আমার প্রিয় গজল

উর্দু পারি না বলে প্রায়ই আফসোস হতো যখন বিভিন্ন জনের বাংলা অনুবাদে শের-শায়েরী’র নানান সংগ্রহ পড়তাম। অনুবাদে শের কিংবা শায়েরীর মূল রস কতটুকুই-বা পাওয়া যায়? তবু আর কোনো উপায় তো ছিল না। অগত্যা অনুবাদই ভরসা। পরবর্তীতে ইকবাল, হাফিজ, রুমী, গুলজার, কাইফি আজমি, মীর্জা গালিব, মীর তকি মীর প্রমুখের কবিতা আর গজলের অপূর্ব কিছু অনুবাদ-সংকলন পড়ার সৌভাগ্য হয়। সুনীলের ছবির দেশে, কবিতার দেশে যেমনি করে ফরাসি দেশের প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করে তুলেছিল, তেমনি রবিশংকর বলের দোজখ্‌নামা পড়ার সময় উর্দু আর ফার্সি সাহিত্যের অপার সৌন্দর্যের প্রতি আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। ছোটবেলা থেকেই বাবার পছন্দের বেশ কিছু গজল শুনে বড়ো হয়েছি। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় টু-ইন-ওয়ানে বেশ কিছু গজলের ক্যাসেট শুনি এবং গজলের কোমলতা ও মাধুর্য আমাকে প্রবলভাবে মুগ্ধ করে রেখেছে এখনো অবধি।

এই লেখায় আমি আমার পছন্দের বেশ কিছু গজলের তালিকা দিয়েছি। উর্দু ছাড়াও এখানে হিন্দি, হিন্দি-উর্দু, ফার্সি, হিন্দি-ফার্সি, উর্দু-ফার্সি ভাষার গজলও আছে। আমার লেখা পড়ে পাঠকরা গজলগুলি শুনলে কিংবা আবারও শুনলে আনন্দ পাবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকেই লেখাটি নোট আকারে রাখলাম। আপনার নিজের ভাল না লাগলেও আপনারই কোনো বন্ধু কিংবা পরিচিত জনকে শুনতে বলুন, হয়তোবা উনার ভাল লাগতেও পারে। গুণীজনেরা বলেন, ভিন্ন মানুষের ভিন্ন রুচি। ভাল কথা, লেখাটি পড়ার পর যদি এমন কোনো গজল মাথায় আসে, যা এখানে থাকতে পারত, কিন্তু নেই, অনুগ্রহ করে কমেন্টে সেই গজলটির কথা লিখে জানাবেন।

লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে—দারদ সে মেরা দামান ভারদে ইয়া আল্লাহ, তুম না জানে কিস জাঁহা মেঁ, হাম হ্যয় মাতা-এ-কুচা-ও-বাজার কি তারাহ, অ্যাইয়ে দিলে না নাদান, নীলা আসমান সো গ্যয়া, রুকে রুকে সে কাদাম, ইয়ুন হাস্রাতো কে দাগ মোহাব্বত ম্যয় ধো লিয়ে, মেরি তাসবীর ম্যয় রাঙ্গ।

জগজিৎ সিং আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে—গামকা খাজানা, হার তারাফ হার জাগাহ, আল্লাহ জান্তা হ্যায়।

কিশোরকুমার আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে—তেরি বিনা জিন্দেগি সে।

সুরেশ ওয়াদকার আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে—খামোশ সা আফসানা।

সীমা আলিম চান্দানি, মোহাম্মদ রফি আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে—আভি না যাও ছোড়কার।

মোহাম্মদ রফি আর লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে—সিমতি হুই ইয়ে ঘারিয়া, জিন্দেগি ভার নাহিন ভুলেগি।

লতা মঙ্গেশকর, মুকেশ আর লক্ষ্মীকান্ত পেয়ারিলালের কণ্ঠে—এক পেয়ার কা নাগমা হ্যয়।

গীতা দত্তর কণ্ঠে—ওয়াক্ত নে কিয়া ক্যইয়া হাসিন সিতাম।

মুকেশের কণ্ঠে—কাহি দূর যাব দিন।

কিশোরকুমারের কণ্ঠে—হামে তুম সে পেয়ার কিতনা, ও মেরি তারাফ ইউ চালে আ রাহে হ্যয়, ফির ওয়াহি রাত হ্যয়।

