কিংবা, একটি সবুজ খামের গল্প/এক

শুনছেন?

দেখলাম। বলুন।

কেমন আছেন?

খারাপ থাকব কেন?

ওমা, এটা বলেছি বুঝি?

‘ভাল আছি’ শুনতেই জিজ্ঞেস করলেন ওটা?

সবাই তো সেটাই করে। তাই নয় কি?

অতো বাঁধন নিয়ে কখনও চলিনি। ভাল না থাকলেও ‘ভাল আছি’ বলার দায়টা কীসের? যেমন আছি, বলে দিই।

তা-ই নাহয় বলুন।

আচ্ছা, ভালই আছি। কেটে তো যাচ্ছে…….. আপনি আপনিই তো?

মানে?

আসলে, নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনাকে খুব পড়ি তো! সেই আপনিই ‘হ্যালো’ বলে বসলেন! শ্রীজাত আপনাকে ‘হ্যালো’ বললে চমকে উঠতেন তো, না? কিন্তু, স্বপ্ন দেখার কথাও তো নয়। ইদানিং ঘুমের মধ্যেও স্বপ্নদেখা ছেড়ে দিয়েছি প্রায়! এইমাত্র চিমটি কেটে দেখলাম, নাহ্! জেগেই তো আছি!

ওঃ বাবা! ভীষণ কঠিন-কঠিন কথা! চলে যাব?

না মশাই! এসেই যখন পড়েছেন, থাকুন না খানিকক্ষণ! কথা দিচ্ছি, জ্বালাব না।

না জ্বালালে থেকে কী হবে?

চাইছেন, জ্বালাই?

ওরকমই! সুন্দরীরা জ্বালালে খারাপ লাগে না। তা, অনেকদিন হয়ে গেল, আমরা ভার্চুয়াল বন্ধু হয়ে আছি। এই একটু হাই-হ্যালো, ভাবলাম, মন্দ কী? আমিই এলাম আপনার ঘরে উপযাচক হয়ে!

সত্যি বলতে কী, সাহস হয়নি কোনোদিনই!

গুড এক্সকিউজ!

মোটেও না, মশাই! সেই কবে আপনি আমাকে বন্ধুতালিকায় নিয়েছিলেন! মনেও নেই, কতদিন আগে। আপনাকে নক করা যায়? বকাটকা খেয়ে বসব! বকা দিতে যতটা ভাল লাগে, খেতে কিন্তু ততটাই খারাপ লাগে। ……… এই এই এই! আপনিই তো? এখনও কেঁপে চলেছি! আক্ষরিক অর্থেই! বিশ্বাস করতেই ভয় লাগছে! অনিকেত বাবুর সাথে কথার কথা হচ্ছে! এও হয়!

উফ্! ঠিক আছে, কাঁপতে থাকুন তাহলে। আমি আসি। শুভরাত্রি, ম্যাডাম। Happy Shaking!

উহুঁ! কীসের কী? আমাকে বোকা-বোকা মনে হচ্ছে? নাকি, বিরক্ত হচ্ছেন? আমাকে ‘খাদ্যে উড়েআসা তেলাপোকা’টাইপ কিছু মনে হচ্ছে নাতো আবার?

আমি না, বিরক্ত আপনিই হচ্ছেন। নাহলে ওরকম ওভাররেট করে তাড়িয়ে দিচ্ছেন যে? ঘুরিয়েবলা গুডবাই কিন্তু বোঝা যায়। গল্প করতে ইচ্ছে না করলে বলে দিন। একেবারে সরাসরি! সরাসরিই ভাল। ভুল বোঝাবুঝি কম হয়।

ক্ষমা করবেন। জীবনের সব হিসেব সরাসরি হলে তো বেঁচেই যেতাম! আসলে হয়েছে কী, আপনার মতন কেউ একজন আমাকে নক করলেন, সেই বিস্ময়ের রেশটা কাটতে সময় নিচ্ছে একটু। এই আরকি!

আবারও! আমাকে ওরকম ‘কেউ একজন’ টাইপের কিছু না ভেবে গল্প করা যায় না? আপনার সমস্যাটা কী, বলুন তো? সহজ করে ভাবুন, সহজ হোন। দেখবেন, আমাকেও সহজ মনে হবে। আমি সহজ, তাই সহজ কিছুই পছন্দ করি। সহজ সম্পর্ক, সহজ মানুষ, সহজ আলাপ। ওরকম।

আপনি সহজ? ঠিক আছে, স্যার! এবার সহজ করে অন্য কোনোকিছুই না ভেবেই ঠিকঠাক ‘হাই’ বলছি! I feel honoured, Sir!

শুনুন, নক কিন্তু আমিই করেছি, আপনি না। এর মানে কী দাঁড়াল?

সেটা ঠিক। হ্যাঁ, আমার সৌভাগ্যই বলতে হবে। আপনাকে, মানে আপনার লেখাকে অনেক ভালোবাসি তো, তাই খুব সহজভাবে গল্প করাটা ঠিক আসছিল না। আমি আপনার ফ্যান তো, মশাই!

ফ্যানই ভাল। লোডশেডিংটা সহ্য হয় না। দেখুন, আপনি আমাকে বারবারই ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে, আরও ফেলতে থাকবেন। অস্বস্তির বন্ধুবান্ধব বেশি; খুব বন্ধুবৎসল ও, কখনও একা চলে না। একটু পর দেখবো, বাকিরাও এসে হাজির! তখন তো পালাতেও ভুলে যাব! বরং বেলা থাকতেই পালাই! ভাল থাকবেন। টা টা।

আপনি না একদম বেশি-বেশি! যাবেন না, জানি। শুধু-শুধু আমাকে একলা করে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। ঢং!

আপনাকে একলা করে দেয়ার আমি কে?

এই যে, আমার ইনবক্সের ওপারে আছেন তো! চলে গেলে এপারে আমি একলা হয়ে যাব না? ওরকমই! ওর বেশি কিছু নয় আপাতত। তা, আছেন কেমন?

আপনার মতোই। কেটে যাচ্ছে, কিন্তু রক্ত বের হচ্ছে না।

কী করছিলেন?

আপনাকে নক করার কথা ভাবছিলাম, আর ভাবতে ভাবতে করেই ফেললাম।

তাই নাকি? ভাল ভাল! এতো রাত অবধি জেগেছিলেন কেন? প্রায়ই এরকম জেগেথাকা হয় বুঝি?

পড়ছিলাম।

ওঃ……শার্ট-প্যান্ট? নাকি, অন্যকিছু?

পরাই আছে! ওগুলি তো অতো খুলে রাখার দরকার হয় না। এই রাতেও না! দুর্ভাগ্য আমার!

মাফ চাই, দোয়াও চাই। কানে ধরছি! কী বই পড়ছিলেন?

চিলেকোঠার উন্মাদিনী; চিন্ময় গুহের। পড়েছেন?

অনুবাদটনুবাদ নাকি? ভদ্রলোকের ফরাসি ভাষার অনুবাদের কাজগুলি চমৎকার!

নাহ্! প্রবন্ধের সংগ্রহ। পড়ে দেখতে পারেন। ভাল লাগবে। এরপর ধরবেন ‘ঘুমের দরজা ঠেলে’। বাজি ধরতে পারি, মাথা ঘুরে যাবে লেখার ধার দেখে!

আপনাকে পড়েই কুলিয়ে উঠতে পারি না। অন্যবই কখন পড়ব? জানেন, আপনি বই পড়তে বলে আবার আপনিই পড়তে দেন না। একবার নয়, কয়েকটি লেখা তো কয়েকবারও পড়ে ফেলি! সেই আপনার সাথেই বকবক করছি! ভাবা যায়! সবকিছুই কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে!

