কুয়াশার খাম খুলে/আট

আসসালামুয়ালাইকুম। এই আরবি শব্দটার মানে, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আচ্ছা, মাঝেমাঝে তো আপনিও আমাকে সালাম দিতে পারেন, নাকি? আপনি তো শান্তিতেই থাকেন, ভাই! বরং আমার শান্তি দরকার। দয়া করে আমাকে সালাম দেন। মনেমনেই দেন নাহয়। আমি ঠিকই পেয়ে যাব আর শান্তিতে থাকব। আচ্ছা, সত্যিসত্যি খোদা হাপেজ, ডাগাস। টাটা। ভাল থাকবেন আর সবাইকে ভাল রাখবেন। পেপারে নিজের ছবি দেখে গুলগুলা হয়ে আমাকে ভুলে যাবেন না! আচ্ছা, আর জ্বালাচ্ছি না। বাই। ডাজ্ঞজ্ঞজ্ঞজ্ঞাস! মানে দ্য গ্রেট গ্রেট গ্রেটটটট……গ্রন্থিক! হাহ্‌! টাটা! টাআআটা! টাট্টা! (একটা জিনিস খেয়াল করসেন? আগে আমি টাটা বলামাত্রই বিদায় হতাম, অথচ যত সময় যাচ্ছে, ততই আমি যাচ্ছি-যাচ্ছি করেও সহজে চলে যাই না। এর মানে কী? আপনি তো জ্ঞানী মানুষ, একটু জ্ঞান খরচ করে মানেটা বলে দেন না!)

দ্য গ্রন্থিক! আমি আজকে লিখতেসি—এখন, মানে রাতে। গতকালকে লিখতে পারি নাই। আমার মন খারাপ ছিল। কী কারণে জানি না, কিন্তু ছিল। আমার প্রায়ই বিনা কারণে মন খারাপ হয়। এটা কি বয়সের দোষ? কিন্তু আমি তো দোষী হয় যে বয়স, সেটা অলরেডি পার করে আসছি। তাহলে? নাকি, যেকোনও বয়সই বয়সের দোষে দোষী হতে পারে?

আপনি আমাকে তিনদিন খেতে না দিয়ে বসতে না দিয়ে দাঁড়ায়ে থাকতে বলেন, পারব, কিন্তু আমার মন খারাপ করায়ে দেন তো আমি ৫ মিনিটও দাঁড়ায়ে থাকতে পারব তো না-ই, বসেও থাকতে পারব না। পরশু দিন দেখেন, জার্নি করে এসেও কত্ত কিছু লিখে ফেললাম আপনাকে (দেওয়া হয় নাই সেটা, দিবও না।) অথচ কালকে ক্যাম্পাস থেকে এসে কিছুই করতে পারি নাই। কালকে বাসায় এসে আমি ভেউভেউ করে কানসি। আমি আমার বাপ-মা’কে অসম্মান ছাড়া আর কিছুই দিতে পারি নাই! পারবও না হয়তো। আপনি জানেন না, আমার বেসিক কত্ত খারাপ! এই বয়সে নতুন করে কিছু শুরু করা সম্ভব না। আমি ভাল চাকরি পাইসি ঠিকই, কিন্তু আমি হার মানসি। আমার মেমরি যে কত্ত খারাপ, কত্ত খারাপ, এটা যদি জানতেন! আপনি তো আমাকে ভুল জানেন! সবাই ভাবে, আমি সব মনে রাখতে পারি। আমার প্রকৃত অবস্থা কেউ বিশ্বাস করবেই না।

আমি জীবনে কোনওদিন কোনও সেমিনার অ্যাটেন্ড করি নাই। আমাদের ডিপার্টমেন্টের কিসু করসি, তবে ক্যারিয়ার-ফ্যারিয়ার এসব নিয়ে কখনও কিসু করি নাই। এগুলার সম্পর্কে কিছু জানতামও না, আগ্রহও ছিল না। আমি গেসিলাম জাস্ট আপনার কথা শুনতে। আপনার এফবি প্রোফাইলে আপনার ক্যারিয়ার আড্ডা নিয়ে এতই পড়সি যে খুব দেখতে ইচ্ছা করত আসলে ওইখানে কী হয়!

আমি যখন অডিটরিয়ামে যাই, তখন হায়রে ভিড় আর আমি কাউকে চিনি না, কী করব, কোথায় বসব, কিছুই বুঝতেসিলাম না। আমি জানি, ফয়সাল ভীষণ ব্যস্ত, তাও ওকে ফোন করলাম আর তখন দেখি, মানে শুনি, দূর থেকে শানু আপু! শানু আপু! এইদিকে আসেন! জায়গা রাখসি! বলে আমার পিচ্চি ভাইটা চিলাচ্ছে। আহ! সেই ফর্সা ভাল ছেলেটা! আল্লাহ্‌ বাঁচাল! ধন্যবাদ দ্য গ্রন্থিক, আপনার কারণে ফয়সালের মত একটা ছোট ভাই পাইসি। ও না থাকলে যে কী হত! ফয়সাল যে কত্ত ভাল, আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। বডিগার্ডের মত আমার সাথে সবসময় ছিল। ওর বড় বোনের জন্য যা করত, আমার জন্যও তা-ই করসে। যা-ই হোক, আপনার কথায় আসি, আপনি ভাল বলেন, এ তো আপনি জানেন। আমি প্রথম দিন যেদিন হ্যালো করসিলাম, সেদিনই বুঝসিলাম যে আপনি অনেক উপস্থাপনা করসেন। ফোনে আপনার কথা পুরাই ভূত এফএম-এর উপস্থাপকটার মত লাগতেসিল। আমি তো ভাবসিলাম রঙ নাম্বার! পরে অবশ্য ক্যাঁক্যাঁ করেও মাঝেমাঝে বলসেন। মানে, আপনার উচ্চারণ একেবারেই যে শুদ্ধ, নিখুঁত, নির্ভুল, সেটাও না কিন্তু! যা-ই হোক, সেদিন দ্য গ্রন্থিক যা বলসিলেন, তার অনেক কিছুই পড়সি আপনার লেখায় আর অনেক কিছুই পড়ি নাই। ব্যাপক হাসাইসেন কিন্তু! আবার কান্দাইসেনও! আপনি এমন ক্যান? আপনি এসব ইচ্ছা করে করেন! আমি সব বুঝি।

আমি খুবই শক্ত মেয়ে, মানে বাইরে দেখাই শক্ত আরকি! তো, আমার ভিতরে কী চলে, এটা আমি ছাড়া পৃথিবীর কারও ধরার ক্ষমতা নাই। আমি ভিতরে অনেক দুখ নিয়েও ফান করতে পারি। তো একটা সময়, না একটা সময় না, কয়েকটা সময় আমার চোখে একটু পানি আসছে, কেউ বুঝে নাই কিন্তু, কিন্তু ওই যে একটা গল্প করলেন না? সবাইকে যখন বলতে হবে কে কী করে, তো ওই সময় একটু বেশি পানি চলে আসছে! আর এতই লজ্জায় পড়সি যে চিন্তাও করতে পারবেন না। চোখের পানি আবার চোখের ভিতর ঢুকায়ে ফেলতে পারলে খুব ভাল হত। ওইটা তো আর সম্ভব না, আল্লাহ্‌ দুশমনি করে ওই সিস্টেমটা রাখে নাই। আমি পানি ঢুকাতে পারতেসি না আর এত যে ভয় লাগতেসে! ফয়সাল দেখেই ফেলে নাকি! আল্লাহ্‌ বাঁচাইসে! কারণ, দেখি, ফয়সালের চোখেও পানি! সবাই মিলে কাঁদলে কোনও অসুবিধা নাই, কিন্তু একলা কাঁদলেই লজ্জা! আমি কান্নাকাটির পার্টনার পেয়ে গেসি দেখে স্বস্তিতে কান্তেসিলাম! এত ভয় পাচ্ছিলাম কারণ, ফয়সাল আমাকে আপনার কথা বলেবলে খুব রাগাচ্ছিল! কী কী সব যে বলতেসিল! অবশ্য ওইগুলা তেমন কিছু না, এই ছোটখাট দুষ্টুমিষ্টি ফাজলামো আরকি! আমার না এসব ভাইয়্যুমাইয়্যু বলতে খুব রাগ লাগে! কষ্ট করে ওদের সামনে বলতে হল! আপনি বলে না কিন্তু! সবার ক্ষেত্রেই আমার ওই রাগটা লাগে। তবু আপনাকে ভাইয়্যুমাইয়্যু ডেকেটেকে একাকার করে ফেলসি! ওইটা একটা কার্টেসি করসি, আর কিসু না। যা-ই হোক, আপনি ভাল বলেন। অনেক সুন্দর করে বলেন। আপনি আমার আগের জনমের জমজ খালাত ভাই না হলে আপনার প্রেমে পড়ে যেতাম। আচ্ছা, আপনার সাথে যে আসছিল, মানে সেতু ভাই কিন্তু ভাল আছে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা শুনতে আমার ভাল লাগে। উনি যেভাবে কথা বলসেন, ওইটা হল রাজশাহীর খাঁটি আঞ্চলিক ভাষা। তার উপর ঢেকুরমেকুর তুলে, চা-টা ফেলে, মানে কথাগুলাকে আরেকটু, মানে আমি জানি না ওটাকে কী বলে, মানে উনার কথাগুলাকে উনি ইচ্ছা করেই ইয়া করে ফেলসিল। ‘ইয়া’র জায়গায় কী হবে? আমি জানি না, আমি বাংলায় কাঁচা, তবে আমার ওই ‘ইয়া’টা পজিটিভ সেন্সে। উনিও ভাল মানুষ। আপনারা সবাই বোধহয় ভাল! আচ্ছা, বাংলা ভাষায় ইয়া আবিষ্কৃত না হলে অনেক ইয়া হয়ে যেত, না?

