কাঁচা খেজুর

তখন আমার বয়স কতই-বা হবে? সাত কি আট, বা একটু বেশি। আমাদের পাশের বাড়ির একজন সৌদি আরবে থাকতেন। উনি আমার ছোটোবেলার বান্ধবীর বাবা। যেহেতু পরিবারের কর্তা সৌদি থাকতেন, সেহেতু ওদের যথেষ্ট টাকাপয়সা ছিল। বিদেশ থেকে নানান দামি জিনিসের পাশাপাশি চকলেট, খেজুর, এবং ওরকম বিভিন্ন খাবার পাঠাতেন ওর বাবা। লোক মারফত প্রায়ই পাঠাতেন, নিজে এলেও সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন।


একবার ওর বাবা বিদেশ থেকে এসেছেন। সাথে এনেছেন নানান কিসিমের খাবার। আমার বান্ধবীর নাম ছিল রানু। সেদিন দুপুরে আমাদের ঘরে শুধু কচুর লতি রান্না হয়েছে। মায়ের হাতে বাজার করার মতো টাকা থাকত না বলে পুকুরপাড়ে বিনা যত্নে বেড়ে-ওঠা কচুর সারি থেকে কচুর লতি খুঁজে খুঁজে এনে সেটাই রান্না করা হতো প্রায় সময়ই। কিছুদিন পর পরই এরকম লতি রান্না করা হতো, তাই এই লতির উপর বেশ ক্ষোভ ছিল আমার। আমি এই দুনিয়াতে কচুর লতি জিনিসটা ভয়ংকর রকমের ঘেন্না করতাম, করি; তখনও, এখনও।


তো সেদিন কচুর লতি রান্না হয়েছে বলে আমি ভাত খেতে চাইছিলাম না, আর কান্নাকাটি, ধুপধাপ, চেঁচামেচি করছিলাম। আমাকে শান্ত করতে না পেরে মা আমার চুল ধরে টেনে নিয়ে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছিল। এত বেশি মেরেছে যে মার খেয়ে আমার পিঠে রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল।


আমাকে পেটানোর পর মা অন্য রুমে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কাঁদল। সেদিনের সেই আড়াল-কান্নায় কতশত অভিযোগ খোদার দরবারে মা জমা দিয়েছিল, তার সঠিক হিসেব আমরা কেউই কখনও জানতে পারিনি। আমাকে মায়ের পেটে রেখেই সংসারের একগাদা দায়িত্বের ভার আর পাঁচটি ক্ষুধার্ত মুখে ভাত তুলে দেবার সমস্ত দায় মায়ের একলা কাঁধে তুলে দিয়ে সেই কবেই বাবা মারা গেলেন। মরে গিয়ে নিজে একা বেঁচে গেলেন, আর ওদিকে ফেলে রেখে গেলেন পাঁচ-পাঁচটি মুখ এবং গোটা সংসারের ঘানি আমার মায়ের হাতে।


সেদিন এত মার খাওয়ার পরও আমি জেদ করে ভাত খাইনি। আমি তখন অনেক ছোটো, এদিকে পেটভর্তি ক্ষুধা। দারিদ্র্য বোঝার অত বয়স আমার তখনও হয়নি। না খেয়েই বাড়ির সামনে পুকুরপাড়ে বসে ছিলাম। দেখলাম, কিছুক্ষণ পর রানু আসছে। দেখি, ও খুব মজা করে কচকচ করে কাঁচা খেজুর খাচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করায় সে বলল, ওর বাবা এটা এনেছেন বিদেশ থেকে। আমি ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কিন্তু মুখে কিছুই বলছিলাম না। রানু কী ভেবে যেন একটা খেজুরের অর্ধেক আমাকে খেতে দিল। আমি খুশিতে ক্ষুধাপেটে গপাপপ ওটা খেয়ে এত মজা পেয়েছিলাম যে ওর কাছ থেকে আরও একটু চাইলাম, কিন্তু সে আর দেয়নি।