আবার!! খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু! ওরকম করে না বললে কী হয়? আমার ভাল লাগে না!

আচ্ছা আচ্ছা, সরি সরি! চেকভের গল্পগুলি ভাল লাগে?

অমন গল্প ভাল আবার না লাগে কীকরে? যদি জিজ্ঞেস করতেন, মান্না দে শুনতে ভাল লাগে? আমি ভাবতাম, আপনি ভাবছেন, আমি গান বুঝিই না!

সরি সরি! বোকার মতন জিজ্ঞেস করে ফেলেছি! আসলে আমি এখনও নার্ভাস।

আপনি এই মুহূর্তে আমার সামনে থাকলে তুলে আছাড় মারতাম একদম!

ওকে স্যার, নো প্রবলেম!

মানে?

আছাড় মারার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলাম!

এটা কী হল?

বুদ্ধদেব গুহের বাবলির কথা মনে আছে? আমি হলাম বাবলি। আগে তুলুন দেখি! এরপর নাহয় আছাড় মারার কথা আসবে! আমি রাজি! হিহিহি……

আচ্ছা বুঝলাম।

কী বুঝলেন, স্যার?

আপনি বইয়ের পোকা আর আপনাকে আছাড় মারতে চ্যালেঞ্জ করছেন। এটাই বুঝলাম।

হুম বুঝলাম।

আপনি আবার কী বুঝলেন? কিছু বোঝাইনি তো!

বুঝলাম, আপনি কিছুই বোঝেননি।

ওরে বাবা! আপনি তো দেখছি মহাট্যালেন্টেড!

এটা কী শোনালেন, চৌধুরী সাহেব? আমরা মূর্খ হতে পারি, তাই বলে পেটের ভেতরে বিদ্যের কমতি নেই। এইভাবে পচালে আমাদেরও হৃদয়ের ভেতরের কলিজাতে যন্ত্রণা হয়! আহহহহহ্…………!!

হ্যাঁ, দিলাম। পচানিই দিলাম। কেন? বুঝেন নাই?

বুঝব না আবার! জানেন, আমার আম্মুও আমাকে পচায়। আমি নাকি শুঁয়োপোকা, খালি খেতে জানি আর ঘুমাতে জানি। আসলে মোটা মেয়েদের কেউ সহ্য করতে পারে না। ঘরের ভেতরেও না, বাইরেও না। কেউই না! কষ্ট হয় খুউব! হুঁউউউ…….

ওরে বাবা! আপনি দুটো কাজ জানেন? আমি তো ভেবেছিলাম, আপনি…….

গুড ফর নাথিং! এইতো?

আরে নাহ্! গুড ফর……. আচ্ছা, বাদ দিন। একটু ইন্টারভিউ নিই, কেমন?

ওকে স্যার!

আপনি কই থাকেন? কী করেন? কী খান? দাঁত কয়টা? চুল কয়টা? পায়ের আঙুল কয়টা?………. আর কী কী জিজ্ঞেস করতে হয়, ভুলে গেছি!

ঢাকায় থাকি, আমি সর্বভুক, ঘুরে বেড়াই, দাঁত দেড়টা কম, চুল ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩ শত ২৪ টা; আর পৃথিবীর সব মোটা মেয়েদের মতোই অনেক বাচাল টাইপের। ঐরাবত গোত্রীয় মেয়েদের মতোই আমিও খুব সুন্দর উচ্চারণে পকপক করে ছেলেদের পটাতে পারি। আর কিছু, প্লিজ? জিজ্ঞেস করে ফেলুন ঝটপট! আমার উত্তর দিতে খুব ইচ্ছে করছে, অস্থির লাগছে, পেটের মধ্যে গুড়গুড় করছে! উত্তর দিতে না পারলে পেটফেটে মারাই যাবো! প্লিজ হেল্প মি!

আপনি বাচাল টাইপের? আপনাকে তো আমার প্রথমে মনে হয়েছিল বোরিং টাইপের!

আরে মশাই, ওটা মেয়েদের আলাপ জমানোর একটা কৌশল! এতো লেখেন, আর এটা বোঝেন না?

তাই, না? আমি তো আরও ভাবলাম, আপনি একজন বিশিষ্ট আঁতেল রমণী। তাই তো পালাতে চাচ্ছিলাম!

পালাবি কোথায়? …….. আপনাকে কিছু বলিনি, মুভির নাম বললাম। দেখেছেন নাকি মুভিটা?

নাহ! আপনার ফেভারিট?

প্লিইইইজ্‌! অমন করে বোলো না………..একেবারে বুকের ভেতরে গিয়ে লাগে!

হাহাহাহাহা………….আমি আমার শুরুর ভাবনা উইথড্র করে নিলাম!

শুনুন, আমি হচ্ছি একেবারে র, ডাম্বো, জেনুইন টাইপ! খাইদাই, আড্ডা মারি, ঘুমাই আর আম্মুর বকা খাই। এই তো জীবন!

গুড গুড! দ্যাটস মাই টাইপ! ঢাকায় কই থাকেন?

বনানী। বইটা পড়বেন না?

না, পরে পড়ে নেবো, এখন মুড চলে গেছে।

আচ্ছা, ভাল। এখন কী করবেন?

ডিম পাড়ব।

পারবেন না, স্যার! আপনাকে ওই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। মেয়ে হলে তাও মেনে নিতাম।

তাই নাকি? আপনি পাড়েন?

আলবৎ! মেয়েরা পাড়ে তো! বায়োলজিতে পড়েননি?

ইয়ে মানে, থাক!

আহা! ভুল বুঝছেন! আমরা তো মেয়ে। ডিম না পাড়লেও সন্তান জন্ম দিই।

বিয়ে করেছেন? নাকি, এখনও করেননি?

কোনটা হলে আমার সাথে কথা বলতে অসুবিধে নেই?

সুবিধেটা বলে দিলে উত্তরটা দিতে সহজ হবে।

উরি বাপ্রে! ভয় পাইলাম! না, করিনি।

আচ্ছা। বিএফ?

বেস্ট ফ্রেন্ড?

যেটা মাথায় এসেছে বলেই এটা জিজ্ঞেস করলেন, আমি সেটার কথাই বলছি।

আছে। তো?

আহা! তো বলার মতো কিছু হয়নি এখনও।

হবেও না, আস্থা রাখতে পারেন।

আমি সেটা মিন করিনি। আচ্ছা, আপনি তো তাহলে নিশ্চিন্ত!

কেন বলুন তো? ওর দিক থেকে? হ্যাঁ, ও অবশ্য ভালই। একটু বোকাসোকা নিরীহটাইপ ভালমানুষ। বোকাসোকা ছেলেই প্রেম করার জন্য ভাল।

না, ওদিক থেকে নয়। বিএফ আছে মানে, আপনার হাতে আছে একটা বিশাল সম্পদ। এই আকালের জামানায় একটা বিএফ/ জিএফ অনেক বড় অ্যাসেট!

জানি। তাই তো আম্মুর এতো-এতো গালি চুপচাপ হজম করেও লেগে আছি। তবে, এটা লায়াবিলিটিও কখনও-কখনও।

একটু নিশ্চিন্ত হওয়ার জন্য আধটু ঝক্কি পোহাতে রাজি থাকবেন না, এ কীকরে হয়? কবিগুরু বলেছেন, যত প্রেম, তত জ্বালা, প্রেম করে কোন শালা! পড়েননি? ………….. আচ্ছা, আপনার এসএসসি কোন ইয়ারে?

হাহাহাহা……সরাসরি বয়স জিজ্ঞেস করলেই পারতেন!

