে। কিন্তু আজ আমি প্রথম বারের মতো ভেবেছি, সত্যি সত্যি সুইসাইড করলে কীভাবে করা যায়! কী কী করতাম মরে যাওয়ার আগে? প্রথমেই ফেইসবুক অ্যাকাউন্টটা ডিলিট করে দিতাম। ওটা রেখে যেতাম না নিশ্চয়ই! ফেইসবুক এমন একটা জিনিস, যা মানুষকে শান্তিতে মরতেও দেয় না। ভালো কথা, আমি কিন্তু কোনও সুইসাইড-নোট লিখে রাখতাম না। মৃত্যুর আগের মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে চাই, লেখালেখির ফ্যাসাদে যাওয়ার কী দরকার? লেখালেখির চাইতে একইসাথে আনন্দের ও ক্লান্তির কাজ আর কী আছে? মৃত্যুর আগে ব্রেইনকে অত প্রেশার দেবার কোনও মানেই হয় না। আর আমি তো জানি, কিছু একটা লিখে রেখে যাবার মানেই তো ওটা নিয়ে আমার মৃত্যুর পর টানাহ্যাঁচড়া হওয়া। কী হবে শেষলেখাটা লিখে রেখে? আমি এমন একটা মানুষ, যার মনের কথাগুলি কেউ তার জীবিতাবস্থাতেই বুঝল না, তো সেই আমার মৃত্যুর পর তাকে বুঝবে, এমন কেউ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। যে আমাকে আমার প্রাণটা শরীরে আটকে থাকবার ‘এই দীর্ঘসময়’টাতে আমাকে বুঝল না, আমার মৃত্যুর পর সে আমাকে বুঝুক, এটা আমি চাই না।


মাঝখান থেকে আমার পরিবারটা কিছু অহেতুক ঝামেলায় পড়ে যাবে। ফেইসবুক থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবার পর পরই দেরি না করে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলতাম। আমি যদি বেঁচে গিয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতাম, তবে আমার বোন আমার অবস্থা দেখে হাউমাউ করে কাঁদত। ওকে দেখে আমার চোখেও অবিরাম জল ঝরত। এবং আমি সুস্থ হবার পর বোনের হাতে অনেক চড়থাপ্পড় খেতাম, এটা শিওর। আচ্ছা, মৃত্যুর আগে আমার কি কারও সাথে দেখা করতে ইচ্ছে হতো? মনে হয় না! এমনকি, মরে যাবার আগেই, মরে যাব জানলেও, সাগরকেও দেখতে চাইতাম না! যে আমাকে তার মন থেকেই মুছে ফেলেছে, তাকে শেষদেখাটা দেখতে চাইবার কিছু নেই। এমনও তো হতে পারে, মৃত্যুপথযাত্রী প্রাক্তনকে দেখে সে বরং বিরক্তই হতো!


হ্যাঁ, আপনাকে সামনাসামনি দেখতে না-পারার একটা অপূর্ণতা হয়তো থাকত। আপনাকে আমার মাঝেমধ্যেই খুব কাছের কেউ মনে হয়। আমার পরিবারের বাইরে যে কয়েকটি মানুষ আমাকে একটু হলেও অনুভব করেছেন, আপনি তাঁদের একজন। অবশ্য, এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ভুলও হতে পারে। আমি ওরকম কোনও অবস্থায় গেলে হৃদয় ভাইয়ের অবস্থানটা আগেই কল্পনা করে রেখেছি। কিছুদিন আমাকে ফেইসবুকে না পেয়ে হয়তো তিনি ফোন দিতেন। যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতো, তবে কলটা আমার বোন ধরত। তিনি আমার সুইসাইডের খবরটা জানার পর কি উৎকণ্ঠিত হতেন? জানি না! একটা কথা। আপনি হয়তো জানতেনই না যে আমি আর নেই। কিন্তু আমার মৃত্যুর পর যদি কোনওভাবে খবরটা পেতেন; হতে পারে, হৃদয় ভাই আপনাকে ইনবক্স করে জানালেন! তখন আপনি খুব মন খারাপ করতেন। মন খারাপই শুধু? না কি একটু কষ্টও পেতেন? না কি অনেক কষ্ট? না কি ওসব কিছুই না, কেবলই একধরনের নিঃস্পৃহতা নির্লিপ্ততা নির্বিকারত্ব কাজ করত? ফেইসবুকে হয়তো আবারও মৃত্যু নিয়ে আপনাকে লিখতে হতো। মানুষের মৃত্যু নিয়ে মানুষকেই লিখতে হয়। ভাবতে পারেন, মানুষ কতটা অসহায় প্রাণী! আমি মরে গিয়ে আপনাকে কী একটা ঝামেলায় ফেলে দিতাম, তাই না?


