কিছু ব্যক্তিগত আঁধার

 
আমার একটা জগত আছে। নিকষকালো, অন্ধকার।
সে জগতের সবটুকু কালিমা, গ্লানি একা আমার অধিকারে।
আমার অধিকারের ভাগটুকু দিয়ে চোখে কাজল এঁকে
আমি ঘুমিয়ে পড়ি রাতবিরাতে।


আমার একার জগতটার চারদেয়াল গাঢ় নীলরঙের প্রলেপে ঢাকা।
ওরা বলে, কষ্টের রং নাকি নীল। আমিও আজ তেমনটা ভাবি।


আমার একান্ত একটা জলপ্রপাত আছে।
ওই জলপ্রপাতের গা ছিঁড়ে অবাধ্য নোনতাজলের ফোয়ারা
অনেক দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমার বৃত্তটাকে।


আমার নিজস্ব একটা মরুভূমি আছে।
সেই বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরের ঠিক মাঝখানটায় আমি থাকি, নির্বিকার।
এর হাজারমাইলের মধ্যেও কোনও জনমানব নেই।


আমার নির্জন একটা প্রবালদ্বীপ আছে।
সে দ্বীপের বিশাল বুকজুড়ে রাশি রাশি তাজা দুঃখের ফলন।
আমি একাই তার ভাগীদার, দ্বীপের কোনও বর্গাচাষি নেই।


আমার খুব গোপন নিঃসঙ্গ একটি অন্ধকার রাত আছে।
সেই রাতজুড়ে একাকিত্বের চাদরে-ঢাকা ভূরি ভূরি দুঃখ, অপ্রাপ্তি।
আমার সমস্ত না-পাওয়ার প্রহরগুলিকে আমি সেখানে রেখে দিই।


আমার একজন ব্যক্তিগত তুমি আছে।
তাকে পাবার জন্যে আমি কয়েক জন্ম ধরে ধ্যানস্থ আছি।
এতটা করেও, আজও তাকে নিজের মতো করে পাওয়া হলো না।


পৃথিবীটাকে আমার কাছে এখন জেলখানাই মনে হয়।
এ-প্রান্তে ও-প্রান্তে...যে-প্রান্তেই যাই, দেখি, সবাইকেই
জন্মের দায়টা শোধ করতে হচ্ছে বেঁচেথাকার সমস্ত গ্লানি হজম করে করে।


জন্মের পর থেকে শুরু করে আজ অবধি কেবল জ্যান্তই থেকে গেলাম,
বেঁচেথাকা আর হলো না।


একদিন দুঃখকে দুইহাতে ধরে মুখে পুরে ফেলতে চেয়েছিলাম।
তখন দেখি, দুঃখই আমাকে বহুআগে গিলে খেয়ে নিয়েছে, কখনও টের পাইনি।


আমার ভেতরে ব্যথায় কাতর একজন আমি আছে।
কেউ কখনও তার খোঁজ রাখেনি, এমনকি আমিও রাখিনি।