আচ্ছা, এখন আমি কিছু বলি, যা আপনার কানে যায় নাই……বলি, কেমন? আমার পাশে দুইটা মেয়ে বসছিল, তো ওরা উঠে গেলে একটা জালি হুজুর পাশে এসে বসে। আপনার কথা থামায়ে পিছ থেকে ফিসফিস করে একটা ভোটকামার্কা ছেলে কী জানি বলসিল না? তখন ওই হুজুরটা ভাবসে যে আপনাকে বোধহয় ও আপনাকে স্পিচটা শর্ট করতে বলসে। (আসলে কী বলসিল ওই ছেলেটা?) তো হুজুরটা তো হায়রে রেগে গেসে! ভুরুমুরু কুঁচকায় বলে, কী ব্যাপার! কথা থামালো কেন? ভাল লাগতেসে তো! যতক্ষণ খুশি বলুক না উনি! ওরা উনাকে থামাচ্ছে কেন! এসব, এসব বলসিল।

আবার নামাজের ব্রেকে আমার পিছের মেয়েরা কী গল্প করসিল, শুনেন। ওরা বলসে, দেখলি? আমি তো তোকে জোর করে নিয়ে আসলাম! তুই তো আসতেই চাচ্ছিলি না! অন্যজন বলে, হ্যাঁরে! আমি কী জানতাম! ভুল হইসে, এরপর থেকে আসব। এরকম সব কথা। সামনেও কিছুটা এই টাইপ কথা! আর একজনের কাছে কী শুনলাম, জানেন? তাকে আপনি চেনেন, তাই নাম বলব না। বলে কী, জানেন, গ্রন্থিক ভাইয়ার কত ইনকাম হল? লক্ষ টাকা নিয়ে গেল! আমি আপনার আড়ালে এই প্রথম আপনার গুণ গাইলাম। (একটু কষ্ট হচ্ছিল, তাও গাইলাম। কী করব! অন্য কিছু বললে চুপ থাকতাম বা মজা নিতাম, কিন্তু এই কথা শুনে কষ্ট করে ভুলটা ভাঙানোর চেষ্টা করলাম।) বললাম, আপনার স্ট্যাটাস থেকে নিয়ে কিছু কথা, আপনি কী বলেন, কী শর্ত আপনার সেমিনারের, এসব কথা। তো বলে, সে তো আমাদের কাছ থেকে নিবে না, কিন্তু আয়োজকদের কাছ থেকে তো ঠিকই নিবে! এটা শুনে আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম! তাইতো! আর তখন মনে পড়ল যে যে যে……যাকে ডাকতে বাসভাড়াও দিতে হয় না, সে কীভাবে টাকা নিবে! যা-ই হোক, আরও কিছু গুণকীর্তন গাইলাম ওর কাছে। সেও বুঝল। কিন্তু কোথা থেকে সে এটা শুনসে, এটা বলে নাই। শুধু বলল, কানে আসছে। যা-ই হোক, এই যে আমি আপনার হয়ে মানুষের ভুল ভাঙালাম তো আপনার কি উচিত না আমাকে ধন্যবাদ দেওয়া! মুখে দিতে গিয়ে যদি লজ্জায় কুঁকড়ে যান তো অন্তত মনেমনে দিয়েন। আচ্ছা? আর আপনি আরেকবার রাজশাহীতে এসেন। আর আমার সেকেন্ড চাকরির পর এসেন। (কিন্তু সেটা আপনার বিয়ের আগে হতে হবে! আমি হ্যান্ডসাম স্মার্ট বিবাহিতদের খুবই অপচ্ছন্দ করি।) তাইলে আমি আমার হাতের চা বানায়ে খাওয়াতে পারব। আমি হায়রে এত সুন্দর চা বানাতে পারি! কিন্তু খুব ঘন করে বানাই তো, পায়েসের মত হয়ে যায়! পেট খারাপ হয়ে গেলে কিছু বইলেন না, কেমন?

আচ্ছা, খোদা হাপেজ।

ও আচ্ছা, গ্রন্থিক, একটা সমাধান দেন, আমি ফেসবুক বন্ধ করতে চাই, আবার আপনার সব লেখা পড়তেও চাই। কী করব বলেনতো?

আচ্ছা, এটা তো পড়েন, পরের চিঠিটা না পড়লেও হবে, ওইটা এমনি, মানে ফাজলামো। মানে হইসে কী, নদীর ধার থেকে এসে আমার তো কাজ নাই, বাসাতে কেউ নাই, রাতে খালামনির সাথে খাব। তো কী আর করা, সারাদিনের কথা মনে পড়তেসিল, তাই লিখলাম। প্রথমে যা বলি, ভুলভাল ভরভর করে লিখে ফেলি। (নইলে কী বললাম, ভুলে যাব যে! আমি কিন্তু আপনাকে চিঠি লিখি না, চিঠি বলি।) আমার লিখতে সময় লাগে না, যা মনে আসে, তা-ই লিখি। (আপনার মত ভাবতে হয় না আমাকে।) তো প্রায় প্রত্যেকটা শব্দেই ভুল থাকে। ‘ক’-এর জায়গায় ‘খ’ বা ‘গ’-এর জায়গায় ‘ঘ’, এরকম হয়। তারপর অনেক সময় নিয়ে ওইগুলা ঠিক করতে হয়। গতকাল চিঠিটা লিখার পর, মানে যে-ই বানানটানান দেখা শুরু করসি, তখনই খবর পেলাম যে, আমার বোনের পেটের ভিতর বাবু নাকি নড়তেসে না! দুপুর থেকেই নড়ে নাই, কিন্তু তখনও ডাক্তারকে কিসু জানায় নাই, পরে রাতে ডাক্তারকে ফোন করলে ডাক্তার বলে, আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে! অত রাতে! বাসার যে কী অবস্থা হয়ে গেল! ফোনে আম্মা সমানে কাঁদে, এদিকে খালামনি কাঁদে, খালু কাঁদে, এদেরকে সান্ত্বনা দিতেদিতে আমি তো শেষ! আমাকে সান্ত্বনা কে দিবে? আমি চোখের পানিতে খুব বেশি প্রভাবিত হই, তাও আবার আপনজনের চোখের পানি দেখতে হচ্ছে! বুঝেন অবস্থা! আমার শুধু মনে হচ্ছিল, আমার জন্যই এমন হল! বাপ-মা কে না জানায়ে ওদের ঠকায়ে এভাবে ঘুরে বেড়ালাম বলেই আল্লাহ্‌ এরকম করসে নাকি! আচ্ছা, আমি কী এমন করসি? শুধু একটু দূরেই গেসি। এই কাজটা যদি আমি চাকরি পেলে চাকরির খাতিরে কলিগদের সাথে করতাম, তখন কিসু হত না? যা-ই হোক, পরে দেখা গেল, বেবির সব ঠিক আছে। ১০০% ভাল আছে। ভুটকি কত শয়তান, দেখসেন? মানুষ এত টেনশন করে বাচ্চাবাচ্চা করে এত পাগল কেন হয় বুঝি না! অ্যাডপ্ট করে নিলেই তো হয়! কী জানি বাবা! বুঝি না আমি মানুষের সাইকোলজি। আমার দেখা গেল, কালোওওওও একটা ভূতের সাথে বিয়ে হয়ে ক্যালামার্কা একটা বাচ্চা হল, তখন কী হবে? এত রিস্ক নেবার দরকার কী? তার চেয়ে সুন্দর দেখে একটা বাচ্চা অ্যাডপ্ট করে ফেললাম! অতো পেইনও নাই, বাচ্চাও সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর!

যা-ই হোক, পরের চিঠিটা একটা ফাজলামো। পাঠাব না ভাবসিলাম, কিন্তু দেখলাম যে আপনি ওটা না পড়লে কিসু হবে না, কিন্তু পড়লে রেগে যেতে পারেন, তাই পাঠাই দিসি। আপনি তো এখন আর রাজশাহীতে নাই! কী আর হবে রেগে গেলেও? অবশ্য, না পড়লেও কোনও অসুবিধা নাই, তেমন কিসুই না ওইটা।

আচ্ছা, এবার সত্যিসত্যি খোদা হাপেজ!

আবার টাটাও। সাথে একটা বাইবাইও।

কালকে ডায়রিতে কিছু কথা লিখসি। আপনাকে দেখাই?