এই পৃথিবীতে আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন সুফিয়া আপা। গত তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি আমাদের বাসায় আছেন, মানে আমার জন্মের আগে থেকেই আছেন। তিনি আমাকে পেলেপুষে বড়ো করেছেন। তাঁর সাথে আমার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। তিনি আমাদের বাসায় গৃহকর্মী হয়ে এসেছিলেন। তিনি আমার মা, বাবা আর অসুস্থ বড়ো ভাইকে যত সেবা করেছেন, ততটা আমিও পারিনি। এজন্য আমি তাঁর কাছে ঋণী। তাঁর ভালো মন্দ সব কিছুই মাথা পেতে চুপচাপ মেনে নিই। আচ্ছা, এমন মেনে নেওয়ার নাম কি ভালোবাসা? আমি জানি না। এই পৃথিবীতে তাঁর কেউ নেই, তাঁর জন্য দোয়া করারও মানুষ নেই, তাঁকে টানার মানুষ নেই। আমি যখনই নামাজ পড়ি, তখনই তাঁর জন্য দোয়া করি। আমার বড়ো ভাই মৃত্যুর আগে সুফিয়া আপা সম্পর্কে বলে গিয়েছিলেন: এক মাকে হারিয়ে আরেক মাকে পেলাম। হায়, এখন নিজেই হারিয়ে যাচ্ছি, আর সেই মাকেও হারিয়ে ফেলছি! এই জীবনে কাউকেই ধরে রাখতে পারলাম না, এমনকি নিজেকেও না! এর চাইতে কষ্টের আর কী হতে পারে?


এই মানুষটা ছোটোবেলায় বাবাকে হারিয়ে অভাবে পড়ে পেটের দায়ে ঢাকা শহরে এসে এর বাসায় ওর বাসায় কাজ করেছেন। ছোটোবেলায় এক বুড়ার সাথে আপার বিয়ে হয়েছিল। উনি সেখানে থাকেননি। বড়ো হয়ে বিয়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন। হয়নি। আসলে ওঁর কপালেই নাই সংসারের সুখ। কপালে লেখা না থাকলে অনেক কিছুই শত চেষ্টাতেও হয় না। তাই আপার বংশের কোনও বাতিও নাই। আচ্ছা, ছেলে-মেয়ে না হলে কি মানুষের জীবন অপূর্ণ হয়ে যায়? নিঃসন্তান মানুষ কি তবে ব্যর্থ মানুষ? আমার তো তা মনে হয় না। যাঁর সন্তান নেই, তাঁর অনেক দুঃখ থাকতে পারে, কিন্তু ব্যর্থতা কেন থাকবে? ‘বংশের বাতি’ কথাটাই অদ্ভুত লাগে আমার কাছে। এ বাতি এমন এক বাতি, যা জ্বলা কিংবা নেভার ব্যাপারটাই আমাদের হাতে থাকে না। যে আলোর আসা না আসা কিংবা এসেও চলে-যাওয়া মানুষের হাতেই নেই, তা নিয়ে এত কেন ভাবে মানুষ? আসলে এমন কিছু ভাবনাই মানুষকে দুঃখী করে রাখে। আমাদের যে ভাবনাটা কিছু নিঃসন্তান মানুষের মনের দুঃখ বাড়িয়ে চলে, কেন আমরা তেমন ভাবনা থেকে সরে আসতে পারি না?


আপার বয়স কত হবে? ৫০? বড়োজোর ৫৫! আপা তাঁর মৃত্যুর আগে কখনও কারও সংস্পর্শ পাবেন না। কাউকে জড়িয়ে ধরে কোনও দিন কাঁদতে পারবেন না। ওঁর মাথায় ছোটো বাচ্চারা কখনও বিলি কেটে দেবে না। অসুখ হলে নিজেকেই নিজের বিছানায় পড়ে থাকতে হবে। জড়িয়ে ধরে কাঁদবার মানুষটাও যার নেই, তার চাইতে বেশি দুঃখ কার এই পৃথিবীতে? আমি অবশ্য ওঁর অসুখে সেবা করার চেষ্টা করি। কখনও গভীর রাতে ঝড় হলে ওঁকে নিজের কাঁথাটা একাই গায়ে তুলে ভয় নিবারণ করতে হবে। ওঁকে দেখলে আমার প্রচণ্ড মনঃকষ্ট হয়। এমনিতে আমি কাউকে তেমন ভালোবাসি না। ওঁর মতো এতটা প্রচণ্ডভাবে আমাকে কেউ ভালোবাসে না। এই যে আপা আমাকে এতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসেন, এটা দেখে আমার মধ্যে অনুশোচনাবোধ কাজ করে। আমাকে কেউ ভালোবাসে না, এটাও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এমন একজন আছে, যে আমাকে এতটা গভীরভাবে ভালোবাসে, আর আমি কিনা মানুষটাকে সে ভালোবাসার সিকিভাগও ভালোবাসতে পারি না, এটা মেনে নেওয়াটা ভীষণ ভীষণ কষ্টের।