মানে?

মেয়েদেরকে ছেলেরা তো ওটা জিজ্ঞেস করেই ঘুরিয়েফিরিয়ে বয়স জানতে! আচ্ছা বলছি। ২০০৯য়ে।

এহহ্! এই পিচ্চিটাকে আপনি আপনি করছি কোন দুঃখে? আমার ২০০২য়ে।

জানি তো!

কীভাবে জানো? ধরে মার লাগানো দরকার তোমাকে! আগে বলবে না? কীসব আপনি আপনাকে আপনার করছি!

ওমা! কেন বলব? ভালোই তো লাগছিল! বড় কেউ আপনি-আপনি করছে! মজা না?

তাই, না? ইসস্!

সবাইই তো তুমি তুই বলে। আমি সবার ছোট তো, তাই। আমার বুঝি বড়দের মতো আপনি শুনতে ইচ্ছে করে না? ও আচ্ছা, আমি শুধু আমার ছোটভাইয়ের বড়। কিন্তু ও আমাকে তুই করে বলে। পিচ্চি হনুমান একটা! ওকে দেখলেই মারতে ইচ্ছে করে!

পুরাই পচা মেয়ে একটা!

এহহহহ্!! আমি অনেক ভাল, খালি খাই আর ঘুমাই, কোনও খারাপ কাজ করার টাইমই পাই না।

পচা, খুব পচা! তাই তো বড়রা আপনি-আপনি করলেও কিছু বল না।

কেন বলব? আমার যে শুনতে মজা লাগে! হিহিহিহি………

আসলেই মাইর দেয়া দরকার ধইরা!

অনেক মার খেয়েছি জীবনে, এখন আর ভয় পাই না, এক্সপার্ট হয়ে গেছি তো, তাই। কোথায়-কোথায় মার খেলে সবচাইতে কম ব্যথা লাগে, আমার মুখস্থ! মুখস্থ বলব?

লাগবে না, সেটা এমনিতেই বোঝা যায়। তুমি অলটাইম মাইরের উপর থাক!

শুধু যে মার খাই, তা কিন্তু না। আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকে মাইর দিই। যাদেরকে ভাল লাগে না, তাদেরকে মাইর দিই। যাদেরকে ভাল লাগে, তাদেরকে আরও বেশি মাইর দিই।

এই শোনো! আমার জন্য একটা জিএফ কিংবা বউ দেখ তো! সিরিয়াসলি!

আমি কেন? আমি কোত্থেকে পাব ওসব?

উফ্! কেন? তোমার ফ্রেন্ডরা কি সবাই এঙ্গেজড?

ওরা এঙ্গেজড না, ওরা সবাই ম্যারেড! কারও-কারও বাচ্চাকাচ্চাও আছে। আমি ৪ জনের বাচ্চার নাম রেখেছি। নামগুলি বলব?

বলে কী মেয়ে! এতো পিচ্চি-পিচ্চি মেয়েরা বিয়ে করে কোন সুখে? এ তো দেখছি রীতিমতো বাল্যবিবাহ!

কী যে বলেন না আপনি! সবাই তো উল্টো আমাকে বলে, আমিই নাকি দেরি করে ফেলছি!

থাক, কিছু না বলি।

বলে আর কী হবে, বলুন? অভাগার দুঃখ কে বোঝে? অভাগা যেদিকে চায়, সুন্দরীরা পালিয়ে যায়………..

ও আচ্ছা, আমি অভাগা, না?

না না, আমি আমার কথা বলছি।

ও আচ্ছা, বুঝলাম। পুরাই একটা পিচ্চি শয়তান!

কিচ্ছু বোঝেননি। আর আপনি অভাগা? ভালই বলেছেন!

না না, সত্যি-সত্যিই অভাগা!

সে তো বটেই সে তো বটেই! শুধু একটু বেশি মেধাবী, একটু বেশি ক্রিয়েটিভ, একটু বেশি গুডলুকিং, এই আরকি! আর তো তেমন কিছুই দেখি না আপনার মধ্যে! আপনি আসলেই অভাগা!

একটা জিএফও জোটাতে পারলাম না, আবার কথা বল! বেশি ঢং কম কর। যাও ঘুমাও!

আমি ঢং করিনি, স্যার! ঢং করলে নিতেই পারতেন না!

ও তাই নাকি? নিতে পারতাম না?

হুঁ, তা-ইই তো!

আমার সম্পর্কে তোমার কোনও ধারণাই নেই!

ধারণা দিলেই হয়!

তোমাকে দিয়ে কী হবে?

বুঝলাম, এই মানুষটা কেন এখনও সিঙ্গেল। অবশ্য, কিছু-কিছু মানুষের সিঙ্গেল থাকাই উচিত!

মানে কী? মাইর চিন, মাইর?

এহহ্! এত্তো সোজা না। ওই বলা পর্যন্তই! ওসব মারটার পরে হবে। আগে আমাকে বলতে দিন।

বল, কী বলবে!

রেগে যাচ্ছেন কেন মশাই? আপনাদের মত মানুষ যদি সিঙ্গেল না হয়, তবে সবাই আপনাদেরকে আপন ভাববে কীকরে? আমি কিন্তু এসব ব্যাপারে এক্সপার্ট! সো, বুঝেই বলছি! বলতে পারেন, জীবন থেকে নেয়া!

অসহ্য! বেশি জ্বালাচ্ছ কিন্তু!

একটু জ্বললেনই বা!

তোমাকে আসলেই ধরে পিটানো উচিত!

আমি তো ভালমানুষ, লক্ষ্মী মেয়ে! আমাকে পিটাবেন কেন, হুঁ? আর জ্বালানির দেখেছেনটা কী? ওটা এখনও শুরুই হয়নি!

ঠিক ঠিক, একদমই ঠিক। সবকিছু বুঝতে পারছি।

বুঝলে তো ভাল, আর না বুঝলে আরও ভাল! আসেন একটা সিনেমা বানাই, যত বুঝা, তত জ্বালা!

এই পিচ্চি! আমি আসি আজকে! খুব ঘুম পাচ্ছে। কালকে আবার অফিস আছে তো! টা টা।

আপনি আশি হলে আমি নব্বই! ওকে ওকে! বাব্বাই! Sleep tight!

শুভরাত্রি। ভাল থেকো।

আপনিও। আর শুনুন শুনুন! খবর্দার! আমি ছাড়া অন্যকাউকে নিয়ে কোনও স্বপ্নটপ্ন দেখে বসবেন না যেন!

তোমার স্বপ্নে ভূত আসুক! আমীন!

আমি ভূতটূত দেখি না। আমার ঘুম অনেক গভীর। ভূত আমাকে দেখে হাই তুলতে-তুলতে চলে যায়।

আচ্ছা, তোমাকে ঘুম থেকে তুলে ভূতে ওষ্ঠচুম্মা দিক! আমীন!

এতক্ষণে ঠিক লাইনে এসেছেন! আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে পরীতে ডিস্টার্ব দিক! আমীন!

আহা আহা! কাআআআআশ………..!

আপনি তো ফ্রি। যেকোনও পরীকে চাইলেই পাবেন!

বোঝে না কেউ বোঝে না, পাত্তা দেয় না কেউ পাত্তা দেয় না! উঁহুঁউউউউউ………..

আহারে! ওকে দোয়া করে দিলাম! আপনার জীবনে অনেক সুইট-সুইট পরী আসুক!

আর না! দোয়াটোয়া করা বন্ধ কর।

কেন?