প্রয়োজনে ভালোবেসো না, ঘৃণাই করো, তবু কিছু প্রত্যাশা কোরো না। তুমি আমায় ভালোবাসো বলেই আমি তোমায় ভালোবাসি। তবে এর বিনিময়ে আমি তোমার কাছ থেকে কিছুই প্রত্যাশা করি না। তুমি যা-ই দাও না কেন, যত্ন কিংবা অবহেলা, দুইই হাঁটুগেড়ে বসে হাতপেতে নিই; আমার ভালোবাসার বদলে তুমি উদাসীনতা দিলেও তা-ই নিতাম, বিশ্বাস করো—কষ্ট দিলেও তার বদলে ভালোবাসাই দিতাম! আমার ভালোবাসায় কোনও প্রত্যাশা জন্মায় না, আমার ভালোবাসায় কেবলই ভালোবাসা জন্মায়। ভালোবাসায় কেবলই মনেরাখা থাকে না, ভুলেযাওয়াও থাকে। তোমার ভালোবাসায় যে প্রত্যাশা জন্মায়, তা আমাকে ভীষণ রকমের অপরাধী করে দেয়, কারণ তুমি যা প্রত্যাশা করো, আমি তা দিতে পারি না যদিও আমি জানি, আমার আশাতীত অনেক সুখ আর শান্তিই তুমি আমাকে বহু বহুবার দিয়েছ যার কণামাত্রেরও যোগ্য আমি ছিলাম না, এখনও নই; আমার উদাসীনতার অর্থ ভালোবাসার অনুপস্থিতি নয়, অথচ তুমি আমায় কী সহজেই ভুল বোঝো, তাই অপরাধবোধটা অমন তীব্র হয়েই কাজ করে। আমায় প্রিয় বোঝো না নাহয়, সেও ভাল, তবু ভুল বোঝো না। কেউ না বুঝলে কিছু হয় না, কিন্তু ভুল বুঝলে বাঁচতে কষ্ট হয়। আমায় মনে রেখো না, ভুলে যেয়ো, তবু এমন করে প্রত্যাশার শেকলে আমায় বেঁধো না। কথা দিচ্ছি, আমি মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও তোমার কাছ থেকে এক ফোঁটা জলও প্রত্যাশা করব না, আমার কাছে প্রত্যাশার চাইতে মৃত্যুও শ্রেয়, সময় পেলে তুমি এসে আমার নিথর দেহটাকে বিদায় জানিয়ে যেয়ো, যেমনি করে ছোটবেলায় পুতুলবিয়ের পর নিষ্প্রাণ পুতুলের দুঃখে কাঁদতাম, তেমনি করে একটু কেঁদেই নিয়ো নাহয় নিজেকে প্রবোধ দিতে…….ওসব কিছু না করলেও এ পৃথিবীর কিছুই এসে যাবে না, তবু এ দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ তোমার কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা করে তোমায় কখনওই বাঁধব না।

ভালোবাসি, তাই একটাই চাওয়া, ভাল থেকো।

আমি কেন তোমায় ভালোবাসি? কারণ, তোমাকে ভালোবেসে আমি আনন্দ পাই। তোমার যত্ন নিলে আমি আমার হৃদয়ে যে সুখ অনুভব করি, তা পেতেই আমি তোমার যত্ন নিই। এ মনের ঘরে তোমাকে বসিয়ে আদর না করলে মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে থাকে বলেই আদরটা করি। আমার প্রতি তোমার উদাসীনতা যেমনি তোমায় ভাল রাখে, তেমনি তোমার প্রতি আমার মনোযোগ আমায় ভাল রাখে। তোমার জন্য কিছু করতে পারলে আমার মনে আনন্দ আসে, শান্তি আসে, সুখ আসে, তাই আমি তোমার জন্য কিছু করার চেষ্টা করি; বস্তুত আমি নিজেকে স্বস্তিতে রাখতেই তা করি, মানে আমি যা করি, আমার নিজের জন্যই করি, সেখানে তুমি একটা উপলক্ষমাত্র! আমি নিজেকে বোঝাই, আমার নিজের প্রতি তো আমি সৎ আছি! এই সততার আনন্দ ও দায়ভার, দুইই আমার নিজের। আমার এমন আন্তরিকতা হয়তো তোমার লাগে না, কিন্তু আমার নিজের জন্যই ওটা লাগে। আমি তো জানিই, আমার যত্ন কিংবা আদর, এর কিছুই তোমার জন্য অপরিহার্য কিছু নয়, তুমি এসব ছাড়াই দিব্যি ভাল আছ, আমার মনে তোমার জন্য কি ভালোবাসা, কি ঘৃণা, যা-ই থাকুক না কেন, ওতে তোমার কিছুই এসে যায় না, তবু তোমার দেখভাল না করলে আমি যে ভাল থাকতে পারি না! আমি কী করব, বলো! আমাকে তুমি ভালো বাসো কি বাসো না, সে চিন্তা আমার মাথায় আসে না অতটা, কারণ আমি তোমাকে তোমার ভালোবাসা কিংবা উদাসীনতার বিনিময়ে ভালোবাসি না, তোমাকে ভালোবাসা ভিন্ন ভালথাকার অন্য কোনও উপায় আমি এখনও খুঁজে পাইনি বলেই বাসি। তোমাকে ভালোবাসি, তোমার কথা ভাবি, তোমার খেয়াল রাখি, এসবই আমাকে আমার পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখে। তোমার কাজগুলি করে দিই তোমাকে একটু আরামে রাখতে নয়, বরং তোমার কাজগুলি করে দিলে তুমি আরামে থাকতে পারবে, এই বিশ্বাস আমাকে বাঁচতে সাহায্য করে। তুমি চাও বা না চাও, আমি তোমাকে ভালোবেসে যাবোই, কারণ তা না করলে আমি সারাক্ষণই এক ধরনের অন্তরজ্বালায় পুড়তেই থাকব, পুড়তেই থাকব। কী দরকার, বলো? নিজেকে ভালরাখার এতো সহজ একটা বুদ্ধি থাকতে কেন মিছেই নিজেকে কষ্টে রাখা? তোমাকে ভালোবাসা কোনও নিঃস্বার্থ কিছু নয়, আমি নিজেকে ভাল রাখতেই তোমাকে ভালোবাসি। এটা স্বার্থপরতাই তো, না? যে ভালোবাসে, সে নিঃস্বার্থ নয়, স্বার্থপর। তাকে ভালোবাসতে না দিলে সে হয়তো মনের কষ্টে মরেই যাবে, সে বেঁচে থাকতেই ভালোবাসে। নিজেকে সুন্দর রাখতে, নিজের মনকে পবিত্র রাখতে, নিজের হৃদয়কে হাসিখুশি রাখতে সে ভালোবাসে। সে যাকে ভালোবাসে, তার সুখ দেখলে সেও সুখী হয়, হয়তো সে সুখের ইতিবৃত্ত কখনওই তার ভালোবাসার মানুষটি জানতেও পারবে না, তবু বাঁচতে হলে যে সে সুখটা তার লাগবেই, তাই সে তাকে ভালোবেসে তাকে, প্রকারান্তরে নিজেকে সুখী করার জন্য সবরকমের চেষ্টাই করে। এমনি করে সে নিজেকেই ভাল রাখে, আনন্দে রাখে, সুখী রাখে……স্বস্তিতে বাঁচায়!

ডায়রিতে এইটুকুই লিখসি। আর কিছু না। আর হ্যাঁ, ওই তুমি কিন্তু আপনি না। ভাব নিয়েন না। হুহ্‌!

দ্য গ্রন্থিক, আসসালামুয়ালাইকুম। আপনার নাম যে ডাগাস দিসি, কেন দিসি, তার শানেনযুল জানতে ইচ্ছা করে না আপনার? আমার তো জানাতে ইচ্ছা করে আপনাকে। “তোমায় কিছু দেব ব’লে চায় যে আমার মন, নাই-বা তোমার থাকল প্রয়োজন।।” আমার ডায়রির কিছু অংশ আপনাকে দেখাই, বুঝে যাবেন, কেন আপনাকে ডাগাস ডাকি………আপনাকে আর কতবার জিজ্ঞেস করতে হবে যে আমি আপনাকে কী বলে ডাকব? অনেক সুযোগ দিসি, আর না। এখন আমিই বলব যে কী বলে ডাকতে হবে। আমি ভেবে ফেলসি কী বলে ডাকব। ডাগাস!!! দ্য থেকে দা, কিন্তু ইংরেজীতে হল da মানে ডা, গ্রেট থেকে গা (গ্রে হতে পারত কিন্ত লিখতে কষ্ট হবে, তাই গা) আর শানায়ার ইংরেজি অক্ষর এস থেকে স। কেমন হইসে নামটা? ডাগাস! ডাগাস! ডাগাস! ইইইইইইই……আমার খুউউব্বি ভাল লাগসে নামটা। প্লিজ মানা করবেন না, ভাই! আপনার ভাল লাগে নাই? তো বলে দেন কী বলতে হবে? আপনার আবার কীসের ভাললাগা! আপনার পছন্দের যা ছিরি! এহহহ্‌!……..এটাই ডাগাস নামের কাহিনি।

