উৎসারিত আলো

১। আমরা অনেকেই স্টার হতে চাই, মানে অসাধারণ হতে চাই নিজের কাজের ক্ষেত্রে, তবে জীবনযাপন করি সাধারণের চেয়েও সাধারণ মনমানসিকতায়, যেটাকে বলা যায়, শুধুই একটা কোনায় পড়ে থেকে কোনওমতে বেঁচেথাকা। আসল ব্যাপারটা বলি। হাতে অপশন আসলে দুটো। এক। সাধারণ হয়েই বাঁচুন। সবাইকেই অসাধারণ হতেই হবে, এটা পুরোপুরিই একটা ভ্রান্ত ধারণা। সত্যিটা হচ্ছে, সবাই অসাধারণ হতে পারবেও না। অসাধারণত্বের অত পোস্টই তো খালি নেই এই পৃথিবীর বুকে। কী করলে আপনি শান্তিতে ঘুমোতে পারছেন অন্য কারও ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়েই, সেটাই বড়ো কথা। বরং সেই কাজটাই করুন। আমি দেখেছি, সঠিক তরিকায় নিজেকে ও অন্যকে ভালো রেখে সাধারণ হতে পারাটাও খুব অসাধারণ একটা ব্যাপার। দুই। যদি অসাধারণ হতেই চান, তবে যাঁরা ওই বিশেষ রাস্তায় হেঁটেছেন কিংবা হেঁটে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত, তাঁদের ফলো করুন। তাঁরা কীভাবে ছোট্ট ছোট্ট ভুল করেন, সেটাও খেয়াল করুন। ভুলগুলো খেয়াল করতে পারলে কখন যে নিজে নিজেই তাঁদের ঠিকটাও খেয়াল করে ফেলবেন, বুঝতেই পারবেন না। তাঁদের জীবন সম্পর্কে ভালো করে জানুন। ‘দেখুন, শুধু হাইট আর ভারী কণ্ঠস্বরের জোরে, মাত্র একশত রুপি পকেটে নিয়ে যাত্রা শুরু করে, হুট করে নায়ক হয়ে গেলেন অমিতাভ বচ্চন!’ কিংবা ‘দেখুন, রাতারাতি কী করে জন্ম নিলেন একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো!’ এসব নিছকই ফেসবুকীয় প্রোপাগান্ডা, ভাই! এঁদের দুজনের সাথে ব্যবহৃত ‘হুট করে’ আর ‘রাতারাতি’ শব্দ দুটোর অর্থ আমাদের অভিধানের সাথে কোনওভাবেই মেলে না। এই জগতে কেউই ওরকম হুট করে বা রাতারাতি কিছু হয়ে যায় না। অনেক দিনের সাধনা লাগে। তো কী করবেন? আপনি যে মানুষের ফ্যান, আপনার সেই প্রিয় স্টার কিংবা আইডলের কথা ভালো করে জানবেন, সেই রাস্তা ধরে একটু একটু করে হেঁটে যাবার চেষ্টা করবেন।


এ তো গেল সাধারণত্ব আর অসাধারণত্বের কথা। কেউ কেউ আছেন, যাঁদের বসবাস এই দুইয়ের মাঝখানে। এঁরা অসাধারণ হতে চান, কিন্তু যাঁর মতো হতে চান, তাঁর খুঁতগুলো নিয়েই বেশি মাথা ঘামান। তাঁদের কথা হচ্ছে, ‘হতে তো চাই ওরকম, কিন্তু ওঁরা তো চারিত্রিক দিক থেকে খুব একটা ভালো না। ওঁরা একটার পর একটা রিলেশনে জড়ায়, ওঁদের জীবনে সুখ নেই। থাক, ওঁদের মতন না হওয়াই ভালো।’ সাথে কিছু মুখস্থবুলি তো আছেই…দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য। ইত্যাদি ইত্যাদি! ভাবখানা এমন যেন তিনি চাইলেই ওরকম কিছু একটা হয়ে দেখাতে পারতেন! দুর্বল ও অযোগ্য লোকের মুখে আত্মপক্ষ সমর্থনে বাঁধাবুলির অভাব কখনও হয় না। আমাদের এক ক্লাসমেট এসএসসিতে ফেইল করেছিল। আমাদের আরেক ক্লাসমেট, যে মেধাতালিকায় চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম তিনজনের মধ্যে ছিল, এইচএসসি ফার্স্টইয়ারে পড়ার সময় তার একটা রিলেশন ভেঙে যায়। এটা নিয়ে তার মন খুব খারাপ ছিল। তো আমাদের সেই ফেইলটুস ক্লাসমেটটি মাঝে মাঝে বলত, ‘ওসব স্ট্যান্ড করে কী লাভ যদি এরকম অবস্থা হয়? তার চাইতে তো আমিই ভালো আছি!’ ওর দিকে তাকিয়ে বলতাম, ‘ভাই, ভালো করে পড়ালেখা কর যাতে আর কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে!’ আর মনে মনে ভাবতাম, অপদার্থ আর কাকে বলে! নিজেকে উপরে তোলার জন্য মানুষ কীসের মধ্যে কী নিয়ে আসে! তখন অবশ্য ফেইসবুক ছিল না, থাকলে ‘শুনো হে ফেইসবুক ভাই, সবার উপরে আমি সত্য, তাহার উপর নাই।’ জাতীয় কিছু একটা লিখে দিলেই তার জন্য স্বর্গের রাস্তা ঝাঁ চকচকে হয়ে যেত।


