ক্যারিয়ার-কথন

 (একটা সময়ে আমি দেশোদ্ধার করে ফেলার মহান সংকল্প করেছিলাম। আমার এই লেখাটি সে সময়ের লেখা। তখন ফেসবুকে এবং ফেসবুকের বাইরে দেশের আপামর জনসাধারণকে মহানন্দে সোৎসাহে ক্যারিয়ার এবং জীবন গঠন করার নানান সদুপদেশ দিয়ে বেড়াতাম। লোকের উপকার করতে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে অমানুষিক পরিশ্রম করতাম। অসংখ্য হতাশাগ্রস্ত মানুষকে আত্মহত্যার পথ থেকে সুস্থ জীবনের পথে নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম, দেশ থেকে বেকারত্ব ও হতাশা দূর হলে দেশে শান্তি আসবে। সে চান্সে বঙ্গদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার সুবাদে নোবেল শান্তি পুরস্কারও ভাগ্যে জুটে যেতে পারে। পরবর্তীতে আবিষ্কার করলাম, বাঙালির লাথি না খেয়ে বাঙালির উপকার করা পুরোপুরি অসম্ভব। বাঙালি অকৃতজ্ঞ, কৃতঘ্ন, পরশ্রীকাতর, হুজুগে, অন্ধ জাতি। আপনি নিঃস্বার্থভাবে বাঙালির উপকার করলে বাঙালি নিঃস্বার্থভাবে আপনার ক্ষতি করবেই করবে। অন্যের জীবন সাজাতে গিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করেন মহাত্মারা। আমার মত পাপাত্মার পক্ষে তা করা সুদূরপরাহত। বুঝলাম, নোবেল শান্তি পুরস্কার অপেক্ষা শান্তি অধিক আরামের। অগত্যা, আমি শীতনিদ্রায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।)
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: এই নোটে ঝাড়ি আছে। ঝাড়ি খেতে না চাইলে এড়িয়ে যান।
এক।
: ভাইয়া, সামনে ভাইভা। খুব টেনশন হচ্ছে। কী করবো?
: ব্যাপার না! পরীক্ষার আগে টেনশন করাটা একটা সাধারণ ভদ্রতা।
: আপনার হইসিলো?
: আমাকে কি তোমার অভদ্র মনে হয়?
: ভাইয়া, আপনি কী যে বলেন! আমার মনে হচ্ছে, আমি যা যা পড়তেসি, তার কিছুই জিজ্ঞেস করবে না।
: এটা সবারই হয়।
: কিন্তু এটা কীভাবে কমাবো? কিছু টিপস দেন।
: কোনও টিপস নাই। ঠিকমতো প্রিপারেশন নাও।
: ভাইয়া, প্লিজ। একটু হেল্প করেন।
: একটাই ওয়ে আছে।
: কী সেটা?
: তোমার ভাইভা কোন বোর্ডে পড়বে, সেটা খবর নাও। এরপর ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যার কিংবা ম্যাডামকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস কর, তোমাকে কী কী জিজ্ঞেস করা হবে। সেই অনুযায়ী পড়।
: ভাইয়া, আপনি আমার সাথে দুষ্টুমি করতেসেন।
: না, আমি সিরিয়াসলিই বলতেসি।
: কিন্তু এটা তো সম্ভব না।
: তাহলে এটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করতেস কেন? আমি যা যা পড়ে গেসিলাম, তার টোয়েন্টি পারসেন্টও আমাকে জিজ্ঞেস করে নাই। আমার বোর্ডে আমিই একমাত্র ক্যান্ডিডেট যাকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনও প্রশ্নই ধরে নাই। অথচ এটা নিয়ে আমার অনেক প্রিপারেশন ছিল। আবার আমাকে অনেককিছু ধরসে, যেগুলো অন্যকাউকে ধরে নাই। এইজন্য কি আমি উনাদের বিরুদ্ধে প্রিপারেশনহানির মামলা করব? তোমাকে কীভাবে নুডুলস রান্না করতে হয়, এটা জিজ্ঞেস করেও ছেড়ে দিতে পারে এবং তোমার চাকরিও হয়ে যেতে পারে। ভাইভা পরীক্ষার কোনও সেট রুলস নাই।
: এটা ঠিক। কিন্তু ভাইয়া, আমি আরও অনেক ব্যাপারে টেনসড।
: কী ব্যাপারে?
: এই যেমন ধরেন, আমার এক বান্ধবীর হাজব্যান্ড অনেক পাওয়ারফুল। উনি নাকি কাকে কাকে দিয়ে পিএসসি’তে ফোন করাবেন। ভাইয়া, আমার তো কেউ নাই। লবিং ছাড়া কীভাবে হবে?
