জীবনখাতার দ্বিতীয় খসড়া

 এক।
যখন চোখের জলে যায় না বোঝা কী যে আমার মনের ব্যথা,
পাশে এসে হাতটা ধরে বুঝিয়ে দিয়ো শক্তি আমার লুকানো কোথা।
যখন প্রবল আঁধার দেখে খেয়াল করেও রাতটাকে ঠিক যায় না চেনা,
ওগো বন্ধু আমার, রাতকে তুমি চিনিয়ে দিয়ো, নয়তো শুধুই বাড়বে দেনা।
যখন তারকারাজির ক্ষীণ প্রভা, দূরত্বটা ঠিক যে কত, দেয় না বলে,
হৃদয় তোমার সামলে নিয়ো, আমার অনুভূতির খবর দিয়ো---সাথে চলে।
সাগর যদি চুপ করে রয়, রহস্যতে আড়াল করে গভীর কত,
আমার স্মৃতি হাতড়ে নিয়ে দেখো মেপে নিঃশ্বাসটুকু ছড়ানো যত।
হয়তো আমি মরেই যাবো, তবু মৃত্যু যদি শেষ না শেখায়,
চলে যেয়ো না হাতটা ছেড়ে আমায় প্রিয় মরতে দেখায়।
যেদিন আমি থমকে যাবো, শব্দরাও হারিয়ে যাবে, পারবো না আর থাকতে আমার কাজের মাঝে দৃঢ় পায়ে,
বিশ্বাস করো, সেদিনও আমি থাকবো বেঁচে তোমার মাঝে, যদি স্বপ্ন আমার দাও ছড়িয়ে লক্ষহাজার মনের গায়ে।
 
দুই।
এটা কি অন্য কিছু? নাকি এক প্রশ্ন নিছক?
প্রতিটি ভাষায়, প্রতিটি দেশে প্রায় সকলেই
নিজের প্রতিই প্রশ্ন ছোঁড়ে অবচেতনে---
দিনগুলি হায় কোথায় গেল?
 
পড়া হয়নি আগে কিছুই,
রিভিশনটা দূরে থাকুক, পড়িই তো নি!
পরীক্ষাটা এসে গেলেই শুধায় কেঁদে,
দিনগুলি হায় কোথায় গেল?
 
মৃত্যুশয্যায় বৃদ্ধরা প্রায়ই পুরনো হাসি আবারও হাসে।
একটা জীবন---থাকে না কিছুই, স্মৃতি বাদে!
হাঁটে না সময়---দৌড়ে চলে। উনারা কেবল ভাবতে থাকেন---
দিনগুলি হায় কোথায় গেল?
 
প্রৌঢ় নেতা, বাজে আমলা ভাবেন বসে, কত ক্ষমতায় মোড়ানো ছিলাম!
প্রতিপত্তি আর অর্থ আমায় থাকত ঘিরে কেমন করে!
লোকেরা যতই ছিঃছিঃ বলুক আড়াল থেকে---ভয় তো পেত!
দিনগুলি হায় কোথায় গেল?
 
পুরনো সব মেডেল যত জ্বলছে কেমন নিভু আঁচে!
এসব বাদে থাকেই বা কী? স্মৃতির ঘরে যান অবসরে ঝানু ক্রীড়াবিদ......
আহা, আমিই তো ভাই সেরা ছিলাম সবার চেয়ে!
দিনগুলি হায় কোথায় গেল?
 
হতাশ প্রেমিক চোখের জলে পায় না ভেবে---ভুলটা আমার কোথায় তবে?
এই ভাঙা হৃদয়েও ওকেই খুঁজি পাগল হয়ে!
সেই প্রেমিক-চোখে আকাশ যখন জলের শরীর, রোমন্থনে শুধোয় প্রেমিক,
দিনগুলি হায় কোথায় গেল?
 
রাস্তায় কুকুর ডাকে, বাইরে কাকেরা হাঁকে।
ফেরিওয়ালা ফেরি করে ধায়, খাটের পাশে ফোন বেজে যায়।
স্মৃতিবেদনার শেষ দৃশ্যে দিবাস্বপ্নে বিভোর মানুষ ঘোর কেটে নেয় অকস্মাতে!
দীর্ঘ যত শ্বাসগুলি সব পালিয়ে বাঁচে, পরিস্থিতি সময় বুঝে শব্দ গিলে,
পুরো পৃথিবী ওঠে জেগে ওই বেয়াড়া মাছির সাথে একই বেগে,
ফেলেআসা সুখ বর্তমানের সাথে হাঁটে না,
যে দিন গেছে, চলেই গেছে, আর ফেরে না।
স্মৃতির পাখি মরীচিকা হয়ে আছড়ে কেবল ব্যাকুল করে,
যে দিন আছে এখন সাথে, সে দিন মেনেই চলব পথে।
 
তিন।
জীবন বুঝি সাদাকালোই---এমন রায়েই দিন কাটাতাম........আর ভাবতাম,
হয় ভাল, নয় মন্দ; ভুল হলে ভুল, ঠিক হলে ঠিক; সাফল্য না এলে ব্যর্থতা তাকেই বলে---জীবনটা এটুক শুধু!
জীবন এখন ব্যস্ত ভীষণ! নিজের সাথে বাঁচব নিজে---সময়টা কই?
কত সুন্দর হারায় হেলায়, অসুন্দরের আলিঙ্গনে মিথ্যে নিয়েই থাকি মেতে।
জীবনের রস, জীবনের রূপ সব রঙ ঢেলে কায়া মেলে দেয়,
আমি তবু হায় অন্য ছায়ায় বাঁচতে শিখে ধূসর জীবন রঙিন ভাবি!
অচেনা সব অতিথি কত দুয়ারে আসে আপন বেশে,
ওতে যদি দুঃখ নামে, জীবন কাঁদে, কষ্ট তবু বাঁচায় হেসে।
শীতটা এসে কান্না ঝরায়, বসন্তগান পাখির সুরে দুঃখ সরায়।
আমরা যখন মুষড়ে পড়ি অথর্ব এ জীবন নিয়ে,
কীভাবে যেন অসীম তেজে উঠি জেগে আবেগ দিয়ে।
বুঝতে জীবন বাঁচতে হবে,
কাটাতে জীবন শিখতে হবে---
বিস্মৃতি আর ক্ষমার নীতি।
রূপসাগরে ডোবার আগেই,
ধূপছায়াতে ভাসতে হবে।