এই জীবনে ওই জীবন

এক।
জীবনটা নেয়, জীবন আর একটা দেয় যে দিয়েও…
সে-জীবন সুন্দর ভারি…শুধু আমরাই সুন্দর নেই!
কী হয়েছে কোথায়, জানি না তার কিছুই,
জানি শুধু এটুক, ভালো নেই আমি…
জানি না কী এক অসুখ হয়েছে…
ইদানীং প্রায়ই ভালো থাকি না…


মনোরাজ্যের সীমানাপ্রাচীরের শেষ প্রান্তে--
দিগন্তেও যে নেই, তাকেও
আমি পারি কি কিছু করতে আদৌ?
হয়তো এসব বলতেও নেই!


দুই।
স্মৃতি--
সুখেরই তা হোক,
কিংবা হোক দুঃখেরই কেবল,
পিছে সব সময়ই আসে কষ্ট খুবই!


কোনও একটা কিছু ‘দেবো’ বলেও
না-দেওয়াটা…আসলে যে কেমন,
কেউ তখনই বুঝতে পারে--
যখন অন্য কেউ তার জীবনে আসে,
তাকে কিছু ‘দেবো’ বলেও…দেয় না তা আর!


কত সহস্র ‘আচ্ছা, দেবো’…হায়,
হয় শত শতবার পুনরাবৃত্ত!
সে-ই ‘দেবো’তেই যায় রয়ে সে…
কে-ইবা রাখে তার খোঁজ পরে?


তিন।
লাগবে না আর কিছুই আমার!
একটা খাকিরঙা খামে উড়ে…
তুমিই নাহয় এসো চলে!
এ-কথা শুনে দেয় হুংকার মনটা তো…নাকি?
আহা, খুব বেশি কি নিয়েছি চেয়ে?


আচ্ছা, এবেলা থাক তবে!
শুধু আমার হাত দুটোকে ফেরত দিয়ো!
বুঝলে না তো?
এই দুটি হাত পূর্ণ হতে
লাগে যে প্রিয়…আর এক জোড়া!


চার।
সবুজ-শান্ত গ্রাম…
আধপাকা মেঠো পথ…
বাঁধানো পুকুরঘাট…
পুকুরের পাড়ঘেঁষা বিশাল দেহের লাল কৃষ্ণচূড়া…
আকাশ কালো, মেঘ বিষাদী…
ঝুউউউম বৃষ্টি, ফুঁসছে সাথে রাগে বজ্র…
পুকুরের জলে…বৃষ্টি পড়ে--তারই শব্দ!


বহু দিন পর বৃষ্টিভেজা স্নানের ক্ষণে…
ঘরের ভেতর থেকে ডাক পড়ে যায়:
বৃষ্টিতে একা ভিজছিস যে খুব…ঘরে আয় তুই…এখুনিই আয়…ঘরে ঢুকে পড়্‌!
ওদের কী করে বোঝাই বলো তো…
একা নই আমি, আমার সাথে…আছ যে তুমি!


পাঁচ।
বলছি শুনুন, উপহার আমায় দেবেন না আর!
বইগুলো যে দিলেন আমায়, সে-দেওয়ার মধ্যে…
আপনার নিজের কোনও ভালোলাগা নেই, আমি তো জানি!
তাই দিতে করছি বারণ।


যখন কোনও উপহার বদলায় হাত,
তখন দেয় যে মানুষ, নেয় যে মানুষ,
দুপক্ষের ভালোলাগাটা থাকতেই হয়…
কোনও এক দিক যদি না-থাকে সেখানে,
সে-উপহারের সত্যিই কোনও মানেই যে নেই!


এই যে আমার--
দিতে খুবই ইচ্ছে করে, তবুও কিছু দিই না কেন?
কেননা আমি জেনেই গেছি--
আপনার মনে…কেউ নই আমি,
এ হাত থেকে পাওয়া উপহার…তার মূল্যই কী-বা!


ভালোলাগা থেকে দিই যা-ই কিছু,
ফেরত দেওয়া দেখায় না ভালো, স্রেফ তাই হয়তো…
রেখে দেওয়া হবে! সে আমি ঢের বুঝেছি!
…কী দরকার!


আপনি আমায় দিচ্ছেন ঠিকই, তবে তা দিচ্ছেন--
আমার ভালো লাগবে বলে বা অন্য বিশেষ কারণে কোনও…
সেখানে আপনার ভালোলাগাটার ছিটেফোঁটাও নেই!


তা ছাড়া আমি জানিই তো খুব,
আপনার ওদিক থেকে…আমি যে কোথায় আছি!
তাই বুঝতে পারি, আমায় কোনও খড়কুটোও দেওয়ার মাঝে
আপনার স্বস্তি পাবার…কোনও মানেই তো নেই!


প্রিয় প্রাণের উপহারে
মনটা যতই নাচুক আনন্দে,
যা দেওয়ার মাঝে…দাতার নিজেরই কোনও নেই আনন্দ,
এমন উপহার নেওয়া যায় কি সেধে?


ছয়।
তিনটা আঁচড়ের দাগ…তীব্র!
বছর পেরিয়েছে…সেই কবেই!
এখনও দাগগুলি থাকার কথা নয়, তবু আছে।


আচ্ছা, খুব করে চেয়েছিলাম বলেই কি এগুলো মিলিয়ে যায়নি?
মন চেয়েছে, ওরা থাকুক!
না না…দাগগুলো ভালোবাসার নয়,
নয় আদরেরও!
দাগগুলো ছিল তাচ্ছিল্যের শুধুই!