জগজিৎ সিং-এর কণ্ঠে—বাত নিকলেগি তো ফির দূর তালাক যায়েগি, ইয়ে দৌলত ভি লেলো, কোয়ি ইয়ে ক্যয়সে বাতায়ে, তুম ইতনা যো মুস্কুরা রাহি হো, তুমকো দেখা তো ইয়ে খায়াল আয়া, কৌন আয়েগা ইয়াহা কোয়ি না আয়া, আপ কো দেখকার দেখতা রেহ গ্যয়া, কাভি উ ভি আ মেরি আঁখ ম্যয়, হোঁটোসে ছুলো তুম, ঝুকি ঝুকি সি নজর, কাল চাঁদ ভি রাত থি, কিউ ডারে জিন্দেগি ম্যয় ক্যয়া হো গা, শাম সে আঁখ ম্যয় নামি সি হ্যয়, ইয়াদ নাহিন ক্যয়া ক্যয়া দেখা থা, পারাখনা মাত পারাখনে ম্যয় কোয়ি আপনা রেহতা, ম্যয় নাশে ম্যয় হু, মুঝসে বিচার কে খুশ রেহতি হো, পেয়ার কা পেহলা খাত, আপনি মার্জি সে কাহাঁ আপনি, হোশওয়ালো কো খবর ক্যায়া, কাভি উন ভি তো, তেরা চেহারা কিতনা সুহানা লাগতা হ্যয়, আপনি মারজি সে কাহান আপনি, আহহ কো চাহিয়ে, গারাজ বারাস প্যায়াসি ধারতি পার, তেরে বারে ম্যয় যাব সোচা নাহি থা, খুমার-এ-ঘাম হ্যয়, আব ম্যায় রাশান কি কাতারো ম্যয় নাজার আতা হু, কাল চাঁদনি কি রাত থি, শাম হোনে কো হ্যয়, সামনে হ্যয় যো উসি, পেয়ার মুঝসে যো কিয়া তুম নে, আব তো ঘাবড়া কে ইয়ে ক্যহতে হ্যয় কে, তেরে আনে কি যাব খবর মাহকে, সামাঝতে থে মাগার ফির ভি না রাখি, চাঁদ ভি দেখা ফুল ভি দেখা, চিঠি না কোয়ি সান্দেশ, আপনি আঁখো কে সামান্দার, হাজারো খাওয়াশিন অ্যাইসি কে হার, বাড়ি হাসিন রাত থি, বাতে নিকলে গি তো ফির দূর তালাক যায়ে গি, তেরে খুশবু মে বাসে খাত, তুম মেরি রাখো লাজ হারি।

গুলজার, জগজিৎ সিং, চিত্রা সিং আর বিনোদ সেহগালের কণ্ঠে—ইবতেদা।

জগজিৎ সিং আর চিত্রা সিং-এর কণ্ঠে—আগার হাম কাহিন অউর ও মুস্কুরা দ্যয়, ইয়ে দৌলত ভি লে লো, হাত ছুটে ভি তো রিশ্তে নাহি, আয়াত সি কোয়ি আয়ে তো লাগতা হ্যয়, ধুপ ম্যয় নিকলো ঘাটাওন ম্যয়, বাহোত পেহলে সে উন কাদমো কি, দিল এ নাদান তুঝে হোয়া ক্যায়া হ্যয়, আজ ফির উনকা সামনা হো গা, উস মোর সে শুরু কারেন, সারাক্তি যায়ে হ্যয় রুখসি নাকাব, ইয়ে তেরা ঘর ইয়ে মেরা ঘর, ইয়ে বাতা দে মুঝে জিন্দেগি, মেরে দিল ম্যয় তু হি তু হ্যয়, দিন গুজার গ্যায়া, মেরে য্যায়সে বান যাওগে যাব ইশকে তুমহে, দুনিয়া যিসে কেহতে হ্যয়, শুনতে হ্যায় কে মিল যাতি।