আমি একটা জিনিস বুঝলাম না, পুরা কন্ট্রাস্ট একখানা, সরি দুইখানা কাপড় দিয়ে কনুইয়ের কাছে পট্টি দেওয়া জামা পরার মানে কী? কী জানি বাবা! আমি খ্যাত মেয়ে আছি, এইসব ইশটাইল বুঝিটুঝি না। গতকাল ভাল দেখাচ্ছিল, তবে কাছ থেকে না, দূর থেকে। কাছ থেকে আপনি অতটা সুন্দর না। আমার কাছে ছেলেদের একটু ডার্ক হলেই ভাল দেখায়। অবশ্য আমার কাছে ভাল দেখানোটা আপনার জন্য খুব জরুরি না। না আপনি ডার্ক, না আপনি টল, না আপনি হাসাতে পারেন! কিছুই না আপনি! আপনি একখান ঘোড়ার আণ্ডা! আমি পুরাই হতাশ! আপনি খালি ঢং করেকরে ছবি তুলতে পারেন। আমি কিন্তু কয়েকবার (সবসময় করতে মনে থাকে নাই, ভুলে যাই) কয়েকবার আপনাকে লক্ষ্য করসিলাম (অতি সাবধানে), কিন্তু আপনার দিকে তাকাতে গেলেই বিনা কারণে আমার এতই হাসি আসতেসিল যে কী আর বলব! এ কারণে যে জিনিসটা আমি আগেই দেখব ভাবসিলাম, সেটা আর দেখা হয় নাই! ছবিতে দেখি, আপনার কানটা খুবই বড়, ওইটা নিয়ে আমার ব্যাপক ইন্টারেস্ট ছিল, অথচ কানটার দিকেই তাকানো হল না! আর গান? হয়তো ভালই গান আপনি, তবে আমি আরেকটু বেশি ভাবসিলাম। (হেমন্তের মত…..হাহ্‌!) খুব ভাল জোরে বা টেনে গাইতে পারেন, তবে আওয়াজটা অত মিষ্টি না, মানে গায়ে কাঁটাদেওয়া টাইপ না। আমি হেমন্তের গান যত শুনি, আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। একটা মজার ব্যাপার কী, জানেন? আপনি কিশোর কুমারের যে দুইটা পরপর গান গাইলেন, আমার কিশোর কুমারের ফোল্ডারে ওই দুইটা গান পরপর আসে। কিশোরের বাংলা গানের চেয়ে আমার হিন্দিটা বেশি ভাল্লাগে। বিশেষ করে আরডি বর্মণের সুরে। পঞ্চমদা (আরডি বর্মণের ডাকনাম) আমার মতই একটু শানায়া আছে। উনার মাথায় একটু ছিটফিটও আছে, যা আমার খুউব পছন্দ। জিনিয়াস মাত্রই ছিটওয়ালা পাবলিক! উনার সাথে গুলজারের বন্ধুত্বের গল্পগুলা পড়লে খুব মজা পাবেন। বুঝবেন, বর্মণজি কী বস্তু! ওই হুরররর্‌-ফুরররর্‌ জাতীয় বিভিন্ন রকম উদ্ভট শব্দ দুঃখ মেখে করে আর কিম্ভূত আওয়াজে মাঝেমধ্যেই অনেক গান গাইসেন উনি, এটা আমার খুব ভাল লাগে। উনি অবশ্য বাংলা অনেক ভাল গানও করসেন, তবে সেগুলা ভদ্র। আমি গান গাইতাম, কিন্তু আমার ঠাণ্ডাফাণ্ডা লেগে গলার অবস্থা সেইরকম হইসে। আমার বোন এত সুন্দর গান করে যে আমি গাইলে সবাই হাসে। তাই আর গাই না। এক বাসায় দুই বোন গাইতে পারলে তুলনার ব্যাপারটা চলেই আসে। তবে গিটারের ওস্তাদের সাথে আর গিটারের সাথে গাইলে আমার খুব হাস্যকর গলাও একটু কম হাস্যকর হয়। বড় সমস্যা হচ্ছে, আমার গানের কোনও কথা কিছু মনে থাকে না যে! মানুষ না দেখে লিরিক মনে রেখে গান করে ক্যাম্নে!

ডাগাস, আমি আপনাকে বলসিলাম যে ছেলেপেলেদের কাছে আমাকে বড় বোন বলে পরিচয় করাবেন। শুনলেন নাতো! লেলঠি বানায়ে ফেললেন তো! ভাল করসেন, আমার তিনজনকে উত্তর দিতে হইসে যে আমি হিন্দু না, আমি এক্কেরে সাচ্চা খাঁটি মুসলমান। ভাবসিলাম, কালেমায়ে তাইয়্যেবা শুনায় দিব কি না! একটা সত্যি কথা বলব? আমার না ছেলেপুলেগুলার সাথে আপনাকে নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগতেসিল। আমি নিজে তুলতেসিলাম না আপনার কথা, তবে অতি সাবধানে ওদের দিয়েই তুলায়ে দিচ্ছিলাম। আপনাকে নিয়ে কথা বলতে আমার ভাল লাগে। আমার কেউ তো আর আপনাকে চিনে না, তাই আপনাকে নিয়ে কথা বলতেও পারি না। তবে বিভিন্ন অজুহাতে আপনার কথা বানায়ে-বানায়ে বলি। আম্মার সাথে বলসি দুই-একদিন। সবই বানায়ে-বানায়ে! হাহ্‌! বলসি যে আপনি একটা খুবি গরিব দুখি মেধাবী ছেলে! আপনার একটা ভাল শার্টও নাই পরার জন্য। হাহ্! মেধাবী কথাটার সাথে গরিব কথাটা আসলে ফ্রিফ্রি চলে আসে! কেন আসে, বলেনতো? কেউ অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলে কেন হুদাই না জেনেই লোকে বলে, রোড অ্যাক্সিডেন্টে মেধাবী শিক্ষার্থীর মৃত্যু? ওই ছেলে যদি ক্লাসে বছরের পর বছর ফেল করে, তখন? কেউ মারা গেলেই ওকে বানায়ে-বানায়ে হলেও ভাল বানাতে হবে নাকি? মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যা কথা বললে কি গুনাহ্‌ হয় না? আচ্ছা, যা বলতেসিলাম। বড়লোক বললে তো আর মায়ের সিমপ্যাথিটা আসত না, আবার কথাও আগাত না। আপনার ফকিরকে বড়লোকি স্টাইলে টাকাদেওয়া দেখে গা জ্বলে। আমি তো জীবনেও দিতাম না। আমি গরিব মানুষ তো, তাই! চা খাওয়াই, শিঙাড়া খাওয়াই, কিংবা ওদের সাথে খাই, গল্প করি। (ভার্সিটিতে এখন আমার ফ্রেন্ড নাই তো, খালি ওরাই আছে!) তবে শর্ত যে, থুত্থুড়ে বুড়া বা থুত্থুড়ি বুড়ি হতে হবে আর লোভ কম করতে হবে, মানে ধান্দাবাজ হওয়া যাবে না।

আমার ধারণা, আমি মানুষ বুঝি! হাহ্‌! আপনাকে বুঝতে পারতেসি না কেন? সামনাসামনি আপনি এত সুন্দর নম্র ভদ্র লেজবিহীন, তো ফেসবুকে এত অ্যাগ্রেসিভ লাগে কেন? আপনি ফেসবুকের জন্য কোনও এক্সট্রা লোক নিয়োগ করেন নাই তো? কী জানি বাবা! বড়লোকদের ব্যাপার-স্যাপারই তো আলাদা! আমি মূর্খ কাঠবলদ, তাই জ্ঞানীদের যেমন এড়ায়ে চলি, তেমন আমি নিজে ফকির বলে বড়লোকদেরও এড়ায়ে চলি। আপনি আবার দুইটাই, তাও আপনার পিছেপিছে ঘুরতেসি! নীতিভ্রষ্টা হয়া গ্যালাম রে! আমার বাপ তো নন-ক্যাডার সার্ভিসে ছিল, তাও স্কেল তো একই, তো আব্বা তো আপনার চেয়ে সিনিয়র ছিল, মানে বেতন তো একটু হলেও বেশি, (আমার বেতন বেশি হলেই সিনিয়র-সিনিয়র লাগে) কই, আব্বাকে তো এমন দেখি নাই! আচ্ছা, আব্বার কথা বাদ, আমার আত্মীয়স্বজন, যারা ক্যাডার আর যারা সবাই আপনার চেয়ে সিনিয়র, তাদের সাথে বেড়াতে গেলে তো তারা ৫০ টাকা ভাংতি নাই বলে এমনিএমনি টিপ দেয় না! ডাগাস, ঘুসটুস খান নাতো আবার? প্লিজ হ্যাঁ বইলেন না! তাইলে আমি এক্ষনি দশতলার ছাদ থেকে লাফ দিব! তারপর যদি মরে যাই, ভূত হয়ে আপনাকে জ্বালাব। মানুষ হয়ে যেরকম জ্বালাই……আর ভূত হলে কী করব, ভাবেনতো? তাও আবার মেয়েভূত! তার চাইতে বলেন যে, আমার ফ্যামিলিট্যামিলি এখনও হয় নাই তো, তাই টাকা থেকে যায়। বলেন না! এটাই সত্যি। না?

আজকে ফেরার জার্নিটা অ্যাত্ত যে বোরিং ছিল! পান্থ ভাইকে আনলেন না কেন? ওই ভাই কত সুন্দর গল্প করে আর হাসায়! আচ্ছা, আপনি গল্প না করেন, হাসাতে না পারেন, কিন্তু মুখ হাঁ করে না ঘুমায়ে আর এত্ত জোরে নাক না ডেকেও তো থাকতে পারতেন? কী? পারতেন না? আপনি গাড়িতে ঘুমালে কিন্তু আপনাকে খুবই হাস্যকর দেখায়! আচ্ছা, ফাজলামো করলাম। আপনি আবার যে ঢিলা……ফাজলামো করার পর বলে দিতে হয়, নয়তো আবার ব্যাখা দিতে শুরু করবেন, কই নাতো! আসলে আমি একটু টায়ার্ড ছিলাম, পাওয়ার ন্যাপ নিচ্ছিলাম, ওইটা আমাকে বেশি কাজ করতে সাহায্য করে, আমি রাতে কম ঘুমাই তো, তাই……ব্লা ব্লা ব্লা! আবার বলেন যে মেয়েদের হিউমার-বোধ কম! কোন মুখে যে বলেন এমন কথা! নিজের দিকে তাকায়ে দেখেন! হুহ্‌!