: তাহলে একটা কাজ করতে পার।
: কী কাজ ভাইয়া?
: ওর হাজব্যান্ডকে বুঝিয়েশুনিয়ে দ্বিতীয় বিবাহে রাজি করায়ে ফেল। তুমিও রাজি হয়ে যাও। এরপর উনাকে বল, উনার দুই বিবির জন্যই লবিং করতে। বুদ্ধিটা কিন্তু খারাপ না। তোমরা দুই বান্ধবী সারাজীবন বোনের মত হয়ে থাকবে। সুখেশান্তিতে সংসার করবে, চাকরি করবে।
: ভাইয়া, আপনার হয়ে গেসে তো, তাই আপনি আমার সাথে ফান করতেসেন।
: অবশ্যই ফান করতেসি। কিন্তু আমার হওয়ার আগেও আমি কখনওই এইসব নিয়ে ভাবতাম না। ফার্স্ট হব, এটা কল্পনাতেও আসে নাই, কিন্তু এটা মনে হত, কাস্টমসে না হলে আমার সেকেন্ড চয়েস পুলিশে শেষের দিকে হলেও একটা চাকরি পাব। এটার জন্য আমার সাধ্যমত ফাইট করসি। চাকরি পাব না, এটা কখনওই মাথায় আসে নাই। ভাইভা নিয়ে টেনশন করে না কে? কিন্তু যেগুলো আমার হাতে নাই, এরকম আজাইরা জিনিস চিন্তা করে ফালতু সময় নষ্ট করার মতো সময় হাতে ছিল না। কত পড়া!
: আচ্ছা, বুঝলাম। কিন্তু ভাইয়া, সবাই বলতেসে এবার নাকি বিসিএস-এ করাপশন হবে। অনেকে নাকি টাকাপয়সা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করতেসে। ১০ লাখ থেকে শুরু। আমি কী করব, বুঝতেসি না।
: বুঝাবুঝির কিছু নাই। টাকা যোগাড় করতে থাক। ক্যাশ টাকা। করাপশন তো হবেই। ফার্স্ট হওয়ার জন্য আমি নিজেই তো কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ করসি।
: ভাইয়া, আপনি এভাবে বলতেসেন কেন? সবাই তো ওইটাই বলে। আপনি হয়তো জানেন না।
: শোনো, ২৯ ব্যাচে আমার এক বন্ধু আছে অ্যাডমিনে। চাকরি পাওয়ার আগে ওর হাতে ওদের বাড়ির জন্য নতুন টিনের চাল কেনার মত টাকাও ছিল না। বর্ষাকালে চালের ফুটো দিয়ে পানি পড়ত। আন্টিকে কত কষ্ট করতে হতো! আমার বন্ধুর চাকরির জন্য ১০ লাখ টাকা দূরে থাক, ১০ হাজার টাকা দেয়ার মত সামর্থ্যও তো ছিল না। সে কি চাকরি পায় নাই? এরকম আরও অসংখ্য আছে। কত শুনতে চাও? একেবারে অজ পাড়াগাঁয়ের কত কত ছেলেমেয়ে চাকরি পাচ্ছে। সিভিল সার্ভিসে যারা আসে, ওদের বেশিরভাগই একেবারে সাধারণ গরীব কিংবা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়ে। তোমাদের এইসব কথা শুনলে কষ্ট লাগে, বুঝলে?
: ভাইয়া, আমি সরি। আচ্ছা, কোটা দিয়ে যে অনেকে চাকরি পাবে, সেক্ষেত্রে আমার চাকরিটা তো আরেকজন পেয়ে যাচ্ছে। এটা ভাবতেও কষ্ট লাগে ভাইয়া।
: তোমার চাকরিটা মানে? তোমার তো কোটা নাই। তোমার জন্য বরাদ্দ সিটগুলোতে তো ও আসবে না। ৪৪% তো শুধু তোমার জন্যই। তোমার ভাবনা হওয়া উচিত ৪৪% নিয়ে, ৫৬% নিয়ে নয়। ওটা তো তোমার নয়। তুমি যে চাকরি পাচ্ছ না, এটা তো আর যারা চাকরি পাচ্ছে, তাদের দোষ না। তুমি তো সিস্টেম সম্পর্কে জেনেশুনেই অ্যাপ্লাই করেছ, তাই না?
: তবু এমন হওয়া কি ঠিক?
: দুনিয়ায় ঠিক বেঠিক বলে কিছু নাই। যা হয়, তা-ই হয়।
: কিন্তু ভাইয়া, এটা তো কমানো উচিত।
: তো? কমাও। মানা করসে কে?
