যে-কথা বলতে চাই, এ জীবনে আর বলা হয় নাই; সে কেবল এই--- চিরদিনের পৃথিবীর দুচোখের সামনে যা দেখেছি হাজার বার আমারই দোরে। অপরিচিতের এই চিরপরিচয় এতই সহজে নিত্য ভরেছে গভীর হৃদয়, সে-কথা বলতে পারি, এমন কোনও সরল বাণী আমি আজও, হায়, না জানি! শূন্য প্রান্তরের গান বাজে ওই একা বটছায়ায়, নদীর এপারে ঢালু তটে চাষি করেছে তো চাষ; উড়ে চলেছে বালিহাঁস ওপারের জন-তৃণশূন্য বালুতীরতলে। চলে কি না চলে ক্লান্তস্রোতে শীর্ণ নদী, নিমেষ-নিহত আধোজাগা চোখের মতো। দেখি, ওই পথটি বাঁকা, বহু শত গত বরষের পদচিহ্ন-আঁকা, চলেছে মাঠের ধারে, ফসল-খেতের যেন সে মিতা, নদীর সাথে বয় কুটিরের কুটুম্বিতা। ফাগুনের আগুনআলোয় ভরা এই গ্রাম, ওই শূন্য মাঠ, ওই খেয়াঘাট, ওই নীল নদীরেখা, ওই দূর বালুকার কোলে, নিভৃত জলের ধারে চখাচখির কাকলি-কল্লোলে, যেখানে বসায় মেলা---এইসব ছবি কতদিন দেখেছে এক অসহায় কবি। শুধু এই চেয়ে দেখা, এই পথ বেয়ে চলে যাওয়া, এই আলো, এই হাওয়া, এইমতো অস্ফুট ধ্বনির সতত গুঞ্জরণ, ভেসে-যাওয়া মেঘ হতে হঠাৎই এ নদীস্রোতে ছায়ার নিঃশব্দ সঞ্চরণ। তোমার সাথে এই নিত্যবিরোধ আর যে সয় না--- দিনে দিনে উঠছে জমে, অহেতুক, কতই না দেনা! সবাই তোমায়, সভার বেশে, প্রণাম করে গেল এসে, মলিন বেশে লুকিয়ে বেড়াই মান রয় না যে! কী জানাব চিত্তবেদন, বোবা হয়েছে কবেই এ মন, সে তোমায় কোনও কথাই আর কয় না যে। ফিরায়ো না এবার তারে নাহয় নাও গো অপমানেরই পারে, করো তোমার চরণতলে এবার চির-কেনা। যে আনন্দ-বেদনায়, নিরবধি, এ জীবন বারে বারে হয়েছে উদাস হৃদয় খুঁজছে আজ তারই একটু প্রকাশ।
Post Views: 13