আমাদের পাড়ার চায়ের দোকানদার কেশবদাদাকেও বিরাট কোহলির অহংকার নিয়ে কথা বলতে দেখি, আর ‘অধিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও নিরহংকার’, দাদা নিজেকে এমনটা প্রমাণ করতে চান না…হয়তো তিনি বিনয়ের অবতার বলেই, তবে দুমদাম করে দাদার মুখে খইটা ফুটতেই থাকে…অহংকার পতনের ডট ডট ডট! আর ওদিকে কোহলি…ছক্কা মারতেই থাকে! দাদার কথা মন দিয়ে শুনি, আর বলি, ‘ও দাদা, আরেক কাপ দুধ-চা দাও না! লিকারটা একটু বাড়িয়ে দিয়ো!’ তবে এটা ঠিক, দাদা বেশ ভালো চা বানান। দাদা যে কখনও কখনও চায়ে চিনি একটু বেশি দিয়ে ফেলেন, সেটা নিয়ে কোহলি কেন কিছু বলছেন না, এটা নিয়ে দাদার একটু আক্ষেপ অবশ্য থাকতেই পারে! আসলে, যার যতটুকুতে আত্মতৃপ্তি!


ভাই, শুনুন। ফ্যামিলি, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, পাশের বাসার আন্টিসহ মহল্লার সবাইকে খুশি রাখা, জোর করেই একটা রিলেশনশিপে বা বিয়ের মতন জটিল ব্যাপারে হুদাই ঝুলে থাকা, ‘সময় কম দেওয়া’র মতন অদ্ভুত ঠুনকো ফালতু যুক্তিতে কারও সাথে ব্রেকআপ করে ফেলা---এসব আমরা সাধারণরাই করি, আর ওদিকে অসাধারণরা এসব ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে একসেকেন্ডও সময় বেশি নেন না। নিজেকে আলতুফালতু পেইনের মধ্যে রেখে দেয় সাধারণরাই, ওঁরা রাখেন না। (ওঁদের অত সময় কই!) পুরো দুনিয়াকে খুশি রাখার দায়িত্ব নেন সাধারণরা, ওঁরা নয়। নিজের ভাগ্যের জন্য দুনিয়াসুদ্ধ মানুষকে দোষারোপ করতে থাকেন সাধারণরা, অসাধারণদের সকল অভিযোগের তীর নিজের দিকেই নিক্ষিপ্ত হয়। এবার আপনি নিজেই ভাবুন, আপনি আসলে কীসের মধ্যে আছেন!


এবার খেয়াল করুন, এই পয়েন্টের প্রথম দিকে আমি যখন ফ্যান/আইডলের কথা উল্লেখ করেছিলাম, তখন আপনি নিজেকে ফ্যানের জায়গায়, আর আইডলের জায়গায়, আপনি যাঁর মতন হতে চান, মনে মনে সেই মানুষটিকে কখন যে বসিয়ে ফেলেছেন, তা নিজেও জানেন না। হ্যাঁ, আপনি তাঁর কথা ভেবেই লেখার বাকি অংশটা পড়েছেন। আমি কি ভুল বলেছি?