কারণ, ঘুম ইজ কামিং! অনি ইজ গোয়িং! টা টা।

ও আচ্ছা, আপনার অলরেডি একটা পরী আছে বুঝি? তাহলে শুধু-শুধু মিথ্যে বললেন কেন? আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম!

যা ইচ্ছে ভেবে নাও! ৩টা বাজে! ও মাই গড! আম্মুউউউউউ……আমি আগে খেয়াল করলাম না কেন? তোমাকে আসলেই মার লাগানো দরকার! ইমিডিয়েটলি! টিকটিকি-রমণী একটা! গররররর্…….বাই!

এহহহ্! এসেছেন উনি! শুভ মধ্যরাত্রি, শাদা বেড়ালের বাচ্চা! মিউমিউমিউ………

পরদিন সকালে।

ভেবে দেখলাম, আপনি এমন একটা কিউট, যার উপরে রাগ করে থাকা যায় না। এমন কিউট হওয়াটা মহাঅপরাধ!

মতলবটা কী? বলে ফেল বলে ফেল!

কিছুই না। কালকে ওরকম বকা দিয়ে দিয়ে কথা বলছিলেন কেন, হুঁ? যাকগে! মাফ করে দিলাম! আপনার স্ট্যাটাস দেখে একটা কথা মনে হল: যে বাসায় থাকে, সে আসলে হাউজওয়াইফ না, যে ওয়াইফ হাউজকে হোম বানাতে পারে, সে-ই আসল হাউজওয়াইফ! সবাই তা পারে না। দোয়া করি জনাব, গেট অ্যা হাউজওয়াইফ!

বলে কী মেয়ে? খুশি হয়ে গেলাম তো! সুপ্রভাত জনাবা!

সুপ্রভাত! অফিসে যাবেন না?

ইসস! না গেলে যদি হত! জগতের জঘন্যতম স্থান এই অফিস! হায়! তবুও সে জায়গায় যেতে হয়! নাহলে জীবনটাই জঘন্য হয়ে যায়! …….. এই মেয়ে! তোমার ঘুম নেই? কখন উঠলে?

মাত্র উঠলাম। আমি নিশাচর টাইপের তো, রাতে দেরিতে ঘুমাই। আপনি কখন উঠলেন?

এই তো একটু আগে।

এখন তো ক্লাস অফ, তাই শুধু সুখ আর সুখ! ক্লাস শুরু হলেই আমার সব সুখ ছুটে যাবে!

হুম।

সেই কলেজলাইফ থেকেই মর্নিংশিফটে ক্লাস করছি। অথচ, এখনও অভ্যস্ত হতে পারলাম না। আর পারবও না বোধহয়।

কোন কলেজে ছিলে?

হলিক্রস। আপনি?

চট্টগ্রাম কলেজ।

আচ্ছা, আপনার চাকরিটা আপনার ভাল লাগে? এনজয় করেন জব?

Enjoyable Job—-It’s an oxymoron, dear!

সেটাই তো! মানুষ যে কীভাবে চাকরি করে! চাকরি করার কথাই তো আমার মাথায় আসে না! চাকরি ছাড়াই আমি বরং দিব্যি থাকব!

আর আমার তো চাকরি নিয়ে গল্প করতেও বাজে লাগে। লোকে যে কীভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চাকরি নিয়ে বকে যায়! দেখলেও গা জ্বলে!

ওদের বলার মতন আর কিছু নেই যে! কী আর করবে বেচারারা!

হয়তো! নিতান্ত বাধ্য না হলে চাকরি করতাম না, জানো?

আপনাকে বাধ্য করলটা কে, শুনি?

আমার মধ্যবিত্ত পারিবারিক কাঠামো! মধ্যবিত্তদের হয় চাকরি করতে হয়, নতুবা মরার রাস্তা খুঁজতে হয়। গরীবের ছেলে বলে চাকরি করি, বুঝলে? নাহলে কবেই………..

চাকরি থাকলে ওরকম করে বলা যায়। না থাকলে দেখা যেত, কী বলতেন!

এই নারী শাখামৃগ! একদম চুপ! চাকরি ছাড়া তোমার আর কোনও টপিক নেই গল্প করার জন্য?

ওকে ওকে, চাকরি বাদ। বলুন, কী নিয়ে কথা বলতে চান?

আস, আমরা কথা নিয়ে কথা বলি।

আপত্তি নেই। কী কথা নিয়ে কথা বলতে চান, বলুন!

তোমার মস্তক নিয়ে। ঠিক আছে?

আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, টিনএজে ফিরে গেছেন। তাও, মেয়েলি টিনএজ! হিহিহিহি………..

অ্যাগ্রিড্‌! হ্যাপি?

মনখারাপ হয়ে গেল?

আরে নাহ্! কী যে বল না তুমি? মন ভীষণ রকমের ভাল হয়ে গেল। খুশির চোটে দুই দফায় নাচও নেচে ফেলেছি! আবারও নাচি?

ওয়াও! আপনি নাচতেও পারেন?

হ্যাঁ তো! একসময় বাংলাদেশ বেতারে নিয়মিত নাচতাম। আমি গাইতেও পারি। ইনবক্সে গেয়ে শোনাব?

কেন নয়? নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই! ভার্সেটাইল জিনিয়াস! এতো-এতো গুণ নিয়ে ঘুমান কীভাবে?

বালিশের নিচে মাথা রেখে।

দারুণ! আর আমি তো পুরাই বেগুণ!

বেগুন? আমি তো ভেবেছিলাম, আলু!

সেটাও বলতে পারেন। আমার গালদুটো গোলআলুর মতন। আমার বয়ফ্রেন্ড ধরে ধরে টানে আর টোকা মারে। আচ্ছা, আমি তো আপনার ব্যাপারে তেমন কিছুই জিজ্ঞেস করলাম না। How rude of me!

সেটাই তো! কর কর, করে ফেল ঝটপট! আমি রেডি হয়ে যাই! রেডি ওয়ান টু থ্রি……..

আপনিই বলেন, কী কী বলতে চান! আচ্ছা, আপনি কী কী পছন্দ করেন? কী কী অপছন্দ করেন? কাকে-কাকে পছন্দ করেন? কাকে-কাকে করেন না?

নুডল্‌স পছন্দ করি। দই পছন্দ করি। কফি পছন্দ করি। কী কী পছন্দ করি না, মনে নেই।

দুনিয়ার এতো-এতো খাবার থাকতে নুডল্‌স কেন? কী আছে ওতে?

আমি যে এখনও দুনিয়ার সব খাবার খেয়ে দেখিনি, তাই।

তাও তো অনেক খাবারই খেয়ে দেখেছেন, তাই না? বাকি দুটো ঠিক আছে, আমারও ভাল আগে। কিন্তু নুডল্‌স কেন? ওটা এমন কী?

ওই যে কেঁচোর মতন লম্বা-লম্বা! খাওয়ার সময় মনে হয়, পেটের মধ্যে কেঁচোগুলি ঢুকে যাচ্ছে, কিলবিল করবে ওখানে…….

ইয়াক! থামুন! খবিশ একটা! আচ্ছা, আপনি গোলাপি রঙের সিফন শাড়িপরা মেয়ে পছন্দ করেন, তাই না?

কে বলল তোমাকে?

আপনার লেখায় পড়েছি।

ও আচ্ছা।

কী? কথার সাথে কথা বলতে-বলতে টায়ার্ড? আমি বেশ বাচাল, আগেই বলেছিলাম!

গোলাপি রঙের সিফন শাড়িপরা মেয়ে কি খাওয়া যায়? খাবারের আলাপে এটা আসছে কেন?

