খেদ

 সান্ত্বনা একটাই--
এ জীবনে তোমায় ভালোবেসেছি।
 
তোমায় ধরেছি যত, ছেড়েছি আরো বেশি।
বারবার এই চলে যাওয়া
বড় কাঁদায়।
আজ, সবকিছুর শেষ
মৃত্যুতে। কী এক মুক্তিতে,
আর ফিরে না আসার স্বস্তিতে,
সব বেদনা ফুরিয়ে যাওয়ার সময় হল।
ক্ষমা কোরো, ফিরবো না আর।
 
বড় পাওয়ায়, ছোট বিশ্বাস
বড়ই ভোগায়।
জানলাম যেদিন--ভালোবাসি,
সেদিন আর ভালোবাসার
সময়টুকুও নেই!
জেনে রেখো, বাসতাম ভালো।
 
একে-একে, সব আলো নিভে যাবে।
এর আগেই,
বোলো না ভালোবাসিনি কবে-কবে।
কিছু ভালোবাসার কথা, হোক না তোমার,
শুনে যেতে চাই।
সে ভালোলাগায় হারিয়ে যাবো।
রাখবে না এই অনুনয়?
 
একটুপরেই, অনুভূতি সব আর আবেগ যত,
ভোঁতা হবে, ‘নেই’ও হবে।
এর আগেই, একটা চুমু...?
এখুনিই নাহয়? কী? দেবে না?
ভালোবাসা পেতে কেমন লাগে
ভুলে যাবার আগেই,
আরো একবার ভালোবাসো না!
করছি শপথ,
এ জন্মের ভুল যত,
এ মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে,
একটু হলেও, শুধরে নেবো।
 
ভুলে ভালোবাসা, মেতে মৃগতৃষ্ণায়,
এই এক জীবন কাটিয়ে দিলাম।
জানি, এই মুহূর্তের ভালোবাসায় বাড়বে শুধু বেদনাই।
তবু, অমন উষ্ণ ভালোবাসায় ছিলাম বেঁচে।...কে কোথায় অতোটা বাঁচে?
মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও,
এই প্রতিবোধে ওইপারেতে বাঁচার সাধ জাগে।
যে হাতে ফিরিয়েছি হেলায় স্বপ্ন আর প্রেম,
সে হাত পেতে আজ ভালোবাসা চাইছি,
শেষবারের মতো।
সারাজীবনের তৃষ্ণা আজ মিটাবো বলে,
এই কিছুক্ষণ আছি বেঁচে।
একটু দেবে?
আর কখনোই চাইবো না কিছু--সত্যি বলছি!
বলো দেবে?
 
সুখের দিনগুলিতে,
স্বপ্ন উপড়ে-উপড়ে
দুঃস্বপ্নের চাষ করেছি।
আজ মূক স্মৃতি ফিসফিসিয়ে
সব বধির ভূতকে জাগায়।
আহা! জীবনটা সে কী সুন্দর ছিল--
বুঝে, জীবন ফুরোতেই কাঁদি!
পেয়েও পাইনি যাকে,
রেখেও রাখিনি যাকে,
তাকে দেয়া সব অবহেলা
আজ সুদেআসলে ফেরত নিলাম।
চাইনি যাকে, তাকে চেয়েই আজ মৃত্যু পেলাম।
এই নিয়তি!
 
যে সুন্দরে মারলে ডুব,
জীবন কাটে কয়েক,
সে সুন্দর নিয়ে চিনে,
ওকে আরো ভালোবেসে
বাঁধলাম সুর,
হায়, সে সুর পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতাটুকুও নেই যে তখন!
ফুরোয় জীবন, অসময় সময়ের এই অনুভবে পুণ্যও ফুরোয় যত,
পাপ বেড়ে যায় শুধুই, যেন ঠিক আগের মতো।
 
মিষ্টি গলাটা আর এ কানে বাজবে না।
অমন অধীর স্পর্শে আর এ মন জাগবে না।
উষ্ণ প্রেমের ঝাঁঝে আর এ শরীর পুড়বে না।
সবচে’ বিশ্বস্ত হয়ে রইতো যেজন,
সে নিঃশ্বাসটুকুও আর সঙ্গ দেবে না।
তবু, এই শেষ মুহূর্তের পরেও,
বলে যাবো, উঠবো গেয়ে,
ভালোবাসি।
ভাবছে ওরা, কী লাভ ওতে?
ফুরোলো যে জীবন লাভের হিসেব কষেই,
সে জীবনের হিসেব তো ভাই ক্ষতিতেই, তাই নয় কি?
 
একদিন
এই হাত-মুখ ফ্যাকাসে হবে।
এই শরীর পচেগলে মিলিয়ে যাবে।
যে সুন্দর চোখে দেখা দেয়,
সে সুন্দরের তোয়াক্কা না করে মৃত্যু।
হে প্রিয় আমার, এ চোখজোড়া দিয়ো না পচতে,
ওতে রবে জেগে আমার ভালোবাসা, আর তোমায় পাহারা দেবে।
পরম আদরে হৃদয়ে রেখো ওই দুটো কোটরবাসী।
রাখবে তো, বলো?
 
চলে যাবে দেহ,
তবু রয়ে যাবো আমি,
তোমার নরোম হৃদয়ে।
নিভে গেলেই সব আলো,
জীবন তো আর নেভে না।
জীবনের দায় জীবনেই থেকে যায়।
দিন ফুরোবে আরেক দিনে,
রাত ফুরোবে রাতে।
এমনি করেই দূরে গিয়েও,
রইবো তোমার কাছে।
 
এ জীবনে দিইনি ধরা,
আর জীবনে ধরবো তোমায়।
এই সময়ে নিইনি যে প্রেম,
ওই সময়ে ভাসবো তাতে।
আমি নাহয় মন্দ মানুষ,
ভালোবাসাটা তো মন্দ নয়।
দেখো তুমি, যে ভুলেতে কাটলো জীবন,
আর সে ভুলেতে বাঁচবো না, মরার পরেও!
 
সময়শেষে আজ মনে হয়,
শেষ শ্বাসটাই সবচে’ আপন।
বিদায়বেলায় বাঁচতে গিয়ে,
বাঁচার কাঁদা মরণে বাঁচে।
বড় অবেলায় এই ভালোবাসা,
শেকল বেঁধে রাখছে পায়ে।
মরতে শিখে বাঁচার মোহ,
মরতে এসে ধরছে ভীষণ।
এক জীবনের সব ক্ষতি হায়,
ভালোবেসেই পুষিয়ে দেবো, এক মরণে।
জানি, কষ্ট ছাড়া আর কিছু নেই
জিইয়ে রাখার, হৃদয়ে রাখার।
ভালোবেসেই মরেছো যখন, মন্দবেসে আর বেঁচো না।
এইভাবেই থেকো ভালো।
এবার আমায় বিদায় বলো!