এখন, মুহূর্তজন্মের প্ররোচনায়

ঘুম ভেঙে যখন আধো-ঘুমচোখে তোমার বুকে আশ্রয় খুঁজি,
তুমি তোমার বুকের উষ্ণ ওমে আমায় পোড়াও যখন,
তখন আমার ভীষণ ইচ্ছে হয় পাগল হয়ে যেতে!
আজকাল খুব কোলাহলের মধ্যে থাকি যখন,
তোমার সাথে সময় দিতে যখন কষ্ট হয়,
তখন মন খুব বিদ্রোহ করে ওঠে।
মনে হয়, যেন তোমায় বাসায় একা ফেলে দূরে ঘুরতে চলে এসেছি,
ভেতর থেকে আমারই এক সত্তা বলে ওঠে, বাড়ি চলো, বাড়ি যাব।


নিলে তো নিলেই, এভাবেই নিতে হলো? এভাবে নেয় কেউ?
সবার কাছ থেকে এভাবেই আলাদা করে নিয়ে গেলে চুপচাপ…
কেন করলে এমন? জানতেও পারিনি কখন এ অজানায় এসে গেছি…
আমার কি কোলাহলে যেতে নেই? থাকতে নেই নিজের মতো করে?
একা তো থাকিই, একাই তো থাকা হয়, কাউকে রাখি না পাশে…
তবুও কেন আজকাল কোলাহলেও বড্ড একা মনে হয় নিজেকে?
সারাক্ষণই তো তোমায় নিয়ে পড়ে থাকি,
ওতে কি হয় না তোমার? কম হয়ে যায়?
সব কিছু থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কোথায় লুকিয়ে ফেলতে চাও আমাকে?


খুব তো হয়েছ ভদ্রোচিত সভ্য প্রেমিক!
বলি, অসভ্যতা যত, তার সবটাই কি এক ওই আদরের বেলাতেই?
এবেলাটা নাহয় খানিকটা অবোধই হলাম,
তোমার কাছে একফালি ভালোবাসা হাত পেতে নেব,
নাহয় কেঁদেকেটে একাকার করে ভিজিয়েই দিলাম এই বুকের উঠোন…
ওবেলাতে কিছুটা হলেও নাহয় সাধকই হব!
সাধনা করব ভালোবাসার কিংবা প্রেমের…
আজ আর সেই পুরনো শূন্যতাটুকু নেই,
নেই আর অপূর্ণতার আক্ষেপ কোনও,
আজ যে বিস্রস্ত হয়েছে আমার বোধে আমারই সত্তা, যখন
তোমার ভালোবাসার দুর্বোধ্য যত ভাব কিংবা আবেগ এল!


একদিন দিনক্ষণ দেখে খানিকটা বেশি সময় নিয়ে কথা পেড়ো তো আমার সাথে!
চেখে দেখো তো তোমার অবাধ্য ভালোবাসায় ক্লান্ত হই কি না?
অথবা আর একটু বেশি সময় ধরে থেকে যেয়ো তো আমার গভীরে, যেভাবে থাকতে তুমি ভালোবাস!
একদিন একটু ভালোবাসার কথা শুনিয়ো,
নাহয় শুনিয়েই দিয়ো ভীষণ যাচ্ছেতাই একটা কিছু!
মুখে যা আসে বলে ফেলে দেখো তো তোমার কথায় আমার বিতৃষ্ণা ধরে কি না!
নাকি ওসব নিছক ফাঁকাবুলিই কেবল…আজকাল যা বলি?


ইদানীং আরও অনেক একা হয়ে গেছি,
নিজেকে আগের চেয়ে মনে হয় খানিকটা বেশিই গুটিয়ে নিয়েছি,
অথচ একে আমার একাকিত্ব মনেই হয় না কখনও!
এই একাকিত্বটা কষ্ট দেয় না,
সে যে চুপ করে মনের দরজায় এসে
তোমার বার্তা দিয়ে যায়! কী যে ভালো লাগে, সত্যি!
এই আমিটা ওই তুমিটার চোরাবালিতে আটকা পড়েছে!
এই যে আমায় তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছ তোমার অতল গহ্বরে,
আমি কী করে পাব বলো এখান থেকে ছাড়?