আমি একদৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললাম, ‘আমি ভাত খাব না, আমাকে একটা খেজুর দিতে বলো রানুর আম্মুকে। ওদের অনেক এনেছে।’ এদিকে আমার মা তো কখনওই কারও কাছ থেকে কিছু চাইবেই না! মরে গেলেও না! সেলাইমেশিন চালিয়ে পাঁচ সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কিংবা আধপেটে থেকে যতটুক চলা যায়, মা ঠিক ততটুকই চলত। আমাদের মা বড়োই শক্ত ব্যক্তিত্বের মানুষ! দরকার হলে না খেয়ে মরে যাবে, তবুও নিজের ব্যক্তিত্ব খুইয়ে কারও কাছে হাত পাতবে না।


এদিকে আমিও নাছোড়বান্দা! মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গড়াগড়ি করে কাঁদছিলাম মাত্র একটা কাঁচা খেজুরের জন্য! আসলে আমি তো ছিলাম অবোধ ছোটো মানুষ, আমার ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছিল খেজুরটা! মা তখন বিরক্ত আর অনেকটা বাধ্য হয়ে রানুর আম্মুর কাছ থেকে আমার জন্য একটা খেজুর চাইল। ওর আম্মু জানাল, খেজুর নাকি সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়ির বাচ্চারা সবাই মিলে সব খেয়ে ফেলেছে। মা তখন ওখান থেকে এসে আমাকে বোঝাল যে খেজুর শেষ। সেদিনটা কোনওরকমে পার হলো।


পরের দিন। আমি পুকুরপাড়ে গিয়ে দেখি, রানু আবার কাঁচা খেজুর খাচ্ছে মজা করে করে। ওর সামনে একটা বাটিতে অনেক খেজুর। আমি লোভ সামলাতে না পেরে ওর কাছে গিয়ে একটা খেজুর চাইলাম। না, ও আমাকে অতগুলি খেজুর থেকে মাত্র একটা খেজুরও দিল না। বরং সেখান থেকে উঠে চলে গেল। আমি দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বললাম, ‘মা, ওদের অনেক খেজুর আছে, তুমি আমাকে একটা দিতে বলো। একটা না দিলে রানুর কাছ থেকে অর্ধেক হলেও দিতে বলো। রানুর বোন রুনাও অনেক খেজুর খাচ্ছে। মা, ওদের তো অনেক খেজুর, আমাকে একটা দিতে বলো।’


সেদিনও আমি আবার মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছি খেজুরের জন্য। মা বুঝতে পেরেছিল যে ওদের ঘরে আসলে কাঁচা খেজুর আছে, কিন্তু আমাকে দেবে না। আমি যতই খেজুর চাইছি, মায়ের উদাসীনতা ততই বাড়ছে। আর মায়ের উদাসীনতা যতই বাড়ছে, আমার কান্নাকাটির মাত্রা ততই বাড়ছে। আমার ওরকম চেঁচামেচি দেখে সেদিনও মা আমাকে আরেক দফা পিটাল।


আহা, সে কী মার! মা আমাকে মারছে, আর পাগলের মতো নিজেই কাঁদছে। মায়ের চোখে রাগ ছিল না, কষ্ট ছিল, মৃত স্বামীর প্রতি ছুড়ে-দেওয়া হাজারো প্রশ্ন ছিল। এদিকে আমাকে অমন মারের হাত থেকে বাঁচাতে আশেপাশের অনেকেই ছুটে এল। আমি তা-ও চিৎকার করে করে খেজুর খেজুর বলে কাঁদছি। খেজুর আমার লাগবেই! একটা মাত্র খেজুর, একটা না হলে অর্ধেক হলেও লাগবে আমার!