: এটা তো আর আমার হাতে নাই।
: যেটা তোমার হাতে নাই, সেটা নিয়ে ভাবতেসো কেন? জানি, এই ভাবনা বড় আরাম দেয়। কিন্তু ওই সময়ে পড়াশোনা করলেও তো কাজে দিত। জগতের অনেক-অনেক সমস্যা। সেগুলোর মধ্যে যেগুলো তুমি সলভ করতে পারবে না, সেগুলো নিয়ে ভাবা মানে তো জাস্ট সময় নষ্ট করা।
: আচ্ছা ভাইয়া, মানলাম। অনেকে যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পাচ্ছে, তাদের বেলায়? আমার ২ ফ্রেন্ড পরীক্ষা দিসে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে। ওরা তো চাকরি পেয়ে যাবে। আমি তো পাব না, ভাইয়া।
: তাহলে তুমিও একটা সার্টিফিকেট যোগাড় কর।
: ভাইয়া, এটা করার রুচি আমার নাই।
: কিন্তু এটা দিয়ে চাকরি পাওয়ার রুচি তো মনে হয় ঠিকই আছে।
: ভাইয়া, আপনি অদ্ভুত কথা বলেন। আপনি আমাকে যেরকম ভাবতেসেন, আমি কোনওভাবেই ওরকম না।
: তাহলে ওদের দেখলে তোমার এত গা জ্বলে কেন? জ্বলবে, এটাই জগতের নিয়ম। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখসো, এই গা-জ্বলা নিয়ে সময় নষ্ট হওয়া ছাড়া আর কী লাভ আছে তোমার? দুনিয়াটা ফেয়ার না। এই আনফেয়ার দুনিয়াকে বদলানোর দায়িত্ব তোমার না। এতটা আয়ু কিংবা চাকরির বয়স, কোনওটাই তোমাকে দেয়া হয় নাই। প্রত্যেকটা চাকরির পরীক্ষায় অনেক ক্যান্ডিডেটই চাকরির পরীক্ষা দেয়। তাদের ওয়ান পার্সেন্টেরও কম চাকরি পায়। হাতে সময় কম। হয় পড়াশোনা করে চাকরি পাও, অথবা বেশি বুঝে সেই নাইন্টিনাইন পার্সেন্টের মধ্যে ঢুকে যাও। সবসময় চালাক হয়ো না, মাঝেমাঝে বেকুব হও। এর বাইরে আর কোনও অলটারনেটিভ নাই। ইহাকেই চাকরি বলে। মানলে থাকো, না মানলে ভাগো। চাকরি বড়ই প্যারাদায়ক জিনিস।
: আপনি কঠিন-কঠিন কথা বলতেসেন, ভাইয়া।
: বলতে বাধ্য হচ্ছি। বিসিএস নিয়ে তো অনেক গবেষণা করে ফেলসো। ভাল, ভাল। আচ্ছা, যখন প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে একটার পর একটা সিভি পাঠাও, আর ওরা কোনও কারণ ছাড়াই কল করে না, তখন রাগ লাগে না? ওখানে যতটা নেপোটিজমের প্র্যাকটিস চলে, তার শতকরা ১০ ভাগও সিভিল সার্ভিসে নাই। আমি খুব কাছ থেকে কর্পোরেট কালচার দেখসি। আরও অনেককিছুই চলে। থাক, সেদিকে আর না যাই। কই, ওটা নিয়ে তো কারওর মুখে কিছু শুনি না। নাকি, সরকারকে গালি দিতে বেশি আরাম লাগে? ব্যাড কালচার সব জায়গাতেই আছে। তোমাকে ঠিক করতে হবে, তুমি কতোটুকু মেনে নিতে রাজি আছ। মেনে নেয়ার নামই চাকরি।
: ভাইয়া, আপনি রাগ করতেসেন। আচ্ছা মানলাম, সিভিল সার্ভিস ভাল।