ভালোবাসার প্রসাদও যে তোমার বুকে ছাড়া আর কোথাও পাই না আমি,
ওখানে তোমার বুকে যতটা রেখেছ, ততটা আর কোথায়ই-বা মেলে, বলো!
ধনীরাই কৃপণ হয় কিংবা কৃপণেরাই ধনী হয়…শুনেছি।
বিন্দুবিন্দু ভালোবাসায় তোমার ওই বুকের বিস্তীর্ণ জমিনে
ভালোবাসার সিন্ধু গড়েছ, বুঝি এজন্যই তুমিও ভালোবাসায় কার্পণ্য কর!
বলি, যে-দিন আমি থাকব না আর, সে-দিন অত ভালোবাসা কাকে বিলোবে?
কে নেবে এভাবে চেয়ে-চেয়ে? সে দায়ই-বা কার? এতটা নির্লজ্জ আর কোথায় পাবে?
কে থাকবে হাত পেতে? মাথা নত করে তোমার ওই ভালোবাসার কাঙাল হবে আর কে?
তখন কাকে এতটা দেবে, শুনি?
হাজারো খুঁজেও পাবে কি এমনই সমর্পিতা আর এক?


খুঁজোগে যাও এতই যখন সন্দেহ!
ভালোবাসা দেবার মানুষ না-পেলে মূল্যই কী-বা তার?
ও যে পড়ে থেকে-থেকে মরচে ধরে অকেজো হয়ে যায় একটাসময়!
মনে আছে তোমার?
সেই প্রথম সকালের কথা?
যে-দিন প্রথম খুব করে আমার গভীরে প্রবেশ করেছিলে?
এই ভেতরটা যে-দিন প্রথম লন্ডভন্ড হতে শিখল?
সমস্ত ব্যথা, যন্ত্রণা, আক্ষেপ, স্মৃতি সবটা উপড়ে ফেলে যে-দিন প্রথম
কেবলই নিজেকে আমার গভীরে প্রতিস্থাপন করেছিলে?


মনে আছে সে-দিনের কথা?
আমিও কতটা বোহেমিয়ান হয়েছিলাম…আহা সে-দিন!
সকাল থেকে সন্ধে অবধি আমার অতলে তোমার মেরামতের কাজ চলছিল প্রথম সেইবার…
অমন এলোমেলো করে একটা আঘাত দেবে?
সবটা ভেঙেচুরে পুড়ে ছাই হয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাক,
আমার ভালোবাসার আর কিছুই অবশিষ্ট না থাকুক তোমার মাঝে!
দেবে অমন করেই একটা আঘাত?


দাও না কেন গো? তোমার বুঝি করুণা হয়?
ভিখিরিকে আঘাত করতে করুণা হয় তোমার?
নাকি সাহসের অভাব? কিংবা প্রকাশিত হয়ে যাবার দ্বিধা?
নাকি ভিখিরিকে আঘাত করে নিজে নিচে নামতে ভয় পাও?
এতটা করুণা আমার উপরেই কেন?
হয়তো বিশাল ঘটা করে ভালোবাসো, নয়তো মহাপ্রলয় ঘটিয়ে
ভালোবাসাটা এবার উপড়ে ফেলে কেটেছিঁড়ে আমাকে যাচ্ছেতাই করে দাও!
আমি যাচ্ছেতাই হতে চাই…
আমাকে নষ্ট করতে এত কীসের করুণা?
মানুষ তো এমনই হয়…
নাকি তুমি মানুষই নও…মানুষের বেশে অন্য কেউ?