সঞ্জিব-করুণা’র কণ্ঠে—খবর-ই-তাহা’ই-ইশক শুন।

মেহদি হাসানের কণ্ঠে—জিন্দেগি ম্যয় তো স্যভি পেয়ার কিয়া, দুনিয়া কিসিকে পেয়ার মে, গুলোমে রাং, মুঝে তুম নজর ছে, প্যায়ার ভারে দো শারমিলে, রাফতা রাফতা, রাঞ্জিশ হি সাহি, ম্যয় হোশ ম্যয় থা তো ফির উসে ম্যর গ্যয়া ক্যয়সে, আবকে হাম বিচরে, আপনি ধুন ম্যয় রেহতা হো, ইয়ে দিল ইয়ে পাগাল দিল মেরা, হাম তেরে শেহের ম্যয় আয়ে হ্যয়, গুলোন ম্যয় রাঙ্গ ভারে, হামকো কিসকে গাম নে মারা, মেহফিল ম্যয় বারবার কিসি পার, আহকো চাহিয়ে এক উমর আসার হোনে তাক, তেরে ভিগে বদন কি খুশবু সে, মোহাব্বত কারনে ওয়ালে কান না হোঙ্গে, কাভি কিতাবো ম্যয় ফুল রাখনা, বাত কারনি মুঝে মুশকিল।

মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে—এক হি বাত জামানে কি, লাগতা নাহি হ্যয় দিল মেরা, না কিসি কি আঁখ কা নূর, টাঙ্গা চুকে হ্যয় কাশমাকাশ-ই-জিন্দেগি, আব ক্যয়া মিশাল দুন, চাঁদভি কা চাঁদ হো, ছু লেনে দো নাজুক হোটো কো, কাভি খুদ পে কাভি হালাত পে, রাঙ্গ আউর নূর কি বারাত, কোয়ি সাগার দিল কো বেহলা তা নাহি।

সায়গালের কণ্ঠে—লায়ি হায়াত আয়ি কাজা, রুমঝুম রুমঝুম চাল তিহারি।

মানহার উধাসের কণ্ঠে—তু ইস তারাহ সে মেরি।

এসবি জনের কণ্ঠে—তু যো নাহি হ্যয় তো।

আশা ভোঁসলের কণ্ঠে—দিল চিজ ক্যায়া হে, জুস্তুজু জিস্কি থি উস কো তু না, ইয়ে ক্যয়া জাগেহ হ্যয় দোস্তো, মেরা কুছ সামান, ইন আঁখো কি মাস্তি, খালি হাত শাম আয়ি হ্যয়।

জগজিৎ সিং আর আশা ভোঁসলের কণ্ঠে—যাব সামনে তুম আ যাতে হো।

কুমার শানু আর আশা ভোঁসলের কণ্ঠে—তুমহারে নাজরো ম্যয় হাম নে দেখা।

গুলাম আলীর কণ্ঠে—চুপকেচুপকে রাত দিন, হামকো কিসকে গাম নে মারা, খায়াল ও খাব হুই হ্যয়, নাগরি নাগরি ফিরা মুসাফির, তুমহারে খাত ম্যয় নায়া এক সালাম, ইয়ারো মুঝে মুয়াফ রাখো ম্যয় নেশে ম্যয় হু, হাঙ্গামা হ্যয় কিউ বারপা, ইতনা টুটা হু কেহ, জিন্দেগি সে ইয়েহি গিলা হ্যয় মুঝে, চামাকতে চাঁদ কো টুটা হুয়া তারা বানা, দিল ম্যয় ইক লেহের সি উঠি হ্যায় আভি, ইতনি মুদ্দাত বাত বাদ মিলে হো, হাম তেরে শহর ম্যয় আয়ে থে, তামাম-এ-উমর তেরা ইন্তেজার হামনে কিয়া।