তো ভাই, এবার পছন্দ আপনার, যেহেতু জীবনটা আপনার। সাধারণ হোন কিংবা অসাধারণ। মাঝামাঝি থেকে কিচ্ছু পাবেন না, কিছুই না।


২। অন্ধকারে থাকতে থাকতে একসময় দিনের আলোই যেমনি সহ্য হয় না, কিংবা আলোকে যেমনি ভিন্ন কিছুই মনে হয় না, ঠিক তেমনি নিজের, অন্যের এবং কিছু সিস্টেমের ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা করতে করতে আর দেখতে দেখতে আপনি একদিন এই শৃঙ্খলা আর বিশৃঙ্খলার মধ্যে পার্থক্যটাই বুঝতে পারবেন না।


৩। আপনি খুব যুক্তিবাদী মানুষ হলে কাউকে কক্ষনো ভালোবাসতে যাবেন না। যুক্তি দিয়ে যুক্তিবিদ্যা পড়া যায়, তর্কবিতর্ক করা যায়, ভালো ঝগড়া করা যায়, আইনজীবী হওয়া যায়। ওসব ট্রাই করে দেখতে পারেন। তবুও যুক্তি যদি টানতেই হয়, ভালোবাসা শুরুর আগে টানুন, ভালোবাসাটা একবার হয়ে গেলে, পরবর্তীতে হয়তো আপনি নিজের এবং অন্যদের সকলের যুক্তিকে কটাক্ষ করে নিজেই হাসাহাসি করবেন। কিংবা আগেই কেন বুঝেশুনে পা বাড়ালেন না, এটা ভেবে অঝোরে কাঁদবেন। যে ভালোবাসা কাঁদায়, সে ভালোবাসা নিয়ে পড়ে থাকার চাইতে বড়ো বোকামি আর একটাও নেই।


৪। যার জন্য চুরিটা করছেন, সে যদি শেষঅবধি আপনাকে চোর না-ই বলে, তবে ধরে নেবেন, তার জন্য করা চুরিটা, মানে তার পক্ষ নেওয়াটা কিংবা তাকে বাঁচানোর কাজটা আপনি ঠিকভাবে করতেই পারেননি! এটা আরেকভাবে বলা যায়। জীবনে যার উপকার করেছেন, সে যদি আপনার ক্ষতি না করে কিংবা আপনার নিন্দা করে না বেড়ায়, তবে আপনি ধরে নিতে পারেন, আপনাকে দিয়ে তার উপকারটি ঠিকমতো হয়নি। সেজন্য কারও হয়ে চুরি করতে গেলে তার মুখ থেকেই চোর অপবাদটি হজম করতে প্রস্তুত থেকে, আর কারও উপকার করতে গেলে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবার ব্যাপারটা নিশ্চিত জেনেই এগোবেন। সে-ই সবচাইতে বেশি নিরাপদ, যে কখনওই কারও উপকার করে না। এক ছেলেকে দিনের পর দিন কাউন্সেলিং করে, তার দুর্ব্যবহার সহ্য করে, প্রায় দেড় বছরের ক্রমাগত চেষ্টায় ও শ্রমে (বিনা জাগতিক প্রাপ্তিতে) স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিলাম। একটা সময় যে ছিল চরম পর্যায়ের আত্মহত্যাপ্রবণ, তাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলেছিলাম। এরপর? আমার বিপদের সময় সে আমাকে আরও বেশি বিপদে ফেলে দেবার জন্য তার সবটুকু ঢেলে দিয়ে চেষ্টা করে গেছে। তখন বুঝেছি, তাকে মানসিকভাবে সুস্থ করার ক্ষেত্রে আমার আন্তরিকতায় কোনও ত্রুটি ছিল না!


৫। কোনও কাজে নিখুঁত হতে গিয়ে এতটাও নিখুঁত হতে যাবেন না যে কাজের ‘ক’টাই হারিয়ে যায়! অনেকেই বেশি নিখুঁত হতে গিয়ে আর খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণে একটা কাজ সফলভাবে করা তো দূরের কথা, কাজটা ঠিকমতো শুরুই করতে পারেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই কাজটা তাকে দিয়ে আর হয়ই না। উদাহরণ দিই। ধরুন, আপনি অত্যন্ত ক্ষুধার্ত অবস্থায় সুস্বাদু আলুভাজি আর ঘন ডাল দিয়ে ভাত মাখলেন, পেট ভরে, মন ভরে খাবার জন্য। এবার ভাত মেখে এক লোকমা খাবার পরে আপনার মনে হলো, না, মাখানোটা ঠিক হয়নি, আরও ভালো করে মাখি। আচ্ছা, ঘি দিয়ে একটু মেখে দেখি না কেমন হয়! এই ভেবে ঘি খুঁজতে গেলেন। এবারে ঘি খুঁজেটুজে এনে ভাতে মেখে সেই ‘পারফেক্ট লোকমা’ বানাতে বানাতে আপনি খেয়াল করবেন, আপনার ক্ষুধাটাই মরে গেছে। আর খেতেই মন চাইবে না। জোর করেও দু-এক লোকমা খেতে গেলে আপনার বমি পাবে। তো এটার মানে কী? ভাতের প্রথম লোকমার পর পরই পরের লোকমাটা খেয়ে ফেলতে হয়, সেটা খেতে যেমনই লাগুক। সেরকম অনেক কাজের বেলাতেও কাজের সিকোয়েন্স মেইনটেইন করাটাই প্রথম কথা, নাহলে দেখবেন, সেই কাজটির প্রতি আপনি আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি সেই কাজটি তখন যেমন আপনাকে দিয়ে হয়নি, এমনও হতে পারে, জীবনে ওটা আপনি আর করতেই পারবেন না। বিরক্তি কিংবা হেরে যাবার ভয় চলে আসবে মনে।


