কলির স্বপ্নগাথা

 পৃথিবীর সমস্ত অপাত্রে ফেলা
অহেতুক অকারণ শুদ্ধতম ভালোবাসা কিংবা প্রেম--
তীক্ষ্ণ রৌদ্রের রুক্ষতায়
চিরতরে শুষে যাক, নিভে যাক।
শরতের আকাশ, মৃদুমন্দ বাতাস--
সীমান্তের বাধা, সীমা ছাড়িয়ে...
যে সুখটুকু বাইরে থেকে কষ্টের মত দেখায়,
ওতে মিশে-মিশে...আরও, আরও বিস্তৃত হয়ে যাক চারিপাশে!
 
বর্ষার বারিধারা--
যে কষ্ট বাইরে থেকে সুখের মত দেখায়,
সে কষ্টটুকু ধুয়ে দিয়ে
ভালোবাসা--বিচ্ছেদের,
অমসৃণ মাদকতায়
এই হেমন্ত পেরিয়ে
অনন্তে মাতাক...অনন্তকাল।
 
সে সুর কানে বাজে শুধু, আর
সে হাসি আঁখিতে ভাসে,
ওগো যতো চাই তারে ভুলে যেতে হায়,
ফিরে-ফিরে ততো আসে!
আমার নয়নপাতে সে দুটি তারা,
যেন রয় চেয়ে, রয় বেদনহারা।
যতো বলি, ওরে, বাঁধবো না ডোরে,
আরও ভালোবাসে, ততো ভালোবাসে।
 
বুকেতে আমার পুলক জাগে,
নয়নে ভরে জল,
আমি ভুলতে যে তারে আপনি মরি,
করি নিজেরই সাথে ছল।
ব্যথার সাথে কোন সে বাঁধনে,
বেঁধেছি হে তারে অজানা সাধনে,
বুঝি দুঃখে শুধুই মিশে আছে সে,
তাই থাকি দুঃখ-আশে।
ওগো যতো চাই তারে ভুলে যেতে হায়,
ফিরে-ফিরে ততো আসে!
 
কখনও ভীষণ ইচ্ছে করে,
আদর্শ আর বিবেক ভুলে সকল বাধার পাহাড় ঠেলি,
বুনো উল্লাসে মাতাল হয়ে মনের সকল ইচ্ছে মেলি!
এরপরেতেই হয় যে মনে, যার জন্যই এতকিছু--ভালোবাসা আর প্রার্থনা-প্রেম,
সংস্কারকে সরিয়ে দূরে মাতব আমি? মন্দে তারই? কেমন করে!
নিজেই যদি পথটা হারাই, অন্যকেই বা ডাকি কীসে?
ইচ্ছেকে তাই দিই যে ছুটি--নিজের সাথে নিজেই বাঁচি--চিরন্তনের মত!
 
এই কল্পনার শহর--বড্ড প্রিয়,
বড্ড প্রিয়--প্রিয় কোনও কাল্পনিক ভালোবাসার মত।
তবু এই শহরেই, কখনও আমার দম বন্ধ হয়ে আসে...
অচেনা লাগে সব; মনে হতে থাকে, এ শহর অন্য শহর, কিংবা এ আমি অন্য আমি!
অসহায় সব আবেগগুলি চারপাশ থেকে বুক চেপে ধরে...কষ্ট গিলে কোনওরকমে পালিয়ে বাঁচি!
কখনও ভাবি আপনমনে, সমস্তটুকু ভালোবাসাকে কোনও একদিন মিথ্যে করে--ভালোবাসার যতটুকু দায়--চুকিয়ে দেব! এমনি করেই নিজের ওপর শোধটা নেবো!
সবকটা পথ বন্ধ করি নিজে-নিজেই, অকারণেই খুঁজতে থাকি--কোথায় পালাই, কোথায় পালাই!--সে পথটা আর পাই না খুঁজে!
যখন দেখি, সম্পর্কের পুরো শরীরের শেকল আছে, কোনও তালা নেই, টানটা তখন ঠিকই বুঝি--ভীষণভাবেই!
বন্ধ দরোজা--একটাসময় হয়তো ভাঙে--শেষ আঘাতের প্রচণ্ডতায়!
যে দরোজা খোলাই থাকে, সে দরোজা দারুণ বাঁধে--ওই শক্ত বাঁধন ভাঙে কীসে?
এলোমেলো হলে মন কতকিছু বকে যায়, যায় বলে--আমার শহর তবু কোন যেন ধারায় চলে...
 