: হাহাহাহা............শোনো, ভাল চাকরি বলে দুনিয়াতে কিছু নাই। ভাল চাকরি----আমার কাছে এটা অক্সিমোরোনের সবচাইতে ভাল একজাম্পল। তবুও চাকরি করতে হয়। কী করবো নাহলে? ব্যবসা করার যোগ্যতা তো আর আমার নাই। বিসিএস নিয়ে কেউ উল্টাপাল্টা কিছু বললে আমার রাগ হয় কেন, জানো? হতে পারে, এই সিস্টেমে অনেক গলদ আছে। গলদ কোথায় নাই? কিন্তু এই সিস্টেমটা আমাদের দেশের একেবারে সাধারণ স্টুডেন্টদের সম্মানের সাথে বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছে। ওরাও ভাল থাকার স্বপ্ন দেখে। আমার নিজের কথাই বলি। আমার অনার্সের সিজিপিএ হল ২.৭৪। এই সিজিপিএ দিয়ে তো বেশিরভাগ চাকরিতে পরীক্ষাই দেয়া যায় না, চাকরি পাওয়া তো অনেক পরের কথা। আমার মত বাজে রেজাল্ট করা স্টুডেন্টের তো চাকরি পাওয়ারই কথা না। কিন্তু আমারও তো আর দশটা ছেলের মত চাকরিবাকরি করতে ইচ্ছে করে, বাবা-মা'কে হাসিখুশি দেখতে ইচ্ছে করে। চাকরির বাজারের যে অবস্থা, আমার ভাবতেও অবাক লাগে, এই আমিও একটা চাকরি করি। শুধু এটাও আমার জন্য অনেককিছু। আমার মত একটা সাধারণ ছেলেকে চাকরি করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য আমি এই সিস্টেমের প্রতি কৃতজ্ঞ।
: ভাইয়া, বুঝসি। নতুন বছরের শুরুতে অনেক ঝাড়ি খাইলাম কিন্তু ঝাড়ি খাইয়া লাভ হইসে। মাঝেমাঝে ঝাড়ি খাইতে ফোন দিব। প্লিজ মাইন্ড কইরেন না। একটা লাস্ট কথা বলি?
: বল।
: ভাইয়া, আমারও আপনার মত ক্যাডার হতে ইচ্ছা করে, কিন্তু পড়াশোনা করতে ইচ্ছা করে না। কী করা যায়? প্লিজ ভাইয়া, বকা দিয়েন না। একটা শর্টকাট ভাল বুদ্ধি দেন।
: ‘মা’ ডাক শুনতে চাও, কিন্তু বিয়ে করতে চাও না, এটা তো আর হয় না।
: ওকে ভাইয়া, থাক আর লাগবে না। আমি উত্তর পেয়ে গেসি। অনেক অনেক অনেক ভাল থাকবেন।
: হাহাহাহা......আচ্ছা, তুমিও অনেক ভাল থেকো।
(যার সাথে ওপরের কথোপকথন হয়েছিল, সে মেয়ে ৩৩ ব্যাচের একজন এএসপি।)
দুই।
কিছু অদ্ভুত প্রশ্ন। সাথে আমার উত্তর। কয়েকটা মনে পড়লো। শেয়ার করছি।
ভাইয়া, আপনি কীভাবে আইবিএ’তে চান্স পেলেন, আবার বিসিএস’য়েও ভাল করলেন?
পড়ে।
আচ্ছা, আপনার রিটেনের মার্কসের রেকর্ডটা ভাঙতে হলে আমাকে কী করতে হবে?
টোটাল ৬৪৫ পেতে হবে।
ভাইয়া কী ড্রেস পরে ভাইভা দিতে যাব?
সবুজ শার্ট, সাদা টাই, হলুদ প্যান্ট, লাল জুতা পরে।
ভাইয়া, একটুও পড়তে ইচ্ছা করে না। কী করতে পারি? (এক মেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল।)
বাবা-মা’কে বলেন বিয়ে দিয়ে দিতে। কী দরকার! আপনার জন্যই তো কেউ পড়ছে।
আপনি পরীক্ষায় কোন কোম্পানির কলম দিয়ে লিখেছিলেন?
বাংলাদেশি কোম্পানির।
পরীক্ষায় কোন কালির কলম দিয়ে লেখা ভাল?
সাদা কালির।
কোন প্রকাশনীর গাইড বই সবচাইতে ভাল হবে?
বাজারের প্রকাশনীর।
ভাইয়া, আপনি বলেছেন, আপনি বিসিএস পরীক্ষায় বাংলায় উত্তর করেছেন। আপনি কি সব সাবজেক্টই বাংলায় লিখেছেন?
না, ইংরেজি পরীক্ষা ইংরেজিতে দিয়েছি, আর অংক পরীক্ষা অংকে।
প্রথমবারে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় কী?
প্রথমবারে ভালভাবে পরীক্ষা দেয়া।
আপনি পড়ার সময় ঘুম এলে কী করতেন?
ঘুমাতাম।
আপনি পড়তে ইচ্ছা না করলে কী করতেন?
কাউকে এরকম একটা ফেসবুক টেক্সট পাঠাতাম।
আমাকে একটা ভাল বইয়ের নাম বলেন, যেটা পড়লে আমি ভাল ইংরেজি শিখতে পারব।
ইংরেজি অভিধান।
অক্সফোর্ড ডিকশনারি ইংলিশ-টু-বেঙ্গলি’টা কিনলে হবে?
