জাগাও তোমার পুরনো আখরগুলি

  
 শীত আসতে এখনও অনেক দেরি।
 এখন তো রীতিমতো দাবদাহ চলছে।
 তবু শীতের কথা মনে আসে। মনে এলে
 একটু ঠান্ডা ঠান্ডাও লাগে। এমন হয়।
  
 আচ্ছা রোদ্দুর, শীত চলে আসার ঠিক আগে আগে
 একটু একটু হিমেল হাওয়া গায়ে লাগলে কেমন লাগে, খেয়াল আছে?
 কী একটা শিরশিরে শিহরন, তাই না?
 রোদ্দুর, এটা কেন বললাম, ভাবতে বোসো না। বলতে ইচ্ছে হলো, তাই।
  
 রাত নামবে। আমি সেই কখন থেকে প্রতীক্ষায় আছি…
 এই প্রতীক্ষাটা কেন, বলো তো?
 রাতটা নামলে তোমার সাথে গল্প করব।
 ধরো, হিমেল হাওয়াটা বাইরে আছে। জানালা দিয়ে ঢুকছে। গায়ে কম্বল।
 …কেমন হতো?
  
 আমি বুঝতে পারি, তুমি আমাকে নিয়ে একটা ধন্দে পড়ে আছ।
 রোদ্দুর, তুমি কি বুঝতে পারো, আমি যে এটা বুঝি?
 তুমি ভাবছ, সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতো ছুঁয়ে যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে?
 সে এতটা কাছে এল। এত দিন পর। কেন এল?
  
 তোমার মধ্যে অনেক দ্বিধা, অনেক সংশয়। আমি জানি, রোদ্দুর। বুঝতে পারি।
 মনে দ্বিধা রেখেই কাছে আসছ। কাছে এসেও আবার সেই দূর থেকেই আমাকে দেখছ।
 তুমি আমার কে, আমি তোমার কে, এই ব্যাপারটা তোমার কাছে স্পষ্ট নয় এখনও।
 তুমি একধরনের ধাঁধার মধ্যে থেকে যাচ্ছ। আমি বুঝতে পারি।
 তোমার বোধের আকাশটা ঢেকে ফেলছে একটা গভীর ভাবনা।
 ভাবছ আর ভাবছই। এ কি স্বপ্ন? না কি ইন্দ্রজাল? না কি মায়া কেবলই?
  
 রোদ্দুর, আমার কথা শোনো। অত ভেবো না।
 তুমি খুব ভাবতে শুরু করলে আমি অস্থির হয়ে পড়ি।
 মনে হতে থাকে, এই বুঝি তোমার মাথায় কী-না-কী এসে যাবে,
 আর অমনিই তুমি আমায় ফোন করে বলবে, চললাম!
 আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে
 আমি ভাবতে থাকি, আমার রোদ্দুরটা এমন অশান্ত কেন হয়ে আছে?
  
 যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি, দেখলাম, তোমাকে ঘিরে অনেক মানুষ।
 তোমাকে নিয়ে সবাই মেতে আছে। আমি তোমার থেকে একটু দূরে।
 দেখছি, ওরা সবাই তোমাকে কেমন ব্যস্ত করে রাখছে,
 ওরা তোমার সাথে ছবি তুলছে, তোমার চোখে ক্লান্তি, ঠোঁটে হাসি…
 ওরা তা দেখতে পাচ্ছে না, ওরা শুধুই ছবি তুলছে।
 ওরা তোমাকে নিয়ে খেলছে। ওরা তোমাকে বিশ্রাম দেবে না।
 তোমার কোনও ক্লান্তি থাকতে নেই, তোমার কোনও অনুভূতি থাকতে নেই।
 তুমি হাসছ আর হাসছ। তোমার চোখে বিষাদ। আমার চোখে মায়া।
  