পংকজ উধাসের কণ্ঠে—আপ জিনকে কারীব হোতে হ্যয়, মোহে আয়িনা জাগসে লাজ, আউর আহিস্তা, আংড়ায়ী ভি ওহ লেনে না, দিল খুলতা হ্যয় ম্যয় নেশে, চিটঠি আয়ি হ্যয়, দিল ম্যয় না হো জুররাত তো, দুখ সুখ থা এক সাবকা।

হরিহারানের কণ্ঠে—আসার উসকো জারা নাহিন হোতা।

সনু নিগম আর হরিহারানের কণ্ঠে—সারফারোশি কি তামান্না।

তালাত আজিজের কণ্ঠে—জিন্দেগি যাব ভি তেরি বাজব্‌ ম্যয়, আয়ইনা মুঝসে মেরি পেহলে সি সুরাত, দুলহান বানে হ্যায় রাত।

অনুপ জালোটার কণ্ঠে—পাত্থার বানা দিয়া মুঝে।

অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে—তুঝসে নারাজ ন্যহি জিন্দেগি।

মাহেন্দ্র কাপুরের কণ্ঠে—বিতে হুয়ে লামহো কি কাসাক সাথ।

তালাত মাহমুদের কণ্ঠে—গাম এ আশিক সে ক্যহে দো, আয়ে দিল মুঝে অ্যায়সি জাঘা লে চ্যল।

আসাদ আমানাত আলী খানের কণ্ঠে—হোটো পে কাভি উনকে মেরা, কিসি অউর গাম ম্যয় ইতনি খালিশ-ই-নিহান নাহি হ্যয়, ইয়ে আরজু থি তুঝে।

আতাউল্লাহ খানের কণ্ঠে—ইশকে ম্যয় হাম তুমহে কিয়া, ইধার জিন্দেগি কা, পেয়ার নাল না সাহি।

আলী জাফরের কণ্ঠে—কোয়ি উম্মিদ বার নাহি আতি।

নুসরাত ফাতেহ আলী খানের কণ্ঠে—কুছ তো হাওয়া ভি সারদ থি, মেরা গাম অউর মেরি হার খুশি, ইশক কা রুতবা ইশক হি জানে, পিয়া রে পিয়া রে, তেরে বিন নাহি লাগদা, কিন্না সোহনা তেনু রাব নে, যেহাল-ই-মিস্কিন তাঘাফুল।

রূপ কুমার রাথোদের কণ্ঠে—চাঁদ কে সাথ কাল রাত।

রাহাত ফাতেহ আলী খানের কণ্ঠে—সাজনা ম্যয় ঘামা দে আজাব, তুম হ্যয় দিল লাগি ভুল জানি।

আসিফ মেহদির কণ্ঠে—শুনা হ্যয় লোগ উসসে আঁখ।

আহমেদ জাহানজেবের কণ্ঠে—আপ কি ইয়াদ আতি রাহি রাতভ্যর।

হেমন্ত কুমারের কণ্ঠে—তেরি দুনিয়া ম্যয় জিনে সে।

আজিজ নাজার কণ্ঠে—ঝুম বারাবার ঝুম শারাবি।

সুরেশ ওয়াদকারের কণ্ঠে—সীনে ম্যয় জ্যলান।

চন্দন দাশের কণ্ঠে—দিল হি দিল ম্যয় খাতাম হোকার।

হাবিব ওয়ালি মুহাম্মদের কণ্ঠে—কাব মেরা নাশেমান, মারনে কি দুয়ায়ে কিঁউ মাঙ্গো।

আসরারের কণ্ঠে—তেরে ইশক কি ইন্তেহার চাহাতা হু।

ভুপিন্দর সিং-এর কণ্ঠে—কাভি কিসি কো মুকাম্মাল, এক একেলা ইস শেহের ম্যয়, আজ বিচড়ে হ্যয়, কারোগে ইয়াদ তো হার বাত ইয়াদ আয়েগি।

ভুপিন্দর সিং আর সুরেশ ওয়াদকারের কণ্ঠে—হুজুর ইস কাদার ভি।

ভুপিন্দর সিং আর শাবানা আজমির কণ্ঠে—গুলাব জিসম কা ইয়ুহিন নাহিন খিলা হোগা।

ভুপিন্দর সিং আর মিতালী সিং-এর কণ্ঠে—সাম্মা জ্বালায়ে, রাহো পে নাজার রাখনা, আপনা কোয়ি মিলে তো।