না, বেঙ্গলি-টু-ইংলিশ’টা কিনেন।
আপনি দিনে কয় ঘণ্টা পড়তেন? কয় ঘণ্টা ঘুমাতেন?
এটা কেউ জিজ্ঞেস করবে, এটাই জানতাম না। আগে যদি জানতাম, স্টপওয়াচ দিয়ে মেপে রাখতাম।
আমার গার্লফ্রেন্ড খুব সম্ভবত অন্য একটা ছেলেকেও ভালোবাসে। আমার কী করা উচিত?
আপনার খুব সম্ভবত অন্য একটা মেয়েকেও ভালোবাসা উচিত।
ভাইয়া, আজকে আমার গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে। ওর জন্য খুব সুন্দর একটা মেসেজ লিখে দেবেন? ওকে পাঠাবো।
ওর নাম্বারটা দিন। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না, আমি নিজেই পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আপনি বেছে-বেছে মেয়েদের ছবিতে লাইক দেন কেন?
মেয়েদের আমার ভাল লাগে, তাই।
ভাইয়া, আপনি বিয়ে করছেন না কেন?
কেউ আমাকে বিয়ে করছে না, তাই।
আচ্ছা, আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই কেন? (এক মেয়ের প্রশ্ন)
আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, তাই।
ভাইয়া, আমিও আপনার মত লিখতে চাই। আমাকে কী করতে হবে?
অভ্র কিবোর্ড ব্যবহার করতে হবে।
আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন? বাসলে, কাকে?
বাসি। আপনাকে।
ভাইয়া, আমিও আপনার মত সুন্দর করে কথা বলতে চাই। আমাকে কী করতে হবে?
আপনাকেও সুন্দর করে কথা বলতে হবে।
ভাইয়া, কীভাবে ফেসবুক থেকে আমি নিজেকে সরিয়ে আনতে পারি?
আপনার ইন্টারনেট কানেকশনটা বন্ধ করে দিয়ে।
ভাইয়া, আমার মাঝেমাঝে মরে যেতে ইচ্ছা করে। আমি বাঁচতে চাই।
আচ্ছা, বাঁচেন।
ভাইয়া, আমাকে গ্রহণ করলে খুব খুশি হতাম।
কী হিসেবে?
ভাইয়া, আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সিভিল সার্ভিসে আসলেন কেন?
সরি ভাই, ভুল হয়ে গেছে। এই ভুল আর হবে না।
আপনি মেয়েদের রিকোয়েস্ট ঝুলিয়ে রাখেন কেন?
ওরা ঝুলে থাকে, তাই।
আমি মাঝেমাঝে আপনাকে অংকের প্রশ্ন পাঠালে আপনি সলভ করে দেবেন?
মাঝেমাঝে না, প্লিজ, সবসময়ই পাঠাবেন।
আপনি আমাদের জন্য ১০-১২ সেট মডেল টেস্টের প্রশ্ন তৈরি করে দেবেন, প্লিজ?
ভাই, কম হয়ে গেল না?
ভাইয়া, আপনি বলেছিলেন, আপনি লেখক হতে চান। আপনি আমাদের জন্য একটা বিসিএস গাইড লিখবেন, প্লিজ?
শুধু বিসিএস? ব্যাংক জব কী দোষ করল?
আপনি তো সারাদিন অনেক বিজি থাকেন। আপনি কি কাইন্ডলি মাঝেমাঝে রাত ১২:০০টার পরে আমার সাথে ১৫ মিনিট কথা বলবেন?
আমি ছেলেদের সাথে এত রাতে কথা বলি না।
আপনি আমার ফোন ধরেন না কেন?
আপনার ফোন আমাকে ধরতে হবে কেন?