৬। এই করোনা না এলে আমরা জানতেই পারতাম না যে কত মানুষ বাসা থেকে ফিটফাট হয়ে বের হয়ে চায়ের দোকানে আড্ডামারা, তাস- ক্যারামখেলাসহ কীভাবে ঘরে বসেই ফেইসবুকিং-এর সাহায্যে করোনা দূর করা যায় ডাক্তার কিংবা বিজ্ঞানী না হয়েও এবং একশো বছর আগের আর একশো বছর পরের দুর্নীতি নিয়ে মনগড়া টাইপের বাণী প্রসব করে করে টাইমপাস করাটাকেই এতকাল ধরে বাসায় ‘বিশাল জরুরি কাজ আছে!’ বলে আসছেন! এই করোনার সময়ে দুই শ্রেণির মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে---ভিক্ষুকগণের আর ফেইসবুক বিভিন্ন আজেবাজে পেইজের ও গ্রুপের সম্মানিত অ্যাডমিনগণের। আহা, এই করোনা এসে জগতের কত আজাইরা মানুষের মুখোশ যে খুলে দিল! আমার এক ছোটো ভাই আছে। সে নিজে বেকার, জীবনে তেমন কিছু এখনও করতে পারেনি, কিন্তু ফেইসবুকে লোকজনকে মোটিভেশন দিয়ে বেড়ায়। আহা, পৃথিবী ইজ কিউট! ইদানীং বিবিএ আর মোটিভেশন বড়ো আদরের জিনিস, একেবারে দুইপয়সার বিড়ির মতো …পানবিড়ির দোকানেও আছে---রাস্তাঘাটেই পাবেন!


৭। সফলতার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। আমরা ইংরেজি কিংবা হিন্দি বলার বেলায় অনেকেই খুব লজ্জা পাই। ভাবি, যদি ভুল হয়, নাহয় আরও একটু শিখে নিই! এরপর আমার ইংরেজিটা হবে একদম নিখুঁত। তা ছাড়া আমি তো ওসব শোনার সময় খুব ভালো করেই বুঝি, বলতে গেলেও ভালোই পারব।…ভাই রে, এটাকে কনফিডেন্স বলে না, এটাকে বলে ফুলিশ ওভারকনফিডেন্স। কারণ আপনি যতই অন্য ভাষা শুনে আর পড়ে বড়ো হন না কেন, বলতে গেলেই দেখবেন, আপনি ফুট্টুস হয়ে বসে আছেন! বুঝতে পারা আর বলতে পারার মধ্যে বিরাট বিরাট পার্থক্য আছে। বিশ্বাস না হলে…প্লিজ, ডু ট্রাই দিস অ্যাট হোম!


তো এবার আসি, কনফিডেন্স কাকে বলে? কেউ যদি ইংরেজি, হিন্দি ইত্যাদি ইত্যাদি বিদেশি ভাষা কম জেনেও দশজনের সামনে, কোনও সেমিনার কিংবা বড়ো কোনও মিটিংয়ে ওই ভুলটা নিয়েই কথাবলা শুরু করে দেন, তবে এই জিনিসটাকে বলে কনফিডেন্স। যে ভুল বলে, প্রাথমিকভাবে আমরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করলেও মূল হাসাহাসিটা পাবার দাবিদার হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি বলার চেষ্টাই করেননি। অল্প জেনে, ব্যাকরণ ভুল বলে, ভুল উচ্চারণে যে অত মানুষের সামনে কথা বলে, সফলতা নিজেই তার পায়ের কাছে আসতে বাধ্য। এফএম মেথডের কথা আপনাদের মনে আছে? কাজের বুয়াও ইংরেজিতে কথা বলতে পারত ওদের কোচিং সেন্টারে গিয়ে। কীভাবে পারত? মানুষের মস্তিষ্ক বড়োই বিচিত্র জিনিস। তাকে প্রথমেই বলতে হবে, ‘হ্যাঁ, আমি পারব!’ বাকিটা ধীরে ধীরে হয়ে যাবে। হিরো আলমকে নিয়ে প্রকাশ্যে হাসাহাসি করলেও মনে মনে অনেকেই হিরো আলমের মতো ‘ভাইরাল’ হবার স্বপ্ন দেখেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, উনি যতই বোকাসোকা হন না কেন, উনি কিন্তু অনেক কনফিডেন্ট এবং সাকসেসফুল। ওই জায়গায় থাকলে আপনি আমি হয়তো ঠেলাগাড়ি চালাতাম। তাঁর মতন একজন মানুষের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, তিনি তার সবটুকুই করছেন। নিজের সামর্থ্যের পুরোটা কাজে লাগাতে পারা, এটাই অনেক বড়ো ব্যাপার।