 সারাক্ষণ তোমাকে দেখলাম। মনে হচ্ছিল, আমি তোমার ঠিক পাশেই…
 তুমি কথা বলছ। তোমার কণ্ঠস্বর ভরাট।
 তোমার স্বপ্নের কথা আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে,
 তুমি বলছ, বলেই চলেছ…ওরা সবাই শুনছে, ওরা শুধুই ছবি তুলছে…
 তোমাকে ওদের দরকার নেই। সামনেও থাকবে না।…আমার মনে এসেছিল এমন।
 তোমার কথা, তোমার সাথে তোলা ছবি…ওদের আর কিছু লাগে না, তোমাকে তো নয়ই!
 ওরা অনুপ্রাণিত হতে এসেছে। ওরা স্বপ্ন দেখতে এসেছে। ওদের মুঠোয় মুঠোয় জীবন দরকার।
 তোমার লাশের উপর দাঁড়িয়ে থেকেও স্বপ্ন কুড়িয়ে নিতে ওদের আপত্তি কিছু নেই।
  
 সব আয়োজন শেষ হলো। আমি তোমাকে তখনও দেখছি…
 তোমার সাথে আমার একটাও ছবি সেদিনও তোলা হয়নি।
 আমি শুধুই তোমাকে দেখেছি, আজও যেমনি দেখি…
 চোখ বন্ধ করলে আজও সেই পুরনো তুমি সামনে এসে যাও…
  
 সভা ভাঙল। তুমি চলে যাচ্ছ। রিকশায়। আমি তখনও দেখছি…
 হঠাৎ! তুমি পেছন ফিরলে। আমাকে দেখলে। সে কী মায়াভরা দৃষ্টি!
 যেন আমি তোমার হারিয়ে-যাওয়া কেউ…আমি তোমার অচেনা নই…
 আমি তোমার চলে-যাওয়া দেখছি…ভাবছি, কেন ফিরে তাকাল সে? কেন…?
  
 ভালোলাগার শুরুটা সেই থেকে। তোমাকে দেখেছি সবাইকে স্বপ্ন দেখাতে।
 তোমাকে দেখেছি আমাকে দেখতে। আরও অনেক কথা…আজ এইটুকুই থাক!
  
 রোদ্দুর, এত গুনে কী হয়? হিসেব মেলে কি কিছু?
 সব কিছু হারিয়ে গেলেও একটা আকাশ তো ঠিকই থেকে যায়।
 থাকা যায় না ওটুক নিয়ে?
 একটা জীবন, একটা আকাশ। আরও অনেক কিছু লাগেই লাগে, রোদ্দুর?
  
 আমি জানি, তোমার আজকাল সুখের স্মৃতি আর মনে পড়ে না।
 দুঃসহ সেই বেদনা তোমাকে আজও নীল করে রেখেছে…
 এত ভেবো না, রোদ্দুর। সব কিছুর পরও, ভালো থাকা যায়।
 বেঁচো ওঠো। ওরা তোমাকে বেঁচে উঠতে দেখুক!
 ওরা পুড়ে মরুক। তুমি আজও থেকে যাও ঈর্ষণীয়, ঠিক আগের মতো।
 ওদের জিতিয়ে দিয়ো না, রোদ্দুর! তুমি হেরে গেলে ওরা যে হাসিমুখে জিতে যাবে…
  
 ওরা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।
 যে স্বপ্ন দেখায়, ওরা তারই হন্তারক হতে ভালোবাসে।
 ওদের হাত থেকে বাঁচার উপায় একটাই---স্বপ্নকে শুধুই ব্যক্তিগত করে রাখা।
 ওরা যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত, অমর হওয়ার চাইতে বেঁচেথাকাটা জরুরি।
  
 তবু আমি চাই, তুমি সূর্যের মতো জ্বলো। অবিরত!
 সবাই দেখবে, বিস্মিত হবে। এরপর, আরও বিস্মিত হবে।
  
 প্রিয় রোদ্দুর, আমি জেনেছি, তুমি আমায় ভালোবাসো।
 তাই আর তেমন কিছুই চাওয়ার নেই আমার…
 একটা প্রশ্ন। তোমার বাসায় যে বেড়ালটা, ওর চোখদুটো দেখতে কি আমার চোখের মতো?