আমি তো পছন্দের কথা বলছি, পছন্দ শুধু খাবারই হতে হবে, এমন তো কোনও কথা নেই।

তাহলে তো অনেককিছুর কথাই বলতে হয়! এই যেমন ধর, তোমার প্রোফাইল পিকচারও লাইক করি।

ও আচ্ছা! আমি তো খুশি হয়ে যাচ্ছি! এখন কী হবে?

এটা কিন্তু সত্যি-সত্যি বললাম।

আহা আহা!! আমার এখন কী করা উচিত? আমি কি খাট থেকে ফ্লোরে লাফিয়ে পড়ে লাইফের ফার্স্ট আত্মহত্যাটা করেই ফেলব?

না! ইঁদুরের বিষ খেয়ে মরে যাও!

কী যে বলেন না! মানসম্মান আর থাকবে না! পেপারে বড়-বড় করে ছাপা হবে, “ইঁদুরের বিষ খেয়ে মরল মানুষ! (ছবি সহ)” আরও বেটার কিছু থাকলে বলুন, প্লিজ! আচ্ছা, আর কী কী পছন্দ করেন?

তোমার চোখজোড়া, তাকানোর ধরনটা, হাসি, ঠোঁটযুগল, চিবুক, বামহাতের উল্টো পিঠ………আরও বলব?

আমার হাত দেখলেন কই, মশাই?

ছবিতে।

এতোটা খেয়াল করে দেখেছেন? সত্যিই লজ্জা পাচ্ছি! কথা লজ্জা পাচ্ছে! আপনি সার্থক!

কেন? লজ্জার কী আছে? তুমি কি ছোট্টোবাবু নাকি?

সেটা নয়। আসলে আমি আমার সুন্দর দিকগুলি নিয়ে অমন সুন্দর করে শুনতে অভ্যস্ত নই।

আহা! কেমন পাথরের মতন হৃদয় তোমার প্রেমিকের! নাকি, ওর চোখজোড়া পাথরের?

কী আর করা, বলুন! জানেন, আমি না শুধু বকাই খাই। বেশি-বেশি ভুল করে ফেলি তো, তাই! আচ্ছা, আপনিই বলুন, কাছের মানুষের কাছে ভুল করার অধিকার কি আমার নেই? তাহলে ভুলগুলি করবটা কোথায়?

বকা দেয়া আর দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে বলা, দুটো ভিন্ন ব্যাপার। একটা মানুষের সৌন্দর্য নিয়ে তো বলাই যায়, ওকে বকাঝকা করলেও বলা যায়। বকা কোন সুন্দরী খায় না, বলো! ঐশ্বরিয়াও বকা খায়।

আরে নাহ! কী যে বলেন আপনি! বেশি সুন্দর মানুষের দিকে তাকালেই তো বকা দেয়ার মুড চলে যায়! তাই আমার ধারণা, বেশি সুন্দর মানুষগুলি অতো বকাটকা খায় না। আমি কেন সুন্দরী হলাম না? খেলব না!

বেশি ঢং কম কর! তোমার কথা অনুযায়ী, তোমার তো অতো বকা খাওয়ার কথা নয়। তুমিও তো সুন্দর!

আবার দিলেন তো পচানি! এমন করেন কেন? আমি কী করেছি?

উঁহু, না! সত্যি-সত্যি বলছি!

আমার আশেপাশে যাদেরকে দেখি, তারা সবাইই আমার চাইতে অনেক সুন্দর। চারিদিকে শুধুই সুন্দর আর সুন্দর, আমি বাদে! I often feel low!

না না, ভুল ভাবছ। তোমার মতন সুন্দর করে হাসতে পারে, ওরকম খুব বেশি কাউকে আমি অন্তত দেখিনি।

হ্যাঁ, হাসির প্রশংসা শুনেছি। পারিই তো ওই একটা কাজ। তাই, আমি খুব হাসি! ওতে হলেও যদি একটু সুন্দরটুন্দর দেখায়! আমার এক প্রিয় ম্যাম আমাকে এই বুদ্ধিটা শিখিয়ে দিয়েছেন।

তুমি নিজেকে কী ভাবো, আমি জানি না। তবে, তুমি সুন্দর, এটা আমার মনে হয়। সৌন্দর্য শুধু শরীর দিয়ে হয় না, অনেকগুলি মাত্রা থাকে সৌন্দর্যের। সবদিক ভেবেই বলছি, তুমি সুন্দর।

ঠিক আছে, আপনার কমপ্লিমেন্ট হৃদয় দিয়েই নিলাম, সুন্দর হই বা না হই।

আচ্ছা আসি।

কেন? ব্যস্ত?

না, তা নয়। আসলে তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে না। তুমি বারবারই ভেবেই যাচ্ছ, আমি মিথ্যে বলছি। মিথ্যুকের সাথে গল্প করে কী হবে? তাই আসি।

এত্তো রাগ কেন আপনার, হুঁ? মেয়েরা যা বলে, তা নিয়েই বসে থাকলে চলবে? না বলা খুশিটুকুর দাম না নিয়েই চলে যাবেন? মেয়েরা তো ওভাবে করে ঢং করেই যাতে ছেলেরা আরও বেশি-বেশি করে ওদের রূপের প্রশংসা করতে থাকে। বোঝেন না আপনি? আমি বলিনি, আপনি মিথ্যে বলছেন। আসলে আমি নিজের সম্পর্কে অতো ভাল-ভাল কথা শুনতে এখনও অভ্যস্ত হতে পারিনি। কী করব, বলুন! ওরকম দারুণ সব কথা নিতে পারি না যে! কেউ বলে নাতো! সত্যিই বলে না!

আচ্ছা, ঠিক আছে। সবাই আস্তে-আস্তে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আরও একবার বুঝলাম। সুন্দরকে সুন্দর বলার মতো মানুষগুলি হারিয়ে যাচ্ছে।

অন্য প্রসঙ্গে যাই, কেমন? আপনার তো অনেক বই। পড়েনও প্রচুর। আমার অতো বই নেই, পড়ি আরও কম। আচ্ছা, Memoirs of a Geisha পড়া হয়েছে? এটা আমার খুব প্রিয় বই।

না, বইটা আছে, এখনও পড়িনি, তবে মুভিটা দেখা হয়েছে। আমার খুব ভাললাগা একটা মুভি।

Sayuriকে মনে আছে না?

ওকে ভোলা যায় আবার কীভাবে?

জানেন, এখন আমার নিজেকে Sayuri Sayuri মনে হচ্ছে। কী এক ঘোরের মধ্যে ডুবে আছি। সবকিছুকেই মনে হচ্ছে, স্বপ্ন। হয়তো বা মিথ্যে দিয়ে বোনা, তবুও ওটা নিয়েই বাঁচতে খুব বেশি ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে।

হাহাহাহা………..

হাসলেন যে?

এমনিই! ইচ্ছে হল, তাই।

হাসুন, হাসতে থাকুন। শরীরের জন্য ভাল।

ঠিক আছে। হাহাহাহা……………হেহেহেহে……………হিহিহিহি………………হোহোহোহো…………….

জানেন, আমি গত দুই সপ্তাহ ধরে বুঝতে পারছি না, মাস্টার্স কী নিয়ে করব। ডিলেমার মধ্যে আছি।

তোমার সাবজেক্ট নিয়ে তো আমি জানি না।

সেটা আমি জানি, তাইতো আর অ্যাডভাইস চাইলাম না। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

কর।

যেসব মেয়ে আপনার চাইতে বয়সে ছোট, ওদেরকে আপনার ন্যাকান্যাকা মনে হয়, না? কারণ, আপনি ওদের চাইতে ম্যাচিউরড। ঠিক না?

কই? নাতো!