মিতালী সিং-এর কণ্ঠে—কিরণ বাহার।

নূরজাহানের কণ্ঠে—মুঝসে পেহলি সি মুহাব্বাত, দিল ধাড়াকনে কা সাবাব ইয়াদ আয়া, তুম আয়ে হো না শাব-ই-ইন্তেজার গুজরি হ্যয়।

নায়ারা নুরের কণ্ঠে—আয়ে জেজব্যয়ে দিল ঘের ম্যয় চাহু।

সালমা আঘার কণ্ঠে—দিলকে আরমান আসুওন ম্যয় ব্যহে গ্যয়ে, ফাজা ভি হ্যায় জাওয়া জাওয়া।

রেশমার কণ্ঠে—লাম্বি জুদাইয়ে।

সিজা রয়ের কণ্ঠে আর শিশুদের কোরাসে—ল্যাব পে আতি হ্যয় দুয়া বানকে তামান্না মেরি।

সুরাইয়ার কণ্ঠে—ইয়ে না থি হামারি কিসমাত, রাহিয়ে আব আয়েসি জাগাহ, নুকতা চিন হ্যয় ঘাম-এ-দিল।

পেনাজ মাসানির কণ্ঠে—তু আগার মুঝসে খাফা হ্যয় তো।

ফারিহা পারভেজের কণ্ঠে—গেইসু এ তাব্দার কো অর ভি তাব্দার।

বাণী জাইরামের কণ্ঠে—মেরে তো গিরিধার গোপাল।

ইকবাল বানোর কণ্ঠে—হ্যয় জুস্তজু কে খুব সে হ্যয় খুবতার কাহা, হাম দেখেঙ্গে।

আনিতা সিংভির কণ্ঠে—রাঙ্গ প্যাইরাহান কা খুশবু জুলফ রেহরানে কা নাম।

ফাউজিয়া আরশির কণ্ঠে—হাসতি আপনি হুবাব কিসি হ্যয়।

সিতারাবাই কানপুরির কণ্ঠে—সোজ-ই-গাম দেকে মুঝে উসনে ইয়ে ইরশাদ কিয়া।

আবিদা পারভিনের কণ্ঠে—তুনে দিওয়ানা বানায়া, ধুন্দো গে আগার মুলকো মুলকো, হাজারো খাহিসিহেইন আয়সি, রোশান জামাল-ই-ইয়ার সে হ্যয়, তেরে আনে কা ধোকা সা রাহা হ্যয়।

কাজল চান্দিরামানি কিংবা কুরাতুয়ালাইন বালৌচের কণ্ঠে—ও সামসাফার থা মাগার। (যেদিন আমাদের পথ ভিন্ন হল আমাদেরই সায়ে, সেদিন তুমিও কাঁদোনি, কাঁদিনি আমিও।

তবু প্রিয়তম হে, আজ এ কী হল, বলো; পারো না ঘুমাতে শান্তিতে তুমি, পারি না আমিও!

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা যাঁদের হৃদয় বিদীর্ণ করেছিল, তাঁদের মধ্যে পাকিস্তানি কবি নাসির তুরাবি অন্যতম। উনি এ অমর সংগীতের স্রষ্টা। যে অসীম বেদনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়, এ গজলটি তারই এক শোকগাথা।

(গজলটি আবিদা পারভীনের কণ্ঠেও আছে, তবে আমাকে বেশি স্পর্শ করেছেন কাজল চান্দিরামানি।))

ভারতী বিশ্বনাথনের কণ্ঠে—সার ম্যয় সাউদা ভি নাহি দিল।

বেগম আকতারের কণ্ঠে—ও জো হাম ম্যয় তুম ম্যয় কারার থা, উলটি হো গ্যয়ি সাব তাদবীরেন, অ্যায় মোহাব্বত তেরে আনজাম, মেরে হামনাফাস মেরে হামনাওয়া।

