খেলা ভাঙবে যখন

যেদিন আমি চলে যাব, সেদিন কী বার হবে?
তারাঝরা সন্ধে থাকবে? না কি জোছনাভরা রাত নামবে?
এক ফুলফোটা ভোরের গায়ে চেপে, না কি খররৌদ্র দুপুরবেলায়?


শেষবারের মতো ঠিক কার সাথেই কথা হবে?
কে শুনতে পাবে আমার বলা শেষ বাক্যটি?
অগুনতি তারার ভিড়ে একটি তারা খসে পড়লে,
তার কে রাখে খোঁজ গরজ করে?


আচ্ছা, বলতে পারো,
এই এখনই যদি মরে যাই,
কেউ কি জানতে পারবে আদৌ,
আমারও ছিল রাশি রাশি দুঃখ জিয়ানো এই বুকপকেটে?
কেউ কি বুঝবে কখনও,
আমিও ভয় পেতাম, কেঁদে উঠতাম মৃত্যুর কথা ভেবে ভেবে?


যে জানালার গ্রিলটা ধরে রোজ রোজই আকাশ ছুঁই,
একদিন ওই আকাশেই বুঝি আমার ঘরটা হবে?
আমার ভিটেবাড়ি, নামধাম আর যশখ্যাতি যত,
আমার যত গান কবিতা, আমার যত গল্প গাথা…
তার সবকিছু কি একনিমিষেই হবে বেনামি?


আমার এত যত্নের এই শরীরখানি,
কত আদরে পুষ্টিতে গড়া এই দেহটির হাড় মাংস,
এমনকি তার প্রতিটি রক্তকণাও,
তার সবটাই কিনা আয়েশ করে চেটেপুটে খাবে
মাটির তলের বিচ্ছিরি যত কীটগোষ্ঠী?


ব্রান্ডের পোশাক, এত নামি দামি পণ্য-মিছিল,
নানান দেশের সুগন্ধিতে ম-ম করা এই দেহপল্লব…
সবই কি নেবে গঙ্গার জল কিবা তুচ্ছ মাটি?
আমায় ওরা সবাই মিলে টানবে নিতে শ্মশানে কিংবা গোরস্থানে?
তবে কি সেই ছাই-ধুলোর পরিচয়টা আমার চাইতেও অনেক বড়ো?


একবার মরার পরে লোকে কেন জন্মায় না আর?
কেন চোখের পলক পড়ার আগেই জীবন থেকে সময় হারায়?
চাইলেই কেন যায় না বাঁচা হাজার বছর?
কেন মায়ের কোলে মাথাটা রেখে ঘুমপাড়ানি গান যায় না শোনা অনন্তকাল?
কেন যুগের খেলায় মৃত্যুগর্ভেই যায় মিথ্যে হয়ে জীবনের সব সত্যই?
কেন একপৃথিবী অর্জনেরও নিয়তি কেবল বিসর্জনই?