আমি প্রায়ই ভাবি, ছেলেরা আমার সম্পর্কে আসলে কী ভাবে! মানে, আমাকে নিয়ে ওদের মনের মধ্যে কী চলতে থাকে? কিংবা, আদৌ কি কিছু চলে?

আমি মিথ্যে বলি না, এটা জেনে রেখো।

তাহলে, আমাকে নিয়ে আপনার জাজমেন্ট কী?

আমি জাজমেন্টাল হতে পছন্দ করি না। যার যার জীবন, তার তার। অন্যের জীবন নিয়ে আমার বলবার কী আছে?

তবুও আমাকে নিয়ে বলুন। আমি কিছুই মনে করব না, বরং খুশিই হব।

ওই যে, অনেককিছু বলে ফেললাম না? ওগুলিই! আর কিছু না।

আপনি যে কী বললেন, আর আমি যে কী বুঝলাম, একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন। ভাল কথা, আপনার সবচাইতে অপছন্দের ব্যাপারগুলি কী কী?

এক দুই করে বলব?

বলুন না! সবচাইতে বেশি যেটা, সেটাই আগে বলুন।

হিপোক্রিসি। আমি এটা সহ্যই করতে পারি না! ভণ্ড হওয়ার চাইতে আমি বরং দুর্বৃত্ত হব।

ঠিকই বলেছেন! একেবারেই আমার মনে কথা! যাদের চোখ হাসে না, শুধুই ঠোঁট হাসে, ওরকম মিথ্যে হাসির মানুষ দেখলেই আমার গা জ্বলে। ওরা আপনার সামনে ভাল-ভাল কথা বলেটলে পেছনে গিয়ে আজেবাজে কথা বলবে আপনাকে নিয়ে, একসময় সুযোগ বুঝে ছুরিটা বসিয়ে দেবে একেবারে পিঠের মাঝ বরাবর। ছুরি যদি বসাতেই হয়, যারা প্রকৃত মানুষ, তারা বসাবে বুকে, পিঠে নয়। আমি সত্যিই বিরক্ত হয়ে গেছি। আশেপাশে দেখি, ওরাই বেশি। আমি ওদেরকে ঘৃণা করি। নিজেকেই কেমন জানি বেমানান লাগে।

যে মানুষের চেহারা দুটো: একটি মুখ, অপরটি মুখোশ; সে মানুষ যতই উচ্চশিক্ষিত, প্রগতিশীল, বড় অবস্থানের হোক না কেন, কখনওই ভাল বন্ধু হতে পারে না। ওরকম মানুষকে আমি সবসময়ই ঘৃণা করে এসেছি, ঘৃণা করি, ঘৃণা করে যাব। কেউ হিপোক্রিট, এটা একবার বুঝে ফেললে, আমি আর কিছুতেই ওকে মন থেকে নিতে পারি না। আমি যা বলার, সরাসরি বলি, যা শোনার, সরাসরি শুনতে পছন্দ করি। এতো মাথা খাটিয়ে কথা বলতে হবে কেন? যাদের সাথে ওরকম করে কথা বলতে হয়, তাদের সাথে আমি মিশি না। ওরা ওদের মতো থাকুক, আর আমি আমার মতো থাকি। আমি সহজ মানুষ, সহজ করে বুঝি, ভাবি। এতো লোড নিতে ভাল লাগে না। ব্রেইন খরচ করে অপ্রয়োজনীয় কথা বোঝার পক্ষে আমি নই। ওটা তো এমনিতেই কম আছে, ওইটুকুও খরচ করে ফেললে কীভাবে হবে?

সেটাই! সবাই যদি এরকম করে ভাবত!

সবাই একইরকম করে ভাববে কেন? একেকজন একেকরকম করে ভাবে বলেই তো পৃথিবীটা এখনও এতো সুন্দর। আমি সবার চিন্তাভাবনাকেই সম্মান করি। অন্যের চিন্তাভাবনাকে সম্মান করার মানে, এ-ই নয় যে, আমাকেও ওটা গ্রহণ করতে হবে। ও ওর মতন, আমি আমার মতন।

তবুও! হিপোক্রিসিকে সবাই ‘না’ বলুক। আমি এটা চাই। আমিও মুখের উপর বলে দিই। এইজন্য সবাই বলে, আমার নাকি তেজ বেশি, মেয়েদের এতো তেজ থাকা ভাল না, এইসব!

শোনো, আমি কিন্তু ঠিক মেলাতে পারছি না। আমার অভিজ্ঞতা বলে, মেয়েরা হিপোক্রিট ছেলেদেরকেই বেশি পছন্দ করে। ভালোবাসুক, আর না-ই বাসুক, ওরা চায়, ছেলেরা মুখে বলুক, ভালোবাসি। মিথ্যে মিথ্যে ‘ভালোবাসি’ বললেও ওরা সবকিছু দিয়ে দেয়। ছেলেদেরই বা কী দোষ, বল! ওটা না বললে, ভণিতা না করলে যে কোনও মেয়েই কিছু দেয় না। যেসব ছেলেরা মনের কথাটিই সরাসরি সহজভাবে বলে দেয়, ওদেরকে মেয়েরা দূরে সরিয়ে দেয়। “তোমাকে চুমু খাব” না বলে মেয়েদেরকে বলতে হয়, “অমন সুন্দর ঠোঁট! শুধুই ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করে।” মেয়েরা ওতেই একেবারে আইসক্রিমের মতো গলে যায়! আহা! প্রেম! যত্তোসব ভণ্ডামি! তাই তো এখনও এইটি-সেভেন পার্সেন্ট প্রেমেই বিয়ে হয় না। নাইন্টিফাইভ পার্সেন্ট প্রেমেই মানসিক সম্পর্ক থাক না থাক, শারীরিক সম্পর্ক ঠিকই থাকে। মেয়েরা প্রেমের অভিনয়কে প্রেম ভেবে শারীরিক সম্পর্ককে সেই প্রেমেরই একটা অংশ হিসেবে বিশ্বাস করে যায় দিনের পর দিন। মেয়েরা প্রতীক্ষা করে বসেই থাকে, কখন কোন ভণ্ড প্রতারক এসে ভুলিয়েভালিয়ে ওকে ঠকিয়ে কাজ হাসিল করে সরে পড়বে। যুগে-যুগে মেয়েরা সৎ সত্যবাদী ছেলেদের চাইতে মিথ্যেবাদী ছ্যাঁচড়া টাইপের ছেলেদেরকেই বেশি ভালোবেসেছে।

আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? You are being rude! এইজন্যই মেয়েরা আপনাকে দেখতে পারে না!

জানতাম, এমন একটা রিপ্লাইই আসবে। তোমার কোনও দোষ নেই। মেয়েরা এমনই। ঠকতেও রাজি, যদি ঠকানোর কায়দাটি ঠিক থাকে। পাঁচ বছর ধরে পুরোপুরি মিথ্যে দিয়ে গড়া একটা সম্পর্কের জন্য নিজের সবকিছুই দিয়ে যায়, অথচ সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য পাঁচ মিনিটের একটা মিষ্টি হাসিও দিতে পারে না। যে ছেলেরা ইনিয়েবিনিয়ে সাজানো মিথ্যে বলতে পারে না, মেয়েরা ওদেরকে পছন্দ করে না। মেয়েরা চায়, কেউ এসে ওদেরকে সুন্দর-সুন্দর স্বপ্নময় কথা বলুক, মনের মধ্যে যা আছে, সেটাকে গোপন করে ওরা যা যা শুনতে চায়, তা তা বলুক। ছেলেরাও নিজেদের লুকিয়ে রাখে খুব কৌশলে, মেয়েদেরকে কাছে টানে, একটাসময়ে ব্যবহৃত টিস্যুর মতোই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। And, they deserve it. The foolish girls! মেয়েরা হয় স্টুপিড, অথবা বেকুব! অথচ ওরা নিজেদেরকে মনে করে আন্তরিক প্রেমিকা!