এরকম আরও অনেক অনেক অনেক বিচিত্র প্রশ্ন!! বিসিএস-এ ফার্স্ট হওয়ার শাস্তি। এই মুহূর্তে আর মনে পড়ছে না। মাঝেমাঝে মনে হয়, সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে সংসারি হয়ে যাই।
তিন।
আমার ফেসবুক ইনবক্সের একটা চিঠি শেয়ার করছি।
"ভাইয়া, সালাম নেবেন। আশা করি ভাল আছেন। আমি আপনার একজন নগণ্য ফলোয়ার। একটা ব্যাপারে আপনার হেল্প লাগবে। এইজন্যই আপনাকে নক করা।
আমি আমার সক্ষমতার ব্যাপারে মোটামুটি কনফিডেন্ট। আমি বিসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম ৫ জনের মধ্যে আসার যোগ্যতা রাখি। সম্ভব হলে, আপনার মত প্রথমই হব। বারবার বিসিএস দেয়া আমার পছন্দ নয়, তাই আমি স্বপ্ন দেখি প্রথমবারেই আমি ক্যাডার হব, তাও একেবারে প্রথম দিকেই থাকব। আমার মতে, শেষের দিকে থেকে ক্যাডার হয়ে কোনও লাভ নেই। যদি ক্যাডার হই-ই, তবে প্রথম সারিতে থেকেই হব। এটাই আমার প্ল্যান।
এখন কথা হল, এটা কি সম্ভব? যদি সম্ভব হয়, আমাকে কিছু টিপস দিন। প্রিলির জন্য আমি ভাবি না। ওটাতে পাস করবো। রিটেনের জন্য আমাকে কী করতে হবে? কী কী বই পড়তে হবে? কোন সাবজেক্টের জন্য কোন সিরিজের বই ফলো করবো? আপনি আমাকে বইয়ের লিস্ট লিখে দিন। সম্ভব হলে কোন বই থেকে কতটুকু পড়বো, সেটাও একটু বলে দেবেন। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই পাস করার পর চাকরির জন্য ওয়েট করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি চাই, পাস করার সাথে সাথেই একটা চাকরিতে ঢুকে যেতে। আমার অনেকদিনের স্বপ্ন বিসিএস ক্যাডার হওয়া। প্রাইভেট জব ভাল না। তাই ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে চান্স পাওয়ার পরও আমি মার্কেটিংয়ে পড়ছি যাতে আমার প্রিপারেশন নেয়াটা সহজ হয়। আমি সব ক্যাডার নিয়ে মোটামুটি জানি। কোন ক্যাডারের দায়িত্ব কী, সুযোগসুবিধা কী, এটা নিয়েও জানি। সিভিল সার্ভিসের সবকিছু নিয়ে আমার কমবেশি নলেজ আছে।
এখন আমাকে এই ব্যাপারে হেল্প করলে, আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। ভাল থাকবেন।
আরেকটা কথা আছে। জানি, আপনি বিরক্ত হবেন, তবুও বলি। আমার পড়তে ইচ্ছে করে না। মনে হয়, এখুনি চাকরিতে ঢুকে যাই। এর কোনও সমাধান থাকলে কাইন্ডলি জানাবেন।"
চিঠিটা এখানেই শেষ। এই চিঠির কী উত্তর দেয়া যায়, আপনারাই বলুন। ভদ্রলোক হওয়ার সমস্যা অনেক। মনের ইচ্ছামত ঝাড়ি দেয়া যায় না। পত্রলেখককে আমি শুধু রিপ্লাই দিয়েছি, “আপনার জন্য শুভকামনা। ভাল থাকবেন।”
যা রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু দিইনি, সেটা লিখলাম।
# আমার কোনও ফলোয়ারই নগণ্য নন। আপনিও নন। আপনি আপনার সক্ষমতার ব্যাপারে কনফিডেন্ট, কিন্তু আপনার ভাগ্যের ব্যাপারে কতটুকু কনফিডেন্ট? ভবিতব্যের কথা কে বলতে পারে? আমি নিজে ভাগ্যে বিশ্বাস করি না, কিন্তু বিসিএস ভাগ্যে বিশ্বাস করি। যোগ্যতা থাকলেই মানুষ সবসময় তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায়? আপনি শিওর তো? যোগ্যতা কাকে বলে? আমার খুব কাছের এক বন্ধু আছে, অত্যন্ত মেধাবী। পরীক্ষায় সবসময়ই প্রথম হয়েছে। ওর নখের সমান যোগ্যতাও আমার নেই। আমার সে বন্ধুটি ৪বার বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছে। হয়নি। এটাকে আপনি কী বলবেন? পারলে হিসেব মিলিয়ে দিন তো! আমি মিলাতে পারি না।
# আমি স্বপ্নে প্রাপ্ত প্রথম হওয়ার মহৌষধ বিক্রি করতে বসেছি নাকি? কেউ কি প্রথম হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেয়? এটা ভাববার মত দুঃসাহসও তো কোনওদিন আমার হয়নি। আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম চাকরি পাওয়ার জন্য। আইসিএস অফিসার সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় দ্বিতীয়বারে আইসিএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন। উনি উনার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, উনি প্রথম হওয়ার জন্যই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুটা অতিরঞ্জন বলেই মনে হয়েছে। প্রথম হতে না পারলে ওকথা লিখতেন কখনও? চিটাগাং কলেজের এক কেমিস্ট্রি স্যারের কথা মনে পড়ে গেল। উনি ক্লাসে বলতেন, “বড় মানুষ বড় কথা কয়। বড়ডি হইসে তো, কতডিই না কইবো!”