কারও ভালোবাসা না পাবার চাইতে কাউকেই ভালোবাসতে না পারার যে কষ্টের অনুভূতি, তা ব্যাখ্যা করতে অনেক বড়ো লেখককে লাগবে, আমার পক্ষে তা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, কাউকেই ভালোবাসতে না-পারা মানুষ এই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী ও একাকী মানুষ। যাকে কেউ ভালোবাসে না, তার চাইতে হাজার গুণে একাকী মানুষ হচ্ছে সে, যে কাউকে ভালোবাসতে পারে না। হায়, তার চাইতেও একাকী হচ্ছে সেই মানুষটা, যাকে অনেকেই ভালোবাসে, কিন্তু যে কাউকেই ভালোবাসতে পারে না! তার বেঁচে-থাকাটাই অনেক চ্যালেঞ্জিং! সে সারাক্ষণই কী এক বিবেকের দংশনে পুড়তে থাকে! ভালো করে খোঁজ নিলে জানা যাবে, তার দেহের জাগতিক মৃত্যু না হলেও কাউকে ভালোবাসতে না-পারার অপরাধে সে মনে মনে কয়েক লক্ষ বার ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছে! আমি যখন চোখের সামনে দেখি, একটা মানুষ আমাকে কোনও কারণ ছাড়াই, কোনও স্বার্থ ছাড়াই,…এমনকি কখনও কখনও, আমার অবহেলা ও দুর্ব্যবহার সহ্য করেও, এমন পাগলের মতো ভালোবাসে, যাকে আমি ভালোবাসতে পারি না, তখন আমার মাঝেমধ্যে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, তাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে এই যে আমার মনের এমন অবরোধ, দিনের পর দিন নীরবে এটা সহ্য করতে বাধ্য হবার চাইতে বড়ো অসহায়ত্ব বুঝি আর নেই!


বলে রাখি, এই লেখাটা একেবারেই অবান্তর; এই কারণে যে, যা লিখছি, তা ঘটানো হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব নয়, অতটা বেপরোয়া আমি নই, তবুও লিখছি। কেন লিখছি? মানুষ যা বাস্তবে করতে পারে না, তা কল্পনায় করে একধরনের তৃপ্তি পায়। তবে এ নিয়ে অন্য ব্যাপারও আছে। আমার মা মৃত্যুর আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল, ‘সারাজীবনই ভেবে এসেছি, মৃত্যুর চাইতে শান্তির বুঝি আর কিছু নেই। মৃত্যু মানেই তো জগতের সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তি। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্যই আমি উদ্‌গ্রীব হয়ে বেঁচে ছিলাম এতকাল। অথচ এই মুহূর্তে কেন আমার বার বারই মনে হচ্ছে, এইসব দুঃখ বেদনা যন্ত্রণাকে আঁকড়ে ধরে আরও কিছুকাল বেঁচে থাকি?’ মা আমার জড়িয়ে ধরেই শেষনিঃশ্বাসটি ত্যাগ করে। মৃত্যুর আগে মা আমাকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছিল। মায়ের মৃত্যু আমাকে শিখিয়েছে, মানুষ যত চেষ্টাই করুক না কেন, কোনও উপায়েই সে কাউকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে না। হয় সে নিজে বিদায় নেয়, কিংবা যাকে ধরছে সে বিদায় নেয়। ভবিষ্যতের এই অবশ্যম্ভাবী পরাজয়টা মেনে নিয়ে বেঁচে-থাকার নামই জীবন। বাঁচতে হলে বিদায় জানাতে ও গ্রহণ করতে শিখতেই হবে। বিদায়কে সহজহৃদয়ে মেনে নিতে জানার চাইতে বড়ো আর্ট আর নেই। এসব কথা বলার মতো কেউ আমার নেই, কোথাও নেই, তাই লিখে লিখে বলছি।