অ্যা মিসটেক ইজ কিউটি কিউটি,
ইউ নিড টু ডু ইট সুইটি সুইটি!
এভরিডে ইউ হ্যাভ টু ডু অ্যাট লিস্ট অ্যা মিসটেক অ্যাজ ইয়োর ফার্স্ট ডিউটি,
দ্যান, সাকসেস উইল বি বিউটি বিউটি!
(পারলে এটার সঠিক বাংলা আর হিন্দি করে দেখান তো!)


৮। রাজনীতি একটা দারুণ জিনিস, অনেক বড়ো একটা প্ল্যাটফর্ম…দেশকে সেবা দেবার জন্য। এই রাজনীতি ব্যাপারটা থাকে দুই জায়গায়। হয় ব্যক্তির রক্তে, নয়তো ব্যক্তির মগজে। এটাও খুব তীব্র একটা প্যাশনের জায়গা। তাই রক্তেও নেই, মগজেও নেই, তা-ও রাজনীতি করে স্রেফ ভাগ্যের জোরে সফল, এমন মানুষের সংখ্যা মাত্র দুই থেকে তিন পার্সেন্ট। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশে যাঁদের এই দুটোই আছে, তাঁদের অনেকেই রাজনীতিতে আসেনই না, অথবা এই দুটো জিনিসের গুরুত্বকে পাত্তাই দেন না। আর যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের অনেকেরই এই দুটো জিনিসের একটাও নেই। পলিটিকাল ক্রাইসিস বলতে আমি মূলত এই ক্রাইসিসটাকেই বুঝি।


৯। আপনি কতটুকু ভাববেন, কতটুকু নিয়ে ভাববেন, ম্যাচিউরিটি বলতে সেটা বোঝায় না। কারণ, চিন্তাভাবনার উপর আপনার নিজের তেমন কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আপনি কোথায় কতটুকু বলবেন, কী বলবেন, আর কতটুকু না-বলে শুধুই চুপচাপ পাশ কাটিয়ে যাবেন, সেই সেন্সকেই ম্যাচিউরিটি বলে। আবার ক্ষেত্রবিশেষে, ইচ্ছাকৃত কিছু ইম্যাচিউরিটি আপনি যদি দেখাতে না জানেন, যেমন বাবা-মায়ের কাছে সারাজীবনই ছোট্ট একটা বাচ্চা হয়ে থাকা, নিজের প্রিয় মানুষের চোখে অবুঝ সেজে থাকা, শিক্ষক আর বসদের কাছে কিছুটা বোকা সেজে থাকা, বাচ্চাদের সাথে বাচ্চামো করতে করতে নিজের বয়স ভুলে যাওয়া---তাহলে আপনার ম্যাচিউর হবার কোনও মানেই হয় না।


১০। একজন সাকসেসফুল পুরুষের পেছনে যদি একজন নারীর অবদান থাকে, তবে একটা তেতো সত্য হচ্ছে, একজন নষ্ট-হয়ে-যাওয়া পুরুষের পেছনেও অনেকসময় অবদানটা সেই নারীরই থাকে। সাকসেসফুল মানুষ পুরস্কার হাতে তাঁর সাফল্যের পেছনের নারীটির কথা বলেন বলে আমরা সেটা জানতে পারি। তবে ব্যর্থ মানুষের খবর তো আমরা রাখি না, তাই তাঁর পেছনের নারীটার ‘ভয়ংকর অবদান’য়ের কথা আমাদের কাছে অজানাই থেকে যায়। সফল মানুষ সভ্যতার ইতিহাস লেখে, আর ব্যর্থ মানুষ মানুষের ইতিহাস লেখে।