উইন্টার লাইট (১৯৬১)

আমি এমন একজনকে ভালোবাসি, যে আমাকে ভালোবাসে না। আমাকে ভালোবাসা দূরে থাক, আমি যে ওকে ভালোবাসি, এই ব্যাপারটাই সে সহ্য করতে পারে না। আমি জানি, মানুষটা আমার ভালোবাসা কিংবা যত্নের পরোয়া করে না। সাথে এও জানি, আমি যদি তার জীবন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিই, তবে তার বাঁচতে কষ্ট হবে। মানুষটা জীবন এবং তার নিজের বেঁচেথাকার উপর ভীষণ বিরক্ত।

ঈশ্বর কখনো কখনো চুপ করে থাকেন, যখন থাকেন, তখন নিজের ভাল কি মন্দ, তা বোঝার ভারটা নিজের পাশাপাশি অন্য কেউও একটু নিলে বাঁচাটা সহজ হয়। আমি জানি, আমি ওরকম সময়ে মানুষটার পাশে থাকতে চাই, কিন্তু মানুষটা সে সুযোগ আমাকে দেবে না। এমন নয় যে সে সুযোগটা অন্য কেউ নিক, তা সে চাইছে। বস্তুত, আমি তাকে ততটাই ভালোবাসি, যতটা ভালো সে নিজেও নিজেকে বাসতে শেখেনি, কিংবা ভুলে গেছে। মানুষটা ভীতু এবং লাজুক। পৃথিবীতে একমাত্র তার বেলায় আমি দুঃসাহসী এবং নির্লজ্জ। এটাকে কী বলে আমি জানি না, আমি শুধু এইটুকু জানি, আমি তার সাথেই থাকতে চাই। এই অপ্রতিরোধ্য ভালোবাসা একতরফা, তবে তাতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

তার আমাকে প্রয়োজন নেই, কারণ সে নিজের অস্তিত্বের দায়কে নিরাসক্তভাবে দেখতে শিখে গেছে সেই চার বছর আগেই যখন তার স্ত্রী মারা যায়। সে তার স্ত্রীকে ভালোবাসত এবং স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার সকল ভালোবাসা এবং আবেগের মৃত্যু হয়। মানুষটার সামনে গেলে আমি তেমন কিছুই বলতে পারি না, অথচ আমার এই এক জীবনে যা কিছু বলার আছে, তা একমাত্র সেই মানুষটাকেই। জীবনে যদি তার পাশে থাকতে পারি, তার সেবা করতে পারি……….তার ভালোবাসা পাই না পাই, আমার কাছে সে সৌভাগ্যের অর্থই জীবনের অর্থ। আমি জানি, আমি দেখতে ভাল না, আমি এমন কেউ নই, যাকে ভালোবাসতেই হবে, তবে এও জানি, আমি পাশে থাকলে মানুষটা ভাল থাকবে, তার ভালথাকাই আমার একমাত্র চাওয়া, এর বাইরে আমি আর কিছুই ভাবতে পারি না, তার বিনিময়ে আমি তার কাছ থেকে ঘৃণা নিতেও রাজি আছি।

আমার কাছে ভালোবাসার শক্তি বড়ো, মানুষটার কাছে প্রার্থনার শক্তি বড়ো, তাতে কী এসে যায়? প্রার্থনা করা আর ভালোবাসার মধ্যে আদৌ কি কোনো তফাৎ আছে? সে যখন আমাকে এড়িয়ে চলে, তখন আমার খুব চিন্তা হয়। এই যে আমি তার কাছে নিজেকে নিতে পারছি না, সে ভাল আছে তো? তার কোনো অসুবিধে হচ্ছে নাতো? তার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে নেই তো? তাকে যে দেখার কেউ নেই! আমার প্রতি তার উদাসীনতা আমাকে ততটা কষ্ট দেয় না, যতটা কষ্ট দেয় তার নিজের প্রতি তার উদাসীনতা। আহা, ঈশ্বর যদি আমাকে তেমন করে বানাতেন, যেমন করে বানালে সে আমায় ভালোবাসত, ভালো না বাসলেও অন্তত তার যত্ন নেয়ার সুযোগ দিত, তবে তাকে কতই না ভাল রাখতে পারতাম! এই অক্ষমতা আমাকে অসীম অপরাধবোধে ডুবিয়ে রাখে। এই যে এত যন্ত্রণা পাচ্ছি, এর নাম কী? ভালোবাসা? নাকি জীবন?

এ প্রশ্নের কোনো উত্তর ইঙ্গমার বার্গম্যান উইন্টার লাইট (১৯৬১) মুভিতে দেননি। আর দেননি বলেই মুভিটা ক্লাসিকের তালিকায় নিজের নামটা লিখিয়ে নিয়েছে। যার শেষ নেই, সে-ই তো টিকে থাকে না, তাই না?

আন্দ্রেই তারকোভস্কির সবচাইতে প্রিয় ১০টি সিনেমার একটি উইন্টার লাইট (১৯৬১)। ইউটিউবে পাবেন, সাবটাইটেলসহ, প্রিন্টও দারুণ!

ঠিক করেছি, এই ছুটিতে সেরা নির্মাতাদের প্রিয় কয়েকটা মুভি দেখে ফেলবো। (আর ইচ্ছে হলে আপনাদের সাথে মুভিদেখার আনন্দ ভাগ করে নেবো।)