আপনার ড্রাইভারটাকে পছন্দ হইসে। আমার মতই বেশি বকবক করে। দেখতে আর কথাতে পুরাই আমাদের করিম কাকুর মত, ইনি অবশ্য একটু লম্বা। করিম কাকু আমার বাপের ড্রাইভার ছিল। উনি অবশ্য এত বকবক করত না আর আব্বার বা আমাদের সামনে কাউকে গালি দিত না। করিম কাকু এখনও আমাদের জন্য লুকিয়ে-লুকিয়ে চকলেট আনে, এখন অবশ্য খুব কম আসে বা আসেই না, ঈদে আসে। চকলেট মানে আবার চকলেটবার ভেবেন না, চকলেট মানে ক্যান্ডি বুঝালাম। খ্যাত তো, তাই ক্যান্ডিফ্যান্ডি বলতে পারি না। আমার কাছে চকলেটও চকলেট, ক্যান্ডিও চকলেট। আপনার অফিসের বাথরুমটা অত ভাল না, তবে নাস্তাটা আমার পছন্দ হইসে। উফফ্‌! কত্ত ঘুরলাম! থ্যাংক্যু, ডাগাস! আপনি আমার কেউ হন না, তাও মনে হল, কে জানি হয়ে গেলেন! চিন্তা নাই! ছোট ভাই! ছোট ভাই! নাহ্‌, আগের জনমের জমজ খালাত ভাই। ও আচ্ছা, আপনাদের সবার নাকি মিষ্টি খেয়ে পেট খারাপ হয়ে গেসিলো? হাহ্‌! আল্লাহ্‌ বাঁচাইসে আমাকে! মেয়েমানুষের পেটখারাপ আবার একটু মানইজ্জতের বিষয়! খালি বাথরুমে দৌড়ানো ছেলেদের জন্য কোনও ব্যাপারই না! আমি যা খেলাম, সবাই তো তা-ই খেলেন! তাইলে? বোধহয় ড্রাইভার সাহেব অভিশাপ দিসিলো! আমাকে দেয় নাই, বাব্বা! আমি উনার একমাত্র শ্রোতা ছিলাম তো, তাই! আচ্ছা এমন নাতো যে আপনি যখন হাঁ করে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন মাছি ঢুকে গেসিলো? আচ্ছা, পেটখারাপ হল তো নদীর ধারে ভকভক করে ফুচকা খেলেন যে! আমি নিশ্চিত ছিলাম যে……থাক! দেখেন, আমি আপনাদের সবার চাইতে স্ট্রং! আমি ঘুমাই নাই, ক্লান্ত হই নাই, কিছুই হই নাই। আবার বাসায় এসে লিখতে বসছি।

আচ্ছা, আমাকে আপনার পাগলটাগল মনে হয় নাই তো? আমি বাসায় আসার পর আমার ছোটবোনরা হেসেহেসে বলে, আপু, তুমি এভাবেই চুল নিয়ে ঘুরসিলা! কী করব বলেন, আমি দুইদিনই চিরুনিমিরুনি ক্লিপটিলিপ যা-যা আছে, সব ব্যাগে করে নিয়ে গেসিলাম, অথচ একটা দিনও খুঁজে পেলাম না……আবার বাসায় এসে একদিন বাসাতেই পেলাম, আরেকদিন ব্যাগেই ছিল, কিন্তু খুঁজে পাই নাই। আমি তাড়াহুড়ায় থাকলে সবকিছু একেবারে গুলায়ে ফেলি, কাজের চেয়ে অকাজ বেশি করি। আর ভালই হইসে, আমার দরকার নাই অত মিথ্যা করে পরিপাটি হয়ে থাকার। আমার সবকিছু ক্যাজুয়াল ভাল লাগে। আমি পারি না ওসব ঢং করতে! আরেকটা কথা বলতে ইচ্ছা করতেসে। আমার ওই দুই বোন কিন্তু আমার চেয়ে ১০ আর ১২ বছরের ছোট আর বড়টা আমার চেয়েও ইয়া মোটা আর প্রায় আমার সমান লম্বা, ছোটটা আমার চাইতে চিকন, কিন্তু আমার চাইতে দেড় ইঞ্চি লম্বা! ভয় পাইলেন নাকি? হিহিহি……

আমার ভাগ্যটা কত ভাল দেখেন, আপনিও আসলেন, আবার আমি রাজশাহীতে একা হলাম! উফফ্‌ শান্তি! খবরদারির কেউ নাই, বকার কেউ নাই, যা খুশি, তা-ই করো! পুরাই রাজার হালে কয়টা দিন কাটল! রাতের বেলা অবশ্য খালামনি ঘুমাতে এসে বিরক্ত করে! উনি ব্যাপক প্যানপ্যানানি টাইপের। তাও, যা পাইসি, তা-ই লাভ! আমি মাকে বলসি যে, কনভোকেশনের ফর্ম-ফিলাপের জন্যে সবাই আসছে আর তাই ওদের সাথে আমি একটু ঘুরব। কেউ যদি জানে আমি এভাবে অপরিচিত একটা ছেলের সাথে লেলঠিগুয়ের মত এতদূর গেসি, প্রথমত বিশ্বাস করবে না, আর দ্বিতীয়ত কী করবে, আমি জানি না। আমার কোনও আইডিয়াই নাই ওরা জানতে পারলে যে আমাকে কী করবে! আসলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। ওদেরই বা কী দোষ? ওরা তো কেউ চিনে না আপনাকে!

আচ্ছা, আপনি আমাকে চার্চে নিয়ে গেলেন নাতো! আমি অবশ্য আগেই জানতাম! আপনি একটু মুনাফিক আছেন, ডাগাস। ও আচ্ছা, আসল কথা বলতে ভুলে গেসি, আপনার সাথে আমার কথা হল, আপনি আমাকে আসতেও বললেন আর কোন আক্কেলে আমাকে রেখেই সবাই মিলে ঘুরতে চলে যাচ্ছিলেন? আপনার আত্মবিশ্বাস এত কম ক্যান? আসব যখন বলসি, আসব, আর না পারলে অবশ্যই জানাব। না আমি আপনার মত সেলিব্রেটি, না আমি আপনার মত ব্যস্ত, না আমি আপনার মত মুনাফিক, না আমি আপনার মত জটিল। এসব ঢং করার মানে কী? নাকি আপনি ভয় পান? আমার মত ইশমার্ট হতে পারেন না? আরররে, ভুলে যান কেন! আমি আপনার ভক্ত তো! অন্যকিছু নাতো, ডাগাস! আপনার জটিলতা কি শুধু এখানেই যে আমি একটা মেয়ে? তাইলে কি আমি সেক্স চেঞ্জ করে ছেলে হয়ে যাব? বলতেসেন? জেন্ডার রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি করতে বলতেসেন? এই ইংরেজীটা ঋতু দিদি শিখাইসে। আচ্ছা, আপনি বেশি ইংরেজি জানেন, না ঋতু দিদি? বলেন তো, ঘোরানো, মানে প্যাঁচানো সিঁড়ি ইংরেজি কী? আপনি যদি বলেন, কলাগাছ, তাও কিছু বলার নাই, আবার যদি বলেন, গুগুলেতু, তাও মেনে নিতে হবে, কারণ আমি জানি না এটার ইংরেজিটা। আচ্ছা, আপনি কি একবারও বলতেসেন না যে, অই ছেমড়ি, তুই যে আমার এত নেগেটিভ দিক খুঁজে বের করিস, তুই নিজে কী? একবারও বলেন নাই মনেমনে? এখানেই তো মজা, ডাগাস! ছেলিব্রেটি হবেন আর সবাই আপনাকে এমনি ছেড়ে দিবে? কাভি নেহিইইই! আচ্ছা ডাগাস, অনেক বেশি কথা হয়ে যাচ্ছে আজকাল। কী করব বলেনতো? মুখ বন্ধই হচ্ছে না! আচ্ছা, কাল তো মোটিভেশন ডে! দেখা হবে শেষবার। ডাগাস, দ্যাখেন, সত্যিই আমি কান্তেসি……..উইয়া………উইয়া…….আচ্ছা, খোদা হাপেজ। উইয়া……..উইয়া……..

আমি আপনার পার্সোনাল লাইব্রেরিতে একটা বই দান করতে চাই। বইটা আমি এক লাইনও পড়তে পারি নাই। অতি বিচ্ছিরি একখান বই! আমাদের পড়ার মত না। বইটা আসল, আবার আসলও না। মানে বইটা পুরনো, কিন্তু ১০০% প্রাচীন না, নতুন এডিশনের, না প্রিন্টের, কী জানি বলে! আপনাকে কেন দিতে ইচ্ছা হল? আপনাকে নাতো, আপনার লাইব্রেরিকে। যখন আমি আপনাকে ইনবক্স করে শুধুই বকা দিতাম, তখনও আমি ভাবতাম, আপনার লাইব্রেরিতে একটা বই দিব। এমনি-এমনি। ঢং করে আমি গিফট করি না ভাই, আমার কাউকে কিছু দিতেও লজ্জা লাগে। তাই দিতেও পারি না। ও আচ্ছা, তার আগে তো জেন্ডার রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি করাতে হবে, তাই না? কিন্তু সার্জারি করাতে অনেক টাকা লাগবে যে! কে দিবে? আপনি? তাইলে ঠিক আছে।

ও আচ্ছা, ডাগাস, বলতে ভুলে গেছি, আপনি যখন চিল্লায়ে নাক ডেকেডেকে হাঁ করে ঘুমাচ্ছিলেন না, তখন আপনার মুখ থেকে ঝরঝর করে ট্রান্সপারেন্ট একটা তরল পদার্থ ঝরতেসিল! এহহ্‌! ছিঃইইই! এ ছ্যাব্লা আবার নিজেকে সেলিব্রেটি ভাবে! আবার নাকি পিলেন আর অ্যাঁছিঃ বাছ ছাড়া চড়তে পারে না! হুহ্‌ ঢং আরকি! আচ্ছা টাটা। আমাকে কিছু বলবেন না, হ্যাঁ? আচ্ছা সরি। আর জ্বালাব না। সত্যি! (?)