চিত্রা সিং-এর কণ্ঠে—খুদা হামকো আইয়সি খুদাইয়ি না দে, দিল হি তো হ্যয় না সাং, তু নাহি তো জিন্দেগি ম্যয় কিয়া, ইউ জিন্দেগি কি রাহ ম্যয়, হামকো দুশমন কি নিগাহোন, সাফার ম্যয় ধুপ তো হোগি, চারকা মেরা রাঙ্গলা, কিসি রাঞ্জিশ কো হাওয়া দো, আপকো ভুল যায়ে হাম ইতনে তো বেওয়াফা নেহি।

নাহিদ আক্তারের কণ্ঠে—আল্লাহী আল্লাহ কিয়া করো, শাব এ গাম মুঝসে মিলকার অ্যাইয়সে রোয়ি।

ফরিদা খানুমের কণ্ঠে—উজ্র আনে ম্যয় ভি, শাম-ই-ফিরাক আব না পুঁছ, আজ জানে কি জিদ না করো।

উপরের তালিকার কয়েকটি গজল আমার কী যে প্রিয়, তা বলে বোঝাতে পারব না! গানগুলি আমার প্লেলিস্টে রাখা আছে, আমি প্রায়ই শুনি, মনটা একেবারে শান্ত হয়ে যায়। গজল হৃদয়কে স্বস্তি দেয়। আমি গান শোনার সময় কখনোই মাথায় রাখি না, গানটা কোন দেশের, কোন ভাষার, কোন ধর্মের। গানের বেলায় আমার কাছে সুরই মুখ্য। এর সাথে যদি গানের ছন্দ ও গায়কী আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে, তবে সেটাই আমার গান, আমার ভালোবাসার সম্পদ। উপরের গজলগুলি আমি নির্দিষ্ট কারো কণ্ঠে শোনার পরামর্শ দিয়েছি, যে মতামত একান্তই আমার নিজস্ব। গানগুলি অন্য শিল্পীর কণ্ঠেও আছে, তবে আমার যাঁর কণ্ঠে শুনে ভাল লেগেছে, আমি তাঁর নামটাই রিকমেন্ড করেছি। আফসোস, আমি বেশিরভাগ গজলের অর্থ না বুঝেই আমার সংগীতবোধ আর সুরবিবেকের উপর আস্থা রেখে শুনেছি সেই অল্প বয়স থেকেই, এখনো তেমনি করেই শুনে যাচ্ছি। সুর আস্বাদনের এই খেলায় আমি কখনো প্রতারিত হয়েছি বলে মনে হয়নি। কখনোবা বিভিন্ন সোর্স থেকে গানের ইংরেজি অনুবাদ দেখে লাইনের সাথে অর্থ মিলিয়েমিলিয়ে গান শুনি। ওরকম করে শোনারও অন্য রকমের একটা শান্তি আছে। সুরেই স্বস্তি, সুরেই মুক্তি!

বাংলা গজলের প্রথম স্রষ্টা কাজী নজরুল ইসলাম। ভারতে গজল আনার কৃতিত্ব আমীর খসরুর, আর বাংলায় কাজটি করেন আমাদের প্রাণের মানুষ নজরুল। গজলের কথা ও সুরকল্লোলে বাংলাকে ভাসিয়েছিলেন বলে অনেকে তাঁকে বাংলার ভগীরথও বলেন। ভারতের গজল মূলত পার্সি ও উর্দু ভাষার সমন্বয়ে প্রণয়গীতি বা ভালোবাসার গান হলেও কিছু গানে আছে নিবেদন, সমর্পণ কিংবা আত্মবিশ্লেষণ তথা আত্মসমালোচনার কথা। নজরুল তাঁর বেশিরভাগ গানেই প্রেম বিষয়ক ভাব প্রকাশ করেছেন। জনপ্রিয়তার বিচারে নজরুলকে ভারতের মীর্জা গালিব বলেন অনেকেই। ছোটবেলায় কাকা বজলে করীম সাহেবের কাছে কবি উর্দু ভাষার পাঠ নেন, পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদলে নাম লিখিয়ে পাকিস্তানের করাচি গেলেন এবং সেখানে এক পাঞ্জাবি মৌলবির কাছে ফার্সি কবিতা পড়তে যেতেন। উর্দু এবং ফার্সি ভাষায় দক্ষতা না থাকলে গজল লেখা যায় না। নজরুলের দুইই ছিল, সাথে ছিল সংগীতের প্রতি অসীম প্রেম। সংগীত শিল্পী ভাস্বতী দত্তের লেখা থেকে জানা যায়, একবার কবি দিল্লি বেড়াতে গেছেন। সেখানে দেখা হল জামা মসজিদের ইমাম সাহেবের সঙ্গে। তাঁর অপূর্ব কণ্ঠে ফারসি গজল ‘চাশতি অউর রুখ মে দি’ শুনে কবি অভিভূত হয়ে পড়েন। গানটা তাঁকে এতটাই প্রভাবিত করল যে তিনি লিখে ফেললেন বাংলা গান কে বিদেশি, মন উদাসি, বাঁশের বাঁশি বাজাও বনে। বাংলা গানে নতুন এক ধারার সৃষ্টি হলো। এটাই প্রথম বাংলা গজল বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।