বুঝলাম, কেন আপনার প্রেমিকা নেই।

লাগবেও না! এই বেশ ভাল আছি!—নচিকেতার গান, শুনেছ তো? না শুনলে শুনে নিয়ো। একটা মেয়ের হাতটা ধরতেও ‘ভালোবাসি’ বলতে হবে কেন? কেন, দুজনের ভাললাগা থেকে হাতধরা পাপ নাকি? যে সমাজ হাত ধরলেও অস্পৃশ্য ঘোষণা করে দেয়, যে সমাজে চোখের দিকে তাকালেও হৈচৈ শুরু হয়ে যায়, গেলগেল রব ওঠে, সে সমাজ থেকে ভালকিছু আশা করা যায় না। সবকিছুই চলবে, সবাই দেখবে, কিন্তু কেউই দেখবে না। ছেলেদেরকে ভণ্ডামি করতে অভ্যস্ত করে তুলছে এই সমাজের নিয়মগুলি। এই ছেলেগুলিই একটাসময়ে দেশের হাল ধরবে, আর দেশটাকে উঠতেবসতে রেপ করবে! বাহ্ বাহ্! শালার হিপোক্রিট সোসাইটির হিপোক্রিট প্রোডাক্টস্!

ভয় লাগছে। আমি পালাই! মেয়েমানুষ তো, তাই। কিছু মনে করবেন না যেন!

না না, ঠিক আছে। Maybe I just started overreacting! Sorry!

আচ্ছা, আপনাকে কেউ বকা দেয় না? জানেন, আমি না বাসায় অনেক ঝাড়ি খাই। আম্মু শুধু বকে শুধু বকে। আপনি তো সৌম্য শান্ত সুশীল টাইপ, আপনার সুবিধা আছে, আপনাকে নিশ্চয়ই কেউ বকেটকে না। আপনার মতো হলে তো আম্মু আমাকে মাথায় তুলে রাখত!

ইয়ে মানে, সৌম্য শান্ত সুশীল টাইপ! Ahem ahem!

Why Ahem ahem? আপনাকে দেখলেই তো মনে হয়, ধীর স্থির শান্ত।

আমাকে দেখে তুমি কী ভাবছ, সে দায় নিশ্চয়ই আমার নয়। আমি আমার মতো, আমাকে আমার মতো করে নিতে না পারলে সে সমস্যা তোমার, আমার নয়।

তাহলে আপনি কীরকম?

একেবারেই অন্য ১০টা ছেলের মতন। Men were men, men are men, men will be men. ALWAYS! মেয়েরা এটাই বুঝল না কোনোদিন। প্রত্যেকটা মেয়েই ভাবে, ‘দুনিয়ার সবচাইতে স্পেশাল ছেলেটি’কে সে ভালোবেসে বসে আছে। ও কিছুতেই বুঝতে পারে না, ওর বান্ধবীও আরেকটা ‘দুনিয়ার সবচাইতে স্পেশাল ছেলেটি’র প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমি জানি, আমি ভীষণ-ভীষণ টিপিক্যাল, বাড়তি কিছুই নেই আমার মধ্যে, অন্তত মনোদৈহিক ভাবনাগুলির মধ্যে আমি কোনও পার্থক্য দেখি না আমার আর অন্য ১০টা ছেলের মাঝে। আমিও অনেক দুষ্টু, নোংরানোংরা চিন্তাভাবনা করি; এমনকি, বাথরুম পেলে বাথরুমে দৌড়াই! শোনো বলি, সব ছেলেই একরকমের, শুধু কেউ-কেউ একটু ভাবটাব ধরে থাকে। যার মাথায় ঘিলু যত বেশি, তার ভাবের গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি। নাহলে, দিনের শেষে সবাইই এক।

হয়তো তা-ই! কিন্তু আমি এটা চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমার ট্যারামির কাছে আপনার দুষ্টুমি নস্যি! আমার দুষ্টুমির কাছে আপনি একেবারেই পিচ্চি পোলাপান! আবার আমি সবসময়ই যে খারাপ, দুষ্টু, শয়তান, তাও না। মাঝেমাঝে আরকি!

মাঝেমাঝে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তটিও শয়তান! অতএব, ওতে দোষের কিছু নেই। আমি অনেক অনেক অনেক খারাপ! You have no idea!

না জনাব! কোত্থেকে? রাজ্যের সব আইডিয়া তো শুধুই আপনার মাথায় কিলবিল করে সারাক্ষণ। আমরা তো ক্ষুদ্র মানুষ, অতো ভাবতে পারি নাকি? ভাল কথা, খেয়েছেন দুপুরে?

……………………………………………………………

আপনি নেই কেন? আর শুনুন, আপনার যখনই কথা বলতে ইচ্ছে করবে না, প্লিজ বলে দেবেন। আমি অনেক বাচাল তো, তাই ননস্টপ বকবক করতে পারি। আমি টায়ার্ড হবো না, কিন্তু আপনি বোরড হয়ে যাবেন। তাই বেটার, বিরক্ত হওয়ার আগেই আমাকে তাড়িয়ে দেবেন। আমি আপনার কাছে বিরক্তিকর পোকা হয়ে উঠতে চাই না।

না না, ঠিক তা নয়। একটু ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম আরকি! আছ?

আমি তো থাকিই! ফ্রি এখন?

না, এখনও কাজে আছি। চাকরি বড় বিশ্রী জিনিস, বুঝলে? তোমার নাম্বারটা দেয়া যায়? ফোন করব পরে।

আচ্ছা ঠিক আছে। *********** করবেন তো সত্যি-সত্যি? নাকি, স্রেফ ভদ্রতা করে নিলেন?

আমারটা রাখো। *********** তুমিই নাহয় বরফটা ভেঙে দিয়ো, তাহলেই তো হয়ে গেল!

আমার আপত্তি নেই, আমি পারব, আপনিই বরং পারবেন না।

তোমার বয়ফ্রেন্ড কিছু মনে করবে না? আমি তো সিঙ্গেল, কোনও দায়বদ্ধতা নেই।

সিঙ্গেল নই বলে কি মুখের কথাও আরেকজনের কাছে বন্ধক দিয়ে দিয়েছি নাকি? আমার জীবনটা আমার, ওরটা ওর। আপনার সাথে কথা বললে কী হবে? আপনি তো আর আমাকে প্রপোজ করতে যাচ্ছেন না।

করেও তো বসতে পারি!

কেন? আমি সিঙ্গেল নই বলে? আপনাকে ফিরিয়ে দেবো জেনেই প্রপোজ করবেন?

এতো ছোট মাথায় এতো বড় বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাও কীভাবে?

মেয়েদের মাথায় শুধু উকুনই থাকে না জনাব, বুদ্ধিশুদ্ধিও থাকে বোধহয়। আর প্রপোজ করলে করবেন! একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে প্রপোজ করতেই পারে! আপনি প্রপোজ করলেই কি আমাদের মধ্যে প্রেম হয়ে যাবে?

এভাবে ছ্যাঁকা দিয়ে দিলে প্রেমের আগেই?

কী আর করা জনাব! আপনি আরও ৪ বছর আগে এলে ছ্যাঁকা খাওয়া লাগত না। বরং আমিই খেয়ে যেতাম—আমি ড্যাম শিওর!