দ্য গ্রন্থিক! এটা আপনি কী করলেন! চারুলতার উপর ক্রাশ খাইসেন, এটা বলার কী দরকার ছিল? আর এদিকে যে আমি ঐরাবতবেটি দোলনায় চড়ে কিউটমার্কা পোজে ছবি তুলসি আর সবাই চারুলতা বলেবলে রাগাচ্ছে! ওটা আমি কভারফটো বানাতাম আর নিচে ক্যাপশন দিতাম চারুলতা নিয়েই কিছু একটা। আর এখন? ধুউর! এখন আর পারব না। ব্যাপারটা হবে যে আপনার দেখাদেখি কাজটা করলাম। এমনিতে দোলনা যে আমার ভারে ছিঁড়ে পড়ে নাই, ওইটা নিয়েই আমি রুমমেটদের সামনে ব্যাপক ছিলিমছিলিম পার্টে ছিলাম, আর এখন তো সেই ছবি নিয়েই বিপদে পড়ে গেলাম! এখন কী হবে? মৃণালিনী দিতে হবে! কিন্তু আমি যে ভুটকিআফা! মৃণালিনী ফিচকানি তো আমার সাথে কোনও দিক দিয়েই যাবে না! ঐরাবতের সাথে ছাগলছানা……ক্যাম্নে কী!

আচ্ছা, দ্য গ্রন্থিক, আমি যে আপনাকে নিয়ে কালকে আবারও বেড়াব, তো আমার মুখ কি আমি তখন বন্ধ করে রাখব? মানে, আমি কী বলতে হয় আর কী বলতে হয় না, মাঝেমাঝেই তা বুঝতে পারি না, আবার কথাও খুব সরাসরি বলি। কোন কথায় লজ্জা পেতে হয় বা অন্যরা কোন কথায় লজ্জা পাবে, তাও আমি বুঝতে পারি না। শিখায়ে দিতে হয়। যে কারণে আমাকে কেউ কোথাও নিয়ে গেলে আমার মুখ বন্ধ করে রাখার পরামর্শ দেয়। আমার সরাসরি কথা হজম করতে পারবেন তো? আবার ৩৭ ব্যাচের ছেলেপেলেদেরকে কী বলবেন? আমার ভক্ত? ভক্ত তো আমি অবশ্যই, সেটা ঠিক আছে, কিন্তু সবাই ভাববে না, মেয়েটা কী লেলঠি রে……অপরিচিত মানুষের সাথে কত দূর চলে আসে! আমি আপনার কাছে লেলঠিপনা করসি বলে সবার সামনে সেটা ঘটা করে জানাতে হবে? বলবেন যে, আমি আপনার বড় বোন। আচ্ছা? আমাকে দেখতে এমনিতেই বড়দের মতন লাগে, ছোটবোন বললে কেউ বিশ্বাস করবে না, তাই ওরকম বলবেন। আর দ্য গ্রন্থিক, আপনি ওই যে একটা স্ট্যাটাস দিসেন না? ওই যে? থামেন, আর একবার পড়ে নেই।

দ্য গ্রন্থিকওওও……! অঅঅঅ…….আপনি এত্তগুলা লুমান্টিক কেন গো? আপনি এখনও এসব স্বপ্ন দেখেন? মানে, আপনার বয়স বাড়ে নাই। স্বপ্ন দেখার সময় নিশ্চয় সুচিত্রার কথাই মাথায় আসে? (নাকি সানি লিওনকে টেনে নিয়ে আসেন?) ভাই, বাস্তবের সুচিত্রা কিন্তু ওর সুয়ামির সাথে মারামারিও করত! বিয়ে করবেন, ভাল কথা। বউয়ের অশান্তি ঝামেলা বজ্জাতি মাতব্বরি সহ্য করার জন্য রেডি তো? বউফউ অতো ভাল জিনিস নারে ভাই! আপনার জীবন চিপে সব রস বের করে ত্যানাত্যানা বানায়ে ফেলবে! বউয়ের সামনে জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করেকরে হাত ঘষেঘষে মোসাহেবি করতেকরতে হাতের রেখাগুলাই সব উঠে যাবে! আপনি আপনার বউকে বুঝতে পারবেন না, আপনার বউ আপনাকে বিশ্বাস করবে না। এইটা নিয়েই হায়রে কমেডি ড্রামা শুরু হবে! সংসার মানেই কুরুক্ষেত্র ময়দান! ওই কাহিনিতে যাবেন কি না ভাবেন, ভাবেন! মেয়েমেয়ে করেকরে যে পাগল হইসেন, পরে ঠ্যালা বুঝবেন! মেয়েজাতি আর বউজাতি কিন্তু ভিন্ন জিনিস!

সিনেমা দেখেদেখে আপনার মাথা বোধহয় সত্যিই গ্যাসে! তারপরও……কথাগুলা খুব ছুন্দল আল খুব্বি লুমান্টিক হইসে! আচ্ছা, আমার যতগুলা পরিচিত হিন্দু লোকজন আছে, সবাইকে আপনার কথা বলবনি যেন ওরা আপনার জন্য মেয়ে খুঁজে। আমার একটা জয়দেব মামা আছে, শিক্ষক। আপনি যা যা চাইসেন, উনিও তা-ই তা-ই চাইসিল, তাও মেয়ে খুঁজতে হায়রে কষ্ট! পাওয়াই যায় না! তাও তো মামাটা আপনার মত সেলিব্রেটিও না আর ফর্সাই না। আচ্ছা, পাবনার মেয়ে চলবে? আচ্ছা, আপনার বিয়েতে আমাকে দাওয়াত দিবেন? আপনারা তো বিয়েতে খুব মজা করেন। ওই যে সানাইটানাই ঢোলটোল বাজে সারাদিন ধরে। আমার খুবই ভাল লাগে। ওই রিদমটা এতই সুন্দর, এতই সুন্দর যে শুনলেই নাচতে মন চায়। কিন্তু আপনি কিপটামো+ভুলে যাবার ভান না করে আমাকে সত্যিসত্যি যদি ডেকে বসেন আর আমি যদি সত্যিসত্যি চলে যাই, আমি কিন্তু নাচতে পারব না! কারণ তখন তো ঢোলের শব্দ আমার কানে আসবে না, আমার কানে আসবে শুধু ভায়োলিনের করুণ সুর! প্যাপ্যাপ্-প্যাপ্যাপ্-প্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা…… এইরে! এ তো কিবোর্ডের তৈরি বাজনা হয়ে গেল! ভায়োলিনের সুর ক্যাম্নে লিখে দেখায়? আমি তো বুঝতেসি না! যা-ই হোক, ওইটা আমার ফিলিংসের ট্র্যাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড বাজনা! ডাগাস, কষ্ট পাচ্ছি……

আচ্ছা, দ্য গ্রেট গ্রন্থিক, আপনি যেরম লিখসেন, সেরম কি সত্যিই হয়? আপনার মত অনেকেই হয়তো ভাবে। কিন্তু সত্যিই কি হয়? হয়। প্রথম দিকে, তারপর ছেলের হাতে যখন বাজারের থলি উঠে আর মেয়ের হাত থেকে যখন খুন্তি আর নামে না, তখন আসল ফ্রেম নাকি বের হয়ে আসে! এটা আমার কথা না, বিভিন্ন সিরামসিরাম লাইলি-মজনু প্রেমের জুটিদের কাছ থেকে শোনা কথা। আমার বাপ-মায়ের প্রেমও অবশ্য বিখ্যাত ছিল। আব্বা সিদুঁর দেওয়া পছন্দ করত, তাই মা সবসময় দিত। এইতো কিছুদিন আগেও দিত। আবার, আমার মনে আছে, আমি ক্লাস নাইনে উঠসি, তখন আব্বার ডেঙ্গু হয়। আব্বার সাথে ঢাকায় ছিলাম বার্ডেমে। তো মায়ের তো মন খুব খারাপ, চুপচুপ করে কান্দে, আবার দেখি, মা আব্বার সামনে আব্বার প্রিয় রঙের শাড়ি পরে হাসপাতালে আসে আর হায়রে রোমান্টিক কথা বলে দুজন মিলে! আমি আব্বার বিছানায় ঘুমের ভান করে ফিচকামো করে শুনি আর হাসি। আমি খুব শয়তান আছিরে ভাই। সিন্দুক থেকে চুপ করে বের করে তো ওদের চিঠিও পড়ে ফেলসি, আবার শরম পেয়ে রেখেও দিসি। আমার আব্বা-আম্মার প্রেম কাহিনি লিখতে গেলে একখান উপন্যাস হয়ে যাবে! আর এখন, মানে রিসেন্টলি, এক বছরও হয় নাই, আব্বার কত্ত চেঞ্জ! আমি যখন ছোট্টবেলায় নাটকফাটক করে বেড়াতাম, আবৃত্তি করে বেড়াতাম, আমার চেয়ে আব্বার আগ্রহই বেশি থাকত। রেডিওতে যখন নাটক করা শুরু করলাম তো আমি চাইতাম না কেউ সেগুলা শুনুক, সেগুলা এতই আখাদ্য ছিল! স্ক্রিপ্ট দেখে আমার ওই বয়সেই বমি চলে আসত! কিন্তু আব্বা ঠিকই চলে আসত শুনতে। এসবের জন্যে স্কুল ফাঁকি দিলেও আব্বা কিছু বলত না। আমি বড় হইসি কিছুটা, মানে অন্য মেয়েদের তুলনায় কিছুটা, মানে অল্প কিছুটা চিত্রাঙ্গদা স্টাইলে। আমি ছোটবেলায় বড় হইসি মেয়ে হয়ে না, মানবসন্তান হয়ে। এমন কোনও ‘ছেলেদের কাজ’ নাই, যা আব্বা আমাকে করতে দিতেন না। এখন আব্বা আমাকে ছেলে আর মেয়ের পার্থক্য শিখাতে আসে। এখন লাভ আছে? গিটার শিখতে যেতে দেয় না! ভলিউম জোরে দিয়ে গান শোনা যাবে না! অথচ সে কিন্তু শুনত, আমাকেও শুনতে শিখাইসে! আমাকে নাচতে দেয় না, পায়ে শব্দ করে হাঁটতে দেয় না। চোখে চোখ রেখে কথা বললে চোখ নামায়ে কথা বলতে বলে। প্রথম জীবনে স্বাধীনচেতা মানুষ, পরে গিয়ে ঠিকই সংস্কারের শেকলে আবদ্ধ হইসে! কোনও মানে হয়? আমার কেন জানি মনে হয়, এর জন্য আমি দায়ি। মানে, আমার কারণে আব্বা মানসিক চাপ নিতেনিতে এখন এমন মৌলবি হয়ে গেসে। চরম মৌলবি! এক্কেবারে কাঠমোল্লা হয়ে গেসে বুড়াটা! আমি যদি দেখি, আমার মেজমামা, মণিচাচা বা ছোটফুপাও কখনও এমন চেঞ্জ হয় তো মানুষের উপরে আমার বিশ্বাস আর থাকবেই না। উফফ্‌! কী শুরু করলাম! ভ্যাকর! ভ্যাকর!!