রানুরাও জানতে পেরেছে আমি কেন কাঁদছি, আর মা আমাকে কেন মারছে। তবুও একটা খেজুর বের করে দেয়নি ওরা। সেদিন আমি রাগ করে সারা দিন উপোস ছিলাম। না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে।


মধ্যরাত। মা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছিল। মারের চোটে আমার পিঠে নীল নীল দাগ হয়ে গিয়েছিল। আধো ঘুমের ঘোরে ভাত খেতে খেতে খেয়াল করলাম, মা আমার পিঠে, গালে, হাতে, পায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চুমু খাচ্ছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার জখমগুলো পরখ করছে, আর তেল মালিশ করে দিচ্ছে। জখমগুলোতে হাত বোলাতে বোলাতে হঠাৎ করেই মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠল। সেই মধ্যরাতে ক্ষুধার অথই সমুদ্রের অতলে ডুবে-যাওয়া একটি সংসারের নোঙর কোনওমতে ধরে মা কেঁদে চলেছে নীরবে। সেই ছোট্ট আমিও সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম মায়ের ওরকম লুকিয়ে লুকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদার কারণটা। সেই মুহূর্তের পর থেকে আমি যেন বড়ো হতে শিখে গেলাম।


তার পরের দিন রানু রুনা দুই বোন মিলে পুকুরপাড়ে বসে আবার কাঁচা খেজুর খাচ্ছে। কিন্তু সেদিন আমি রানুর কাছ থেকে খেজুর আর চাইনি। মায়ের কাছেও করিনি খেজুর খাবার আবদার। সেই গত দুইদিনে আমার মনের বয়স বেড়ে গিয়েছিল আমার শরীরের বয়সের তুলনায় অন্তত তিন গুণ।


এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেছে। আমি এখন বড়ো হয়ে গিয়েছি। এতগুলি দিনেও কী জানি এক চাপাকষ্ট থেকে আমি কখনও কাঁচা খেজুর মুখে তুলে দেখিনি। হঠাৎ সেদিন বাজার করতে গিয়ে দেখি, কাঁচা খেজুর বিক্রি করছেন এক বৃদ্ধ চাচা। কড়া রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকক্ষণ ধরে একদৃষ্টে ঠায় তাকিয়ে আছি খেজুরের দিকে। সেই একমুহূর্তেই আমি সেই সাত-আট বছর বয়সের জীবনে ফিরে গিয়েছি যেন। কত কথা যে মনে পড়ছে! চোখের কোণে এক এক করে ভেসে উঠছে ছোট্টবেলার সেই পুকুরপাড়, রানুর হাতে খেজুরের বাটি, অর্ধেকটা হলেও খেজুর খেতে-চাওয়া ছটফট-করা ক্ষুধাতুর আমি, আমাকে খেজুর খাওয়াতে না পারার বিষাদে ভরা মায়ের ব্যথাহত দুটো চোখ, দরজা বন্ধ করে ডুকরে ডুকরে কেঁদে-ওঠা মায়ের দুচোখের জল!


বিক্রেতার কাছে গিয়ে বেশ কিছুসময় ধরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলাম কাঁচা খেজুরগুলোকে। খেয়াল করলাম, আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। সামনের সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। ইচ্ছা করছে, পুরো দুনিয়ার সবই তছনছ করে দিয়ে ওই জনারণ্যে খেজুরগুলোকে বুকের ভেতর চেপে ধরে বুক ফাটিয়ে হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে উঠি। কিন্তু আমি যে কারও সামনে কাঁদতে পারি না। মায়ের কাছ থেকে আমি লুকিয়ে কাঁদতে শিখে নিয়েছিলাম সেই ছোটোবেলাতেই।


দাম জিজ্ঞেস করলাম খেজুরের। উনি বললেন, ‘আটশো টাকা কেজি।’ আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন, ‘আম্মা, আপনি নিলে আপনার জন্য দাম কিছু কমানো যাবে।’ আমি সাথে সাথেই বললাম, ‘না, দাম কমানো লাগবে না। আপনি আমাকে পুরো এক কেজিই দিন।’ আমি বরাবর আটশো টাকা গুনে গুনে সেই চাচাকে দিয়ে, লালচে রঙের তরতাজা এক কেজি কাঁচা খেজুর নিয়ে বাসায় ঢুকেছি।