ওমা! এটা কোনও কথা? দুটো প্রেম করলে কী হয়?

আপনার বেলা বোস দুটো প্রেম করলে আপনার কেমন লাগত?

আমার বেলা বোস কোথায় যে আছে! আদৌ জন্মেছে কি না, কে জানে! আগে আসুক সে, এরপর ভেবে দেখা যাবে!

ধরুন এসেই গেছে, ও আছে। বলুন, কেমন লাগত? কী রাজকার্য উদ্ধার হয়ে যেত ওতে? আপনার বেতন বেড়ে দ্বিগুণ হত? কিংবা অন্য কিছু?

আমি কী জানি? আমি কি কখনও প্রেম করেছি নাকি? প্রেম তো করছ তুমি! তুমিই ভাল বলতে পারবে।

আমার হিসেব সোজা। আমার জন্য আমার বেচারাটি অনেক কষ্ট করছে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ওকে কীভাবে ঠকাই? আমার উপর তো ওর অন্তত এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারা উচিত যে আমি ওরই আছি, থাকব। তাই না?

কী করছে তোমার বেচারা?

চাকরি খুঁজছে। আমি বসে আছি কখন ওর একটা চাকরি হবে, আমরা বিয়ে করব, এই অপেক্ষায়। একেবারেই টিপিক্যাল মিডলক্লাস লাভস্টোরি। আমাদের একটা লালনীল সংসার হবে, আমি তার বেলা বোস কিনা!

আচ্ছা বুঝলাম।

আপনি The Good Wife টিভিশো’টা দেখেন?

না। কেন?

আপনাকে আমার Will-এর মতো লাগে।

এর মানে কী?

মানে হল, Will হচ্ছে ওই শো’টার একটা ক্যারেকটার, আর আপনি ওর মতন, অ্যাট লিস্ট, আমার কাছে তা-ই মনে হয়।

ও আচ্ছা।

Will এতোটাই দারুণ যে, ওকে দেখলেই, ওর কথা ভাবলেই, Aliciaর জগতটা এলোমেলো হয়ে যায়। অথচ, Aiciaর স্বামী আছে, দুটো বেবি আছে। পারিবারিক জীবনেও ভীষণ সুখী সে। কিন্তু Will-কে ভুলতে পারে না।

তুমি কী বলছ, আমি তার কিছুই বুঝতে পারছি না। তোমার কথাবার্তা আমার কাছে গ্রিক-গ্রিক লাগছে। আমি সিরিয়ালটা দেখিনি কখনও।

আরে বাবা, পরকীয়ার গল্প ওটা, আর কিছু না। এইবার বুঝেছেন?

আচ্ছা বুঝলাম। এটা অভিনব কিছু নয়। হরহামেশাই ঘটছে। লুকিয়ে-করা প্রেমের আগুন এখন আর আগের মতো পোড়ায় না; ঘরকেও না, ব্যক্তিকে তো না-ই! এসব মেনে নেয়ার কালচার আমাদের দেশেও এসে যাচ্ছে আস্তে-আস্তে।

তা ঠিক। কী করছেন? কিছু খেয়েছেন? এখন কী প্ল্যান? বাসায় যাবেন, নাকি অফিসে আরও কাজ আছে?

অফিসেই আছি। কিছু কাজ মনিটরিং করতে হচ্ছে। মূল কাজগুলি আমার অফিসাররাই করছে, আমি শুধু দেখাশোনা করছি, কাজের ধরনটা ঠিক করে দিচ্ছি। ভাল কথা, একটা মিসড্কল দাও তো, তোমার নাম্বারটা সেভ করে রাখি, আমার নাম্বার টাইপ করতে আলসেমি লাগে।

এ ব্যাপারে আমি আরও বড় অলস। আমিও আপনার নাম্বারটা সেভ করিনি। বরং আপনিই কলটা দিন। একটা ফানি কথা মনে হল। বলব?

বল।

আমরা তো ফোনে কথা বলার সময় সাধারণত বড়দের ভাইয়া কিংবা আপু বলে সম্বোধন করি, তাই না?

হ্যাঁ। তো?

এখন যদি আমরা ফোনে গল্প করি কখনও, আপনাকে কি ভাইয়া বলে ডাকতেই হবে?

না, যেকোনও কিছুই ডাকতে পার, আমি কিছুই মনে করবো না।

সত্যি?

হ্যাঁ! এতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কিছু মনে করার সময়ই আমার নেই। চাইলে জানেমনও ডাকতে পার।

ধ্যেত্! আপনি না, পুরোই একটা যাচ্ছেতাই!

Tell me something I didn’t know!

মাফ চাই! আপনি বাসায় যান কখন?

ঠিক নেই, তবে সাধারণত ছটায়।

আমি তো কখনওই অতো সময় ধরে কাজ করতে পারব না। নটা থেকে ছটা! এও সম্ভব? আমাকে প্রতি ঘণ্টার পরেই ১০ মিনিটের ব্রেক নিতে হয়। নাহলে অস্থির হয়ে মরেই যাব!

ব্রেক সবাইই নেয়। আমিও নিই।

তাহলে ঠিক আছে। জানেন, আমি তো সারাক্ষণই আম্মুর কাছে আপনার কথা বলি, তো প্রথম যেদিন আপনার কথা বলেছিলাম, আপনাকে দেখিয়েছিলাম, সেদিন আম্মু আমাকে বললেন, “ওর মতো হওয়ার চেষ্টা কর।” শুনে আমার রাগও হয়েছিল, ভালও লেগেছিল। কেউ আপনাকে নিয়ে ভালকিছু বললে আমার ভাল লাগে। এখন, আপনি আমাকে বুদ্ধি দিন, আপনার মতো হতে হলে আমাকে কী কী করতে হবে?

ওমা, সেটা আবার কীকরে হয়? আমার মতো হবে কীভাবে? তুমি হবে তোমার মতো। প্রত্যেকটি মানুষই তার নিজের মতো। আর যদি একান্ত হতেই চাও, তবে সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট করার ব্যবস্থা কর, ডাক্তারের সাথে কথাটথা বলে দেখ! হাহাহাহাহা………

ভীষণ পাজি আপনি! আমি বলছি, আপনার মতো বুদ্ধিমান হতে চাই। কী করব?

একই সমস্যা! বুদ্ধিমান তো হতে পারবে না, বুদ্ধিমতী হতে পার।

আচ্ছা আচ্ছা, ইন্টিলিজেন্ট হতে চাই স্যার আপনার মতো। এখন বলুন!

শুরু হয়ে গেল তো ম্যাডামের বিখ্যাত আঁতলামি! আমি পালাই!

না না, প্লিজ! আপনার সবকিছু আমাকে সারাক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। আমি আর কোনোদিকেই মন দিতে পারি না, এমনকি সোহানের কথাও ভাবতে দেন না আপনি আমাকে। আপনি একটা বিশ্রী রকমের নেশা। আমি এটা থেকে মুক্তি চাই। আমিও আপনার মতো হয়ে গেলে আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব, আমি জানি। আপনি অনেক সুন্দর করে কথা বলেন। ইস! আমিও যদি পারতাম! আপনি অনেক ভাল লেখেন। ইস! আমিও যদি পারতাম! আপনি অনেক চমৎকার করে ভাবেন। ইস! আমিও যদি পারতাম! আমার মধ্যে শুধুই অপূর্ণতা আর অপূর্ণতা! আপনার কথা ভাবলে সেই অপূর্ণতা আরও বেড়ে যায়। এর জন্য কে দায়ী? আপনিই তো! এখন আপনি আমাকে বাঁচার পথ দেখান।

কতদিন হল, তুমি আমাকে পড়?