যা বলতেসিলাম, আপনার লেখাটা পড়ে ওরকম করে ভাবে, এমন একটা ছেলের সাথে আমার খুব পীরিত করতে ইচ্ছা হল, কিন্তু কিছুক্ষণ পর সেই ইচ্ছাটা চলেও গেল! কারণ ওইগুলা কক্ষনো সত্যি হবে না। অন্তত আমার জন্যে তো হবে না-ই। কী হবে? প্রথম দিকে হয়তো একআধটু লুতুপুতু ফেরেমটেরেম থাকবে, তার দুদিন পর দেখা যাবে, মনের কথা মুখে চলে আসছে। আমি আর রান্না করতে চাইব না, তখন বগা (বদ্ধপাগলের ছদ্মনাম) বলবে যে,

– ঢং করো কেন? তুমি রাঁধবা না তো কি আমি রাঁধব?

– ক্যান? তোমার আর আমার মধ্যে কী তফাত যে আমি যা পারব তুমি তা পারবা না?

– তুমি মেয়ে আর আমি ছেলে, সেটা কি ভুলে গেসো? রান্নাকরা ছেলেদের কাজ না, মেয়েদের কাজ। মাথায় ভাল্লো করে গেঁথে নাও। অক্কেহ্‌?

– তাই নাকি? তো যা না ব্যাটা, পছন্দের রেস্টুরেন্টে যেয়ে খাবার খেয়ে আয় আর শেফদের কাপড় খুলে দেখে আয়, তারা ছেলে না মেয়ে!

– তুই যা! তোকে ওসব কাজ ভাল মানাবে। তুই আবার তুই তোকারি শুরু করলি, না? তুই দেখতেও পেত্নীর মত, তোর ভাষাও পেত্নীর মত!

– অ……আর তুই তো এক্কেরে আমার সালমান খান হইসিস! এত সুন্দর রাক্ষসের মত সালমান খান যে তাকালেই বমি চলে আসে। শালার কাইল্যা ভূত! নাম আবার ঢং করে রাখসে বগা! হাহ্‌!

– বমি আসে তো তাকাস ক্যান রে হাতি? যার দিকে তাকালে বমি ভিতরে ঢুকে, তার দিকে তাকাবি। আমার দিকে তাকাবি তো চোখ তুলে নিব!

– তাকাতে কি আর চাইরে গাধা? বাধ্য হয়েই তো তাকাই। তোকে বিয়া করে তো আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেসে! কী ছিলাম আর কী হলাম! তুই লাইফে আসার পর থেকে তো আমি প্রডাক্টিভ কিছু চিন্তাই করতে পারি না! এখন আমার চিন্তা হয়ে গেসে জানোয়ারদের মত শুধু খাওয়াকেন্দ্রিক, তাও যদি আমার ইচ্ছামত বাজার আনতে পারতিস! ফকিরের মত বাজার করিস! আবার রাজার মত খেতে চাস! লজ্জা করে না তোর?

– বাজার রাজার মতই করি, কিন্তু কুত্তার পেটে তো ঘি সয় না, তাই সেগুলা তুই হেলায় নষ্ট করে ফেলিস বলে ফকিরের মত খেতে হয়। আরে, তুই বুঝবি কী রে……কামাই করতি তো বুঝতি! আবার বলিস প্রডাক্টিভ কিছু করতে পারিস না! তোর আবার কীসের প্রডাক্টিভ চিন্তা রে? খাওয়া, ঘুম আর টিভি বাদে কিছু বুঝিস তুই? মেয়েমানুষের আসল প্রডাকশনই তো দিতে পারিস না! বেটি, তোকে বিয়া করে তো আমার বংশধারা উল্টা দিকে বওয়া শুরু হইসে। তার চাইতে জালি দেখে কোন মেয়ে বিয়া করতাম তো এতদিনে ফুটবল টিম বানায়ে ফেলতাম! অনেক সুখে থাকতাম।

– শালার বুড্ডা সিডি! তুই এ কথা বলিস ক্যামনে? তুই যে একটা নপুংসক, এটা যদি আগে জানতাম তো তোর মত গুকে বিয়া করতাম? একটা হ্যান্ডসাম মাচোম্যানকে বিয়া করে পঞ্চাশটা টিম বানাতাম!

– নির্লজ্জ! বেহায়া! বেয়াদব মেয়ে! তোকে ধরে এখন থাপ্পড় দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমি সভ্য তো, তোর মতন অসভ্য তো আর না, তাই শুধু বলতেসি যে তুই আমার বাড়ি থেকে বিদায় হ মানেমানে! এক্ষনি! জলদি!

– হ্যাঁ, তুই বল্লে কিছু না, আর আমি বল্লেই তো বেয়াদব বেহায়া হয়ে যাই, তাই না? আমি তো তোর মত সভ্য না, অসভ্য, তাই তোকে একটা না, দশটা থাপ্পড় দিতাম, কিন্তু কী করব, তোকে মারলে যে তোর গায়ের কালোরঙ আমার হাতে লেগে যাবে, তাই অফ গেলাম! আর শুন, আমি বিদায় কেন হবো রে? এই সংসারে তোর চেয়ে আমি বেশি খাটনি করি। আমার দাবি বেশি। তুই বিদায় হ। যা, জালিজালি মেয়েদের সাথে লুচ্চামি করে বেড়াগা! ভাগ! তোকে আমার এমনিও দরকার নাই। আমার জীবনটা নষ্ট করসিস তুই।

– তোর জীবন তো ভালই আছে। তুই নষ্ট করসিস আমারটা!

– না, তুই করসিস।

– তুই!

– তুই!

– তুই!

……………………………………………………………………………

……………………………………………………………………………

এভাবে চলতেই থাকবে, চলতেই থাকবে……তুই মুই তুই মুই……এরই নাম সংসার! কোনও দরকার আছে, বলেন?

তারপর যখন বাপ-মা এসে মিল-মহব্বত করাবে, তারপর চিকিৎসা-পিকিৎসা করে বাচ্চাকাচ্চা হবে, তখন হবে নতুন টেনশন! কারণ বাচ্চাগুলা তো ইবলিস শয়তান হবেই হবে! বাচ্চা মানেই—অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপর, বেয়াদব, নিষ্ঠুর আর পিপজাদা/পিপজাদি। এখন শুরু হবে পিঁপড়া চিপেচিপে চিনি বের করে সেটা বিক্রি করে টাকা বানায়ে আগের যে টাকাগুলা জমসিল, সেগুলা খরচের পালা! ছেলেটা তো হবে একটা ড্রাগঅ্যাডিক্ট আর মেয়েটা তো ইভটিজিং-এর শিকার হয়ে পড়াশুনাই বাদ দিয়ে দিবে অথবা ৫০ জনের সাথে প্রেম করে বেড়াবে। তখন শুরু হবে আবার তুইমুই। একজন বলবে তোর আদরে এমন হইসে তো আরেকজন বলবে তোর আতিরিক্ত শাসনে এমন হইসে। ছেলে ভাল, মেয়ে খারাপ হলে, তোর মেয়ে তো, আর কতই বা ভাল হবে! এর উল্টাটা হলে, তোর ছেলে ডাকাত হবে না তো কী হবে? আর ছেলেমেয়ে দুইজনই খারাপ হলে, করসস তো দুইখান শুয়োর পয়দা, তোর পেটে কি আর মানুষের জন্ম হবে রে? তারপর আরেকটু বয়স হবে। তখন শুরু হবে ডাক্তারের পিছে চিনিবিক্রির বাকি টাকা ঢালা। তখনও কিন্তু তুইমুই ঝগড়া চলতেসেই! তারপর কোনও একসময় যার ভাগ্য ভাল, সে টুপ্‌ করে মরে গেল! আর যার ভাগ্য খারাপ সে আরও কিছুদিন বাঁচল। একাএকা বাঁচো! আরেকটু অসুস্থ হও। এখন শুরু হবে বিছানা নষ্টকরা। ভাগ্য ভাল হলে, মানে হারামজাদা ছেলের সুমতি হলে একটা কাজের লোক রাখবে। মাঝেমাঝে কাজের লোক এসে পরিষ্কার করে দিবে আর বুড়া কিংবা বুড়িকে, মরে না কেন, এই রাগে এককোটি গালি দিয়ে যাবে। বুড়া অথবা বুড়ি সহজে কি মরবে? নাহ্‌! মরবেও না! পৃথিবীর গালি খাওয়া ওর এখনও শেষ হয় নাই। ও আরও কিছুদিন বেঁচে থাকবে আর কষ্ট পাবে!