মনে আছে তো? নেই হয়তো!
যে আঘাতে প্রেম থাকে না,
সে আঘাত কখনও থাকে না মনে!


মাঝেমাঝে ভাবি, এত কিছুর পরও কেন দেখতে ওদের
ভালো লাগে এত! ভাবি,
হোক তাচ্ছিল্যের…তবুও তো তার স্পর্শ যে আছে!


জীবন বুঝি…দৃশ্যমান জলে…অদৃশ্য ভেলায়…এভাবেই থাকে বেঁচে…শেষ অবধি!


সাত।
সকালের বৃষ্টিতে স্নানটা সেরে
উঠেছে গোটা নরম সূর্য!
রোদের ডানায় ভর করে সে
নিচ্ছে শুষে কত কত জল…
শুধু নেয় না শুষে
তারই জন্য হৃদমাঝে থাকা
বিস্তর যত অনুভূতি-জল!


আট।
এমনই তো হয়…
কিংবা হয়তো, এমন যে হয়ই হতে!
মনের ঘরের ঠিক কতটা
ক্রমেই নিয়েছে করে সে চুরি…
চা নিয়ে আসি যত্ন করে--
চা-পাতাটাই দিতে যাই ভুলে!
এ যে কেমন চা হয়ে যায়,
মনকে শুধাই…উত্তর দেখি
সে দিয়ে দেয়--
আজ চায়ের দাবি থাক না সরে!


নয়।
কী যে কী কথা হয়েছিল বলা,
থেকে গেছে মনে নিশ্চয়ই আজও!
সে-সব কথা মনে পড়ে গেলে,
হা হা হা হা শব্দ তুলে…
হাসাও হয় নিশ্চয়ই আজও…তাই না, বলো?


রোদেরা করে কেমন খেলা…
প্রকৃতির এই অপূর্ব রঙে…
দুপুরের উঠোন--ওতে রৌদ্র ওড়ে…
তোমারই জন্য মনটা জ্বলে, শরীর পোড়ে--
ছাই হয়ে যায় সব-সবটাই!
কত দিন হলো হয় না কথাও…
তুমি কি তবে আসবে না আর?


আসে না জবাব, জবাবের তবু আশায় যে থাকি!
মরি ভেবে আমি যার জন্য, তারই মনে থাকে অন্য মানুষ!
দেখা যায়…কী সুন্দর মানবজনম! আহা মরি…


দশ।
এই যে দেখি, লিখে না সবাই,
কিংবা সবাই-ই তো আর লিখতে পারে না…
মনের ভেতর কথা আছে যত, উঁকি দিয়ে যায়…
তার সবটা যায় না বলা…
চাইলেই মনের ভাব আছে যা,
হয় না বলা তার পুরোটা…
দিনের শেষে, সত্যি এসব ভালোরই ছুতো!


যদি সব মানুষ মিলে লিখে ফেলত অনায়াসে খুব…
যত কথা আছে মগজে মননে, যা কিলবিল করে দিবারাত্রি,
তা হলে বেশ ঝামেলাই হতো!


নানান মনের দারুণ দারুণ বৈচিত্র্যতে
ডুব দেওয়া যে যেতই না আর…
যা অন্যে লেখে, তা পড়বার সময় কারও থাকতই না তো!
তখন কে কার লেখা পড়ত তবে?


না, বলছি না আমি--লেখেন যাঁরা, মূলত অপাঠকই তাঁরা!
পড়েন তাঁরাও…তবু মনের যা কথা, তার সবটা
তাঁদের কলম পায় না যে খুঁজে মুহূর্ততে!


সব লেখকই…বই একটা লিখলে পরে,
কয়েকটা বই মাথায়ই থাকে, ওরা কখনও বেরোয় না তো!
সব কিছু যদি যেত লিখে ফেলা,
অন্য কারও যা-কিছু লেখা,
তা-কিছু পড়ার সময় সুযোগ থাকতই তো না!
না-পারা থেকে হোক ভালো কিছু…
সত্যি অমন যদি হয়ে যায়, তবে না-পারাটাই ভালো দিব্যি!


এই না-পারাটায় ভর দিয়ে চলে
মানুষ সবাই একে অন্যের মনের দেশে
সুখে আনন্দে কাটুক সাঁতার!


ভালোলাগায় আহা…সমরেশদের--
একের পর আর একটা বই
অন্য কারও যাক না হয়ে!
ভালোবাসায় আজ…শহরের কোণে কোলাহল-রাতে
একফালি ওই জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে-যাওয়া
আদুরে জ্যোৎস্নার মৃদু আলোতে
মনের সাথে একলা আড্ডার হাস্যরসে
হা হা শব্দে হুমায়ূন-সুনীল প্রাণটা খুলে এবার হাসুক!


চমৎকার এক সৃষ্টি দেখে
বিস্ময়ে আর মুগ্ধ হয়ে বলে যাক মন…
এত সুখে আর আনন্দেতে
মানুষের এই মন-মগজের কারখানাটা
এত এত কিছু, এমন কিছু…কেমন করে ধারণ করে!