এসো, তবু থেকে যাই

আমাদের প্রেমের বয়স এখনও খুব অল্প, তাই
এত সকাল সকালই বলে দেওয়া যায় না, ‘অনেক হয়েছে, এবার তবে আসছি!’।
আমি তোমার নোংরা কাপড়টি কখনও কেচে দেখিনি কতটা ময়লা জমে ওতে।
কখনও তোমার হাত-পায়ের নখগুলো কাটতে হয়নি আমাকে।
কখনও তোমার প্রচণ্ড মাথাব্যথায় আমার আলতো হাতের পরশে মাথার তালুতে
কুসুম গরম তেল আর লেবু মেখে বলিনি কখনওই, ‘এবার একটু চোখ বুজে শুয়ে থাকো।’।


দিনের পর দিন, এক মুহূর্ত থেকে আর-এক মুহূর্তে,
তোমার প্রতিটি অবসরে তোমার ওই ল্যাপটপের সামনে একঘেয়ে পড়ে-থাকা,
আমাকে তো সহ্য করতে হয়নি তা-ও।
প্রতিটি বেলায় যখন তুমি বাসায় থেকেও কাউকে সময় দিচ্ছ না,
খাবারের টেবিলে তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে অবশেষে
বিরক্তি আর একবুক কষ্ট-যন্ত্রণা মেখে আমাকে খেতে শুরু করতে হয়নি কখনও,
---তোমার বাসার লোকজন যেভাবে করে যাচ্ছে।


তোমার কাপড়, তোমার বিছানা, তোমার বাথরুম, তোমার অগোছালো বইয়ের ধুলো,
এসবের কিছুই কখনও পরিষ্কার করিনি আমি।
তুমি অফিস থেকে ফেরার পর তোমার গায়ে ঠিক কতটা ঘামের গন্ধ থাকে,
সে-ও ওরাই বেশ ভালো জানে।
জানো, আমি এখনও ঠিক করে তোমার গায়ের গন্ধটাই চিনলাম না!
তোমার খাবার, কী খেতে তুমি ভালোবাসো, কোনটা তুমি ভালো খাও,
কোনটা তোমার শরীরের জন্যে খারাপ, কোন খাবারটা খাবার সময়
অনেক অপছন্দ আর অনিচ্ছা নিয়েও খেয়ে ফেলো ঠিকই,
এসবের কিছুই আমি এখনও জানি না।


প্রতিদিন অফিসে যাবার বেলায়, ছুটির দিনে বাইরে বন্ধুদের সাথে আড্ডায়,
বাজারে করতে গেলে, সেলুনে যাবার সময়, অফিসে, পার্টিতে কিংবা
পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানে যেতে তুমি ঠিক কোন কাপড়টা পরবে,
সেগুলোর কোনওটাই তো আগে ভাগে ঠিক আমাকে করতে হয় না।
তোমার যখন হঠাৎই অসুখ করে, তখন তোমার মায়ের মতো
তোমার প্রতিমুহূর্তের খবর রাখতে কখনও কিছুক্ষণ পর পর
এটা ওটা নিয়ে তোমার রুমে আমি কখনও ছুটিই তো নি!


তুমি কি বলতে পারো, এতটা অপারগতা নিয়েও আমি কী করে
তোমাকে দিনের পর দিন ভালোবাসি বলে যাই?
তুমি কি জানো, তোমার প্রতি রাগ দেখাবার,
বিরক্তি তুলবার কিংবা কথায় কথায় তোমার বকা শুনে চলে যাবার
সাহস অথবা যোগ্যতা আমার সত্যিই নেই?


এসব কে বলে, বলো তো?
কে অতটা অধিকারের সুরে বলতে পারে, ‘অনেক হয়েছে, আর সহ্য করছি না!’?
আমি তোমার কে? আমি তোমার কতটা দেখেছি? সহ্যটা আদৌ করেছি কি?
কতটা জানি আমি তোমার? কী করেছি আমি তোমার জন্য?
কতটা সয়েছি তোমাকে ওভাবে, ওরা সবাই যেভাবে সয়ে যাচ্ছে প্রতিদিনই?
এর চেয়ে বরং তোমার ওই ড্রাইভারটাই তোমাকে আমার চাইতে বেশি ভালোবাসে!
সে তো আর আমার মতো দিন-রাত্রি বলে বেড়ায় না ‘ভালোবাসি ভালোবাসি...’,
কিন্তু ঠিক ঠিকই সময়ের আগে সকল অনিশ্চয়তা আর দুর্ঘটনা পার হয়ে
তোমায় অফিসে পৌঁছে দেয়।


বিরক্তিটা এত সহজেই আসে না গো!
এত সহজেই বলে ফেলতে নেই---‘থাকব আজীবন!’, ‘গেলাম তবে!’…এসব কথা।
এত সহজেই কথায় কথায় তর্ক জুড়েই-বা দেওয়া যায় কি?
এত সহজে হয় কখনও প্রতিটি উত্তরের পিঠেই প্রত্যুত্তরটা?
যে ভালোবাসাটা আমি বাসি, বাসতে সে তো সবাই-ই পারে!
যখন তখন আমিই বরং বড্ড বেশি জ্বালাই, একরোখা হই মাঝে মাঝেই,
তোমার ওদিকটাতে কী হচ্ছে না হচ্ছে, অত ভাবনা আমার থাকেই তো না,
আমি যে কেবল আমারটুকুনই আদায় করতে চাই!


কখনও সখনও, যখনই এসব ভাবনা মনে এসে যায়,
তখন বড্ড বিচ্ছিরি একটা পোকা মনে হয় নিজেকে,
যে কেবলই খাদ্যের সন্ধানে বেঁচে থাকে রোজ।
আমাকে তুমি একটুও ছাড় দিয়ো না ভুলেও কখনও,
কথার পিঠে ঠিক ঠিকই হাজারটা কথা শুনিয়ে দিয়ো!
তবুও বরং একটু তো কথা বলবার থাকবে আমার,
---আর যা-ই হোক, তোমার কথা আমি শুনেছি ঠিকই!