কাজী নজরুল ইসলাম অস্বাভাবিক দ্রুততায় খুব সাবলীলভাবে গান লিখে ফেলতে পারতেন। দেখা যেত, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কিংবা কারো সাথে কথা বলতে বলতে কোন গানের কথা মাথায় এসে গেলো। তখনই লিখে ফেলার সময় না হলেও তিনি তিনি কোনো খাতায় কিংবা টুকরো কাগজে গানের লাইন লিখে রাখতেন। পরে সে গানটা সৃষ্টি করতেন। এত জল ও কাজল চোখে পাষাণী আনল বল কে। ডি এল রায়ের ছেলে শিল্পী দিলীপকুমার রায়ের অনুরোধে নজরুল শিল্পীর খাতায় একটানা কলমে গানটি লিখে দিয়েছিলেন। গানটি দিলীপকুমার গাইতেন হিন্দুস্তানি লোকসংগীতের ঢঙে কাজরী চালে পাহাড়ি রাগের আমেজ এনে। পরবর্তীতে অতুলপ্রসাদ সেন এই গানটা শুনে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনিও এর জুড়িগান লিখেছিলেন: জল বলে চল, মোর সাথে চল, তোর আঁখিজল হবে না বিফল। নজরুল এমন নৈপুণ্যে ইরানি ভাষার সাথে বাংলার মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন যে নজরুলের গজল শোনার সময় কিছুতেই মনে আসে না এই বাংলা গানটির মধ্যে উর্দু আর ফার্সি ভাষার এতটা মিশেল আছে। নজরুলের অসামান্য হাতের ছোঁয়ায় বিদেশি শব্দগুলিকে কোনোভাবেই ভিন্ন ভাষার শব্দ মনে হয় না, আপনই লাগে।

নজরুলের সৃষ্ট কিছু গজলের খোঁজ দিয়ে আমার লেখাটি শেষ করছি:

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় কিংবা মোহাম্মদ রফির কণ্ঠে—আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন।

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে—বাগিচায় বুলবুলি তুই, এত জল ও কাজল চোখে, আধোআধো বোল, তোমারই কুসুমবনে।

হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠে—প্রিয়, যাই যাই বোলো না।

পরিমল ভট্টাচার্যের কণ্ঠে—বকুলচম্পার বনে কে মোর।

অঞ্জলি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে—কে বিদেশি, মন উদাসি, গুলবাগিচার বুলবুলি আমি।

শঙ্কর ঘোষালের কণ্ঠে—এত কথা কীগো কহিতে জানে।

ইলা বসুর কণ্ঠে—তোমার আঁখির কসম, সাকী।

তালাত মাহমুদের কণ্ঠে—আসলো যখন ফুলের ফাগুন।

শিপ্রা বসুর কণ্ঠে—পথ চলিতে যদি চকিতে।

সমরেশ রায়ের কণ্ঠে—আগুন জ্বালাতে আসিনি।

পূরবী দত্তের কণ্ঠে—পাষাণের ভাঙ্গালে ঘুম।

ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে—আমার যাবার সময় হলো।