কিছু দুঃস্বপ্ন

 
আমি কোথায় চলেছি?
মিথ্যের অরণ্য জ্বলছে,
চিন্তা কি বোধ, মুছে গেছে,
কেউ মুখোশ পরছে, কারো মুখোশ পড়ছে।
কিছু গিটার এবং বেহালা
খুব দূর থেকে খুব কাঁদে,
ওদের সুরে স্মৃতি, স্মৃতি, আর স্মৃতি,
গুরুতর কিছু নয়, কোনো ব্যথাও নয়, শুধুই কান্না।


কুয়াশার প্লাবনে প্রার্থনা শুকিয়ে যায়, কে বোঝে!
আমাদের নতুন ঘরে একটিও প্রার্থনার ঘর না থাকায়
আমার মায়ের মন খারাপ ছিল।
তিনি হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে
ছাদেও কি একটা প্রার্থনাঘর রাখা যেত না?
ঈশ্বর কখনও আমন্ত্রিত হয়ে আসেন না,
অতো সহজ হলে অনেকেই তাঁকে দেখেটেখে সে কবেই নাচতে শুরু করে দিত!
আমি মাকে এইসবের কিছুই বলিনি, মাকে সবকিছু বলা যায় না।
একটি প্রার্থনার ঘরের জন্য মা আফসোস করেই যান।
আমাদের ঘরে প্রার্থনা হচ্ছে, ওদের ঘরে প্রার্থনাঘর হচ্ছে।


সম্পর্ক কিছু ভেঙে গেছে।
শরতের গোধূলির কিংবা শিশিরের রোদ্দুরের অসুস্থ বাতাসে শ্বাস
ফেলার অভিলাষ নিয়ে মন পাহাড়ের গভীরে ডুবে যায়।
স্বপ্নও কিছু ভেঙে গেছে।


একসময়, অনেক প্রবীণ মিলে
একটি বর্ষাভেজা ঘরের দেয়ালে সেঁটেথাকা দুষ্প্রাপ্য পোস্টারটি লিখেছিলেন।
বাসেথাকা ব্যস্ত লোকেরা
শীতের শ্বাসরোধ করছিলেন।
চোখ তো তখন ছুটছিল শীতল চাঁদে!
একটি ছোট ছেলে তার হৃদয় ল্যাম্পপোস্টের সাথে আটকে দিয়ে
টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে ছিল। বাতাসের উপর তার অভিমান দেখেও
কেউ বুঝতে পারেনি সে কী হারিয়েছে।
তবে আমরা দেখেছি, ওয়াকওয়েতে, ব্রিজের নিচে,
বিছানায়, চুম্বনে, নিজের পকেটে,
সবাই কিছু না কিছু খুঁজছেন।


কোথাও কিছু ভেঙে গেছে, কিছু ভুল ছিল,
ভেঙে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ভুলই ভুল হয়ে ওঠে না।
……সীমান্তের তারে মৃত পাখিরা আজও আমাদের অভিশাপ দেয়।
তুমি কেন বিষণ্ণ হয়ে আছো?......একটা কণ্ঠ শুনতে পেলাম!
……কারণ সেই মেঘগুলি
আবার আসছে, আবার বৃষ্টি হবে।
আবার কাদা হবে এবং
আত্মাতে ছড়িয়ে যাবে এক চিলতে ঘন কুয়াশা।
রাতে, আমি আবারও জেগে থাকতে পারি, প্রাচীর এবং খালগুলিতে ঝাঁকুনি উঠছে।
অবিরাম বৃষ্টি শুনতে আমি শিখে নিয়েছি। এ জীবন বৃষ্টিশোনার জীবন।


আবারও, আমি আশা করি,
এটি শেষ হবে, গতকালও যেমন হয়েছে।
আমি গতকাল কোথাও যেতে চেয়েছিলাম
কিছুটা সতেজ প্রাণের জালে আটকা পড়ে---
গ্রামে কিংবা পাহাড়ে, অথবা এমনও হতে পারে,
আমি জানিই না জীবনে অন্তত একবার হলেও ট্রেনে চড়ে কোথায় যেতে হবে!
এই সংশয়ের শেষ হবে। আমি আশা করছি।


এবং তারপর আনন্দ ব্যাপারটা প্রায়শই সামান্য পাঁচ মিনিটের মতো স্থায়ী হয়।
নির্বোধ সময়ের দায়……কখনওকখনও কেবল মুহূর্তের মতো টিকে---
এই যেমন রোদ, মঙ্গল, বাস্তব জীবন,
আর সবকিছু।
প্রায়ই দেখি, আমি আমার আত্মাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
তারপর কুয়াশা এসে যায়, এবং
ঘৃণা জমে কান্না হয়ে গড়িয়ে পড়ে।


আমি আমার ঘরে ঢুকি, দরোজা বন্ধ করে,
চোখ বন্ধ করে দিই।
……আমার সামনে, দূরবর্তী কোনো ট্রেনের
প্রচুর চাকা দেখতে পাচ্ছি, তার প্রাণের শব্দ শুনি আর দেখি,
রেললাইনের উপরে বিশাল সূর্য উঠছে……


ঘুমিয়েঘুমিয়ে ক্লান্তি এসে ভর করলে ঘুমভেঙে দেখি,
তারের জালের উপরে আটকেথাকা আমার দেহটি
কারুরই নজরে আসে না।
বৈদ্যুতিক আগুনের সোনালি রঙে একটা শরীর পুড়ছে,
সেটিও কারুর চোখে পড়ার মতো কিছু নয়। আমার সমস্ত দেহে কাঁপুনি, আমি কাঁপছি
জ্বরগ্রস্ত রোগীদের মতো, সেদিকে কারুর কোনো খেয়াল নেই।


গভীর জমাট বেঁধে রক্তক্ষরণ, আমি নিজেও আজকাল আর লক্ষ্য করি না।
আমি বুনোদের মতো চিৎকার করেটরে চুপ হয়ে যেতে শিখে গেছি,
প্রত্যেকে আমার পাশ দিয়ে যায়,
কেউ খেয়াল করে না।
………আমি ঘুমাই, তবু আমি শুনতে পাই।
আমি জীবনের কাছে পৌঁছেই মরি……
তারা খেয়াল করে না।