# বারবার বিসিএস দেয়া কার পছন্দ? কে শখ করে বারবার বিরক্তিকর চাকরির পরীক্ষা দেয়? “শেষের দিকে থেকে ক্যাডার হয়ে কোনও লাভ নেই।” এটা বলার সাহস পেলেন কোত্থেকে আপনি? আপনি সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে কতটুকু জানেন? চাকরির বাজার সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আছে আপনার? আপনার কথা শুনলে মনে হয়, আপনার ফুল ফ্যামিলি মিলে বিসিএস দিলেও কোনও কাজ হবে না। I am sorry for my rude prediction. শেষের দিকে যারা থাকে তার প্রথমদিকের ক্যাডারদের চাইতে কম যোগ্য, এটা ভাববার কারণ কী? আপনার রেজাল্ট সার্ভিসে আপনার অবস্থান নির্ধারণ করে দেবে, একথা ভাবছেনই বা কোন সুখে? আমার দেখামতে, সাধারণত এন্ট্রি গ্রাউন্ডে যে যত ভাল করে, প্লেয়িং গ্রাউন্ডে সে তত অথর্ব হয়। “যদি ক্যাডার হই-ই, তবে প্রথম সারিতে থেকেই হব। এটাই আমার প্ল্যান।” ওসব প্ল্যানফ্ল্যান বাদ দিন। আগে চাকরি পেয়ে দেখান। চাকরির জন্য পড়াশোনা করুন। বাকিটা দেখা যাবে।
# “প্রিলির জন্য আমি ভাবি না।” ওরে বাবা! আমি নিজেই তো দুশ্চিন্তায় ছিলাম আদৌ প্রিলি পাস করবো কিনা। আপনি জিনিয়াস। আমার কী সাধ্য যে আপনাকে বুদ্ধি দেবো? প্রিলি পাস করে দেখেছেন কখনও? প্লেনের টিকেট করতে তো কোনও ঝামেলাই নাই। এর মানে এই নয় যে আপনি বিদেশে যেতে পারবেন। একটা পাসপোর্ট লাগে বিদেশে যেতে। সে খেয়াল আছে তো?
# আমার কাছ থেকে গাইড বইয়ের লিস্ট চান কেন? রিসেন্টলি কোন-কোন বইটা ভাল করেছে, সেটা আমি কীভাবে জানব? আমি যে বই পড়ে ভাল রেজাল্ট করেছি, আপনাকেও সেই বইটা পড়তে হবে কেন? বইয়ের দোকানে যান, বই ঘাঁটাঘাঁটি করুন, বই কিনুন। দুনিয়াটা এত সহজ না। আমি ‘খাইট্যা খা’ নীতিতে বিশ্বাসী। ভুল করে ‘কম ভাল’ বই কিনে ফেলবেন? তো? কিনলেনই বা! সমস্যা কী? বেকার মানুষ, টাকা নাই। থামেন ভাই, থামেন। বেকার মানুষ প্রেম করতে পারে, সিগারেট ফুঁকতে পারে, আর বই কিনতে পারে না? শেখান, না? নিজের পকেটের পয়সা খরচ না করলে কোনওকিছুর উপরে মানুষের দরদ আসে না। এসব ব্যাপারে আমার নিজের নীতি, Less paid, less earned. Unpaid, unearned.
# কয়টা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান পাস করার সাথে সাথেই চাকরি পেয়ে যায়? আপনার চাকরির প্রয়োজন, এতে চাকরিদাতাদের কী? আপনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, আপনার একটা চাকরি দরকার, পারলে এই আবেগটাকে কাজে লাগান। ভালমত প্রিপারেশন নিন। সাথে দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছুটা পরিবর্তন আনুন। আপনি এতদিন ধরে যা করে এসেছেন, যদি এখনো তা-ই করে যান, তবে এতদিন যা পেয়ে এসেছেন, তা-ই পেয়ে যাবেন। পাওয়া বদলাতে হলে করার ধরন বদলাতে হবে। চাকরি আপনার হবেই হবে।
# “প্রাইভেট জব ভাল না।” একটু শুধরে দেই, কেমন? কথাটা হবে, “কোনও জবই ভাল না।” চাকরি আবার ভাল হয় নাকি? জীবনানন্দের মত করে বলি, “পৃথিবীতে নেই কোনও বিশুদ্ধ চাকরি।” মানুষ চাকরি করে, চাকরিকে গালি দেয়। দুনিয়াতে ‘ভাল চাকরি’ বলে কিছু নেই। চাকরি মানেই নিজের সাথে নিরাবেগ বোঝাপড়া। কে চাকরিকে মন থেকে নেয়? চাকরি মানেই তো মেনে নেয়া। কতটুকু মেনে নিচ্ছেন, সেটাই ঠিক করে দেয়, কোন চাকরিটা আপনার জন্য। চাকরি তো করতে হয়ই। কী করবো নাহলে? এই যে বলছি, চাকরি ভাল না, চাকরি ভাল না, একটা চাকরি আছে বলেই তো বলতে পারছি। নাহলে চুপচাপ থাকতাম, একটা চাকরি খুঁজতাম। আর ভাল কথা, “প্রাইভেট জব ভাল না।” এটা বলার আপনি কে? যারা করছে, ওরা খারাপ আছে, এটা বলেন কোন অধিকারে? প্রাইভেট জব করে দেখেছেন কখনও?