রুমে ফিরে দরজা-জানালা বন্ধ করে হাঁটুগেড়ে বসে ওই খেজুরগুলোকে আপন রক্তের ভাই কিংবা বোনের মতো বুকের ভেতর সজোরে চেপে ধরে প্রায় এক ঘণ্টা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কাঁদলাম ডুয়েল-স্পিকারে ফুল-ভলিউমে গান ছেড়ে দিয়ে। সবাই ভেবেছে, আমি হয়তো রুমের মধ্যে গান ছেড়ে নাচছি। সেদিন লোকের চোখে যা ছিল আনন্দ, প্রকৃতপক্ষে তা ছিল আমার বিষাদযাপন! কোনটা যে দুঃখ, আর কোনটা যে সুখ, এক নিজের মন বাদে আর কেউ তা জানতেই পারে না কখনও।


আমি সেই খেজুরগুলোকে বুকের সাথে চেপে ধরে অনবরত কাঁদছি আর ভাবছি---এই সেই কাঁচা খেজুর, যে খেজুরে আমার দারিদ্র্যমাখা শৈশব লেপটে আছে। এই সেই কাঁচা খেজুর, যার পরতে পরতে, চামড়ায় চামড়ায়, কণায় কণায় আমার শৈশবের ক্ষুধার যন্ত্রণা মিশে আছে। এই সেই কাঁচা খেজুর, যার প্রতিটি কোষে কোষে আমার মায়ের অসহায় দুচোখের জল জমে আছে। সন্তানের মুখে একটা, মাত্র একটা লাল কাঁচা খেজুর তুলে দিতে না পারার আক্ষেপ, ব্যর্থতা, যন্ত্রণা, বিতৃষ্ণায় ঠাসা এই সেই রক্তরঙা কাঁচা খেজুর!


খেজুরগুলোকে বুকের সাথে লাগানো অবস্থাতেই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে মাকে কল দিলাম। ওপাশ থেকে ‘হ্যালো’ শুনতেই আমি উত্তেজিত হয়ে গড়গড় করে বলতে লাগলাম, ‘মা, জানো, আমি আজ গোটা এক কেজি কাঁচা খেজুর কিনেছি। ঠিক ওরকম লাল লাল কাঁচা খেজুর! সব খেজুর একা আমিই খাব। বাড়ি যাবার সময় তোমার জন্যও কিনে নিয়ে যাব এক কেজি। তুমি একাই এক কেজি খেজুর খাবে। গপাস গপাস করে খাবে, যত পারো, তত খাবে, মা! তুমি যত চাইবে, তত খাওয়াব তোমাকে!’ খেয়াল করলাম, এসব বলতে বলতে হঠাৎ আমার গলা ধরে আসছে। কেমন জানি আর কথা বলতে পারছিলাম না।


ফোনের ওপাশে মায়ের লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলাম। হয়তো মায়ের চোখের কোনা বেয়ে টপ টপ করে জলও গড়িয়ে পড়ছে। বুঝলাম, সেদিনের মতো আজও মা উদাস হয়ে গেছে। মা এখন খুব অসুস্থ। শুধু কথাটা বলতে পারে। অসুস্থতা মাকে কাবু করে রেখেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। অবশ্য জীবন আমার মাকে নুইয়ে দিয়েছে সেই বহু বহু কাল আগেই। সেই স্তিমিত জরাজীর্ণ জীবনের ভার মা বয়ে চলেছে এখনও।