আল্লারে! ভয় পাই! আল্লাহ্‌ গো! প্লিজ আল্লাহ! তোমার পায়ে ধরি! এমন দিন যেন আমাকে দেখতে না হয়! দরকার হলে ২০ বছর কম বাঁচব, কিন্তু ভাল করে বাঁচব। আল্লাহ্‌, যত হ্যান্ডসাম সুপুরুষই আসুক, আমাকে যেন কেউ পটাতে না পারে, আল্লাহ্‌! আমার বাপ-মা যেন আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেকরে বিহ্যা দিতে না পারে, আল্লাহ্‌! আমি কুৎসিত জীবন খুব ভয় পাই, আল্লাহ্‌! প্লিজ আল্লাহ্‌, তুমি শুধু সবসময়ের মতন সব বিপদে আমার সাথে থেকো!

সরি, গ্রেট গ্রন্থিক, ইকটু ইমোশনাল হয়ে গেসিলাম তো, তাই আল্লার সাথে কথাটা সেরে নিলাম। যেটা বলতেসিলাম। হ্যাঁ, আপনার স্বপ্ন খুব সুন্দর। আপনি যেহেতু ভালমানুষ, মানুষের উপকার করেন, আপনার স্বপ্ন সত্যি হতেও পারে। আর আমার স্বপ্নটা আমার মতই কুৎসিত। ইয়াক্‌! আমি খারাপ তো, এরমিই হবে বোধহয়! দু’আ করেন যেন তাত্তারি ভাল একটা চাকরি পেয়ে বাসা থেকে পালাতে পারি। আমার বিশ্রী স্বপ্নটা মিথ্যা প্রমাণ করতে হবে! চাকরি বাদে আর কোনও উপায় নাই। আমার জন্য দু’আ করেন। আল্লাগো! প্লিজ, আমাকে এমন করেই রেখো! যে রাস্তায় গেলে সুন্দর স্বপ্ন ভেঙে যাবে, দরকার হলে আমি সেই রাস্তায় যাবই না। দরকার হলে আমি বিদেশে চলে যাব। তাও ভাল।

অনেক বকবক করলাম। সরি। আর করতেসি না, যান। খোদা হাপেজ। আর, আসসালামুয়ালাইকুম।

আমার যেতে ইচ্ছা করতেসে না। বানায়ে-বানায়ে আরও যা-তা মা-তা কী কী সব বলতে ইচ্ছা করতেসে! কিন্তু আপনার কথাও তো ভাবতে হবে! আর কত অত্যাচার করব? তাই না, বলেন? আচ্ছা থাকগা, পরে আবার অত্যাচার করতে আসবনি! ঠিক আছে? টাট্টা! ভাল থাকবেন আর সবাইকে ভাল রাখবেন। হ্যাঁ?

রাজশাহীতে আজকে ভালই ঠান্ডা কিন্তু! ইসস্‌! যেতে ইচ্ছা করতেসে না!

ও আল্লাগো! বাঁচাও! দ্য গ্রন্থিক, আপনি এসব কী লিখসেন? আমি হাসতে-হাসতে কয়েকদফা চেয়ার থেকে পড়ে গেসি। আপনি এক কাজ করেন, ডোন্ট কেয়ার টাইপ বান্দা হয়ে যান। তাইলে আপনি একসাথে এক কম দুই হালি বউ রাখতে পারবেন! সপ্তাহের কোনওদিনই এক চেহারা দুইবার দেখা লাগবে না। কিন্তু পাত্রী তো আটডা! এক কাজ করেন, ৩ নম্বর ঢংপত্রওয়ালিরে বাদ দিয়ে দেন। যদিও ও এখন আর আগের মতন হাহাহিহি করে না, তবুও আমার মন প্রথমেই উঠে গেসে। আর ওই ছেমড়ি আপনাকে বিলাই, থুক্কু, বেড়াল বলে কেন? রাগ লাগে শুনলে! বিলাইকে আমি ঘিন্না করি! ওরা খুব বেয়াদব আর নির্লজ্জ হয়। তার চেয়ে গাধা, হনুমান, বান্দর, গণেশ অনেক সুন্দর। আর ভোলানাথ তো চরময্‌! অবশ্য ওই ঢঙিগুলার ৩ নম্বর আর ৪ নম্বর একই পাব্লিক। আপনার বুদ্ধি বেশি তো, তাই ধরতে পারেন নাই। আচ্ছা, আপনার বিলাই শুনতে ভাল লাগে, না? আচ্ছা, থাক ওরা। তবে এক নাম্বারকে এক নাম্বারেই রেখেন, প্লিজ। ওকে আমার বেশি পছন্দ হইসে! ওই যে ভাষায় চিঠি লিখসে, ওইটা কোথাকার ভাষা? এক কাজ করেন, ৫ নম্বরকে ১ নম্বরের বান্দি বানায়ে ফেলেন। আগেই চেইতেন না। সত্যি বলতেসি, বানানো যাবে। বলেই দেখেন না! একটু থামেন, হরলিক্স খেয়ে একটু শক্তি করে আসি। ডাগাসকে বুদ্ধি দিচ্ছি, বাবা! হরলিক্স খেয়ে শক্তি বাড়ায়ে প্রিপারেশন তো নিতেই হবে।

আবার চলে আসছি! তবে ঘরে হরলিক্স নাই, তাই নিজেনিজে বানাইলাম নতুন পানীয়। গরমপানি+গুঁড়াদুধ+চা+ইন্সট্যান্ট কফি+ফিল্টার কফি (এইগুলা ভিক্ষা পাওয়া কিন্তু, মানে কে জানি, কে জানি বাসায় বেড়াতে আসার সময় হাতে করে নিয়ে আসছে! আমাদেরকে অত ইচমাট ভেবেন না)+গরম মসলা+আদা+একটু লবণ+তুলসি পাতা+পেপ-সুইট(চিনির বদলে)। এসব দিয়ে নতুন যা বানালাম, খেয়ে বমি করে ফেললেও এত খারাপ লাগতো না, কিন্তু দুর্গন্ধের জন্য যে খেতেই পারলাম না! এত কষ্ট করে বানায়ে ফেলে দিতে হল! তবে একঢোঁক তো খাইসি, তাতেই সাহস বেড়ে গেসে, অতএব অতি সাহসে বান্দা হাজির!

এখন বলি। ২ নম্বর বলসে হনুমান, যা বান্দরের ভাই, তাই না? আর ৫ নম্বর বলসে, আপনি লাজুক, তাই না? কী সুন্দর করে এক করে দিচ্ছি, দেখেন! দিনাজপুর তো যান নাই, না? নিজেকে ভবঘুরে দাবি করে আর দিনাজপুর যায় নাই, রাজশাহী আসে নাই, রংপুর যায় নাই, কুষ্টিয়া গেল এই ২ দিন আগে! এই যদি বেড়ানোপাগল হয়, তোহ্‌……কী আর বলব! আমার চাকরিটা হতো তো দেখাতাম, বেড়ানো কাকে বলে! ওরেএএএ…… কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম! তো বলসি কী দিনাজপুরে একটা বিশেষ বান্দর পাওয়া যায়। আকারে সাধারণ বান্দরের চেয়ে ছোট এবং গায়ের রঙ আপনার মতই, অন্যদের, মানে সাধারণ বান্দরদের চেয়ে একটু বেশি ফর্সা। ওদের একটা বিশেষত্ব আছে, ওরা মানুষের সামনে আসতে চায় না, মানুষরা প্রায় জোর করে ওদের দেখে আর ওদের কষ্ট দেয়! মানুষ কত্ত খারাপ! ওরা ওদের দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখে কুচিমুচি হয়ে এক কোণায় বসে থাকে। কাউকে কিচ্ছু বলে না। ওদের নাম লাজুক বান্দর! আল্লার কসম বলতেসি এরকম বান্দর আছে! সত্যি! বিশ্বাস না হয় তো দিনাজপুরের কাউকে জিজ্ঞাসা করেনগা, যান! তো বুদ্ধি হচ্ছে, আলাদা-আলাদা করে বান্দর আর লাজুক না বলে আপনার নায়িকাদের বলেন যেন দুইজন এক হয়ে আপনাকে সোহাগ করে লাজুক বান্দর বলে ডাকুক! তাইলে আপনার নায়িকাও সাতটা হবে আর আপনি আপনার ইচ্ছাও পূরণ করতে পারবেন! দেখসেন, কত্ত বুদ্ধি আমার! দ্যান দেখি দুই টাকা, আমার কনসালটেন্সি ফি!

আচ্চা, কুব গুম আসচে আমার। আর পারতেসি না। রাত জেগেজেগে আমার চোখের নিচে বুডঢিদের মতন ফুলে গেসে! কত্ত দুক্ক! আচ্ছা গেলাম। টাটা। আপনার মত করে বলি? থাকগা! ওইগুলা ভদ্রলোকের ভাষা!