কিছু ইশারায় শব্দ ঝরে

 
কী করছ তুমি? খেয়েছ রাতে?
আচ্ছা, যখন লিখতে বস, তখন কি ঘরটা তোমার
আলো-আঁধারের আলতো ছায়ায় ঢেকে রাখ?
আমাকে রাখ তো সাথে…মনে করে?
আমাদের সূচনাদিনের, আমাদের আঁতুড়ঘরের স্বপ্নগুলো রাখ সাথে?


খুব ইচ্ছে হয় জানো, তোমার হাতের ছোঁয়ায় হাজারটা রাত পার করে দিই!
বেঁচে থাকি শুধুই তোমার ওই চোখের মায়ায়…
কেন এমন লাগে, বলতে পার?
শূন্য এত কখনওই তো লাগেনি আগে, জানো সেকথা?


তোমার নেশা-জাগানো কণ্ঠজাদু,
তোমার দুষ্টুমিষ্টি চোখের খেলা,
তোমার ওম-জড়ানো ঠোঁটের কায়ায়…কতবার যে ঘর ছেড়েছি!
অমন পাগল করে কেন ডাকো, বলো না, প্রিয়?
তোমার শ্বাসের স্রোতে আমৃত্যুই ভেসে বেড়াব,
ভাসতে ভাসতে তলিয়ে যাব কোনও ঘূর্ণির গভীর পাকে…
হয়তো তখনই হারিয়ে যাব, একেবারেই হারিয়ে যাব!


রইল বাকি যে ‘আমি’টা তোমার, সে হারাবে কোথায়?
আর কতটা চাও আমাকে? আর কতটা গভীরে গেলে সত্যিকারের যাওয়া বলে?
এই দুটি চোখ দেবোই পেতে তোমার ওই চোখের ভাঁজে,
এক এক করে চাইব জবাব হাজারো লাজে।


এমনি করেই যাক না কেটে হেমন্তটা আগের মতো…
তোমার প্রেমের তাপে যদি হই পুড়ে ছাই,
তো ইচ্ছেমতোই পোড়াক আমায় পুরো একটা ‘তুমি’র অভাব!


ভয় পেয়ো না, এ অভাব আমায় পোড়ায় না গো…
এ অভাবই বরং খনন করে, আমায় নিপুণ-চালে চাষ করে নেয়!
জানি তো সেও…ধরেছ যে খুব আলতো ছোঁয়ায়, পলকা আশে---
এতটাই যে, কেবল এ দেহের রক্তকণাই হঠাৎ হঠাৎ টের পেয়ে যায়!


ওই দুচোখের ইশারাতে পুড়েছি যত,
তোমার মাদকঘ্রাণে, অনুভবে এ মন আমার ক্ষয়েছে যত,
হেরেছি আমি যত যতবার তোমার পরশ-শোধে, পরম-বোধে,
সে দুর্জ্ঞেয় ভাষা পড়তে পারে, এমন প্রেমিক, সত্যি বলো, কজন আছে?
আছে যারা, পোড়ে কি তারাও, সাথে পোড়ায় অবাধ…
ঠিক আমারই মতন?


এ কোন ধাঁধা কোন জীবনের?
চেনা কূল আজ অচেনা ভারি,
আমার এই আত্মা-ঘরে নেই ফুরসত,
শূন্য এ প্রাণ থাকে নির্জীব কোথাও পড়ে,
সমূহ হাহাকার জেগে ওঠে আজ, আর
রটে যুদ্ধ ভীষণ…এ-তটে, ও-তটে!
মুহূর্ততেই ফেরার তরী হারিয়েছে মাঝি বিষম বিপাকে!


নিঃসঙ্গতার কাফন-মিছিল রোজ রোজই নামে পথে,
এ দেহে বাঁধে দ্রোহজঞ্জাল, সময় তবু হার মানে না।
নিবেদিত প্রাণ ওষ্ঠ কখনও ছোঁয় না ভুলেও,
পাছে বাঁধা পড়ে যায়, পাছে হয় নিষ্প্রাণ!


তোমাকে তোমার ব্যথার কালিমা
ভেদ করে আজও দেখেনি এ-চোখ,
তবু এক চোখই তো বোঝে হৃদয়ের কী বোঝা!
তাই তো বৃথাই শূন্য দুটি হাত মেলে দিই পাওয়ার আশায়…
যদি-বা হঠাৎ ভুল করেও তারে পেয়ে যাই!