রক্তে আমার নিরবধিতা আছে মিশে নিবিড়ভাবে,
বিরিয়ানি পেলে তাই গোগ্রাসে নিই না--পান্তাকে ছুঁড়ে ফেলে...
আলো পেয়ে উচ্ছ্বাসে আঁধারকে সরিয়ে উৎসবে মাতি না।
থাকুক যতোই বেশে, বুঝেছি এখানে এসে, সবই একই--দিনশেষে!
 
ভাবি আমি খুব করে,
যে ভালোবাসা ভেসে চলে কল্পলোকে, ওকে নিয়ে বেড়াব ঘুরে এই শহরে...কোনও একদিন।
প্রিয়, সাথে প্রিয় ভালোবাসা--এ দুইয়ের ঘ্রাণে এ শহর বুঁদ হয়ে রবে নিবিড় মুগ্ধতায়!
সে মুগ্ধতা ছোঁবো, মাতাল হবো, সেই পুরনো সময়ের মত...
শহুরে গলির কোনও এক অচেনা কোণে কাটবে রাত, বুদ্বুদ হয়ে জমবে যতো কথা-অকথার মনের শরীর।
ঠিক আছে সবই, তবু হয়েছে কী জানো,
কল্পনার রাস্তা ধরে যে প্রেমটা ঘোরেফেরে, সে ভালোবেসেছিল কি না, ভালোবাসে কি না, ভালোবাসবে কি না--কে জানে!
যদিও জানি, আমার বিশ্বাস করা না-করায় কিছু এসে যায় না, দেখেছি তবু, অবিশ্বাসেই ইদানিং বড় ভাল থাকি!
পৃথিবীর যতো ভালোবাসা আছে, সবার ব্যাকরণ আমি কী জানি!...ছিঃছিঃ ভায়া, ভাবছ কী যা তা!
আসলে শুধু বলছি আমি, কল্পনার ভালোবাসা আর বাস্তবের ভালোবাসা--সেতু ভিন্ন, ভিন্ন নিয়মে পার হতে হয়--এক ভেবে নিয়ে হয়ো না ছিন্ন!
 
আমি জেগেই থাকি...সারা দিনরাত, আর কাল্পনিকের--আচমকা জাগা!
দ্বৈত বলে ফুঁসে, বছর ঘুরে যে কিনা জাগে দুচারবার,
তার জন্য কেন বাপু প্রতীক্ষাতে জেগেথাকা?
হেসে বলি আমি, জেগে রই আমি, ঘুমুতে পারি না বলে।--এ আমার ইচ্ছে, এ আমার স্বাধীনতা।
সে থাকে ঘুমিয়ে, কিংবা ওঠে হঠাৎ জেগে মনের ভুলে।--সে তার ইচ্ছে, সে তার স্বাধীনতা।
ভালোবাসা মানে বুঝেছি শুধু--স্বাধীনতায় বাঁচতে শেখা, স্বাধীনতায় বাঁচতে দেয়া, আর কিছু নয়।
তবে যদি সে স্বাধীন বাঁচা পাপ ঘিরে বাঁচে--তবে তা অন্য হিসেব!
 
চুপ করে শোনে...হঠাৎ হেসে দ্বৈত বলে,
চোখের সামনে দেখিস যাকে, বাঁচিস যাকে ভালোবেসেই--তাকেই কেন কল্পনাতে আসিস নিয়ে বারেবারে?
কান্না গিলে হাসি মেলে বলি আমি,
কোথাও যাকে যায় না পাওয়া এ বাস্তবে, কল্পনাতে পেয়ে তাকে ইচ্ছেমত--জীবনটাকে মাত করে দিই! বুঝলে, বোকা?
ফোটা ফুল তো ফুটেই থাকে, হয় না কলি কোনও যাদুতেই,
কলি হয়তো মৃত্যু টানে কলি হয়েই--তবু চিরকালের নীরব আশা ওর বুকেতে--মরার আগেই একটু ফুটে...ফুলটা কেমন, দেখতে পেতেম!