জীবনযুদ্ধের যে সম্মুখযোদ্ধা জীবনের কণ্টকপূর্ণ বন্ধুর পথে একাই আজীবন দৌড়েছে অবিশ্রান্ত, সেই আমার মা এখন নিজের পায়ে হেঁটে ঘরের সামনের উঠোনেও যেতে পারে না। যে মানুষটি পেটভর্তি ক্ষুধার জ্বালায় ভাতের ফেন আর পানি গোগ্রাসে গিলেছে দিনের পর দিন, সেই আমার মা এখন মুখে দুমুঠো ভাতও গিলতে পারে না। আমার মা এখন তেমন কিছুই খেতে পারে না। বার্ধক্য, অসুস্থতা। আসলে বার্ধক্য নয়, অসুস্থতা। দারিদ্র্যের সাথে ক্রমাগত লড়াই আমার মাকে শেষ করে দিয়েছে। এখন শুধুই প্রাণটা আটকে আছে কোনওমতে। আমার মা যখন খেতে পারত, তখন খেতে পায়নি। এখন খাবার আছে, কিন্তু খেতে পারছে না। আহারে জীবন আহারে জীবন!


আমার খুব মাকে দেখতে ইচ্ছে করছে, এখান থেকে একটুকরো খেজুর মায়ের মুখে তুলে খাওয়াতে ভীষণ মন চাইছে। কোথায় যেন দমটা আটকে আছে, কিছুতেই বেরোতে পারছে না। আরও জোরে চিৎকার করে কাঁদতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু পাশের রুমে আমার ফ্ল্যাটমেট রুপা আছে।


আমার আজ পুরো পৃথিবীকে চিৎকার করে বলে দিতে ইচ্ছে করছে: তোমরা আমাকে একবার জিততে দাও! আমি একবার, শুধু একবার জিততে পারলে সেদিন প্রকাশ্যে জনসমাগমে দাঁড়িয়ে আমি বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে আমার লক্ষকোটি বার হেরে যাবার গল্প শোনাব পৃথিবীর মানুষকে!


এই পৃথিবী ব্যর্থ মানুষের গল্প শোনে না। তাই আমাকে জিততে হবে। আমার দুঃখিনী মায়ের জন্য হলেও আমাকে জিততেই হবে। আমি জীবনে শুধু একবার আমার মাকে পুরো পৃথিবীর সামনে দাঁড় করিয়ে হাসতে দেখতে চাই। আমি আমার মাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো একবার কাঁদতে চাই। জন্মের পর থেকে মাকে আমি কখনও হাসতে দেখিনি। মাকে একবার হাসতে দেখে যদি আমি ঠিক সেই মুহূর্তে মরেও যাই, আমার তবু কোনও আফসোস থাকবে না।


রাত গভীর হচ্ছে। এ সময় ক্ষীণ শব্দও স্পষ্ট শোনা যায়। আমার কেমন জানি লাগছে। মায়ের জন্য বুক ফেটে যাচ্ছে। দেয়ালে টাঙানো বাবার ছবির দিকে আমি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। আমার হাতের মুঠোয় কয়েক টুকরো লাল কাঁচা খেজুর। আমার দুচোখের জল বাবাকে হাজারো প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। বাবা কিছুই বলছে না, আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে শুধু।


মায়ের মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। আগামীকাল দুই কেজি তরতাজা কাঁচা খেজুর সাথে নিয়ে আমি বাড়ি ফিরব মায়ের কাছে। মা খেতে পারুক বা না পারুক, মায়ের হাতে খেজুরগুলো তুলে দেবো। মায়ের সামনে বসে পুরো দুই কেজি খেজুর কচকচ করে চিবিয়ে খাব ইচ্ছেমতো। সেই ছোটোবেলায় আমাকে খেজুর খাওয়াতে না পেরে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছিল মা; আমি মায়ের সেই খেদ, আক্ষেপ মেটাব গোটা দুই কেজি খেজুর মায়ের সামনে বসে একটা একটা চিবিয়ে চিবিয়ে গপাগপ খেয়ে নিয়ে।


আমি আগামীকাল মায়ের কাছে ফিরব গোটা দুই কেজি তরতাজা কাঁচা খেজুর সাথে নিয়ে!