# চাকরি নিয়ে আপনার নলেজ তো দেখছি মাশাল্লাহ সেইরকম! এতোটা তো আমার নিজেরই এখনো নেই। তো ভাইজান, চাকরিটা কীভাবে পেতে হয়, সে সম্পর্কে নলেজ আছে তো? আপনি এইচএসসি পাস করেছেন ২০১২ সালে। মানে, আপনি এখন অনার্স সেকেন্ড কিংবা থার্ড ইয়ারে। চাকরি নিয়ে এখনই এতো ভাবাভাবির কী দরকার? অনার্স লাইফটাকে এনজয় করুন। অনার্সের পড়াশোনা ঠিকভাবে করুন। "অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে চান্স পাওয়ার পরও" এটার মানে কী? একটা সাবজেক্টকে ওপরে ওঠাচ্ছেন কেন? কোনও সাবজেক্টই আরেকটা সাবজেক্টের চাইতে ওপরে না। আমরাই একটা সাবজেক্টকে ওপরে ওঠাই, নিচে নামাই। মার্কেটিংয়ে ফাঁকিবাজি করার সুযোগ বেশি নাকি? কে বলল আপনাকে? আমার তো মনে হয়, এই সুযোগ দুনিয়ার সব ডিপার্টমেন্টেই আছে। সুযোগ করে নিতে জানতে হয়, এই যা! নিজেকে সমৃদ্ধ করুন। শুধু পড়াশোনাই করলে হয় না। ওটা তো সবাইই করতে পারে। নতুন-নতুন জিনিস শিখুন। নিজের বেসিকটাকে শক্ত করে গড়ে নিন। এই সুযোগ আর সারা জীবনেও পাবেন না।
# ভাই, অনেক বকা দিলাম। এবার একটু আদর করে কথা বলি, ‘আপনি’ থেকে সরে ‘তুমি’তে আসি। প্রিয় ছোটভাই, তোমার শেষ কথা নিয়ে বলছি। এখন অনার্সের পড়াশোনা কর। পাশাপাশি নিজের ভিতটা শক্ত কর। পাস করার পর খুব ভালোভাবে নিজেকে প্রিপায়ার্ড করবে। বাবাও হতে চাইবে, আবার বিয়েও করতে চাইবে না, এটা কীভাবে হয়? নাকি, হওয়া উচিত? পড়তে ইচ্ছে করবে না, এটাই স্বাভাবিক। এইসব চাকরির বিরক্তিকর পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে কার? বিসিএস-এর কথাই বলি। যে চাকরিটা তুমি অন্তত ৩০ বছর আরাম করে করবে বলে ঠিক করে রেখেছ, সেটার জন্য ৩ মাস না ঘুমিয়ে কষ্ট করতে পারবে না, সেটা কী করে হয়? দুনিয়াটা এখনো এত সহজ হয়ে যায়নি, ভাই।
পুনশ্চ। একটা মজার তথ্য দেই। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আইসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় চতুর্থ হয়েছিলেন। সেসময় একটা বাঙালি ছেলের পক্ষে ইংরেজদের টপকে এই রেজাল্ট করা অত্যন্ত কঠিন ছিল। লিখিত পরীক্ষায় ইংরেজিতে উনার মার্কস ছিল সর্বোচ্চ। যিনি খাতা কেটেছিলেন, উনি বিশ্বাসই করতে পারেননি, ওই খাতা কোনও বাঙালি ছেলের। উনি কি মাত্র ৯ মাসের পড়াশোনাতেই ওই রেজাল্ট করতে পেরেছিলেন? কী মনে হয় আপনাদের?