আমি যা পাই না, তা নিয়ে অনেক স্বপ্নও দেখে ফেলি। যেমন গতকাল আমি একটা অদ্ভুত রকমের স্বপ্ন দেখে তৃপ্তি পেয়েছিলাম। দেখলাম, আমার বয়স ৫০ কি ৬০। আমি আফ্রিকায় আছি। দুটি নিগ্রো সন্তান দত্তক নিয়েছি। আমি ওদের মা। পুরো সভ্য দুনিয়ার নেটওয়ার্কের বাইরে আছি আমি। আজ ২০-৩০ বছর ধরে কেউ আমার কোনও খবর জানে না। আমি অনেক উঁচু একটা পাহাড়ে থাকি। ভোর হলেই খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। পাহাড়ের ঢালে ঢালে আলু আর অন্যান্য ফসলের চাষ করি। একেবারে অরণ্যের আদিম জীবনটাই আমি যাপন করছি। সন্ধ্যার পর আগুন জ্বালিয়ে ফায়ারপ্লেসের পাশে বসে বসে লিখি। আমার আত্মজীবনীর খণ্ড খণ্ড অংশ লিখি, যেগুলিকে হয়তো আমি আমৃত্যু গুছিয়ে জোড়া লাগাতে পারব না। রোজই একটু একটু করে লিখি। স্বপ্নে আবার হঠাৎ দেখি, আমার লেখাটাই একটা উপন্যাসের কলেবরে চলে আসে! এলোমেলো, ছড়ানো ছিটানো, তবুও আসে। কীভাবে কীভাবে যেন আমার উপন্যাসটা ছাপাও হয়ে যায়! আমার লেখা সেই বই বেস্টসেলার হয়। বিবিসিতে আমার সাক্ষাৎকার ছাপে! সেই সাক্ষাৎকারে বলা আমার কথাগুলির প্রথম কথাটাই ছিল: আমাকে জীবন চিনিয়েছে মৃত্যু…


স্বপ্ন বরাবর স্বপ্নই থেকে যায়! সে সুখস্বপ্নই হোক কিংবা দুঃস্বপ্ন! যাঁকে আমরা বিধাতা বলি, তিনিই আমাকে ভালো কিছু কিংবা একটা সুন্দর জীবন দিলেন না; এমনকি মন্দ কিছু, এই যেমন অপঘাতে মৃত্যু, দিলেন না তা-ও, সেই আমি মানুষের কাছেই-বা কী পাবো! এ কথা শুনে আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে স্রষ্টা হয়তো বলবেন, শোনো, হে অকৃতজ্ঞ মানুষ, তোমাকে আমি আফ্রিকার জলবিহীন ক্ষুধার্ত মরুভূমিতেও তো জন্ম দিতে পারতাম। আস্তাকুঁড়ের নোংরাখাবার-খাওয়া রুগ্ন কুকুর অথবা একটি অসহায় কাক করেও তো পাঠাতে পারতাম। তোমাকে এখন তোমার ছোটো ছোটো শখগুলো পূরণ করার সক্ষমতা দিয়েছি। যখন যা ইচ্ছে, তা খেতে পারো, যা খেতে চাও, তা জোগাড় করতে পারো। শখের ড্রেসটা কিনতে পারো। অথচ তোমার দৈনিক খরচের সমপরিমাণ টাকা উত্তরবঙ্গের কোনও একটা এতিম কিশোর ছেলে ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি রক্তঘাম ঝরিয়েও উপার্জন করতে পারছে না। সে এমন কী অপরাধটা করেছে যা তুমি করোনি? তুমি এমন কী পুণ্যের ফলটা ভোগ করছ যে পুণ্য থেকে সে ইচ্ছে করেই দূরে সরে আছে? তুমি যা যা তোমার অর্জন ভাবছ, তার সবকিছুই আমার অনুগ্রহ, ভালো করে ভেবে দেখো!


এই পৃথিবীতে অনেক শিশুর মাথায় হাত বোলাবার মতো একটিও মানুষ নেই, মা-বাবা তো নেই-ই! অসংখ্য মানুষ ক্যানসারে পচে গলে যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তোমার শরীরে কোনও রোগ নেই, তুমি একজন সুস্থ মানুষ। একটি নীরোগ শরীরের চাইতে বড়ো ঐশ্বর্য আর কী আছে? কোনও অসুস্থ মানুষের সাথে কথা বলে জেনে নাও দুঃখের আসল অর্থটা কী! তোমাকে যা দিয়েছি, তা নিয়ে কেন ভাবো না? যা দিইনি বা দিয়েও তোমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছি, তা নিয়েই কেন শুধু হাহাকার করো? যতদিন তুমি আমার উপর পূর্ণআস্থা অর্জন করতে না পারবে, যতদিন তোমার সমস্ত দুঃখ-জরাকে মেনে নিয়ে তুমি আমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে না পারবে, যতদিন তুমি তোমার মনকে শাসন করতে না পেরে মনের দাসত্বটুকু গ্রহণ করবে,…ততদিন পর্যন্ত তুমি এই কৃত্রিম অসুখে বেঁচে থাকবে, কোনও দিনই সুখে মরতেও পারবে না!


এসব ভাবলে আমি তখন বুঝে নিই, মনটা বিধাতার দেওয়া হলেও, সেটাকে নিজের মতো করে, ভালোথাকার মতো করে তৈরি করে নেবার কাজটা আমার নিজেকেই করতে হবে!